Ajker Patrika

ভাঙা দরজা, পানি নেই; পাথরঘাটা হাসপাতালে টয়লেট ব্যবহার করতে হয় স্বজনদের পাহারায়

তারিকুল ইসলাম কাজী রাকিব, পাথরঘাটা (বরগুনা) 
পাথরঘাটা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের টয়লেটগুলোর নোংরা অবস্থা, ভাঙাচোরা দরজা ও তীব্র পানির সংকট। ছবি: আজকের পত্রিকা
পাথরঘাটা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের টয়লেটগুলোর নোংরা অবস্থা, ভাঙাচোরা দরজা ও তীব্র পানির সংকট। ছবি: আজকের পত্রিকা

বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের টয়লেটগুলোর নোংরা অবস্থা, ভাঙাচোরা দরজা ও তীব্র পানির সংকটে রোগী ও তাদের স্বজনদের চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। অবস্থা এমন যে টয়লেট ব্যবহার করতে অনেক ক্ষেত্রেই এক রোগীকে অন্যজনের সহায়তা নিতে হচ্ছে। কেউ দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে পাহারা দিচ্ছেন, অন্যজন টয়লেট ব্যবহার করছেন।

সরেজমিনে দেখা যায়, হাসপাতালের অধিকাংশ টয়লেটের দরজা ভাঙা, কোথাও দরজার পরিবর্তে ব্যবহার করা হচ্ছে ময়লা চাদর। বেশির ভাগ টয়লেটে পানি না থাকায় ব্যবহার শেষে পরিষ্কার রাখা সম্ভব হচ্ছে না। নারী রোগীদের জন্য নির্ধারিত টয়লেটগুলো সম্পূর্ণ ব্যবহার অনুপযোগী। এমনকি হাসপাতালের ভিআইপি কেবিনের বাথরুমের অবস্থাও বেহাল। দীর্ঘদিন ধরে এই অবস্থার কোনো পরিবর্তন না হওয়ায় রোগী ও তাদের স্বজনদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।

রোগীর স্বজন সাইমুম বলেন, ‘এখানে টয়লেট ব্যবহার করা মানে মানসিক কষ্ট ভোগ করা। কেউ দরজার ওপাশে না দাঁড়ালে ব্যবহার করা যায় না। পানি নেই, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতারও কোনো ব্যবস্থা নেই।’

হাসপাতালের এক কর্মচারী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, টয়লেটগুলোর অবস্থা অত্যন্ত খারাপ। রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব থাকলেও জনবল-সংকটের কারণে নিয়মিত পরিষ্কার করা সম্ভব হয় না।

হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, পাথরঘাটা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অনুমোদিত ২০৭ পদের মধ্যে ১১৪টি শূন্য। পরিচ্ছন্নতাকর্মী থাকার কথা পাঁচজন, কিন্তু বর্তমানে রয়েছেন মাত্র একজন। ফলে ৫০ শয্যার এই হাসপাতাল ও পুরো প্রাঙ্গণ পরিষ্কার রাখা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে।

কর্মরত পরিচ্ছন্নতাকর্মী আক্ষেপ করে বলেন, ‘রোগীর চাপ এখন অনেক বেশি। এক পাশ পরিষ্কার করতে করতেই অন্য পাশে আবার নোংরা হয়ে যায়। একা এত বড় হাসপাতাল পরিষ্কার রাখা আমার পক্ষে সম্ভব নয়।’

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা নীল রতন সরকার বলেন, ‘অবকাঠামোগতভাবে পাথরঘাটা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অবস্থা নাজুক। দীর্ঘদিন ধরে টয়লেট, বাথরুমসহ সার্বিক স্যানিটেশন ব্যবস্থার উন্নয়ন হয়নি। আমরা নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণের চেষ্টা করি, কিন্তু জনবল-সংকটের কারণে সব জায়গা একসঙ্গে পরিষ্কার রাখা সম্ভব হয় না।’

নীল রতন সরকার সমাধানের আশ্বাস দিয়ে বলেন, ‘সমস্যাগুলো আমরা নিয়মিত ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে আসছি। ইতিমধ্যে নতুন পরিচ্ছন্নতাকর্মী নিয়োগের জন্য অনুরোধ পাঠানো হয়েছে। পাশাপাশি স্থানীয়ভাবে কিছু অস্থায়ী উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে, যেন রোগীরা অন্তত টয়লেট ব্যবহারে কিছুটা স্বস্তি পান। আশা করছি, দ্রুত সংস্কার ও নতুন নিয়োগের মাধ্যমে হাসপাতালের সার্বিক পরিবেশের উন্নতি ঘটবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত