Ajker Patrika

অস্ত্রবাজ-দখলদারদের প্রশ্রয় দিয়ে কক্সবাজারে জাফরের রাজত্বের অবসান

বাপ্পী শাহরিয়ার, চকরিয়া (কক্সবাজার)
আপডেট : ০৯ জানুয়ারি ২০২৪, ১৯: ২৯
অস্ত্রবাজ-দখলদারদের প্রশ্রয় দিয়ে কক্সবাজারে জাফরের রাজত্বের অবসান

কক্সবাজার-১ (চকরিয়া-পেকুয়া) আসনের একাদশ জাতীয় সংসদের সদস্য জাফর আলম দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন। প্রভাবশালী জাফর আলম এবার বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিমের কাছে ধরাশয়ী হয়েছেন। দলীয় পদ ও নির্বাচনে হেরে এখন তিনি অকূল পাথারে। 

জাফর আলম সংসদ সদস্য, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও চকরিয়া পৌরসভার মেয়র হিসেবে টানা ১৫ বছর জনপ্রতিনিধি ছিলেন। চকরিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্বও পালন করেছেন। এমন তুখড় রাজনীতিবিদের পরাজয়ের কারণ নিয়ে আলাপচারিতা ও গুঞ্জন চলছে এলাকার ভোটারদের মাঝে। 

স্থানীয়রা মনে করছেন, জমি ও চিংড়ি ঘের দখল, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড, প্রকাশ্যে অস্ত্রবাজি, দলীয় নেতা-কর্মী ও সাধারণ মানুষের ওপর দমন-পীড়ন এবং নিজস্ব বলয় তৈরির কারণে জাফর আলম এবার পরাজিত হয়েছেন। আর এসব অপকর্ম পুঁজি করে আওয়ামী লীগের সমর্থন নিয়ে কূটকৌশলে চমক দেখিয়েছেন সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম। 

জাফর আলম ২০১৮ সালে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এর আগে ২০১৪ সালে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেলেও আসনটি জোটগতভাবে জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দেওয়া হয়। এরপর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশ নিয়ে চকরিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। তিনি ২০০৫ সালে প্রথম চকরিয়া পৌরসভার মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন। 

এবার জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইবরাহিমের কাছে ২৯ হাজার ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হন জাফর আলম। ইবরাহিম হাতঘড়ি প্রতীক নিয়ে ৮১ হাজার ৯৫৫ ভোট পান। অন্যদিকে জাফর আলম ৫২ হাজার ৮৯৬ ভোট পেয়েছেন। বাকি পাঁচজন প্রার্থী পেয়েছেন ২ হাজার ৪২৫ ভোট। 

সৈয়দ ইবরাহিমের জয় ও জাফর আলমের পরাজয়ের কারণ জানতে ১৫ জন ভোটার ও আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে আজ মঙ্গলবার কথা বলেছেন আজকের পত্রিকার এ প্রতিনিধি। তাঁদের মতে, জাফর আলম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর চকরিয়া-পেকুয়ার দখলবাজ শ্রেণির লোকজন তাঁর কাছে আশ্রয় পান। 

এরপর চিংড়িঘের দখল, জমি দখল ও মালিককে জিম্মি করে জমি কিনে নিয়ে নানাভাবে ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন তিনি। এবার নির্বাচনে দলের মনোনয়ন বঞ্চিত হয়ে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে যায়। সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম চট্টগ্রামের হাটহাজারী থেকে এসে কল্যাণ পার্টির প্রার্থী হিসেবে ভোটে অংশ নেন। পরে আওয়ামী লীগের সমর্থন নিয়ে প্রচারণা চালান। 

ইবরাহিমকে ‘বহিরাগত’ প্রার্থী হিসেবে আখ্যায়িত করলেও জাফর আলমের নির্যাতনের শিকার সাধারণ ভোটাররাও তাঁর কাছ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেন। ইবরাহিমের পক্ষে আওয়ামী লীগ ছাড়াও সাধারণ মানুষ, মুক্তিযোদ্ধা ও তরুণ ভোটারদের সমর্থন পান। জাফর আলম, তাঁর নিকটাত্মীয় ও নিজস্ব বলয়ের লোকজন দখল, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড, অস্ত্রবাজি ও বিতর্কিত লোকজন সঙ্গে রাখা তাঁর হারের মূল কারণ বলে মনে করছেন আওয়ামী লীগ ও সাধারণ ভোটাররা। 

সুরাজপুর-মানিকপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আজিমুল হক আজিম বলেন, ‘জাফর আলম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে তাঁর বাহিনীর হাতে দলীয় নেতা-কর্মী এবং সাধারণ মানুষ দমন-পীড়নের শিকার হয়েছে। জমি ও চিংড়ি ঘের দখল, অস্ত্রবাজিসহ নানা অভিযোগ থাকায় দল তাঁকে মনোনয়ন দেননি। দলীয়ভাবে কল্যাণ পার্টির প্রার্থী সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিমকে সমর্থন দেওয়ার পর আমরা কাজ করে বিপুল ভোটে তাঁকে নির্বাচিত করেছি।’ 

চকরিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফজলুল করিম সাঈদী বলেন, ‘জাফর আলম এমপি হওয়ার পর থেকে নিজস্ব ক্যাডার বাহিনী নিয়ে শত শত মানুষের জমি দখল করেছেন। আওয়ামী লীগের ত্যাগী নেতাদের অবমুল্যায়ন, দমন-পীড়ন করে ‘জাফর লীগ’ সৃষ্টি করেছেন। নানা কারণে দলীয় নেতা ও ভোটাররাও ক্ষুদ্ধ ছিলেন। এসব অপকর্মের ভোটাররা কাছে পৌঁছে দিয়ে কাজে লাগিয়েছেন সৈয়দ ইবরাহিম। তাই দল মনোনয়ন দেয়নি, স্বতন্ত্র ভোট করে লজ্জাজনকভাবে হেরেছে।’ 

চকরিয়া পৌরসভার মেয়র আলমগীর চৌধুরী বলেন, ‘গত পৌরসভা নির্বাচনে আমাকে দল মনোনয়ন দেন। জাফর আলম তাঁর আপন ভাতিজাকে আমার বিরুদ্ধে ভোটে নামান। জনগণ আমাকে বিপুল ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেন। আমরা দীর্ঘদিন তাঁর পক্ষে ছিলাম। এমপি নির্বাচিত হয়ে তিনি মানুষকে জুলুম করেছেন। চিংড়িঘের ও মানুষের জমি দখল করে কোটি কোটি মালিক হলেও এলাকায় কোনো উন্নয়ন হয়নি। এ আসনে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী না থাকায়, হাত ঘড়ির প্রার্থীকে জেলা আওয়ামী লীগ সমর্থন দিয়েছিল। সৈয়দ ইবরাহিমকে বিপুল ভোটের ব্যবধানে জাফরকে পরাজিত করে তাঁর অপকর্মের জবাব দিয়েছেন।’ 

এ আসনে ভোটার রয়েছে ৪ লাখ ৮৬ হাজার ২৫২ জন ভোটার। ভোটারের বিপরীতে ভোট পড়েছে ১ লাখ ৩৭ হাজার ২৭৬ টি। মোট ভোটারের ২৮.৯২ শতাংশ ভোট পড়েছে। ইবরাহিমের কাছে ২৯ হাজার ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হন জাফর আলম। ইবরাহিম হাত ঘড়ি প্রতীক নিয়ে ৮১ হাজার ৯৫৫ ভোট পান। জাফর আলম ৫২ হাজার ৮৯৬ ভোট পেয়েছেন। 

অন্যদিকে জাতীয় পার্টির মনোনীত প্রার্থী হোসনে আরা পেয়েছেন ৭৭৩ ভোট, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির আবু মোহাম্মদ বশিরুল আলম পান ৫৩৭ ভোট, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের মুহাম্মদ বেলাল উদ্দীন পেয়েছেন ৬৯১ ভোট, স্বতন্ত্র প্রার্থী ও বর্তমান সংসদ সদস্য জাফর আলমের ছেলে তানভীর আহমদ সিদ্দিকী তুহিন ২৪৪ ভোট পেয়েছেন ও কমর উদ্দীন ১৮০ ভোট পান। 

কক্সবাজার-১ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য জাফর আলমের বক্তব্য নিতে তাঁর মোবাইল ফোনে একাধিক কল দেওয়া হলেও তিনি রিসিভ করেননি। 

এ বিষয়ে জাফর আলমের ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত ও চকরিয়া পৌরসভা আওয়ামী লীগের সভাপতি জাহেদুল ইসলাম লিটু বলেন, ‘কল্যাণ পার্টিকে আসনটি অনেকটা উপহার দেওয়া হয়েছে বলা যায়। সৈয়দ ইবরাহিমের জয় ও জাফর আলম পরাজয় এরই মধ্যে সীমাবদ্ধ। দলীয় নেতা-কর্মীদের দমন-পীড়ন ও দখলের বিষয়টি পুঁজি করে ভোটের রাজনীতি হয়েছে।’

বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান ও কক্সবাজার-১ আসনের নবনির্বাচিত সংসদ সদস্য সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বলেন, ‘সকল ষড়যন্ত্র ও ভয়ভীতি উপেক্ষা করে জনগণ আমাকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত করেছেন। স্বতন্ত্র প্রার্থী জাফর আলমের কাছে দলীয় নেতা-কর্মী ও সাধারণ মানুষ নির্যাতনের শিকার হয়েছে; এ নির্বাচনে তাঁরা প্রতিশোধ নিয়েছেন। চকরিয়া-পেকুয়া উপজেলায় পরিকল্পিতভাবে উন্নয়ন করা হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

থানচির বলিবাজারে পুড়ল ১৩ দোকান

থানচি (বান্দরবান) প্রতিনিধি  
আগুনে পুড়ছে দোকান। ছবি: আজকের পত্রিকা
আগুনে পুড়ছে দোকান। ছবি: আজকের পত্রিকা

বান্দরবানের থানচি উপজেলার বলিপাড়া ইউনিয়নের বলিবাজারে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। শনিবার দিবাগত গভীর রাতে হঠাৎ লাগা আগুনে বাজারের অন্তত ১৩টি দোকানঘর পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। দেড় বছরের ব্যবধানে এটি এলাকায় তৃতীয়বারের মতো বড় অগ্নিকাণ্ড।

স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, শনিবার দিবাগত রাত ২টার দিকে বাজারের একটি খাবারের হোটেল থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়। মুহূর্তেই আগুন ছড়িয়ে পড়ে পাশের দোকানগুলোতে।

বাজার ব্যবসায়ী কমিটির সভাপতি অংসিংম্যা মারমা বলেন, ‘তখন রাত গভীর হওয়ায় সবাই ঘুমিয়ে ছিলাম। হঠাৎ বাজারে দক্ষিণ-পশ্চিম প্রান্ত থেকে হইচই শুনে দোকান থেকে বের হয়ে দেখি আগুন জ্বলছে। টিটু দাশের রেস্টুরেন্ট ও জাফর আহম্মদের সারের দোকানের মাঝখান থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে।’

আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত হ্লায়ইচিং মারমা নামের এক কাপড় ব্যবসায়ী বলেন, ‘খুব দুর্ভাগ্য আমার। মালপত্র সরানোর কোনো সুযোগ পেলাম না।’

বলিপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান জিয়াঅং মারমা বলেন, ‘আগুনের ঘটনা জানার পরপরই বাজারে এসেছি। এলাকার মানুষের সঙ্গে কথা বলেছি। আগুনে ১৩টি দোকান পুড়ে গেছে। ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তা করার ব্যবস্থা নেওয়া হবে। উপজেলা প্রশাসনকে জানানো হয়েছে।’

থানছি থানার ফায়ার স্টেশনের লিডার পিয়ার মোহাম্মদ বলেন, ‘শনিবার দিবাগত রাত সোয়া ২টার দিকে বলিপাড়া বাজারে আগুনের খবর পাই। দ্রুত দুটি ইউনিট গিয়ে আগুন নেভায়। তৎক্ষণিকভাবে মনে হচ্ছে, শর্টসার্কিট থেকে আগুনের সূত্রপাত। তবে তদন্তের পর বিস্তারিত জানা যাবে।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ আদুল্লাহ আল-ফয়সাল বলেন, ‘আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ট্রেনিংয়ের কাজে ঢাকায় আছি। বলিপাড়া বাজারে অগ্নিকাণ্ডের খবর পেয়েছি। প্রশাসনের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে শুকনা খাবার, কম্বল দেওয়া হবে। এ ছাড়াও বান্দরবান জেলা প্রশাসককে বিস্তারিত জানানো হয়েছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

শেরপুরে গণসংযোগে হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল-সমাবেশের ঘোষণা জামায়াতের

শেরপুর প্রতিনিধি
শনিবার বিকেলে ও শুক্রবার রাতে জামায়াত ও বিএনপির পাল্টাপাল্টি সংবাদ সম্মেলন। ছবি: আজকের পত্রিকা
শনিবার বিকেলে ও শুক্রবার রাতে জামায়াত ও বিএনপির পাল্টাপাল্টি সংবাদ সম্মেলন। ছবি: আজকের পত্রিকা

শেরপুরে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সংসদ সদস্য প্রার্থী হাফেজ রাশেদুল ইসলামের গণসংযোগে হামলার অভিযোগ এবং তা নিয়ে বিএনপি ও জামায়াতের পাল্টাপাল্টি বক্তব্যে হঠাৎ উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে স্থানীয় রাজনীতি। অন্যদিকে এই অবস্থায় পাল্টাপাল্টি হামলার আশঙ্কায় স্থানীয় রাজনৈতিক অঙ্গনে বিরাজ করছে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা। গতকাল শনিবার বিকেলে শহরের একটি কমিউনিটি সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে গণসংযোগে হামলার প্রতিবাদে আজ রোববার বিকেল ৪টায় শহরের খোয়ারপাড় শাপলা চত্বর মোড় থেকে থানা মোড় পর্যন্ত বিক্ষোভ মিছিল-সমাবেশের ঘোষণা দিয়েছে জামায়াতে ইসলামী।

জামায়াত নেতাদের অভিযোগ, ২৪ অক্টোবর (শুক্রবার) জুমার নামাজের পর শেরপুর-১ (সদর) আসনে জামায়াত মনোনীত প্রার্থী হাফেজ রাশেদুল ইসলাম সদর উপজেলার চরপক্ষীমারী ইউনিয়নের ডাকপাড়া গ্রামে গণসংযোগে বের হলে স্থানীয় বিএনপির নেতা-কর্মীরা বাধা দেন। ওই সময় দুই পক্ষের মধ্যে বাগ্‌বিতণ্ডা হয়। পরে বিএনপির সমর্থকেরা জামায়াত নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা করেন। সংঘর্ষে শেরপুর জেলা ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি শফিউল ইসলাম স্বপন ও রাকিবুল হাসানসহ অন্তত ২০ জন আহত হন।

আহত ব্যক্তিদের মধ্যে দুজনকে শেরপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। অন্যরা প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন। এদিকে ওই ঘটনার পর শুক্রবার রাতে বিএনপি ও জামায়াতের কর্মীরা এলাকায় মুখোমুখি অবস্থান নেন। সন্ধ্যার পর থেকে শহরে পাল্টাপাল্টি প্রতিবাদ মিছিল হয়। হামলার অভিযোগে রাতে জামায়াত নেতা রাকিবুল হাসান বাদী হয়ে শেরপুর সদর থানায় চারজনের নামসহ অজ্ঞাতনামা ১০-১২ জনের নামে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে জেলা জামায়াতের আমির মাওলানা হাফিজুর রহমান বলেন, ‘ভোটের গণসংযোগে এমন ন্যক্কারজনক হামলায় শেরপুরবাসী উদ্বিগ্ন ও উৎকণ্ঠিত। এতে আগামী নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে।’ তিনি ওই হামলার ঘটনার সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত সকলকে দ্রুত সময়ের মধ্যে শাস্তির আওতায় আনার জন্য ও নিবার্চনী কর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য স্থানীয় প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানান।

সেই সঙ্গে আগামী নির্বাচনে সুষ্ঠু পরিবেশ ও সামগ্রিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং সন্ত্রাসীদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানান। গণসচেতনতার অংশ হিসেবে জামায়াতে ইসলামীর উদ্যোগে রোববার বিকেল ৪টায় শহরের খোয়ারপাড় মোড় থেকে থানা মোড় পর্যন্ত বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ ঘোষণা করেন তিনি। ওই সময় গণমাধ্যমকর্মীদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন শেরপুর-১ (সদর) আসনে জামায়াতের সংসদ সদস্য প্রার্থী হাফেজ রাশেদুল ইসলাম। সংবাদ সম্মেলনে জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি ও শেরপুর-২ (শ্রীবরদী-ঝিনাইগাতী) আসনের এমপি প্রার্থী নুরুজ্জামান বাদল, জেলা প্রচার বিভাগের সেক্রেটারি ও শেরপুর-২ (নকলা-নালিতাবাড়ী) আসনের সংসদ সদস্য প্রার্থী মু. গোলাম কিবরিয়া ভিপিসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।

এদিকে এর আগে হামলার অভিযোগ মিথ্যা দাবি করে শুক্রবার রাতে শেরপুর প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে জেলা বিএনপি। সংবাদ সম্মেলনে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক মো. সিরাজুল ইসলাম অভিযোগ করে বলেন, ‘জামায়াতের লোকজন পূর্বপরিকল্পিতভাবে ডাকপাড়া গ্রামে দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে মহড়া দিতে গিয়েছিল। সেখানে কয়েকটি মসজিদে মিটিং-মিছিল করে গ্রামবাসীর মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করে। পরে এলাকাবাসী এর তীব্র প্রতিবাদ করলে তারা এলাকা ছেড়ে চলে আসে। এরপর থানায় গিয়ে বিএনপির নেতা-কর্মীদের নামে মিথ্যা অভিযোগ দায়ের করে। তারা মিথ্যা কথা বলছে এবং উদোর পিণ্ডি বুধোর ঘাড়ে চাপানোর চেষ্টা করছে।’ তিনি ‘মিথ্যা মামলা’র তীব্র নিন্দা জানিয়ে মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানান। সংবাদ সম্মেলনে জেলা বিএনপির সদস্য সাইফুল ইসলাম স্বপন, আক্রামুজ্জামান রাহাতসহ বিএনপির সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

শৈলকুপায় শ্বশুরের বঁটির কোপে গৃহবধূর মৃত্যু

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার মনোহরপুর ইউনিয়নের পাইকপাড়া গ্রামে শ্বশুরের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে লিমা বেগম (২৮) নামের এক গৃহবধূর মৃত্যু হয়েছে। নিহত লিমা ওই গ্রামের আব্দুর রবের স্ত্রী। রোববার (২৬ অক্টোবর) ভোর ৫টার দিকে এই ঘটনা ঘটে।

জানা যায়, রোববার ভোরে গৃহবধূ লিমা বেগম নিজের ঘর থেকে বাড়ির উঠানে যান। তখন উঠানে দাঁড়িয়ে থাকা শ্বশুর মুকুল শেখ (৫০) হঠাৎ তাঁর হাতে থাকা বঁটি (ধারালো অস্ত্র) দিয়ে পুত্রবধূকে এলোপাতাড়ি আঘাত করেন। লিমার চিৎকারে পরিবারের অন্য সদস্যরা ছুটে এসে তাঁকে উদ্ধার করে দ্রুত শৈলকুপা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। মরদেহ শৈলকুপা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রাখা হয়েছে।

শৈলকুপা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক আরিফুর রহমান বলেন, ‘ওই গৃহবধূকে আমরা মৃত অবস্থায় পেয়েছি। তাঁর বুকের ওপরের অংশে ধারালো অস্ত্রের গুরুতর ক্ষত ছিল। ধারণা করা হচ্ছে, অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ ও অন্যান্য অঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে তাঁর মৃত্যু হয়েছে।’

স্বজন ও এলাকাবাসীর দাবি, অভিযুক্ত শ্বশুর মুকুল শেখ মানসিক ভারসাম্যহীন।

শৈলকুপা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মাসুম খান এই ঘটনা নিশ্চিত করে বলেন, ‘অভিযুক্ত মুকুল শেখকে আটক করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, মুকুল শেখ মানসিক ভারসাম্যহীন। তদন্ত শেষে বিস্তারিত বলা যাবে। এই ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

কার্তিকের কুয়াশায় কুড়িগ্রামে শীতের আগমনী বার্তা

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি
গতকাল সকালে কুড়িগ্রাম শহরের রেলস্টেশন এলাকায় কুয়াশাচ্ছন্ন অবস্থা। ছবি: আজকের পত্রিকা
গতকাল সকালে কুড়িগ্রাম শহরের রেলস্টেশন এলাকায় কুয়াশাচ্ছন্ন অবস্থা। ছবি: আজকের পত্রিকা

কার্তিকের শুরুতেই কুড়িগ্রামে শীতের আগমনী বার্তা পাওয়া যাচ্ছে। পৌষ আসতে এখনো প্রায় দুই মাস বাকি থাকলেও প্রতি রাতে জেলাজুড়ে কুয়াশার স্পষ্ট উপস্থিতি শীতের আগমনকে ত্বরান্বিত করছে। দিনে সূর্যের দাপুটে উপস্থিতি থাকলেও রাতের আবহাওয়া কুয়াশার চাদরের দখলে যেতে শুরু করেছে। জানান দিচ্ছে শীত এল বলে।

কুড়িগ্রামের রাজারহাট কৃষি আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার জানায়, জেলায় মধ্য অক্টোবর থেকে শীতের আগমনী বার্তা পাওয়া যাচ্ছে। দিন-রাতের সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রার ব্যবধান কমে এসেছে। শনিবার (২৫ অক্টোবর) দিনের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ২২ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং সর্বোচ্চ ৩২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গত এক সপ্তাহে জেলায় সর্বনিম্ন গড় তাপমাত্রা ২৩ ডিগ্রি এবং সর্বোচ্চ ৩৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে।

জেলার বিভিন্ন এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এ বছর একটু আগেই শীতের আগমন হচ্ছে। সন্ধ্যার পর কুয়াশা পড়ছে। গাছের পাতা, ফসল ও ঘাস কিংবা খোলা আকাশের নিচে থাকা মোটরসাইকেল বা অন্য কোনো বস্তুতে পড়ে থাকা কুয়াশার ফোঁটা জানান দিচ্ছে শীতের আগমন। রাতের বেলা গাছের পাতা গড়িয়ে কুয়াশা ঘরের টিনের চালে পড়ছে টিপটিপ শব্দে। ভোরবেলা কুয়াশাচ্ছন্ন থাকছে চারপাশ। তবে সে তুলনায় শীতানুভূতি নেই। এখনো বৈদ্যুতিক পাখা ছাড়তে হচ্ছে বাসিন্দাদের। যদিও ইতিমধ্যে বাজারে ও সড়কের পাশের দোকানগুলোতে শীতের কাপড়ের পসরা সাজানো শুরু হয়েছে। যেন শীতকে বরণের প্রস্তুতি।

বিকেল হতেই শহরের বিভিন্ন মোড়ে মৌসুমি ব্যবসায়ীরা ভ্রাম্যমাণ দোকান বসিয়ে নানা রকম শীতের পিঠা তৈরি শুরু করেছেন। ভাপা পিঠার সঙ্গে চলছে চিতই পিঠা বিক্রি।

কুড়িগ্রাম শহরের বাসিন্দা মুকুল বলেন, এ বছর একটু আগাম কুয়াশা পড়তে শুরু করেছে। রাতে ঘরের বাইরে শীত অনুভূত হচ্ছে। সড়কে গাড়ি চালালে কুয়াশার কুণ্ডলীর কারণে পথ চলতে সমস্যা হচ্ছে। জেলায় ইতিমধ্যে শীত শুরু হয়েছে। তবে ঠান্ডা তুলনামূলক কম।

কুড়িগ্রামের ব্রহ্মপুত্র নদের চরাঞ্চলে সকালের কুয়াশা। ছবি: আজকের পত্রিকা
কুড়িগ্রামের ব্রহ্মপুত্র নদের চরাঞ্চলে সকালের কুয়াশা। ছবি: আজকের পত্রিকা

উলিপুর উপজেলার ব্রহ্মপুত্রের তীরবর্তী রসুলপুর গ্রামের বাসিন্দা মিজানুর বলেন, ‘রাতে ভালোই কুয়াশা পড়া শুরু হইছে। এখনো সেই অর্থে ঠান্ডা লাগে না। তবে বোঝা যাচ্ছে যে ঠান্ডা শুরু হচ্ছে।’

কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ আল-আমিন মাসুদ বলেন, ‘আজ (শনিবার) সকালে সড়কপথে চলার সময় কুড়িগ্রামের রাজারহাটে কুয়াশার মাত্রা দেখে মনে হয়েছে যেন পৌষ মাস শুরু হয়েছে। তবে দিনে গরম, কিন্তু রাতের তাপমাত্রা কমছে। এ সময় শিশুদের সুরক্ষায় বাড়তি যত্ন নেওয়া উচিত। রাতে বৈদ্যুতিক পাখার গতি কমিয়ে রাখাসহ শিশুদের বাইরে নিয়ে গেলে ধুলাবালু ও ঠান্ডা এড়িয়ে চলতে হবে।’

রাজারহাট আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুবল চন্দ্র সরকার বলেন, দিনের সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা কমছে। ইতিমধ্যে শীত শুরু হয়েছে। মধ্য নভেম্বর থেকে তাপমাত্রা ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নেমে শীতের তীব্রতা বাড়তে পারে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত