Ajker Patrika

শিল্পকলার মঞ্চে আবার ‘পাখিদের বিধানসভা’

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
শিল্পকলার মঞ্চে আবার ‘পাখিদের বিধানসভা’

রাজধানীর শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার মূল হলে আবারও বসতে যাচ্ছে ‘পাখিদের বিধানসভা’। ইরানি সুফি কবি ও দার্শনিক ফরিদ উদ্দিন আত্তারের ‘মানতিকুত তোয়ায়ের’ অবলম্বনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের থিয়েটার অ্যান্ড পারফরম্যান্স স্টাডিজ বিভাগ প্রযোজিত নাটকটি ২২ ও ২৩ মে প্রদর্শিত হবে।

নাটকটি রচনা করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের থিয়েটার অ্যান্ড পারফরম্যান্স স্টাডিজ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. শাহমান মৈশান। পরিকল্পনা ও নির্দেশনা দিয়েছেন অধ্যাপক ড. আহমেদুল কবির। বিভাগের ১৪ জন স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থী নাটকটিতে অভিনয়ে অংশগ্রহণ করেন। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ২ ঘণ্টা দৈর্ঘ্যের এই নাটকে উঠে এসেছে মানুষের মধ্যে না পাওয়া, অপূর্ণতা, দুঃখ, অতৃপ্তি ও আত্মার মিলনের মোহ। নাটকটি মঞ্চে আনতে সহযোগিতা করেছে দারুল ইরফান রিসার্চ ইনস্টিটিউট।

নাটকটির রচয়িতা ড. শাহমান মৈশান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এই নাটক বস্তুত ধ্রুপদি সুফি সাহিত্যের সঙ্গে আমার নিজের সময়ের ঘনিষ্ঠতা সন্ধানের একটি নান্দনিক রাজনৈতিক পদ্ধতির ফলিত রূপ। ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট মাসের আগুনলাল সময়ের জঠরে বসে লিখেছি পাখিদের বিধানসভা। ফলে এই নাটক হয়ে উঠেছে আমাদের সময়ের সম্মিলিত রুহের শিহরণ-কম্পিত আধ্যাত্মিকতার এক রাজনৈতিক নাটলিপি।’

নাটকটি প্রসঙ্গে শাহমান মৈশান বলেন, নাটকের আখ্যান গড়ে উঠেছে পাঁচ পর্বে। প্রথম পর্বে দেখা যায়, একটি ব্যর্থ হতে থাকা রাষ্ট্রে বিপ্লব আর প্রতিবিপ্লবের পর একদল যুবক-যুবতীর ভিতর-বাহিরে চলছে বহুমুখী ঘাত-প্রতিঘাত-অন্তর্ঘাত। পরবর্তী পর্বগুলো পাখির রূপকে চিত্রিত মানুষের জীবনের পরম সত্য অর্থের খোঁজে এক অনিবার্য উড়ালযাত্রা। পথের মধ্যে বাধা, বিপদ এবং আত্মবিশ্বাসের অভাবের মুখোমুখি হলেও শেষ পর্যন্ত তারা বাদশাহ সিমুর্গের দরবারে পৌঁছায়। তখন উপলব্ধি করে, তারা প্রত্যেকে নিজেরাই একেকটি সিমুর্গ। পাখিদের বিধানসভার কাহিনি, মৃত্যুভয়হীন আত্মানুসন্ধানের এক রাজনৈতিক উড়ালের আধ্যাত্মিক গল্প।

নাটকের নির্দেশক অধ্যাপক ড. আহমেদুল কবির বলেন, নাটকটি সুফিবাদ এবং আত্ম-অন্বেষণের গভীর দর্শনকে ধারণ করে তৈরি হয়েছে। নাটকের মূলে রয়েছে একতার উপলব্ধি ও আত্ম-অন্বেষণের আকাঙ্ক্ষা। পাখিদের এই যাত্রা মানবজীবনের প্রতীকী রূপ। সুফি সংগীত এবং ব্রেখটের অ্যালিয়েনেশন ইফেক্ট ব্যবহার করেছি। মহড়ার অংশ হিসেবে চট্টগ্রামের ফটিকছড়ির নানুপুরে অবস্থিত গাউসুল আযম মাইজভান্ডারী দরবার শরিফে তিন দিন অবস্থান করে অভিনয়ে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীরা সুফি ধারা, এর আচার এবং আধ্যাত্মিক নিয়মাবলি পর্যবেক্ষণ করেছেন বলে জানান তিনি।

আহমেদুল কবির আরও বলেন, দক্ষিণ এশিয়ার সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের একটি অনন্য দিক হলো সুফিবাদ; যা আধ্যাত্মিকতা, মানবিকতা ও প্রেমের মর্মকে ধারণ করে। এই দর্শন নাটকের মতো শিল্পমাধ্যমে তুলে ধরার অভিজ্ঞতা আমাদের জীবনকে অন্যভাবে দেখতে শেখায়। নাটক লেখা থেকে শুরু করে নাটক নির্মাণপ্রক্রিয়ায় শুধু আধ্যাত্মিক দর্শন বা ঐতিহ্যের অনুসন্ধান নয়, এটি বর্তমান সময়ের সামাজিক-রাজনৈতিক এবং মানসিক জটিলতাগুলো মোকাবিলার মধ্য দিয়ে নতুন আলোচনার দ্বার উন্মোচন করার এক ক্ষেত্র প্রস্তুত করবে বলে আমি বিশ্বাস করি।

নাটকটিতে অভিনয়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, নাটকটির মূল বিষয় অ্যালিয়েনেশন থেকে সেলফ রিয়েলাইজেশন। নাটকটি সুফিতত্ত্বমূলক রূপক-নাটক। নাটকের দর্শন-পরিসরেও অভিকরণ-পরিসরে রূপক-সংকেতের সংবন্ধন ঘটেছে। নাটকের প্রত্যেকটি চরিত্রই পাখি। পাখি হলো আমাদের দেহলীন চিরন্তন রুহ-এর প্রতীক।

এই নাটকের মঞ্চ ও পোশাক পরিকল্পনায় আছেন মহসিনা আক্তার। ডিজিটাল চিত্র পরিকল্পনা করেছেন শান্তনু হালদার। আলোক পরিকল্পনায় ধীমান চন্দ্র বর্মণ। আলোক প্রক্ষেপণে আছেন ধীমান চন্দ্র বর্মণ, সাহাবুদ্দিন মিয়া, মজনু মিয়া। দেহবিন্যাসে অমিত চৌধুরী, সংগীত পরিকল্পনায় সাইদুর রহমান লিপন। নাটকটিতে অভিনয় করছেন আবে হায়াত সৈকত, আল মামুন, আহাদনূর ফকির, এস এ তানভীর, জাদিদ ইমতিয়াজ আহমেদ, তাহিয়া তাসনিম, নিকিতা আযম, মুজাহিদুল ইসলাম রিফাত, রিফাত করবী, রিফাত জাহান শাওন, প্রাণ কৃষ্ণ বণিক, বাদল হোসেন বাদশা, মাহমুদুর রহমান মুক্ত ও সনজিত কুমার দে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ডিসেম্বরেই নির্বাচন হওয়া উচিত: সেনাপ্রধান

শেখ হাসিনাসহ ৩৯৩ জনের বিরুদ্ধে করা মামলা প্রত্যাহার করে নিলেন বিএনপি নেতা

৪ ধরনের শৃঙ্খলাভঙ্গে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের শাস্তি চাকরিচ্যুতি

বদলে গেল স্কুল-কলেজের শপথ, বাদ মুক্তিযুদ্ধ ও অসাম্প্রদায়িক চেতনা

শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্য পরিষদের চেয়ারম্যান আটক

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত