Ajker Patrika

সালিসে অপমান সইতে না পেরে রিকশাচালকের ‘আত্মহত্যার’ অভিযোগ

ভোলা প্রতিনিধি
সালিসে অপমান সইতে না পেরে রিকশাচালকের ‘আত্মহত্যার’ অভিযোগ

ভোলায় সালিস বৈঠকে বেঁধে রাখার অপমান সইতে না পেরে মো. নিজাম উদ্দিন (৪২) নামে এক অটোরিকশাচালক বিষপানে আত্মহত্যা করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। গতকাল শনিবার দিবাগত রাতে তাঁর নিজ বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে। 

আজ রোববার দুপুরে ময়নাতদন্ত শেষে তাঁর মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। নিজাম সদর উপজেলার ২ নম্বর পূর্ব ইলিশা ইউনিয়নের গুপ্তমুন্সি গ্রামের মশু মোল্লার ছেলে। এ ঘটনায় নিজামের ছোট ভাই মো. নিরব বাদী হয়ে ভোলা সদর মডেল থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা দায়ের করেছেন। 

নিজামের পরিবারের সদস্যরা জানান, নিজাম ও তাঁর স্ত্রীর সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে পারিবারিক কলহ চলে আসছিল। বিষয়টি নিয়ে তাঁর স্ত্রী জান্নাত বেগম স্থানীয় (ইউপি) চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন ছোটনের কাছে স্বামীর বিরুদ্ধে অভিযোগ দেন। ওই অভিযোগের ভিত্তিতে শনিবার বিকেলে স্থানীয় গ্রাম পুলিশ মো. ইউছুফকে দিয়ে কালাম মেম্বারের পোল সংলগ্ন চেয়ারম্যানের অফিসে ডেকে নেন। পরে চেয়ারম্যান মিজানের স্ত্রী-সন্তানসহ শত শত মানুষের উপস্থিতিতে গ্রাম পুলিশকে নির্দেশ দেন নিজামকে বেঁধে রাখতে। কিন্তু গ্রাম পুলিশ তাকে বেঁধে রাখতে অপারগতা প্রকাশ করলে স্থানীয় ইয়াছিন আরাফাত নামে এক যুবক তাঁকে রশি দিয়ে গাছের সঙ্গে বেঁধে রাখে। এর কিছুক্ষণ পর তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়। এই অপমান সইতে না পেরে সন্ধ্যায় নিজ ঘরে বিষপান করেন নিজাম। পরে স্বজনেরা তাঁকে উদ্ধার করে ভোলা সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। 

পরিবারের অভিযোগ, সালিস বৈঠকে নিজামকে বেঁধে রাখায় অপমান-অপদস্থ হয়ে বাড়িতে গিয়ে তিনি কীটনাশক পান করে আত্মহত্যা করেছেন। তারা এ ঘটনার সঠিক বিচারের দাবি জানিয়েছেন। 

এ বিষয়ে ২ নম্বর পূর্ব ইলিশা ইলিশা ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. আনোয়ার হোসেন ছোটন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘নিজাম ও তাঁর স্ত্রীর মধ্যে পারিবারিক ঝগড়া চলছিল। সে মাদকসেবন করত। ঠিকমতো সংসারে টাকা পয়সা দিত না। বিষয়টি তাঁর স্ত্রী অভিযোগ করলে স্থানীয় ইউপি সদস্যসহ তাকে ডেকে নিয়ে জিজ্ঞাসা করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে নিজাম চেয়ারম্যানের সঙ্গে উচ্চ স্বরে কথা বলে, সালিস বৈঠকে বিশৃঙ্খলা করে। তার আচরণ ছিল অসৌজন্যমূলক। তাই গ্রাম পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছিলাম তাকে বেঁধে রাখতে। কিন্তু গ্রাম পুলিশ তাকে বেঁধে রাখেনি। তবে ইয়াছিন আরাফাত নামে এক যুবক তাকে রশি দিয়ে গাছের সঙ্গে বেঁধে রেখেছে বলে লোকমুখে শুনেছি। তখন আমি ঘটনাস্থলে ছিলাম না।’

ইউপি চেয়ারম্যান আরও বলেন, ‘তাঁর স্ত্রী বলেছিল তাকে চড়-থাপ্পড় দিয়ে শাসন করে তাঁর সঙ্গে মিলমিশ করে দিতে। কিন্তু আমি তাঁর গায়ে হাত দিইনি। আমার ধারণা, ছেলে বাবাকে দোষী সাব্যস্ত করায় এ ক্ষোভে নিজাম বাড়িতে গিয়ে কীটনাশক পানে আত্মহত্যা করেছে। নিজামের আত্মহত্যার খবর পেয়ে রাতেই হাসপাতালে তার লাশ দেখতে গিয়েছিলাম।’ 

ইউপি চেয়ারম্যানের দাবি, একটি কুচক্রী মহল তাকে সমাজে হেয় প্রতিপন্ন করার লক্ষ্য নিয়ে নিজামের আত্মহত্যার ঘটনায় তাকে জড়ানোর চেষ্টা করছে। কুচক্রী মহল ঘটনাটি অন্য খাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করছে বলেও চেয়ারম্যান অভিযোগ করেন। 

ভোলা সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শাহীন ফকির বলেন, নিজামের আত্মহত্যার ঘটনায় তাঁর ভাই নিরব একটি অপমৃত্যু মামলা করেছে। তবে নিজাম সালিস বৈঠকে অপমান অপদস্থ হয়ে আত্মহত্যা করেছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হবে এবং এ সংক্রান্ত কোনো অভিযোগ পেলে পুলিশ সেটির তদন্ত করবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

উখিয়ায় নিখোঁজের ১৯ ঘণ্টা পর স্কুলছাত্রের লাশ উদ্ধার

 টেকনাফ (কক্সবাজার) প্রতিনিধি
মোহাম্মদ শাহীন সারোয়ার ফরহাদ। ছবি: আজকের পত্রিকা
মোহাম্মদ শাহীন সারোয়ার ফরহাদ। ছবি: আজকের পত্রিকা

কক্সবাজারের উখিয়ায় রেজুখাল নদী থেকে মোহাম্মদ শাহীন সারোয়ার ফরহাদ (১৪) নামে এক স্কুলছাত্রের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। আজ রোববার (২৬ অক্টোবর) সকালে উখিয়ার জালিয়াপালং ইউনিয়নের সোনারপাড়া রেজুব্রিজসংলগ্ন এলাকায় নদীতে ভাসমান অবস্থায় লাশটি পাওয়া যায়। উখিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ জিয়াউল হক এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

ফরহাদ সোনারপাড়া বাজার এলাকার আব্দুল করিমের ছেলে। সে স্থানীয় সোনারপাড়া উচ্চবিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র ছিল।

স্থানীয় সূত্রে পুলিশ জানায়, গতকাল শনিবার বেলা ৩টার দিকে বাবা আব্দুল করিমের সঙ্গে বড়শি দিয়ে মাছ ধরতে যায় ফরহাদ। হঠাৎ নৌকা থেকে পড়ে গিয়ে নদীর স্রোতে ভেসে যায় সে। খবর পেয়ে স্থানীয়রা তাৎক্ষণিকভাবে উদ্ধার চেষ্টা চালায়। পরে উখিয়া ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের একটি দল ঘটনাস্থলে গিয়ে অভিযান চালায়। আজ সকাল ১০টার দিকে রেজুব্রিজসংলগ্ন এলাকা থেকে নদীতে ভাসমান অবস্থায় লাশটি উদ্ধার করা হয়।

ওসি জিয়াউল হক জানান, আইনগত প্রক্রিয়া শেষে লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ফরিদপুরে ছিনতাইচেষ্টাকালে ৫ নারীকে পুলিশে দিল জনতা

ফরিদপুর প্রতিনিধি
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

ফরিদপুরের চরভদ্রাসনে ছিনতাইয়ের চেষ্টাকালে পাঁচজন নারীকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করেছে স্থানীয় জনতা। তাঁদের একজনের সঙ্গে একটি শিশুও রয়েছে। আজ রোববার ফরিদপুর-চরভদ্রাসন আঞ্চলিক সড়কের গাজীরটেক ইউনিয়নের শীলডাঙ্গি এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

পুলিশ জানায়, আটক নারীরা এলোমেলো তথ্য দিচ্ছেন। স্বামীর নামও বলছেন না, ঠিকানা বলছেন হবিগঞ্জে, কিন্তু ভাষাগত মিল নেই।

জানা যায়, একটি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশায় চরভদ্রাসন থেকে রিশাত বেগ (৫৩) নামের এক নারী ফরিদপুর শহরে আসছিলেন। পথিমধ্যে মৌলভীরচর এলাকা থেকে ওই অটোরিকশায় আরও পাঁচজন নারী যাত্রী বেশে ওঠেন। কিছু দূর এগোতেই রিশাত বেগের গলা থেকে স্বর্ণের চেইন নেওয়ার চেষ্টা করেন তাঁরা। এ সময় তাঁর শোরচিৎকারে আশপাশের লোকজন এগিয়ে এসে পাঁচ নারীকে আটক করেন। পরে তাঁদের পুলিশে সোপর্দ করে স্থানীয় জনতা।

জানতে চাইলে ভুক্তভোগী নারী রিশাদ বেগ বলেন, ‘আমি অটোরিকশার পেছনে বসা ছিলাম। তারা দুজন আমার দুপাশে বসে। প্রথমে আমার কানে টান দেয়, মনে করেছিলাম, এমনেই টান লেগেছে। আবার গলায় চেইনে টান লাগে। তখন আমি চিৎকার দিলে গাড়ি থেমে যায়, তখন মানুষ এসে ধরে ফেলে।’

এ বিষয়ে চরভদ্রাসন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রজিউল্লাহ খান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘স্থানীয় জনতা আটক করে আমাদের খবর দিলে পাঁচ নারীকে থানায় নিয়ে আসা হয়েছে। বর্তমানে তাঁরা পুলিশ হেফাজতে রয়েছেন।

‘তবে তাঁদের পরিচয় জানতে চাইলে এলোমেলো তথ্য দিচ্ছেন, স্বামীর নামও বলছেন না, ঠিকানা বলছেন হবিগঞ্জে, কিন্তু ভাষাগত মিল নেই। আমরা পরিচয় জানার চেষ্টা করছি এবং আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

চট্টগ্রামে হ্যান্ডকাফসহ পালানো আসামিকে গ্রেপ্তার করল র‍্যাব

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম
গ্রেপ্তার আসামি। ছবি: আজকের পত্রিকা
গ্রেপ্তার আসামি। ছবি: আজকের পত্রিকা

চট্টগ্রাম নগরে এক মাস আগে পুলিশের কাছ থেকে হ্যান্ডকাফসহ পালিয়ে যাওয়া আসামি মো. মাহবুব আলমকে (৪৩) গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাব। আজ রোববার (২৬ অক্টোবর) ভোরে নগরের চান্দগাঁও থানার ফয়জুল্লা বলির বাড়ি এলাকা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করে র‍্যাব-৭-এর একটি টিম। র‍্যাব-৭-এর সহকারী পরিচালক (গণমাধ্যম) এ আর এম মোজাফ্ফর হোসেন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

গ্রেপ্তার মাহবুব নগরের ডবলমুরিং থানার পাঠানটুলি এলাকার জাফর সওদাগর বাড়ির মো. ফজল করিমের ছেলে।

র‍্যাব কর্মকর্তা মোজাফ্ফর হোসেন বলেন, সিডিএমএস পর্যালোচনা করে আসামি মাহবুব আলমের বিরুদ্ধে চট্টগ্রাম জেলা ও মহানগরীর বিভিন্ন থানায় নাশকতা এবং মাদকের ছয়টি মামলার তথ্য পাওয়া যায়। গ্রেপ্তারের পর পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য তাঁকে ডবলমুরিং থানা-পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে।

প্রসঙ্গত, গত ২২ সেপ্টেম্বর দুপুরে নগরের পাঠানটুলি গায়েবি মসজিদের সামনে থেকে মাহাবুবকে হাতকড়া পরিয়ে পুলিশের গাড়িতে ওঠানো হয়। একপর্যায়ে উপস্থিত কয়েকজনের সঙ্গে পুলিশের তর্কাতর্কি শুরু হয়। এ সুযোগে মাহবুব ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

মোবাইলে কথা বলার সময় ট্রেনের ধাক্কা, যুবকের মৃত্যু

নরসিংদী প্রতিনিধি
পলাশে ট্রেনের ধাক্কায় যুবকের মৃত্যু। ছবি: আজকের পত্রিকা
পলাশে ট্রেনের ধাক্কায় যুবকের মৃত্যু। ছবি: আজকের পত্রিকা

নরসিংদীর পলাশে ট্রেনের ধাক্কায় সৈকত চন্দ্র দে (৩০) নামের এক যুবক নিহত হয়েছেন। আজ রোববার বেলা ১১টার দিকে উপজেলার ঘোড়াশাল ফ্লাগ স্টেশনের পাশে এ দুর্ঘটনা ঘটে।

নিহত সৈকত চন্দ্র দে ঘোড়াশাল পাইকসা গ্রামের উত্তম কুমার দের ছেলে। তিনি প্রাণ ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কে চাকরি করতেন।

ঘোড়াশাল ফ্লাগ স্টেশনের বুকিং কর্মকর্তা ও পুলিশ জানায়, ওই যুবক রেললাইনের ওপর দিয়ে ফোনে কথা বলে হেঁটে যাচ্ছিলেন। এ সময় ঢাকাগামী উপকূল এক্সপ্রেস ট্রেনের সঙ্গে ধাক্কা লেগে রেললাইন থেকে ছিটকে পড়েন তিনি। পরে স্থানীয়রা গুরুতর আহত অবস্থায় তাঁকে উদ্ধার করে পলাশ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

এ বিষয়ে ঘোড়াশাল পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পুলিশ পরিদর্শক মো. ইউসূফ মিয়া জানান, খবর পেয়ে পুলিশ লাশ উদ্ধার করেছে। ময়নাতদন্তের পর লাশটি পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত