Ajker Patrika

আওয়ামী লীগ নেতাদের বিরুদ্ধে মামলায় আসামি বিএনপির নেতা-কর্মীরাও

আমতলী (বরগুনা) প্রতিনিধি 
মঙ্গলবার বিকেলে তালতলী উপজেলা শহরে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে বিএনপি নেতা-কর্মীরা। ছবি: আজকের পত্রিকা
মঙ্গলবার বিকেলে তালতলী উপজেলা শহরে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে বিএনপি নেতা-কর্মীরা। ছবি: আজকের পত্রিকা

বরগুনার তালতলী উপজেলায় দুই বছর আগে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের হামলা, দলীয় কার্যালয় ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় করা মামলায় বিএনপিরই নেতা-কর্মীদের আসামি করা হয়েছে।

এই ঘটনার প্রতিবাদে গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে তালতলী উপজেলা শহরে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে বিএনপি নেতা-কর্মীরা। মিছিল-সমাবেশ থেকে মামলার বাদী উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মো. ছগির হাওলাদারকে দল থেকে বহিষ্কার ও শাস্তির দাবি জানানো হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চলতি বছরের ৩০ জুলাই তালতলী উপজেলা বিএনপির যুগ্ম-আহ্বায়ক মো. ছগির হাওলাদার বাদী হয়ে আমতলী সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি মামলা করেন। মামলাটি দুই বছর আগে বিএনপির দলীয় কর্মসূচি চলাকালে আওয়ামী লীগের হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনাকে কেন্দ্র করে। এই মামলায় উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি রেজবি-উল কবির জোমাদ্দার, সাধারণ সম্পাদক তৌফিকুজ্জামান তনু এবং আমতলী উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি মো. মতিয়ার রহমানসহ ১০১ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। মামলায় ৭০-৮০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে।

মামলার বাদী মো. ছগির হাওলাদারের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, তিনি ব্যক্তিগত স্বার্থ উদ্ধারের জন্য অন্তত ১৫-২০ জন বিএনপি নেতা-কর্মীকেও এই মামলায় আসামি করেছেন। অভিযোগকারীরা বলছেন, জমি দখল, মামলা বাণিজ্য এবং নিরীহ মানুষকে হয়রানি করার উদ্দেশ্যেই বাদী বিএনপির নেতা-কর্মী, রাখাইন এবং নিরীহ মানুষদের আসামি করেছেন।

এই অভিযোগের প্রতিবাদে মঙ্গলবার বিকেলে উপজেলা শহরে পাঁচ শতাধিক বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মী বিক্ষোভ মিছিল করেন। তাঁদের দাবি, মামলার বাদী মো. ছগির হাওলাদারকে দল থেকে বহিষ্কার করা হোক এবং বিএনপি নেতা-কর্মীদের হয়রানি করার জন্য মামলা করায় তাঁকে শাস্তির আওতায় আনা হোক।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, মামলার আসামিদের তালিকায় রয়েছেন উপজেলার শারিকখালী ইউনিয়ন যুবদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও ইউপি সদস্য মো. নিজাম আকন (৪৪ নম্বর), তার ভাই যুবদল নেতা বেল্লাল আকন (৩৬ নম্বর), বড়বগী ইউনিয়নের যুবদল নেতা হাবিব (৭২ নম্বর) এবং শ্রমিক দল নেতা হারুন চৌকিদার। এ ছাড়া রাখাইন সম্প্রদায়ের মংনানসে, মংনান্ট এবং থুইমং সুঁই তালুকদারকেও এই মামলায় আসামি করা হয়েছে।

তালতলী উপজেলা বিএনপির যুগ্ম-আহ্বায়ক আমিনুল ইসলাম লিটন মোল্লা বলেন, ‘মামলার বাদী মো. ছগির হাওলাদার ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের সঙ্গে সক্রিয় বিএনপি নেতা-কর্মীদের আসামি করেছেন। এটা অত্যন্ত জঘন্য কাজ।’ তিনি আরও বলেন, ‘বাদীর জমিজমা নিয়ে বিরোধীদেরও এই মামলায় আসামি করা হয়েছে।’

তালতলী উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস-চেয়ারম্যান ও বিএনপির সাবেক সদস্যসচিব মিয়া মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তাক বলেন, ‘দলীয় কার্যালয়ে হামলা ভাঙচুরের ঘটনার দিন বাদী ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন না। বাদী নিজের স্বার্থ উদ্ধার করতে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে বিএনপির নেতা-কর্মীদের এই মামলায় আসামি করেছেন।’

রাখাইন সম্প্রদায়ের মংনানসে ও মংনান্ট বলেন, আমরা কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত নই। বাদী জমি দখলের জন্য আমাদের মামলায় আসামি করেছেন। জমি নিয়ে এখনো আদালতে তিনটি মামলা চলমান রয়েছে।

নিজাম আকন বলেন, ‘বাদী আমার কাছে এক লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেছেন। তার দাবিকৃত টাকা না দেওয়ায় আমাকে ও আমার ভাইকে আসামি করেছেন।’

তবে মামলার বাদী মো. ছগির হাওলাদার বিএনপি নেতা-কর্মীদের আসামি করার কথা অস্বীকার করে বলেন, ‘আওয়ামী লীগ রাজনীতির সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে মামলা করেছি। আমার সঙ্গে বিরোধ রয়েছে এমন কাউকে ওই মামলার আসামি করিনি। রাজনৈতিকভাবে হেনস্তা করতে আমার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ মিছিল করা হয়েছে।’

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ওসি মো. ইকরাম হোসেন বলেন, ‘আদালতের আদেশ পেয়েছি। তদন্তে যাদের বিরুদ্ধে প্রমাণ পাওয়া যাবে, তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করা হবে। প্রমাণ না থাকলে অভিযোগপত্র থেকে তাদের অব্যাহতির সুপারিশ করা হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

টাকা চুরির জন্য সন্দেহ করায় মা-মেয়েকে হত্যা

এনসিপির ১২৫ প্রার্থী: তালিকায় ১৪ নারী, বিএনপির দুই ও জাপার এক নেতা

খালেদা ও তারেকের ২ আসনে প্রার্থী দিল এনসিপি

কুষ্টিয়ায় যুবককে গুলির পর কুপিয়ে ফেলে গেল দুর্বৃত্তরা

‘নিরামিষ ক‍্যাপশনে’ আসিফ-মাহফুজকে শুভকামনা জানালেন ফারুকী, অরিজিনাল ক‍্যাপশন বললেন পারসোনালি

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

কারাবন্দি যুবক ও দুই জুলাই যোদ্ধার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির ‘মিথ্যা মামলা’ দেওয়ার অভিযোগ

 নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

চট্টগ্রামে চাঁদাবাজির একটি মামলায় এমন এক যুবককে আসামি করা হয়েছে, যিনি ঘটনার সময় কারাগারে ছিলেন। তাঁর বিরুদ্ধে দলবলসহ একটি প্রতিষ্ঠানে গিয়ে চার লাখ টাকা চাঁদাদাবির অভিযোগ তোলা হয়েছে। একই মামলায় দুই জুলাই যোদ্ধাকেও আসামি করা হয়েছে, যাঁরা ঘটনার সঙ্গে কোনোভাবেই জড়িত নয় বলে দাবি করছেন।

গত ৪ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) কমিশনার হাসিব আজিজের দপ্তরে ভুক্তভোগীদের মধ্যে একজনের একটি লিখিত অভিযোগে এই তথ্য জানা গেছে। মোহাম্মদ শাহীন নামে একজন গেজেটেড জুলাইযোদ্ধা এই অভিযোগটি করেছেন। শাহীন পাঁচলাইশ থানা ছাত্রদলের যুগ্ম আহবায়ক হিসেবেও আছেন। গত বছর ১৮ জুলাই ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় তিনি গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন।

এর আগে গত ২৩ নভেম্বর মো. হাসান নামে এক ব্যক্তি নিজেকে স্কেভেটর অপারেটর পরিচয় দিয়ে বাদী হয়ে ১০ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা ২০-২৫ জনকে আসামি দিয়ে নগরের খুলশী থানায় চাঁদাবাজির মামলাটি করেন। মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে চাঁদা না পেয়ে গত ১৮ নভেম্বর দিবাগত রাত ১ টায় নগরের পলিটেকনিক্যাল এলাকা থেকে একটি স্কেভেটর জোরপূর্বক নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ তোলা হয়।

জানা গেছে, মামলায় ইসমাইল হোসেন ওরফে মাইকেল বাবু (৩০) নামে এক যুবককে ৬ নম্বর আসামি করা হয়েছে, যিনি মামলায় উল্লিখিত তারিখে চাঁদাবাজির ঘটনার প্রায় আড়াই সপ্তাহ আগে অন্য একটি মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে বন্দি ছিলেন। মামলায় উল্লিখিত তারিখের এক সপ্তাহ পরও তিনি কারাগারে ছিলেন।

নগরের বায়েজিদে রুবি গেইট এলাকার বাসিন্দা মাইকেল বাবু এলাকায় ছাত্রদলকর্মী হিসেবে পরিচয় দিয়ে থাকেন।

চট্টগ্রাম মহানগর আদালতের পুলিশের জিআরও শাখার তথ্যে, গত ৩ নভেম্বর ইসমাইল হোসেন ওরফে মাইকেল বাবু বায়েজিদ থানার একটি মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে ছিলেন, ২৫ নভেম্বর আদালত ওই আসামিকে জামিন দেন। পরদিন ২৬ নভেম্বর তিনি কারাগার থেকে জামিনে বেরিয়ে আসেন।

চাঁদাবাজির একই মামলায় নগর পাঁচলাইশ থানা ছাত্রদলের যুগ্ম আহবায়ক ও জুলাইযোদ্ধা মো. শাহীন ও তাঁর ভাই ফাহিমকেও আসামি করা হয়েছে। পুলিশ কমিশনারের কাছে দেয়া অভিযোগে তিনি তাঁর বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া চাঁদাবাজির ভুয়া মামলাটির সুষ্ঠু তদন্ত চেয়ে প্রতিবেদনের আলোকে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থার নেওয়ার আবেদন করেছেন।

শাহীন অভিযোগে উল্লেখ করেন, মামলার বাদী হাসান সীতাকুণ্ডের জঙ্গল ছলিমপুরের চিহ্নিত সন্ত্রাসী ও পাহাড়খেকো হিসেবে পরিচিত। জঙ্গল ছলিমপুরে শীর্ষ সন্ত্রাসী মো. ইয়াছিনের অনুসারী তিনি। এস্কেভেটর দিয়ে রাতের আধারে পাহাড় কাটাই তাঁর কাজ। তাঁর বিরুদ্ধে চট্টগ্রামের বিভিন্ন থানায় মামলা রয়েছে। পরিবেশ অধিদপ্তরেও একাধিক অভিযোগ রয়েছে। এই ধরণের অপরাধীর করা সাজানো মামলাটি সম্পূর্ণ বানোয়াট ও ভিত্তিহীন।

মোহাম্মদ শাহীন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘একটি অপরাধী চক্র আর্থিক, রাজনৈতিক ও সামাজিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করতে আমি ও আমার পরিবারকে জড়িয়ে মিথ্যা মামলায় আসামি বানিয়ে মিডিয়া ট্রায়ালের মাধ্যমে অপরাধী বানানোর চেষ্টা করছে।’

তিনি বলেন, ‘জঙ্গল ছলিমপুরে ইয়াছিন বাহিনীর চাঁদাবাজির সাম্রাজ্য ও সন্ত্রাসীদের আস্তানা রয়েছে। সে এখন ছলিমপুর সংলগ্ন বায়েজিদের পাহাড়ি এলাকা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে। ওই চক্রের সঙ্গে প্রতিহিংসায় লিপ্ত কয়েকজন রাজনৈতিক নেতাকর্মী রয়েছে। সেই চক্রটি আমাদের ছাত্রদল ও যুবদল নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানির মাধ্যমে এলাকা ছাড়ার চেষ্টা করছে।’

খুলশী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহীনুর জামান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘চাঁদাবাজির অভিযোগে আমরা মামলাটি নিয়েছিলাম। তখন তো এতকিছু যাচাই-বাছাইয়ের সুযোগ থাকে না। মামলাটি বর্তমানে তদন্ত চলছে, কে কারাগারে ছিল বা কার সম্পৃক্ততা ছিল না সেটা তদন্ত শেষে বেরিয়ে আসবে। তখন মামলায় কারো সম্পৃক্ততা পাওয়া না গেলে তাঁকে আসামি থেকে বাদ দেওয়া হবে।’

মামলার বাদী মো. হাসানের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এক আসামি কারাগারে ছিলেন সেটা তো ঘটনার অনেক পরে। আসলে তাঁরা দীর্ঘদিন থেকে আমার কাছে চাঁদাদাবি করে আসছে। শেষ পর্যন্ত আমার একটি স্কেভেটর জোরপূ্বক নিয়ে গিয়ে বিক্রি করে দিয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

টাকা চুরির জন্য সন্দেহ করায় মা-মেয়েকে হত্যা

এনসিপির ১২৫ প্রার্থী: তালিকায় ১৪ নারী, বিএনপির দুই ও জাপার এক নেতা

খালেদা ও তারেকের ২ আসনে প্রার্থী দিল এনসিপি

কুষ্টিয়ায় যুবককে গুলির পর কুপিয়ে ফেলে গেল দুর্বৃত্তরা

‘নিরামিষ ক‍্যাপশনে’ আসিফ-মাহফুজকে শুভকামনা জানালেন ফারুকী, অরিজিনাল ক‍্যাপশন বললেন পারসোনালি

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ময়মনসিংহে টমেটো খেতে ‘মড়ক’, দিশেহারা কৃষক

ময়মনসিংহ প্রতিনিধি
মড়কের কারণে আধা-পাকা টমেটো গাছ থেকে ঝরে পড়ছে। সেই টমেটো তুলে কৃষকরা ফেলে দিচ্ছেন। ছবি: আজকের পত্রিকা
মড়কের কারণে আধা-পাকা টমেটো গাছ থেকে ঝরে পড়ছে। সেই টমেটো তুলে কৃষকরা ফেলে দিচ্ছেন। ছবি: আজকের পত্রিকা

ময়মনসিংহের চরাঞ্চলে টমেটো খেতে ‘মড়ক’ দেখা দিয়েছে। এতে গাছ মরে ঝরে পড়ছে আধা—পাকা টমেটো। ধারদেনা করে টমেটোর এমন ক্ষতিতে দিশাহারা হয়ে পড়েছে কৃষক। এমন পরিস্থিতে কৃষি বিভাগের সহযোগিতা ও পরামর্শ না পাওয়ার অভিযোগ কৃষকদের।

সম্প্রতি জেলার সদর উপজেলার বোররচর ইউনিয়নের বোররচর গ্রামের ব্রহ্মপুত্র নদের পাড়ের বিস্তৃত জমিতে গিয়ে দেখা যায় টমেটো, বেগুন, শিম, লাউ, করলা এবং কাঁচা মরিচের আবাদ হয়েছে। ফলনও ভালো হয়েছে। সর্বত্রই সবুজের সমারোহ। তবে বাম্পার ফলন হওয়া টমেটো খেতে দেখা দিয়েছে ’মড়ক’। এর কারণে আধা—পাকা টমেটো গাছ থেকে ঝরে পড়ছে। সেই টমেটো তুলে কৃষকরা ফেলে দিচ্ছেন। নানা ধরণের কীটনাশক প্রয়োগ করেও মিলছে না সমাধান।

সাত কাঠা জমিতে সাড়ে তিন লাখ টাকা খরচ করে টমেটো আবাদের কথা জানিয়ে কৃষক রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘প্রথমে একবার চারা রোপন করার পরেই সেই চারা মারা গেছে। পরে আবার টমেটোর চারা রোপন করি। গাছে যখন ফলন এসে পাকতে শুরু করার সময় অজানা রোগে গাছ মরে টমেটো ঝরে পড়ছে। কৃষি বিভাগের সহযোগিতা এবং পরামর্শ কোনটাই পাচ্ছি না। অন্তত তাদের পরামর্শ পেলে সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে পারতাম। এবার যে ক্ষতি হয়েছে আগামী পাঁচ বছরেও তা পুষিয়ে ওঠা সম্ভব হবে না।’

একই গ্রামের আরেক কৃষক আব্দুল আজিজ বলেন, ‘এখানে ১১শতাংশ সমান এক কাঠা। আমি ১৫ কাঠা জমিতে টমেটোর আবাদ করেছি। ফলন হয়েছিল দেখার মত। কিন্তু খেতের অধিকাংশ গাছ মরে গিয়ে টমেটো পড়ছে। এসব টমেটো ডোবায় ফেলে দিচ্ছি। টমেটো আবাদ করতে গিয়ে এখনো ৬ লাখ টাকা ঋণের মধ্যে রয়েছি। এসব আপনাদের বলেও লাভ নেই। আমার মত সকল কৃষকেরই একই সমস্যা। কিভাবে কি করবো বুঝে উঠতে পারছি না।’

মড়কের কারণে আধা-পাকা টমেটো গাছ থেকে ঝরে পড়ছে। সেই টমেটো তুলে কৃষকরা ফেলে দিচ্ছেন। ছবি: আজকের পত্রিকা
মড়কের কারণে আধা-পাকা টমেটো গাছ থেকে ঝরে পড়ছে। সেই টমেটো তুলে কৃষকরা ফেলে দিচ্ছেন। ছবি: আজকের পত্রিকা

চরাঞ্চলে এবার ১২শ হেক্টর জমিতে টমেটোর আবাদ হয়েছে জানিয়ে সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্ত জুবায়রা বেগম সাথী বলেন, ‘টমেটো গাছে মড়ক লেগেছে শুনার পরপরই চরাঞ্চলে গিয়েছি। খেত পরিদর্শন করে কৃষকদের নিয়ে সচেতনতামূলক আলোচনা করেছি। প্রাথমিকভাবে বুঝা যাচ্ছে প্রতিবছর একই জমিতে শুধু টমেটো চাষ করার কারণে এমনটি হয়ে থাকতে পারে। কৃষকরা অতিরিক্ত মাত্রায় কীটনাশক প্রয়োগ করেন। যার কারণে মড়ক অব্যাহত রয়েছে। সেখানকার মাটি পরীক্ষা করে সুনির্দিষ্ট কারণ যাচাইয়ের চেষ্টা করা হচ্ছে।’

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ময়মনসিংহের উপ-পরিচালক মো. এনামুল হক বলেন, জেলায় এবছর ২২ হাজার ৬শ হেক্টর জমিতে সবজি আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। ফলনও প্রত্যাশা অনুযায়ী হয়েছে। তবে সদর উপজেলার চরাঞ্চলে টমেটো গাছ মরে যাওয়ার খবর শুনে কৃষি কর্মকতার্দের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য। কৃষকরা বেশি ক্ষয়ক্ষতির শিকার হলে আমরা সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

টাকা চুরির জন্য সন্দেহ করায় মা-মেয়েকে হত্যা

এনসিপির ১২৫ প্রার্থী: তালিকায় ১৪ নারী, বিএনপির দুই ও জাপার এক নেতা

খালেদা ও তারেকের ২ আসনে প্রার্থী দিল এনসিপি

কুষ্টিয়ায় যুবককে গুলির পর কুপিয়ে ফেলে গেল দুর্বৃত্তরা

‘নিরামিষ ক‍্যাপশনে’ আসিফ-মাহফুজকে শুভকামনা জানালেন ফারুকী, অরিজিনাল ক‍্যাপশন বললেন পারসোনালি

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

৩৫ ফুট নিচে ক্যামেরা পাঠিয়েও শিশুটিকে দেখা যায়নি

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী
রাত ১টা পর্যন্ত প্রায় ২৫ ফুট খনন করা সম্ভব হয়েছে। মাটি খুড়েই শিশুটির কাছে পৌঁছাতে চান উদ্ধার কর্মীরা। ছবি: আজকের পত্রিকা
রাত ১টা পর্যন্ত প্রায় ২৫ ফুট খনন করা সম্ভব হয়েছে। মাটি খুড়েই শিশুটির কাছে পৌঁছাতে চান উদ্ধার কর্মীরা। ছবি: আজকের পত্রিকা

রাজশাহীর তানোর উপজেলার কোয়েলহাট পূর্বপাড়া গ্রামে গভীর নলকূপ বসাতে খনন করা গর্তে পড়ে যাওয়া শিশু সাজিদকে (২) দেখতে কয়েক দফা ক্যামেরা নামিয়েছেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। তবে ৩৫ ফুট পরে ক্যামেরায় আর কিছু দেখা যায়নি। উদ্ধারকারীরা শিশুটিকেও দেখতে পাননি।

তানোরের পাঁচন্দর ইউনিয়ন উচ্চ খরাপ্রবণ এলাকা। এখানে মাটির ১২০ থেকে ১৩০ ফুট গভীরেও ভূ-গর্ভস্থ পানির সন্ধান মেলে না। এ জমির মালিক কছির উদ্দিন একটি গভীর নলকূপ বসাতে চেয়েছিলেন। তাই বছর খানেক আগে ৮ ফুট ব্যাসার্ধে খনন করেছিলেন। কিন্তু পানি না পেয়ে গভীর নলকূপ বসানো হয়নি। সেই গর্তে পড়ে গেছে গ্রামের রাকিবুল ইসলামের দুই বছর বয়সী ছেলে সাজিদ।

বুধবার দুপুরের এ ঘটনার পর ফায়ার সার্ভিসের তিনটি ইউনিট উদ্ধার কাজ শুরু করে। ক্যামেরা নামিয়ে তারা শিশুটিকে দেখতে পায়নি। বিকেল থেকে ওই সরু গর্তের পাশে ভেকু (স্কেভেটর) দিয়ে খনন শুরু করেছে ফায়ার সার্ভিস। রাত ১টা পর্যন্ত প্রায় ২৫ ফুট খনন করা সম্ভব হয়েছে। এভাবে মাটি খুড়েই শিশুটির কাছে পৌঁছাতে চান উদ্ধার কর্মীরা। দুপুর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত অসংখ্য মানুষ উৎকণ্ঠা নিয়ে উদ্ধার তৎপরতা দেখছেন। ভিড় সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

এ পরিস্থিতিতে ঘটনাস্থলে আছেন তানোর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাঈমা খান। উদ্ধার কাজে নেতৃত্ব দিচ্ছেন ফায়ার সার্ভিসের রাজশাহী স্টেশনের সহকারী পরিচালক দিদারুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘আমরা ৩৫ ফুট পর্যন্ত গভীরে ক্যামেরা পাঠিয়ে ভিকটিমকে দেখতে পাইনি। আমরা ভিকটিমকে অক্ষতভাবে উদ্ধার করতে চাই। তবে ভিকটিম বেঁচে আছে কি না সেটাও আমরা জানি না। তাকে অক্ষতভাবে উদ্ধার করতে পাশে মাটি খনন করা হচ্ছে।’

ইউএনও নাঈমা খান বলেন, ‘ফায়ার সার্ভিস উদ্ধার কাজ করছে। সেখানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা আছে। উদ্ধার কাজ চলমান আছে। আল্লাহ যে শিশুটিকে মায়ের কোলে ফিরিয়ে দেয়।’

শিশু সাজিদের মা রুনা খাতুন জানান, তাঁর তিন ছেলে। দুই বছরের সাজিদ মেজো। তাঁদের একটি ট্রলি দেবে গেলে ছোট ছেলে সাদমানকে কোলে নিয়ে আর সাজিদের হাত ধরে তিনি বাড়ির পাশের ওই মাঠে আসেন। ফেরার সময় সাজিদ ওই গর্তে পড়ে যায়।

রুনা বলেন, ‘আমি সামনে হাঁটছি, সাজিদ পেছনে। একটু পর পেছনে ঘুরে দেখি, সাজিদ নাই। শুধু মা মা ডাক শুনছি।’

সাজিদের মা জানান, গর্তের মুখে খড় ছিল। তাই গর্ত বোঝা যায়নি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

টাকা চুরির জন্য সন্দেহ করায় মা-মেয়েকে হত্যা

এনসিপির ১২৫ প্রার্থী: তালিকায় ১৪ নারী, বিএনপির দুই ও জাপার এক নেতা

খালেদা ও তারেকের ২ আসনে প্রার্থী দিল এনসিপি

কুষ্টিয়ায় যুবককে গুলির পর কুপিয়ে ফেলে গেল দুর্বৃত্তরা

‘নিরামিষ ক‍্যাপশনে’ আসিফ-মাহফুজকে শুভকামনা জানালেন ফারুকী, অরিজিনাল ক‍্যাপশন বললেন পারসোনালি

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

কুষ্টিয়ার ৪টি আসন: ভোটার টানতে মরিয়া দুই দল

  • সব কটি আসনেই বিএনপির প্রাথমিক মনোনয়ন ঘিরে অস্থিরতা।
  • মনোনয়নবঞ্চিতদের পক্ষে তৎপর তাঁদের অনুসারীরা।
  • বিএনপির বিরোধে ফায়দা তুলতে চায় জামায়াত।
দেবাশীষ দত্ত, কুষ্টিয়া 
আপডেট : ১১ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৭: ৩৭
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে কুষ্টিয়ার চারটি আসনের সব কটিতেই প্রাথমিক মনোনয়ন চূড়ান্ত করেছে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী।

তবে চার আসনেই বিএনপির মনোনয়ন ঘিরে চলছে অস্থিরতা। বিক্ষোভ-সমাবেশের মাধ্যমে দলীয় প্রার্থীর প্রতি নিজেদের অনাস্থার জানান দিচ্ছে নেতা-কর্মীদের একাংশ। মনোনয়নবঞ্চিতদের নেতাদের পক্ষে আন্দোলনে নেমেছেন তাঁদের অনুসারীরা। বিএনপির অভ্যন্তরীণ বিরোধকে কাজে লাগিয়ে ভোটের মাঠে ফায়দা তুলতে তৎপর জামায়াত।

কুষ্টিয়া-১ (দৌলতপুর) আসনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী দলের উপজেলা সভাপতি রেজা আহমেদ বাচ্চু মোল্লা। ঢাকা মহানগর উত্তর যুবদলের আহ্বায়ক শরিফ উদ্দিন জুয়েলও এখানে মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন। প্রাথমিক মনোনয়ন ঘোষণার পর তিনি দলের সিদ্ধান্তকে সমর্থন জানালেও এখনো সভা-সমাবেশের মাধ্যমে মাঠে সক্রিয় রয়েছেন। ফলে চাপের মুখে পড়েছেন বাচ্চু মোল্লা। জামায়াতের সম্ভাব্য প্রার্থী দৌলতপুর থানার আমির বেলাল উদ্দিন। ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী হতে পারেন মুফতি আমিনুল ইসলাম। খেলাফত মজলিসের মনোনয়ন পেতে পারেন শরীফুল ইসলাম। বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস থেকে আসাদুজ্জামান, এনসিপি থেকে নুসরাত তাবাসসুম জ্যোতি এবং গণঅধিকার পরিষদ থেকে শাহাবুল মাহমুদ প্রার্থী হতে পারেন।

কুষ্টিয়া-২ (মিরপুর-ভেড়ামারা) আসনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী ব্যারিস্টার রাগীব রউফ চৌধুরী। তবে তাঁকে মেনে নিতে রাজি নন দলের আরেক মনোনয়নপ্রত্যাশী সাবেক সংসদ সদস্য শহীদুল ইসলামের সমর্থকেরা। এতে স্থানীয় বিএনপিতে বিভাজন দেখা দিয়েছে। রাগীব রউফ চৌধুরীর মনোনয়ন বাতিলের দাবিতে আন্দোলনে নেমেছেন শহীদুল ইসলামের অনুসারীরা। তাঁদের অভিযোগ, দল শহীদুলের দীর্ঘদিনের কাজের মূল্যায়ন করেনি। বিএনপির মিত্র হিসেবে জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) মহাসচিব ও সাবেক এমপি আহসান হাবীব লিংকনও এখানে মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন। জামায়াতের সম্ভাব্য প্রার্থী সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল গফুর। বিএনপি ও তার মিত্রদের দ্বন্দ্বকে কাজে লাগিয়ে তিনি ফায়দা তুলতে পারেন বলে মনে করছেন স্থানীয়রা। ইসলামী আন্দোলন থেকে মোহাম্মদ আলী, খেলাফত মজলিস থেকে মো. আব্দুল হামিদ ও এনসিপি থেকে নয়ন আহমেদের নাম শোনা যাচ্ছে।

কুষ্টিয়া-৩ (সদর) আসনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী প্রকৌশলী জাকির হোসেন সরকার। তবে তাঁর মনোনয়নে ক্ষুব্ধ আরেক মনোনয়নপ্রত্যাশী সাবেক এমপি অধ্যক্ষ সোহরাব উদ্দিনের অনুসারীরা। জামায়াতের সম্ভাব্য প্রার্থী ইসলামি বক্তা মুফতি আমির হামজা। গণঅধিকার পরিষদ থেকে আব্দুল খালেক, খেলাফত মজলিস থেকে সিরাজুল হক, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস থেকে আবদুল লতিফ খান এবং ইসলামী আন্দোলন থেকে আহম্মদ আলী প্রার্থী হতে পারেন।

কুষ্টিয়া-৪ (কুমারখালী-খোকসা) আসনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী সাবেক সংসদ সদস্য সৈয়দ মেহেদী আহমেদ রুমী। তবে তাঁর মনোনয়ন বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক মেয়র নুরুল ইসলাম আনসার প্রামাণিকের অনুসারীরা। জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক শেখ সাদী, কৃষক দলের হাফেজ মো. মঈনউদ্দিনও এই আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন। ফলে তাঁদের অনুসারীরাও আসনটিতে প্রার্থী পরিবর্তন চান। জামায়াতের সম্ভাব্য প্রার্থী উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান আফজাল হোসেন। বিএনপির অন্তঃকোন্দলে এখানে জয়ের আশা দেখছেন জামায়াতের নেতা-কর্মীরা। খেলাফত মজলিস থেকে আলী আশরাফ, ইসলামী আন্দোলন থেকে আনোয়ার হোসেন খান, গণঅধিকার পরিষদ থেকে শাকিল আহমেদ মনোনয়ন পেতে পারেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

টাকা চুরির জন্য সন্দেহ করায় মা-মেয়েকে হত্যা

এনসিপির ১২৫ প্রার্থী: তালিকায় ১৪ নারী, বিএনপির দুই ও জাপার এক নেতা

খালেদা ও তারেকের ২ আসনে প্রার্থী দিল এনসিপি

কুষ্টিয়ায় যুবককে গুলির পর কুপিয়ে ফেলে গেল দুর্বৃত্তরা

‘নিরামিষ ক‍্যাপশনে’ আসিফ-মাহফুজকে শুভকামনা জানালেন ফারুকী, অরিজিনাল ক‍্যাপশন বললেন পারসোনালি

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত