Ajker Patrika

শিক্ষকের সংকটে ধুঁকছে প্রাথমিক শিক্ষাব্যবস্থা

  • আইনি জটিলতায় শিক্ষক নিয়োগ বন্ধ পাঁচ বছর
  • সহকারী ও প্রধান শিক্ষকের শূন্য পদ হাজারের অধিক
  • এই কারণে শিক্ষাবঞ্চিত হচ্ছে পাহাড়ের শিশুরা
হিমেল চাকমা, রাঙামাটি 
আপডেট : ১৯ আগস্ট ২০২৫, ১২: ৩৫
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

আইনি জটিলতায় প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষক নিয়োগ দিতে পারছে না রাঙামাটি জেলা পরিষদ। পাঁচ বছর ধরে বন্ধ রয়েছে নিয়োগ কার্যক্রম। এতে সহকারী ও প্রধান শিক্ষকের হাজারের বেশি পদ শূন্য রয়েছে। শিশুরা বঞ্চিত হচ্ছে শিক্ষা থেকে। চাপ বেড়েছে শিক্ষকদেরও। পাশাপাশি বঞ্চিত হচ্ছেন চাকরিপ্রত্যাশীরা। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্রাথমিক শিক্ষার স্তর এভাবে নড়বড়ে থাকলে পাহাড়ের শিক্ষাব্যবস্থা ভেঙে পড়বে।

রাঙামাটির জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা হৃষীকেশ শীল বলেন, ‘২০২০ সাল থেকে শিক্ষক নিয়োগ বন্ধ। এর কারণে প্রাথমিক শিক্ষাব্যবস্থায় মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। রাঙামাটি জেলায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ৭০৭। এসব বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ৫০ হাজারের বেশি। সহকারী শিক্ষকের পদ খালি আছে ৬০২টি এবং প্রধান শিক্ষকের পদ খালি ৩৭৩টি। শূন্য পদের সংখ্যা প্রতিনিয়ত বাড়ছে। কিন্তু আমরা শূন্য পদ পূরণ করতে পারছি না।’

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগের তথ্যমতে, ১৯৯৭ সালের পার্বত্য চুক্তির আলোকে তিন পার্বত্য জেলা পরিষদের হাতে প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগ হস্তান্তর করা হয়। এই আইনে শিক্ষক নিয়োগ ও পদায়নের দায়িত্ব পায় জেলা পরিষদ। পাহাড়ের জেলা পরিষদের আইন অনুযায়ী চাকরিতে বয়সের সীমা নির্ধারণ করা হয় ৪০ বছর। কিন্তু ২০২০ সালে বয়সের সীমা কমিয়ে ৩০ বছর করলে অসন্তোষ বাড়ে। একপর্যায়ে এটি আদালত পর্যন্ত গড়ালে ২০২০ সাল থেকে শিক্ষক নিয়োগ কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়।

বরকল ধামাইছড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অমল চাকমা বলেন, বর্তমানে জেলার প্রাথমিক শিক্ষাব্যবস্থা অত্যন্ত করুণ। প্রতিটি বিদ্যালয়ে শিক্ষকের সংকট। দুর্গম এলাকার বিদ্যালয়গুলোয় সংকট আরও বেশি। সেসব বিদ্যালয় থেকে শিক্ষকেরা যোগাযোগব্যবস্থা একটু উন্নত স্কুলে বদলি হয়ে চলে আসায় সংকট চরম আকার ধারণ করেছে। কোথাও একজন, কোথাও দুজন শিক্ষক দিয়ে চলছে পাঠদান। এভাবে চলতে থাকলে পাহাড়ের শিক্ষাব্যবস্থা ভেঙে পড়বে।

সচেতন মহল বলছে, গুরুত্বপূর্ণ এই শিক্ষা বিভাগকে অবহেলার কারণে নতুন প্রজন্ম ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। গবেষক তনয় দেওয়ান বলেন, ‘আইনে স্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে যে প্রাথমিক শিক্ষকদের পার্বত্য চট্টগ্রামের স্থায়ী বাসিন্দা হতে হবে। আপাতদৃষ্টিতে অনেকে মনে করবে, জাতীয়ভাবে প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ হলে পাহাড়ে শিক্ষকের সংকট দূর হবে; আসলে সেটা নয়। এই এলাকার জন্য বিশেষ আইন রয়েছে। সে আইনে সমস্যার সমাধান না করলে এই সংকট আরও বাড়বে। শিক্ষক নিয়োগ কার্যক্রম বন্ধ থাকায় মাল্টিপল সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। চাকরিবঞ্চিত পাহাড়ের শিক্ষিত শ্রেণি। এখানে অর্থনীতি জড়িত। যদি আজ এক হাজারজনের চাকরি হতো, তাহলে তাদের সব দিক দিয়ে ভাগ্যেরও উন্নতি হতো। একটি পরিবার ঠিকানা পেত। কিন্তু সেটি আজ স্থবির। যে আইনি জটিলতা সৃষ্টি করে রাখা হয়েছে, এটি নিরসন করা জরুরি।’

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা হৃষীকেশ শীল বলেন, ‘উচ্চ আদালত যদি মামলাটি নিষ্পত্তি না করেন, তাহলে আমাদের কিছুই করার থাকবে না। আমাদের তো দাপ্তরিক কাজ আছে। এই মামলা নিষ্পত্তির জন্য কে আদালতের বারান্দায় বারান্দায় ঘুরবে।’

রাঙামাটি জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কাজল তালুকদার বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করছি মামলাটি নিষ্পত্তি করার; কিন্তু সেটি দেরি হচ্ছে।’

আরও খবর পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

তারা বড় হলে নিজেদের ভুল বুঝতে পেরে লজ্জিত হবে: সেনাপ্রধান

‘আমি যে মাপের লোক, আমারে সে মাপের অস্ত্র দিয়া ফাঁসাইতি’

অবশেষে ইকবালের পরিবারমুক্ত হলো প্রিমিয়ার ব্যাংক

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর হাসানুল বান্নার পদত্যাগ

‘হেল্প, হেল্প’ বলে চিৎকার—শিক্ষক এগিয়ে যেতেই গলায় ছুরি চালাল কিশোরী

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত