Ajker Patrika

সাত মাসে আলেশা মার্টের মালিকের সম্পত্তি বেড়েছে ২২৮ গুণ 

আমানুর রহমান রনি, ঢাকা
আপডেট : ১৮ জুন ২০২৩, ১৭: ৩১
সাত মাসে আলেশা মার্টের মালিকের সম্পত্তি বেড়েছে ২২৮ গুণ 

মামলা হয়েছে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান আলেশা মার্ট লিমিটেডের চেয়ারম্যান মঞ্জুর আলম সিকদারসহ চার ব্যক্তি ও ১৪ প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে। ডিএমপির বনানী থানায় মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে মামলা করেছে সিআইডির অর্গানাইজড ক্রাইমের সহকারী পুলিশ সুপার আল মামুন।

চারটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে গ্রাহকের ৪২১ কোটি টাকা পাচার করেছে আলেশা মার্ট লিমিটেডের চেয়ারম্যান মঞ্জুর আলম সিকদার। অর্থপাচারে তাকে সহযোগিতা করেছেন তাঁর স্ত্রী সাদিয়া চৌধুরীসহ তিন ব্যক্তি ও দশ প্রতিষ্ঠান। সারা বছরে মঞ্জুর আলমের আয় ছিল ১৩ লাখ টাকা। তবে আলেশা মার্ট খোলার সাত মাসেই ৩১ কোটি টাকার সম্পত্তির মালিক হন তিনি। সাত মাসে তাঁর সম্পদ ও আয় বৃদ্ধি পেয়েছে ২২৮ গুণের বেশি। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) বলছে, এগুলো সবই গ্রাহকের টাকা আত্মসাৎ করে গড়ে তোলা সম্পদ। প্রতিষ্ঠানটির মালিক ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে গ্রাহকের অর্থপাচারের প্রাথমিক প্রমাণ মিলছে। এরপর তাদের বিরুদ্ধে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) বনানী থানায় মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে মামলা হয়েছে। মামলাটি তদন্ত করছে সিআইডি।

গ্রাহকদের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ ও মামলার পর আলেশা মার্টের অর্থপাচারের বিষয়ে আড়াই বছর ধরে অনুসন্ধান করে সিআইডি। অনুসন্ধান শেষে সিআইডি প্রতিষ্ঠান ও মালিকের বিরুদ্ধে ৪২১ কোটি ৯১ লাখ টাকা পাচারের প্রাথমিক প্রমাণ পায়। এই ঘটনায় গত ৩১ মে মামলা করা হয়।

মামলায় আসামিরা হলেন আলেশা মার্ট লিমিটেডের চেয়ারম্যান মো. মঞ্জুর আলম সিকদার, তাঁর স্ত্রী সাদিয়া চৌধুরী, প্রস্তাবিত পিপিলস ব্যাংক লিমিটেডের চেয়ারম্যান আবুল কাসেম, মোটরসাইকেল সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ও এস কে ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী আল মামুন। এছাড়াও দশটি প্রতিষ্ঠানকে আসামি করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলো হলো আলেশা মার্ট লিমিটেড, আলেশা হোল্ডিং লিমিটেড, আলেশা ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড সার্ভিসিং লিমিটেড, আলেশা টেক লিমিটেড, আলেশা ফুড অ্যান্ড বেভারেজ লিমিটেড, আলেশা রাইড লিমিটেড, আলেশা এক্সপোর্ট–ইমপোর্ট লিমিটেড, আলেশা ফার্মেসি লিমিটেড ও আলেশা এগ্রো লিমিটেড। সবগুলো প্রতিষ্ঠানের ঠিকানা বনানীর ১৭ নম্বর সড়কের রূপসা টাওয়ার।

বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাফিজুর রহমান মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, গত ৩১ মে আলেশা মার্টের মালিকের বিরুদ্ধে অর্থপাচার আইনে সিআইডির একজন কর্মকর্তা মামলাটি করেছেন। মামলা নম্বর ৪০। মামলাটি সিআইডি তদন্ত করছে বলেও জানান তিনি।

মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে, আলেশা মার্টের চেয়ারম্যান মঞ্জুর আলম সিকদার ন্যাশনাল ব্যাংক, সিটি ব্যাংক, মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক ও স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের চারটি অ্যাকাউন্ট থেকে ৪২১ কোটি ৯১ লাখ টাকা উত্তোলন করে বিভিন্ন সময় পাচার করেছেন।

সিআইডির তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ২০২০-২১ অর্থবছরে মঞ্জুর আলম সিকদারের আয়কর নথিতে তাঁর বেতনসহ অন্যান্য সোর্স থেকে বার্ষিক আয় ছিল ১৩ লাখ ৯০ হাজার টাকা মাত্র। কিন্তু আলেশা মার্ট শুরুর পর তিনি ২০২১ সালের ৩১ জানুয়ারি থেকে ২৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে ৩১ কোট ৮০ লাখ ৫৮ হাজার টাকার স্থাবর সম্পদের মালিক হন। সাত মাসে তাঁর সম্পদ ও আয় বৃদ্ধি পেয়েছে ২২৮ গুণের বেশি। আসলে মঞ্জুর আলম হাজার হাজার গ্রাহকের কাছ থেকে প্রতারণার মাধ্যমে টাকা নিয়ে এই সম্পদের মালিক হন।

এছাড়াও গ্রাহকের টাকা আত্মসাৎ করে মঞ্জুর আলম সিকদার প্রস্তাবিত পিপলস ব্যাংক লিমিটেডের ডাইরেক্টরশীপ নেওয়া এবং শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ করেছিলেন। পিপলস ব্যাংকের চেয়ারম্যান আবুল কাশেম ১০০ কোটি টাকা দিয়েছিলেন। এই ঘটনায় আবুল কাশেমকেও মামলায় আসামি করেছে সিআইডি।
 
আলেশা মার্টের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ বাইক সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান এস কে ট্রেডার্স এর স্বত্বাধিকারী আল মামুনকে আসামি করা হয়েছে। তিনি দেশের হাজার হাজার গ্রাহককে আলেশা মার্টে বিনিয়োগ করতে প্রলুব্ধ করেছেন। তিনি সাধারণ গ্রাহকদের আস্থা তৈরি করতে নিজের প্রতিষ্ঠানের চেক দিয়েছেন। যা বিশ্বাস করে গ্রাহকেরা প্রতারিত হয়েছে। এস কে ট্রেডার্সের মামুন মঞ্জুর আলম সিকদারকে অর্থপাচারে সহযোগিতা করেছেন বলেও সিআইডি দাবি করেছে।

গত ১ মে পর্যন্ত আলেশা মার্টের বিরুদ্ধে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে ২ হাজার ৮৭ জন এবং সিআইডি সদর দপ্তরে ৩৫ জন গ্রাহক প্রতারিত হয়ে অভিযোগ করেন। এ সকল অভিযোগে অর্থ আত্মসাতের কথা বলা হয়েছে এবং তারা টাকা ফেরতে আইনি সহায়তা চেয়েছেন।
 
সিআইডির তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আলেশা মার্ট শুরু থেকেই আকর্ষণীয় ডিসকাউন্টে বিভিন্ন অফার দিয়ে অসংখ্য গ্রাহকের কাছ থেকে মোটরসাইকেল ও ইলেকট্রনিক বিভিন্ন পণ্য সরবরাহের কথা বলে অগ্রিম টাকা নেয়। টাকা ফেরত না দিয়ে প্রতিষ্ঠান ও প্রতিষ্ঠানের মালিক ই-কমার্স ব্যবসার আড়ালে প্রতারণার মাধ্যমে অর্থপাচার করেছেন।

অর্থপাচারের মামলা হলেও এখনো কেউ গ্রেপ্তার হননি। পুলিশ বলছে আসামিরা পলাতক। তবে গ্রাহকদের অনেকেই জানিয়েছেন মঞ্জুর আলম প্রকাশ্যে রয়েছে। তাকে পুলিশ গ্রেপ্তার করছে না। মঞ্জুর আলমের বিরুদ্ধ এই মামলা ছাড়াও ঢাকা ও ঢাকার বাইরে একাধিক মামলা রয়েছে। সেগুলোর কয়েকটিতে তাঁর বিরুদ্ধে আদালতের পরোয়ানাও রয়েছে। তারপরও দীর্ঘদিন ধরে তিনি ধরাছোঁয়ার বাইরেই থাকছেন। যে দশটি প্রতিষ্ঠান মঞ্জুর আলম করেছেন, তাও গ্রাহকের টাকা আত্মসাৎ করে।

অর্থপাচারের বিষয়ে মঞ্জুর আলমের বক্তব্য জানতে আলেশা মার্টের বনানীর রূপসা টাওয়ারের অফিসে দুদিন গিয়েও সেখানে পাওয়া যায়নি। তাঁর মুঠোফোনে ফোন করে ও খুদে বার্তা দিয়েও কোনো সারা মেলেনি। অপর আসামিদের বর্তমান ঠিকানায় গিয়ে তাদের পাওয়া যায়নি। তাদের ব্যবহৃত মুঠোফোনও বন্ধ। তারা পলাতক রয়েছেন।

সিআইডি’র অর্গানাইজড ক্রাইমের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) কুসুম দেওয়ান জানান, মামলাটি তদন্ত চলছে। আসামিদের গ্রেপ্তারে সিআইডির অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

প্রসঙ্গত, আলেশা মার্ট ২০২০ সালের ২৬ জুলাই আরজেএসসি (যৌথ মূলধন কোম্পানি ও ফার্মসমূহের নিবন্ধকের পরিদপ্তর) থেকে নিবন্ধন করা হয়। একই বছরের ১০ নভেম্বর ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) থেকে ট্রেড লাইসেন্স নেয়। ২০২১ সালের ৭ জানুয়ারি থেকে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান আলেশা মার্টের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ডিমলায় টিকা নিতে গিয়ে পিকআপের ধাক্কায় নানি-নাতনি নিহত

ডিমলা (নীলফামারী) প্রতিনিধি 
উপজেলার গয়াবাড়ী ইউনিয়নের গয়াবাড়ী স্কুল অ্যান্ড কলেজসংলগ্ন ঘোড়ামারা রোড এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। ছবি: আজকের পত্রিকা
উপজেলার গয়াবাড়ী ইউনিয়নের গয়াবাড়ী স্কুল অ্যান্ড কলেজসংলগ্ন ঘোড়ামারা রোড এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। ছবি: আজকের পত্রিকা

নীলফামারীর ডিমলায় টিকা নিতে যাওয়ার পথে পিকআপ ভ্যানের ধাক্কায় নানি তাঁর ১৪ দিনের নবজাতক নাতনিসহ নিহত হয়েছেন। আজ রোববার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে উপজেলার গয়াবাড়ী ইউনিয়নের গয়াবাড়ী স্কুল অ্যান্ড কলেজসংলগ্ন ঘোড়ামারা রোড এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।

নিহতরা হলেন উপজেলার গয়াবাড়ী ইউনিয়নের শুটিবাড়ি বাজারসংলগ্ন এলাকার আব্দুস ছাত্তার খানের স্ত্রী মোছা. সূর্য খাতুন (৫৫) এবং তাঁর নাতনি সামিয়া আক্তার (১৪ দিন) একই এলাকার বাসিন্দা বাবুল হোসেনের মেয়ে।

স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, সকালে সূর্য খাতুন নাতনি সামিয়াকে নিয়ে টিকাদান কেন্দ্রে যাচ্ছিলেন। রাস্তা পার হওয়ার সময় দ্রুতগতির একটি মালবাহী পিকআপ তাঁদের ধাক্কা দেয়। ঘটনাস্থলেই নবজাতক সামিয়া মারা যায়। স্থানীয়রা গুরুতর আহত অবস্থায় সূর্য খাতুনকে উদ্ধার করে ডিমলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।

দুর্ঘটনার পর পিকআপের চালক পালিয়ে যায়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে।

নিহত নবজাতকের স্বজনেরা বলেন, নানি তাঁর নাতনিকে নিয়ে টিকা দিতে গিয়েছিল। সকালবেলায় হাসিখুশি ছিল সবাই। কিন্তু মুহূর্তেই সব শেষ হয়ে গেল।

স্থানীয়রা জানান, ওই সড়কে বেপরোয়া গতির কারণে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটে।

ডিমলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বলেন, খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ উদ্ধার করেছে। পিকআপের চালককে শনাক্তের চেষ্টা চলছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

স্টেশনমাস্টারের দুর্নীতি-স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ তুলে মানববন্ধন

আক্কেলপুর (জয়পুরহাট) প্রতিনিধি 
জয়পুরহাটের আক্কেলপুরের স্টেশনমাস্টারের বিরুদ্ধে অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ তুলে মানববন্ধন। ছবি: আজকের পত্রিকা
জয়পুরহাটের আক্কেলপুরের স্টেশনমাস্টারের বিরুদ্ধে অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ তুলে মানববন্ধন। ছবি: আজকের পত্রিকা

জয়পুরহাটের আক্কেলপুরের স্টেশনমাস্টার খাদিজা খাতুনের বিরুদ্ধে অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ তুলে মানববন্ধন করা হয়েছে। আজ রোববার বেলা ১১টার দিকে আক্কেলপুর রেলস্টেশনের প্ল্যাটফর্মে ‘আক্কেলপুরবাসী’র ব্যানারে এই মানববন্ধন হয়। এতে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার অর্ধশতাধিক মানুষ অংশ নেন।

মানববন্ধনে বক্তারা অভিযোগ করেন, খাদিজা খাতুন ২০ বছরের বেশি সময় ধরে আক্কেলপুরের স্টেশনমাস্টার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি সান্তাহার জংশনের দায়িত্বেও আছেন। স্থানীয় যাত্রীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার, নানা অনিয়ম-দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়া এবং তাঁর মনগড়া প্রতিবেদনের কারণে চিলাহাটী এক্সপ্রেস ট্রেনের আক্কেলপুরে যাত্রাবিরতি বন্ধ রয়েছে বলে অভিযোগ করেন বক্তারা। তাঁকে দ্রুত এখান থেকে অপসারণের দাবি জানান তাঁরা।

মানববন্ধনে সভাপতিত্ব করেন আক্কেলপুর পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর ও চিলাহাটী এক্সপ্রেসের যাত্রাবিরতির সমন্বয়ক আব্দুর রউফ মাজেদ। বক্তব্য দেন পৌরসভার সাবেক প্যানেল মেয়র রফিকুল ইসলাম চপল, তিলকপুর ইউপির সদস্য মামুনুর রশিদ পিন্টু, কলেজশিক্ষক খায়রুল ইসলাম চৌধুরী, ব্যবসায়ী তরিকুল ইসলাম তুহিন, মাসুদ চৌধুরী, ছাত্রদল নেতা আরমান হোসেন কানন প্রমুখ।

বক্তারা বলেন, আক্কেলপুর, ক্ষেতলাল, নওগাঁর বদলগাছী-পত্নীতলা এবং বগুড়ার দুপচাঁচিয়া এলাকার যাত্রীরা এই স্টেশন ব্যবহার করে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে যাতায়াত করে। চিলাহাটী এক্সপ্রেস ট্রেনের যাত্রাবিরতি পেলে মানুষের ভোগান্তি অনেকটা কমবে। কিন্তু স্টেশনমাস্টার খাদিজা খাতুনের মনগড়া প্রতিবেদনের কারণে তা বন্ধ রয়েছে।

এ বিষয়ে আক্কেলপুরের স্টেশনমাস্টার খাদিজা খাতুন বলেন, ‘আমি চিলাহাটী এক্সপ্রেসের যাত্রাবিরতির বিরোধিতা করে কোনো মৌখিক বা লিখিত প্রতিবেদন দিইনি। ২০২৪ সাল থেকে সান্তাহার জংশনের অতিরিক্ত দায়িত্বও পালন করছি। এক বছর তিন মাসে কোনো যাত্রী আমার দ্বারা হয়রানির শিকার হয়নি। আমার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলো মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। একটি স্বার্থান্বেষী মহল আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বন্য প্রাণী সংরক্ষণের নতুন আইনে জামিনের সুযোগ না রাখার প্রস্তাব

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।  ফাইল ছবি
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। ফাইল ছবি

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, ‘বন্য প্রাণী সংরক্ষণে নতুন করে যে আইন করা হচ্ছে, তার খসড়ায় জামিনের সুযোগ না রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। আমরা বন্য প্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন যেটা নতুন ড্রাফট করেছি, সেখানে কগনিজেবল (পুলিশ যেখানে আদালতের অনুমতি ছাড়াই গ্রেপ্তার ও তদন্ত শুরু করতে পারে) এবং নন-বেইলেবল (জামিন অযোগ্য) অপরাধ যুক্ত করেছি, যা এখনো খসড়া আকারে রয়েছে এবং ক্যাবিনেটে যায়নি।’

আজ রোববার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বন ভবনে ‘আন্তর্জাতিক মিঠাপানির ডলফিন দিবস ২০২৫’ অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।

পরিবেশ উপদেষ্টা বলেন, ‘বন্য প্রাণী রক্ষায় শুধু আইন নয়, মনস্তাত্ত্বিক ও আচরণগত পরিবর্তন জরুরি। যদি মানুষ নিরীহ প্রাণীর প্রতি নিষ্ঠুর হয়, তা সমাজের মূল্যবোধের অবক্ষয়ের প্রতিফলন। আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর মেছো বিড়াল নিয়ে সচেতনতা সৃষ্টির চেষ্টা করলাম। মেছো বিড়ালকে শুধু শুধুই আমরা মেছো বাঘ বলি। বাঘ বলে একটা ভীতি সঞ্চার করি। নিরীহ একটা প্রাণীকে মেরে ফেলি। মারি যে, লজ্জাও পাই না। মেরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তা প্রকাশ করি। বন্য প্রাণী আইন বলেন, বিধিমালা বলেন, বন বিভাগ বলেন, সব যদি সক্রিয় হয়; কিন্তু মনস্তাত্ত্বিক পরিবর্তন যদি না আসে, তাহলে এই প্রাণীগুলোকে বাঁচানো যাবে না। এই নিষ্ঠুরতার বিরুদ্ধে সমাজকে দাঁড়াতে হবে।’

অনুষ্ঠানে ওয়াইল্ডলাইফ কনজারভেশন সোসাইটির কান্ট্রি ডিরেক্টর ও ডলফিন বিশেষজ্ঞ ড. মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘দেশের ৪৫টি বড় নদীতে জরিপ করে ৩৯টি নদীতে ২ হাজার ৮২টি ডলফিনের সংখ্যা নির্ণয় করা হয়েছে। আমাদের প্রায় ২৫০টি ডলফিন মারা যাওয়ার তথ্য আছে। এর মধ্যে ৮০ শতাংশ আমরা দেখেছি কারেন্ট জাল অথবা ফাঁস জালে আটকে মারা গেছে।’

এ বিষয়ে পরিবেশ উপদেষ্টা বলেন, ‘ডলফিনগুলোকে বাঁচানোর জন্য বা বংশবৃদ্ধি করার জন্য যা প্রয়োজন, তা একটা সভ্য সমাজের মানদণ্ডের নির্ণায়ক। আপনি যদি বলেন, শুশুক বা আমাদের ডলফিন থাকবে পরিষ্কার পানিতে, তাহলে যেকোনো সভ্য জাতিও থাকবে পরিষ্কার পানির পাশেই। যে জাতি নিজেকে সভ্য দাবি করবে, সে জাতি তার নদীগুলোকে আবার দূষিত করবে—দুটো একসঙ্গে হতে পারে না। দুটো সাংঘর্ষিক হয়ে যাচ্ছে।’

সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘যখন ডলফিনের সংখ্যা বাড়বে, তখন বুঝতে হবে, নদীদূষণ আমরা নিয়ন্ত্রণ করছি। যখন আমার ডলফিনের সংখ্যা কমবে, তখন আমি বুঝব, নদীগুলোকে আমি ঝুঁকিপূর্ণ করে ফেলছি। নদী মানুষের জন্য যখন ঝুঁকিপূর্ণ হয়, তখন তা ডলফিনের জন্যও ঝুঁকিপূর্ণ। নদী যখন ডলফিনের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ, তখন তা মানুষের জন্যও ঝুঁকিপূর্ণ।’

ডলফিন নদীর ‘সুস্থতার প্রতীক’ উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন, যেখানে ডলফিন টিকে থাকে, সেখানে নদীও টিকে থাকে। আর নদী টিকে থাকলেই মানুষ বাঁচে। ডলফিন নিয়ে কথা বলা মানে আমাদের বেঁচে থাকার কথাই বলা। কারণ নদীর পানি যদি দূষিত হয়, তাহলে তা যেমন ডলফিনের জন্য বিপদ, তেমনি মানুষের জন্যও। নদী পরিষ্কার রাখাই মানুষের ও ডলফিনের জীবনের অন্যতম শর্ত।

পরিবেশ উপদেষ্টা বলেন, ‘আমি আশা করি, দেশের প্রতিটি জেলায় বন বিভাগকে সহায়তা করার জন্য স্বেচ্ছাসেবী নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা হবে। এতে প্রাণী উদ্ধার ও সুরক্ষায় দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ সম্ভব হবে। বন্য প্রাণী রক্ষায় যাঁরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে কাজ করছেন, তাঁদের আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই।’

প্রধান বন সংরক্ষক মো. আমীর হোসাইন চৌধুরী সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন বন সংরক্ষক মো. ছানাউল্যা পাটওয়ারী, বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. রেজাউল করিম চৌধুরী প্রমুখ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

মির্জাপুরে নিখোঁজের তিন দিন পর তিন সন্তানের জননীর পা বাঁধা লাশ উদ্ধার

মির্জাপুর (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি
আপডেট : ২৬ অক্টোবর ২০২৫, ১৫: ৪০
নিহত গোলাপী বেগম । ছবি: সংগৃহীত
নিহত গোলাপী বেগম । ছবি: সংগৃহীত

টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে নিখোঁজের তিন দিন পর গোলাপী বেগম (৩৫) নামের তিন সন্তানের জননীর পা বাঁধা অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। রোববার (২৬ অক্টোবর) সকালে মির্জাপুর থানা-সংলগ্ন বারোখালী খাল থেকে তাঁর লাশ উদ্ধার করা হয়। নিহত গোলাপী বেগম মির্জাপুর পৌর এলাকার বাওয়ার রোডের বিশু মিয়ার মেয়ে ও পোষ্টকামুরী দক্ষিণ পাড়ার আব্দুল কাদের মিয়ার স্ত্রী।

পারিবারিক সূত্র জানায়, তিন দিন আগে গোলাপী বাসা থেকে বের হয়ে নিখোঁজ হন। এর পর থেকে তাঁর আর খোঁজ মেলেনি। রোববার সকালে স্থানীয় লোকজন থানার পাশে খালে ভাসমান লাশ দেখতে পেয়ে পুলিশকে খবর দেয়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে জিআই তার দিয়ে পা বাঁধা অবস্থায় অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করে।

মির্জাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ রাশেদুল ইসলাম বলেন, ‘গোলাপী বেগম তিন দিন আগে বাসা থেকে বের হয়ে নিখোঁজ হন বলে পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। পরনের কাপর দেখে তাঁর লাশ স্বামী কাদের মিয়া শনাক্ত করেছেন। এটি একটি হত্যা। তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। মামলার প্রস্তুতি চলছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত