Ajker Patrika

মুক্তিপণ দিয়েও দুই বছরে ফেরেনি সন্তান, প্রশাসনের দিকে তাকিয়ে মা–বাবা 

আবু বকর ছিদ্দিক, চট্টগ্রাম
Thumbnail image

বয়োবৃদ্ধ বাবা নুর আহাম্মদের (৭০) জীবনের শেষ ইচ্ছা তাঁর কলেজপড়ুয়া ছেলে নুর উদ্দিনের সাগরকে (২১) দেখার। ছেলে জীবিত নাকি মৃত তা জানার। সে জন্য সব দপ্তরের দুয়ারে দুয়ারে ঘুরেছেন। কিন্তু দুর্বৃত্তদের হাতে অপহৃত হওয়ার পর তিন লাখ টাকা মুক্তিপণ পরিশোধ করেও প্রায় দুই বছর হতে চলছে। তিনি আজও ছেলের খোঁজ পাননি।

নুর আহাম্মদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমার ছেলের খবর জানতে খাগড়াছড়ির মানিকছড়ির বাটনাতলি ক্যাম্পে গেছি ৫ বার, লক্ষ্মীছড়ি জোনে গেছি ৩ বার, হাটহাজারী র‍্যাব অফিসে গেছি ৮ বার, স্টিল মিল র‍্যাব (র‍্যাব-৭ হেড অফিস) অফিসে গেছি ৩ বার। খাগড়াছড়ি পুলিশ সুপারের কাছে গেছি ১ বার। আর মানিকছড়ি থানায় কতবার গেছি তার হিসেব নাই।’

নুর আহাম্মদ আরও বলেন, ‘এখন আমি আর ভালোভাবে চলতে পারি না। মাঝখানে স্বামী–স্ত্রী দুজনই স্ট্রোক করেছি। এই শেষ জীবনে ছেলে নুর উদ্দিন সাগর জীবিত না মৃত–তা জানতে ইচ্ছে করে। মুক্তিপণের ৩ লাখ টাকা পরিশোধ করেও অপহরণের ২২ মাসেও কোনো খোঁজ পাচ্ছি না আমার ছেলের। পড়াশোনার ফাঁকে সে একটি মুরগি খামার করত।’

পরিবারের অভিযোগ, ২০২১ সালের ২৩ মে রাতে খাগড়াছড়ির মানিকছড়ি উপজেলার বাটনাতলির খামারবাড়ি থেকে নুর উদ্দিনকে অপহরণ করে দুর্বৃত্তরা। অপহরণকারীরা তাঁর কুয়েত প্রবাসী বাবার মোবাইল ফোনে কল করে। ভয়েস রেকর্ড পাঠিয়ে পাঁচ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করেন। পরে বিভিন্ন মাধ্যমে নুর উদ্দিনের পরিবারের পক্ষ থেকে তিন লাখ টাকা পরিশোধ করা হয়। তবু আজও খোঁজ পাওয়া যায়নি নুর উদ্দিনের।

এ ঘটনায় ২০২১ সালের ৩ জুন নুর উদ্দিনের ভাই মো. সালাউদ্দিন মানিকছড়ি থানায় একটি মামলা করেন। পুলিশ জানায়, মামলার পর পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে আসামিরা জামিনে বেরিয়ে যান। 

মানিকছড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনচারুল করিম বলেন, ‘অপহৃত নুর উদ্দিনের সাগরকে নিয়ে আমরা আর কাজ করছি না। কারণ মামলাটি এখন পিবিআই তদন্ত করছে। তা ছাড়া আমি মানিকছড়ি থানায় বদলি আসছি এক মাস আগে। পিবিআইয়ের তদন্ত কর্মকর্তা মো. মণির হোসেন বলেন, ‘মামলাটি বর্তমানে তদন্তাধীন রয়েছে। তদন্ত অবস্থায় কিছু বলা যাবে না।’ 

এর আগে পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন লক্ষ্মীছড়ি উপজেলার মগাইছড়ি এলাকার আফসার আলী, মো. রনি, চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলার বাজালিয়া এলাকার মাইকেল মহাজন, চন্দনাইশ উপজেলার দিয়ারকুল এলাকার মোহাম্মদ হাছান এবং সাতকানিয়া উপজেলার জনারকেউচিয়া এলাকার ইয়াছিন আরাফাত। 

এদের মধ্যে আফসার আলী ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় ভুক্তভোগীর পরিবারের কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা নিয়েছেন মর্মে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। এদিকে মাইকেল মহাজন ও মোহাম্মদ হাছান বিকাশে ভুক্তভোগীর পরিবারের কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা নিয়েছেন বলে স্বীকার করেছেন। 

জবানবন্দিতে আসামিরা নূর উদ্দিনের পরিবারের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার কথা স্বীকার করলেও অপহরণের ঘটনায় জড়িত নেই বলে আদালতে জানায়। তাঁরা প্রতারণার উদ্দেশ্যে অপহৃত পরিবারকে ফোন দিয়ে টাকা দাবি করেছিলেন বলেও জানায়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত