Ajker Patrika

শিক্ষাঙ্গন একদিন সন্ত্রাসমুক্ত হবে: সনির বাবা

ঢাবি প্রতিনিধি
আপডেট : ০৮ জুন ২০২২, ১৩: ০১
শিক্ষাঙ্গন একদিন সন্ত্রাসমুক্ত হবে: সনির বাবা

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ছাত্রী সাবেকুন্নাহার সনির বাবা হাবিবুর রহমান ভূঁইয়া বলেছেন, ‘আমার সনিকে হারিয়েছি, কোনো বাবা যেন আর কোনো সনিকে না হারায়। আমি এক সনিকে হারিয়ে আমার চোখে হাজারো সনিকে দেখেছি। আর একজন সনিও যেন না হারায়। শিক্ষাঙ্গন একদিন সন্ত্রাসমুক্ত হবে। তার জন্য অনেক দিন অপেক্ষা করতে হবে, এটা জানি। তবে আমি হতাশ নই। একদিন দেশে সুদিন আসবে। হাজারো বেঁচে থাকা সনির জন্য সুন্দর পরিবেশ গড়ে তোলার অঙ্গীকার করতে হবে।’ 

বুয়েটের কেমিকৌশল বিভাগের ছাত্রী সাবেকুন্নাহার সনির ২০তম মৃত্যুবার্ষিকী সামনে রেখে আজ বুধবার সকাল ৯টায় সনি মেমোরিয়াল ফাউন্ডেশন আয়োজিত বুয়েট চত্বরের ‘সনি স্মৃতিফলক’-এর সামনে এক মানববন্ধনে হাবিবুর রহমান এই আশাবাদ ব্যক্ত করেন। 

মানববন্ধনে নাগরিক সমাজ ফাউন্ডেশনের উপদেষ্টা খবির উদ্দীন খান, সনির বড় ভাই মো. মামুন মোল্লা, সনির চাচি মালতী ফারুক, খালা রোকোয়া খানম, সনি মেমোরিয়াল ফাউন্ডেশনের ভাইস চেয়ারম্যান হাবিবুল্লাহ নিয়ামুল করিম, স্থপতি বিজয় তালুকদার, স্থপতি সুব্রত সরকার প্রমুখ বক্তব্য প্রদান করেন। 

খবির উদ্দিন খান বলেন, ‘আমরা আমাদের সন্তানদের যদি হিংসা-বিদ্বেষ ও পরশ্রীকাতরতার ঊর্ধ্বে রেখে মানবিক গুণাবলিতে গুণান্বিত করতে পারি, তাহলে দেশের সব শিক্ষাঙ্গন পুরোপুরি সন্ত্রাসমুক্ত হবে। দেশের মঙ্গলের জন্য সবাইকে ঐক্যবদ্ধ কাজ করার আহ্বান জানান তিনি। 

সনির বড় ভাই নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মো. মামুন মোল্লা বলেন, ‘আমি তখন বুয়েটের গণিতের লেকচারার ছিলাম। সেদিন আমার এক কলিগ এসে আমাকে বলে আপনার বোনের গায়ে গুলি লেগেছে। আমি চিৎকার দিয়ে উঠি। দৌড়ে ঢামেকে যাই। দেখি সনি আর নেই। যা হোক, আমার বোনের মৃত্যু হলেও আমাদের চাওয়া-পাওয়া ছিল শিক্ষাঙ্গনে সন্ত্রাস থাকবে না। কিন্তু তার বহিঃপ্রকাশ আমরা দেখিনি। ছাত্ররাজনীতির সব জায়গায় সন্ত্রাসীদের আগ্রাসন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে প্রতিনিয়ত সিট নিয়ে মারামারি হচ্ছে। এসবের আমরা অবসান চাই।’ 

মানববন্ধনে বক্তারা শিক্ষাঙ্গনকে সন্ত্রাসমুক্ত করার লক্ষ্যে কাজ করার জন্য সরকার ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষকে আহ্বান জানান। একই সঙ্গে ৮ জুনকে ‘সন্ত্রাসমুক্ত শিক্ষাঙ্গন দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তাঁরা। 

মানববন্ধনে সনি মেমোরিয়াল ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে ছয় দফা দাবি ঘোষণা করা হয়। দাবিগুলো হলো 

 ১. শিক্ষাঙ্গনে দলীয় লেজুড়ভিত্তিক ছাত্র-শিক্ষক রাজনীতি আইন করে নিষিদ্ধ করা হোক; 

 ২. রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে শিক্ষার্থীদের অপব্যবহার অবিলম্বে বন্ধ করা হোক; 

 ৩. অঙ্গসংগঠনের পরিচয়ে ছাত্রসংগঠনের ছত্রছায়ায় টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি বখাটেপনার বিরুদ্ধে আইনানুগ কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক; 

 ৪. শিক্ষার্থীদের সুস্থ সাংস্কৃতিক ও খেলাধুলার চর্চার পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক; 

 ৫. শিক্ষাঙ্গনে মেয়েদের নির্বিঘ্নে চলাফেরা নিশ্চিত করাসহ সব ধরনের নির্যাতনের বিরুদ্ধে আইনানুগ কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা সময়ের দাবি; 

 ৬. স্বাধীনতা-পরবর্তী শিক্ষাঙ্গনে সংগঠিত সব হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্তপূর্বক দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদানের আইনানুগ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হোক। 

মানববন্ধনের পূর্বে সনির স্মৃতিফলকে সনি মেমোরিয়াল ফাউন্ডেশন, নাগরিক সমাজ ফাউন্ডেশন, অভিভাবক পরিষদ, বুয়েট সন্ত্রাসবিরোধী ছাত্র ঐক্য, বুয়েট ছাত্রলীগের সাবেক নেতৃবৃন্দ ও সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের পক্ষ থেকে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। পরে সুরা ফাতিহা পাঠ এবং এক মিনিট নীরবতা পালনের মধ্য দিয়ে মানববন্ধন শুরু হয়। 

উল্লেখ্য, ২০০২ সালের এই দিনে বুয়েট চত্বরে টেন্ডারবাজিকে কেন্দ্র করে তৎকালীন সরকারি দলের ছাত্রসংগঠন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের দুই গ্রুপের বন্দুকযুদ্ধে বুয়েটের কেমিকৌশল বিভাগের ছাত্রী সাবেকুন নাহার সনি গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত