Ajker Patrika

বাগেরহাটের চিতলমারী: হাসপাতাল চলছে ২ চিকিৎসকে

  • উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মাত্র তিনজন চিকিৎসক আছেন, সেবা দেন দুজন।
  • যে দুজন চিকিৎসক সেবা দিচ্ছেন, তাঁরাও মার্চে চলে যাবেন ঢাকায়।
  • প্রায় চার শ রোগী প্রতিদিন হাসপাতালটিতে চিকিৎসা নিতে আসে।
সেলিম সুলতান সাগর, চিতলমারী (বাগেরহাট) 
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

বাগেরহাটের চিতলমারী উপজেলায় প্রায় ২ লাখ মানুষের বসবাস। এই ২ লাখ মানুষের চিকিৎসাসেবায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মাত্র দুজন চিকিৎসক কাজ করছেন। রাতদিন ২৪ ঘণ্টা সেবা দিতে গিয়ে তাঁরা এখন হিমশিম খাচ্ছেন। যে দুজন চিকিৎসক বর্তমানে সেবা দিচ্ছেন, তাঁরাও উচ্চতর ডিগ্রি অর্জনের জন্য আগামী মার্চে ঢাকায় চলে যাবেন। তখন এ উপজেলার সাধারণ মানুষের চিকিৎসাসেবা বন্ধ হয়ে যাবে।

হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, প্রায় ২ লাখ মানুষের জন্য ৫০ শয্যার এ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বর্তমানে তিনজন চিকিৎসক আছেন। তবে তাঁদের মধ্যে একজন শারীরিক প্রতিবন্ধী। তাই দুজন চিকিৎসক দিয়েই চলছে চিকিৎসাসেবা।

সম্প্রতি উপজেলা মাসিক আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা চিকিৎসক শর্মী রায় এ বিষয়ে জানিয়েছেন।

জানা গেছে, এ উপজেলার সাতটি ইউনিয়নের ৬৩টি ওয়ার্ডের ১২৮টি গ্রাম থেকে প্রতিদিন প্রায় ৪০০ রোগী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিতে আসে। তাদের অধিকাংশই অসহায় ও গরিব। বর্তমানে এখানে মোট ১৬৪টি পদের মধ্যে ৫১টি পদই শূন্য রয়েছে। এর মধ্যে ইউনিয়ন পর্যায়সহ ২৭ জন চিকিৎসকের স্থলে ১০ জন কর্মরত আছেন। তাঁদের মধ্যে দুজন প্রেষণে (ডেপুটেশনে) কর্মরত। এখানে বর্তমানে আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও), জুনিয়র কনসালট্যান্ট (সার্জারি), জুনিয়র কনসালট্যান্ট (স্কিন অ্যান্ড ভিডি), জুনিয়র কনসালট্যান্ট (অপথালমোলজি), দুজন জুনিয়র কনসালট্যান্ট (শিশু), জুনিয়র কনসালট্যান্ট (মেডিসিন), জুনিয়র কনসালট্যান্ট (কার্ডিওলজি), জুনিয়র কনসালট্যান্ট (অর্থোপেডিক), জুনিয়র কনসালট্যান্ট (অ্যানেসথেসিওলজি), দুজন সহকারী সার্জন ও ইউনিয়ন পর্যায়ে ৪ জন সহকারী সার্জনের পদ দীর্ঘদিন ধরে শূন্য রয়েছে।

এ ছাড়া এ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রধান সহকারী কাম হিসাবরক্ষক, পরিসংখ্যানবিদ, ক্যাশিয়ার, স্টোরকিপার, অফিস সহকারী কাম মুদ্রাক্ষরিক, নার্সিং সুপারভাইজার, মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (ল্যাব), মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (এসআই), সহকারী নার্স, স্বাস্থ্য সহকারী ১৭টিসহ দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণির ২৫টি, চতুর্থ শ্রেণির ৬টি পদসহ মোট ৫১টি পদ দীর্ঘদিন ধরে শূন্য রয়েছে।

এদিকে জনবলসংকটের কারণে প্রতিদিন দূরদূরান্ত থেকে আসা অসহায়, গরিব রোগীদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। তাঁরা বলছেন, হাসপাতালে এসে ঠিকমতো সেবা পাওয়া যায় না। চিকিৎসক না থাকায় সেবা নিতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়। এ সংকট দ্রুত দূর করতে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিও জানান তাঁরা।

এ বিষয়ে কথা হয় চিতলমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিতে আসা সুরশাইল গ্রামের রুহুল আমিন মিঠু, সোহেল সুলতান, মো. টিটাল শেখ ও ব্রহ্মগাতি গ্রামের মো. কামাল বিশ্বাসের সঙ্গে। তাঁরা অভিযোগ করেন, এখানে চিকিৎসা নিতে এলে কাঙ্ক্ষিত বিভাগের চিকিৎসক পাওয়া যায় না। চিকিৎসক যাঁরা আছেন, তাঁদের দিয়ে দেখাতে গেলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়। তাঁরা জরুরি ভিত্তিতে শূন্য পদগুলোয় চিকিৎসক নিয়োগের জোর দাবি জানান।

চিতলমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ফার্মাসিস্ট শিশির মজুমদার ও ক্যাশিয়ার মো. কুতুবুদ্দিন বলেন, ‘পদগুলো শূন্য থাকায় আমাদের একেকজনকে ৪-৫ জনের দায়িত্ব পালন করতে হয়। তাতেও আমাদের কোনো অসুবিধা নেই। কিন্তু চিকিৎসকের সংকটে রোগীদের অনেক ভোগান্তি হচ্ছে। এ সমস্যা দূর করা খুব জরুরি।’

চিতলমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আরএমও মুক্তি বিশ্বাস বলেন, ‘সেবার ব্রত নিয়ে আমরা

কাজ করছি। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সব কার্যক্রম চালু আছে। আমাদের দুজন চিকিৎসকের ওপর দিয়ে অনেক চাপ যাচ্ছে। শূন্য পদগুলো পূরণ করা খুব দরকার।’

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা চিকিৎসক শর্মী রায় জানান, বর্তমানে এখানে তিনজন চিকিৎসক কাজ করছেন। তাঁদের মধ্যে একজন শারীরিক প্রতিবন্ধী। তাই দুজন চিকিৎসক রাতদিন ২৪ ঘণ্টা সেবা দিতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন। এ দুজনও উচ্চতর ডিগ্রি অর্জনের জন্য আগামী মার্চে ঢাকায় চলে যাবেন। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘বিশ্বে প্রথম’ মনুষ্যবিহীন যুদ্ধবিমান থেকে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার সফল পরীক্ষা তুরস্কের

সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয়ের প্রথম সচিব হাবিবুর রহমান

অনেক সরকারি স্কুলে হচ্ছে না বার্ষিক পরীক্ষা, শিক্ষকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে সরকার

সাবেক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধানে নামছে দুদক

অবশেষে ভারত অনুমোদন দিল, বাংলাদেশ ছাড়ল ভুটানের পণ্যের চালান

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ