Ajker Patrika

‘যাকে ভালোবেসে বিয়ে করেছিলাম, সে-ই চাকু দিয়ে আমার চেহারা কাটে’

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৬: ৩২
‘যাকে ভালোবেসে বিয়ে করেছিলাম, সে-ই চাকু দিয়ে আমার চেহারা কাটে’

‘নরপশুর মতো নির্যাতনের পরেও আমি কেন মরে যাইনি, সেটাই ওর রাগ। লজ্জায়, মান সম্মানের ভয়ে আমি এত দিন কথা বলি নাই। কিন্তু এখন আমার সন্তানকে অ্যাসিড মারার হুমকি দিচ্ছে। তাই আর চুপ থাকতে পারলাম না।’ —আজ রোববার আজকের পত্রিকাকে কথাগুলো বলছিলেন স্বামীর নির্যাতনের শিকার নারী তাসনিম সারা প্রিয়া। 

গত ১০ এপ্রিল দুপুরে রাজধানীর উত্তরার বাসায় স্বামী মো. রনি চাকু ও হাতুড়ি দিয়ে আঘাত করে তাঁর মুখ থেঁতলে দেন। এ ঘটনায় গত ২২ মে উত্তরা পশ্চিম থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেন তিনি। সম্প্রতি তিনি এক ফেসবুক পোস্টে বিষয়টিকে সামনে আনেন। পরে এ নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। 

তাসনিম সারা প্রিয়া আজকের পত্রিকাকে বলেন, মো. রনি এরাবিয়ান বোরকা কালেকশনের কর্ণধার। ২০২০ সালে তাঁদের পরিচয় হয়। এরাবিয়ান বোরকা কালেকশনের অনলাইন পেজে লাইভ করতে গিয়ে তাঁদের মধ্যে সখ্য গড়ে ওঠে। ২০২২ সালে তাঁরা বিয়ে করেন। 

তাসনিম সারা প্রিয়ার অভিযোগ, বিয়ের পর রনি তাঁকে নজরবন্দী  জীবন যাপনে বাধ্য করেন। পরিবারের কারও সঙ্গে কথা বলতে দিতেন না। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার বন্ধ করে দেন। পাশাপাশি যৌতুকের জন্যও চাপ দিতে থাকেন। বাবার ফ্ল্যাট বিক্রি করে অথবা বন্ধক রেখে টাকা এনে দিতে বলা হয়। এতে রাজি না হয়ে তালাক দিতে চাওয়ায় তাসনিমকে হত্যার চেষ্টা করা হয়। 

তাসনিম সারা প্রিয়া বলেন, ‘যাকে ভালোবেসে বিয়ে করেছিলাম, সে-ই চাকু দিয়ে আমার চেহারা কাটে। সেদিন দুপুরে আমি নামাজ পড়ছিলাম। তখন রনি তিনজনকে নিয়ে বাসায় ঢোকে। ড্রেসিং টেবিলের ভারী কাঠের টুল দিয়ে আমার মুখে বাড়ি দেয়, হাতে চেইন পেঁচিয়ে এসেছিল, সেটা দিয়ে ঘুষি দিয়ে আমার মাথা ফাটায়। চাকু দিয়ে কপাল থেকে ঠোঁটের নিচ পর্যন্ত কেটে ফেলে। আমার চেহারা সে নষ্ট করে দিয়েছে। আমার নাক ভেঙে গিয়েছিল, নাকের কোনো হাড্ডি ছিল না। মুখের ওপরের চোয়াল ভেঙে গিয়েছিল। বাম পাশের দাঁত নড়ে গেছে। মাথার হাড্ডি বের হয়ে গিয়েছিল।’ 

সেদিন বাসায় থাকা তাসনিমের মা এবং ছোট বোনকেও রনির সঙ্গে আসা লোকেরা মারধর করে বলে জানান তাসনিম। একপর্যায়ে তাঁদের চিৎকার শুনে ভাড়াটে ও বাড়ির মালিক এসে তাঁদের উদ্ধার করেন। তখন রনি পালিয়ে যায়। 

নির্যাতনে আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন তাসনিম সারা প্রিয়া। ছবি: সংগৃহীত তাসনিম জানান, ২০১৪ সালে তাঁর প্রথম বিয়ে হয়। সেই স্বামীর সঙ্গে ২০১৮ সালে বিচ্ছেদ ঘটে। সেই সংসারে তাঁদের একটি মেয়ে রয়েছে, যার বয়স বর্তমানে আট বছর। রনির একজন স্ত্রী রয়েছে জেনে তিনি বিয়ে করেছিলেন। কিন্তু বিয়ের পর জানতে পারেন, তাঁর দুজন স্ত্রী। 

তাসনিমের ভাষ্যমতে, রনির দুজন স্ত্রীই তাঁকে মোটা অঙ্কের যৌতুক দিয়েছিলেন। প্রথম স্ত্রীর কাছ থেকে পাওয়া তিন কোটি টাকা দিয়ে রনি তাঁর ব্যবসা দাঁড় করান। দ্বিতীয় স্ত্রীও তাঁকে ১৫-২০ লাখ টাকা দিয়েছিলেন। 

তাসনিম বলেন, ‘আমার বেঁচে থাকার কোনো কথা ছিল না। আমি ২০ দিন হসপিটালে ছিলাম। দুইটা সার্জারি হয়েছে। এখনো আমার ট্রিটমেন্ট বাকি। আমার ছোট মেয়েটার বয়স ১০ মাস। আমি মরে গেলে আমার মেয়েদের কে দেখবে?’ 

রনির বিচার চেয়ে গত ২২ মে উত্তরা পশ্চিম থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেন তাসনিম। এরপর গত ১৩ আগস্ট রনিকে তালাকের নোটিশও পাঠিয়েছেন। তাসনিম জানান, রনি এবং তার পরিবার বিত্তবান ও প্রভাবশালী হওয়ায় পুলিশের কাছ থেকে তিনি আশানুরূপ সাহায্য পাননি। 

এদিকে তাসনিমের লাইভের পর রনিও লাইভে এসে তাসনিমের বিরুদ্ধে নানান অভিযোগ করেন। 

রনি বলেন, তাসনিম পরকীয়া সম্পর্কে জড়িত থাকায় রাগান্বিত হয়ে তিনি নির্যাতন করেন। তাসনিম একাধিক বিয়ে করেছে বলেও অভিযোগ করেন। 

রনি দাবি করে বলেন, তাসনিম তার বাসা থেকে ২৫ থেকে ৩০ ভরি সোনা, ঘরের আসবাবপত্রসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র নিয়ে গেছেন। তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেন তাসনিম। 

লাইভে রনি বলেন, তাসনিম ফেসবুকে মিথ্যা বলে মামলা দিয়ে তাঁকে ‘ভিলেন’ বানাবার চেষ্টা করছেন। স্বামী-স্ত্রীর ঝগড়াকে প্রকাশ্যে এনে তাসনিম স্বার্থ হাসিলের চেষ্টা করছেন। আইনিভাবেই তিনি জামিনে আছেন বলেও জানান। পরবর্তীতে তিনি লাইভ ভিডিওটি মুছে (ডিলিট) ফেলেন। 

এসব বিষয়ে মানবাধিকার কর্মী ও আইনজীবী এলিনা খান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘প্রথম কথা হলো, কোনো আইনই নির্যাতনকে সমর্থন করে না। স্ত্রী যদি পরকীয়া করে থাকেন, তাহলে স্বামী তাঁকে ডিভোর্স দিতে পারতেন। আমাদের দেশে কিছু ঘটলেই নারীর চরিত্রকে সামনে আনা হয়, পরকীয়ার কথা বলা হয়। লোকজনও মনে করে, মহিলাটা খারাপ কাজ করেছে, তাই শাস্তি পেয়েছে। কিন্তু যে লোকটা অত্যাচার করেছে, তাঁকে খারাপ লোক হিসেবে চিহ্নিত করা উচিত। পরকীয়া করে থাকলে স্ত্রীকে ডিভোর্স দেওয়া যেত অথবা আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের পথ ছিল। কোনোটাই না করে স্ত্রীকে নির্যাতন করে সে বেআইনি কাজ করেছে। এ জন্য তাঁর বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বরিশালে গৃহবধূকে দলবদ্ধ ধর্ষণের দায়ে ৪ জনের মৃত্যুদণ্ড

নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল
আপডেট : ২৬ অক্টোবর ২০২৫, ১৭: ১৩
বরিশাল নগরীতে গৃহবধূকে দলবদ্ধ ধর্ষণ মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত তিন আসামিকে আদালত থেকে কারাগারে নিয়ে যায় পুলিশ। ছবি: আজকের পত্রিকা
বরিশাল নগরীতে গৃহবধূকে দলবদ্ধ ধর্ষণ মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত তিন আসামিকে আদালত থেকে কারাগারে নিয়ে যায় পুলিশ। ছবি: আজকের পত্রিকা

বরিশাল নগরীতে এক গৃহবধূকে দলবদ্ধ ধর্ষণের দায়ে ৪ জনকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত। বরিশাল নারী ও শিশু নির্যাতন অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. রাকিবুল ইসলাম আজ রোববার দুপুরে এ রায় ঘোষণা করেন।

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন নগরীর ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের রাসেল গাজী (৪৫), মো. রোকন খান (৩৩), রাজিব জমাদ্দার (৩৫) ও জাহিদ হাওলাদার (৩৬)।

ট্রাইব্যুনালের পেশকার অজিবর রহমান জানান, রায় ঘোষণার সময় রাসেল, রাজিব ও জাহিদ আদালতে উপস্থিত ছিলেন। তাঁদের কারাগারে পাঠানো হয়েছে। অপর আসামি রোকন খান মামলার বিচার চলাকালে জামিনে মুক্তি পেয়ে পলাতক রয়েছেন।

অজিবর রহমান আরও জানান, ধর্ষণের ঘটনার পর গ্রেপ্তার এই চার আসামি অপরাধ স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছিলেন। মামলায় অজ্ঞাতনামা আরও ৮-১০ জনকে আসামি করা হয়েছিল। তবে পুলিশ তদন্ত শেষে এজাহারভুক্ত ৪ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেয়।

মামলার অভিযোগপত্র সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬ সালের ১০ নভেম্বর সন্ধ্যার দিকে নগরের একটি এলাকায় এই দলবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। তখন গৃহবধূর বয়স ছিল ১৮ বছর। প্রথমে ৯ নভেম্বর ঘরে ঢুকে রাসেল গাজী তাঁকে ধর্ষণচেষ্টা করেন। এর পরদিন ওই নারী বাবার বাড়ি থেকে স্বামীর বাড়িতে যাওয়ার জন্য অটোরিকশায় ওঠেন। চালক তাঁকে নিয়ে ভুল পথে রওনা দেন। একপর্যায়ে আসামিরা মোটরসাইকেলে তাঁর পিছু নেন এবং নির্জন স্থানে পৌঁছে গৃহবধূকে অটোরিকশা থেকে নামিয়ে হাত-পা বেঁধে ধর্ষণ করে পালিয়ে যান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

টেকনাফের গহিন পাহাড় থেকে উদ্ধার ৫ নারী ও শিশু, মানব পাচারকারী আটক

 টেকনাফ (কক্সবাজার) প্রতিনিধি
অভিযানে আটক ব্যক্তি। ছবি: আজকের পত্রিকা
অভিযানে আটক ব্যক্তি। ছবি: আজকের পত্রিকা

কক্সবাজারের টেকনাফের হাবিরছড়াসংলগ্ন গহিন পাহাড়ি এলাকা থেকে চার নারী ও এক শিশুকে উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল শনিবার রাতে বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড ও নৌবাহিনী যৌথ অভিযান চালিয়ে তাদের উদ্ধার করে। এ সময় মানব পাচারকারী অভিযোগে একজনকে আটক করা হয়েছে। আজ রোববার (২৬ অক্টোবর) দুপুরে কোস্ট গার্ডের টেকনাফ স্টেশন কমান্ডার লেফটেন্যান্ট কমান্ডার সালাউদ্দিন রশিদ তানভীর এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

আটক পাচারকারী টেকনাফ সদর ইউনিয়নের হাবিবছড়া ১ নম্বর ওয়ার্ড এলাকার আব্দুস সালামের ছেলে মোহাম্মদ হাসান (৫৫)।

কোস্ট গার্ড কর্মকর্তা সালাউদ্দিন রশিদ বলেন, আটক পাচারকারীর দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে জানা গেছে, সাগরপথে মালয়েশিয়া পাঠানোর উদ্দেশ্যে নারী-শিশুসহ কয়েকজনকে হাবিরছড়ার পাহাড়ি এলাকায় বন্দী করে রাখা হয়েছিল। গতকাল দিবাগত রাত ২টার দিকে কোস্ট গার্ড ও নৌবাহিনীর একটি বিশেষ দল যৌথ অভিযান পরিচালনা করে। অভিযানে পাচারকারীদের গোপন আস্তানা থেকে চার নারী, এক শিশুসহ পাঁচজন ভুক্তভোগীকে উদ্ধার করা হয়। উদ্ধার ব্যক্তিদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, সংঘবদ্ধ মানব পাচারকারী চক্র উন্নত জীবনের স্বপ্ন, উচ্চ বেতনের চাকরি ও অল্প খরচে বিদেশে পাঠানোর প্রলোভন দেখিয়ে টেকনাফসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে বাংলাদেশি ও রোহিঙ্গা নাগরিকদের মালয়েশিয়া পাচারের ফাঁদে ফেলে। পাচারের আগে তাদের পাহাড়ি এলাকায় বন্দী রেখে নির্যাতন ও মুক্তিপণ আদায়ের চেষ্টা করা হতো।

উদ্ধার ব্যক্তিদের ও আটক মানব পাচারকারীর বিষয়ে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে বলে জানিয়েছে কোস্ট গার্ড।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বিএনপি-যুবদলের তিন নেতার বিরুদ্ধে সাংবাদিক লাঞ্ছনার অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী
ভুক্তভোগী সাংবাদিক লুৎফর রহমান। ছবি: সংগৃহীত
ভুক্তভোগী সাংবাদিক লুৎফর রহমান। ছবি: সংগৃহীত

রাজশাহীর তানোর উপজেলায় বিএনপির বহিষ্কৃত এক নেতাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে সাংবাদিককে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে শনিবার দিবাগত রাতে ভুক্তভোগী সাংবাদিক লুৎফর রহমান তানোর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করেছেন। তিনি দৈনিক কালবেলা ও স্থানীয় দৈনিক সোনার দেশে পত্রিকার তানোর উপজেলা প্রতিনিধি। পুলিশ তাঁর অভিযোগ তদন্ত করছে।

লুৎফর রহমান যাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন তাঁরা হলেন জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির বহিষ্কৃত সদস্য ও তানোর পৌরসভার সাবেক মেয়র মিজানুর রহমান (৫০), জেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক রবিউল ইসলাম কুসুম (৪০) ও তানোর পৌর বিএনপির নেতা মো. ইয়াসিন (৫২)।

তানোর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আফজাল হোসেন অভিযোগ পাওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, ‘আমরা অভিযোগটা পেয়েছি। তদন্ত শুরু হয়েছে। ঘটনাস্থলে সিসি ক্যামেরা আছে। ফুটেজ সংগ্রহ করে আমরা দেখব। সত্যতা পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

থানায় দেওয়া লিখিত অভিযোগে লুৎফর রহমান উল্লেখ করেন, ২৩ অক্টোবর তানোরে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মনিরুজ্জামান ভুঁইয়া এসেছিলেন। তিনি একজন সাংবাদিক হিসেবে সেখানে যান। এ সময় পূর্বশত্রুতার জেরে মিজানুর রহমান তাঁকে দেখে ক্ষিপ্ত হয়ে গালাগাল শুরু করেন। পরে অন্য আসামিদের হুকুম দিয়ে বলেন, ‘...জনমের মতো সাংবাদিকতা শিখিয়ে দে।’ হুকুম পেয়ে রবিউল ইসলাম কুসুম তাঁর গালে সজোরে থাপ্পড় মারেন।’

অভিযোগে সাংবাদিক লুৎফর লেখেন, ‘আমি অতর্কিত হামলায় হতভম্ব হয়ে পড়ি এবং কিছু বুঝে ওঠার আগেই ইয়াসিন আমাকে এলোপাতাড়ি কিল, ঘুষি ও লাথি মেরে শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ছিলা, ফোলা ও কালশিরা জখম করেন। একপর্যায়ে কুসুম হুমকি দিয়ে বলেন, গাড়ি থেকে অস্ত্র নিয়ে এসে চিরদিনের মতো শেষ করে দে। যা হয় পরে দেখা যাবে।’ ইয়াসিন গলা চেয়ে ধরে শ্বাসরোধে হত্যার চেষ্টা করেন। তখন মিজানুর রহমান বলেন, ‘এখানে সিসি ক্যামেরা আছে, ধরা পড়ে যাবি।’ প্রায় ১০ মিনিট ধরে আসামিরা আমাকে কিল, ঘুষি ও থাপ্পড় মারার পর মিজানুর রহমান আমাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয় এবং বলেন, ‘এ মুহূর্তে এলাকা ছেড়ে যাবি, নতুবা এখানেই তোর লাশ পড়ে যাবে।’ পরে অনেকে ছুটে এসে আমাকে আসামিদের হাত থেকে রক্ষা করেন।’

অভিযোগে তিনি আরও উল্লেখ করেন, ‘চড়-থাপ্পড়ের কারণে আমি বাম কানের শ্রবণশক্তি হারিয়ে ফেলি।’ পরে হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন বলেও উল্লেখ করেছেন সাংবাদিক লুৎফর রহমান।

অভিযোগের বিষয়ে জেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক রবিউল ইসলাম কুসুমের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। জেলা যুবদলের সদস্যসচিব রেজাউল করিম টুটুল বলেন, ‘এ ব্যাপারে আমিও অভিযোগ পেয়েছি। আমাদের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতিও বিষয়টি জেনে আমাকে ফোন করেছিলেন। তিনি তদন্ত করার নির্দেশ দিয়েছেন। আমরা তদন্ত করে দেখব।’

অভিযোগের বিষয়ে বিএনপির বহিষ্কৃত নেতা ও তানোর পৌরসভার সাবেক মেয়র মিজানুর রহমান বলেন, ‘সেদিন কৃষি অফিস থেকে প্রণোদনার কার্ড দেওয়া হচ্ছিল। লুৎফর রহমান বিএনপির লোক পরিচয়ে কার্ড নিতে এসেছিলেন। তখন আমাদের লোকজন জিজ্ঞেস করেন, তিনি কীসের বিএনপি। এ নিয়ে কথা-কাটাকাটি হয়। দলের লোকজনের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন। আমি সেখানে ছিলাম বলে তাঁকে বাঁচিয়েছি। তা না হলে তো তাঁকে মেরেই ফেলত।’

উল্লেখ্য, গত ১১ মার্চ তানোরের পাঁচন্দর ইউনিয়ন বিএনপির ইফতার মাহফিল ছিল। সেদিন প্রধান অতিথি হিসেবে দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য মেজর জেনারেল (অব.) শরীফ উদ্দিনকে বরণ করা নিয়ে বিএনপির দুই গ্রুপের সংঘর্ষ হয়। এতে একজন নিহত হন। এ ঘটনায় সাবেক পৌর মেয়র মিজানুর রহমানসহ অন্য আসামিদের বিরুদ্ধে থানায় হত্যা মামলা করা হয়। পরে মিজানুর রহমানকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

স্ত্রীকে অন্যত্র বিয়ে দেওয়ার চেষ্টা, ক্ষোভে হত্যা করে পালিয়ে যান স্বামী: র‍্যাব

ফরিদপুর প্রতিনিধি
ফরিদপুরের মধুখালীতে হত্যা মামলায় যুবককে গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাব। ছবি: সংগৃহীত
ফরিদপুরের মধুখালীতে হত্যা মামলায় যুবককে গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাব। ছবি: সংগৃহীত

ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলায় বন্যা রানী নামের এক নারীকে হত্যা মামলায় তাঁর স্বামীকে গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব)। তাঁর নাম সৌরভ কুমার দাস (২২)। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে র‍্যাব জানিয়েছে, বন্যাকে তাঁর মা আটকে রেখে অন্যত্র বিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছিলেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে সৌরভ তাঁর স্ত্রীকে বালিশচাপা দিয়ে হত্যা করে পালিয়ে যান।

আজ রোববার দুপুরে ফরিদপুর র‍্যাব কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে কোম্পানি কমান্ডার ও স্কোয়াড্রন লিডার তারিকুল ইসলাম এসব তথ্য জানান।

এর আগে সকালে গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার ভাটিয়াপাড়া এলাকা থেকে মামলার একমাত্র আসামি সৌরভ কুমার দাসকে গ্রেপ্তার করে র‍্যাব। তিনি ফরিদপুর সদরের বঙ্গেশ্বরদি গ্রামের বাসুদেব দাসের ছেলে এবং পেশায় গ্যারেজের মিস্ত্রি।

তারিকুল ইসলাম জানান, ২০ অক্টোবর সকালে মধুখালী পৌরসভার গাড়াখোলা এলাকায় শাশুড়ির ভাড়াবাসায় ঢুকে বন্যাকে শ্বাস রোধ করে পালিয়ে যান সৌরভ। পরদিন ২১ অক্টোবর মধুখালী থানায় সৌরভকে একমাত্র আসামি করে হত্যা মামলা করেন বন্যার মা শেফালী রানী।

হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যের তথ্য তুলে ধরে তারিকুল ইসলাম বলেন, চার বছর আগে পালিয়ে বিয়ে করেন সৌরভ ও বন্যা। বিষয়টি তখন বন্যার মা মেনে নেননি। সৌরভ ও বন্যা দুই বছর ধরে ঢাকার একটি পোশাক কারখানায় চাকরি করেন। তাঁদের একটি পুত্রসন্তান হয়, যার বয়স দুই বছর। সম্প্রতি তাঁরা এলাকায় ফিরে আসেন। বিভিন্ন সময় বন্যা তাঁর মায়ের বাড়িতে বেড়াতে গেলে তাঁকে আটকে রাখা হয়। সর্বশেষ দুর্গাপূজার আগে বন্যা তাঁর মায়ের বাড়িতে যাওয়ার পর সৌরভের সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দেন। একপর্যায়ে সৌরভ জানতে পারেন, তাঁর স্ত্রীকে অন্যত্র বিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছেন শাশুড়ি।

র‍্যাব কর্মকর্তা আরও বলেন, স্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ না করতে পেরে ২০ অক্টোবর শাশুড়ির বাসায় যান সৌরভ। এ সময় বাইরে থেকে বন্যাকে অশ্লীল ভঙ্গিতে কথা বলতে দেখে তিনি ঘরে ঢুকে বাগ্‌বিতণ্ডায় জড়ান। একপর্যায়ে সন্তানকে নিয়ে চলে যাওয়ার চেষ্টা করেন তিনি। ওই সময় তাঁকে পেছন থেকে কিল-ঘুষি দিতে থাকেন স্ত্রী। এ নিয়ে ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে বন্যাকে বালিশচাপা দিয়ে শ্বাসরোধে হত্যা করে পালিয়ে যান সৌরভ। গ্রেপ্তারের পর তাঁকে মধুখালী থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।

এদিকে এ ঘটনার পর নিহতের মা শেফালী রানী অভিযোগ করে সাংবাদিকদের বলেন, বিয়ের পর থেকে সৌরভ অন্য নারীর সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। এ নিয়ে কলহের জের ধরে বন্যাকে হত্যা করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত