Ajker Patrika

‘আর কত দিন নেতারা গরিবের পেটে লাথি মারবে’

রাতুল মণ্ডল, (শ্রীপুর) গাজীপুর
আপডেট : ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৮: ২৬
অভিযুক্ত গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার গোসিঙ্গা ইউনিয়ন ওলামা দলের সভাপতি জাকির হোসেন মোড়ল। ছবি: সংগৃহীত
অভিযুক্ত গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার গোসিঙ্গা ইউনিয়ন ওলামা দলের সভাপতি জাকির হোসেন মোড়ল। ছবি: সংগৃহীত

‘আমরা গরিব-অসহায় মানুষ! সামান্য জমিতে চাষবাস করে জীবন চালাই। আমাদের তো শক্তি-সাহস কোনোটাই নাই। এই অল্প জমির ওপর পরিবারের মুখে ভাত ওঠে। আমাদের মতো গরিবের ওপর এমন জুলুম ক্যান? আর কত দিন নেতারা গরিবের পেটে লাথি মারবে?’

নিজের নিজের ১৫ গন্ডা জমিতে (প্রায় ৩০ শতাংশ) চাষ করতে না পেরে অসহায় হয়ে এ কথাগুলো বলছিলেন বিধবা হাজেরা খাতুন। গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার গোসিঙ্গা ইউনিয়নের খোজেখানি গ্রামের মৃত আব্দুল হাতেম আলীর স্ত্রী তিনি। শুধু হাজেরা খাতুন নয়, একই গ্রামের ১৫ থেকে ২০ জন কৃষক তাদের নিজের জমিতে হালচাষ করতে পারছেন না।

তাঁদের বাধা দিচ্ছেন গোসিঙ্গা ইউনিয়নের খোজেখানি গ্রামের মৃত আফতাব উদ্দিন মোড়লের ছেলে ও ইউনিয়ন ওলামা দলের সভাপতি মো. জাকির হোসেন মোড়ল। তিনি কৃষকদের জমি লিজ নিয়ে ব্যবসার উদ্দেশে বালু রাখতে চান। কিন্তু তিন ফসলি আবাদি জমি দীর্ঘদিন বালু রেখে নষ্ট করার পক্ষপাতি নন কোনো কৃষকই।

ভুক্তভোগী ষাটোর্ধ্ব নারী হাজেরা খাতুন। ছবি: আজকের পত্রিকা
ভুক্তভোগী ষাটোর্ধ্ব নারী হাজেরা খাতুন। ছবি: আজকের পত্রিকা

ভুক্তভোগী কৃষকদের অভিযোগ, মামলার ভয় দেখিয়ে, স্থানীয় সন্ত্রাসীর মাধ্যমে দিয়ে হুমকি দিয়ে জমিতে চাষ, সেচ সব বন্ধ রাখতে বাধ্য করছেন ওই নেতা। এ নিয়ে উপজেলা প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন কৃষকেরা।

ষাটোর্ধ্ব বয়সের বিধবা নারী হাজেরা খাতুন বলেন, ‘স্বামীর রেখে যাওয়া ১৫ গন্ডা জমিতে চাষবাস করেই আমার সংসার। হঠাৎ করে আমাদের ওপর খুবই জুলুম শুরু করছে জাকির মোড়ল। উনি আমার জমিতে হালচাষ করতে দিচ্ছে না। আমাদের জমি জবর-দখল করে এখানে নাকি বালু মজুত করবে। বালু মজুত করলে তো আমাদের জমিতে আর ফসল হবে না। আমরা অসহায় হতদরিদ্র মানুষ, কান্না ছাড়া কিছুই করার নেই।’

সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার গোসিঙ্গা ইউনিয়নের খোজেখানি গ্রামে কয়েক বিঘা জমি অনাবাদি পড়ে রয়েছে। কয়েকজন কৃষক তাদের খেতে পানি সেচ দিতে পারলেও, হালচাষ না করতে পারায় আবার খেত শুকিয়ে গেছে। একটি খেতে পানি থাকলেও হালচাষে বাধা দেওয়ার কারণে জমি তৈরি বন্ধ রাখা হয়েছে। কয়েকটি খেতের চারপাশ পরিষ্কার করা হয়েছে। পানি সেচের জন্য পাইপ কেটে টুকরো টুকরো করে ফেলে রাখা হয়েছে।

জমিতে ভুক্তভোগী কৃষকেরা। ছবি: আজকের পত্রিকা
জমিতে ভুক্তভোগী কৃষকেরা। ছবি: আজকের পত্রিকা

একই গ্রামের কৃষক সোলাইমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আশপাশের সবাই জমিতে ধান লাগানো কাজ শেষ করছে। আমরা জমিই তৈরি করতে পারছি না, সেচ দিতে পারছি না। বালুগদি করার জন্য জমি না দিলে হত্যা মামলা ফাঁসিয়ে দেওয়ার হুমকি দিচ্ছে জাকির মোড়ল। আমরা খুবই ভয়ে আছি।’

আবুল কালাম নামের এক কৃষক বলেন, ‘চার বিঘা জমিতে ধান চাষ করি। সেই ধান দিয়ে সারা বছর স্ত্রী-সন্তানের খাবার এবং পড়াশোনা খরচ জোগাই। আমরা কৃষক মানুষ বোরো ফসল আমাদের বড় সম্বল। ধান রোপণের সময় চলে যাচ্ছে। আমাদের হুমকি ধামকি দিচ্ছে। আশপাশের ট্রাক্টর মালিকদের নিষেধ করছে জাকির হোসেন। আমরা ধানখেতে সেচ দেওয়ার জন্য নদী থেকে যে পাইপ লাগাইছিলাম, সেটা কেটে ফেলছে।’

বৃদ্ধ কৃষক দৌলত মোড়ল বলেন, ‘আমাদের ওপর এমন জুলুম কেন। আমাদের জমিতে আমরা চাষবাস করতে পারছি না। নেতারা লোক ভাড়া করে এনে আমাদেরকে হুমকি-ধমকি দিচ্ছে। আশপাশের ১০০ বিঘা জমি নষ্ট করার পাঁয়তারা করছে ওঁরা। এই চক্র থেকে বাঁচতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। তবুও ভরসা পাচ্ছি না। নেতাদের সঙ্গে কীভাবে পারব?’

অভিযোগের বিষয়ে ওলামা দলের সভাপতি মো. জাকির হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমরা একটি বালু গদি করার জন্য জমি লিজ নিতে চাচ্ছি। জমির মালিকদেরকে ধানের দাম দেবো, তবুও তাঁরা রাজি হচ্ছে না।’

তিনি আরও বলেন, ‘জমিতে হালচাষে বাধা দেওয়ার বিষয়টি সঠিক নয়। কাউকে মামলায় ফাঁসানোর হুমকি ধামকি দেওয়া হয়নি। বলে বুঝিয়ে জমি লিজ নেওয়ার চেষ্টা করছি।’

এ বিষয়ে শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইউএনও সজীব আহমেদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘২০ জন কৃষকের স্বাক্ষরিত একটি অভিযোগ পেয়েছি। তদন্তের জন্য কৃষি কর্মকর্তাকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। স্থানীয় ভুক্তভোগী কৃষকেরা না চাইলে কোনোমতেই কেউ জোরপূর্বক বালু গতি করতে পারবে না। প্রশাসনের পক্ষে কৃষকদের সব ধরনের আইনি সহায়তা দেওয়া হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত