Ajker Patrika

দুদকের কর্মকর্তাকে বরখাস্তের প্রতিবাদে সহকর্মীদের মানববন্ধন

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১৫: ৫৬
Thumbnail image

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) উপসহকারী পরিচালক মো. শরীফ উদ্দিনকে অপসারণের প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছেন সংস্থাটির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। আজ দুপুর ১২টায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ের সামনে তাঁরা মানববন্ধন করেন। এর আগে যে ধারায় শরীফকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে, সেই বিতর্কিত ধারা বাতিলের দাবিতে দুদকের সচিব মো. মাহবুব হোসেনের একটি স্মারকলিপি পেশ করেন তাঁরা। চাকরিচ্যুতির মাধ্যমে দুর্নীতিবাজদের পৃষ্ঠপোষকতা করা হয়েছে বলেও দাবি করা হয় সহকর্মীদের পক্ষ থেকে। 

মানববন্ধনে উপস্থিত দুদকের উপপরিচালক সৈয়দ নজরুল ইসলাম সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘গতকাল ৫৪ (২) ধারা অনুযায়ী আমাদের এক সহকর্মীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। আমরা ইনভেস্টিগেশন-ইনকোয়ারি করতে গিয়ে বেশ কিছু সমস্যার মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। আমাদের কাজ করতে গিয়ে সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়। আমাদের সম্মানিত কমিশন যৌক্তিকতাসহকারে আমাদের সমস্যাগুলো দেখবেন। আমরা যেসব সমস্যার মুখোমুখি হই, সেগুলো সচিব স্যারের কাছে জানিয়েছি। তিনি আশ্বাস দিয়েছেন, খুব দ্রুত আমাদের বিষয়গুলো সমাধান করবেন।’ 

নজরুল ইসলাম আরও বলেন, ‘একটি ক্রিমিনাল প্রসিডিউর বেইসড অন ইনভিজিলেশন অ্যান্ড ইনকোয়ারি চাইলেই তাড়াহুড়া করে দেওয়া যাবে না। আমরা চাইছি এই জিনিসগুলো তারা বুঝে সমাধান দিক। আমাদের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সুযোগ-সুবিধাসহ অন্যান্য বিষয়ে আমাদের নিরাপত্তা প্রয়োজন।’ 

সচিবের কাছে পেশ করা স্মারকলিপিতে প্রধান বিষয় ছিল—অসাংবিধানিকভাবে ও মাননীয় বিজ্ঞ আদালতে বিবেচনাধীন দুর্নীতি দমন কমিশন কর্মচারী (চাকরি) বিধিমালা, ২০০৮-এর বিতর্কিত ৫৪ (২) ধারায় উপসহকারী পরিচালক মো. শরিফ উদ্দীনকে চাকরি থেকে অপসারণের আদেশ বাতিল করার দাবি। 

স্মারকলিপিতে বলা হয়, আমরা দুর্নীতি দমন কমিশনের কর্মচারী হিসেবে দুর্নীত দমন কমিশনের ভিশন-মিশন বাস্তবায়নের জন্য দুর্নীতিবাজ নির্বিশেষে আইনের আওতায় আনার জন্য কাজ করি। যার নজির রয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশনের কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন ও তার পরিপ্রেক্ষিতে বিচার চলমান রয়েছে। দুর্নীতি দমন কমিশন (কর্মচারী) চাকরি বিধিমালা, ২০০৮ এর ৫৪ (২) নম্বর বিধিতে বলা হয়েছে-“এই বিধিমালায় ভিন্নরূপ যাহা কিছুই থাকুক না কেন, উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ কোনো কারণ না দর্শাইয়া কোনো কর্মচারীকে নব্বই দিনের নোটিশ প্রদান করিয়া অথবা নব্বই দিনের বেতন পরিশোধ করিয়া তাহাকে চাকরি হইতে অপসারণ করিতে পারবে। ” 

অন্যদিকে সংবিধানের ১৩৫ (২) নম্বর অনুচ্ছেদে লেখা আছে “অনুরূপ পদে (প্রজাতন্ত্রের অসামরিক পদে নিযুক্ত কোনো ব্যক্তিকে তাহার সম্পর্কে প্রস্তাবিত কোনো ব্যবস্থা গ্রহণের বিরুদ্ধে কারণ দর্শাইবার যুক্তিসংগত সুযোগ দান না করা পর্যন্ত তাহাকে বরখাস্ত, অপসারিত বা পদাবনমিত করা যাইবে না। ” 

স্মারকলিপি আরও বলা হয়, দুর্নীতি দমন কমিশন কর্মচারী (চাকরি) বিধিমালা, ২০০৮ এর ৫৪ বিধিটি চ্যালেঞ্জ করে মাননীয় হাইকোর্ট বিভাগে রিট পিটিশন নম্বর ১৪২৪ / ২০১১ দায়ের করা হলে গত ১৭ অক্টোবর, ২০১১ তারিখ হাইকোর্ট বিভাগ দুদক চাকরি বিধিমালার ৫৪ বিধিকে অসাংবিধানিক হিসেবে ঘোষণা করে। উক্ত রায়ের বিপক্ষে আপিলের পর আপিল আদালত ১০ নভেম্বর, ২০১৬ তারিখে আপিল খারিজ করে হাইকোর্ট বিভাগের ৫৪ বিধি অসাংবিধানিক ঘোষণাটি বহাল রাখে। অর্থাৎ ৫৪ বিধি অনুযায়ী দুদকের কোনো কর্মচারীকে সংবিধানের ২৭ / ২৯ / ২১ ও ৪০ অনুচ্ছেদ বলে প্রদত্ত মৌলিক অধিকার আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ হিসেবে ব্যাখ্যা প্রদানের সুযোগ না দিয়ে কাউকে ৯০ দিনের বেতন দিয়ে স্থায়ী রাজস্ব খাতভুক্ত চাকরি থেকে অপসারণের অবকাশ ছিল না। কিন্তু কমিশন আপিল বিভাগের উক্ত সিদ্ধান্তের বিপরীতে ৩২ / ২০১৭ সিভিল রিভিশন দায়ের করলে একতরফা (রিটকারীর প্রতিনিধির অনুপস্থিতিতে) শুনানি করে গত ২৮ নভেম্বর, ২০২১ তারিখে হাইকোর্টের আদেশটি স্থগিত করে এবং বিষয়টি বিজ্ঞ উচ্চ আদালতের আপিল বিভাগে বিচারাধীন রয়েছে। দুর্নীতি দমন কমিশন চাকরি বিধিমালা ২০০৮ এর ৫৪ বিধির কার্যকারিতার বিষয়টি উক্ত আদালতে বিচারাধীন থাকাবস্থায় দুদকে ২০১৪ সালে যোগদানকৃত একজন কর্মকর্তাকে কোনোরূপ আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে এবং সে কোনোরূপ অপরাধ করেছে কি-না সে বিষয়টি তাঁকে অবহিত না করে ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২২ তারিখের স্মারক নম্বর: ৭৪৯০ মূলে ৫৪ (২) বিধি প্রয়োগের মাধ্যমে উপসহকারী পরিচালক মো. শরিফ উদ্দীনকে চাকরি থেকে অপসারণ করা হয়, যা অসাংবিধানিক, বেআইনি ও সাধারণ আইনের আওতায় মানবাধিকার পরিপন্থী। 

দুদক উপ-সহকারী পরিচালক মো. শরীফ উদ্দিন অপসারণের প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছে সংস্থাটির কর্মকর্তা-কর্মচারীরাস্মারকলিপিতে বলা হয়, মো. শরিফ উদ্দীন চট্টগ্রামে দক্ষ ও পরিশ্রমী কর্মকর্তা হিসেবে পরিচিত। তিনি তাঁর চট্টগ্রাম অফিসে কর্মরত থাকাকালীন ৫২টি মামলা দায়ের করেন। এ ছাড়া তিনি বিজ্ঞ আদালতের বিচারার্থে ১৫টি চার্জশিট দাখিল করেন। তিনি কক্সবাজারে ভূমি অধিগ্রহণের কোটি কোটি টাকা আত্মসাতের ঘটনা উদ্ঘাটনসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধান ও তদন্তে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। শরীফ উদ্দিনের দুর্নীতিবিরোধী অবস্থানের কারণে সংক্ষুব্ধ পক্ষসমূহ বিভিন্ন সময়ে তাঁকে নানাভাবে ভয়ভীতি প্রদর্শন ও প্রাণনাশের হুমকি দিয়েছেন। ৫৪ (২) বিধি প্রয়োগের মাধ্যমে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে তাঁকে চাকরি থেকে অপসারণ প্রকারান্তরে দুর্নীতিবাজদের সহযোগিতা ও পৃষ্ঠপোষকতা প্রদান করার সমার্থক। 

মানববন্ধনে উপসহকারী পরিচালক মো. শরিফ উদ্দীনের দুর্নীতি দমন কমিশনের অসাংবিধানিক ও অমানবিক অপসারণ আদেশ প্রত্যাহার ও দুর্নীতি দমন কমিশন কর্মচারী (চাকরি) বিধিমালা, ২০০৮ এর ৫৪ (২) বিধি বাতিলপূর্বক কমিশনের কর্মকর্তাদের নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিতকরণের অনুরোধ জানানো হয়। 

শরীফ পটুয়াখালী সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে কর্মরত ছিলেন। এর আগে তিনি চট্টগ্রাম-২ এর সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে ছিলেন। গত বছরের ১৬ জুন চট্টগ্রাম থেকে তাঁকে পটুয়াখালী বদলি করা হয়। বুধবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) দুদক চেয়ারম্যান মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ সই করা এক প্রজ্ঞাপনে তাঁকে অপসারণ করা হয়। 

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, দুর্নীতি দমন কমিশন (কর্মচারী) চাকরি বিধিমালা, ২০০৮ -এর বিধি ৫৪ (২) তে প্রদত্ত ক্ষমতাবলে পটুয়াখালী সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপসহকারী পরিচালক মো. শরীফ উদ্দিনকে চাকরি হতে অপসারণ করা হলো। তিনি বিধি মোতাবেক ৯০ দিনের বেতন এবং প্রযোজ্য সুযোগ-সুবিধা (যদি থাকে) পাবেন। কমিশনের অনুমোদনক্রমে জনস্বার্থে এ আদেশ জারি করা হলো। যা ১৬ ফেব্রুয়ারি বিকেল থেকে কার্যকর গণ্য হবে। 

চট্টগ্রাম কার্যালয়ে কর্মরত থাকাকালে বেশ কিছু বড় দুর্নীতি মামলার তদন্ত কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এরপরই একাধিক মহলের রোষানলে পড়েন বলে অভিযোগ ওঠে।

সর্বশেষ গত ৩০ জানুয়ারি পরিবারসহ হত্যার হুমকি পান শরীফ। পরিবারসহ হত্যার হুমকি পাওয়ায় কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আইয়ুব খান চৌধুরী ও তাঁর সঙ্গীদের বিরুদ্ধে সিসিটিভির ফুটেজসহ চট্টগ্রামের খুলশী থানায় সাধারণ ডায়েরিও (জিডি) করেন।

কক্সবাজারে কয়েকটি মেগা প্রকল্পে ভূমি অধিগ্রহণ বাবদ কয়েক শ কোটি টাকা আত্মসাৎ, চট্টগ্রাম মেডিকেলে অনিয়ম-দুর্নীতি, কর্ণফুলী গ্যাসে নিয়োগ দুর্নীতি, এনআইডি জালিয়াতি, রোহিঙ্গাদের ভোটার করা নিয়ে দুর্নীতি, ইয়াবা কারবারিদের সম্পদ গোপন ইত্যাদি। এসব মামলার সূত্র ধরেই আলোচিত-সমালোচিত হন শরীফ। অভিযোগ রয়েছে, এসব প্রভাবশালী ব্যক্তিদের নানামুখী চেষ্টায় তাঁকে চট্টগ্রাম থেকে বদলি করা হয় পটুয়াখালী। এরপর আটকে দেওয়া হয়েছিল পদোন্নতিও।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

তিন ছাত্রকে আটক করায় এসআই ক্লোজড, ওসির বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু

সংবিধানে ‘রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম’ রাখার পক্ষে যে যুক্তি দিলেন আলী রীয়াজ

রাজধানীতে নিখোঁজ কিশোরী নওগাঁয়, যা বললেন সঙ্গে থাকা তরুণের বাবা

আটক ৩ জনকে ছাড়িয়ে নিতে উত্তরায় থানায় হামলা শিক্ষার্থীদের

থানায় হামলা করে আটকদের ছাড়িয়ে নিল ছাত্ররা, বদলির মুখে ওসি-এসআই

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত