Ajker Patrika

‘এক বেলার ভাত জুটাইতেও দেনা করতে হয়’

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
Thumbnail image

‘প্যাটিস নিবেন! হট প্যাটিস! ছোটডা পাঁচ টাকা, বড়োডা দশ।’ কাঠফাটা রোদে ফুলার রোডে এভাবেই ক্রেতা আকৃষ্ট করার চেষ্টা করছিলেন হাসমত আলী। রাস্তায় কিছু লোক থাকলেও হট প্যাটিস নিতে আসছেন না কেউই। তাই ক্লান্ত শরীরে বিষণ্ণ মুখে ফুটপাতে বসে পড়েন।

ফুটপাতে বসেই কথা হয় পঞ্চাশোর্ধ্ব হাসমত আলীর সঙ্গে। তিনি এই পেশায় জড়িত প্রায় পনেরো বছর। যা রোজগার হয়, তা দিয়েই চলত তাঁর চার সদস্যের সংসার। এর আগে করতেন দিনমজুরি। কিন্তু অসুস্থতার কারণে পেশা পরিবর্তন করেছেন। তাঁর কাজের পরিসর মূলত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও আশপাশের এলাকা।

দিন কেমন যায়, জিজ্ঞেস করতেই মুখে মলিন হাসি নিয়ে বলেন, ‘খাইয়া না-খাইয়া দিন যাইতেসে। সকাল থাইকা চার ঘণ্টায় বেচা হইসে মাত্র পঞ্চাশ টাকার। কেমনে আয় হইবো। প্যাটিসের মূল কাস্টমার হইলো স্কুল-কলেজের পোলাপাইন। প্রায় দুই বছর ধইরা তো সেইগুলান বন্ধ। মানুষ যা-ও খাইত; কিন্তু করোনা শুরু হওয়ার থাইক্যা তা-ও নিবার চায় না। আমার অন্য কোনো ইনকাম নাই। জমানো যা টাকা আসিলো, সব ফুরাই গেছে। তাই দুই দিন ধইরা বাইর হইসি। এত দিন পুলিশের জরিমানার ডরে বাইর হই নাই।’

একই অবস্থা তিরিশ বছর ধরে আচার বিক্রেতা খায়রুল আলমের। তিনি নিজেই আচার তৈরি ও বিক্রি করেন। মাথায় আচারের ডালা নিয়ে পথে পথে ঘোরেন। স্বাভাবিক সময়ে ক্রেতার অভাব হয় না। কিন্তু মহামারিতে ভাটা পড়েছে তাঁর ব্যবসায়। করোনায় আক্রান্তের ভয়ে কিনতে চায় না অনেকেই। তারপর আবার লকডাউন।

খায়রুল বলেন, ‘কামরাঙ্গীরচরে বাসা লইয়া থাকি। ভাড়া জমছে চার মাসের। মালিকে আইয়া তাগাদা দেয়। কই থাইকা দিমু। পোলাপানের এক বেলার ভাত জুটাইতেও দেনা করতে হয়।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে বিষণ্ণ মুখে বসে থাকা আইসক্রিম বিক্রেতা মুজাহিদ ইসলাম জানান, মহামারি আসার পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় তাঁর বিক্রি নাই বললেই চলে। আয় না থাকায় গত দুই ঈদে বাড়িও যাওয়া হয়নি তাঁর। আশায় আছেন, দ্রুত পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে। বিশ্ববিদ্যালয়সহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলবে। আয় বাড়বে তাঁর, পুষিয়ে নেবেন বিগত দিনের আর্থিক ক্ষতি।

২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চীনের উহানে প্রথম নতুন করোনাভাইরাস সংক্রমণ দেখা দেয়। কয়েক মাসের মধ্যে এই ভাইরাস বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। বাংলাদেশে প্রথম করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয় গত বছরের ৮ মার্চ। এরপর বিভিন্ন সময়ে সংক্রমণ কমবেশি হলেও দুই মাসের বেশি সময় ধরে দেশে করোনা পরিস্থিতি উদ্বেগজনক অবস্থায় পৌঁছেছে।

করোনার ডেলটা ধরনের দাপটে দৈনিক সংক্রমণ ও মৃত্যু কয়েক গুণ বেড়েছে। গত জুলাই মাসে দেশে করোনায় মৃত্যু হয়েছে ৬ হাজার ১৮২ জনের। প্রায় দেড় বছর ধরে চলা এই মহামারিতে এর আগে কোনো মাসে এত মৃত্যু দেখেনি বাংলাদেশ। এর আগে বেশি মৃত্যু হয়েছিল গত এপ্রিলে ২ হাজার ৪০৪ জনের।

সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আনতে গত মাসের প্রথম দুই সপ্তাহ দেশে সর্বাত্মক বিধিনিষেধ পালন করা হয়। এ সময় সব ধরনের অফিসের পাশাপাশি গণপরিবহন চলাচলও বন্ধ রাখা হয়। কিন্তু ২১ জুলাই ঈদুল আজহা উপলক্ষে এই বিধিনিষেধ আট দিনের জন্য শিথিল করা হয়। ঈদের পর ২৩ জুলাই থেকে আবার দুই সপ্তাহের সর্বাত্মক বিধিনিষেধ চলছে। ৫ আগস্ট এই বিধিনিষেধ শেষ হওয়ার কথা ছিল। তবে ৫ দিন বাড়িয়ে তা ১০ আগস্ট পর্যন্ত চালিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।

শুধু বাংলাদেশই নয়, সারা বিশ্বেই এখন করোনার ডেলটা ধরনের দাপট চলছে। এরই মধ্যে বিশ্বের ১৩৫টি দেশ ও অঞ্চলে করোনার অতি সংক্রামক এই ধরন ছড়িয়েছে। এর ফলে দেশে সংক্রমণ ও মৃত্যু বেড়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত