Ajker Patrika

ঢাবির জগন্নাথ হলে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের দফায় দফায় সংঘর্ষ, আহত ১৫

ঢাবি প্রতিনিধি
আপডেট : ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০: ৫২
Thumbnail image

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) জগন্নাথ হলে সরস্বতী পূজা উপলক্ষে কনসার্টে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান ও ঢাবি শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকতের অনুসারীদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাত ১টা থেকে শুরু হয়ে ৪টা পর্যন্ত জগন্নাথ হল মাঠে চলে এ সংঘর্ষ। এ ঘটনায় জগন্নাথ হলে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। তবে ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে বলা হয়—তেমন কিছু ঘটেনি, সামান্য কথা-কাটাকাটি হয়েছে, তার মীমাংসা হয়ে গেছে।

ঘটনার একাধিক প্রত্যক্ষদর্শীর সঙ্গে কথা হয় আজকের পত্রিকার এ প্রতিবেদকের। তাঁরা জানান, কনসার্টে মমতাজের গান শেষ হওয়ার পর শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত চলে যাওয়ার সময় হল কমিটির পদপ্রার্থী ও ইনানের অনুসারী গণেশ ঘোষের সঙ্গে ধাক্কা লাগে। 

পরে এ বিষয়ে সৈকতের কাছে ক্ষমা চায় গণেশ। কিন্তু ছাত্রলীগের নেতারা চলে যাওয়ার পর হল মাঠে ইনানের গ্রুপ ও সৈকতের গ্রুপের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। এ সংঘর্ষ দফায় দফায় হয়। রাত ৪টা পর্যন্ত সংঘর্ষ চলতে থাকে। সংঘর্ষে উভয় পক্ষের ১৫ জনের মতো আহত হন। তবে সৈকতের অনুসারী ও কমিটির পদপ্রার্থী অপূর্ব চক্রবর্তী মারাত্মক আহত হয়েছেন।

ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকতের অনুসারীদের মধ্যে আহত ব্যক্তিরা হলেন—অপূর্ব চক্রবর্তী, পলাশ রায়, পল্লব মন্ডল, অর্পণ কুমার বাপ্পি, বিপ্লব পাল, বর্ষণ রায় ও কার্তিক কুমার। 

ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনানের অনুসারী অপূর্ব, ধ্রুব, চিন্ময়, রিদ্ধি, অভি, প্রিতমসহ উভয় পক্ষের ১৫ জন আহত হন।

আহতরা ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ বুদ্ধিজীবী মোহাম্মদ মোর্তজা মেডিকেল সেন্টার থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন। তবে অপূর্ব চক্রবর্তীর মাথায় আটটি সেলাই লেগেছে। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেলের ওয়ার্ডে রয়েছেন।

ঘটনার আরেক প্রত্যক্ষদর্শী আজকের পত্রিকাকে বলেন, পূজা উপলক্ষে গতকাল জগন্নাথ হল মাঠে সাংস্কৃতিক সন্ধ্যায় ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাদ্দাম হোসেন, সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান, ঢাবি শাখার সভাপতি মাজহারুল কবির শয়ন ও সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত উপস্থিত ছিলেন।

মমতাজের গান শেষ হওয়ার পর যখন কনসার্ট থেকে নেতারা বের হচ্ছিলেন, তখন হল ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও ইনানের হল ক্যান্ডিডেট গণেশ ঘোষ তাঁর কর্মীসহ এমন অবস্থা তৈরি করেন যাতে সৈকত বেরোতে না পারেন। 

পরে সৈকতের কর্মীদের সঙ্গে ঝামেলা তৈরি হয়। সৈকত তাঁদের সঙ্গে কথা বলে বের হয়ে যান। স্বাভাবিকভাবে ঘটনা সেখানেই থেমে যায়। 

প্রত্যক্ষদর্শী আরও বলেন, সৈকত চলে যাওয়ার পর জুনিয়র কর্মীদের মধ্যে হট্টগোল তৈরি হয়। রাত আনুমানিক আড়াইটার সময়ে হলের সাবেক সভাপতি কাজল দাস ও সাধারণ সম্পাদক অতনু বর্মণ এক হয়ে সেক্রেটারি ব্লকের তিনতলায় হামলা চালান।

একপর্যায়ে হলে ইনান ও সাদ্দামের গ্রুপ এক হয়ে সৈকতের গ্রুপের ওপর হামলা চালায়। হামলার সময় উভয় গ্রুপের হাতে হকিস্টিক, পাইপসহ বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্র দেখা যায়।

ইনান ও সাদ্দামের গ্রুপের সঙ্গে এক হয়ে হামলার অভিযোগের বিষয়ে জানতে কাজল দাসের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তাঁর ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। অতনু বর্মণ বলেন, ‘কনসার্ট শেষে আমি এবং সভাপতি দুজন বাইরে খাওয়াদাওয়া করতে গেছিলাম। পরে হলে এসে দেখি শিক্ষার্থীদের মধ্যে ঝামেলা হচ্ছে। প্রভোস্ট স্যারের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে আমি এবং সভাপতি (কাজল দাস) মিল মীমাংসা করে দিই। আমরা কোনো হামলায় জড়াইনি।’

ঘটনায় বেশি আহত হওয়া অপূর্ব চক্রবর্তীর কাছে বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল সেন্টারে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ব্যক্তিগত ক্ষোভ থেকে পরিকল্পিতভাবে আমার ওপর এ হামলা করা হয়েছে। ইনান ভাই ও সাদ্দাম ভাইয়ের গ্রুপ এক হয়ে আমাদের ওপর হামলা করেছে। এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার দাবি করছি।’ 

ইনানের গ্রুপের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী ও হলের শীর্ষ পদপ্রত্যাশী রাজীব বিশ্বাস বলেন, ‘কনসার্ট থেকে বের হওয়ার সময় সৈকত ভাইয়ের সঙ্গে গণেশের ধাক্কা লাগে। গণেশ কয়েকবার ক্ষমা চায় এ জন্য। পরে সৈকত ভাই চলে যাওয়ার পর আবারও ঝামেলা হয়।’

হামলার বিষয়ে জানতে চাইলে তানভীর হাসান সৈকত আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘বহিরাগত এনে জগন্নাথ হলে ঝামেলা তৈরি করতে চেয়েছিল একটি পক্ষ। তবে পারেনি, এ ঘটনার মীমাংসা হয়েছে।’

ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান বলেন, ‘হামলা-মারামারি হয়েছে, এমনটি শুনিনি। তবে জানতে পেরেছি, কিছু শিক্ষার্থীদের মধ্যে সামান্য বিষয় নিয়ে সাময়িক উত্তেজনার সৃষ্টি হয়েছিল। বিষয়টি নজরে রাখছি।’ 

সার্বিক বিষয়ে জগন্নাথ হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মিহির লাল সাহা বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের ভুল-বোঝাবুঝিতে কিছু বিশৃঙ্খলা হয়েছে। বেশ কয়েকজন আহত হয়েছে। বিষয়টি উভয় পক্ষের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে মীমাংসা করে দেওয়া হয়েছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত