Ajker Patrika

‘রাস্তায় পাগল দেখলে কাছে গিয়ে দেখি তাঁরা আমাদের বাবা-ভাই কি না’

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ১৪ অক্টোবর ২০২৪, ২২: ৫২
Thumbnail image

রাজধানীর তেজগাঁও কলেজে অনার্স শেষ বর্ষের ছাত্র ছিলেন বকুল খান। ২০১৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর সদরঘাট থেকে সিলভার রঙের একটি গাড়িতে করে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় তাঁকে। সেই গাড়িতে থাকা পাঁচ–ছয়জনের মধ্যে দুজনের পরনে ছিল র‍্যাবের পোশাক। বাকিরা সাদাপোশাকে ছিলেন। এরপর পেরিয়ে গেছে ১১ বছর। আজও একমাত্র ভাইকে খুঁজে ফেরেন আজমল খান। 

আজ সোমবার (১৪ অক্টোবর) রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান আজমল খান। গুম হওয়া ৫০ জনের বেশি মানুষের স্বজনেরা প্রিয়জনের সন্ধান চাইতে এসেছিলেন এই সংবাদ সম্মেলনে। বাংলাদেশ গুম পরিবার ও স্বজনহারা সমন্বয় কমিটির ব্যানারে এই সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করা হয়। 
 
সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ গুম পরিবারের প্রধান সমন্বয়ক বেল্লাল হোসেন বলেন, ‘কেউ ২ বছর, কেউ ৫ বছর, কেউ ১০–১২ বছর ধরে আমরা স্বজনদের খুঁজছি। রাস্তায় পাগল দেখলে গাড়ি ঘুরিয়ে কাছে গিয়ে দেখি তাঁরা আমাদের বাবা-ভাই কি না। দেশে একটা না, ৭০–৮০টা আয়নাঘর আছে।’ 

ছেলের সন্ধান চাইতে আসা রহিমা বেগম বলেন, ‘২০১৫ সালে আমার ব্যবসায়ী ছেলেকে সাদা রঙের গাড়িতে তুলে নিয়ে গেছে। আমরা গাড়ির নম্বরও রেখে দিছি। তাঁর সন্ধানে মিন্টু রোডে গেছি (ডিবি কার্যালয়ে)। এখন পর্যন্ত কত জায়গায় গেছি তার হিসাব নাই। আমি আজকে নয় বছর সন্তানহারা। আমি কি আমার সন্তানের মুখ আর দেখতে পারব না? আমি সরকারের কাছে আবেদন জানাই, দ্রুত তাদের আমাদের কাছে ফিরিয়ে দেন। আমরা আর কত কাঁদব? কাঁদতে কাঁদতে আমাদের জীবন শেষ।’ 

সংবাদ সম্মেলনের ব্যানারে প্রধান অতিথি হিসেবে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, বিশেষ অতিথি হিসেবে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, গণঅধিকার পরিষদের নুরুল হক নুর, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনিরের নাম থাকলেও তাঁরা ছিলেন অনুপস্থিত। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন গুম হওয়া ব্যক্তিদের স্বজনেরা। পরবর্তীকালে সেই ব্যানার নামিয়ে অন্য ব্যানারে সংবাদ সম্মেলনে অংশ নেন তাঁরা। 

বেল্লাল হোসেন জানান, অতিথিরা অন্য মিটিংয়ে আটকে পড়ায় আসতে পারেননি। আজ সকালে তাঁরা এটা জানিয়েছেন। 

গুম হওয়া বকুল খানের ভাই আজমল খান বলেন, ‘গুম হওয়া এতগুলো মানুষের পরিবার এখানে আছে। এখানে থাকার চেয়ে নেতাদের গুরুত্বপূর্ণ আর কী কাজ থাকতে পারে, আমাদের বুঝে আসে না।’ 

গুমের শিকার বাবার সন্ধানে আসা মেয়ে সুরাইয়া আক্তার বলেন, ‘আমার বাবার নাম মো. মোস্তফা। তিনি দোকানদার ছিলেন। মিরপুরের ভাষানটেক এলাকা থেকে ২০২০ সালের ৬ জুন তাঁকে তুলে নেওয়া হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পরিচয়ে হায়েস গাড়িতে তুলে নেওয়া হয়। পরে আমরা জিডি এবং মামলা করেছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো লাভ হয়নি। পরিবারের সবাই দিশেহারা। আমার মা কাঁদতে কাঁদতে দিশেহারা। আমি আমার বাবার সন্ধান চাই।’

সংবাদ সম্মেলনে ৮ দফা দাবি তুলে ধরা হয়। এর মধ্যে রয়েছে—৪৮ ঘণ্টার মধ্যে গুম ও নিখোঁজ ব্যক্তিদের ফেরত দেওয়া, প্রতিটি সেল (আয়নাঘর) বর্তমান গুম কমিশনের দায়িত্বশীলদের দেখতে দেওয়া, যাঁদের খুন করা হয়েছে তাঁদের পরিবারকে সনদ দেওয়া, প্রতিটি নিখোঁজ পরিবারকে আর্থিক ক্ষতিপূরণ দেওয়া, গুম-খুনে জড়িত সবাইকে আইনের আওতায় আনা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত