Ajker Patrika

‘বিপজ্জনক পণ্য’ পরিবহনে অনীহা, দেশে কাঁচামাল সংকটের আশঙ্কা

আবু বকর ছিদ্দিক, চট্টগ্রাম
‘বিপজ্জনক পণ্য’ পরিবহনে অনীহা, দেশে কাঁচামাল সংকটের আশঙ্কা

সীতাকুণ্ডে বিএম ডিপো দুর্ঘটনার পর থেকে বিদেশি এমএলও (মেইন লাইন অপারেটর) বাংলাদেশে বিপজ্জনক পণ্য (ডিজি কার্গো) পরিবহন না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এতে দেশের বিভিন্ন ওষুধ কারখানায় কাঁচামাল সংকটের পাশাপাশি করোনা প্রতিরোধক পণ্য সামগ্রীসহ রাসায়নিক নির্ভর প্রতিষ্ঠানগুলোর উৎপাদন বাধাগ্রস্ত হওয়ার সমূহ আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

চট্টগ্রাম বন্দর সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রাম বন্দরের মাধ্যমে আমদানি-রপ্তানি যোগ্য বিপজ্জনক/হ্যাজার্ডাস কার্গো/কন্টেইনার বিদ্যমান নীতিমালা অনুযায়ী পরিবাহিত হয়। বাংলাদেশ নৌবাহিনীর নির্দেশনা অনুসরণ করে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ এ ধরনের পণ্য হ্যান্ডেলিং করে। বিপজ্জনক পণ্য হ্যান্ডেলিং সম্পর্কে বন্দর কর্তৃপক্ষ নতুন করে কোনো পরিবর্তন, আদেশ কিংবা নিষেধাজ্ঞা জারি করেনি। 

শিপিং এজেন্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শিপিং এজেন্টগুলো রপ্তানিকারকদের ডিজি কার্গো জাতীয় প্রায় ৩০ ধরনের পণ্য বুকিং বন্ধ রেখেছে। চীনের বিভিন্ন বন্দরও আমদানি করা কাঁচামাল হিসেবে বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক (ডিজি কার্গো) পরিবহন করতে চাচ্ছে না। এতে নতুন করে জটিলতা তৈরি হয়েছে। এ বিষয়ে গত ১৬ জুন বাংলাদেশ শিপিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে সব শিপিং এজেন্টকে জরুরিপত্র দিয়ে ডিজি কার্গোর স্বাভাবিক কার্যক্রম চালু রাখার জন্য বলা হয়। 

পত্রে বলা হয়েছে, বিশ্বব্যাপী আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। এই পত্রের কপি বন্দর চেয়ারম্যানসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের দপ্তরে পাঠানো হয়েছে। 

চিঠির একটি অংশে জানানো হয়, গত ৪ জুন বাংলাদেশে বিএম ডিপোতে বিস্ফোরণের কথা। এ সময় ডিজি (ডেঞ্জারাস কার্গো) ইনভেনটরি লেবেল স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত হাইড্রোজেন পার অক্সাইড গ্রহণ বন্ধ রাখতে বলেছে সিঙ্গাপুর কর্তৃপক্ষ। এসব রাসায়নিক পণ্য আমদানি-রপ্তানি বন্ধ থাকায় মেডিকেল ডিভাইস উৎপাদনকারী, চামড়া, টেক্সটাইল এবং তৈরি পোশাক শিল্পের সঙ্গে সম্পৃক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোতে সংকট সৃষ্টির আশঙ্কা করা হচ্ছে। 

জেএমআই ইন্ডাস্ট্রিয়াল গত ২৬ জুন চট্টগ্রাম বন্দর চেয়ারম্যানকে দেওয়া এক পত্রে জানায়, প্রতিষ্ঠানটি দেশের একমাত্র ইথিলিন অক্সাইড এবং কার্বন ডাই অক্সাইড গ্যাস মিশ্রণকারী প্রতিষ্ঠান ও সরবরাহকারী। স্থানীয় মেডিকেল ডিভাইস উৎপাদনকারী সব প্রতিষ্ঠান তাদের উৎপাদিত পণ্য জীবাণুমুক্ত করতে জেএমআই ইন্ডাস্ট্রিয়ালের সরবরাহকৃত ইথিলিন অক্সাইড এবং কার্বন ডাই অক্সাইডের গ্যাস মিশ্রণের ওপর নির্ভরশীল। এ অবস্থায় জরুরি ভিত্তিতে ইথিলিন অক্সাইড আমদানি করা না গেলে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত মেডিকেল ডিভাইস জীবাণুমুক্তকরণ বিঘ্নিত হবে। সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টারসহ সব চিকিৎসা ব্যবস্থায় ধস নামবে, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকিস্বরূপ। বিষয়টি নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ওই চিঠিতে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যানকে অনুরোধ করা হয়। 

জানা যায়, শিপিং লাইনগুলো বাংলাদেশ থেকে পরিবহন করতে না চাওয়ায় অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে রপ্তানিযোগ্য ৫০০ কোটি টাকার হাইড্রোজেন পার অক্সাইডের বাজার। এর আগে সিঙ্গাপুর বন্দর কর্তৃপক্ষ গত ৯ জুন সব শিপিং লাইনকে নিরাপত্তা ও স্থান সংকটের কারণে হাইড্রোজেন পার অক্সাইড পরিবহন না করতে বলেছে। 

এ ব্যাপারে শিপিং এজেন্ট ওশান ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেডের ব্যবস্থাপক (আমদানি) ফাতেমা আক্তার আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘প্রিন্সিপাল (মূল মালিক) থেকে বিএম ডিপোতে বিস্ফোরণের পর ডিজি কার্গো জাতীয় কিছু পণ্যের বুকিং নিষেধ করা হয়েছে। তাই কিছু রাসায়নিক জাতীয় পণ্য আপাতত পরিবহন করা যাচ্ছে না।’ 

বাংলাদেশের রাসায়নিক-নির্ভর শিল্পকারখানা চীনসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে রাসায়নিক আমদানি করে। নানা দেশ থেকে আনা রাসায়নিকের চালান জাহাজে করে সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া কিংবা শ্রীলঙ্কার কলম্বো বন্দর হয়ে চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছায়। 

বাংলাদেশ শিপিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ মোহাম্মদ আরিফ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘বিভিন্ন শিপিং লাইন হাইড্রোজেন পার অক্সাইড ভর্তি কোনো কন্টেইনার পরিবহন করবে না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অনেক এজেন্ট আমদানি করা শিল্পের কাঁচামাল হিসেবে রাসায়নিক পণ্য পরিবহনে অনীহা প্রকাশ করছে। এতে অনেক শিল্প কারখানায় কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত রাসায়নিক পণ্য আমদানি বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এতে উৎপাদনও ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। স্বাভাবিকভাবে চালু রাখতে বিষয়টি আমাদের সব শিপিং এজেন্টকে বলা হয়েছে। এ ছাড়া বন্দর কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি সহজভাবে দেখতে বলেছি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত