Ajker Patrika

হুড়োহুড়ি আর বিশৃঙ্খলায় চলছে টিকাদান

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১৫: ৩৭
হুড়োহুড়ি আর বিশৃঙ্খলায় চলছে টিকাদান

কোথাও হুড়োহুড়ি, কোথাও হাতাহাতি—এভাবেই চলছে দিনে ১ কোটি টিকা দেওয়ার বিশেষ ক্যাম্পেইন। এতে নজিরবিহীন ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে টিকা নিতে আসা লাখ লাখ মানুষকে। এমনকি মারধরের ঘটনাও ঘটেছে। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, টিকাপ্রত্যাশীর তুলনায় বুথের সংখ্যা কম ও খোলামেলা জায়গায় না হওয়ায় এই বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়েছে। রাজধানীর দুই সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে আজ শনিবার এমন চিত্র পাওয়া গেছে।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেরাদিয়ার হিন্দুপাড়ায় সকাল ৯টায় টিকাদান শুরু হয়। এই কেন্দ্রে ভোর থেকে লাইনে দাঁড়ান হাজার হাজার মানুষ। এই ওয়ার্ডের ৯টি কেন্দ্রে একই সময়ে শুরু হয়েছে টিকা দেওয়া। কিন্তু বুথের তুলনায় টিকাপ্রত্যাশীর সংখ্যা অনেক বেশি হওয়ায় একাধিক কেন্দ্রে ঘণ্টারও বেশি বন্ধ ছিল টিকা দেওয়া। 

সরেজমিন মেরাদিয়া হিন্দুপাড়ায় সকাল ১০টার দিকে গিয়ে দেখা যায়, টিকা নিতে আসা কয়েক হাজার নারী-পুরুষ লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন, কিন্তু টিকা দেওয়া হচ্ছে না। পর্যাপ্ত স্বেচ্ছাসেবক না থাকায় বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এ সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কোনো সদস্যকে দেখা যায়নি। কে কার আগে টিকা নেবেন, সেই হুড়োহুড়িতে বন্ধ করে দেওয়া হয় টিকাদান। 

টিকা নিতে ভোর ৫টা থেকে লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন শিপ্রা রানী। কিন্তু বেলা ১১টা বাজলেও একই জায়গায় দাঁড়িয়ে আছেন শিপ্রা। তিনি বলেন, ‘সেই ভোর থেকে টিকা নেওয়ার জন্য দাঁড়িয়ে আছি। নাশতা পর্যন্ত করিনি। তার পরও টিকা নিতে পারিনি। লাইন ভেঙে অনেককে টিকা দেওয়া হয়েছে। কখন টিকা পাব তা-ও জানি না।’ 

রিকশাচালক মোকাব্বের হোসেন বলেন, ‘যেখানে হাজার হাজার মানুষ দাঁড়িয়ে আছি, সেখানে মাত্র একটা বুথ। যে যেভাবে পারছে, টিকা নিচ্ছে। কিন্তু ভোর থেকেই অপেক্ষা করছি। এক পা এগোতে পারিনি।’ 

কেন্দ্রের টিকাদানকর্মী নুসরাত আক্তার আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এতগুলো মানুষকে কীভাবে একটা বুথে টিকা দেব? মানুষ কথা শুনছে না। কাউন্সিলের পক্ষ থেকে স্বেচ্ছাসেবক এসেছেন মাত্র দুজন। নেই প্রশাসনের কোনো লোক। মানুষ হুমড়ি খেয়ে পড়ছে। বাধ্য হয়ে বন্ধ রাখতে হয়েছে।’ 

টিকাদানকর্মী জানান, সকাল থেকে দুই ঘণ্টায় মাত্র ৭৬ জনকে টিকা দিতে পেরেছি। 

এই কেন্দ্রের পাশেই ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. মাকসুদ হোসেনের কার্যালয়ে নির্ধারিত সময়ে টিকা দেওয়া শুরু হলেও বিশৃঙ্খলার কারণে এক ঘণ্টার বেশি সময় ধরে টিকা দেওয়া বন্ধ হয়ে যায়। এ সময় নিরাপত্তাকর্মীর পোশাক পরা এক কর্মীকে পরিস্থিতি সামাল দিতে মারধর করতে দেখা যায়। এতে কয়েকজন আহত হন। 

কাউন্সিলর মহসিন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের কিছুই করার নেই। সিটি করপোরেশন যেভাবে বলেছে, আমরা সেভাবেই ব্যবস্থা নিয়েছি। শুধু এই কেন্দ্রই নয়, ওয়ার্ডের ৯টি কেন্দ্রেরই এমন চিত্র।’ 

বিশেষ ক্যাম্পেইনে করোনার টিকা নিতে আসা মানুষের উপচে পড়া ভিড়সিপাহীবাগের টেম্পোস্ট্যান্ড কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, এই কেন্দ্রের অবস্থা আরও নাজুক। কেন্দ্রের বাইরে হাজার হাজার মানুষ। হুড়োহুড়ি করতে গিয়ে এই কেন্দ্রের বেশ কয়েকজন আহত হন। 

গোড়ানের আলী আহমদ স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রে দুপুর ১২টার দিকে গিয়ে দেখা যায় মানুষের দীর্ঘ লাইন। কেউ ভোর থেকে আবার কেউ সকাল ৭টা থেকে অপেক্ষায় রয়েছেন। এই কেন্দ্রে চারটি বুথে টিকা দেওয়া হচ্ছে। 

টিকা নিতে আসা সাধারণ মানুষের অভিযোগ, হাজার হাজার মানুষ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকলেও কাউন্সিলর ও স্থানীয় আওয়ামী লীগের লোকজন মুখ দেখে দেখে নিজেদের লোক ঢোকাচ্ছেন। 

বেশ কিছুক্ষণ পর্যবেক্ষণ করে এর সত্যতাও পাওয়া যায়। তবে টিকা দেওয়ার দায়িত্বে থাকা স্বেচ্ছাসেবকেরা বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে নিষেধ করেন। 

টিকার তথ্য জানতে চাইলে স্বেচ্ছাসেবকের দায়িত্বে থাকা স্থানীয় ছাত্রলীগ নেতা সম্রাট রেগে গিয়ে বলেন, ‘আপনি কোথাকার সাংবাদিক, আমরাও সাংবাদিক। কোনো কথা কইবেন না।’ 

এ সময় তাঁর পরিচয় জানতে চাইলে উত্তেজিত হয়ে যান। পরে কয়েকজন স্বেচ্ছাসেবক এসে তাঁকে সরিয়ে নিয়ে যান। 

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রতি ওয়ার্ডে ৯টি করে কেন্দ্র হিসেবে সর্বমোট ৬৭৫টি কেন্দ্রে এই টিকাদান কার্যক্রম চলছে। প্রতি কেন্দ্রে ৫০০ জনকে টিকা প্রয়োগের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে পরিচালিত হতে যাওয়া এই কার্যক্রমে সর্বমোট ৩ লাখ ৩৭ হাজার ৫০০ জনকে টিকা প্রদানের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। 

বিশেষ ক্যাম্পেইনে করোনার টিকা নিতে আসা মানুষের উপচে পড়া ভিড়একই অবস্থা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) কেন্দ্রগুলোতেও। বাড্ডার আলাতুন্নেছা কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায় মানুষের সীমাহীন দুর্ভোগের চিত্র। ভোর থেকেই মানুষের ভিড় এই কেন্দ্রে। এই সিটির ৫৪টি কেন্দ্রের ৪৮৬টি বুথে টিকা দেওয়া হচ্ছে। 

ডিএনসিসির মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেছেন, ‘স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সাড়ে ৩ লাখ টিকা দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা দিয়েছিল। আমরা ৫ লাখ টার্গেট নিয়েছি। আজকের পরে আপাতত সময় না বাড়ানোর সিদ্ধান্ত আছে।’ 

এদিকে কোটি টিকা দিতে বিরতিহীনভাবে টিকা কার্যক্রম চালানোর কথা জানিয়েছে সরকার। যতক্ষণ মানুষ আছে, ততক্ষণ টিকা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। 

ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের টিকাকেন্দ্র পরিদর্শন শেষে আজ শনিবার সকালে এসব কথা বলেন স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সিনিয়র সচিব লোকমান হোসেন মিয়া। 

সচিব বলেন, ‘প্রথম ডোজের জন্য যে টার্গেট নেওয়া হয়েছে, তাতে সবাই রেসপন্স করছে। আশা করি, আমরা ‘ কোটির যে টার্গেট নিয়েছি, সেটা শেষ করে আরও বেশি টিকা দিতে পারব।’ 

এক প্রশ্নের জবাবে লোকমান হোসেন বলেন, ‘আজকে টার্গেট পূরণ না হলে সময় বাড়ানো হবে কি না, এ বিষয়ে সন্ধ্যার পর সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’ 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বাসার দরজা ভেঙে চবি শিক্ষার্থীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার

চবি প্রতিনিধি 
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) ওমর ফারুক সুমন নামের এক শিক্ষার্থীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) রাতে চট্টগ্রাম নগরীর খুলশী এলাকার একটি বাসা থেকে লাশটি উদ্ধার করে পুলিশ।

ওমর ফারুক বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন।

স্থানীয় ও পরিবারের সদস্যরা জানান, সুমন খুলশীতে তাঁর মামার বাসায় থাকতেন। তাঁর বড় ভাইও সেখানে থাকেন। দুই দিন আগে সুমনের মামা পুরো পরিবার নিয়ে তুরস্কে বেড়াতে যান। বাসায় সুমন ও তাঁর বড় ভাই ছিলেন। গতকাল বিকেল ৪টার দিকে ভাইয়ের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন সুমন। ফোনে তাঁর বড় ভাই কখন বাসায় ফিরবেন জানতে চান সুমন। বড় ভাই জানান যে তাঁর আসতে একটু দেরি হবে। এর কিছুক্ষণ পর বড় ভাই সুমনকে ফোন করলে তিনি আর ফোন রিসিভ করেননি। পরে বাড়ি থেকে সুমনের মা ফোন দিয়ে যোগাযোগ করতে না পেরে বিষয়টি বড় ভাইকে জানান। এতে উদ্বেগ দেখা দিলে বড় ভাই বিল্ডিংয়ের দারোয়ানকে দিয়ে বাসা চেক করান।

দারোয়ান কলিংবেল বাজিয়েও কোনো সাড়া না পেয়ে বড় ভাইকে জানালে তিনি দ্রুত বাসায় এসে সুমনকে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পান। খবর পেয়ে পুলিশ এসে লাশ উদ্ধার করে। ঘটনাস্থলে চিরকুট মিলেছে। এতে লেখা রয়েছে, ‘আমি সুমন, ওমর ফারুক সুমন। আমার কোনো আশা-আকাঙ্ক্ষা নেই। আর আমার কারও প্রতি কোনো অভিযোগ নেই। সবাই ভালো থাকবেন।’ এর আগে ১ ডিসেম্বর লেখা আরেকটি চিরকুট পাওয়া যায়। সেখানে লেখা ছিল—‘আশাই জীবন, আশাই মরণ, ব্যর্থতা হতাশা-অন্ধকারে নিয়ে যায়।’

খুলশী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহীনুর জামান বলেন, ‘সুমন ও তাঁর বড় ভাই একসঙ্গে মামার বাসায় থাকতেন। মামা ও মামি বর্তমানে বিদেশে আছেন। বড় ভাই সন্ধ্যায় বাইরে যান। সে সময় সুমন বাসায় একা ছিলেন। বড় ভাই বাসায় ফিরে এসে বারবার ডাকলেও ফ্ল্যাটের ভেতর থেকে কোনো সাড়া পাননি। পরে দরজা ভেঙে ভেতরে ঢুকলে সুমনের মরদেহ ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া যায়। প্রাথমিক তদন্তে এটি আত্মহত্যা মনে হলেও আমরা সব সম্ভাব্য কারণ খতিয়ে দেখছি। ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহটি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বদলি নিয়ে ফেসবুকে ক্ষোভ প্রকাশ শিক্ষক নেতার

ময়মনসিংহ প্রতিনিধি
প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের আহ্বায়ক আবুল কাশেম। ছবি: সংগৃহীত ক্যাটা: সারা দেশ, ময়মনসিংহ
প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের আহ্বায়ক আবুল কাশেম। ছবি: সংগৃহীত ক্যাটা: সারা দেশ, ময়মনসিংহ

সহকর্মী এবং নিজের বদলি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক লাইভে এসে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের আহ্বায়ক আবুল কাশেম। তিনি বলেন, ‘আমাকে সাড়ে ৪০০ মাইল দূরে বদলি করা হয়েছে। এতে আমি বিচলিত নই।’

আজ শুক্রবার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে ফেসবুক লাইভে এসে আবুল কাশেম বলেন, ‘আমার মতো সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের তিন দফা দাবি আদায়ের নেতৃত্ব দেওয়া শতাধিক শিক্ষককে বদলি করা হয়েছে পার্শ্ববর্তী জেলা এবং বিভাগে। আরও অনেককে বদলি করা হতে পারে। এ নিয়ে কেউ বিচলিত হবেন না। প্রয়োজনে আইনি লড়াইয়ে যাব। তবে আন্দোলন থেকে সরে আসব না। আপনাদের পাশে রয়েছি। অবিলম্বে আরও কঠোর কর্মসূচির ঘোষণা আসবে। সে জন্য যদি জেলেও যেতে হয়, প্রস্তুত রয়েছি।’

এ বিষয়ে প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের আহ্বায়ক আবুল কাশেমের সঙ্গে একাধিকবার মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও কোনো সাড়া মেলেনি।

৪ ডিসেম্বর প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক (পলিসি ও অপারেশন) মাহফুজা খাতুন স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে ময়মনসিংহের ফুলপুর উপজেলার চানপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবুল কাশেমকে বরিশাল সদরের চরবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

আমনের বাম্পার ফলনেও মুখে হাসি নেই কৃষকের, বাজারে ধানের দাম কমায় হতাশা

মাহিদুল ইসলাম, মৌলভীবাজার
জমির ধান কাটছেন কৃষকেরা। ছবি: আজকের পত্রিকা
জমির ধান কাটছেন কৃষকেরা। ছবি: আজকের পত্রিকা

মৌলভীবাজারের চলতি মৌসুমে আমন ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। ফসল ঘরে তুলতে দিনরাত ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন কৃষকেরা। তবে বাজারে ধানের দাম কম হওয়ায় হতাশা ব্যক্ত করেছেন তাঁরা। কৃষকদের অভিযোগ, বাজারে ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে ধানের দাম কমিয়ে দিয়েছেন। তাই ফলন ভালো হওয়ার পরও বাজারে ধানের যথার্থ মূল্য না পাওয়ায় লোকসানে পড়ছেন তাঁরা।

কৃষকেরা জানান, চলতি আমন মৌসুমে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ধানের ফলন অনেক ভালো হয়েছে। তবে অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার ধানের দাম অনেক কম। গত বছর বাজারে যেখানে ১ হাজার ১০০ থেকে ১ হাজার ৩০০ টাকায় প্রতি মণ ধান বিক্রি হয়েছে, এই বছর মাঝারি শুকনা ধান ৯০০ ও শুকনা ধান ১ হাজার থেকে ১ হাজার ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বীজতলা থেকে শুরু করে ফসল ঘরে তোলার আগপর্যন্ত অনেক শ্রম ও টাকা খরচ করতে হয়েছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে ৯৮ হাজার ২০ হেক্টর জমিতে আমন আবাদ করা হয়েছে। এর থেকে ৪ লাখ ৪১ হাজার ৯০ টন ধান উৎপাদন হবে। আর এই ধান থেকে ২ লাখ ৯৫ হাজার ৫৩০ মেট্রিক টন চাল পাওয়া যাবে। ইতিমধ্যে ৬৫ শতাংশ ধান কাটা হয়েছে। আমন ধানের শতভাগ লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়েছে। এক সপ্তাহের মধ্যে শতভাগ ধান ঘরে তুলতে পারবেন কৃষকেরা।

বাজারে আমন ধানের দাম কম হলেও সরকারিভাবে ভালো দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক অফিস সূত্রে জানা গেছে, সরকারিভাবে প্রতি কেজি আমন ধান ৩৪ টাকা মূল্যে ৭৯০ টন, সেদ্ধ চাল ৫০ টাকা কেজি মূল্যে ২ হাজার ৬৭৭ টন ও আতপ চাল ৪৯ টাকা কেজি মূল্যে ৫ হাজার ৬৪৬ টন চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে।

জেলার কমলগঞ্জ, রাজনগর, কুলাউড়া ও সদর উপজেলার আমনখেত ঘুরে দেখা যায়, কৃষকেরা পাকা আমন ধান ঘরে তুলতে ব্যস্ত। অনেক এলাকায় দ্রুত সময়ে কম্বাইন হারভেস্টারের মাধ্যমে ধান কাটা ও মাড়াইয়ের কাজ একসঙ্গে সেরে নিচ্ছেন কৃষকেরা। এতে সময়, খরচ ও কষ্ট কম করতে হচ্ছে। আবার কেউ কাজের লোক এনে ধান কেটে ফসলের মাঠেই মাড়াই করে সেদ্ধ দিচ্ছেন। অনেক কৃষক মাঠের মধ্যে রাত জেগে ধান সেদ্ধ করছেন। তবে সবকিছু ঠিক থাকলেও ধানের দাম কম থাকায় হতাশা ব্যক্ত করেছেন কৃষকেরা।

কমলগঞ্জ উপজেলার পতনঊষার ইউনিয়ন কৃষক আনোয়ার খান বলেন, ‘গত বছর আমাদের ধান একেবারেই হয়নি। এ বছর অনেক ভালো ধান হয়েছে। প্রত্যাশার চেয়ে বেশি ফলন হয়েছে। তবে বাজারে ধানের দাম অনেক কম। প্রতি মণ ধান মাত্র ৯০০ থেকে ১ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কৃষিতে আগের চেয়ে অনেক বেশি খরচ বেড়েছে। সে তুলনায় ধানের দাম বাড়েনি।’

জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক (ভারপ্রাপ্ত) মিলন কান্তি চাকমা বলেন, ‘আমাদের ধান-চাল সংগ্রহের কার্যক্রম ২০ নভেম্বর শুরু হয়েছে; চলবে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। সরকারিভাবে ধানের দাম গত বছরের তুলনায় কেজিপ্রতি ১ টাকা বৃদ্ধি করা হয়েছে। একটা সময় আমরা ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারতাম না; তবে এখন ধান-চালের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়। আশা করি, চলতি মৌসুমে আমাদের লক্ষ্য পূরণ হবে।’

মৌলভীবাজার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. জালাল উদ্দীন বলেন, ‘জেলায় এ বছর খুব ভালো আমন ধান হয়েছে। কৃষকেরা অত্যন্ত উৎসাহ নিয়ে ধান ঘরে তুলছেন। আশা করি, আগামী সপ্তাহের মধ্যে শতভাগ ধান কাটা হয়ে যাবে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ও দিনের বেলা কুয়াশা না থাকায় সহজে কৃষকেরা ধান কাটা, মাড়াই ও সেদ্ধ করতে পারছেন।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

পঞ্চগড়ে তাপমাত্রা ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াস

পঞ্চগড় প্রতিনিধি
হালকা কুয়াশায় ঢাকা চারদিক। ছবি: আজকের পত্রিকা
হালকা কুয়াশায় ঢাকা চারদিক। ছবি: আজকের পত্রিকা

উত্তরের সীমান্তবর্তী জেলা পঞ্চগড়ে ধীরে ধীরে নামতে শুরু করেছে তাপমাত্রার পারদ। আজ শুক্রবার (৫ ডিসেম্বর) সকাল ৯টায় তেঁতুলিয়ায় ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে। এ সময় বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৯২ শতাংশ।

গত কয়েক দিন পঞ্চগড়ে তাপমাত্রা ১১ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে ১৩ ডিগ্রির ঘরে থাকছে। ফলে বাড়ছে শীতের প্রকোপ। আজ শুক্রবার সকালে পঞ্চগড় সদর উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, হালকা কুয়াশায় ঢাকা চারদিক। সুনসান নীরবতায় গরম কাপড় পরে প্রয়োজনীয় কাজে বের হয়েছে লোকজন। কেউ কেউ মাঠে করছেন হালচাষ। এরই মধ্যে পূর্ব আকাশে সূর্য দেখা দিলেও নেই প্রখর রোদ।

পঞ্চগড় সদর উপজেলার তালমা এলাকার গৃহবধূ নাজমা বেগম বলেন, ‘সকাল-বিকেল খুব ঠান্ডা পড়ে। ঘর থেকে বের হলেই যেন বাতাসে শরীর কেঁপে ওঠে। বাচ্চাদের নিয়ে সবচেয়ে দুশ্চিন্তায় আছি। ঠান্ডা লাগলে হাসপাতালে যেতে হয় বারবার।’

একই এলাকার দিনমজুর মিজানুর রহমান বলেন, ‘শীতে কাজ পাওয়া কষ্ট হয়ে গেছে। সকালে কুয়াশায় কিছু দেখা যায় না, হাত-পা জমে থাকে। ঠান্ডায় শরীর ঠিকমতো সাড়া না দেওয়ায় কাজের গতি কমে গেছে।’

স্কুলছাত্রী তানজিলা আক্তার বলে, ‘সকালে কলেজ ও প্রাইভেটে যেতে খুব সমস্যা হয়। ঠান্ডা এমন যে হাতে গ্লাভস ছাড়া সাইকেল চালানো যায় না। শীত যেমন বাড়ছে, তেমনি অসুস্থ হওয়ার ভয়ও বাড়ছে।’

জেলার আশপাশ এলাকায় বাড়ছে ঠান্ডাজনিত রোগী। এতে শিশু ও বৃদ্ধরা বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। সর্দি-কাশি, জ্বর, নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্ট ও হঠাৎ তাপমাত্রা পরিবর্তনজনিত অ্যালার্জিতে রোগীর সংখ্যা বাড়ছে।

চিকিৎসকেরা বলছেন, দিন-রাতের তাপমাত্রার এই বড় পার্থক্য শরীরের ওপর চাপ ফেলে। বিশেষ করে শিশু, বয়স্ক ও দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাসম্পন্ন মানুষ বেশি ঝুঁকিতে থাকে। তাই সবাইকে সতর্ক থাকার পরামর্শ চিকিৎসকের।

তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জিতেন্দ্রনাথ রায় জানান, শীত ধীরে ধীরে নামছে। আজ ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড হয়েছে। সামনে শীত আরও তীব্র হতে পারে। শৈত্যপ্রবাহের আশঙ্কা রয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত