Ajker Patrika

মা ইলিশ রক্ষায় বরিশালের ঝুঁকিপূর্ণ ৩২ পয়েন্টে বাড়তি নজরদারি

নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল
আপডেট : ১১ অক্টোবর ২০২৩, ২০: ১৮
মা ইলিশ রক্ষায় বরিশালের ঝুঁকিপূর্ণ ৩২ পয়েন্টে বাড়তি নজরদারি

মা ইলিশ রক্ষায় আজ বুধবার মধ্যরাত থেকে টানা ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শুরু হয়েছে। প্রজনন নিরাপদ করতে আশ্বিন মাসে অমাবস্যা ও পূর্ণিমা মাঝে রেখে প্রতিবছর এই বিধিনিষেধ জারি করে মৎস্য অধিদপ্তর। নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ইলিশ নিধন করায় এ বছর নদ-নদীর ৩২টি পয়েন্ট ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে অধিদপ্তরটি। এর মধ্যে ইলিশের বরিশালের হিজলা ও মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলাসংলগ্ন মেঘনার সাতটি পয়েন্ট অধিক ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এসব ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে বাড়তি নজরদারি শুরু করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। 

জানা গেছে, কয়েক বছর ধরে এই পয়েন্টগুলোতে নিষেধাজ্ঞা অমান্যকারীদের বাধা দিতে গেলে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী জেলেদের হামলার মুখে পড়তে হয়। পরিস্থিতি সামাল দিতে গুলি বর্ষণও করতে হয়েছে। এ কারণে এ বছর এসব এলাকায় বিশেষ নজর রাখার নির্দেশনা দিয়েছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী স ম রেজাউল করিম। 

জানতে চাইলে বরিশালের মৎস্য কর্মকর্তা (ইলিশ) ড. বিমল চন্দ্র দাস বলেন, ৮০ ভাগ ইলিশের পেটে ডিম আসে আশ্বিন মাসে। ইলিশ শুধু মিঠাপানিতে ডিম ছাড়ে। তাই এ মাসে ডিম ছাড়ার জন্য ইলিশ সাগরের নোনা ছেড়ে মিঠাপানির নদীমুখী হয়। পূর্ণিমা ও অমাবস্যায় পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় সবচেয়ে ইলিশের ঝাঁক নদীতে চলে আসে। তাই মা ইলিশের প্রজনন নিরাপদ করার জন্য প্রতিবছর আশ্বিনে পূর্ণিমা ও অমাবস্যা মাঝে রেখে ২২ দিন ইলিশ আহরণে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। এ বছর ১২ অক্টোবর থেকে ২ নভেম্বর পর্যন্ত নদ-নদীতে ইলিশসহ সব ধরনের মাছ আহরণ বন্ধ থাকবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত ২০ সেপ্টেম্বর রাজধানীতে মৎস্য অধিদপ্তরে এ-সংক্রান্ত সভায় ইলিশ বিচরণে নদ-নদীর ৩২টি পয়েন্ট ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। কয়েক বছর এই পয়েন্টগুলোতে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করার প্রবণতা ছিল খুব বেশি। তার মধ্যে বরিশালে মেঘনা ও তার শাখা নদীর সাতটি পয়েন্ট অধিক ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়।

বরিশাল বিভাগসহ দেশের উপকূলীয় এলাকার এ ঝুঁকিপূর্ণ পয়েন্টগুলো হলো—বরিশালের হিজলা উপজেলার হরিণাথপুর ইউনিয়নের আসলি-আবুপুর, হিজলা-গৌরবদী ইউনিয়নের ওরাকুল মাছঘাট, খালিসপুর-জানপুর, মেহেন্দীগঞ্জের গজারিয়া ও কালাবদর নদীর বাগরজা এলাকা, মেঘনার গোবিন্দপুর, বরিশাল সদর উপজেলার শায়েস্তাবাদ ইউনিয়নসংলগ্ন ঝুনাহার মোড় এবং মুলাদীর আড়িয়াল খাঁ নদ, চাঁদপুর সদরের রাজরাজেস্বর, লক্ষ্মীপুর ইউনিয়নের বহরিয়া, হাইমচরের সাহেবগঞ্জ, উত্তর মতলবপুরের বোরোরচর, লক্ষ্মীপুর ইউনিয়নের রায়পুর উপজেলার চরবংশি ইউনিয়নের নামারঘাট, চান্দারখাল, কমলনগর উপজেলার লুধুয়া মাছঘাট, শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার পদ্মা নদীর লেকু ব্যাপারীর ঘাট, সুরেশ্বর বাংলাবাজার খালের মুখ, ঈশ্বরকাঠি খালের মুখ, মোক্তারের চর, খাসবাজার, বাবুরচর, জাজিরা উপজেলার পাইনপাড়া, মাঝিরঘাট, পূর্বনা, ডোবা, বাবুরচর, কুণ্ডেরচর, ছিডারচর, শফিককাজীর মোড়, গোসাইহাট উপজেলার বাংলাবাজার খাল, জৈয়ন্তি নদী, কুচাইপট্টি ইউনিয়নসংলগ্ন মেঘনা বিষকাঠালিয়া-মেঘনার অববাহিকা, ঠান্ডারবাজার ও টেকপাড় মৎস্য আড়তসংলগ্ন খাল, গোসাইরহাট-হাইমচর-চাঁদপুর সীমানার মেঘনার ৬০০ মিটার, ভেদরগঞ্জ উপজেলার পদ্মা নদীর কাঁচিকাটা, দেওয়ানগঞ্জ ও মোল্লাবাজার। 

মেঘনা ঘেরা মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা কামাল হোসেন বলেন, নিষেধাজ্ঞাকালীন নৌ পুলিশের অতিরিক্ত ২০ জন ফোর্স দেওয়া হয়েছে। নৌবাহিনী ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় সার্বক্ষণিক টহলে থাকবে। তিনি এ পর্যন্ত ১৬টি সচেতনতা সভা করেছেন। জনপ্রতিনিধিদের সচেতন করতে স্থানীয় এমপি বৃহস্পতিবার মেহেন্দীগঞ্জেএকাধিক সভা করবেন। একই কথা জানিয়েছেন হিজলা উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা এম এম পারভেজ। 

মৎস্যজীবীদের তথ্যমতে, নিষেধাজ্ঞাকালীন স্থানীয় প্রভাবশালী মাছ ব্যবসায়ীরা অসাধু মাঠ কর্মকর্তাদের যোগসাজশে মা ইলিশ নিধন করেন। কয়েক বছর নিষেধাজ্ঞার শুরুতেই নদী প্রভাবশালীদের জেলেদের দখলে চলে যায়। নদীর তীরবর্তী জনপদের অধিকাংশ চেয়ারম্যান, ইউপি সদস্য নিষেধাজ্ঞাকালীন মা ইলিশ শিকারের সঙ্গে জড়িত। জাতীয় মৎস্যজীবী সমিতির যুগ্ম মহাসচিব হিজলার বাসিন্দা ইকবাল হোসেন মাতুব্বর বলেন, মা ইলিশ নিধন বন্ধ করতে হলে নদীর ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর স্থায়ী ক্যাম্প করতে হবে। 

এ বিষয়ে বরিশাল বিভাগীয় মৎস্য অধিদপ্তরের উপপরিচালক নৃপেন্দ্র নাথ বিশ্বাস বলেন, ‘ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোতে এবার যৌথ বাহিনীর টহল বজায় থাকবে। এসব ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার তালিকা আমরা ইতিমধ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে তুলে দিয়েছি। জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রত্যেক উপজেলা ও জেলায় একটি করে স্ট্রাইকিং ফোর্স থাকবে। ইতিমধ্যে ৩২ জন কর্মকর্তাকে বরিশালে অতিরিক্ত দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

হাদির ওপর হামলাকারীরা সীমান্ত দিয়ে পালিয়েছে কি না—তা শতভাগ নিশ্চিত নয় বিজিবি

ময়মনসিংহ প্রতিনিধি
বিজিবির সেক্টর কমান্ডার কর্নেল সরকার মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান । ছবি: আজকের পত্রিকা
বিজিবির সেক্টর কমান্ডার কর্নেল সরকার মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান । ছবি: আজকের পত্রিকা

বিজিবির সেক্টর কমান্ডার কর্নেল সরকার মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান বলেছেন, ঢাকায় শরিফ ওসমান হাদির ওপর গুলি বর্ষণকারী ব্যক্তিরা ময়মনসিংহ সীমান্ত ব্যবহার করে ভারতে পালিয়েছে কি না—তা এখনো শতভাগ নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না।

সোমবার ময়মনসিংহ নগরীর খাগডহর বিজিবি ক্যাম্পে তিনি আরও জানান, শুক্রবার ৯টার মধ্যে বিজিবি সদর দপ্তরের নির্দেশনায় সম্ভাব্য পাচারের রুটগুলো চিহ্নিত করে টহল এবং চেকপোস্ট বসানো হয় সীমান্তের অধিকাংশ স্থানে। পরদিন অর্থাৎ শনিবারে পুলিশ এবং বিজিবির সমন্বয়ে যৌথ অপারেশনের প্ল্যান করা হয়। ঢাকা থেকে আগত পুলিশ কর্মকর্তার সঙ্গে বিজিবি ময়মনসিংহ সেক্টর কমান্ডারের নিয়মিত যোগাযোগ এবং অপারেশন সংক্রান্ত বিষয়ে আলোচনা হয়।

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘আলোচনায় দুটি স্থানে একসঙ্গে অপারেশনের প্ল্যান করা হয়। সন্দেহভাজন হিসেবে শেরপুরের নালিতাবাড়ীতে অবস্থানরত ফিলিপ স্নালকে আটকের পরিকল্পনা করা হয়। পুলিশের আরেকটি টিম হালুয়াঘাট এলাকায় অপারেশনের প্ল্যান করে। হালুয়াঘাটে অপারেশনের বিষয়ে বিজিবির সোর্স এবং অন্যান্য বিষয়ে তথ্য দিয়ে পুলিশকে সহায়তা করেছে। অপর দিকে নালিতাবাড়ীর বারোমারি এলাকায় অপারেশন পরিচালিত হয় বিজিবির নেতৃত্বে এবং ঢাকা হতে আগত ও হালুয়াঘাট থানার পুলিশ সদস্যদের সমন্বয়ে। কিন্তু ফিলিপকে পাওয়া যায়নি। তবে তার স্ত্রী ডেলটা চিরান, শ্বশুর ইয়ারসন রংডি এবং মানব পাচারকারী লুইস লেংমিঞ্জাকে আটক করা হয়। তাদের বাড়ি থেকে একটি মোটরসাইকেলও উদ্ধার করা হয়।’

তাঁদের পরিবারের তিনজনসহ এ পর্যন্ত বিজিবি চারজনকে আটক করেছে। এঁদের মধ্যে সোমবার সকালে মানব পাচারকারী বেঞ্জামিন চিরামকে আটক করা হয়। তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বরগুনায় স্বামীকে গলা টিপে হত্যা, স্ত্রী ও পরকীয়া প্রেমিক আটক

বরগুনা প্রতিনিধি
আটক পরকীয়া প্রেমিক আলামিন। ছবি: সংগৃহীত
আটক পরকীয়া প্রেমিক আলামিন। ছবি: সংগৃহীত

বরগুনার বামনা উপজেলায় পরকীয়া প্রেমের জেরে এক প্রবাসফেরত স্বামীকে গলা টিপে হত্যার অভিযোগ পাওয়া গেছে। নিহত ব্যক্তির নাম মোহাম্মদ আব্দুল জলিল (৪৫)। তিনি উপজেলার রামনা ইউনিয়নের ঘোপখালী গ্রামের বাসিন্দা।

এ ঘটনায় নিহতের স্ত্রী নাজমা বেগম (৩৫) ও তাঁর পরকীয়া প্রেমিক আলামিনকে (৩০) আটক করেছে পুলিশ। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে দুজনই হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ। রোববার (১৪ ডিসেম্বর) বিকেলে আব্দুল জলিলের নিজ বাড়িতে এ হত্যাকাণ্ড ঘটে।

স্থানীয় ও থানা সূত্রে জানা যায়, প্রায় পাঁচ বছর ধরে একই এলাকার আবু খতিবের ছেলে আলামিন নিহতের বাড়িতে গৃহকর্মীর কাজ করতেন। এ সময় তাঁর সঙ্গে নাজমা বেগমের পরকীয়া সম্পর্ক গড়ে ওঠে। প্রায় ১৫ দিন আগে প্রবাস থেকে বাড়িতে ফিরে স্ত্রীর সম্পর্কের বিষয়টি জানতে পারেন আব্দুল জলিল।

অভিযোগ রয়েছে, রোববার বিকেলে স্ত্রী ও ওই গৃহকর্মী মিলে ঘুমন্ত অবস্থায় আব্দুল জলিলকে গলা টিপে হত্যা করেন।

হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি জানতে পেরে স্থানীয়রা পুলিশে খবর দেন। পরে পুলিশ রোববার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে মরদেহ উদ্ধার করে বামনা থানায় নিয়ে যায়। সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) সকালে মরদেহটি ময়নাতদন্তের জন্য বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়।

বামনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে নিহতের স্ত্রী ও তাঁর পরকীয়া প্রেমিককে তাৎক্ষণিকভাবে আটক করা হয়েছে। প্রাথমিক তদন্ত ও জিজ্ঞাসাবাদে তাঁরা দুজনই হত্যার দায় স্বীকার করেছেন। এ ঘটনায় মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। মামলা দায়েরের পর আসামিদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

মহান বিজয় দিবসে মেট্রোরেল সাময়িক বন্ধ থাকবে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

মহান বিজয় দিবস উদযাপন উপলক্ষে আগামী ১৬ ডিসেম্বর (মঙ্গলবার) মেট্রোরেল চলাচল সাময়িক বন্ধ থাকবে। ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল) এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, তেজগাঁও পুরাতন বিমানবন্দর এলাকায় প্যারাজাম্প অনুষ্ঠিত হওয়ার কারণে প্যারাট্রুপারদের নিরাপত্তার স্বার্থে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

ডিএমটিসিএল ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে জানিয়েছে, আগামী ১৬ ডিসেম্বর দুপুর ১১টা ৫০ মিনিট হতে ১২টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত, অর্থাৎ মোট ৪০ মিনিটের জন্য মেট্রোরেল চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ থাকবে।

ডিএমটিসিএল সাময়িক অসুবিধার জন্য যাত্রীসাধারণের কাছে আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করেছে। যাত্রীদের এই সময়সূচি মেনে প্রয়োজনীয় পরিকল্পনা করার অনুরোধ জানানো হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ইডেনের সেই ছাত্রীকে বিয়ের ছয়মাস পর নোবেলের বিরুদ্ধে ধর্ষণের চার্জশিট

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
নোবেল। ছবি: সংগৃহীত
নোবেল। ছবি: সংগৃহীত

বাসায় আটকে রেখে ইডেন কলেজের এক ছাত্রীকে ধর্ষণ করার অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় গায়ক নোবেলের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়েছে। গত ২৯ নভেম্বর ডেমরা থানার উপপরিদর্শক এসআই মুরাদ হোসেন ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে এই অভিযোগপত্র দাখিল করেন।

নারী ও শিশু নির্যাতন দমন প্রসিকিউশন বিভাগের উপপরিদর্শক (এসআই) ইলামনি আজ সোমবার বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি জানান, আগামী ২৮ ডিসেম্বর আদালতে অভিযোগপত্রটি উপস্থাপন করা হবে। পরে এ সংক্রান্ত মামলা বিচারের জন্য নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হবে।

নোবেলের আইনজীবী মোসতাক আহমেদ জানান, এই ধর্ষণ মামলার বাদীকে বিয়ে করেছেন নোবেল। তাঁরা সংসার করছেন।

গত ১৯ মে নোবেলের বিরুদ্ধে ধর্ষণ, নির্যাতন ও পর্নোগ্রাফি আইনে মামলা করেন ইডেন কলেজের ওই ছাত্রী। নোবেলকে গ্রেপ্তার করার পর কারাগারে পাঠানো হলে বিয়ের শর্তে তিনি জামিন পান। ১৯ জুন ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারে বসে ১০ লাখ টাকা দেনমোহরে নোবেল ওই ছাত্রীকে বিয়ে করেন।

এই মামলায় অভিযোগ করা হয়, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ওই ছাত্রীর সঙ্গে পরিচয় হয় নোবেলের। এরপর প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। ২০২৪ সালের ১২ নভেম্বর নোবেল তাঁর স্টুডিও দেখানোর কথা বলে ছাত্রীকে ডেমরার বাসায় নিয়ে যান। সেখানে আটকে রাখেন, মোবাইল ফোন ও টাকা কেড়ে নেন। এরপর ধর্ষণ ও ভিডিও ধারণ করেন। কথামতো না চললে ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার ভয়ও দেখান।

অভিযোগে বলা হয়, ওই তরুণীকে ছয় মাস ধরে ডেমরার ওই বাসায় আটকে রাখা হয়, মারধর করা হতো প্রায়ই। দু-তিন জনের সহায়তায় বাদীকে চুল ধরে টেনেহিঁচড়ে একটি কক্ষে আটকে রাখেন নোবেল। ওই ঘটনার ভিডিও ছড়ালে বাদীর বাবা-মা তাঁকে চিনতে পারেন। এরপর পরিবার পুলিশের সহায়তায় তাঁকে ১৯ মে উদ্ধার করে এবং পুলিশ নোবেলকে গ্রেপ্তার করে।

অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, নোবেল বাদীকে আটক রেখে ধর্ষণ করেন এবং ধর্ষণের ভিডিও মোবাইলে ধারণ করে রাখেন। বাসায় না থাকলে ধর্ষণের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়। নোবেল নেশাগ্রস্ত অবস্থায় বিভিন্ন সময়ে তাঁকে মারপিট করেছেন।

অভিযোগপত্রে আরও বলা হয়েছে, বাদীর অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া গেছে। আসামি নোবেল জামিনে আছেন।

তদন্ত কর্মকর্তা অভিযোগপত্রে আরও বলেছেন, বাদীকে মারধর ও ধর্ষণে আসামিকে আরও কয়েকজন সহযোগিতা করেছেন। তবে তাঁদের নাম-ঠিকানা উদ্‌ঘাটন করা সম্ভব হয়নি। অদূর ভবিষ্যতে তাঁদের নাম ঠিকানা সংগ্রহ করা সম্ভব হলে সম্পূরক অভিযোগপত্র দেওয়া হবে।

এখন কী হবে:

নোবেলের আইনজীবী বলেছেন, নোবেল মামলার বাদীকে বিয়ে করে সংসার করছেন। তাই এই অভিযোগপত্রে নোবেলের কোনো সমস্যা হবে না। বিচারিক ট্রাইব্যুনালে বাদী আপসনামা দেওয়ার পর মামলা নিষ্পত্তি হবে। খালাস পাবেন নোবেল।

উল্লেখ্য, ভারতের সংগীত প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠান ‘সা রে গা মা’ দিয়ে পরিচিতি পান এই গায়ক। এর আগে মাদকে আসক্ত হয়ে সংগীত ছেড়েছিলেন তিনি। দীর্ঘ বিরতির পর আবারও শ্রোতাদের সামনে হাজির হন। সেবার নোবেল জানিয়েছিলেন, তিনি আর কখনো দর্শকদের হতাশ করবেন না। সব অতীত পেছনে ফেলে নিয়মিত গান উপহার দেবেন।

কিন্তু ২০২৩ সালে অগ্রিম টাকা নিয়ে গান গাইতে না যাওয়ায় প্রতারণার অভিযোগে রাজধানীর মতিঝিল থানায় নোবেলের বিরুদ্ধে মামলা হয়। জানা যায়, ওই বছর ১৬ মে শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ হেডকোয়ার্টার পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের এসএসসি ব্যাচ ২০১৬-এর অনুষ্ঠানে গান গাইতে গিয়ে ১ লাখ ৭২ হাজার টাকা অগ্রিম নেওয়ার প্রতারণায় অভিযোগে আটক হয়েছিলেন। সে সময় একদিন রিমান্ডেও ছিলেন এই গায়ক। পরে আপসের মাধ্যমে ওই মামলা থেকে অব্যাহতিও পান নোবেল।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত