Ajker Patrika

পর্যটন নগরী কক্সবাজার

২০০ কোটি টাকার খাসজমি দখল

  • মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম লীগ নেতার নেতৃত্বে এই দখলদারি
  • গত ৫ আগস্টের পরে আবার সক্রিয় হয়ে ওঠে চক্রটি
  • জাল কাগজ বানিয়ে সংঘবদ্ধ চক্রটি দখল করেছে
  • স্থাপনা না সরালে শিগগির উচ্ছেদ অভিযান: প্রশাসন
মাইনউদ্দিন শাহেদ, কক্সবাজার
আপডেট : ০৪ মে ২০২৫, ১০: ৪৩
খাসজমি দখল করে গড়ে তোলা হচ্ছে স্থাপনা। সম্প্রতি কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতের সুগন্ধা পয়েন্টে হোটেল-মোটেল জোনে। ছবি: আজকের পত্রিকা
খাসজমি দখল করে গড়ে তোলা হচ্ছে স্থাপনা। সম্প্রতি কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতের সুগন্ধা পয়েন্টে হোটেল-মোটেল জোনে। ছবি: আজকের পত্রিকা

কক্সবাজার সাগরপারের সুগন্ধা পয়েন্টে হোটেল-মোটেল জোনের ২০০ কোটি টাকা মূল্যের ২ একর ৩০ শতক খাসজমি দখল করে শতাধিক দোকান নির্মাণ করা হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, জাল কাগজ বানিয়ে একটি সংঘবদ্ধ চক্র ৫ আগস্ট পরবর্তী প্রশাসনিক শিথিলতার সুযোগে হোটেল-মোটেল জোনের বাতিল করা প্লটের এই জমি দখল করেছে।

জেলা প্রশাসন ও কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (কউক) সূত্র বলেছে, ২০১১ সালে উচ্চ আদালতের এক রায়ে কলাতলীর হোটেল-মোটেল জোনের পরিবেশ সংকটাপন্ন এলাকায় (ইসিএ) ৪৯টি প্লট বাতিল করা হয়েছিল। এরপর থেকে প্লটগুলো জেলা প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। সেই বাতিল করা প্লটে ২ একর ৩০ শতক খাসজমি সচ্চিদানন্দ সেন গুপ্ত নামের এক ব্যক্তির মালিকানা দাবি করে জাল কাগজপত্র বানিয়ে রাতারাতি মার্কেট নির্মাণের কাজ শুরু করা হয়। চক্রটি গত ৩ সেপ্টেম্বর জাল কাগজ দাখিল করে হাইকোর্ট থেকে একটি নিষেধাজ্ঞার আদেশও নিয়ে আসে। এই আদেশের বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসন হাইকোর্টে আপিল করে। এর পরিপ্রেক্ষিতে উচ্চ আদালত স্থিতাবস্থা জারি করেন। কিন্তু চক্রটি জমিটি ভরাট করে ঘেরার ভেতরে সেমিপাকা করে আট লাইন দোকান তৈরি করেছে। প্রতিটি লাইনে ১২টি দোকান রয়েছে।

যাঁর দখলে এ জমি

বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম লীগ কক্সবাজার জেলা শাখার সহসভাপতি ওবাইদুল হোসেন নামের এক ব্যক্তির নেতৃত্বে জমিটি দখল করা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এই চক্রে রাজনৈতিক দলের নেতা ও বিভিন্ন পেশার প্রভাবশালী ব্যক্তিও রয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। চক্রটি ২০২১ সালের নভেম্বর থেকে এই জমির দখলের চেষ্টা চালাচ্ছে। জমির দখলকে কেন্দ্র করে সে সময় জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি মোনাফ সিকদার গুলিবিদ্ধ হন। এ ঘটনায় জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক পৌর মেয়র মুজিবুর রহমানকে প্রধান আসামি করে মামলা হয়েছিল। মেয়রকে মামলা দেওয়ার ঘটনায় সে সময় দুদিন আন্দোলন-সংগ্রামে অচল ছিল পর্যটন শহর।

দীর্ঘদিন থেমে থাকার পর একই চক্র গত বছরের ৫ আগস্টের পরে আবার সক্রিয় হয়ে ওঠে। এ বিষয়ে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও ওবাইদুলের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

যেভাবে ধরা পড়ে জাল কাগজপত্র

নথিপত্র ঘেঁটে দেখা যায়, ২০২৪ সালের ৩০ জানুয়ারি ওই জমি ব্যবহারের জন্য কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (কউক) বরাবর আবেদন করেন সচ্চিদানন্দ সেন গুপ্ত। এরপর কউক ভূমি অফিসে জমির কাগজ যাচাই-বাছাই করতে গেলে জাল-জালিয়াতির বিষয়টি ধরা পড়ে। গত বছরের ১২ জুন কউকের উপনগর-পরিকল্পনাবিদ মো. তানভীর হাসান রেজাউল জেলা প্রশাসন ও ভূমি অফিসের কাছে এক চিঠিতে লেখেন, কক্সবাজার সদর ভূমি অফিসের দুটি সরকারি নথি জাল করে ভূমি ব্যবহার ছাড়পত্রের আবেদন করা হয়েছে। এই চিঠিতে আরও দেখা যায়, সচ্চিদানন্দের দাখিল করা ৭৯০০ নম্বর বিএস খতিয়ানটি জাল। তিনি পরপর দুবার জাল কাগজ দাখিল করার অপরাধে তাঁর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বলা হয়।

তানভীর বলেন, ‘যেকোনো স্থাপনা নির্মাণের আগে কউকের ভূমি ব্যবহারের অনুমোদন নিতে হয়। সুগন্ধা পয়েন্টের ওই জমিতে কোনো অনুমোদন দেওয়া হয়নি।’

জাল খতিয়ানে স্বাক্ষর রয়েছে কক্সবাজার সদর উপজেলার সাবেক সহকারী কমিশনার (ভূমি) আরিফ উল্লাহ নিজামীর। তুলনাকারক হিসেবে ভূমি অফিসের নাজির মোহাম্মদ আলমগীর ও নকলকারক হিসেবে কর্মচারী মোহাম্মদ আয়াছের স্বাক্ষর আছে। টেকনাফে কর্মরত আরিফ উল্লাহ নিজামী বলেন, ‘আমাদের স্বাক্ষর জাল করে খতিয়ান সৃজন করে একটি চক্র সরকারি জায়গাটি দখল করেছে।’

সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) শারমিন সুলতানা বলেন, জাল কাগজ বানিয়ে সরকারি খাসজমি দখলের বিষয়টি জেলা প্রশাসনের নজরে আসার পর সচ্চিদানন্দসহ দুজনের বিরুদ্ধে সদর থানায় একটি মামলা করা হয়েছে। এ ছাড়া ভূমি অফিসের রেকর্ডপত্র দেখে সচ্চিদানন্দ নামে কোনো ব্যক্তির খতিয়ানের অস্তিত্বই পাওয়া যায়নি।

সচ্চিদানন্দকে দেখেননি কেউ

সচ্চিদানন্দের ঠিকানা দেখানো হয়েছে চট্টগ্রাম শহরের কোতোয়ালি থানার সতীশ বাবু লেন এলাকায়। তাঁর বাবার নাম নুপেন্দ্র মোহন সেন গুপ্ত। এ পর্যন্ত জেলা প্রশাসন, ভূমি অফিস, কউক কিংবা দখলে নেওয়া জমির আশপাশে সচ্চিদানন্দ নামের এই ব্যক্তিকে কেউ দেখেননি। সদ্য বদলি হওয়া কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) বিভীষণ কান্তি দাস বলেন, সচ্চিদানন্দ নামের এই ব্যক্তির কোনো অস্তিত্ব তাঁরা পাননি। তাঁকে কোনো সময় ভূমি অফিস বা রেভিনিউ অফিসে দেখা যায়নি।

উপজেলা প্রশাসনের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে একটি চক্র সচ্চিদানন্দ সেন গুপ্ত নামের অস্তিত্বহীন এই ব্যক্তির নামে সরকারি জমি দখল করছে।

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) নিজাম উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘সরকারি খাসজমি দখলের বিষয়টি নজরে আসার পর সব ধরনের স্থাপনা সরিয়ে নিতে গত সোমবার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। শিগগির না সরালে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

নারী কমিশনের রিপোর্ট বাতিল হলে অন্যগুলোও বাতিলযোগ্য: উমামা ফাতেমা

খালেদা জিয়ার দেশে ফেরার ফ্লাইট থেকে সরানো হলো দুই কেবিন ক্রু

নারী কমিশন তৈরির জন্য জুলাই বিপ্লবে কেউ জীবন দেয়নি: মাহমুদুর রহমান

প্রাথমিকে আবার চালু হচ্ছে বৃত্তি পরীক্ষা: গণশিক্ষা উপদেষ্টা

পিরোজপুরে ২০ কোটি টাকা নিয়ে উধাও সমিতির পরিচালক, সদস্যদের বিক্ষোভ

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত