Ajker Patrika

হালদাপাড়ের মাটি ভাটায়, হুমকিতে মৎস্য প্রজনন

  • ইটভাটায় হালদার বালুমিশ্রিত মাটির চাহিদা
  • রাতের আঁধারে কাটা হচ্ছে পাড় ও চরের মাটি
  • ঝুঁকিতে বেড়িবাঁধের ১৫৭ কোটি টাকার সিসি ব্লক
নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম ও ফটিকছড়ি প্রতিনিধি
Thumbnail image
বিধিনিষেধ উপেক্ষা করে চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলায় হালদা নদীর পাড় কাটা হচ্ছে। এতে ক্রমেই অরক্ষিত হচ্ছে হালদা। সম্প্রতি তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা

উচ্চ আদালতের আদেশে দেশের একমাত্র প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজননক্ষেত্র হালদা নদীর সব বালুমহাল ইজারা প্রদান, বালু ও মাটি উত্তোলন, চর কাটা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। তবে এই বিধিনিষেধ উপেক্ষা করেই চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলায় হালদা নদীর পাড় কাটা হচ্ছে। এতে ক্রমেই অরক্ষিত হচ্ছে হালদা। ভাঙনের হুমকিতে রয়েছে এ নদী।

এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, স্থানীয় ইটভাটাগুলোয় হালদাপাড়ের বালুমিশ্রিত মাটির বিশেষ চাহিদা রয়েছে। আর এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে পাড় ও চরের মাটি বিক্রি করছে স্থানীয় কয়েকটি চক্র। সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা গেছে, উপজেলার পাইন্দং ইউনিয়নের ফকিরাচান ও যুগিনীঘাটা—এ দুটি এলাকায় দুটি স্পটে রাতের আঁধারে মাটি কেটে নেওয়ার ফলে গভীর খাদের সৃষ্টি হয়েছে। নির্বিচারে নদীর পাড় কাটার ফলে বিলীন হতে চলেছে বেড়িবাঁধ রক্ষায় নির্মিত ১৫৭ কোটি টাকার সিসি ব্লক। পাড় কাটা অংশ এতই গভীর ও প্রশস্ত যে, বর্ষাকালে সামান্য বৃষ্টিতে অনায়াসে প্লাবিত হবে বিস্তীর্ণ এলাকা।

মা মাছ থেকে পাওয়া ডিম ও উৎপাদিত রেণু এবং সেই রেণু থেকে মাছ—সব মিলিয়ে দেশের মৎস্য খাতে চার ধাপে জাতীয় অর্থনীতিতে অবদান রাখে হালদা। জাতীয় অর্থনীতিতে হালদার অবদান বছরে প্রায় ৮২১ কোটি টাকা; যা দেশের মোট মৎস্য উৎপাদনের ৬ শতাংশ বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে পুরো বিষয়টি এখন হুমকির মুখে। স্থানীয়রা বলছেন, প্রতিনিয়ত বালু উত্তোলন ও চর কাটার ফলে কিছুদিন আগেও ভয়াবহ বন্যায় বেড়িবাঁধ ভেঙে লোকালয়ে পানি ঢুকে প্লাবিত হয়েছে পার্শ্ববর্তী পাইন্দং, ভুজপুরসহ পুরো ফটিকছড়ি।

স্থানীয় বেশ কয়েকজনের অভিযোগ, অবৈধভাবে এ হালদার চর কাটার সঙ্গে জড়িত পাইন্দং ইউনিয়নের কয়েকটি চক্র। এ ইউনিয়নের অন্তত দুটি মাটিখেকো চক্র রাতের আঁধারে নদীর পাড় ও চর কেটে গভীর খাদ তৈরি করছে। একটি চক্রের হোতা কাজী কামাল এবং অপরটির হোতা আজম সিকদার।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে কাজী কামালকে ফোন করা হলে তিনি বলেন, ‘আমি বাগান করার জন্য অল্প কেটেছি। পরে কোনো ব্যক্তি রাতে মাটি চুরি করে নিয়ে গেছে, আমি জানি না।’ সেই ব্যক্তির পরিচয় জানতে চাইলে ক্ষিপ্ত হয়ে মোবাইলের কল কেটে দেন তিনি।

অন্যদিকে আজম সিকদার মিয়া চর কাটার বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, ‘আমি অল্প কেটেছি। বিভিন্নজন নিষেধ করার পর এখন আর কাটছি না।’

এই বিষয়ে চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক কলেজের জীববিজ্ঞান বিভাগের প্রধান ও সহকারী অধ্যাপক এবং হালদা গবেষক ড. মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘হালদার চর কাটার ফলে নদীর প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট হয় এবং গতিপথ পরিবর্তিত হতে পারে। এ ছাড়াও নদীর তলদেশে পলি জমতে পারে, যা গভীরতা কমিয়ে পানিপ্রবাহে বাধা সৃষ্টি করে এবং পানির গুণগত মান নষ্ট ও পানিকে দূষিত করে এবং জীববৈচিত্র্যের জন্য তা ক্ষতিকর হতে পারে। এর মধ্যে মাছের প্রজননস্থল ধ্বংস, উর্বর কৃষিজমি ধ্বংস, নদীর তলদেশের বাস্তুসংস্থান নষ্ট হওয়ার মতো ঘটনাও ঘটতে পারে।’

জানতে চাইলে ফটিকছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, ‘কোনো অবস্থাতেই হালদার পাড় কাটা কিংবা নদী থেকে বালু উত্তোলন করা যাবে না। এ বিষয়ে শক্ত বিধিনিষেধ রয়েছে। যাঁরা এ কাজ করছেন তাঁদের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট ধারায় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত