Ajker Patrika

ফেনীর নুসরাত হত্যা: ‘রাজনৈতিক হয়রানিমূলক’ বিবেচনায় মামলা প্রত্যাহার চান দণ্ডপ্রাপ্ত ওসি মোয়াজ্জেম

অনলাইন ডেস্ক
সোনাগাজীর সাবেক ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন। ছবি: সংগৃহীত
সোনাগাজীর সাবেক ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন। ছবি: সংগৃহীত

ফেনীর মাদ্রাসা শিক্ষার্থী নুসরাত জাহান রাফির গায়ের আগুন দিয়ে হত্যার মামলার ফেনীর সোনাগাজী মডেল থানার সাবেক ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনকে আট বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়ছিল। থানায় নুসরাতের বক্তব্যের ভিডিও ধারণ করে ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেওয়ার দায়ে তাঁর সাজা দেন আদালত। ২০১৯ সালের ২৮ নভেম্বর দেওয়া রায়ে তাঁকে ১০ লাখ টাকা জরিমানাও করা হয়েছিল। সেই মামলা প্রত্যাহারের আবেদন করেছেন মোয়াজ্জেম হোসেন।

সম্প্রতি ঢাকা জেলা প্রশাসক বরাবর এই আবেদনটি করেন তিনি। মোয়াজ্জেম ওই মামলায় হাইকোর্ট থেকে জামিনে আছেন। মামলাটি ‘রাজনৈতিক হয়রানিমূলক’ বলে দাবি করে প্রত্যাহারের আবেদন করেছেন তিনি।

রায়ে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২৬ ধারায় (অনুমতি ছাড়া ভিডিও ধারণ) মোয়াজ্জেম হোসেনকে পাঁচ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড এবং ২৯ ধারায় (ওই ভিডিও প্রচার) তিন বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

কারাদণ্ডের পাশাপাশি মোয়াজ্জেমকে প্রত্যেক ধারায় ৫ লাখ করে মোট ১০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। এই অর্থ পাবে নুসরাতের পরিবার। আর জরিমানা দিতে ব্যর্থ হলে আসামি মোয়াজ্জেমকে আরও ছয় মাসের কারাদণ্ড ভোগ করতে হবে। রায় প্রদানকালে ওসি মোয়াজ্জেম কারাগারে ছিলেন (পরে হাইকোর্ট থেকে তিনি জামিন পান)।

রায়ের পর্যবেক্ষণে বলা হয়, নুসরাত রাফি সোনাগাজী থানায় গিয়েছিল মাদ্রাসা অধ্যক্ষ দ্বারা যৌন হয়রানির আইনি প্রতিকার চাইতে। কিন্তু ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন প্রতিকারের বদলে আবারও একই ধরনের হয়রানি করেছেন বলে প্রমাণিত হয়েছে।

রায়ে বলা হয়, মোয়াজ্জেম হোসেন ছিলেন সোনাগাজী থানার দায়িত্বশীল কর্মকর্তা। অন্যদিকে নুসরাত রাফি একজন তরুণী। যৌন হয়রানির বিচার চাইতে গেলে তাকে বিভিন্নভাবে হয়রানি করা হয়। সাক্ষীরা বিশেষ করে নুসরাতের দুই বান্ধবী সাক্ষ্য দিতে এসে বলেছে, নুসরাতের মুখ থেকে বারবার হিজাব সরিয়ে দিয়েছেন ওসি। তাকে বিভিন্ন ধরনের বিব্রতকর প্রশ্ন করা হয়েছে। এসব আবার ভিডিও করা হয়েছে। মামলার সাক্ষ্য–প্রমাণ ও অভিযুক্ত ওসির বক্তব্যে ভিডিও করার বিষয়টি প্রমাণিত।

মামলা দায়ের ও বিচারিক ঘটনাক্রম

ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনের বিরুদ্ধে সাইবার ক্রাইম ট্রাইব্যুনালে ২০১৯ সালের ১৫ এপ্রিল মামলাটি করেন ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন (বর্তমানে কারাগারে)। ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক মামলাটি তদন্তের জন্য পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) নির্দেশ দেন।

তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআইয়ের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার রীমা সুলতানা ওই বছরের ২৭ মে ওসি মোয়াজ্জেমের বিরুদ্ধে প্রতিবেদন জমা দেন। তাতে বলা হয়, ওসি মোয়াজ্জেমের বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে। নুসরাত রাফিকে যৌন নিপীড়নের ঘটনার পর তাকে থানায় জেরা করার দৃশ্য নিজের মোবাইল ফোনে ধারণ করে তা প্রচার করেন ওসি মোয়াজ্জেম। ভিডিও ধারণ ও প্রচার করে আসামি দায়িত্বজ্ঞানহীনতার পরিচয় দিয়েছেন। তদন্ত প্রতিবেদন গ্রহণ করে ওই দিনই ওসি মোয়াজ্জেমের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন ট্রাইব্যুনাল।

এরপর ২০১৯ সালের ১৬ জুন দুপুরে রাজধানীর শাহবাগ এলাকা থেকে ওসি মোয়াজ্জেমকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরদিন ১৭ জুন তাঁর জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন সাইবার ট্রাইব্যুনাল। সেই থেকে রায় পর্যন্ত তিনি কারাগারে ছিলেন।

নুসরাতের সাক্ষাৎকার ভিডিওতে ছড়িয়ে দেওয়ার ঘটনা ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি করে তখন।

যেসব কারণে মামলা প্রত্যাহার চান ওসি

ওসি মোয়াজ্জেম পুলিশের দায়িত্বশীল পদে থেকে যে অপরাধ করেছিলেন তার বিচার হলেও মামলা প্রত্যাহারের আবেদনে এটিকে তিনি ‘রাজনৈতিক হয়রানিমূলক’ বলে উল্লেখ করেছেন। আবেদনে আরও বলা হয়েছে, পিবিআইয়ের অভিযোগপত্র দাখিল, তাঁর বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগ গঠন এবং সাজা প্রদান আইন অনুসরণ করে হয়নি। ঘটনাস্থলের সাক্ষীদের পরীক্ষা না করে শুধু (নুসরাতের) ভাবির জবানবন্দি একতরফাভাবে নিয়েছে পিবিআই। এ ছাড়া আইন অনুযায়ী মামলার বাদী ব্যারিস্টার সুমন এই মামলা করতে পারেন না। কারণ এই ঘটনায় তিনি সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি নন।

পিপির বক্তব্য

এ প্রসঙ্গে ঢাকা মহানগর পিপি ওমর ফারুক ফারুকী বলেন, তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার বিরোধী দলের জন্য যেসব মামলা করেছিল সেগুলো রাজনৈতিক বিবেচনায় প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। অনেক মামলায় রাজনৈতিক বিবেচনায় প্রত্যাহারের আবেদন করা হচ্ছে। ওসি মোয়াজ্জেমও এ রকম আবেদন করেছেন। পিপির মতামতের জন্য আবেদনটি তাঁর কার্যালয়ে আছে। তবে রাজনৈতিক হয়রানি মূলক কিনা তা এখনো যাচাই করা হয়নি।

উল্লেখ্য, ফেনীর সোনাগাজীতে আলোচিত নুসরাত হত্যা মামলায় ১৬ জন আসামির সবাইকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত। ২০১৯ সালের ২৪ অক্টোবর এ রায় ঘোষণা করা হয়। তবে কোনো আসামির দণ্ড কার্যকর করা হয়নি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত