Ajker Patrika

হৃদয়ের মা-বাবার কষ্ট কখনো শেষ হবে না

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম
Thumbnail image

বাবা কাঠমিস্ত্রি। মা হার্টের রোগী হয়েও বাসা-বাড়িতে কাজ করেন। নিজেদের হাড়ভাঙা পরিশ্রমের টাকায় এ দম্পতি মানুষ করতে চেয়েছিলেন একমাত্র ছেলে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) শিক্ষার্থী হৃদয় চন্দ্র তরুয়াকে। ছেলেও চেয়েছিলেন একদিন মা-বাবার সব কষ্ট দূর করবেন। তাঁদের মুখে হাসি ফোটাবেন। ফোন করলেই তাঁদের সেই স্বপ্নের কথা বলতেন; কিন্তু একটি বুলেট সব শেষ করে দিল!

১৮ জুলাই চট্টগ্রামের বহদ্দারহাটে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশ ও ক্ষমতাসীনদের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। এ সময় গুলিবিদ্ধ হন চবির ইতিহাস বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী হৃদয়। চার দিন আইসিইউতে থাকার পর গত মঙ্গলবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যান তিনি। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, গুলিতে হৃদয়ের ফুসফুস ফুটো হয়ে গিয়েছিল।

হৃদয়ের বাড়ি পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ উপজেলায়। তাঁর বাবা রতন চন্দ্র তরুয়া, মা অর্থনা রানী। হৃদয়ের বড় বোন মিতু রানীর বিয়ে হয়েছে। মির্জাগঞ্জে হলেও পটুয়াখালীর সদরে নতুন বাজার এলাকায় ভাড়া থাকে হৃদয়ের পরিবার।

হৃদয়কে হারিয়ে পাগলপ্রায় মা-বাবা। পরিবারের জীবনযুদ্ধের কথা তুলে ধরেন তাঁর বড় বোন মিতু। তিনি বলেন, ‘মা বাসা-বাড়িতে কাজ করে জমানো টাকা হৃদয়ের জন্য পাঠাতেন। ও একদিন বড় হবে। চাকরি করবে, দুঃখ-দুর্দশা মুছবে—সেই আশায় ছিলাম সবাই।’

মিতু বলেন, ‘ভাইটা খুবই মেধাবী ছিল। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে যখন চান্স পায়, মা-বাবা প্রতিবেশী সবাইকে মিষ্টি খাইয়েছিলেন। হৃদয়ও জানত, তার ওপর কত বড় দায়িত্ব। বাবাকে ফোন করলেই বলত, বাবা আর কয়েকটা বছর। তারপর আর কষ্ট করতে হবে না।’

ছেলের মৃত্যুর খবরে কয়েকবার বেহুঁশ হয়েছেন অর্থনা রানী। হুঁশ ফিরলেই বিলাপ করছেন। কোনো কিছুতেই থামানো যাচ্ছে না তাঁকে।

মিতু বলেন, ‘আমার ভাই তো কোনো অস্ত্র তুলে নেয়নি। কাউকে আঘাতও করেনি। হয়তো, কোটা আন্দোলনে শরিক হয়েছিল। তাকে এভাবে গুলি করতে হবে? আমরা এর বিচার চাই।’

চবির ইতিহাস বিভাগের সভাপতি শামীমা হায়দার বলেন, ‘আহত হওয়ার পরদিন পার্ক ভিউ হাসপাতালে দেখতে গিয়েছিলাম। ওখানকার চিকিৎসকেরা জানান, হৃদয়ের বুকে গুলি একপাশ দিয়ে ঢুকে অন্যপাশ দিয়ে বের হয়ে গেছে। আমরা তাঁকে সার্বক্ষণিক সহযোগিতা করছিলাম; কিন্তু সে আমাদের ছেড়ে চলে গেছে।’

চট্টগ্রামের কোটা আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক মো. আরেফিন বলেন, ‘হৃদয়কে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। আমরা এর সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত