Ajker Patrika

লক্ষ্মীপুর-দোদারা খাল পুনর্খননে ৪ হাজার একর জমির জলাবদ্ধতা নিরসন 

রাজৈর (মাদারীপুর) প্রতিনিধি
আপডেট : ২৪ এপ্রিল ২০২২, ১২: ৪৪
লক্ষ্মীপুর-দোদারা খাল পুনর্খননে ৪ হাজার একর জমির জলাবদ্ধতা নিরসন 

খরায় পানির সংকট আর বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধতার কারণে প্রতিবছর মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার কদমবাড়ী ইউনিয়নের মালিকুঁড়ি বিলের প্রায় ৪ হাজার একর ফসলি জমি অনাবাদি থাকত। এই সমস্যা থেকে ফসলি জমি বাঁচাতে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি) প্রায় ৩৮ লাখ টাকা ব্যয়ে তিন কিলোমিটার খাল পুনর্খনন করে। এতে বিলপাড়ের ২০ হাজার কৃষক পরিবারের ভাগ্য এখন বদলে যাবে। 

জানা যায়, মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার কদমবাড়ী এলাকার মালিকুঁড়ি বিলের ৯টি মৌজার প্রায় ৪ হাজার একর জমির পানি নিষ্কাশনের একমাত্র মাধ্যম লক্ষ্মীপুর-দোদরা খাল। প্রায় তিন কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের খালটি বিগত ৩০ বছরেও খনন না করায় সামান্য বৃষ্টিপাতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে তলিয়ে যেত কৃষকের সোনালি ফসল। এতে কৃষকদের কাছে অভিশপ্ত হয়ে ওঠে দোদারা খাল। তাই মালিকুঁড়ি বিলের পানি নিষ্কাশনের জন্য তিন কিলোমিটারের লক্ষ্মীপুর-দোদারা খালটি পুনর্খনন ছিল বিলপাড়ের মানুষের প্রাণের দাবি। 

কৃষকদের কথা বিবেচনা ও বৃহত্তর এই বিলের ফসল রক্ষার্থে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন বৃহত্তর ফরিদপুর সেচ এলাকা উন্নয়ন প্রকল্পের (চতুর্থ পর্যায়) আওতায় লক্ষ্মীপুর-দোদারা খালটি পুনর্খননের উদ্যোগ নেয়। এরই মধ্যে প্রায় ৩৮ লাখ টাকা ব্যয়ে খালটির শতভাগ পুনর্খননের কাজ শেষ হয়েছে। এতে বদলে যেতে শুরু করেছে বিলপাড়ের প্রায় ২০ হাজার কৃষক পরিবারের ভাগ্য। একসময়ের অভিশপ্ত লক্ষ্মীপুর-দোদরা খালটি এখন কৃষকদের কাছে আশীর্বাদে পরিণত হয়েছে। 

এ বিষয়ে কৃষক আতাহার বলেন, ‘এত দিন পানির জন্য আমাদের ফসল ভালো হতো না। এখন আমরা সব সময় পানি পাব, আমাদের ফসল ভালো হবে। এ জন্য আমরা সরকারের কাছে ঋণী।’ 

কৃষক মিন্টু শেখ বলেন, ‘আমাদের এখানে অনেক সময় পানির অভাবে জমিতে ফসল হয়নি। আবার বৃষ্টিবাদলের দিনে জলাবদ্ধতার জন্য ফসল নষ্ট হতো। এখন আর সেই সমস্যা হবে না।’

আনোয়ার হোসেন নামে অপর কৃষক বলেন, ‘এই এলাকায় আমার অনেক জমি আছে। তবে জমি থেকে তেমন ফসল পেতাম না। তাই ভেবেছিলাম জমি বিক্রি করে দেব। কিন্তু এখন আর বিক্রি করব না। এখন আল্লাহর রহমতে ভালো ফসল হবে। এই খাল খনন করায় আমরা অতি সহজেই পানি পাব।’ 

রাজৈর উপজেলার উপসহকারী প্রকৌশলী, বিএডিসি (ক্ষুদ্র সেচ) মো. রুহুল আমিন বলেন, খালটি পুনর্খনন করায় কৃষকেরা রবিশস্যের পাশাপাশি শুষ্ক মৌসুমে সেচের মাধ্যমে চাষাবাদ করতে পারবেন। এ ছাড়া আগে যেখানে এই বিলে একটি ফসল তোলা সম্ভব হতো না, সেখানে কৃষকেরা এখন তিনটি ফসল উৎপাদন করতে পারবেন। 

মাদারীপুর জোন সহকারী প্রকৌশলী, বিএডিসি (ক্ষুদ্র সেচ) মো. নাসিম আহমেদ বলেন, খালটি পুনর্খননে বর্ষা মৌসুমে পানি নিষ্কাশন ও বন্যায় সৃষ্ট জলাবদ্ধতা দূরীকরণের মাধ্যমে প্রায় ২০ হাজার কৃষকের ফসল রক্ষা পাবে। তা ছাড়া খালে ধারণকৃত পানি শুকনো মৌসুমে সেচকাজে ব্যবহার করা সম্ভব। এতে প্রায় ৪ হাজার একর জমি তিন ফসলিতে রূপান্তর হবে। 

এ নিয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সদস্য, মাদারীপুর-২ ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শাজাহান খান বলেন, প্রধানমন্ত্রীর দিকনির্দেশনায় নদীনালা খনন করা হচ্ছে। এতে কৃষি খাত আরও এগিয়ে যাবে। কৃষকদের ফসল উৎপাদনের গতি আরও বাড়বে। তাই সরকার খাল খননের প্রতি ব্যাপক জোর দিচ্ছে। 

শাজাহান খান আরও বলেন, ‘আমি মন্ত্রী থাকাকালীন অনেক কাজ করেছি। বর্তমানে কৃষিবান্ধব সরকারের সময়োপযোগী সিদ্ধান্তে কৃষি খাত এগিয়ে যাচ্ছে। ভবিষ্যতেও এই ধারা অব্যাহত থাকবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত