Ajker Patrika

পরকীয়ার কথা বলে বেড়ানোয় প্রেমিককে হত্যা করেন প্রেমিকা: পিবিআই

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২৯ নভেম্বর ২০২৩, ১৯: ২২
পরকীয়ার কথা বলে বেড়ানোয় প্রেমিককে হত্যা করেন প্রেমিকা: পিবিআই

স্বামী বিদেশ থাকার সুযোগে পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়েন স্ত্রী। পরকীয়া প্রেমিককে নিয়ে পালিয়ে ভাড়া বাসাতেও থাকেন। বিচার-সালিস শেষে স্বামীর কাছে ক্ষমা চেয়ে ফেরেন আগের সংসারে। তবে পালিয়ে ভাড়া বাসায় থাকার বিষয়টি জানত না এলাকাবাসী। ব্যাপারটি গোপন রাখতে প্রেমিককে অনুরোধ করেন পরকীয়া প্রেমিকা ও তাঁর স্বামী। কিন্তু প্রেমিক অনুরোধ উপেক্ষা করে ঘটনা সবাইকে বলে বেড়ান। এতে প্রেমিকা ও তাঁর স্বামী ক্ষুব্ধ হয়ে হত্যা করেন ওই প্রেমিককে। 

আজ বুধবার দুপুরে রাজধানীর ধানমন্ডিতে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) প্রধান কার্যালয়ে ঢাকা জেলার ইউনিট ইনচার্জ পুলিশ সুপার মো. কুদরত-ই-খুদা এসব তথ্য জানান। 

গত ২২ মার্চের এই হত্যাকাণ্ড ও লাশ গুমে জড়িত দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁরা হলেন আঁখি আক্তার (২৪) ও আলাল মোল্লা (৩৫)। ২২ নভেম্বর তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়। এ ঘটনায় আঁখির স্বামী ওমর ফারুক এর আগেই থানা-পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হন। 

গ্রেপ্তার দুই আসামি রুমান শিকদারকে হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন। নিহত রুমান শিকদার একই এলাকার আবু শিকদারের ছেলে। 

ঘটনার বিষয়ে পুলিশ সুপার কুদরত বলেন, আঁখি আক্তার ও নিহত রুমান শিকদার (৩৯) প্রতিবেশী। আঁখির স্বামী ওমর ফারুক প্রবাসী। এই সুযোগে প্রতিবেশী রুমানের সঙ্গে পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়েন আঁখি। স্ত্রীর পরকীয়ার বিষয় জানতে পেরে দেশে চলে আসেন ওমর ফারুক। দেশে এসে আঁখিকে বাড়ি থেকে বের করে দেন। পরে দুই পক্ষের স্বজনদের মধ্যস্থতায় মীমাংসা করে আঁখি ও ওমর ফারুক সংসার শুরু করেন। কিছুদিন যেতে না যেতেই আঁখি আবারও রুমানের সঙ্গে পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়েন। এরপর চলতি বছরের মাঝামাঝি সময়ে রুমানের হাত ধরে পালিয়ে অন্যত্র কিছুদিন বসবাস করেন আঁখি। ফারুক অনেক খোঁজাখুঁজির পর আঁখি ও রুমানের ভাড়া বাসার সন্ধান পান। 

এ সময় আত্মীয়স্বজন ও স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিরা রুমানকে আঁখিকে বিয়ের জন্য চাপ দেন। রুমান বিয়ে করতে অস্বীকার করলে আঁখি নিজের সব অনৈতিক কর্মকাণ্ডের জন্য স্বামী ফারুকের কাছে ক্ষমা চেয়ে সংসারে ফিরে যান। এরপর বাসা ভাড়া করে থাকার বিষয়টি রুমানকে গোপন রাখতে অনুরোধ করেন আঁখি ও ফারুক। রুমান অনুরোধ উপেক্ষা করে বিষয়টি এলাকায় বিভিন্নজনের কাছে বলাবলি করেন। আর এতেই আঁখি ও ফারুক ক্ষিপ্ত হয়ে রুমান হত্যার সিদ্ধান্ত নেন। 

পরিকল্পনা অনুযায়ী চলতি বছরের ২২ মার্চ গভীর রাতে মোবাইল ফোনে আঁখি প্রেমিক রুমানকে ঘরে ডাকেন। এরপর কথা বলার একপর্যায়ে পেছন থেকে লোহার রড দিয়ে রুমানকে আঘাত করে হত্যা করেন আঁখি ও তাঁর স্বামী ফারুক। নিহতের লাশ বস্তাবন্দী করে গুমের উদ্দেশ্যে প্রতিবেশী আলাল মোল্লার সহযোগিতায় বাড়ির পাশের সিংহ নদে লাশটি মাটি চাপা দিয়ে দেয়। 

যেভাবে লাশ উদ্ধার ও পরিচয় নিশ্চিত 
রুমনকে হত্যা ও মাটিচাপা দেওয়ার এক মাস পর চলতি বছরের ২১ মে সিংহ নদে খননকাজের সময়ে ভেকুতে অজ্ঞাতনামা এক ব্যক্তির কঙ্কাল উঠে আসে। বিষয়টি স্থানীয়রা জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ জানালে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানা-পুলিশ কঙ্কালের সঙ্গে একটি অস্পষ্ট আকাশি রঙের শার্টের একটি অংশ উদ্ধার করেন। কঙ্কাল উদ্ধারের খবর পেয়ে নিহতের স্ত্রী, সন্তান ও স্বজনেরা ঘটনাস্থলে গিয়ে কঙ্কালটির সঙ্গে থাকা আকাশি রঙের শার্টের অংশবিশেষ দেখে লাশটি রুমানের বলে দাবি করেন। 

পরবর্তী সময় উপপরিদর্শক (এসআই) মাইদুল ইসলাম কঙ্কালের সুরতহাল প্রস্তুত করেন এবং ডিএনএ প্রোফাইলের জন্য কঙ্কালটি স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ (মিটফোর্ড) হাসপাতালে মর্গে পাঠান। পাশাপাশি এসআই মাইদুল বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলাটি পাঁচ মাস থানা-পুলিশ তদন্ত শেষে দায়িত্ব পায় পিবিআই। গত আগস্টের ২২ তারিখ মামলাটি তদন্ত শুরু করে পিবিআইয়ের ঢাকা জেলার একটি দল। এর আগে কঙ্কাল উদ্ধারের পর নিহতের স্ত্রী সেলিনা আক্তার ডিএনএ পরীক্ষার আবেদন করেন। পরবর্তীকালে নিহতের মেয়ে নুছরাত (১২) ও ছেলে সাইফের (৬) ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করে সিআইডি।  ডিএনএ পরীক্ষায় রুমানের পরিচয় নিশ্চিত হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত