Ajker Patrika

নারী বিসিএস কর্মকর্তাকে ধর্ষণের মামলায় এএসপি সোহেলের বিচার শুরু

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
নারী বিসিএস কর্মকর্তাকে ধর্ষণের মামলায় এএসপি সোহেলের বিচার শুরু

নারী বিসিএস কর্মকর্তাকে ধর্ষণের অভিযোগে করা মামলায় সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) সোহেল উদ্দিন প্রিন্সের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়েছে। আজ বুধবার ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৬ এর বিচারক আল-মামুন অভিযোগ গঠন করেন। 

বাদী পক্ষের আইনজীবী আনোয়ারুল কবির বাবুল অভিযোগ গঠনের বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, ‘অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে বিচার শুরু হলো।’ 

অভিযোগ গঠনের সময় এএসপি সোহেল ট্রাইব্যুনালে হাজির ছিলেন। তিনি নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন। এর আগে তিনি আইনজীবীর মাধ্যমে মামলা থেকে অব্যাহতির আবেদন করেন। শুনানি শেষে ট্রাইব্যুনাল ওই আবেদন নামঞ্জুর করে অভিযোগ গঠন করেন। গত বছর ২৫ জুলাই সোহেল আত্মসমর্পণ করে জামিন পান। 

অভিযোগের বিচার বিভাগীয় তদন্ত প্রতিবেদনে সোহেলের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হওয়ায় অভিযোগ আমলে নিয়ে ট্রাইব্যুনাল গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। পুলিশ থেকে সোহেলকে আগেই সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। ৩৬ তম বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে পুলিশে যোগ দেন তিনি। 

এর আগে, ২০২২ সালের ২৩ নভেম্বর সোহেল উদ্দিন প্রিন্সের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগে ট্রাইব্যুনালে মামলা দায়ের করেন ভুক্তভোগী ওই নারী। তিনি একজন সরকারি কর্মকর্তা। এরপর ট্রাইব্যুনাল মামলাটি বিচার বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দেন। ঘটনার সত্যতা পাওয়ায় সোহেল উদ্দিন প্রিন্সের বিরুদ্ধে প্রতিবেদন দাখিল করেন। 

মামলার অভিযোগে বলা হয়, ভুক্তভোগী ওই নারী একজন সরকারি কর্মকর্তা। পরিচয়ের সুবাদে এএসপি সোহেল উদ্দিনের সঙ্গে তাঁর বিয়ের কথা হয়। ২০২১ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি সোহেল উদ্দিন ওই নারীকে রমনা পুলিশ অফিসার্স মেসে আসতে বলেন। সেখানে তাঁর আত্মীয়-স্বজনের উপস্থিতিতে কাজির মাধ্যমে বিয়ে হবে বলেও জানান ওই পুলিশ কর্মকর্তা। 

অভিযোগপত্রে আরও বলা হয়েছে, তবে ওই দিন সন্ধ্যা ৭টায় ভুক্তভোগী নারী তাঁর আত্মীয়-স্বজনসহ রমনা পুলিশ অফিসার্স মেসে উপস্থিত হয়ে সোহেল উদ্দিন ছাড়া আর কাউকে দেখতে পাননি। এ নিয়ে প্রশ্ন করলে সোহেল জানান, কিছুক্ষণের মধ্যে সবাই এসে যাবে। ওই নারী সরল বিশ্বাসে আসামির সঙ্গে কথা বলতে থাকেন। কথাবার্তার একপর্যায়ে সোহেল উদ্দিন তাঁকে খুন করার ভয় দেখিয়ে তাঁর ওপর পাশবিক নির্যাতন চালান। 

এর আগেও সোহেল একটি বিয়ে করেছিলেন। সেই স্ত্রী তাঁর বিরুদ্ধে যৌতুকের মামলা করেছিলেন। স্ত্রীর দায়ের করা যৌতুক মামলায় অভিযুক্ত হয়ে সাময়িক বরখাস্ত হন সোহেল উদ্দিন। সে সময় তিনি কুড়িগ্রামের রৌমারী সার্কেলে কর্মরত ছিলেন। ২০১৮ সালের ৩ সেপ্টেম্বর চাকরিতে যোগদান করেন সোহেল। সোহেলের গ্রামের বাড়ি চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জের মনতলায়। 
 
গত বছরের ১৮ মে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের শৃঙ্খলা-২ শাখা থেকে সোহেলের বরখাস্তের বিষয়টি জানানো হয়। মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে প্রজ্ঞাপনও জারি করা হয়। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, কুড়িগ্রাম জেলার রৌমারী সার্কেলের এএসপি মো. সোহেল উদ্দিনের বিরুদ্ধে তাঁর স্ত্রী রিফাত জাহান ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ২০১৮ সালের যৌতুক নিরোধ আইনে মামলা করেন। ওই মামলায় ২০২২ সালের ২ অক্টোবর সোহেল উদ্দিন আত্মসমর্পণ করে আদালত থেকে জামিন নেন। পরে ২০২২ সালের ১০ নভেম্বর আদালত এ মামলায় তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন। তাই চাকরিবিধি অনুযায়ী রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে তাকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হলো। 

এদিকে সোহেল উদ্দিনের বিরুদ্ধে আরও অভিযোগ, পাঁচ বছরের চাকরি জীবনের ৩ বছরেরও কম সময়ে সাড়ে পাঁচ কোটি টাকারও বেশি সম্পদ গড়েছেন তিনি। এর মধ্যে সাড়ে ৩ কোটি টাকা বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগও করেছেন। বাকি দেড় কোটির বেশি টাকা রয়েছে নগদ ও ব্যাংক হিসাবে। নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে নিয়েছেন আড়াই কাঠা জমি। এর বাইরেও তাঁর রয়েছে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে অলংকারাদি। এসব বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন অনুসন্ধান করছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত