Ajker Patrika

চীনে গিয়ে প্রতারণায় জড়াচ্ছেন অনেক বাংলাদেশি শিক্ষার্থী, দেশে ফিরেও সক্রিয়

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
চীনে গিয়ে প্রতারণায় জড়াচ্ছেন অনেক বাংলাদেশি শিক্ষার্থী, দেশে ফিরেও সক্রিয়

প্রতিবছরই উচ্চশিক্ষা নিতে বাংলাদেশ থেকে চীনে পাড়ি জমান অসংখ্য শিক্ষার্থী। সেখানে যাওয়ার পর অনেকেই বিভিন্ন চীনা প্রতারক চক্রের সঙ্গে সখ্য গড়ে তোলেন। পরে দেশে ফিরে এসে শুরু করেন প্রতারণা। এমনই একটি চক্রের ৩ বাংলাদেশি সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিএমপি)। 

গ্রেপ্তাররা হলেন—রাকিবুল ইসলাম রাতুল, আসাদুজ্জামান রাজু ও মামুন হাওলাদার। ডিএমপির কলাবাগান থানায় এক ভুক্তভোগী করা মামলায় ঢাকা বিমানবন্দর এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় তাঁদের কাছ থেকে ৩০টি ভারতীয় সিমকার্ড জব্দ করা হয়। 

ডিবি সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম (দক্ষিণ) বিভাগের ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন টিমের এডিসি সাইফুর রহমান আজাদের নেতৃত্বে একটি দল এই গ্রেপ্তার অভিযান পরিচালিত হয়। 

আজ শনিবার দুপুরে রাজধানীর মিন্টু রোডে নিজ কার্যালয়ে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) হারুন অর রশীদ সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান। 

তাঁদের গ্রেপ্তার ও জিজ্ঞাসাবাদের বরাতে ডিবি বলছে, বাংলাদেশে ১০-১২ হাজার চাইনিজ নাগরিক অবস্থান করছেন। তাঁদের অনেকে অবৈধভাবে বসবাস করছেন। দেশজুড়ে অবস্থান করা এই চাইনিজরা পেতেছেন বিভিন্ন প্রতারণার ফাঁদ। বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা চীনে পড়তে গিয়ে হয়ে যাচ্ছে এই প্রতারক চক্রের মূল অস্ত্র। তাঁরা বিভিন্ন অ্যাপস খুলে জুয়ার সাইট চালিয়ে এবং অনলাইনে মাল্টিলেভেল মার্কেটিংয়ের লোভে ফেলে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। 

ডিবি কর্মকর্তারা বলছেন, এর আগে আমাজন ডটকম, দারাজ ডটকম ডটবিডি, ফ্লিপকার্ট ডটকম, পিটাবো ডটকমের মতো মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানির নামে ভুয়া সাইট খুলে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া চক্রের দুই চাইনিজ নাগরিকসহ ১২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। সেটির তদন্ত করতে গিয়ে নতুন করে এই চক্রের সন্ধান মেলে। গ্রেপ্তার তিনজন জানিয়েছেন, অনলাইনে মাল্টি লেভেল মার্কেটিংয়ের ফাঁদ ফেলে, অ্যাপ খুলে জুয়ার সাইট চালিয়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া চক্রে জড়িয়েছিলেন তাঁরা। 

ডিবির হারুন অর রশীদ বলেন, বাংলাদেশ থেকে অনেক শিক্ষার্থী পড়াশোনার জন্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যায়। তার মধ্যে অন্যতম বৃহৎ অংশ চীনে মেডিকেল এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার জন্য যায়। তাঁদের মধ্যে একটা বড় অংশ চাইনিজ ভাষায় পারদর্শী হয়ে ওঠে এবং চাইনিজ বিভিন্ন প্রতারক চক্রের সঙ্গে সখ্য গড়ে তোলে। বাংলাদেশের সাধারণ মানুষকে প্রতারিত করার জন্য নিজেরাই চাইনিজদের সঙ্গে সংঘবদ্ধভাবে জড়িয়ে পড়ে। এ চক্রের মূল হোতা হচ্ছে চাইনিজরা। 

হারুন অর রশীদ আরও বলেন, বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় চাইনিজ প্রতারণার ফাঁদ রয়েছে। তাঁরা তো ভালো বাংলা বা ইংরেজি বলতে পারেন না। তখন তাঁরা চীনে পড়তে চাওয়া বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের টার্গেট করে। চাইনিজ ভাষায় পারদর্শী বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের দিয়ে বিভিন্ন প্রতারণার কাজটি করছে। অনলাইনে মাল্টি লেভেল মার্কেটিংয়ের লোভে ফেলে, অ্যাপ ও জুয়ার সাইট খুলে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে চাইনিজরা। কারণ প্রত্যেকটি প্রতারণার সাইটের অ্যাডমিনরা চীনে। 

ডিবি প্রধান বলেন, চাইনিজরা চীনেও এসব প্রতারণায় বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের কাজে লাগায়। আবার সখ্য গড়ে তুলে কিছু শিক্ষার্থীকে প্রতারণার কৌশল শিখিয়ে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেয়। কিছু বাংলাদেশি বেনামি সিম তাঁরা নেয়। সেসব দিয়ে বিকাশ নগদসহ ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলে নেয়। এসবের মূল পরিকল্পনাকারী হচ্ছে দুই চাইনিজ গাগা ও চিং চং। তারা প্রতারণার জন্য চীনে একটা সার্ভার স্থাপন করেছে। সেখান থেকে চিং চং বিকাশ, নগদসহ ব্যাংক অ্যাকাউন্টে প্রতারণা করে। এরপর ক্রিপ্টো কারেন্সির মাধ্যমে টাকা তাঁদের দেশে নিয়ে যাচ্ছে। 

গ্রেপ্তার রাতুল, রাজু ও মামুন সম্পর্কে ডিবি প্রধান বলেন, গ্রেপ্তাররা বাংলাদেশ থেকে পড়ালেখার উদ্দেশ্যে চীনে গিয়ে চাইনিজ ভাষা শিখে প্রতারক চক্রের সঙ্গে সখ্য গড়ে তোলে এবং সবাই তথ্য প্রযুক্তি সম্পর্কে যথেষ্ট পারদর্শী হয়ে ওঠে। তাদের সম্পর্কের একপর্যায়ে চাইনিজরা তাদের বলে যে তাঁরা কিছু অ্যাপস তৈরি করেছে। অ্যাপস ব্যবহার করে অবৈধভাবে বিপুল পরিমাণ অর্থ উপার্জন করা সম্ভব। তাঁদের সেই কার্যক্রমে কিছু বাংলাদেশি সিম, বিকাশ/নগদ অ্যাকাউন্ট, ব্যাংক অ্যাকাউন্টের প্রয়োজন হয়। তাঁরা সবাই মূলত স্বল্প সময়ে অবৈধভাবে অধিক উপার্জনের আশায় এই প্রতারণার কাজে যুক্ত হয়ে চাইনিজদের বাংলাদেশি সিমকার্ড, বিকাশ/নগদ অ্যাকাউন্ট, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট সরবরাহ করে। প্রাথমিকভাবে বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে কিছু মানুষকে প্রতারিত করতে সক্ষম হয়। পরে তাঁরা এই কাজ অব্যাহত রাখে এবং স্বল্প সময়ে লাখ লাখ টাকা আয় করে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ইকসু নির্বাচনের আগে নতুন নেতৃত্ব পাচ্ছে ইবি ছাত্রদল

পল্লব আহমেদ সিয়াম(ইবি)
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়। ছবি: আজকের পত্রিকা
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়। ছবি: আজকের পত্রিকা

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ইকসু) নির্বাচনকে সামনে রেখে দ্রুতই শাখা ছাত্রদলের নতুন কমিটি দেওয়া হবে। এবারের কমিটিতে তরুণ শিক্ষার্থীদের প্রাধান্য দেওয়ার কথা জানায় কেন্দ্রীয় ছাত্রদল।

সূত্র জানায়, দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত ছাত্র সংসদ নির্বাচনে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের ভরাডুবির পর কেন্দ্রীয় নেতারা সারা দেশের ইউনিটগুলোর কার্যক্রম নতুন উদ্যমে শুরু করার উদ্যোগ নিয়েছেন। পরাজয়ের কারণ বিশ্লেষণ করে আগামী নির্বাচনগুলোয় জয় নিশ্চিত করতে নেতৃত্ব রদবদলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

জানা গেছে, বর্তমান আহ্বায়ক কমিটির মেয়াদ প্রায় সাড়ে চার বছর পেরিয়ে গেছে। ২০২১ সালের ১৬ জুন লোকপ্রশাসন বিভাগের ২০০৭-০৮ শিক্ষাবর্ষের সাহেদ আহম্মেদকে আহ্বায়ক ও ইংরেজি বিভাগের ২০১১-১২ শিক্ষাবর্ষের মাসুদ রুমী মিথুনকে সদস্যসচিব করে কমিটি অনুমোদন দেয় কেন্দ্রীয় ছাত্রদল।

তবে সিনিয়র নেতাদের হাতে নেতৃত্ব থাকায় দীর্ঘদিন ধরে সংগঠনের কার্যক্রমে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। আহ্বায়ক কমিটির অনেকেই চাকরিজীবী হওয়ায় নেতৃত্বের সংকটে আছে ছাত্রদল। ফলে নতুন করে সংগঠনের গতিশীলতা ফেরাতে তরুণ নেতৃত্বের প্রতি আস্থা রাখছে কেন্দ্র। ইতিমধ্যে কেন্দ্রীয় দপ্তরে ১০৫ জন পদপ্রত্যাশী সিভি জমা দিয়েছেন।

আলোচনায় থাকা তরুণ নেতাদের মধ্যে রয়েছেন বর্তমান আহ্বায়ক কমিটির সদস্য রাফিজ আহমেদ (ফিন্যান্স ২০১৮-১৯), নুর উদ্দিন (ফলিত রসায়ন ২০১৮-১৯), এবং কমিটির বাইরের সক্রিয় কর্মী আব্দুল্লাহ আল মামুন (আল ফিকহ অ্যান্ড ল ২০১৭-১৮), আবু সাইদ রনি (রাষ্ট্রবিজ্ঞান ২০১৭-১৮), রাকিব হাসান স্বাক্ষর (অ্যাকাউন্টিং ২০১৮-১৯), তরিকুল ইসলাম সৌরভ (মার্কেটিং ২০১৮-১৯), আরিফুল ইসলাম জনি (সমাজকল্যাণ ২০১৯-২০), রিফাত হোসাইন (ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট ২০১৯-২০), তৌহিদুল ইসলাম (অ্যাকাউন্টিং ২০১৯-২০) ও আলামিন হোসাইন (মার্কেটিং ২০১৯-২০)।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সহসভাপতি জহির রায়হান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আশা করছি, চলতি মাসের মধ্যেই ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের কমিটি ঘোষণা করতে পারব। আমরা তারুণ্যনির্ভর এবং ক্যাম্পাসের প্রকৃত সাধারণ শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিত্বকারীদের হাতে নেতৃত্ব দিতে চাই। আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররাজনীতিতে একটি গুণগত পরিবর্তন আনা। ছাত্রদল সব সময় সাধারণ শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ে কাজ করে। কোনোভাবেই বিতর্কিত বা অযোগ্য ব্যক্তিদের জায়গা থাকবে না নতুন কমিটিতে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

প্রবাসীর স্ত্রীকে বেঁধে মারধর, সালিসে তালাক নিয়ে আরেকজনের সঙ্গে বিয়ে

চৌদ্দগ্রাম (কুমিল্লা) প্রতিনিধি 
প্রবাসীর স্ত্রীকে মারধরের ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে। ছবি: স্ক্রিনশট
প্রবাসীর স্ত্রীকে মারধরের ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে। ছবি: স্ক্রিনশট

কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কের অভিযোগে প্রবাসীর স্ত্রীকে রশি দিয়ে বেঁধে লাঠি দিয়ে পিটিয়েছেন ইউপি সদস্য বজলুর রশিদ। এ ঘটনার ২ মিনিট ৫৪ সেকেন্ডের একটি ভিডিও ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। এ নিয়ে আলোচনা সমালোচনার ঝড় উঠেছে। বজলুর রশিদ উপজেলা ৪ নং শ্রীপুর ইউনিয়নের ৯ নং ওয়ার্ডের বর্তমান ইউপি সদস্য এবং শ্রীপুর ইউনিয়নের যুবলীগের সহসভাপতি।

গত ১৬ অক্টোবর রাতে উপজেলার শ্রীপুর ইউনিয়নের গোপালনগর গ্রামে এ ঘটনা ঘটলেও মঙ্গলবার (২১ অক্টোবর) রাত থেকে ভিডিওটি ভাইরাল হয়।

ভাইরাল ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, একজন নারীকে রশি দিয়ে দুই হাত বেঁধে লাঠিপেটা করছেন ৯ নং ওয়ার্ডের মেম্বার বজলুর রশিদ। ওই নারীর পাশে একজন পুরুষকে বেঁধে রাখা হয়েছে। পিটুনির চোটে ওই নারী চিৎকার করছেন।

নির্যাতনে শিকার গৃহবধূ গোপালনগর গ্রামের মালদ্বীপ প্রবাসীর স্ত্রী। মারধরের পর ওই নারীকে তাঁর প্রবাসী স্বামীর কাছ থেকে তালাক নিয়ে পার্শ্ববর্তী তারাপুষ্করুণী গ্রামের বিল্লাল মিয়ার সঙ্গে জোর করে বিয়ে দেওয়া হয়।

স্থানীয়রা জানায়, নির্যাতনে শিকার গৃহবধূর সঙ্গে বিল্লাল মিয়ার বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কের অভিযোগে ১৬ অক্টোবর রাতে দুজনকে আটক করে স্থানীয়রা। পরে ইউপি সদস্য বজলুর রহমান উপস্থিত হয়ে ওই নারীকে লাঠিপেটা করেন। পরদিন ১৭ অক্টোবর সকালে ইউপি সদস্য বজলুর রশিদ নেতৃত্বে সালিস বৈঠক হয়। সালিসের সিদ্ধান্ত মোতাবেক ওই নারীকে বিল্লাল মিয়ার সঙ্গে বিয়ে দেওয়া হয়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইউপি সদস্য বজলুর রশিদ বলেন, ‘ওই মহিলা আমার ভাতিজার স্ত্রী। পার্শ্ববর্তী তারাপুষ্করুণী গ্রামের যুবক বিল্লাল মিয়ার সঙ্গে তার অবৈধ সম্পর্ক অনেক দিন ধরে। গত ১৬ অক্টোবর বৃহস্পতিবার রাত ১টার দিকে স্থানীয় গ্রামবাসী তাদের অনৈতিক কাজে হাতেনাতে আটক করে আমাকে খবর দেয়। আমি সেখানে উপস্থিত হয়ে ওই নারীকে কয়েকটি আঘাত করি। পরদিন ১৭ অক্টোবর শুক্রবার স্থানীয় লোকজন সহ সালিস করে তাদের ৫ লাখ টাকা কাবিনে তাদের বিয়ে দেওয়া হয়।’

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বিল্লাল এর আগে বিবাহিত ছিলেন। তাঁর সংসারে স্ত্রী ও চারটি মেয়ে রয়েছে। নির্যাতনের শিকার প্রবাসীর স্ত্রীও দুই সন্তানের মা।

অভিযুক্ত বিল্লাল মিয়া একই ইউনিয়নের ৮ নং ওয়ার্ডের যুবদলের সভাপতি।

ঘটনা সম্পর্কে বিল্লাল মিয়া আজ বুধবার দুপুরে আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমি ক্যাবল টিভি ব্যবসায়ী। ক্যাবলে সমস্যার কারণে ওই নারী টেলিভিশন দেখতে সমস্যা হচ্ছে বলে আমাকে খবর দিলে আমি তার ঘরে যাই। পরে কিছু লোকজন আমাদের দুজনকে অনৈতিক সম্পর্কের অভিযোগে আটক করে ইউপি সদস্য বজলুর রশিদকে খবর দেয়। তিনি এসে আমাদের ব্যাপক মারধর করেন এবং পরের দিন জোরপূর্বক দুজনকে বিয়ে করিয়ে দেয়।’

চৌদ্দগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হিলাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘ইউপি সদস্য কর্তৃক প্রবাসীর স্ত্রীকে নির্যাতনের একটি ভিডিও আমাদের নজরে এসেছে। এরই মধ্যে ভুক্তভোগী দুই পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। আমরা ভুক্তভোগী পরিবারকে আইনি সব ধরনের সহযোগিতা দেব। অভিযুক্ত ইউপি সদস্য বজলুর রশিদকে আটকের চেষ্টা চলছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

নির্ধারিত দামে মিলছে না সার, বিপাকে কৃষক

আজিনুর রহমান আজিম, পাটগ্রাম (লালমনিরহাট) 
নির্ধারিত দামে মিলছে না সার, বিপাকে কৃষক

লালমনিরহাটের পাটগ্রামে সারের সংকটের অজুহাতে বাজারে দাম বেড়েছে কয়েক গুণ। কোথাও সরকার নির্ধারিত দামে সার পাওয়া যাচ্ছে না। বাধ্য হয়ে অতিরিক্ত দামে কিনতে হচ্ছে কৃষকদের। এতে ক্ষোভ ও হতাশায় পড়েছেন উপজেলার হাজারো কৃষক। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, ডিলার ও পরিবহন সিন্ডিকেট মজুত করে সারের বিক্রয় নিয়ন্ত্রণ করছে। অথচ সারের কৃত্রিম সংকট ও মূল্যবৃদ্ধি রোধে কৃষি অধিদপ্তর থেকে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না

জানা গেছে, রবি মৌসুমের শুরুতে ইউরিয়া, টিএসপি, ডিএপি, এমওপি সারসহ বিভিন্ন কৃষি উপকরণের দাম অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে প্রতি ৫০ কেজির বস্তায় ২০০ থেকে ৭০০ টাকা পর্যন্ত বেশি দরে সার কিনতে হচ্ছে। এতে চাষাবাদ নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন কৃষকেরা।

উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের কৃষকেরা বলেন, ইউরিয়া, ট্রিপল সুপার ফসফেট (টিএসপি), ডাই-অ্যামোনিয়াম ফসফেট (ডিএপি), মিউরেট অব পটাশ (এমওপি)—সব ধরনের সার বেশি টাকা না দিলে পাওয়া যায় না। ডিলাররা বলেন, সার নেই। তাই বাধ্য হয়ে অতিরিক্ত দামে কিনতে হচ্ছে। কেউ কেউ আবাদ কমানোর কথাও ভাবছেন।

কৃষকেরা জানান, সরকার নির্ধারিত ৫০ কেজি টিএসপি সারের দাম ১ হাজার ৩৫০ টাকা হলেও বর্তমানে তা বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৯৬০ থেকে ২ হাজার ১০০ টাকায়। ডিএপি সারের দাম ১ হাজার ৫০ টাকা হলেও বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৪০০ টাকায়। ইউরিয়া সারের দাম ১ হাজার ৩৫০ টাকার জায়গায় ১ হাজার ৪৫০ টাকা, আর পটাশ সারের দাম ১ হাজার টাকার পরিবর্তে ১ হাজার ২৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

জানতে চাইলে জগতবেড় ইউনিয়নের পশ্চিম জগতবেড় গ্রামের কৃষক মফির উদ্দিন বলেন, ‘সারের বাজারে আগুন। আমি ১৯ বস্তা টিএসপি সার কিনেছি সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে ৬০০ টাকা বেশি দিয়ে। ইউরিয়াও ১০০ টাকা বেশি দিতে হয়েছে। এখন কীভাবে আবাদ করব?’ জোংড়া ইউনিয়নের ইসলামনগর এলাকার কৃষক আবু সাঈদ বলেন, ‘এক একর জমিতে ফুলকপি লাগিয়েছি। টিএসপি সার প্রতি বস্তায় ৬০০ টাকা বেশি দিয়ে কিনতে হচ্ছে। সামনে ভুট্টার আবাদে কী করব ভেবে পাচ্ছি না।’

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, উপজেলার ৮ ইউনিয়ন ও ১ পৌরসভায় চাষাবাদযোগ্য জমি রয়েছে ২৬ হাজার ১৫১ হেক্টর। এই অঞ্চলের প্রায় ৪১ হাজার ৫০০ পরিবার সরাসরি কৃষির সঙ্গে সম্পৃক্ত। রবি মৌসুমে (অক্টোবর-ডিসেম্বর) ইউরিয়া সারের চাহিদা ৬ হাজার ৫৫০ টন, বরাদ্দ এসেছে মাত্র ২ হাজার ৩৬৪ টন। টিএসপি, ডিএপি ও পটাশ সারের ক্ষেত্রেও একই অবস্থা—চাহিদার তুলনায় বরাদ্দ প্রায় অর্ধেক।

তবে সারের দোকানদারদের দাবি, চাহিদা অনুযায়ী বরাদ্দ না পাওয়ায় বাইরের জেলা থেকে বেশি দামে সার কিনে আনতে হচ্ছে। এ জন্য কৃষকদের কাছ থেকে বেশি দাম নেওয়া হয়। পাটগ্রাম বাজারের ডিলার হরিপদ দে বলেন, এখন কৃষকদের মধ্যে ভয় কাজ করছে, সার পাওয়া যাবে না—এই আশঙ্কায় সবাই একসঙ্গে সার কিনতে ছুটছেন। ফলে চাহিদা বেড়েছে। সরকার যে বরাদ্দ দিয়েছে, তা কৃষকের চাহিদার তুলনায় অনেক কম।

এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মোস্তফা হাসান ইমাম বলেন, উপজেলা প্রশাসনের সমন্বয়ে বাজার মনিটরিং চলছে। সরকার নির্ধারিত মূল্যে কৃষক যেন সার পান, সে ব্যাপারে কাজ করছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। কেউ সারের কৃত্রিম সংকট বা কালোবাজারি করলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

কৃষি কর্মকর্তা আরও বলেন, সারের ঘাটতি ধীরে ধীরে পূরণ করা হচ্ছে। তবে যদি কেউ বেশি দামে বিক্রি করে, কৃষকেরা লিখিত বা মৌখিক অভিযোগ দিলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ব্রাহ্মণপাড়ায় রাতভর যৌথ বাহিনীর অভিযান, মাদক ধ্বংস

ব্রাহ্মণপাড়া (কুমিল্লা) প্রতিনিধি 
কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়ায় মাদক ও চোরাচালানবিরোধী বিশেষ অভিযান চালায় উপজেলা প্রশাসনের নেতৃত্বে গঠিত টাস্কফোর্স। ছবি: আজকের পত্রিকা
কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়ায় মাদক ও চোরাচালানবিরোধী বিশেষ অভিযান চালায় উপজেলা প্রশাসনের নেতৃত্বে গঠিত টাস্কফোর্স। ছবি: আজকের পত্রিকা

কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়ায় মাদক ও চোরাচালানবিরোধী বিশেষ অভিযানে বিপুল পরিমাণ মদের খালি বোতল ও গাঁজা ধ্বংস করেছে উপজেলা প্রশাসনের নেতৃত্বে গঠিত টাস্কফোর্স। গতকাল মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১১টা থেকে বুধবার ভোর পর্যন্ত উপজেলার শশীদল ইউনিয়নের বাগড়া, তেতাভূমি ও ব্রাহ্মণপাড়া সদর ইউনিয়নের পূর্বপাড়া এলাকায় টানা কয়েক ঘণ্টা এই অভিযান পরিচালিত হয়।

অভিযানে নেতৃত্ব দেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাহমুদা জাহান। এতে সেনাবাহিনী, থানা-পুলিশ ও আনসার বাহিনীর সদস্যরা অংশ নেন। পুলিশের নেতৃত্বে ছিলেন ব্রাহ্মণপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাজেদুল ইসলাম এবং সেনাবাহিনীর (১২ বীর) দলের নেতৃত্বে ছিলেন লেফটেন্যান্ট মো. এহসান সিরাজী সাদ।

প্রশাসন ও যৌথ বাহিনীর উপস্থিতি টের পেয়ে অনেক মাদক কারবারি ও চোরাকারবারি পালিয়ে যায়। তবে তেতাভূমি এলাকায় ভারতে পাচারের উদ্দেশ্যে সংরক্ষিত কয়েক হাজার বিভিন্ন ব্র্যান্ডের মদের খালি বোতল ধ্বংস করা হয়। পরে ব্রাহ্মণপাড়া সদর ইউনিয়নের পূর্বপাড়া এলাকায় অভিযান চালিয়ে উদ্ধার করা কয়েকটি গাঁজার পুরিয়াও ধ্বংস করা হয়। এ সময় সীমান্ত এলাকা থেকে আসা বিভিন্ন যানবাহনে তল্লাশি চালানো হয়।

অভিযান শেষে ইউএনও মাহমুদা জাহান বলেন, মাদক, চোরাচালান ও অপরাধ দমনে টাস্কফোর্সের অভিযান নিয়মিত চলবে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে প্রশাসনের কার্যক্রম আরও জোরদার করা হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত