Ajker Patrika

কালোবাজারিতে রেলের টিকিট বেচেই প্রতি ঈদে আয় করতেন ১০ লাখ টাকা 

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২৮ এপ্রিল ২০২২, ২০: ৪১
কালোবাজারিতে রেলের টিকিট বেচেই প্রতি ঈদে আয় করতেন ১০ লাখ টাকা 

পরিবারের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করে নিতে নগরীর মানুষ ছুটছে বাস, ট্রেন ও লঞ্চ স্টেশনে। কিন্তু এসব পরিবহনের টিকিট পেতেই ঈদের আনন্দ অর্ধেক ম্লান হয়ে যাচ্ছে যাত্রীদের। বাস, লঞ্চ, ট্রেন এমনকি প্লেনের টিকিটও বিক্রি হচ্ছে দ্বিগুণেরও বেশি দামে। এমন পরিস্থিতিতে ট্রেনই হয়ে উঠেছে নিম্ন আয়ের মানুষের প্রধান ভরসা। কিন্তু অনলাইনে ছাড়ার ১৫ মিনিটের মধ্যেই শেষ হয়ে যাচ্ছে রেলের টিকিট। রাতভর স্টেশনে অপেক্ষা করেও সকালে টিকিট বিক্রির শুরুতেই শুনতে হচ্ছে ‘টিকিট শেষ’। 

এই অসম্ভবের শেকড় খুঁজতে গিয়ে দেখা গেছে, ‘সরষের মধ্যেই ভূত’। রেলের টিকিট কালোবাজারি চক্রের আসল ‘ভূত’ এর সন্ধান পেয়েছে র‍্যাব। রেলের টিকিট অনলাইনে বিক্রির দায়িত্বে থাকা সহজ ডট কমের সিস্টেম ইঞ্জিনিয়ার মো. রেজাউল করিমসহ (৩৮) দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাব-১। এ ছাড়াও তাঁর কালোবাজারি টিকিট বিক্রির সহযোগী মো. এমরানুল আলম সম্রাট (২৮) নামে আরেকজনকে আটক করা হয়েছে। 

আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজধানীর কারওয়ান বাজারের র‍্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানিয়েছেন র‍্যাব-১ এর অধিনায়ক (সিও) লে. কর্নেল আব্দুল্লাহ আল মোমেন। বুধবার রাতে এদের আটক করা হয়েছে বলে জানিয়েছে র‍্যাবের এই কর্মকর্তা। আটকের সময় তাদের ব্যবহৃত স্মার্টফোন থেকে অবৈধ উপায়ে সংগ্রহ করা বিপুল পরিমাণ রেলওয়ে ই-টিকিট জব্দ করা হয়েছে। 

লে. কর্নেল আব্দুল্লাহ আল মোমেন বলেন, চক্রের সঙ্গে জড়িত অপরাধীদের চিহ্নিত ও তথ্য উদ্ঘাটনের জন্য কমলাপুর স্টেশনের ২য় তলায় সার্ভার রুম থেকে সহজ ডট কমের সিস্টেম ইঞ্জিনিয়ার মো. রেজাউল করিমকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়। ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদের পর তিনি রেলওয়ে টিকিট কালোবাজারির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দেন। কিন্তু একপর্যায়ে তাঁর পরস্পর বিরোধী বক্তব্যে সন্দেহ হলে তাঁর ব্যবহৃত মোবাইল ফোন পর্যবেক্ষণ করে টিকিট কালোবাজারির সঙ্গে তাঁর সরাসরি সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়। 

রেজাউল করিমকে জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে র‍্যাবের এই কর্মকর্তা জানান, তিনি বিগত ৬ বছর ধরে রেলওয়ে টিকেটিং এর সঙ্গে জড়িত। সহজ ডট কমের আগে সিএসএন ডট বিডি নামে একটি প্রতিষ্ঠানে তিনি কর্মরত ছিলেন। লে. কর্নেল আব্দুল্লাহ আল মোমেন বলেন, ‘তিনি প্রতিবছর ঈদ মৌসুমে আনুমানিক প্রায় ২ থেকে ৩ হাজার রেলওয়ে টিকিট অবৈধ উপায়ে সরিয়ে নিতেন। এভাবে প্রতি মৌসুমে তিনি প্রায় ১০-১২ লাখ টাকার মত অবৈধভাবে আয় করতেন। তাঁর বেশ কয়েকজন সেলসম্যান রয়েছে, যারা বিভিন্ন রেলস্টেশনে এই কালোবাজারি টিকিট বিক্রির সঙ্গে জড়িত।’ 

র‍্যাব মিডিয়া সেন্টারে রেজাউল করিম ও এমরানুল আলম সম্রাট।ছবি: আজকের পত্রিকালে. কর্নেল আব্দুল্লাহ আল মোমেন আরও বলেন, ‘অভিযুক্ত মো. রেজাউল করিমকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, তিনি ব্যক্তিগত পরিচিতদের কাছে টিকিট প্রতি প্রায় ৫০০ টাকার মত অতিরিক্ত দামে বিক্রি করেন। কালোবাজারি টিকিট বিক্রেতার মাধ্যমে বিক্রির ক্ষেত্রে ১০০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা অতিরিক্ত অর্থ আদায় করা হয়। তিনি দাবি করেছেন রেলওয়েতে বিভিন্ন ‘ভিআইপিদের টিকিট’ এর ‘আবদার মেটানো’র কারণে তিনি নির্বিঘ্নে এই কাজ করে আসছিলেন। 

অভিযুক্ত রেজাউল করিম নিজস্ব পরিচিত লোকজন এবং সংশ্লিষ্ট পরিচিতজনদের মাধ্যমে অবৈধ উপায়ে টিকিট প্রত্যাশীদের একটি বড় ক্রেতা শ্রেণি গড়ে তুলেছেন জানিয়ে র‍্যাবের এই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘তাঁর নিজস্ব বেশ কিছু কালোবাজারি টিকিট বিক্রেতা আছে। রেলওয়ে ই-টিকেটিং সিস্টেম ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার সুবিধা নিয়ে তিনি ই-টিকেটিং সার্ভার থেকে অবৈধ উপায়ে টিকিট বুক ও কিনে রাখতেন। তিনি খুব ভালো প্রযুক্তিজ্ঞান সম্পন্ন ব্যক্তি হওয়ায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর নজরদারি ফাঁকি দিতে বিভিন্ন মোবাইল অ্যাপ ব্যবহার করে টিকিট সংক্রান্ত যোগাযোগ করে আসছিলেন। একই সঙ্গে ব্যাংক বা মোবাইল ফাইন্যান্স সার্ভিস এর বদলে তিনি মূলত নগদ অর্থের মাধ্যমে লেনদেন করতেন।’ 

অভিযুক্তদের বিষয়ে আইনগত কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানিয়েছেন র‍্যাবের এই কর্মকর্তা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বাংলাদেশের জন্য পাল্টা শুল্ক কমিয়ে ২০ শতাংশ করল যুক্তরাষ্ট্র

সোশ্যাল মিডিয়ায় বিবাদে জড়ালেন বাঁধন ও সাবা

সাবেক কেরানির ২৪টি আলিশান বাড়ি ও ৩০ হাজার কোটির সম্পদ

আরও বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র

অবরোধকারীদের ‘ভুয়া’ আখ্যা দিয়ে ‘প্রকৃত জুলাই যোদ্ধাদের’ হামলা, পুলিশের লাঠিপেটায় শাহবাগ ফাঁকা

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত