Ajker Patrika

চট্টগ্রামে হাইকোর্টের বেঞ্চ চান আইনজীবী-সাংবাদিকেরা

 নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম
চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে মতবিনিময় সভায় অতিথিরা। ছবি: আজকের পত্রিকা
চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে মতবিনিময় সভায় অতিথিরা। ছবি: আজকের পত্রিকা

চট্টগ্রামে হাইকোর্ট বিভাগের একটি বেঞ্চ স্থাপন এখন সময়ের দাবি বলে মন্তব্য করেছেন আইনজীবী ও সাংবাদিকেরা। তাঁরা বলেছেন, দেশের সিংহভাগ অর্থনীতির জোগান দিলেও সাংবিধানিকভাবে প্রাপ্য আইনি অধিকার ও ন্যায়বিচার থেকে চট্টগ্রামের প্রায় ৩ কোটি মানুষ বঞ্চিত হচ্ছেন।

আজ শনিবার চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় তাঁরা এ দাবি তোলেন। চট্টগ্রামে হাইকোর্ট বেঞ্চ বাস্তবায়ন পরিষদ ও চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব যৌথভাবে এর আয়োজন করে।

চট্টগ্রামে হাইকোর্ট বেঞ্চ বাস্তবায়ন পরিষদের সভাপতি অ্যাডভোকেট এ এস এম বদরুল আনোয়ারের সভাপতিত্বে এবং পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট কাশেম কামাল ও চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সদস্যসচিব জাহিদুর করিম কচির সঞ্চালনায় সভায় বক্তারা চট্টগ্রামে হাইকোর্ট বেঞ্চ স্থাপনের যৌক্তিকতা তুলে ধরেন।

অ্যাডভোকেট বদরুল আনোয়ার বলেন, চট্টগ্রাম ২০০৩ সালে দেশের বাণিজ্যিক রাজধানী ঘোষিত হয়। দেশের বৃহত্তম বিভাগ, বৃহত্তম সমুদ্রবন্দর, রপ্তানি বাণিজ্যের ৭৫ ভাগ ও আমদানি বাণিজ্যের ৮০ ভাগ চট্টগ্রামে সম্পন্ন হয়। রাজস্ব আয়ের ৬০ ভাগ ও জিডিপির ১২ ভাগ আসে চট্টগ্রাম থেকে। এত কিছুর পরেও চট্টগ্রামবাসী সর্বোচ্চ আদালতের আশ্রয়লাভের সাংবিধানিক অধিকার থেকে বঞ্চিত।

বদরুল আনোয়ার উল্লেখ করেন, সংবিধানের ১০০ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি ও প্রধান বিচারপতি দেশের যেকোনো স্থানে হাইকোর্টের অধিবেশন অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করতে পারেন। এ ছাড়া সংবিধানের প্রস্তাবনা ও ১৯(১), ২৭ ও ৩১ অনুচ্ছেদ সব নাগরিকের জন্য আইনের শাসন, সমান আশ্রয়লাভের অধিকার ও সুযোগের সমতা নিশ্চিত করার কথা বলে।

সভায় উপস্থাপিত তথ্যে বলা হয়, বর্তমানে দেশে বিচারাধীন প্রায় ৬০ লাখ মামলার মধ্যে হাইকোর্টে রয়েছে ৬ লক্ষাধিক। এর মধ্যে কেবল শুল্ক, ভ্যাট ও আয়করসংক্রান্ত ২৫ হাজার মামলায় সরকারের প্রায় ৩১ হাজার কোটি টাকা আটকে আছে, যার ৭০ শতাংশই চট্টগ্রাম বন্দর ও বাণিজ্যসংক্রান্ত।

বক্তারা অভিযোগ করেন, ঢাকায় একমাত্র বেঞ্চ হওয়ায় মামলা পরিচালনায় স্বাভাবিকের চেয়ে ৩-৪ গুণ বেশি খরচ হয়, প্রতারণার শিকার হয়ে অনেকে ১০-২০ গুণ অতিরিক্ত অর্থ হারান। এতে সাধারণ মানুষ, বিশেষ করে, দরিদ্র বিচারপ্রার্থীরা ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। পাশাপাশি বন্দর ও কাস্টমসের মামলা পরিচালনায় সরকারেরও অতিরিক্ত ব্যয় হচ্ছে।

তাঁরা আন্তর্জাতিক উদাহরণের কথা তুলে ধরে বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রধান বন্দরের শহরেই অ্যাডমিরালটি, কোম্পানি আইনসংক্রান্ত এখতিয়ারসহ হাইকোর্টের বেঞ্চ স্থাপিত হয়েছে। যেমন সাংহাই, মুম্বাই, রটারডাম ও হামবুর্গ। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত, পাকিস্তানসহ যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়াতেও একাধিক সার্কিট বেঞ্চ কার্যকর রয়েছে।

চট্টগ্রাম রিপোর্টার্স ফোরামের সভাপতি কাজী মনসুর বলেন, হাইকোর্ট বেঞ্চ বাস্তবায়নে সৃষ্ট বাধা ভাঙতে ও জনগণের অধিকার ফিরিয়ে দিতে বাস্তবায়ন পরিষদ ও সিনিয়র সাংবাদিকদের আরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে হবে।

বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) চট্টগ্রাম ব্যুরোপ্রধান মোহাম্মদ শাহনেওয়াজ বলেন, ঐতিহাসিকভাবে কলকাতাকেন্দ্রিক স্বার্থবাদী মহল যেভাবে পূর্ববঙ্গের উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত করেছিল, তেমনি বর্তমানে একটি চক্র ঢাকায় বসে চট্টগ্রামের অর্থনৈতিক ও বিচারিক উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। তিনি নৌবাহিনীর সদর দপ্তর ঢাকায় স্থাপন ও চা বোর্ডের কার্যক্রম ঢাকা থেকে পরিচালনার যৌক্তিকতা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন।

চট্টগ্রাম বারের সাবেক সভাপতি নাজিম উদ্দিন চৌধুরী বলেন, বিভাগীয় শহরে হাইকোর্টের বেঞ্চ স্থাপন যুগোপযোগী ও কল্যাণকর। আরেক সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট এনামুল হক বর্তমান সরকারের আমলেই বেঞ্চ স্থাপনের ওপর জোর দেন।

সভায় আরও বক্তব্য দেন মানবাধিকার নেতা অ্যাডভোকেট জিয়া হাবীব আহসান, চট্টগ্রাম বারের সাবেক সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট জিয়াউদ্দিন আহমেদ, অ্যাডভোকেট বদরুল হুদা মামুন, অ্যাডভোকেট মোস্তফা আজগর শরিফী, অ্যাডভোকেট কাজী আশরাফুল হক আনসারি, অ্যাডভোকেট বদরুল রিয়াজসহ অনেকে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত