Ajker Patrika

গাছে বাঁধা স্যালাইন, শয্যা রিকশাভ্যানে: খোলা চত্বরেই চলছে শিশু রোগীর চিকিৎসা

সাদ্দাম হোসেন, ঠাকুরগাঁও
ওয়ার্ডে ঠাঁই না পেয়ে গাছের নিচে রিকশাভ্যানে শুয়ে চিকিৎসা নিচ্ছে এক শিশু। ছবি: আজকের পত্রিকা
ওয়ার্ডে ঠাঁই না পেয়ে গাছের নিচে রিকশাভ্যানে শুয়ে চিকিৎসা নিচ্ছে এক শিশু। ছবি: আজকের পত্রিকা

ঠাকুরগাঁও ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতাল নিজেই এখন ‘রোগী’। ধারণক্ষমতার তিন গুণ রোগীর চাপ, চরম অপরিষ্কার পরিবেশ আর জনবল-সংকটে এই সেবাকেন্দ্রের স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা রীতিমতো মুখ থুবড়ে পড়েছে। শয্যার অভাবে গুরুতর রোগী ও শিশুদের এখন গাছের নিচে রিকশাভ্যানে শুয়ে চিকিৎসা নিতে দেখা যাচ্ছে।

গতকাল মঙ্গলবার হাসপাতাল চত্বরে গিয়ে দেখা যায়, ওয়ার্ডে ঠাঁই না পেয়ে গাছের নিচে রিকশাভ্যানে শুয়ে চিকিৎসা নিচ্ছে এক শিশু। তার নানি লিপি বেগম ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, ‘ভেতরে এত দুর্গন্ধ যে নাক চেপেও থাকা যায় না। নাতি কান্না করায় ওয়ার্ড ছেড়ে বাইরে এসে চিকিৎসা নিচ্ছি।’

সদর উপজেলার সুলতানা, বীরগঞ্জ উপজেলার জরিনা বেগমসহ অন্য রোগী ও স্বজনদের একই অভিযোগ—নোংরা পরিবেশ, শয্যার অভাব এবং হাসপাতাল থেকে প্রয়োজনীয় ওষুধ ও পরীক্ষার সুযোগ না পাওয়ায় তাঁদের বাইরে ছুটতে হচ্ছে।

হাসপাতালের করিডর, বাথরুম, এমনকি ওয়ার্ডেও বিরাজ করছে চরম অপরিষ্কার পরিবেশ। শিশু ওয়ার্ডে কর্মরত সিনিয়র স্টাফ নার্স রেখা রানী জানান, পরিচ্ছন্নতাকর্মীর অভাবে দুর্গন্ধে তাঁদের কাজ করতে অসুবিধা হচ্ছে। ৪৫ শয্যার শিশু ওয়ার্ডে বর্তমানে ভর্তি রয়েছে প্রায় ১৬০ জন শিশু, যাদের অধিকাংশই শ্বাসকষ্ট ও নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত। গত ২৪ ঘণ্টায় ভর্তি হয়েছে ৬৭ শিশু, যা পরিস্থিতিকে আরও ভয়াবহ করে তুলেছে।

হাসপাতালের ভেতরে কুকুরের অবাধ বিচরণও দেখা যায়। রোগী ও স্বজনেরা অভিযোগ করছেন, নোংরা পরিবেশে সুস্থ হতে এসে উল্টো অসুস্থ হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হচ্ছে।

গুরুতর অব্যবস্থাপনার কারণে হাসপাতালের অনেক গুরুত্বপূর্ণ পরিষেবা দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ। আইসিইউ (নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র), ডায়ালাইসিস ইউনিট, পিসিআর ল্যাবের জন্য স্থান প্রস্তুত থাকলেও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ও জনবলের অভাবে সেগুলো তালাবদ্ধ। দুটি লিফটের মধ্যে একটি নষ্ট থাকায় গুরুতর রোগী ও বয়স্কদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

এ হাসপাতালটি শুধু ঠাকুরগাঁওয়ের নয়, পঞ্চগড়, দিনাজপুরের বীরগঞ্জ, কাহারোলসহ ১২ উপজেলার মানুষের একমাত্র ভরসা। কিন্তু অতিরিক্ত রোগীর চাপ আর জনবল-সংকটের কারণে কাঙ্ক্ষিত সেবা দেওয়া অসম্ভব হয়ে উঠেছে। হাসপাতালের তথ্য অনুযায়ী, মোট অনুমোদিত পদ ২২১টি, যার মধ্যে ৫৬টিই শূন্য। ৫৯ জন প্রথম শ্রেণির চিকিৎসকের বিপরীতে কর্মরত মাত্র ৪০ জন। ২৫০ শয্যার বিপরীতে প্রতিদিন ৬০০ থেকে ৭০০ রোগী ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছে।

আবাসিক মেডিকেল কর্মকর্তা মনজুরুল ইসলাম বলেন, ‘রোগীর চাপ আমাদের সক্ষমতার অনেক বেশি। এক শিফটে ২০-২৫ জন নার্স দিয়ে ৬০০-৭০০ রোগীর সেবা দেওয়া অসম্ভব। তবু আমরা সাধ্য অনুযায়ী চিকিৎসাসেবা দিয়ে যাচ্ছি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ