Ajker Patrika

স্বর্ণের খোঁজে নর্দমায়

আমিনুল ইসলাম নাবিল
আপডেট : ০৭ অক্টোবর ২০২১, ২২: ৪৩
স্বর্ণের খোঁজে নর্দমায়

পুরান ঢাকাকে বলা হয় ‘বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি’র শহর। এই ঢাকার অলিগলিতে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে ইতিহাস ও ঐতিহ্য। এখানকার ঐতিহাসিক একটি এলাকা তাঁতীবাজার। কথিত আছে, জামদানি শাড়ি বুনতেন এমন একদল তাঁতি বহু আগে থেকেই এখানে বাস করতেন। সেখান থেকেই এলাকাটির নামকরণ। তাঁতীবাজার এলাকাটি বিভিন্ন কারণে বিখ্যাত। সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দু সম্প্রদায়ের বসবাস এই এলাকায়। দুর্গাপূজার সময় এলাকাটি মেতে ওঠে উৎসবে। বিভিন্ন খাবারের দোকান, ঘিঞ্জি রাস্তা, সরু বাড়ি ইত্যাদিই যেন এখানকার সৌন্দর্য। 

তাঁতীবাজার এলাকাটি মূল্যবান বাহারি সব স্বর্ণালংকারের জন্যও বিখ্যাত। এখানে রয়েছে অসংখ্য গয়নার দোকান। দোকানগুলোতে ভরি ভরি স্বর্ণ দিয়ে তৈরি করা হয় অসংখ্য ডিজাইনের নজরকাড়া সব গয়না। পুরো তাঁতীবাজারে স্বর্ণালংকার তৈরির হাজারখানেক কারখানা ও দোকান আছে। এসব দোকান ও কারখানাকে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠেছে বিচিত্র এক পেশা। অলংকার তৈরির সময় স্বর্ণের মূল্যবান ধাতু নর্দমায় পড়ে যায়। আর এসব মূল্যবান ধাতু ড্রেনের ময়লা ও রাস্তার ধুলোবালু থেকে ছেঁকে বের করে আনাকেই পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন একদল মানুষ। এই পেশার সঙ্গে জড়িত লোকেদের বলা হয় ‘নেহারওয়ালা’। 

সোনা খোঁজার সরঞ্জামতাঁতীবাজার এলাকা দিয়ে হাঁটলেই স্বর্ণের দোকানের সামনে তাঁদের দেখা মেলে। দেখা যায়, একদল লোক ড্রেন থেকে কী যেন তুলছেন। খালি চোখে দেখলে মনে হবে তাঁরা ড্রেন থেকে শুধু ময়লা তুলছেন। কিন্তু ময়লা নয়, তাঁরা ড্রেন থেকে ছেঁকে ছেঁকে তুলে আনছেন স্বর্ণ। বিনা পুঁজির এই কাজে উপার্জনও কম নয়। এ কাজ করেই মাসে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা পর্যন্ত আয় করেন ময়মনসিংহের শেখ রবি। বয়স তাঁর ৪০। গত ২০ বছর ধরে তিনি এই পেশায় আছেন। তিনি জানান, স্ত্রী ও দুই মেয়ে নিয়ে স্বাচ্ছন্দ্যেই চলছে তাঁর সংসার। দিনে আট ঘণ্টা এ কাজে সময় দিতে হয়। একদল লোক কাজ করে গেলে আরেক দল লোক এসে কাজে যোগ দেয়। কোনো কোনো মাসে ১ ভরির মতো স্বর্ণও পাওয়া যায়। এসব স্বর্ণ আবার দোকানদারদের কাছেই বাজারমূল্যের চেয়ে কিছুটা কম দামে বিক্রি করা হয়। 

নর্দমা থেকে স্বর্ণ তুলে আনার কাজে কী কী প্রয়োজন হয় জানতে চাইলে শেখ রবি বলেন, ‘তেমন কিছুর প্রয়োজন হয় না। যা যা দেখছেন শুধু সেগুলোই লাগে। কড়াই, ছাঁকনি আর অ্যাসিড। বলা যায়, পুঁজি ছাড়া কাজ। প্রথমে ড্রেন থেকে কড়াইতে সব ময়লা ওঠাই। তারপর ছেঁকে ছেঁকে ময়লাগুলো ফেলে মূল্যবান ধাতুগুলো আলাদা করে নিই। মূল্যবান ধাতুগুলো কড়াইতে জমাতে থাকি। এগুলো ধুয়ে ধুয়ে রাখি। পরে আবার অ্যাসিড দিয়ে এগুলো জমাটবদ্ধ করতে হয়। এরপর এগুলো দোকানদারদের কাছে বাজারমূল্যের চেয়ে কিছুটা কম দামে বিক্রি করি।’ 

নর্দমা থেকে সোনা তুলে আনাই তাঁদের কাজএ কাজে মাসিক আয় ৩০-৪০ হাজার টাকা হলেও খুব বেশি সচ্ছল হওয়া যায় না বলে জানান শেখ রবি। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘প্রতিদিন ভেঙে ভেঙে টাকা পাই। অল্প অল্প করে স্বর্ণ জমাই, আবার বিক্রি করে দিই। টাকা থাকে না।’ 

তার পরও এই কাজ বেশ ভালোই লাগে শেখ রবির। বললেন, ‘২০ বছর ধরে কাজ করতেসি। খারাপ লাগে না। যত দিন আছি, এ পেশাতেই থাকব।’ 

স্বর্ণ খোঁজার তাগিদে দিনের বড় একটা সময় নর্দমার সঙ্গে বসবাস করতে হয়। পরিবারের লোকজন বিষয়টিকে কীভাবে দেখে জানতে চাইলে শেখ রবি বলেন, ‘এ পেশা নিয়ে আমার পরিবারের লোকজনের কোনো আপত্তি নেই। কাজ শেষে বাসায় গিয়ে গোসল করে পরিষ্কার হয়ে নিই।’

 

 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

আ. লীগ নির্বাচনে অংশ নেবে কি না, তারাই সিদ্ধান্ত নেবে: বিবিসিকে প্রধান উপদেষ্টা

‘মবের হাত থেকে বাঁচাতে’ পলকের বাড়ি হয়ে গেল অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প

বিশ্ববিদ্যালয় ঘোষণা হলেই মেয়াদ শেষ নতুন পরিচালনা কমিটির

স্বাধীনতা পদক পাচ্ছেন এম এ জি ওসমানীসহ ৮ জন

ভ্যানিটি ব্যাগ ধরে টান, সন্তানসহ ছিটকে পড়তেই তরুণীর গালে ছুরিকাঘাত

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত