Ajker Patrika

জাকসু নির্বাচন: ছাত্রদল ও শিবির-সমর্থিত প্যানেলের ইশতেহার ঘোষণা

জাবি প্রতিনিধি 
আপডেট : ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৯: ২০
জাকসু নির্বাচন: ছাত্রদল ও শিবির-সমর্থিত প্যানেলের ইশতেহার ঘোষণা

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জাকসু) নির্বাচনে ইশতেহার ঘোষণা করেছে দুটি প্যানেল। এর মধ্যে ছাত্রদল-সমর্থিত ‘সাদী-বৈশাখী-সাজ্জাদ-ইকরা’ পরিষদ গত শনিবার ৮ দফার ইশতেহার দিয়েছে। আর গতকাল রোববার ৯ দফার ইশতেহার দিয়েছে ইসলামী ছাত্রশিবির-সমর্থিত ‘সমন্বিত শিক্ষার্থী জোট’ প্যানেল।

আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন শিক্ষা ও গবেষণার পরিবেশ নিশ্চিতসহ আট দফা ইশতেহার ঘোষণা করেছে ছাত্রদল-সমর্থিত ‘সাদী-বৈশাখী-সাজ্জাদ-ইকরা’ পরিষদ। শনিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন চত্বরসংলগ্ন ‘অদম্য-২৪’ স্মৃতিস্তম্ভের সামনে সংবাদ সম্মেলনে এই ইশতেহার ঘোষণা করা হয়।

ইশতেহার পাঠ করেন প্যানেলের সহসভাপতি (ভিপি) প্রার্থী মো. শেখ সাদী হাসান ও সাধারণ সম্পাদক (জিএস) প্রার্থী তানজিলা হোসাইন বৈশাখী। এ সময় উপস্থিত ছিলেন প্যানেলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক (পুরুষ) প্রার্থী মো. সাজ্জাদুল ইসলাম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক (নারী) প্রার্থী আনজুমান আরা ইকরাসহ অন্য প্রার্থীরা।

ইশতেহারের আট দফায় রয়েছে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন শিক্ষা ও গবেষণার পরিবেশ নিশ্চিত করা। শিক্ষাবান্ধব, নিরাপদ, মুক্ত ও বৈচিত্র্যময় ক্যাম্পাস তৈরি করা। পরিকল্পিত আবাসন ও খাবারের উন্নত মান নিশ্চিত করা। নারী শিক্ষার্থীদের জন্য নিরাপদ শিক্ষাঙ্গন ও স্বাস্থ্য সুরক্ষার ব্যবস্থা করা। মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা। সুসমন্বিত পরিবহন ব্যবস্থাপনা, ক্রীড়াচর্চা ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য এবং পরিবেশ-প্রতিবেশ সংরক্ষণ ও প্রাণীবান্ধব ক্যাম্পাস নিশ্চিত করা।

প্যানেলের সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী তানজিলা হোসাইন বৈশাখী বলেন, ‘জাহাঙ্গীরনগরের ৫০ শতাংশ শিক্ষার্থী নারী। এই নারীদের বাদ দিয়ে জাহাঙ্গীরনগর এগিয়ে যেতে পারবে না। আমরা দেখেছি, ক্যাম্পাসের বেশির ভাগ সমস্যাই নারীদের। সেই হিসেবে আমরা ইশতেহারে নারী শিক্ষার্থীদের প্রাধান্য দিয়েছি।’

সমন্বিত শিক্ষার্থী জোটের ইশতেহারে ‘ফাইভ ইয়েস’ ও ‘ফাইভ নো’

‘স্বচ্ছতা ও দক্ষতায়, ন্যায্যতায় নিশ্চয়তায়’ স্লোগানকে সামনে রেখে ৯ দফা ইশতেহার ঘোষণা করেছে ইসলামী ছাত্রশিবির-সমর্থিত ‘সমন্বিত শিক্ষার্থী জোট’ প্যানেল। গতকাল বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলা এলাকায় সংবাদ সম্মেলনে এই ইশতেহার ঘোষণা করা হয়।

ইশতেহার পাঠ করেন প্যানেলের সহসভাপতি (ভিপি) প্রার্থী আরিফ উল্লাহ। এ সময় উপস্থিত ছিলেন সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদপ্রার্থী মো. মাজহারুল ইসলাম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক (পুরুষ) প্রার্থী ফেরদৌস আল হাসান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক (নারী) প্রার্থী আয়েশা সিদ্দিকা মেঘলাসহ অন্য প্রার্থীরা।

ইশতেহারে প্যানেলটি ‘ফাইভ ইয়েস’ ও ‘ফাইভ নো’কে অগ্রাধিকার দিয়েছে। ‘ফাইভ ইয়েস’-এর মধ্যে ডাইনিংয়ে ভর্তুকি আদায়, অভ্যন্তরীণ পরিবহন সমস্যার সমাধান, অটোমেশন, পূর্ণাঙ্গ মেডিকেল, প্রাণ-প্রকৃতি রক্ষা—এ বিষয়গুলো রয়েছে। সেশনজট ও ক্লাস নিয়ে অবহেলা, নারীর প্রতি অসহিষ্ণুতা, মাদক ও চাঁদাবাজি, ‘লাঞ্চের পরে আসেন’ কালচার দূর করা, র‍্যাগিং ও সাইবার বুলিং ‘ফাইভ নো’-এর অন্তর্ভুক্ত।

ইশতেহারের বিষয়ে ভিপি প্রার্থী আরিফ উল্লাহ বলেন, ‘যতগুলো দফা আমরা দিয়েছি, সবগুলোই যাচাই-বাছাই করে দেওয়া। এগুলো আগামী এক বছরে বাস্তবায়ন করা সম্ভব।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা কাজ করব শিক্ষার্থীদের কণ্ঠস্বর হিসেবে। তাঁদের সমস্যা আমরা প্রশাসনকে জানাব এবং তারা এ সমস্যা নিরসন করবে।’

ভিপি প্রার্থী অমর্ত্য রায়ের প্রার্থিতা বাতিল

জাকসু নির্বাচনের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ভোটার ও প্রার্থী হওয়ার অযোগ্য বিবেচিত হওয়ায় ভোটার ও প্রার্থী তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে সম্প্রীতির ঐক্য প্যানেলের ভিপি প্রার্থী অমর্ত্য রায় জনকে। শনিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে নির্বাচন কমিশন এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এ তথ্য জানায়।

এ বিষয়ে জাকসুর প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক ড. মো. মনিরুজ্জামান আজকের পত্রিকা'কে বলেন, ‘আমাদের ভোটার তালিকাটা জাতীয় নির্বাচনের মতো নয়, যাদের ছাত্রত্ব শেষ হয়ে যাবে তারা ভোটার লিস্ট থেকে বাদ পড়বে। ১১ তারিখ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে, কিন্তু আমাদের কাছে তথ্য আছে ১০ তারিখেও অনেকের ছাত্রত্ব শেষ হয়ে যাবে। তারা তো ভোট দিতে পারবে না।’

তবে অমর্ত্য রায়ের প্রার্থিতা বাতিলের প্রতিবাদ জানিয়েছে ‘সম্প্রীতির ঐক্য’ প্যানেল। শনিবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় সংবাদ সম্মেলনে প্যানেলের সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী শরণ এহসান অভিযোগ করেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এ সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণ অবৈধ এবং নিয়মবহির্ভূত।’

ছাত্রদলকে বিশেষ সুবিধা দেওয়ার অভিযোগ

নির্বাচনে ছাত্রদল-সমর্থিত প্যানেলকে নির্বাচন কমিশন বিশেষ সুবিধা দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন ‘শিক্ষার্থী ঐক্য ফোরম’ প্যানেলের জিএস প্রার্থী তৌহিদ সিয়াম। গতকাল বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন চত্বরসংলগ্ন ‘অদম্য-২৪’ স্মৃতিস্তম্ভের সামনে সংবাদ সম্মেলনে এই অভিযোগ করেন তিনি।

তৌহিদ সিয়াম বলেন, ‘মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করতে হয় প্রার্থীকে সশরীরে হাজির হয়ে। কিন্তু ছাত্রদলের প্যানেলের প্রার্থীরা সশরীরে এসে মনোনয়ন প্রত্যাহার করেনি। এখানে ছাত্রদল একটা বিশেষ সুবিধা পাচ্ছে। জাতীয়তাবাদী ফোরামের শিক্ষকেরা ছাত্রদলের প্যানেলের জন্য প্রচার-প্রচারণা করছেন; কিন্তু নির্বাচন কমিশন সেখানেও কোনো বাধা দিচ্ছে না।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত