Ajker Patrika

‘বাবার হাত ধরে বাবা দিবস পালন করতে চাই’

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ৩০ আগস্ট ২০২৩, ১৮: ১৭
‘বাবার হাত ধরে বাবা দিবস পালন করতে চাই’

আদিবা ইসলাম হৃদির বাবা পারভেজ হোসেন যখন নিখোঁজ হয়েছিলেন তখন হৃদির বয়স দুই বছর। পারভেজ হোসেন নিখোঁজ হওয়ার সময় বংশাল থানা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ২০১৩ সালের ২ ডিসেম্বর পারভেজসহ আরও তিন ছাত্রদল নেতা নিখোঁজ হন। এর পর থেকে তাঁদের আর পাওয়া যায়নি। 

হৃদি বলেন, ‘১০ বছর ধরে বাবাকে দেখি না। আমি বাবার ছবি নিয়ে গুম প্রতিরোধ দিবস পালন করতে চাই না। বাবার হাত ধরে বাবা দিবস পালন করতে চাই।’ 

আজ বুধবার দুপুরে রাজধানীর কাকরাইলের ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে আন্তর্জাতিক গুম প্রতিরোধ দিবস উপলক্ষে মায়ের ডাক আয়োজিত ‘গুম’ হওয়া ব্যক্তিদের স্মরণ অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন হৃদি। 

২০১৪ সালে নিখোঁজ হওয়া চঞ্চল হোসেনের ১০ বছর বয়সী ছেলে আহাদ হোসেন বলে, ‘আমার বন্ধুরা যখন জিজ্ঞেস করে তোমার বাবা কোথায়, আমি বলি, বিদেশে।’ 

একই বছর নিখোঁজ হওয়া মফিজুল ইসলামের ছেলে সহিদুল ইসলাম বলেন, ‘বাবা গুমের তিন মাস পর মা আইন ও সালিশ কেন্দ্রে যাওয়ার সময় সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যায়। যখন মায়ের লাশ আনতে যাই, তখন থানায় বাবা মৃত লিখে মায়ের লাশ নিয়ে আসতে হয়েছে।’ অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলার আহ্বান জানিয়ে সহিদুল বলেন, ‘কথা না বললে আজ আমরা কাঁদছি, কাল আপনারাও কাঁদবেন।’ 

খিলগাঁওয়ে গুলিতে নিহত নুরুজ্জামান জনির বাবা ইয়াকুব আলী বলেন, ‘একটা মানুষকে খুন করতে কয়টা গুলি লাগে? আমার জনিকে ওরা ১৮টা গুলি করেছিল।’ 

আন্তর্জাতিক গুম প্রতিরোধ দিবস উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে নিখোঁজ ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যরা২০১৩ সালের ৩ এপ্রিল ঢাকার মিরপুর থেকে নিখোঁজ হয়েছিলেন মিরাজ খান। এর চার মাস পর চট্টগ্রাম ঈদগাহ এলাকা থেকে মিরাজের ভাই ফিরোজ খানকেও তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। ফিরোজ খানের স্ত্রী আমেনা আক্তার বৃষ্টি বলেন, ‘গত ১১টা বছর সেলাইয়ের কাজ করে ছেলেকে নিয়ে কোনো রকম বেঁচে আছি।’ 

নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘শেখ হাসিনা সব জানেন, শুধু জানেন না মানুষের দুঃখ-কষ্টের কথা। তাঁর মনে কোনো দয়া-মায়া নেই। যতই কাঁদেন তাঁর চোখের কোনাও ভিজবে না। এই সরকার যত দিন আছে তত দিন গুম হয়ে যাওয়া মানুষের কোনো খোঁজ পাওয়া যাবে না।’ 

অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেন, ‘ভিন্ন মতের মানুষের মধ্যে ভয় সৃষ্টির জন্য গুম করা হচ্ছে। অধিকাংশ গুমের সঙ্গে সরকারের বিভিন্ন বাহিনী ও দলীয় লোকজন জড়িত। এসব গুমের বিচার যাঁরা করছেন না, তাঁদেরও বিচার হবে। দেশে না হলেও আন্তর্জাতিক আদালতে হবে।’ 

বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, ‘আমরা রাষ্ট্র বানাই যাতে রাষ্ট্র আমাদের নিরাপত্তা দেয়। কিন্তু রাষ্ট্রীয় বাহিনীগুলো যখন অপহরণ, গুম, চাঁদাবাজির সঙ্গে যুক্ত হয় তখন মানুষ কোথায় যাবে?’ 

গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘এই সরকার টিকে থাকলে আরও গুম-খুন করবে। যারা এখন নিজেদের নিরাপদ ভাবছেন তাঁদের ঘরেও হাত যাবে। গুম-খুন করে তারা ভয় দেখাতে চায়। এই ভয়কে অকার্যকর করতে পারলে একদিনেই এই জালিমের পতন সম্ভব।’ 

অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে নিখোঁজ সাইদুল ইসলাম সুমনের মা হাজেরা খাতুন বলেন, ‘সবাই দোয়া কইরেন যেন মরার আগে একবার হলেও আমার ছেলের মুখটা দেখতে পারি।’ 

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য তাবিথ আউয়াল, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) নির্বাহী সভাপতি তানিয়া রব, গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর, সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ছেলে হুম্মাম কাদের চৌধুরী প্রমুখ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত