Ajker Patrika

দিনরাত মাদকসেবী ছিনতাইকারীর আড্ডা

  • নিরাপত্তাকর্মী কম ও বেষ্টনী নিচু হওয়ায় সহজেই ঢুকে পড়ছে অপরাধীরা
  • দিন ও রাতে একশ্রেণির বখাটে ঢুকে মাদক সেবন করে
  • সুযোগ বুঝে কবর জিয়ারতকারীদের সবকিছু ছিনিয়ে নেওয়া হয়
জহিরুল আলম পিলু ,শ্যামপুর-কদমতলী (ঢাকা)
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের জুরাইন কবরস্থানে মাদকসেবী ও ছিনতাইকারীদের আনাগোনা বেড়ে গেছে। এখানে স্থায়ী ও সাধারণ কবরস্থানের ভেতরে দিনে ও রাতে একশ্রেণির বখাটে মাদক সেবন করে বলে অভিযোগ রয়েছে। সে সঙ্গে সুযোগ বুঝে কবর জিয়ারত করতে আসা লোকজনের কাছ থেকে সবকিছু ছিনিয়ে নেয় তারা।

চাহিদার তুলনায় নিরাপত্তাকর্মী কম থাকায় ও বেষ্টনী নিচু হওয়ায় সহজেই অপরাধীরা ভেতরে ঢুকে অপরাধ করছে বলে জানান কবরস্থানের দায়িত্বে থাকা মোহরার বা রেজিস্ট্রার মো. আমিনুল ইসলাম।

কবরস্থানসংশ্লিষ্ট ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, জুরাইন কবরস্থান একসময় পারিবারিক ছিল। পরে ঢাকা পৌরসভা কর্তৃপক্ষ এর দায়িত্বভার বুঝে নেয়। এরপর পৌরসভা কর্তৃপক্ষ ঢাকা সিটি করপোরেশনের কাছে এর পরিচালনার দায়িত্ব হস্তান্তর করে। এই কবরস্থানের প্রতিষ্ঠাকাল সুনির্দিষ্ট করে কেউ বলতে পারছেন না। একটি সূত্রে জানায়, কবরস্থানটি ১৯২৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। এর মোট আয়তন ১৭.৬০ একর। এর মধ্যে সাধারণ কবরস্থান ১২ একর আর সংরক্ষিত ৫.৬০ একর জায়গা নিয়ে অবস্থিত। বর্তমানে এ কবরস্থান ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের অঞ্চল-১-এর অন্তর্ভুক্ত।

জরাইন কবরস্থান দুটি অংশে বিভক্ত। এর একটি স্থায়ী বা ক্রয়কৃত কবরস্থান। আর অন্যটি অস্থায়ী বা সাধারণ কবরস্থান। সাধারণ কবরগুলো ১ বছরমেয়াদি হয়। পরে আবার সেখানে নতুন কবর দেওয়া হয়। এই কবরস্থানের ভেতরে একটি মসজিদ রয়েছে। যেখানে ১০০ জন মুসল্লি নামাজ পড়তে পারেন। এখানে জানাজা পড়ার জন্য ভেতরে ও রাস্তায় ২০০ থেকে ৩০০ লোক দাঁড়ানোর জায়গা রয়েছে। এ কবরস্থানে গড়ে প্রতিদিন প্রায় ৯টি লাশ দাফন করা হয়। এখানে বর্তমানে মোট কবর রয়েছে ১৩ হাজারটি। এর মধ্যে অস্থায়ী ১০ হাজার ২০০ আর স্থায়ী কবর রয়েছে ২ হাজার ৮০০টি। জুরাইন কবরস্থানে সরকারি কর্মী রয়েছেন ১৪ ও ঠিকাদারের আছেন ২৪ জন।

এখানে একজন মৃত ব্যক্তির দাফন করতে সরকারি ফি দিতে হয় ১৬৬০ টাকা। এর মধ্যে কবরস্থানের রেজিস্টার ফি বাবদ নেওয়া হয় ১০০০ টাকা। আর কবর খোঁড়া, বাঁশ ও চাটাই বাবদ ঠিকাদার নেন ৬৬০ টাকা। তবে সরকারি খরচ ছাড়াও একজন মৃত ব্যক্তির দাফনে এর তিন-চার গুণ বেশি টাকা দিতে হয় বলে অভিযোগ করেছেন অনেক ভুক্তভোগী।

এলাকার বাসিন্দা ও কবর পরিচর্যাকারী আব্দুল জব্বার, নজরুল ও বশির জানান, রাত ১০টার পর থেকে ভোর পর্যন্ত নিরিবিলি সময়ে বখাটেরা এই কবরস্থানের ভেতরে ঢুকে মাদক সেবন করে। নিরাপত্তাপ্রহরীর সংখ্যা কম থাকায় ও নিচু দেয়ালের কারণে মাদকসেবীরা সহজে ঢুকতে ও পালিয়ে যেতে পারে। মাদক সেবনের সঙ্গে সুযোগ বুঝে চলে ছিনতাই।

এ ব্যাপারে কবরস্থানের দায়িত্বে থাকা মোহরার (রেজিস্ট্রার) মো. আমিনুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে জানান, স্থায়ী কবরস্থানের পোস্তগোলার করিমুল্লাবাগের পারুমা এলাকা ও গেন্ডারিয়ার ৪ নম্বর গেটের দিকের দেয়াল নিচু হওয়ায় মাদকসেবীরা সহজে ঢুকে মাদক সেবন করে ও নিরাপদে বেরিয়ে যায়। কবরস্থানের চারটি গেটের জন্য নিরাপত্তাকর্মী রয়েছেন মাত্র তিনজন। যাঁদের পক্ষে এগুলো নিয়ন্ত্রণ করা খুব কঠিন। এ অবস্থায় কবর জিয়ারতকারীরা ছিনতাইয়ের শিকার হচ্ছেন। এক মাস আগে ভোরে এক জিয়ারতকারীর কাছ থেকে সবকিছু ছিনতাই করে নিয়ে যায় ছিনতাইকারীরা।

আমিনুল ইসলাম আরও বলেন, ‘এ ব্যাপারে আমরা সংশ্লিষ্ট শ্যামপুর থানায় প্রায় ৩ মাস আগে ওসি স্যারের কাছে মৌখিকভাবে অবগত করি। আমি কর্তৃপক্ষের কাছে কবরস্থানের নিরাপত্তা বেষ্টনী উঁচু করার ও প্রহরী বাড়ানোর আহ্বান জানাচ্ছি। তাহলে এসব অপরাধ কমে যাবে।’

শ্যামপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘কবরস্থানের কর্তৃপক্ষ অভিযোগ করার পর আমি নিজে গিয়ে ভেতর থেকে দুই মাদকসেবীকে আটক করি। এরপর থেকে কবরস্থানে পুলিশের টহল বাড়ানো হয়েছে।’

এ বিষয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সমাজকল্যাণ ও বস্তি উন্নয়নের প্রধান কর্মকর্তা মোহাম্মদ মোবাশ্বের হাসান বলেন, ‘মাদকসেবী ও ছিনতাই রোধে প্রশাসন ব্যবস্থা নেবে। আর দেয়াল উঁচু করার ব্যাপারে আমরা চেষ্টা করব।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...