Ajker Patrika

সড়কে নিহত ৬ ভাইয়ের পরিবারকে দেখতে গেলেন ধর্মপ্রতিমন্ত্রী

চকরিয়া (কক্সবাজার) প্রতিনিধি
আপডেট : ০১ মার্চ ২০২২, ২৩: ০১
সড়কে নিহত ৬ ভাইয়ের পরিবারকে দেখতে গেলেন ধর্মপ্রতিমন্ত্রী

ধর্মপ্রতিমন্ত্রী মো. ফরিদুল হক খান বলেছেন, কক্সবাজারের চকরিয়ায় সড়ক দুর্ঘটনায় এক সঙ্গে ছয় ভাই নিহত হওয়ার ঘটনা অত্যন্ত হৃদয়বিদারক। সরকারের পক্ষ থেকে হাজার কোটি টাকা অনুদান দিলেও ছয় সন্তানকে ফিরিয়ে দেওয়া সম্ভব না। স্বজন হারানোর বেদনা কেমন, তা আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানেন এবং বোঝেন। তিনি এ ঘটনার পর থেকে প্রতি মুহূর্তে খবর নিয়েছেন।

কক্সবাজারের চকরিয়ার ডুলাহাজারার মালুমঘাট হাসিনাপাড়া গ্রামে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতদের পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ ও অনুদানের চেক হস্তান্তরের সময় ধর্মপ্রতিমন্ত্রী এসব কথা বলেন।

ধর্মপ্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘সরকার এরই মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের জন্য জমিসহ বাড়ির তৈরির ব্যবস্থার কাজ করছেন। দুর্ঘটনায় বেঁচে ফেরা মৃত সুরেশ চন্দ্র সুশীলের সন্তান প্লাবন সুশীল ও নিহত ছয় ভাইয়ের স্ত্রীদের যোগ্যতা অনুযায়ী চাকরির ব্যবস্থা করা হবে।’ 

এর আগে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী মো. ফরিদুল হক খান সকাল ১১টায় কক্সবাজার থেকে সড়কপথে উপজেলার ডুলাহাজারা ইউনিয়নের মালুমঘাটে হাসিনা পাড়ার প্রয়াত সুরেশ চন্দ্র সুশীলের বাড়িতে পৌঁছান। পিকআপ চাপায় নিহত ছয় ভাইয়ের মা, তাঁদের পরিবার ও স্বজনদের খোঁজখবর নেন ও সমবেদনা জানান। ধর্ম মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ৫০ হাজার করে ৯ পরিবারকে সাড়ে ৪ লাখ টাকার চেক হস্তান্তর করেন। এ সময় চকরিয়া-পেকুয়া আসনের সংসদ সদস্য জাফর আলমের স্ত্রী শাহেদা জাফর পরিবারের কাছে নগদ এক লাখ টাকা তুলে দেন।

ছয় সন্তান হারানো মা মৃণালিনী সুশীল মানু কান্নাজনিত কণ্ঠে প্রতিমন্ত্রীর কাছে প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘আমি কী এ হত্যাকাণ্ডের বিচার পাব? আমার কিছুই চাওয়ার নেই। আমি জীবিত থাকতে যেন আমার ছয় সন্তানের হত্যার বিচার নিজ চোখে দেখে যেতে পারি।’

মৃণালিনীর প্রশ্নের উত্তরে ধর্মপ্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘এরই মধ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পিকআপ ভ্যানে চালক ও মালিককে গ্রেপ্তার করেছে। গাড়িটিও জব্দ আছে। আশা করছি, এ ঘটনার সুষ্ঠু ও দৃষ্টান্তমূলক বিচার হবে।’ 

উল্লেখ্য, গত ৮ ফেব্রুয়ারি সাবেক স্বাস্থ্য পরিদর্শক সুরেশ চন্দ্র সুশীলের শ্রাদ্ধানুষ্ঠান শেষে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের চকরিয়ার ডুলাহাজারা ইউনিয়নের মালুমঘাটের নার্সারি গেট এলাকায় পিকআপ ভ্যান চাপায় নিহত হন ছয় ভাই অনুপম সুশীল, নিরুপম সুশীল, স্মরণ সুশীল, দিপক সুশীল, চম্পক সুশীল ও রক্তিম সুশীল। এতে গুরুতর আহত বোন হীরা সুশীল। তাঁর মধ্যে প্লাবন সুশীল সুস্থ হলেও মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েছে। বোন হীরা সুশীল এখনো মালুমঘাট মেমোরিয়াল খ্রিষ্টান হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

জোট নয়, নির্বাচনী সমঝোতা করবে জামায়াত—জানালেন আমির

নিজস্ব প্রতিবেদক, সিলেট  
আজ সকালে সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান। ছবি: আজকের পত্রিকা
আজ সকালে সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান। ছবি: আজকের পত্রিকা

আমরা সবাইকে নিয়ে ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতেই নির্বাচন আদায় করে ছাড়ব, দেরি হলেই বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হবে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান। আজ বুধবার সকালে সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এই মন্তব্য করেন।

এর আগে তৃতীয়বারের মতো দলটির আমির নির্বাচিত হওয়ার পর প্রথম সিলেট সফরে এসে নেতা-কর্মীদের উষ্ণ অভ্যর্থনায় সিক্ত হন শফিকুর রহমান।

নির্বাচনকে কেন্দ্র করে জামায়াতের জোট করার কোনো সম্ভাবনা নেই জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা ইসলামি ও দেশপ্রেমিক রাজনৈতিক দলগুলো মিলে নির্বাচনী সমঝোতা করব। দ্রুতই জামায়াত চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করবে, আর তা যথাসময়ে জানানো হবে।’

গণভোট নিয়ে আগের অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করে জামায়াত আমির বলেন, ‘গণতন্ত্রের ফর্মুলা হচ্ছে একাধিক মত। তাই আমরা জনগণকে নিয়ে পিআর পদ্ধতির দাবি আদায় করে নেব। পিআর পদ্ধতির নির্বাচন আমাদের শ্রেষ্ঠ দাবি। আশা করি, জনগণ সেটায় সমর্থন দেবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বরগুনা-১ আসনে মনোনয়ন বিতর্ক: ২ বিএনপি নেতার বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা

আমতলী (বরগুনা) প্রতিনিধি 
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বরগুনা-১ (বরগুনা সদর-আমতলী-তালতলী) আসনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটি বরগুনা সদর উপজেলা থেকে প্রার্থী ঘোষণা করায় আমতলী ও তালতলীবাসী ক্ষুব্ধ। ২ লাখ ৯২ হাজার ভোটারের এই অঞ্চলের দাবি উপেক্ষা করে সদর উপজেলা থেকে মনোনয়ন দেওয়ায় সাবেক সংসদ সদস্য মতিয়ার রহমান তালুকদার এবং প্রয়াত মহাসচিব খন্দকার দেলোয়ার হোসেনের এপিএস ওমর আব্দুল্লাহ শাহীন বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। ক্ষুব্ধ প্রান্তিক জনগোষ্ঠী বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কাছে অবিলম্বে প্রার্থী পরিবর্তন করে আমতলী-তালতলী থেকে মনোনয়ন দেওয়ার জোর দাবি জানিয়েছে।

জানা গেছে, স্বাধীনতার পর থেকে সাবেক বরগুনা-৩ (আমতলী-তালতলী) আসন আওয়ামী লীগের দুর্গ হলেও ২০০১ সালে সেই দুর্গে হানা দেন সাবেক সংসদ সদস্য জাতীয় পার্টির নেতা মতিউর রহমান তালুকদার। ওই সময় এই আসন থেকে নির্বাচনে অংশ নেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাঁর সঙ্গে মতিয়ার রহমান তালুকদার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে মাত্র ৫ হাজার ভোটে হেরে যান। শেখ হাসিনা এই আসন ছেড়ে দিলে উপনির্বাচনে মতিয়ার রহমান তালুকদার বিএনপিতে যোগ দিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ওই সময় আমতলী-তালতলী উপজেলার উন্নয়নে আমূল পরিবর্তন হয়।

২০০৮ সালে সেনাশাসিত সরকার বরগুনা জেলার তিনটি সংসদীয় আসনকে দুটি আসনে রূপান্তর করে। বরগুনা সাবেক-৩ আসন (আমতলী-তালতলী) বিলুপ্ত হয়ে বরগুনা সদরের সঙ্গে একীভূত হয়। আমতলী-তালতলী উপজেলার ৪ লাখ মানুষের ভাগ্যে নেমে আসে অন্ধকার। ২০০৯ সাল থেকে এই আসনে ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু তিন-তিনবার সংসদ সদস্য হলেও আমতলী-তালতলীর কোনো উন্নয়ন ঘটেনি। সংসদ সদস্য মতিয়ার রহমান তালুকদারের রেখে যাওয়া উন্নয়নই তিনি (শম্ভু) ওলটপালট করে উন্নয়নের নামে লুটপাট করেছেন। গত ১৬ বছর নানাভাবে উন্নয়নবঞ্চিত হয় আমতলী-তালতলী উপজেলার মানুষ।

পায়রা নদীর পূর্ব পারে আমতলী-তালতলী উপজেলা। পশ্চিম পারে বরগুনা সদর উপজেলা। দুই পার মিলিয়ে এই আসনে ভোটার ৫ লাখ ৫৭ হাজার ৮৭৪ জন। এর মধ্যে আমতলী উপজেলায় ১ লাখ ৯৮ হাজার ৪০৮ ও তালতলী উপজেলার ভোটার ৯৩ হাজার ৭২৫ জন। এই দুই উপজেলায় ভোটার ২ লাখ ৯২ হাজার ১৩৩ জন। বরগুনা সদর উপজেলায় ভোটার ২ লাখ ৬৫ হাজার ৭৪১ জন। বরগুনা সদর উপজেলার চেয়ে পায়রা নদীর পূর্ব পারে আমতলী-তালতলী উপজেলায় ২৬ হাজার ৩৯২ ভোটার বেশি।

এবার আমতলী-তালতলী থেকে সাবেক সংসদ সদস্য মতিয়ার রহমান তালুকদার, তৌহিদুল ইসলাম গাজী, ওমর আব্দুল্লাহ শাহীনসহ একাধিক নেতা মনোনয়ন বোর্ডের সাক্ষাৎকারের জন্য আমন্ত্রণ পেয়েছিলেন। কিন্তু দুই উপজেলার প্রায় ৫২ শতাংশ ভোটারকে বঞ্চিত করে সোমবার রাতে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটি বরগুনা সদর উপজেলা থেকে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক নজরুল ইসলাম মোল্লাকে মনোনয়ন দেয়।

আমতলী-তালতলী থেকে প্রার্থী মনোনয়ন না দেওয়ায় দুই উপজেলার মানুষ ক্ষুব্ধ হয় এবং সাবেক সংসদ সদস্য মতিয়ার রহমান তালুকদার এবং ওমর আব্দুল্লাহ শহীন বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।

বিএনপির সাবেক মহাসচিব প্রায়াত খন্দকার দেলোয়ার হোসেনের এপিএস ওমর আব্দুল্লাহ শাহীন বলেন, ‘আমতলী-তালতলীর ২ লাখ ৯২ হাজার ১৩৩ জন ভোটারকে সঙ্গে নিয়ে তাঁদের দাবি পূরণে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে নির্বাচনে অংশ নেব।’

সাবেক সংসদ সদস্য মতিয়ার রহমান তালুকদার বলেন, ‘জনগণকে সঙ্গে নিয়েই আগামী নির্বাচনে লড়ব। জনগণ আমার মূল শক্তি। আমতলী-তালতলীর মাটি ও মানুষের নেতা আমি। আমার হারানোর কিছু নেই। হারলে এই দুই উপজেলার জনগণকে নিয়ে হারব।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বরিশালে বিএনপির মনোনয়নপ্রাপ্তদের বিভেদের মহড়া: মনোনয়ন না পাওয়াদের উপেক্ষা, কর্মীদের শঙ্কা

খান রফিক, বরিশাল
বরিশাল নগরে সোমবার রাতে মোটারসাইকেল মহড়া দেন মজিবর রহমান সরোয়ারের অনুসারীরা। ছবি: আজকের পত্রিকা
বরিশাল নগরে সোমবার রাতে মোটারসাইকেল মহড়া দেন মজিবর রহমান সরোয়ারের অনুসারীরা। ছবি: আজকের পত্রিকা

জাতীয় নির্বাচনের মনোনয়ন ঘোষণার পর বরিশালে বিএনপির রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট অনেকাংশে পাল্টে গেছে। জেলার ছয়টি আসনের মধ্যে পাঁচটিতে মনোনয়ন পাওয়া প্রার্থীরা ফুরফুরে মেজাজে থাকলেও মনোনয়ন না পাওয়াদের মধ্যে বিরাজ করছে চাপা ক্ষোভ ও হতাশা। মনোনয়ন পাওয়া বিএনপির প্রার্থীদের বাসাবাড়িতে এখন নেতা-কর্মীদের ঢল। অপর দিকে মনোনয়ন না পাওয়া ব্যক্তিরা অনেকটা চুপ হ‌য়ে গেছেন।

দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের নির্দেশনা সত্ত্বেও মনোনয়নপ্রাপ্ত প্রার্থীরা এখন পর্যন্ত মনোনয়ন না পাওয়াদের কোনো খোঁজখবর নেননি। উল্টো প্রার্থীদের অনুসারীরা মোটরসাইকেল মহড়া দিয়ে ফুর্তি করায় মনোনয়ন না পাওয়াদের সমর্থকেরা শঙ্কার মধ্যে রয়েছেন। জেলার পাঁচটি আসনে একই ধরনের চিত্র দেখা গেছে। নির্বাচনে দলীয় ঐক্য কতটা ধরে রাখতে পারবে বিএনপি, তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। একই চিত্র জেলার পাঁচটি আসনে।

মনোনয়ন-পরবর্তী পরিস্থিতি সবচেয়ে বেশি উত্তপ্ত বরিশাল-৫ (সদর) আসনে। এই আসনে দলের উপদেষ্টা মজিবর রহমান সরোয়ার মনোনয়ন পেয়েছেন। সোমবার রাতে সরোয়ারের অনুসারী আক্তারুজ্জামান সাব্বির মোটরসাইকেল বহর নিয়ে নগরী‌তে মহড়া দিয়েছেন।

বরিশাল-৫ আসনের মনোনয়ন প্রত্যাশী ও মহানগর বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আফরোজা খানম নাসরিন বলেন, ‘ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের নির্দেশনা ছিল, যিনি ম‌নোনয়ন পা‌বেন তি‌নি মনোনয়ন না পাওয়াদের বা‌ড়ি বা‌ড়ি গি‌য়ে কোলাকু‌লি কর‌বেন। কিন্তু সরোয়ার ভাই সেটা ক‌রেননি, বরং তাঁর লোকজন মোটরসাইকেল মহড়ায় নগ‌রে আতঙ্ক ছড়া‌চ্ছেন। সাধারণ নেতা-কর্মীরা হতাশাগ্রস্ত এবং অস্বস্তিতে প‌ড়ে‌ছেন।’

আরেক মনোনয়নপ্রত্যাশী ও বরিশাল দক্ষিণ জেলা বিএনপির সদস্যসচিব আবুল কালাম শাহিন একই অভিযোগ করে বলেন, তারেক রহমানের স্কাইপি সভা অনুযায়ী সবাই মিলেমিশে কাজ করার আশা থাকলেও সরোয়ার কোনো খোঁজ নেননি।

বরিশাল-৫ আসনে মনোনয়ন না পাওয়া নগর বিএনপির আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান ফারুক আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘দলকে ছোট করতে পারি না, তাই প্রার্থীকে অভিনন্দন জানিয়েছি। এখন তো প্রার্থীর দায়িত্ব। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেছেন, যিনি মনোনয়ন পাবেন, তিনি যাঁরা পাবেন না তাঁদের বাসায় যাবেন, তাঁদের নিয়ে কাজ করবেন। মনোনয়ন পেয়ে মিস্টি বিতরণ, ফুর্তি করা যাবে না। কিন্তু তারা মোটরসাইকেল মহড়া দিয়ে ফুর্তি করে। এমন কথা তো ছিল না।’ ফারুক বলেন, ‘সরোয়ার ভাই আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেননি, বাসায়ও আসেননি। আমরা মহানগরের দায়িত্বে। আমরা হামলা-মামলার শিকার হয়েছি। কারও মনে ক্ষোভ থাকলেও কর্মীদের শান্ত থাকতে বলেছি।’

এ বিষয়ে জানতে বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এবং প্রার্থী মজিবর রহমান সরোয়ারকে ফোন করা হলে তিনি ‘একটি সভায় আছেন, পরে কথা বলবেন’ বলে জানান।

ত‌বে সরোয়ারের ঘনিষ্ঠজন নগর বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক সৈয়দ আকবর বলেন, ‘জনগ‌ণের স‌ঙ্গে স‌রোয়ার ভাই আছেন। সামনের দিনগু‌লো‌তে সবাইকে নি‌য়ে ঐক‌্যবদ্ধভা‌বে কাজ করবেন। মনোনয়ন পাওয়ার পর সরোয়ার ভাইয়ের বাসায় মানুষের ঢল নেমেছে। একের পর এক সভার কারণে তিনি সময়ই পা‌চ্ছেন না।’

এদি‌কে ব‌রিশাল-১ (গৌরনদী-আগৈলঝাড়া) আস‌নে বিএন‌পির ম‌নোনয়ন পে‌য়ে‌ছেন চেয়ারপারসনের উপ‌দেষ্টা জ‌হির উদ্দিন স্বপন। সোমবার সন্ধ‌্যায় স্বপ‌নের অনুসারী স্বেচ্ছা‌সেবক দ‌লের বহিষ্কৃত যুগ্ম আহ্বায়ক শ‌ফিকুল ইসলাম রোকন লোকজন নি‌য়ে গৌরনদী‌তে এক‌টি দোকা‌নে মহড়া দি‌য়ে এসে‌ছেন। ওই দোকা‌নের মা‌লিক এবং সাংবা‌দিক মিজান সস্প্রতি রোকনের বিরু‌দ্ধে সংবাদ প্রকাশ করার জে‌রে এই মহড়া দি‌য়ে‌ছেন ব‌লে জানা গে‌ছে।

ব‌রিশাল-১ আস‌নে ম‌নোনয়নপ্রত‌্যাশী ছি‌লেন দ‌লের কেন্দ্রীয় সহসাংগঠ‌নিক সস্পাদক আকন কুদ্দুসুর রহমান। তি‌নি হুমকির কথা শিকার ক‌রে জানান, রোকন স্থনীয় সাংবা‌দিক‌দের হুমকি দি‌চ্ছে। স্বপন ভাই যোগা‌যোগ ক‌রে‌ছেন কি না জানতে চাইলে তি‌নি ব‌লেন, ফোন দি‌য়ে তাঁকে ব‌লে‌ছেন, ‘আমি তোমা‌কে ডাক‌ব।’

বরিশাল-৪ (হিজলা-মেহেন্দীগঞ্জ) আসনে ম‌নোনয়ন পে‌য়ে‌ছেন স্বেচ্ছা‌সেবক দ‌লের সাধারণ সম্পাদক রা‌জিব আহসান। এই আস‌নে মনোনয়নপ্রত্যাশী ছি‌লেন মেজবাহ উদ্দিন ফরহাদ। তি‌নি ব‌লেন, ‘আল্লাহ যা ক‌রেন ভালোর জন্যই ক‌রেন।’ মেজবাহ বলেন, এই আসনে যিনি মনোনয়ন পেয়েছেন, সেই প্রার্থী কোনো খোঁজ নেন‌নি তাঁর।

বরিশাল-৬ (বাকেরগঞ্জ) আসনের মনোনয়ন পে‌য়ে‌ছেন আবুল হো‌সেন। ত‌বে ম‌নোনয়নপ্রত্যাশী নজরুল ইসলাম রাজন বলেন, ‘আমি অভিনন্দন জা‌নি‌য়েছি ফেসবু‌কে। কিন্তু আমার স‌ঙ্গে যোগা‌যোগ ক‌রেন‌নি।’

এসব বিষ‌য়ে বিএন‌পির কেন্দ্রীয় সহসাংগঠ‌নিক সস্পাদক আকন কুদ্দুসুর রহমান ব‌লেন, ‘আস‌লে এটা নেতা‌দের মনমানসিকতার বিষয়। কষ্ট যখন পায়, সান্ত্বনা তখনই দরকার হয়। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম‌্যান নি‌র্দেশ দি‌য়েছেন, যি‌নি ম‌নোনয়ন পা‌বেন, তি‌নি না পাওয়াদের বা‌ড়ি বা‌ড়ি গি‌য়ে বু‌কে টে‌নে নেবেন। এখা‌নে সব আস‌নে প্রার্থীরা চেয়ারম‌্যা‌নের নি‌র্দেশ মা‌নেন‌নি। ব‌রিশাল মহানগর বিএন‌পি স‌রোয়া‌রকে অভিনন্দন জানা‌লেও তি‌নি (স‌রোয়ার) নি‌র্লিপ্ত। আশা ক‌রি, প্রার্থী‌দের ঘুম ভাঙ‌বে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

গাছে বাঁধা স্যালাইন, শয্যা রিকশাভ্যানে: খোলা চত্বরেই চলছে শিশু রোগীর চিকিৎসা

সাদ্দাম হোসেন, ঠাকুরগাঁও
ওয়ার্ডে ঠাঁই না পেয়ে গাছের নিচে রিকশাভ্যানে শুয়ে চিকিৎসা নিচ্ছে এক শিশু। ছবি: আজকের পত্রিকা
ওয়ার্ডে ঠাঁই না পেয়ে গাছের নিচে রিকশাভ্যানে শুয়ে চিকিৎসা নিচ্ছে এক শিশু। ছবি: আজকের পত্রিকা

ঠাকুরগাঁও ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতাল নিজেই এখন ‘রোগী’। ধারণক্ষমতার তিন গুণ রোগীর চাপ, চরম অপরিষ্কার পরিবেশ আর জনবল-সংকটে এই সেবাকেন্দ্রের স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা রীতিমতো মুখ থুবড়ে পড়েছে। শয্যার অভাবে গুরুতর রোগী ও শিশুদের এখন গাছের নিচে রিকশাভ্যানে শুয়ে চিকিৎসা নিতে দেখা যাচ্ছে।

গতকাল মঙ্গলবার হাসপাতাল চত্বরে গিয়ে দেখা যায়, ওয়ার্ডে ঠাঁই না পেয়ে গাছের নিচে রিকশাভ্যানে শুয়ে চিকিৎসা নিচ্ছে এক শিশু। তার নানি লিপি বেগম ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, ‘ভেতরে এত দুর্গন্ধ যে নাক চেপেও থাকা যায় না। নাতি কান্না করায় ওয়ার্ড ছেড়ে বাইরে এসে চিকিৎসা নিচ্ছি।’

সদর উপজেলার সুলতানা, বীরগঞ্জ উপজেলার জরিনা বেগমসহ অন্য রোগী ও স্বজনদের একই অভিযোগ—নোংরা পরিবেশ, শয্যার অভাব এবং হাসপাতাল থেকে প্রয়োজনীয় ওষুধ ও পরীক্ষার সুযোগ না পাওয়ায় তাঁদের বাইরে ছুটতে হচ্ছে।

হাসপাতালের করিডর, বাথরুম, এমনকি ওয়ার্ডেও বিরাজ করছে চরম অপরিষ্কার পরিবেশ। শিশু ওয়ার্ডে কর্মরত সিনিয়র স্টাফ নার্স রেখা রানী জানান, পরিচ্ছন্নতাকর্মীর অভাবে দুর্গন্ধে তাঁদের কাজ করতে অসুবিধা হচ্ছে। ৪৫ শয্যার শিশু ওয়ার্ডে বর্তমানে ভর্তি রয়েছে প্রায় ১৬০ জন শিশু, যাদের অধিকাংশই শ্বাসকষ্ট ও নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত। গত ২৪ ঘণ্টায় ভর্তি হয়েছে ৬৭ শিশু, যা পরিস্থিতিকে আরও ভয়াবহ করে তুলেছে।

হাসপাতালের ভেতরে কুকুরের অবাধ বিচরণও দেখা যায়। রোগী ও স্বজনেরা অভিযোগ করছেন, নোংরা পরিবেশে সুস্থ হতে এসে উল্টো অসুস্থ হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হচ্ছে।

গুরুতর অব্যবস্থাপনার কারণে হাসপাতালের অনেক গুরুত্বপূর্ণ পরিষেবা দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ। আইসিইউ (নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র), ডায়ালাইসিস ইউনিট, পিসিআর ল্যাবের জন্য স্থান প্রস্তুত থাকলেও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ও জনবলের অভাবে সেগুলো তালাবদ্ধ। দুটি লিফটের মধ্যে একটি নষ্ট থাকায় গুরুতর রোগী ও বয়স্কদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

এ হাসপাতালটি শুধু ঠাকুরগাঁওয়ের নয়, পঞ্চগড়, দিনাজপুরের বীরগঞ্জ, কাহারোলসহ ১২ উপজেলার মানুষের একমাত্র ভরসা। কিন্তু অতিরিক্ত রোগীর চাপ আর জনবল-সংকটের কারণে কাঙ্ক্ষিত সেবা দেওয়া অসম্ভব হয়ে উঠেছে। হাসপাতালের তথ্য অনুযায়ী, মোট অনুমোদিত পদ ২২১টি, যার মধ্যে ৫৬টিই শূন্য। ৫৯ জন প্রথম শ্রেণির চিকিৎসকের বিপরীতে কর্মরত মাত্র ৪০ জন। ২৫০ শয্যার বিপরীতে প্রতিদিন ৬০০ থেকে ৭০০ রোগী ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছে।

আবাসিক মেডিকেল কর্মকর্তা মনজুরুল ইসলাম বলেন, ‘রোগীর চাপ আমাদের সক্ষমতার অনেক বেশি। এক শিফটে ২০-২৫ জন নার্স দিয়ে ৬০০-৭০০ রোগীর সেবা দেওয়া অসম্ভব। তবু আমরা সাধ্য অনুযায়ী চিকিৎসাসেবা দিয়ে যাচ্ছি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত