Ajker Patrika

থানায় দুদকের সাবেক কর্মকর্তার মৃত্যু: মামলায় অভিযুক্ত ওসি ছুটিতে, আরেক কর্মকর্তা বদলি

সোহেল মারমা, চট্টগ্রাম
থানায় দুদকের সাবেক কর্মকর্তার মৃত্যু: মামলায় অভিযুক্ত ওসি ছুটিতে, আরেক কর্মকর্তা বদলি

চট্টগ্রামে থানা হেফাজতে দুদকের সাবেক উপপরিচালকের মৃত্যুর ঘটনায় মামলার পরপরই অভিযুক্ত চান্দগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খাইরুল ইসলাম ছুটি নিয়ে চলে গেছেন। আরেক অভিযুক্ত একই থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মনিবুর রহমানকে বদলি করা হয়েছে। 

গতকাল সোমবার (১৬ অক্টোবর) রাতেই চান্দগাঁও থানায় এই ছুটি ও বদলি প্রক্রিয়া দ্রুত সম্পন্ন হয়েছে। এর আগে ওই দিন দুপুরে চট্টগ্রাম আদালতে এই দুই পুলিশ কর্মকর্তাসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে সাবেক দুদক কর্মকর্তার মৃত্যুর ঘটনায় মামলা হয়েছিল। 

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ওই মামলার পরপর রাতেই অভিযুক্ত ওসিসহ দুজনই থানা ছেড়ে চলে গেছেন। ওই দিন রাতেই থানার নতুন পরিদর্শক (তদন্ত) হিসেবে দায়িত্ব নেন সুবেদ আলী। 

জানতে চাইলে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের উপকমিশনার (উত্তর) মোখলেছুর রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ছুটির পাওয়ার পর যে কেউ চলে যেতে পারে। আর বদলির বিষয়টি স্বাভাবিক প্রক্রিয়ার একটি অংশ। বর্তমানে চান্দগাঁও থানায় নতুন পরিদর্শক তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে মো. সবেদ আলীকে। 

চান্দগাঁও থানায় নতুন পরিদর্শক (তদন্ত) দায়িত্বে পাওয়া সবেদ আলী আজ মঙ্গলবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘হঠাৎ করেই আমাকে বদলি করে চান্দগাঁও থানায় আনা হয়েছে। আমি বেশি কিছু জানি না।’ 

গত ৩ অক্টোবর রাতে চট্টগ্রাম নগরের চান্দগাঁও থানাধীন এক কিলোমিটার এলাকায় গৃহকর্মীকে মারধর ও হত্যার হুমকির অভিযোগে নিজ বাসা থেকে দুদকের সাবেক উপপরিচালক সৈয়দ মোহাম্মদ শহীদুল্লাকে গ্রেপ্তার করে চান্দগাঁও থানায় আনেন সাদা পোশাকে আসা দুই পুলিশ সদস্য। 

ওই মামলার বাদী ছিলেন রনি আক্তার তানিয়া নামে এক নারী। ওই দিন রাত ১২টা নাগাদ পরে থানা হেফাজতে থাকা অবস্থায় একটি বেসরকারি হাসপাতালে নেওয়া হলে সেখানে চিকিৎসক দুদক কর্মকর্তাকে মৃত ঘোষণা করেন। 

ওই ঘটনায় গত সোমবার (১৬ অক্টোবর) দুপুরে চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ ড. বেগম জেবুন্নেছার আদালতে নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইনে চান্দগাঁও থানার ওসিসহ নয়জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। মামলার বাদী ছিলেন নিহতের স্ত্রী ফৌজিয়া আনোয়ার। এ সময় আদালত মামলাটি এজাহার হিসেবে গণ্য করতে সংশ্লিষ্ট থানাকে নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে মামলাটি পিবিআইকে তদন্তের আদেশ দেন। 

মামলায় অভিযুক্তরা হলেন চান্দগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খাইরুল ইসলাম, একই থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. মবিনুল হক, সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) মো. ইউসফ, সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) সোহেল রানা, চান্দগাঁও এক কিলোমিটার এলাকার স্থানীয় আওয়ামী লীগ রাজনীতিতে জড়িত এস এম আসাদুজ্জামান, একই এলাকার যুবলীগের মো. জসীম উদ্দিন, মো. লিটন, রনি আক্তার তানিয়া ও কলি আক্তার। 

এদের মধ্যে চান্দগাঁও থানায় কর্মরত থাকা সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) মো. ইউসুফ ও সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) সোহেল রানাকে দুদক কর্মকর্তার মৃত্যুর ঘটনার পরপরই থানা থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। 

এ ছাড়া নিহত দুদক কর্মকর্তার স্ত্রী করা মামলায় অভিযুক্ত রনি আক্তার তানিয়া গত সোমবার নিজের করা মামলাটি মিথ্যা বলে তা প্রত্যাহারের জন্য আদালতে আবেদন করেন। চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম শরীফুল ইসলামের আদালতে করা এই মামলা প্রত্যাহারের আবেদন আদেশের জন্য অপেক্ষমাণ রাখা হয়েছে। 

রনি আক্তার তানিয়ার করা এই মামলায় সাবেক দুদক কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করে থানায় নিয়ে এসেছিল পুলিশ। রনি আক্তার হলেন মারধর ও হত্যার হুমকির অভিযোগে নিহত দুদক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার বাদী। 

এ ছাড়া সাবেক দুদক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে রনি আক্তারের করা মামলায় আদালত কর্তৃক জারি করা সমন আটকে রাখার অভিযোগে চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম-৬ আদালতের বেঞ্চ সহকারী হারুন উর রশীদকে বদলি করেন সংশ্লিষ্ট আদালতের বিচারক। 

নিহত দুদক কর্মকর্তার স্ত্রীর করা মামলার অভিযোগে বলা হয়, ভুক্তভোগী শহীদুল্লাহ দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সাবেক উপপরিচালক (ডিডি) ছিলেন। ২০১৮ সালে তিনি অবসর নেন। তিনি নগরের চান্দগাঁও থানার এক কিলোমিটার এলাকায় থাকতেন। সেখানে জমি নিয়ে স্থানীয় কয়েকজনের সঙ্গে তাঁর বিরোধ চলছিল। 

এর জের ধরে গত ২৯ আগস্ট দুদকের সাবেক কর্মকর্তা সৈয়দ মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ ও তাঁর শ্যালক মোহাম্মদ কায়সার আনোয়ারের বিরুদ্ধে আদালতে একটি মিথ্যা মামলা করেন রনি আক্তার তানিয়া নামে এক নারী। মামলার অভিযোগ শুনে বিচারক ওই দিনই অপরাধ আমলে নিয়ে অভিযুক্ত দুজনের বিরুদ্ধে সমন জারি করেন। ওই সমন সংশ্লিষ্ট আদালতের বেঞ্চ সহকারী হারুন অর রশীদ গায়েব করে ফেলেন। ফলে আদালতে হাজির হওয়ার কোনো সমন আসামিরা পায়নি। 

এরপর মামলার পরবর্তী তারিখ দেন আদালত। ওই তারিখে মামলার বাদী হাজির না হওয়ায় তাঁর আইনজীবী সময় চেয়ে আবেদন করেন। কিন্তু ওই দিনই আদালত সাবেক দুদক কর্মকর্তাসহ দুই আসামির বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট জারি করে দেন। এরপর গত ৩ অক্টোবর দিবাগত রাতে শহীদুল্লাহকে আদালতের ওয়ারেন্ট দেখিয়ে গ্রেপ্তার করে টেনে-হিঁচড়ে নিয়ে যায় চান্দগাঁও থানা-পুলিশ। 

থানায় নেওয়ার পর অভিযুক্ত পুলিশ কর্মকর্তারা অন্যান্য বিবাদীদের যোগসাজশে থানার ভেতরে ভুক্তভোগী শহীদুল্লাহকে গালিগালাজ ও মানসিক নির্যাতন করেন। এমনকি ভুক্তভোগীকে পরিবারের লোকজন ওষুধ দিতে চাইলে থানার পুলিশ কর্মকর্তারা সেগুলো পৌঁছাতে দেয়নি। তাঁরা থানার গেট বন্ধ করে দেন। একপর্যায়ে রাত ১২টা নাগাদ থানার ভেতরে ওসির রুমে শহীদুল্লাহ মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। এ সময় অভিযুক্তরা নিজেদের অপরাধ ঢাকতে থানার বাইরে থাকা নিহতের আত্মীয়স্বজনদের কাছে শহীদুল্লাকে তুলে দেয়। পরে স্বজনেরা দ্রুত তাঁকে একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক শহীদুল্লাকে মৃত ঘোষণা করেন। 

এর আগে ওই কর্মকর্তার মৃত্যুর ঘটনার পর নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে চান্দগাঁও থানায় মামলা করতে গেলে তা নেওয়া হয়নি বলেন নিহতের স্বজনেরা অভিযোগ করেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

দিনাজপুরে হিন্দু নেতাকে অপহরণ করে হত্যা: ভারত সরকার ও বিরোধী দল কংগ্রেসের উদ্বেগ

লুটপাটে শেষ ৫ কোটির প্রকল্প

আজ থেকে ৫০০ টাকায় মিলবে ১০ এমবিপিএস গতির ইন্টারনেট

যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ৫ হাজার শিক্ষার্থীর ভিসা বাতিল, বেশির ভাগই ভারতীয়, আছে বাংলাদেশিও

বৃদ্ধের চার বিয়ে, থানায় স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার জেরার মুখে হাসির রোল

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত