Ajker Patrika

কালুরঘাট সেতুতে দুর্ঘটনা: দায়ী করা হচ্ছে ট্রেনচালককে

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম
গতকাল রাতে চট্টগ্রামের কালুরঘাট সেতুতে ট্রেন দুর্ঘটনা। ছবি: আজকের পত্রিকা
গতকাল রাতে চট্টগ্রামের কালুরঘাট সেতুতে ট্রেন দুর্ঘটনা। ছবি: আজকের পত্রিকা

চট্টগ্রামের কালুরঘাট সেতুর (রেল কাম সড়ক) ওপর পর্যটক এক্সপ্রেস ট্রেনের সঙ্গে একই সেতুতে চলাচলকারী বিভিন্ন যানবাহনের সংঘর্ষে তিনজন নিহতের ঘটনায় প্রাথমিকভাবে চালকের অবহেলাকে দায়ী করা হচ্ছে।

প্রত্যক্ষদর্শী স্থানীয় ও রেলওয়ে কর্মকর্তারা জানান, রেল কাম সড়ক এই কালুরঘাট সেতুর ওপর ট্রেন চললে অন্যান্য যানবাহন সেতুর দুপারে থাকা সিগন্যাল লাইনে ট্রেন চলে যাওয়ার অপেক্ষায় থাকে। নিয়ম অনুযায়ী সেতুতে ওঠার আগে ট্রেনচালক লাইনম্যানের সংকেত নেওয়ার কথা ছিল, কিন্তু ট্রেনচালক সেই নিয়ম উপেক্ষা করে সোজা সেতুতে উঠে যান। ওই সময় সেতুর ওপর একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশা নষ্ট হয়ে যানজট অবস্থায় ছিল। ট্রেনটির ধাক্কায় ক্ষতিগ্রস্ত হয় সেতুর ওপরে থাকা সিএনজি অটোরিকশা, মোটরসাইকেল, মাইক্রোবাসসহ বিভিন্ন যানবাহন।

গত বৃহস্পতিবার (৫ জুন) রাত সোয়া ১০টা নাগাদ কর্ণফুলী নদীর ওপর নির্মিত শতবর্ষী পুরোনো সেতুটিতে এ ঘটনা ঘটে। এতে অটোরিকশাসহ বিভিন্ন যানবাহনের তিনজন নিহত ও পাঁচজন আহত হন।

নিহতদের মধ্যে দুই বছর বয়সী আয়েশা ও মোহাম্মদ তুষার নামে এক যুবকের নাম জানা গেছে। নিহত অন্যজনের নাম এখনো জানা যায়নি।

আহতদের মধ্যে আসিফ উদ্দিন বাপ্পি, আসমা আহমেদ ও আঞ্জুমান আরার নাম জানাতে পেরেছে পুলিশ। তাঁরা সবাই বর্তমানে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন।

চট্টগ্রামের জালানিহাট রেলস্টেশনের মাস্টার মো. নেজাম উদ্দিন বলেন, ট্রেনটি রাত ১০টা ১০ মিনিটে কালুরঘাট রেলসেতুর অদূরে পৌঁছায়। ওই সময় সেতুর ওপরে একটি সিএনজি অটোরিকশা নষ্ট হয়ে গেলে যানজট তৈরি হয়। আমরা তখনই লাল সিগন্যাল দিই। গার্ডও হাতে লাল পতাকা নিয়ে সিগন্যাল দেন। কিন্তু চালক সিগন্যাল মানেননি। কালুরঘাট ব্রিজটি ডেড স্টপেজ হিসেবে চিহ্নিত। এখানে ট্রেন থামিয়ে ধীরে ব্রিজে ওঠার নিয়ম। চালক তা মানেননি।’

জালানিহাট স্টেশনের দায়িত্বপ্রাপ্ত গার্ড মো. মাহবুব বলেন, ‘আমি নিজেই সেতুর মুখে গিয়ে ট্রেন থামাতে লাল পতাকা নাড়িয়ে সংকেত দিই। তবু ট্রেনচালক সেটি উপেক্ষা করে গেছেন।’

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ট্রেনের সঙ্গে সংঘর্ষে কালুরঘাট সেতুর ওপর থাকা সিএনজি অটোরিকশা, মাইক্রোবাস ও কয়েকটি মোটরসাইকেল দুমড়ে-মুচড়ে যায়। ঘটনার পরপরই স্থানীয়রা আহতদের উদ্ধারে এগিয়ে আসেন। খবর পেয়ে রাত পৌনে ১১টার দিকে কালুরঘাট ফায়ার স্টেশন থেকে কয়েকটি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। একই সঙ্গে বোয়ালখালী থানার পুলিশ ও রেলওয়ে পুলিশ উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করে। চান্দগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আফতাব উদ্দিন জানান, দুর্ঘটনায় তিনজন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে একজন শিশু। কয়েকজন আহত আছেন। হতাহত সবাইকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

জানা যায়, নিহত শিশু আয়েশা হলো নুর মিঠু ও ফেরদৌস ইসরা দম্পতির একমাত্র সন্তান। দুর্ঘটনার পর মেয়েকে হারিয়ে সাজ্জাদ নূর মিঠুর আহাজারিতে ভারী হয়ে ছিল পুরো এলাকা।

ঘটনাস্থলে মিঠু সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা অটোরিকশায় ছিলাম। এটা একেবারে শেষে ছিল। আমাদের সামনে একটা টেম্পো ছিল। ট্রেনের চালক বারবার হর্ন দিচ্ছিলেন। লাইনম্যান ব্রিজের ওপর চলে আসেন। টেম্পোটা ক্রস করে চলে যায়। কিন্তু আমাদের অটোরিকশা আটকে যায়। তিনি বলেন, আমি জানি না এটা কাদের গাফিলতি। তবে কর্তৃপক্ষ এর জন্য দায়ী। আমার একটাই দাবি, এই সেতুতে আমি আর ট্রেন চলতে দেব না। যদি চলে, তবে আমি আমার জীবন দিয়ে দেব। আমি আল্লাহর গজব দিচ্ছি। আমার ২ বছরের বাচ্চা। আমার ৩০ বছর বয়স, আমি গোনাহ করেছি, কিন্তু সে তো নিষ্পাপ।’

চট্টগ্রাম নগরীর সঙ্গে বোয়ালখালী ও পটিয়া উপজেলার একাংশের যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম বর্তমান কালুরঘাট সেতুটি প্রায় শতবর্ষী। সড়কপথের সব ধরনের যানবাহনের পাশাপাশি এই সেতু দিয়ে ট্রেনও চলাচল করে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত