Ajker Patrika

বরিশালে দখল হচ্ছে খাসজমি

  • তদারকির অভাবে প্রায় ৪ হাজার একর খাসজমি দখল হয়েছে।
  • ভুয়া খতিয়ান খুলে জমির মালিকানা দাবি করে ভোগদখল।
  • জেগে ওঠা চরে অনেকে ঘরবাড়ি নির্মাণ করে দখলে নিয়েছে।
মুলাদী (বরিশাল) প্রতিনিধি 
বরিশালের মুলাদী বন্দরসংলগ্ন জয়ন্তী নদীর পাড়ের খাসজমি দখল করে নির্মাণ করা দোকানঘর। সম্প্রতি তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা
বরিশালের মুলাদী বন্দরসংলগ্ন জয়ন্তী নদীর পাড়ের খাসজমি দখল করে নির্মাণ করা দোকানঘর। সম্প্রতি তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা

বরিশালের মুলাদীতে প্রায় ৪ হাজার একর খাসজমি দখলের অভিযোগ পাওয়া গেছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, বন্দোবস্ত ছাড়াই এসব জমিতে ঘরবাড়ি, দোকান, পাকা স্থাপনা, ফসল ফলিয়ে দখল করে নিচ্ছে প্রভাবশালীরা। কেউ কেউ ভুয়া খতিয়ান খুলে জমির মালিকানা দাবি করে ভোগদখল করছে। আর এসব হচ্ছে কর্মকর্তাদের তদারকির অভাবে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, এসব জমির মধ্যে মুলাদী পৌরসভার মধ্যেই প্রায় ৫০ একর রয়েছে, যার মূল্য প্রায় ২০০ কোটি টাকা।

উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) কার্যালয় থেকে জানা যায়, উপজেলায় প্রায় ৭ হাজার একর খাসজমি রয়েছে। এসব জমির মধ্যে গত চার বছরে আশ্রয়ণ প্রকল্পের সাড়ে ৪০০ ঘর নির্মাণ করে প্রায় ১০ একর জমি ভূমিহীনদের নামে দলিল দেওয়া হয়। এ ছাড়া প্রায় ১ হাজার একর জমি বিভিন্ন সময়ে ভূমিহীনদের মাঝে বন্দোবস্ত দিয়েছে সরকার। বাকি জমির একটি বড় অংশ কোনো কাগজপত্র ছাড়াই প্রভাবশালীরা দখলে নিয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

উপজেলার আড়িয়াল খাঁ নদ, জয়ন্তী ও নয়াভাঙ্গনী নদীর অববাহিকায় গড়ে ওঠা চর, বিভিন্ন হাটবাজারে সরকারের জমি, খালবিলসহ উপজেলায় ৭ ইউনিয়ন ও ১ পৌরসভায় খাস খতিয়ানভুক্ত জমি রয়েছে। হাট-বাজারের পাশের নদী ও খাল ভরাট করে সরকারি জমিতে ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। জেগে ওঠা চরে অনেকে ঘরবাড়ি নির্মাণ করে দখল করেছে।

উপজেলার কাজিরচর ইউনিয়নের খাসেরহাট বন্দরের ব্যবসায়ী নূরু হাওলাদার বলেন, ‘খাসেরহাট বন্দরে প্রায় ৪ একর খাসজমি রয়েছে। এসব জমি বন্দোবস্ত ছাড়াই প্রভাবশালী ব্যক্তিরা দোকানপাট নির্মাণ করে ভাড়া দিচ্ছে। প্যাদারহাট বন্দরে কয়লার খালের দুই পাড় দখল করে দেড়-দুই শ স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে। প্যাদারহাট উপস্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এক একর জমি দখল করে দোকান নির্মাণ করেছেন স্থানীয় প্রভাবশালীরা। ওই বন্দরের একটি ঘাট দখল করে দোকান নির্মাণ করেছেন এক ব্যবসায়ী। এ ছাড়া সোনামদ্দিন বন্দর, নোমরহাট, কুতুবপুর বাজার, আলীমাবাদ বাজার, চরপদ্মা মাদ্রাসারহাটসহ বিভিন্ন হাটের খাসজমি দখল হয়ে গেছে।’

মুলাদী পৌরসভার ব্যবসায়ী আব্দুল্লাহ আল বাকী বলেন, ‘পৌরসভার জয়ন্তী নদীর দুই পাড়ের সরকারি জমি দখল করে তিন শতাধিক দোকান নির্মাণ করা হয়েছে। এসব দোকান নির্মাণের ফলে নদী ছোট হয়ে গেছে এবং ধীরে ধীরে নদীটি বিলীন হয়ে যাচ্ছে। এ ছাড়া মুলাদী-হিজলা সংযোগ সেতুর পূর্ব ও পশ্চিম পাড়ে প্রায় ৪০ একর খাসজমি রয়েছে। আওয়ামী লীগ ও বিএনপির কিছু নেতা যৌথভাবে একটি ভুয়া খতিয়ান খুলে প্রায় ২৬ একর জমি দখল করে নিয়েছেন। ওই খতিয়ান বাতিল করার জন্য গত ৩ সেপ্টেম্বর গাছুয়া ইউনিয়ন সহকারী ভূমি কর্মকর্তা আলাউদ্দিন জেলা প্রশাসনের কাছে একটি প্রতিবেদনও দিয়েছেন। কিন্তু খতিয়ান বাতিল কিংবা সরকারি জমি উদ্ধার করা হয়নি।’

উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) কার্যালয়ের সার্ভেয়ার ফিরোজ খান বলেন, ‘উপজেলায় প্রায় ৭ হাজার একর খাসজমি রয়েছে। এসব জমির মধ্যে কমপক্ষে ১ হাজার একর জমি ভুমিহীনদের মধ্যে বন্দোবস্ত দেওয়ার যোগ্য। এ ছাড়া আরও প্রায় ৩ হাজার একর খাসজমি রয়েছে, যা কিছুটা নিচু কিংবা চর আকারে রয়েছে। এসব জমি বন্দোবস্ত না দেওয়া হলেও কেউ কেউ ভোগদখল করছে। কিন্তু কেন বন্দোবস্ত দেওয়া হচ্ছে না, তা জানা নেই।’

তদারকির অবহেলার বিষয়টি অস্বীকার করেন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) পরাগ সাহা। তিনি জানান, খাসজমি উদ্ধারের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নিজাম উদ্দিন বলেন, ‘খাসজমি দখলের বিষয়ে ভূমি কর্মকর্তা ও ইউনিয়ন সহকারী ভূমি কর্মকর্তাদের প্রতিবেদন চাওয়া হবে। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে সরকারি জমি উদ্ধারসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

এক্সপ্রেসওয়েতে গাড়িচাপায় ২ মোটরসাইকেল আরোহী নিহত

মুন্সিগঞ্জ প্রতিনিধি
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতে অজ্ঞাত একটি গাড়ির চাপায় দুই মোটরসাইকেল আরোহী নিহত হয়েছেন।

সোমবার (২০ অক্টোবর) রাত সাড়ে ১০টার দিকে মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখান উপজেলার কুচিয়ামোড়া ধলেশ্বরী সেতুর ওপর সার্ভিস সড়কের মাওয়ামুখী লেনে এ দুর্ঘটনা ঘটে।

নিহতদের পরিচয় এখনো জানা যায়নি। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন হাসাড়া হাইওয়ে থানার উপপুলিশ পরিদর্শক (এসআই) নুর মোহাম্মদ।

তিনি জানান, মোটরসাইকেলে তাঁরা মাওয়ার দিকে যাচ্ছিলেন। ধারণা করা হচ্ছে, এ সময় পেছন দিক থেকে আসা অজ্ঞাত একটি গাড়ি তাঁদের চাপা দিলে ঘটনাস্থলেই তাঁরা মারা যান। নিহতদের পরিচয় শনাক্তের চেষ্টা চলছে। মরদেহ দুটি উদ্ধার করে হাসাড়া হাইওয়ে থানায় রাখা হয়েছে। এ ঘটনায় আইনগত প্রক্রিয়া চলছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

দাউদকান্দিতে ট্রাকচালক হত্যা মামলার প্রধান আসামি গ্রেপ্তার

দাউদকান্দি (কুমিল্লা) প্রতিনিধি 
মোহাম্মদ দ্বীন ইসলাম ওরফে ডালিম। ছবি: সংগৃহীত
মোহাম্মদ দ্বীন ইসলাম ওরফে ডালিম। ছবি: সংগৃহীত

কুমিল্লার দাউদকান্দিতে ট্রাকচালক আলামিন হত্যা মামলার প্রধান আসামি মোহাম্মদ দ্বীন ইসলাম ওরফে ডালিমকে গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাব।

গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গতকাল রোববার দাউদকান্দি মডেল থানা-পুলিশের সহযোগিতায় র‍্যাব সদস্যরা ঢাকার বনানী থানার কাকলী এলাকা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। ডালিম উপজেলার গোয়ালমারী ইউনিয়নের হাউদি গ্রামের হোসেন প্রধানের ছেলে।

উল্লেখ্য, গত মাসে আলামিনকে দ্বীন ইসলাম কিলঘুষি মেরে হত্যা করেন।

দাউদকান্দি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জুনায়েদ চৌধুরী আজকের পত্রিকাকে বলেন, সোমবার দ্বীন ইসলামকে কুমিল্লা আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

শাহজালাল বিমানবন্দরে অগ্নিকাণ্ডে ফায়ার সার্ভিসের ৫ সদস্যের কমিটি

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
শাহজালাল বিমানবন্দরে অগ্নিকাণ্ডে ফায়ার সার্ভিসের ৫ সদস্যের কমিটি

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ৮ নম্বর গেটে অগ্নিকাণ্ড তদন্তে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

আজ সোমবার (২০ অক্টোবর) ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের মিডিয়া সেলের এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

কমিটিতে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের পরিচালক (অপা. ও মেইন.) লে. কর্নেল মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম চৌধুরীকে সভাপতি এবং ফায়ার সার্ভিস ঢাকা বিভাগের উপপরিচালক মো. ছালেহ উদ্দিনকে সদস্যসচিব করা হয়েছে।

এতে সদস্য হিসেবে রয়েছেন ফায়ার সার্ভিসের ঢাকা জোন-৩-এর উপসহকারী পরিচালক মো. আবদুল মন্নান, কুর্মিটোলা স্টেশনের সিনিয়র স্টেশন অফিসার মো. নাহিদ মামুন ও ফায়ার সার্ভিস ঢাকা-১৯-এর ওয়্যারহাউস ইন্সপেক্টর মো. তোজাম্মেল হোসেন।

কমিটিকে অবিলম্বে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে আগামী ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে তা সম্পন্ন করতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি নীতিমালা অনুসারে দুই পাতায় তদন্ত প্রতিবেদন অধিদপ্তরে দাখিল করতে নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, গত শনিবার (১৮ অক্টোবর) হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ৮ নম্বর গেটসংলগ্ন কার্গো ভিলেজে (আমদানি পণ্যের মজুত স্থান) অগ্নিকাণ্ড ঘটে। এতে ফায়ার সার্ভিসের ১৩টি স্টেশনের ৩৭টি ইউনিট কাজ করে। দীর্ঘ প্রচেষ্টার পর গতকাল রোববার বিকেল ৫টার দিকে আগুন সম্পূর্ণ নির্বাপণ হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

গাজীপুরে চলন্ত অ্যাম্বুলেন্সে অগ্নিকাণ্ড

গাজীপুর প্রতিনিধি
অ্যাম্বুলেন্সে হঠাৎ অগ্নিকাণ্ড। ছবি: সংগৃহীত
অ্যাম্বুলেন্সে হঠাৎ অগ্নিকাণ্ড। ছবি: সংগৃহীত

গাজীপুরের কালিয়াকৈরে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে চলন্ত একটি অ্যাম্বুলেন্সে হঠাৎ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। তবে এ সময় অ্যাম্বুলেন্সে কোনো রোগী না থাকায় হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। খবর পেয়ে কালিয়াকৈর ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণ করে।

আজ সোমবার (২০ অক্টোবর) সন্ধ্যা সোয়া ৭টার দিকে কালিয়াকৈর উপজেলার সূত্রাপুর ইউনিয়নের জিএমএস টেক্সটাইল গার্মেন্টসের সামনে মহাসড়কে এ ঘটনা ঘটে।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার সাবেহ বাজার এলাকার বাসিন্দা সুজন মিয়া একটি অ্যাম্বুলেন্স কিনে ভাড়া চালাতেন। অ্যাম্বুলেন্সের ইঞ্জিনে কিছু সমস্যার কারণে স্থানীয় একটি গ্যারেজে মেরামত করতে দিয়েছিলন। মেরামত শেষে আজ সন্ধ্যা সোয়া ৭টার দিকে অ্যাম্বুলেন্সটি নিয়ে তিনি বাড়ি ফিরছিলেন। পথে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের সূত্রাপুর এলাকায় জিএমএস কারখানার সামনে পৌঁছালে হঠাৎ ইঞ্জিন হিট হয়ে আগুন ধরে যায়। চালক তাৎক্ষণিকভাবে অ্যাম্বুলেন্সটি সড়কের পাশে থামিয়ে দ্রুত নেমে গিয়ে প্রাণে রক্ষা পান। কিছুক্ষণের মধ্যে পুরো অ্যাম্বুলেন্সটি আগুনে জ্বলতে থাকে। স্থানীয় লোকজন আগুন নেভানোর চেষ্টা করেন, তবে সিএনজি সিলিন্ডার বিস্ফোরণের আশঙ্কায় কেউ কাছে যেতে সাহস পাননি।

কালিয়াকৈর ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন কর্মকর্তা ইফতেখার রায়হান জানান, ব্যস্ততম ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে চলন্ত অবস্থায় একটি অ্যাম্বুলেন্সে আগুন লাগার খবর পেয়ে কালিয়াকৈর ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করে। ১০ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। ততক্ষণে অ্যাম্বুলেন্সটি পুড়ে যায়।

ইফতেখার রায়হান আরও জানান, আগুনের সূত্রপাত কীভাবে হয়েছে, তা তদন্তের পর জানা যাবে। অ্যাম্বুলেন্সে কেউ না থাকায় এতে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত