Ajker Patrika

মিরসরাইয়ে ১৪৪ ধারা ভেঙে বিএনপির দুপক্ষে সংঘর্ষ, পথচারী আরএফএল কর্মকর্তা নিহত

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম ও মিরসরাই প্রতিনিধি
সংঘর্ষে আহত ব্যক্তিদের কয়েকজন। ছবি: আজকের পত্রিকা
সংঘর্ষে আহত ব্যক্তিদের কয়েকজন। ছবি: আজকের পত্রিকা

চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলা ও দুই পৌরসভার কমিটি ঘোষণাকে কেন্দ্র করে বিএনপির দুই পক্ষের সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে এক পথচারী নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও অন্তত ৩০ জন। আজ বুধবার বারইয়ারহাট পৌর বাজারে এ সংঘর্ষ ঘটে।

নিহত পথচারী মো. জাবেদ (৪৫) চট্টগ্রামের বায়েজিদ থানার বাংলাবাজারের নীলগিরি আবাসিক এলাকার জাহাঙ্গীর ও জাহিদা বেগমের ছেলে। তিনি আরএফএল গ্রুপের মার্কেটিং অফিসার হিসেবে কাজ করতেন বলে জানা গেছে।

আহত ব্যক্তিদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পাশাপাশি বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।

প্রথমে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নেন আহত সুমন (৩৫), ফজলুল করিম (৪৩), জাহেদুল ইসলাম (৪২), শহিদুল ইসলাম (৫১), ওমর ফারুক (৩৫), দিদার (৩৭), আবু সুফিয়ান (৪০), ফাহিম (২২), এরশাদ (৪০), গোলাম মোর্শেদ (৪০), রাশেদ (৫০), দিদারুল আলম চৌধুরী (৪০) ও ইলয়াস (৫০)। তাঁদের মধ্যে সুমন, গোলাম মোর্শেদ, ইলিয়াস হোসেন ও রাশেদকে পরে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। আহত ব্যক্তিদের সবাই ধারালো ছুরির আঘাতে জখম হয়েছেন বলে জানা গেছে।

এ ছাড়া আহত ছয়জন বারইয়ারহাট জেনারেল হাসপাতালে ও পাঁচজন বারইয়ারহাট মেডিকেল সেন্টারে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন।

মিরসরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগে দায়িত্বরত চিকিৎসক রাজিয়া আফরিন বলেন, মো. জাবেদ নামের একজনকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়েছিল। তাঁর পেটে ছুরিকাঘাত ছিল। এ ছাড়া ১০-১২ জনকে আহত অবস্থায় আনা হয়। আহত ব্যক্তিদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।

দলীয় ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ২৪ মার্চ চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক গোলাম আকবর খোন্দকার মিরসরাই উপজেলা, মিরসরাই পৌর ও বারইয়ারহাট পৌর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করেন। কমিটি ঘোষণার পরপর চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল আমিন চেয়ারম্যানের সমর্থিত পদবঞ্চিত নেতা–কর্মীরা উপজেলার বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ মিছিল করেন। পরদিন গতকাল মঙ্গলবার কমিটি বাতিলের দাবিতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ, ঝাড়ু মিছিল ও সমাবেশ করেছেন নুরুল আমিন চেয়ারম্যানের সমর্থিত নেতা–কর্মীরা।

এদিকে আজ স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল আমিন ও আরেক যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল আমিন চেয়ারম্যানের গ্রুপের কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে উপজেলা পরিষদ চত্বর ও এর আশপাশের ৫০০ গজের মধ্যে ১৪৪ ধারা জারি করে উপজেলা প্রশাসন। ওই এলাকায় কোনো ধরনের সভা, সমাবেশ, মিছিল, গণজমায়েত, বিস্ফোরকদ্রব্য, আগ্নেয়াস্ত্র, দেশীয় অস্ত্র বহনসহ একত্রে পাঁচজনের বেশি লোক চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়।

এর মধ্যে আজ দুপুর ১২টার দিকে নুরুল আমিন চেয়ারম্যান গ্রুপের উপজেলা বিএনপির সাবেক সদস্যসচিব গাজী নিজাম উদ্দিনের নেতৃত্বে সহস্রাধিক নেতা–কর্মী শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। এ সময় দলীয় বিভিন্ন স্লোগান দিয়ে বিএনপি নেতা–কর্মীরা মিছিল দিতে থাকেন। পুষ্পস্তবক অর্পণ শেষে মিছিলসহ বিএনপি নেতা–কর্মীরা উপজেলা সদর ত্যাগ করেন। পরে সেনাবাহিনীর সদস্যরা উপজেলা পরিষদ চত্বরে অবস্থান নেন।

উপজেলা বিএনপির সদস্যসচিব আজিজুর রহমান চৌধুরী বলেন, ‘আজ সকাল ১০টায় বারইয়ারহাট পৌরসভা বিএনপির আহ্বায়ক মাঈন উদ্দিন লিটনের বাড়ির সামনে আমাদের নেতাকর্মীদের পথরোধ করে হামলা, মোটরসাইকেল ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। দুপুর ১২টায় আমরা নেতা–কর্মীদের নিয়ে মিছিলসহকারে বারইয়ারহাট পৌর বাজারে প্রবেশ করলে নুরুল আমিন চেয়ারম্যান গ্রুপের লোকজন আমাদের ওপর সশস্ত্র হামলা চালায়। এ সময় জাবেদ নামের একজন পথচারী তাদের হামলায় ঘটনাস্থলে নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও ৯ জন।’

বারইয়ারহাট পৌরসভা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক দিদারুল আলম মিয়াজী বলেন, ‘আজ বেলা ১১টায় পৌর বিএনপির আহ্বায়ক মাঈন উদ্দিন লিটনের বাড়ির সামনে বিএনপির নেতা মোজাম্মেল হোসেনসহ আমাদের নেতা–কর্মীদের ওপর উপজেলা বিএনপির সদস্যসচিব আজিজুর রহমান চৌধুরী ও মাঈন উদ্দিন লিটনের নেতৃত্বে হামলা হয়। স্বাধীনতা দিবসে বারইয়ারহাট ডিগ্রি কলেজের শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করার জন্য আমরা নেতা–কর্মীদের নিয়ে অবস্থান করছিলাম। শান্তিরহাট রোডের মুখে তাদের সঙ্গে আমাদের নেতা–কর্মীদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় মো. জাবেদ নামের এক পথচারী নিহত হন। সংঘর্ষে যুবদল ও ছাত্রদলের সুমন, বাবুল, মিজান, নুর উদ্দিন, আরিফসহ ৮-১০ জন আহত হয়েছেন।’

বারইয়ারহাট পৌর বিএনপির আহ্বায়ক মাঈন উদ্দিন লিটন বলেন, ‘আজ সকালে দিদারুল আলম মিয়াজীর নেতৃত্বে সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা আমাদের নেতা–কর্মীদের ওপর হামলা করে। এ সময় ১০-১৫ জন আহত হয়। হামলার পর দুপুরে তারা আমাদের বাড়িতে গিয়েও ভাঙচুর চালায়। আজ বিকেল পর্যন্ত বারইয়ারহাট পৌরবাজারে তারা সশস্ত্র অবস্থানে ছিল।’

এদিকে স্বাধীনতা দিবসে আজ উপজেলা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে উপজেলা প্রশাসন, উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড, মিরসরাই প্রেসক্লাব পুষ্পস্তবক অর্পণ করেছে। ১৪৪ ধারার আদেশ থাকায় সামাজিক সংগঠনসহ বিভিন্ন সংগঠন ফুল দিতে আসেনি। তবে ১৪৪ ধারা ভেঙে বিএনপির নেতা নুরুল আমিন চেয়ারম্যান গ্রুপের গাজী নিজাম উদ্দিনের নেতৃত্বে সহস্রাধিক নেতা–কর্মী শহীদ মিনারে ফুল দেন। এ ছাড়া নিজামপুর সরকারি কলেজের সামনে শহীদ মিনারে উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবদুল আউয়াল চৌধুরী ও যুগ্ম আহ্বায়ক সালাহ উদ্দিন সেলিমের নেতৃত্বে নেত—কর্মীরা পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।

উপজেলা বিএনপির সাবেক সদস্যসচিব গাজী নিজাম উদ্দিন বলেন, ‘আমরা শান্তিপূর্ণভাবে ১৪৪ ধারা ভেঙে শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেছি। ফুল দেওয়াকে কেন্দ্র করে ১৪৪ ধারা জারির মতো কোনো পরিস্থিতি আজ ছিল না। প্রশাসন কেন ১৪৪ ধারা জারি করেছে, সেটি বোধগম্য নয়।’

জোরারগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাব্বির মোহাম্মদ সেলিম বলেন, বিএনপির কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে দুদিন ধরে উত্তেজনা চলে আসছে। আজ সকালে বারইয়ারহাট পৌরবাজারে বিএনপির দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় মো. জাবেদ নামের এক পথচারী নিহত হয়েছেন। আহত হন আরও ৮-১০ জন। পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।

মিরসরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাহফুজা জেরিন বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির যাতে বিঘ্ন না ঘটে, সে জন্য আজ সকাল ৮টা থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত উপজেলা পরিষদ চত্বর ও এর আশপাশের ৫০০ গজের মধ্যে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছিল। কিন্তু আজ দুপুর ১২টায় বিএনপির একটি গ্রুপের নেতা–কর্মীরা ১৪৪ ধারা ভেঙে মিছিল নিয়ে উপজেলা পরিষদ চত্বরে প্রবেশ করেছে। মিছিলের ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে। এ বিষয়ে পরে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। জোরারগঞ্জ থানার ওসিকে কঠোর ভূমিকা নেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সেনাবাহিনীর টহল কার্যক্রম বাড়ানোর জন্য বলা হয়েছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত