Ajker Patrika

কেরানীগঞ্জে রাতের আঁধারে ভেকু দিয়ে মাটি কেটে ফসলি জমি দখলের চেষ্টা

কেরানীগঞ্জ (ঢাকা) প্রতিনিধি
রাতের আঁধারে কয়েক কৃষকের ফসলি জমি কেটে দুপাশে মাটি ফেলে রাখা হয়েছে। ছবি: আজকের পত্রিকা
রাতের আঁধারে কয়েক কৃষকের ফসলি জমি কেটে দুপাশে মাটি ফেলে রাখা হয়েছে। ছবি: আজকের পত্রিকা

ঢাকার কেরানীগঞ্জে রাতের আঁধারে ভেকু দিয়ে মাটি কেটে কয়েক কৃষকের ফসলি জমি দখলচেষ্টার অভিযোগ পাওয়া গেছে। উপজেলার রোহিতপুর ইউনিয়নের সোনাকান্দা গ্রামে গত বুধবার রাতে এ ঘটনা ঘটে। রাতারাতি বিশাল আয়তনের জমিতে মাটি খনন করা হলেও কারা এর সঙ্গে জড়িত তা নিয়ে ধুম্রজাল তৈরি হয়েছে। এলাকাবাসী বলছেন, একটি প্রভাবশালী চক্র রাতের অন্ধকারে এ কাজ করেছে কিন্তু দায় স্বীকার করছে না। এভাবে ভেকু দিয়ে মাটি কাটার ফলে কৃষকদের কয়েক লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।

ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, গত বুধবার (১ অক্টোবর) দিবাগত রাতে স্থানীয় সাবেক যুবলীগ নেতা নেওয়াজ আলী, সেলিম, কালাম, রোহিতপুর ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক সভাপতি মাসুম পারভেজ, দলিল লেখক আরিফসহ একটি চক্র সোনাকান্দা গ্রামের কৃষক সফর আলী, হান্নান, সোহাগ, বাতেন, মমিন আলীসহ আরও কয়েজনের জমি কেটে রাস্তা নির্মাণের জন্য বাঁধ দিয়েছেন। এতে কৃষকদের ফসলি জমি নষ্ট এবং এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়।

রনি নামের এক ভুক্তভোগী বলেন, ‘জমিগুলোর পাশ দিয়ে সবুজ ছায়া আবাসন প্রকল্পের অনেক প্লট আছে। আর এই প্রকল্পের হয়ে কাজ করেন আরিফ। তিনি জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে আড়ালে থেকে জবরদখলে সহযোগিতা করেন। আরিফ মূলত সবুজ ছায়ার এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য আড়ালে থেকে এ কাজ করিয়েছেন। এই চক্রে আরও অনেকেই জড়িত। তবে কেউ দায় স্বীকার করছেন না। আমরা কেরানীগঞ্জ মডেল থানা বিএনপির সহসভাপতি রুহুল আমিন (রনির আপন চাচা) চাচার সঙ্গে বসেছি। তিনি বলেছেন, যারাই করে থাকুক, কাজ আর সামনে আগাবে না। এটা সমাধান করে দিবেন।’

রাতের আঁধারে কয়েক কৃষকের ফসলি জমি কেটে দুপাশে মাটি ফেলে রাখা হয়েছে। ছবি: আজকের পত্রিকা
রাতের আঁধারে কয়েক কৃষকের ফসলি জমি কেটে দুপাশে মাটি ফেলে রাখা হয়েছে। ছবি: আজকের পত্রিকা

ক্ষতিগ্রস্ত মান্নান বলেন, ‘এই জায়গা দিয়ে একটা চক্র এরকমটা করবে বুঝতে পেরে আমি আগেই থানা বিএনপির নেতা রুহুল আমিন ও রুহিতপুর ইউনিয়ন বিএনপির নেতা কামাল মাহমুদকে জানিয়েছিলাম। কামাল মাহমুদ বলেছিলেন, ‘আমি থাকতে আপনার জমির ওপর দিয়ে রাস্তা করতে দেব না।’ কিন্তু এখন রাতারাতি কারা এ কাজ করল, কেউ দায় স্বীকার করছে না। আমি এর প্রতিকার চাই। এখন তাদের (ওই নেতাদের) সঙ্গে আবারও আলাপ চলছে। তারা আশ্বস্ত করেছেন যে, এই দখল আর সামনে আগাতে দিবেন না, এটা থানার ওসিকে বলে একটা সমাধান করে দিবেন।’

তিনি আক্ষেপ করে বলেন, ‘আমি বুঝ হওয়ার পর থেকে বিএনপি করি। এখন শারীরিকভাবে অসুস্থ, তাই কোথাও আগের মতো যেতে পারি না। কিন্তু এই সময়ে এসে আমার জমিতে এ রকম দখলদারি হবে তা ভাবতেও কষ্ট হচ্ছে।’

রাতের আঁধারে কয়েক কৃষকের ফসলি জমি কেটে দুপাশে মাটি ফেলে রাখা হয়েছে। ছবি: আজকের পত্রিকা
রাতের আঁধারে কয়েক কৃষকের ফসলি জমি কেটে দুপাশে মাটি ফেলে রাখা হয়েছে। ছবি: আজকের পত্রিকা

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ভুক্তভোগী জানান, এ ঘটনায় ব্যবহৃত ড্রেজার ও ভেকুর মালিক নেওয়াজ ও সেলিম। তাদের যোগসাজশে সবুজ ছায়া আবাসন প্রকল্পের ভেন্ডার হিসেবে কাজ করা আওয়ামী লীগের সুবিধাভোগী আরিফের নেতৃত্বে একটি সংঘবদ্ধ দল এই রাস্তা নির্মাণ করে জমিগুলো নিজেদের দখলে নিতে কাজ করছেন। এ ঘটনায় কৃষকদের কয়েক লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।

ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক মমিন আলী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘আমি লালশাক, লাউ, টমেটো চাষ করেছিলাম। কিন্তু রাতের আঁধারে বৃষ্টির সুযোগ নিয়ে আমার তিনটি খেতের ফসল নষ্ট করে বাঁধ দিয়েছে। এতে আমার প্রায় ৫০ হাজার টাকার ক্ষতি হয়েছে।’

ভুক্তভোগী কৃষক সোহাগ বলেন, ‘রাতে ৮-১০ জনের একটি গ্রুপ ভেকুর সাহায্যে আমাদের জমিতে বাঁধ দিয়ে দখলে নেওয়ার চেষ্টা করেছে। আমরা সব ভুক্তভোগী মিলে সামাজিকভাবে বিষয়টি দেখতেছি। কারা এই মাটি ভরাট করেছে এখনো জানি না।’

তবে অভিযুক্ত রোহিতপুর ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাবেক সভাপতি মাসুম পারভেজ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘যারা রাতের আঁধারে কাজ করেছে, তারা চোর-বাটপার। চোর-বাটপার ছাড়া রাতের আঁধারে কেউ কাজ করে না। আমি এসবের সঙ্গে জড়িত না। আমি সব সময় অন্যায়ের প্রতিবাদ করি। তাই মানুষ আমার নাম জড়িয়েছে।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি আজকের পত্রিকার প্রতিনিধিকে ঘটনাস্থলে গিয়ে তদন্ত করার কথাও বলেন।

আরেক অভিযুক্ত দলিল লেখক আরিফ বলেন, ‘কৃষকদের জমি ভরাট করেছে শুনেছি, তবে কারা করেছে আমি জানি না। আমি এগুলোর সঙ্গে জড়িত না।’

এ ব্যাপারে কেরানীগঞ্জ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুল হক ডাবলু জানান, দখল বা মাটি কাটা নিয়ে এখন পর্যন্ত থানায় কেউ অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত