নওশাদ জামিল

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে নিয়ে বাংলাদেশ, ভারতসহ পৃথিবীর নানা দেশে বিপুল পরিমাণ সৃজনশীল ও মননশীল কাজ হয়েছে। আপনি কি মনে করেন, রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে নতুন কোনো কাজ করার বাকি আছে?
প্রথমেই বলি, যেকোনো শিল্পকর্ম বহুমাত্রিক ব্যাখ্যার দাবিদার। একধরনের ব্যাখ্যা পাওয়া যায় পাঠ্যপুস্তকে, যাকে প্রথাগত বলা যায়। একাডেমিক চর্চায় মাঝেমধ্যে নতুন ব্যাখ্যা পাওয়া যায়, কিন্তু বেশির ভাগ একাডেমিক চর্চাই ঘুরেফিরে একই কথা বলে। ৭০-৮০ বছর ধরে চিন্তার জগতে নানা আলোড়ন সৃষ্টি হচ্ছে। এক-দুই দশক পর পরই নতুন চিন্তার উদ্ভব হচ্ছে। বৈচিত্র্যময় ও বিস্ময়কর সব চিন্তা মানুষকে ভাবাচ্ছে, নতুন পথ দেখাচ্ছে। নতুন তত্ত্ব উপস্থিত হচ্ছে, যাকে আমরা থিওরি বলি। যেমন কার্ল মার্ক্স সমাজ পরিবর্তনের থিওরি দিয়েছেন। নারীবাদীরা বিভিন্ন থিওরি দিয়েছেন। একটা থিওরি থেকে একাধিক থিওরির উদ্ভব হতে পারে। এ রকমভাবে আমরা কাঠামোবাদ পেরিয়ে উত্তর-কাঠামোবাদে প্রবেশ করলাম, আধুনিকতা পেরিয়ে উত্তরাধুনিকতায় পা রাখলাম। উত্তরাধুনিক চিন্তাভাবনা স্থাপত্য থেকে নিয়ে সংস্কৃতি পাঠ ও সাহিত্য সমালোচনাকে প্রভাবিত করছে। পুরোনো কাজের নতুন নতুন ব্যাখ্যা তৈরি হচ্ছে। এ অবস্থায় পরিবর্তিত তত্ত্ব ও চিন্তার আলোকে যেকোনো শিল্পকর্মকে নতুন করে যাচাই করা যায়। রবীন্দ্রনাথকে এসব তত্ত্ব দিয়ে নতুন করে ব্যাখ্যার সুযোগ রয়েছে।
বাংলাদেশে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে রবীন্দ্রচর্চা হচ্ছে অনেক দিন ধরেই। তাঁর নামাঙ্কিত বিশ্ববিদ্যালয় হয়েছে, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান হয়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলোয় নানাধর্মী গবেষণা হচ্ছে। বাংলাদেশে প্রাতিষ্ঠানিক চর্চার মান ও রবীন্দ্রচর্চা সম্পর্কে আপনার অভিমত জানতে চাই।
প্রাতিষ্ঠানিক ও অপ্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে নানা কাজ হয়েছে। প্রাতিষ্ঠানিক চর্চার ভালো-মন্দ দুটো দিকই আছে। বিশ্ববিদ্যালয়কেন্দ্রিক চর্চায় বেশ কিছু ভালো কাজ হয়েছে। রবীন্দ্র শতবার্ষিকী এবং সার্ধশতবার্ষিকীতেও কিছু ভালো মানের প্রবন্ধ ও বই লেখা হয়েছে। আবার অনেক কাজ আছে দায়সারা গোছের, শুধু পিএইচডি ডিগ্রি অর্জনের জন্য কিংবা প্রমোশনের জন্য। তবে মানসম্পন্ন কাজ হচ্ছে না তা নয়, যদিও সংখ্যাটা কম। মানের ক্ষেত্রে সব সময়ই আমাদের কিছু ঘাটতি রয়ে যায়। এটা শুধু রবীন্দ্র গবেষণার ক্ষেত্রে নয়, সমাজ গবেষণা ও অন্যান্য ক্ষেত্রেও হয়। তবে আমাদের গবেষণাগত নানা সীমাবদ্ধতা বিবেচনায় নিলে সার্বিকভাবে আমি হতাশ নই, অন্তত রবীন্দ্রনাথকে বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে দেখার একটা চেষ্টা হচ্ছে।
এখন তরুণ গবেষকেরাও রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে কাজে আগ্রহী হচ্ছেন। বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে তাঁরা রবীন্দ্রনাথের সৃষ্টিকে ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করছেন, নানা রকম কাজ করছেন।
তরুণদের মধ্যে কেউ কেউ খুব ভালো কাজ করছেন। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের একটা অভিসন্দর্ভ সেদিন পড়লাম, রবীন্দ্রনাথের নৃত্যনাট্য নিয়ে চমৎকার একটি গবেষণা। যাঁরা ব্যাপক পড়াশোনা করে, পরিশ্রম করে, বিভিন্ন তত্ত্বের আলোকে রবীন্দ্রনাথকে গবেষণা করছেন, তাঁদের কেউ কেউ কাজের মধ্যে নতুনত্ব সৃষ্টি করছেন। সম্প্রতি উত্তরাধিকার পত্রিকায় রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে একটা নিবন্ধ পড়েছি, তাতে নতুন চিন্তাভাবনা দেখেছি। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়েও বিচ্ছিন্নভাবে রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে নতুন চিন্তার প্রকাশ হচ্ছে। কয়েক বছর আগে রবীন্দ্রনাথের নামে বিশ্ববিদ্যালয় হয়েছে, সেখানে একাডেমি চর্চা হচ্ছে, গবেষণা পুরোপুরি শুরু হয়নি।
বাংলাদেশে রবীন্দ্র-চিত্রকলা নিয়ে যাঁরা কাজ করেছেন, আপনি তাঁদের মধ্য অন্যতম। রবীন্দ্রনাথের চিত্রকলা নিয়ে নতুন কী কাজ করা যায়?
রবীন্দ্রনাথের চিত্রকলা নিয়ে নতুন লেখার অবকাশ আছে, কিন্তু আমাদের পক্ষে তাঁর চিত্রকলা, যেগুলো শান্তিনিকেতনে ও ভারতের অন্যান্য জায়গায় সংরক্ষিত আছে, তা দেখার প্রয়োজন। সেই সুযোগ নেই। এ জন্য তাঁর চিত্রকলা সম্পর্কে লেখালেখিতে প্রথাগত কথাবার্তাই বেশি উঠে আসে। তা ছাড়া বাংলাদেশে এখন শিল্পকলা নিয়ে কজনই বা লেখালেখি করেন? তরুণেরা কোথায়? যদি তরুণেরা উৎসাহিত না হন, নতুন চিন্তা আসবে কোত্থেকে?
বাংলাদেশে রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে নানা সময় বিতর্ক সৃষ্টি করতে চায় কিছু মহল। এ প্রসঙ্গে আপনার অভিমত কী?
সাহিত্যকর্ম নিয়ে বিতর্ক থাকা ভালো, তাতে বোঝা যায়, মনোযোগের কেন্দ্রে আছে সাহিত্য। বিতর্ক যদি হয় জেনে-বুঝে, যাকে আমরা বলি শিক্ষিত ও বুদ্ধিবৃত্তিক বিতর্ক, তাহলে তাকে স্বাগত জানানো উচিত। পুবে-পশ্চিমে তাকালে দেখতে পাব, কবি, সাহিত্যিক, শিল্পীকে নিয়ে নিরন্তর বিতর্ক হচ্ছে। শেক্সপিয়ারকে নিয়ে যুগের পর যুগ বিতর্ক হয়েছে। তাতে দিন শেষে পাঠকদের উপকার হয়, নতুন করে জানার ও চিন্তার সুযোগ সৃষ্টি হয়। অন্যদিকে মানুষ যখন না জেনে-বুঝে, না পড়ে বিতর্ক করে, তখন সমস্যা তৈরি হতে পারে। এ রকম বিতর্ক উপকারী নয়। এটাই বাংলাদেশে হচ্ছে বলা যায়। রবীন্দ্রনাথকে কতজন গভীরভাবে পড়েছেন, জেনেছেন, সে প্রশ্ন থেকে যায়। রবীন্দ্রনাথকে পড়া মানে কয়েক শ থেকে কয়েক হাজার পৃষ্ঠা পড়া, এ পরিশ্রম অনেকেই করছেন না। পড়ার গভীরতা না থাকলে বিতর্কের কোনো মানে নেই, অর্থ নেই। এটা শুধু কিছু মানুষকে উত্তেজিত করবে। উত্তেজনা প্রয়োজন বটে, কিন্তু অর্থহীন উত্তেজনা মানুষকে কিছুই দেয় না।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে নিয়ে অনেকে রক্ষণশীল আচরণ করেন। রক্ষণশীল আচরণ কি বিতর্ককে উসকে দেয়?
যখনই রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে বিতর্ক হয়, তখনই বুঝতে হবে রবীন্দ্রনাথ গুরুত্বপূর্ণ ও প্রাসঙ্গিক। কেউ যখন রবীন্দ্রসংগীত বিকৃতভাবে গাইছেন, তখন তিনি রবীন্দ্রনাথকেই আশ্রয় করছেন, তাতে বিচলিত হওয়ার কিছু নেই। অনেকে দেখি এসব ব্যাপারে খুবই রক্ষণশীল, কিন্তু যুগ পাল্টেছে। দৃশ্যমাধ্যম এখন মানুষের মনোজগৎ দখল করে নিয়েছে। এখন পড়ার চেয়ে দেখার চর্চা বেশি, দেখানোর চর্চাও। এ জন্য কি চাইলেই ইউটিউব-ফেসবুকে রবীন্দ্র-নজরুলের গান গাইতে পারেন। তাতে তাঁরা আনন্দ পান। রক্ষণশীলরা তা না শুনলেই পারেন। অতি-রক্ষণশীলতা কখনো কখনো ক্ষতির কারণ হতে পারে। এতে নতুন সময়টাকে অনুধাবন করা যায় না, নতুন চিন্তার বিস্তার ঘটে না, অন্তত তাঁদের ক্ষেত্রে এ কথাটা বলা যায়। মনে রাখতে হবে ওই বিকৃত গানের তোড়ে রবীন্দ্রনাথ ভেসে যাবেন না। রবীন্দ্রনাথ রবীন্দ্রনাথই থাকবেন।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে নিয়ে বাংলাদেশ, ভারতসহ পৃথিবীর নানা দেশে বিপুল পরিমাণ সৃজনশীল ও মননশীল কাজ হয়েছে। আপনি কি মনে করেন, রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে নতুন কোনো কাজ করার বাকি আছে?
প্রথমেই বলি, যেকোনো শিল্পকর্ম বহুমাত্রিক ব্যাখ্যার দাবিদার। একধরনের ব্যাখ্যা পাওয়া যায় পাঠ্যপুস্তকে, যাকে প্রথাগত বলা যায়। একাডেমিক চর্চায় মাঝেমধ্যে নতুন ব্যাখ্যা পাওয়া যায়, কিন্তু বেশির ভাগ একাডেমিক চর্চাই ঘুরেফিরে একই কথা বলে। ৭০-৮০ বছর ধরে চিন্তার জগতে নানা আলোড়ন সৃষ্টি হচ্ছে। এক-দুই দশক পর পরই নতুন চিন্তার উদ্ভব হচ্ছে। বৈচিত্র্যময় ও বিস্ময়কর সব চিন্তা মানুষকে ভাবাচ্ছে, নতুন পথ দেখাচ্ছে। নতুন তত্ত্ব উপস্থিত হচ্ছে, যাকে আমরা থিওরি বলি। যেমন কার্ল মার্ক্স সমাজ পরিবর্তনের থিওরি দিয়েছেন। নারীবাদীরা বিভিন্ন থিওরি দিয়েছেন। একটা থিওরি থেকে একাধিক থিওরির উদ্ভব হতে পারে। এ রকমভাবে আমরা কাঠামোবাদ পেরিয়ে উত্তর-কাঠামোবাদে প্রবেশ করলাম, আধুনিকতা পেরিয়ে উত্তরাধুনিকতায় পা রাখলাম। উত্তরাধুনিক চিন্তাভাবনা স্থাপত্য থেকে নিয়ে সংস্কৃতি পাঠ ও সাহিত্য সমালোচনাকে প্রভাবিত করছে। পুরোনো কাজের নতুন নতুন ব্যাখ্যা তৈরি হচ্ছে। এ অবস্থায় পরিবর্তিত তত্ত্ব ও চিন্তার আলোকে যেকোনো শিল্পকর্মকে নতুন করে যাচাই করা যায়। রবীন্দ্রনাথকে এসব তত্ত্ব দিয়ে নতুন করে ব্যাখ্যার সুযোগ রয়েছে।
বাংলাদেশে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে রবীন্দ্রচর্চা হচ্ছে অনেক দিন ধরেই। তাঁর নামাঙ্কিত বিশ্ববিদ্যালয় হয়েছে, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান হয়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলোয় নানাধর্মী গবেষণা হচ্ছে। বাংলাদেশে প্রাতিষ্ঠানিক চর্চার মান ও রবীন্দ্রচর্চা সম্পর্কে আপনার অভিমত জানতে চাই।
প্রাতিষ্ঠানিক ও অপ্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে নানা কাজ হয়েছে। প্রাতিষ্ঠানিক চর্চার ভালো-মন্দ দুটো দিকই আছে। বিশ্ববিদ্যালয়কেন্দ্রিক চর্চায় বেশ কিছু ভালো কাজ হয়েছে। রবীন্দ্র শতবার্ষিকী এবং সার্ধশতবার্ষিকীতেও কিছু ভালো মানের প্রবন্ধ ও বই লেখা হয়েছে। আবার অনেক কাজ আছে দায়সারা গোছের, শুধু পিএইচডি ডিগ্রি অর্জনের জন্য কিংবা প্রমোশনের জন্য। তবে মানসম্পন্ন কাজ হচ্ছে না তা নয়, যদিও সংখ্যাটা কম। মানের ক্ষেত্রে সব সময়ই আমাদের কিছু ঘাটতি রয়ে যায়। এটা শুধু রবীন্দ্র গবেষণার ক্ষেত্রে নয়, সমাজ গবেষণা ও অন্যান্য ক্ষেত্রেও হয়। তবে আমাদের গবেষণাগত নানা সীমাবদ্ধতা বিবেচনায় নিলে সার্বিকভাবে আমি হতাশ নই, অন্তত রবীন্দ্রনাথকে বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে দেখার একটা চেষ্টা হচ্ছে।
এখন তরুণ গবেষকেরাও রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে কাজে আগ্রহী হচ্ছেন। বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে তাঁরা রবীন্দ্রনাথের সৃষ্টিকে ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করছেন, নানা রকম কাজ করছেন।
তরুণদের মধ্যে কেউ কেউ খুব ভালো কাজ করছেন। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের একটা অভিসন্দর্ভ সেদিন পড়লাম, রবীন্দ্রনাথের নৃত্যনাট্য নিয়ে চমৎকার একটি গবেষণা। যাঁরা ব্যাপক পড়াশোনা করে, পরিশ্রম করে, বিভিন্ন তত্ত্বের আলোকে রবীন্দ্রনাথকে গবেষণা করছেন, তাঁদের কেউ কেউ কাজের মধ্যে নতুনত্ব সৃষ্টি করছেন। সম্প্রতি উত্তরাধিকার পত্রিকায় রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে একটা নিবন্ধ পড়েছি, তাতে নতুন চিন্তাভাবনা দেখেছি। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়েও বিচ্ছিন্নভাবে রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে নতুন চিন্তার প্রকাশ হচ্ছে। কয়েক বছর আগে রবীন্দ্রনাথের নামে বিশ্ববিদ্যালয় হয়েছে, সেখানে একাডেমি চর্চা হচ্ছে, গবেষণা পুরোপুরি শুরু হয়নি।
বাংলাদেশে রবীন্দ্র-চিত্রকলা নিয়ে যাঁরা কাজ করেছেন, আপনি তাঁদের মধ্য অন্যতম। রবীন্দ্রনাথের চিত্রকলা নিয়ে নতুন কী কাজ করা যায়?
রবীন্দ্রনাথের চিত্রকলা নিয়ে নতুন লেখার অবকাশ আছে, কিন্তু আমাদের পক্ষে তাঁর চিত্রকলা, যেগুলো শান্তিনিকেতনে ও ভারতের অন্যান্য জায়গায় সংরক্ষিত আছে, তা দেখার প্রয়োজন। সেই সুযোগ নেই। এ জন্য তাঁর চিত্রকলা সম্পর্কে লেখালেখিতে প্রথাগত কথাবার্তাই বেশি উঠে আসে। তা ছাড়া বাংলাদেশে এখন শিল্পকলা নিয়ে কজনই বা লেখালেখি করেন? তরুণেরা কোথায়? যদি তরুণেরা উৎসাহিত না হন, নতুন চিন্তা আসবে কোত্থেকে?
বাংলাদেশে রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে নানা সময় বিতর্ক সৃষ্টি করতে চায় কিছু মহল। এ প্রসঙ্গে আপনার অভিমত কী?
সাহিত্যকর্ম নিয়ে বিতর্ক থাকা ভালো, তাতে বোঝা যায়, মনোযোগের কেন্দ্রে আছে সাহিত্য। বিতর্ক যদি হয় জেনে-বুঝে, যাকে আমরা বলি শিক্ষিত ও বুদ্ধিবৃত্তিক বিতর্ক, তাহলে তাকে স্বাগত জানানো উচিত। পুবে-পশ্চিমে তাকালে দেখতে পাব, কবি, সাহিত্যিক, শিল্পীকে নিয়ে নিরন্তর বিতর্ক হচ্ছে। শেক্সপিয়ারকে নিয়ে যুগের পর যুগ বিতর্ক হয়েছে। তাতে দিন শেষে পাঠকদের উপকার হয়, নতুন করে জানার ও চিন্তার সুযোগ সৃষ্টি হয়। অন্যদিকে মানুষ যখন না জেনে-বুঝে, না পড়ে বিতর্ক করে, তখন সমস্যা তৈরি হতে পারে। এ রকম বিতর্ক উপকারী নয়। এটাই বাংলাদেশে হচ্ছে বলা যায়। রবীন্দ্রনাথকে কতজন গভীরভাবে পড়েছেন, জেনেছেন, সে প্রশ্ন থেকে যায়। রবীন্দ্রনাথকে পড়া মানে কয়েক শ থেকে কয়েক হাজার পৃষ্ঠা পড়া, এ পরিশ্রম অনেকেই করছেন না। পড়ার গভীরতা না থাকলে বিতর্কের কোনো মানে নেই, অর্থ নেই। এটা শুধু কিছু মানুষকে উত্তেজিত করবে। উত্তেজনা প্রয়োজন বটে, কিন্তু অর্থহীন উত্তেজনা মানুষকে কিছুই দেয় না।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে নিয়ে অনেকে রক্ষণশীল আচরণ করেন। রক্ষণশীল আচরণ কি বিতর্ককে উসকে দেয়?
যখনই রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে বিতর্ক হয়, তখনই বুঝতে হবে রবীন্দ্রনাথ গুরুত্বপূর্ণ ও প্রাসঙ্গিক। কেউ যখন রবীন্দ্রসংগীত বিকৃতভাবে গাইছেন, তখন তিনি রবীন্দ্রনাথকেই আশ্রয় করছেন, তাতে বিচলিত হওয়ার কিছু নেই। অনেকে দেখি এসব ব্যাপারে খুবই রক্ষণশীল, কিন্তু যুগ পাল্টেছে। দৃশ্যমাধ্যম এখন মানুষের মনোজগৎ দখল করে নিয়েছে। এখন পড়ার চেয়ে দেখার চর্চা বেশি, দেখানোর চর্চাও। এ জন্য কি চাইলেই ইউটিউব-ফেসবুকে রবীন্দ্র-নজরুলের গান গাইতে পারেন। তাতে তাঁরা আনন্দ পান। রক্ষণশীলরা তা না শুনলেই পারেন। অতি-রক্ষণশীলতা কখনো কখনো ক্ষতির কারণ হতে পারে। এতে নতুন সময়টাকে অনুধাবন করা যায় না, নতুন চিন্তার বিস্তার ঘটে না, অন্তত তাঁদের ক্ষেত্রে এ কথাটা বলা যায়। মনে রাখতে হবে ওই বিকৃত গানের তোড়ে রবীন্দ্রনাথ ভেসে যাবেন না। রবীন্দ্রনাথ রবীন্দ্রনাথই থাকবেন।
নওশাদ জামিল

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে নিয়ে বাংলাদেশ, ভারতসহ পৃথিবীর নানা দেশে বিপুল পরিমাণ সৃজনশীল ও মননশীল কাজ হয়েছে। আপনি কি মনে করেন, রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে নতুন কোনো কাজ করার বাকি আছে?
প্রথমেই বলি, যেকোনো শিল্পকর্ম বহুমাত্রিক ব্যাখ্যার দাবিদার। একধরনের ব্যাখ্যা পাওয়া যায় পাঠ্যপুস্তকে, যাকে প্রথাগত বলা যায়। একাডেমিক চর্চায় মাঝেমধ্যে নতুন ব্যাখ্যা পাওয়া যায়, কিন্তু বেশির ভাগ একাডেমিক চর্চাই ঘুরেফিরে একই কথা বলে। ৭০-৮০ বছর ধরে চিন্তার জগতে নানা আলোড়ন সৃষ্টি হচ্ছে। এক-দুই দশক পর পরই নতুন চিন্তার উদ্ভব হচ্ছে। বৈচিত্র্যময় ও বিস্ময়কর সব চিন্তা মানুষকে ভাবাচ্ছে, নতুন পথ দেখাচ্ছে। নতুন তত্ত্ব উপস্থিত হচ্ছে, যাকে আমরা থিওরি বলি। যেমন কার্ল মার্ক্স সমাজ পরিবর্তনের থিওরি দিয়েছেন। নারীবাদীরা বিভিন্ন থিওরি দিয়েছেন। একটা থিওরি থেকে একাধিক থিওরির উদ্ভব হতে পারে। এ রকমভাবে আমরা কাঠামোবাদ পেরিয়ে উত্তর-কাঠামোবাদে প্রবেশ করলাম, আধুনিকতা পেরিয়ে উত্তরাধুনিকতায় পা রাখলাম। উত্তরাধুনিক চিন্তাভাবনা স্থাপত্য থেকে নিয়ে সংস্কৃতি পাঠ ও সাহিত্য সমালোচনাকে প্রভাবিত করছে। পুরোনো কাজের নতুন নতুন ব্যাখ্যা তৈরি হচ্ছে। এ অবস্থায় পরিবর্তিত তত্ত্ব ও চিন্তার আলোকে যেকোনো শিল্পকর্মকে নতুন করে যাচাই করা যায়। রবীন্দ্রনাথকে এসব তত্ত্ব দিয়ে নতুন করে ব্যাখ্যার সুযোগ রয়েছে।
বাংলাদেশে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে রবীন্দ্রচর্চা হচ্ছে অনেক দিন ধরেই। তাঁর নামাঙ্কিত বিশ্ববিদ্যালয় হয়েছে, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান হয়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলোয় নানাধর্মী গবেষণা হচ্ছে। বাংলাদেশে প্রাতিষ্ঠানিক চর্চার মান ও রবীন্দ্রচর্চা সম্পর্কে আপনার অভিমত জানতে চাই।
প্রাতিষ্ঠানিক ও অপ্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে নানা কাজ হয়েছে। প্রাতিষ্ঠানিক চর্চার ভালো-মন্দ দুটো দিকই আছে। বিশ্ববিদ্যালয়কেন্দ্রিক চর্চায় বেশ কিছু ভালো কাজ হয়েছে। রবীন্দ্র শতবার্ষিকী এবং সার্ধশতবার্ষিকীতেও কিছু ভালো মানের প্রবন্ধ ও বই লেখা হয়েছে। আবার অনেক কাজ আছে দায়সারা গোছের, শুধু পিএইচডি ডিগ্রি অর্জনের জন্য কিংবা প্রমোশনের জন্য। তবে মানসম্পন্ন কাজ হচ্ছে না তা নয়, যদিও সংখ্যাটা কম। মানের ক্ষেত্রে সব সময়ই আমাদের কিছু ঘাটতি রয়ে যায়। এটা শুধু রবীন্দ্র গবেষণার ক্ষেত্রে নয়, সমাজ গবেষণা ও অন্যান্য ক্ষেত্রেও হয়। তবে আমাদের গবেষণাগত নানা সীমাবদ্ধতা বিবেচনায় নিলে সার্বিকভাবে আমি হতাশ নই, অন্তত রবীন্দ্রনাথকে বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে দেখার একটা চেষ্টা হচ্ছে।
এখন তরুণ গবেষকেরাও রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে কাজে আগ্রহী হচ্ছেন। বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে তাঁরা রবীন্দ্রনাথের সৃষ্টিকে ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করছেন, নানা রকম কাজ করছেন।
তরুণদের মধ্যে কেউ কেউ খুব ভালো কাজ করছেন। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের একটা অভিসন্দর্ভ সেদিন পড়লাম, রবীন্দ্রনাথের নৃত্যনাট্য নিয়ে চমৎকার একটি গবেষণা। যাঁরা ব্যাপক পড়াশোনা করে, পরিশ্রম করে, বিভিন্ন তত্ত্বের আলোকে রবীন্দ্রনাথকে গবেষণা করছেন, তাঁদের কেউ কেউ কাজের মধ্যে নতুনত্ব সৃষ্টি করছেন। সম্প্রতি উত্তরাধিকার পত্রিকায় রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে একটা নিবন্ধ পড়েছি, তাতে নতুন চিন্তাভাবনা দেখেছি। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়েও বিচ্ছিন্নভাবে রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে নতুন চিন্তার প্রকাশ হচ্ছে। কয়েক বছর আগে রবীন্দ্রনাথের নামে বিশ্ববিদ্যালয় হয়েছে, সেখানে একাডেমি চর্চা হচ্ছে, গবেষণা পুরোপুরি শুরু হয়নি।
বাংলাদেশে রবীন্দ্র-চিত্রকলা নিয়ে যাঁরা কাজ করেছেন, আপনি তাঁদের মধ্য অন্যতম। রবীন্দ্রনাথের চিত্রকলা নিয়ে নতুন কী কাজ করা যায়?
রবীন্দ্রনাথের চিত্রকলা নিয়ে নতুন লেখার অবকাশ আছে, কিন্তু আমাদের পক্ষে তাঁর চিত্রকলা, যেগুলো শান্তিনিকেতনে ও ভারতের অন্যান্য জায়গায় সংরক্ষিত আছে, তা দেখার প্রয়োজন। সেই সুযোগ নেই। এ জন্য তাঁর চিত্রকলা সম্পর্কে লেখালেখিতে প্রথাগত কথাবার্তাই বেশি উঠে আসে। তা ছাড়া বাংলাদেশে এখন শিল্পকলা নিয়ে কজনই বা লেখালেখি করেন? তরুণেরা কোথায়? যদি তরুণেরা উৎসাহিত না হন, নতুন চিন্তা আসবে কোত্থেকে?
বাংলাদেশে রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে নানা সময় বিতর্ক সৃষ্টি করতে চায় কিছু মহল। এ প্রসঙ্গে আপনার অভিমত কী?
সাহিত্যকর্ম নিয়ে বিতর্ক থাকা ভালো, তাতে বোঝা যায়, মনোযোগের কেন্দ্রে আছে সাহিত্য। বিতর্ক যদি হয় জেনে-বুঝে, যাকে আমরা বলি শিক্ষিত ও বুদ্ধিবৃত্তিক বিতর্ক, তাহলে তাকে স্বাগত জানানো উচিত। পুবে-পশ্চিমে তাকালে দেখতে পাব, কবি, সাহিত্যিক, শিল্পীকে নিয়ে নিরন্তর বিতর্ক হচ্ছে। শেক্সপিয়ারকে নিয়ে যুগের পর যুগ বিতর্ক হয়েছে। তাতে দিন শেষে পাঠকদের উপকার হয়, নতুন করে জানার ও চিন্তার সুযোগ সৃষ্টি হয়। অন্যদিকে মানুষ যখন না জেনে-বুঝে, না পড়ে বিতর্ক করে, তখন সমস্যা তৈরি হতে পারে। এ রকম বিতর্ক উপকারী নয়। এটাই বাংলাদেশে হচ্ছে বলা যায়। রবীন্দ্রনাথকে কতজন গভীরভাবে পড়েছেন, জেনেছেন, সে প্রশ্ন থেকে যায়। রবীন্দ্রনাথকে পড়া মানে কয়েক শ থেকে কয়েক হাজার পৃষ্ঠা পড়া, এ পরিশ্রম অনেকেই করছেন না। পড়ার গভীরতা না থাকলে বিতর্কের কোনো মানে নেই, অর্থ নেই। এটা শুধু কিছু মানুষকে উত্তেজিত করবে। উত্তেজনা প্রয়োজন বটে, কিন্তু অর্থহীন উত্তেজনা মানুষকে কিছুই দেয় না।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে নিয়ে অনেকে রক্ষণশীল আচরণ করেন। রক্ষণশীল আচরণ কি বিতর্ককে উসকে দেয়?
যখনই রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে বিতর্ক হয়, তখনই বুঝতে হবে রবীন্দ্রনাথ গুরুত্বপূর্ণ ও প্রাসঙ্গিক। কেউ যখন রবীন্দ্রসংগীত বিকৃতভাবে গাইছেন, তখন তিনি রবীন্দ্রনাথকেই আশ্রয় করছেন, তাতে বিচলিত হওয়ার কিছু নেই। অনেকে দেখি এসব ব্যাপারে খুবই রক্ষণশীল, কিন্তু যুগ পাল্টেছে। দৃশ্যমাধ্যম এখন মানুষের মনোজগৎ দখল করে নিয়েছে। এখন পড়ার চেয়ে দেখার চর্চা বেশি, দেখানোর চর্চাও। এ জন্য কি চাইলেই ইউটিউব-ফেসবুকে রবীন্দ্র-নজরুলের গান গাইতে পারেন। তাতে তাঁরা আনন্দ পান। রক্ষণশীলরা তা না শুনলেই পারেন। অতি-রক্ষণশীলতা কখনো কখনো ক্ষতির কারণ হতে পারে। এতে নতুন সময়টাকে অনুধাবন করা যায় না, নতুন চিন্তার বিস্তার ঘটে না, অন্তত তাঁদের ক্ষেত্রে এ কথাটা বলা যায়। মনে রাখতে হবে ওই বিকৃত গানের তোড়ে রবীন্দ্রনাথ ভেসে যাবেন না। রবীন্দ্রনাথ রবীন্দ্রনাথই থাকবেন।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে নিয়ে বাংলাদেশ, ভারতসহ পৃথিবীর নানা দেশে বিপুল পরিমাণ সৃজনশীল ও মননশীল কাজ হয়েছে। আপনি কি মনে করেন, রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে নতুন কোনো কাজ করার বাকি আছে?
প্রথমেই বলি, যেকোনো শিল্পকর্ম বহুমাত্রিক ব্যাখ্যার দাবিদার। একধরনের ব্যাখ্যা পাওয়া যায় পাঠ্যপুস্তকে, যাকে প্রথাগত বলা যায়। একাডেমিক চর্চায় মাঝেমধ্যে নতুন ব্যাখ্যা পাওয়া যায়, কিন্তু বেশির ভাগ একাডেমিক চর্চাই ঘুরেফিরে একই কথা বলে। ৭০-৮০ বছর ধরে চিন্তার জগতে নানা আলোড়ন সৃষ্টি হচ্ছে। এক-দুই দশক পর পরই নতুন চিন্তার উদ্ভব হচ্ছে। বৈচিত্র্যময় ও বিস্ময়কর সব চিন্তা মানুষকে ভাবাচ্ছে, নতুন পথ দেখাচ্ছে। নতুন তত্ত্ব উপস্থিত হচ্ছে, যাকে আমরা থিওরি বলি। যেমন কার্ল মার্ক্স সমাজ পরিবর্তনের থিওরি দিয়েছেন। নারীবাদীরা বিভিন্ন থিওরি দিয়েছেন। একটা থিওরি থেকে একাধিক থিওরির উদ্ভব হতে পারে। এ রকমভাবে আমরা কাঠামোবাদ পেরিয়ে উত্তর-কাঠামোবাদে প্রবেশ করলাম, আধুনিকতা পেরিয়ে উত্তরাধুনিকতায় পা রাখলাম। উত্তরাধুনিক চিন্তাভাবনা স্থাপত্য থেকে নিয়ে সংস্কৃতি পাঠ ও সাহিত্য সমালোচনাকে প্রভাবিত করছে। পুরোনো কাজের নতুন নতুন ব্যাখ্যা তৈরি হচ্ছে। এ অবস্থায় পরিবর্তিত তত্ত্ব ও চিন্তার আলোকে যেকোনো শিল্পকর্মকে নতুন করে যাচাই করা যায়। রবীন্দ্রনাথকে এসব তত্ত্ব দিয়ে নতুন করে ব্যাখ্যার সুযোগ রয়েছে।
বাংলাদেশে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে রবীন্দ্রচর্চা হচ্ছে অনেক দিন ধরেই। তাঁর নামাঙ্কিত বিশ্ববিদ্যালয় হয়েছে, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান হয়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলোয় নানাধর্মী গবেষণা হচ্ছে। বাংলাদেশে প্রাতিষ্ঠানিক চর্চার মান ও রবীন্দ্রচর্চা সম্পর্কে আপনার অভিমত জানতে চাই।
প্রাতিষ্ঠানিক ও অপ্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে নানা কাজ হয়েছে। প্রাতিষ্ঠানিক চর্চার ভালো-মন্দ দুটো দিকই আছে। বিশ্ববিদ্যালয়কেন্দ্রিক চর্চায় বেশ কিছু ভালো কাজ হয়েছে। রবীন্দ্র শতবার্ষিকী এবং সার্ধশতবার্ষিকীতেও কিছু ভালো মানের প্রবন্ধ ও বই লেখা হয়েছে। আবার অনেক কাজ আছে দায়সারা গোছের, শুধু পিএইচডি ডিগ্রি অর্জনের জন্য কিংবা প্রমোশনের জন্য। তবে মানসম্পন্ন কাজ হচ্ছে না তা নয়, যদিও সংখ্যাটা কম। মানের ক্ষেত্রে সব সময়ই আমাদের কিছু ঘাটতি রয়ে যায়। এটা শুধু রবীন্দ্র গবেষণার ক্ষেত্রে নয়, সমাজ গবেষণা ও অন্যান্য ক্ষেত্রেও হয়। তবে আমাদের গবেষণাগত নানা সীমাবদ্ধতা বিবেচনায় নিলে সার্বিকভাবে আমি হতাশ নই, অন্তত রবীন্দ্রনাথকে বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে দেখার একটা চেষ্টা হচ্ছে।
এখন তরুণ গবেষকেরাও রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে কাজে আগ্রহী হচ্ছেন। বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে তাঁরা রবীন্দ্রনাথের সৃষ্টিকে ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করছেন, নানা রকম কাজ করছেন।
তরুণদের মধ্যে কেউ কেউ খুব ভালো কাজ করছেন। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের একটা অভিসন্দর্ভ সেদিন পড়লাম, রবীন্দ্রনাথের নৃত্যনাট্য নিয়ে চমৎকার একটি গবেষণা। যাঁরা ব্যাপক পড়াশোনা করে, পরিশ্রম করে, বিভিন্ন তত্ত্বের আলোকে রবীন্দ্রনাথকে গবেষণা করছেন, তাঁদের কেউ কেউ কাজের মধ্যে নতুনত্ব সৃষ্টি করছেন। সম্প্রতি উত্তরাধিকার পত্রিকায় রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে একটা নিবন্ধ পড়েছি, তাতে নতুন চিন্তাভাবনা দেখেছি। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়েও বিচ্ছিন্নভাবে রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে নতুন চিন্তার প্রকাশ হচ্ছে। কয়েক বছর আগে রবীন্দ্রনাথের নামে বিশ্ববিদ্যালয় হয়েছে, সেখানে একাডেমি চর্চা হচ্ছে, গবেষণা পুরোপুরি শুরু হয়নি।
বাংলাদেশে রবীন্দ্র-চিত্রকলা নিয়ে যাঁরা কাজ করেছেন, আপনি তাঁদের মধ্য অন্যতম। রবীন্দ্রনাথের চিত্রকলা নিয়ে নতুন কী কাজ করা যায়?
রবীন্দ্রনাথের চিত্রকলা নিয়ে নতুন লেখার অবকাশ আছে, কিন্তু আমাদের পক্ষে তাঁর চিত্রকলা, যেগুলো শান্তিনিকেতনে ও ভারতের অন্যান্য জায়গায় সংরক্ষিত আছে, তা দেখার প্রয়োজন। সেই সুযোগ নেই। এ জন্য তাঁর চিত্রকলা সম্পর্কে লেখালেখিতে প্রথাগত কথাবার্তাই বেশি উঠে আসে। তা ছাড়া বাংলাদেশে এখন শিল্পকলা নিয়ে কজনই বা লেখালেখি করেন? তরুণেরা কোথায়? যদি তরুণেরা উৎসাহিত না হন, নতুন চিন্তা আসবে কোত্থেকে?
বাংলাদেশে রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে নানা সময় বিতর্ক সৃষ্টি করতে চায় কিছু মহল। এ প্রসঙ্গে আপনার অভিমত কী?
সাহিত্যকর্ম নিয়ে বিতর্ক থাকা ভালো, তাতে বোঝা যায়, মনোযোগের কেন্দ্রে আছে সাহিত্য। বিতর্ক যদি হয় জেনে-বুঝে, যাকে আমরা বলি শিক্ষিত ও বুদ্ধিবৃত্তিক বিতর্ক, তাহলে তাকে স্বাগত জানানো উচিত। পুবে-পশ্চিমে তাকালে দেখতে পাব, কবি, সাহিত্যিক, শিল্পীকে নিয়ে নিরন্তর বিতর্ক হচ্ছে। শেক্সপিয়ারকে নিয়ে যুগের পর যুগ বিতর্ক হয়েছে। তাতে দিন শেষে পাঠকদের উপকার হয়, নতুন করে জানার ও চিন্তার সুযোগ সৃষ্টি হয়। অন্যদিকে মানুষ যখন না জেনে-বুঝে, না পড়ে বিতর্ক করে, তখন সমস্যা তৈরি হতে পারে। এ রকম বিতর্ক উপকারী নয়। এটাই বাংলাদেশে হচ্ছে বলা যায়। রবীন্দ্রনাথকে কতজন গভীরভাবে পড়েছেন, জেনেছেন, সে প্রশ্ন থেকে যায়। রবীন্দ্রনাথকে পড়া মানে কয়েক শ থেকে কয়েক হাজার পৃষ্ঠা পড়া, এ পরিশ্রম অনেকেই করছেন না। পড়ার গভীরতা না থাকলে বিতর্কের কোনো মানে নেই, অর্থ নেই। এটা শুধু কিছু মানুষকে উত্তেজিত করবে। উত্তেজনা প্রয়োজন বটে, কিন্তু অর্থহীন উত্তেজনা মানুষকে কিছুই দেয় না।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে নিয়ে অনেকে রক্ষণশীল আচরণ করেন। রক্ষণশীল আচরণ কি বিতর্ককে উসকে দেয়?
যখনই রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে বিতর্ক হয়, তখনই বুঝতে হবে রবীন্দ্রনাথ গুরুত্বপূর্ণ ও প্রাসঙ্গিক। কেউ যখন রবীন্দ্রসংগীত বিকৃতভাবে গাইছেন, তখন তিনি রবীন্দ্রনাথকেই আশ্রয় করছেন, তাতে বিচলিত হওয়ার কিছু নেই। অনেকে দেখি এসব ব্যাপারে খুবই রক্ষণশীল, কিন্তু যুগ পাল্টেছে। দৃশ্যমাধ্যম এখন মানুষের মনোজগৎ দখল করে নিয়েছে। এখন পড়ার চেয়ে দেখার চর্চা বেশি, দেখানোর চর্চাও। এ জন্য কি চাইলেই ইউটিউব-ফেসবুকে রবীন্দ্র-নজরুলের গান গাইতে পারেন। তাতে তাঁরা আনন্দ পান। রক্ষণশীলরা তা না শুনলেই পারেন। অতি-রক্ষণশীলতা কখনো কখনো ক্ষতির কারণ হতে পারে। এতে নতুন সময়টাকে অনুধাবন করা যায় না, নতুন চিন্তার বিস্তার ঘটে না, অন্তত তাঁদের ক্ষেত্রে এ কথাটা বলা যায়। মনে রাখতে হবে ওই বিকৃত গানের তোড়ে রবীন্দ্রনাথ ভেসে যাবেন না। রবীন্দ্রনাথ রবীন্দ্রনাথই থাকবেন।

জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল।
৬ দিন আগে
জনপ্রিয় কিশোর গোয়েন্দা সিরিজ তিন গোয়েন্দার স্রষ্টা রকিব হাসান মারা গেছেন। আজ বুধবার রাজধানীর একটি হাসপাতালে ডায়ালাইসিস চলাকালে তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।
১১ দিন আগে
হাঙ্গেরির ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই এবার (২০২৫ সালে) সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন তাঁর দীর্ঘ, দার্শনিক বাক্য ও মানবজীবনের বিশৃঙ্খলার গভীর অনুসন্ধানী সাহিত্যকর্মের জন্য। সুইডিশ একাডেমি তাঁকে সম্মান জানিয়েছে ‘শিল্পের শক্তিকে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করার’ জন্য।
১৭ দিন আগে
হাঙ্গেরির সাহিত্যে অসীম জনপ্রিয়তা ও প্রভাব তাঁর; বিশ্বজোড়া আতঙ্ক ও সন্ত্রাসের দাপটেও শিল্পের শক্তি চেনায় তাঁর কলম। তিনি হাঙ্গেরিয়ান ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই; সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০২৫ সালে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।
১৭ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল। কিন্তু ভাষাবিদ ও সাহিত্য ইতিহাসবিদদের মতে, এই ধারণা আসলে পশ্চিমা দৃষ্টিকোণ থেকে তৈরি এক ‘ঔপনিবেশিক কল্পনা’ মাত্র। বাস্তবে আরবি সাহিত্য কখনোই থেমে যায়নি।
প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী, অষ্টম শতাব্দীতে আব্বাসীয় খলিফাদের অধীনে বিজ্ঞান, দর্শন ও কবিতার কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল বাগদাদ। আবু নুয়াস, আল-মুতানাব্বি, আল-ফারাবি ও ইবনে সিনার মতো কবি ও দার্শনিকদের হাত ধরে শুরু হয়েছিল এক স্বর্ণযুগ। ঊনবিংশ শতাব্দীর ইউরোপীয় গবেষকেরা—যেমন ফরাসি চিন্তাবিদ আর্নেস্ট রেনাঁ ও ডাচ ইতিহাসবিদ রেইনহার্ট দোজি সেই আমলটিকেই আরবি বুদ্ধিবৃত্তিক জীবনের শিখর বলে স্বীকার করেছিলেন এবং দাবি করেছিলেন, একাদশ শতাব্দীর পর এই ধারাবাহিকতার পতন ঘটে। তাঁদের মতে, এরপর প্রায় ৮০০ বছর আরবে আর কোনো গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্যিক বা দার্শনিক কাজ হয়নি—যতক্ষণ না ইউরোপে রেনেসাঁ শুরু হয়।
কিন্তু আধুনিক গবেষকেরা বলছেন, এই ধারণা সরলীকৃত ও পক্ষপাতদুষ্ট। ফ্রাঙ্কফুর্ট আন্তর্জাতিক বইমেলায় শেখ জায়েদ বুক অ্যাওয়ার্ডের আয়োজিত এক আলোচনায় ভাষাবিদেরা দাবি করেছেন, আরবি রচনা শৈলী কখনো বিলুপ্ত হয়নি; বরং তা ধারাবাহিকভাবে কপি, অনুবাদ ও পাঠের মাধ্যমে বেঁচে ছিল।
জার্মান গবেষক বেয়াট্রিস গ্রুন্ডলার তাঁর ‘দ্য রাইজ অব দ্য অ্যারাবিক বুক’ গ্রন্থে দাবি করেছেন, আরবি সাহিত্যে ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে যে ধারণাটি প্রচলিত আছে তা আসলে গাল-গল্প। এই বইটি এবারের শেখ জায়েদ পুরস্কারের শর্টলিস্টে রয়েছে। গ্রুন্ডলার এতে দেখিয়েছেন, নবম শতাব্দীর বাগদাদে বইয়ের ব্যবসা, কপিকারদের প্রতিযোগিতা, জনসম্মুখে পাঠ ও লেখার প্রচলন—সবই ছিল আধুনিক প্রকাশনা সংস্কৃতির পূর্বসূরি। তিনি মত দিয়েছেন, ‘বাগদাদের রাস্তায় হাঁটলে আপনি দেখতেন লোকেরা হস্তলিপি বিক্রি করছে, বিরামচিহ্ন নিয়ে তর্ক করছে—এ যেন এক জীবন্ত প্রকাশনা বাজার।’
গবেষণা বলছে, আরবি সাহিত্য আসলে কখনো এক জায়গায় স্থির থাকেনি। এর কেন্দ্র এক সময় বাগদাদ থেকে কায়রো, দামেস্ক ও আন্দালুসিয়ায় স্থানান্তরিত হয়। কিন্তু ধারাটি অব্যাহতই থাকে। নতুন ঘরানা তৈরি হয়, পুরোনো ঘরানা রূপান্তরিত হয়।
ফরাসি অধ্যাপক হাকান ওজকান তাঁর গবেষণায় দেখিয়েছেন, ‘জাজাল’ নামের কথ্য ছন্দভিত্তিক কবিতার ধারা আব্বাসীয় যুগের পরও বিকশিত হতে থাকে। তাঁর মতে, ‘এই কবিরা নিয়ম ভেঙে নতুন রূপ দিয়েছে—তাঁদের ছন্দ ও ব্যঙ্গ আধুনিক র্যাপের মতো প্রাণবন্ত।’

এদিকে এই বিষয়ে এক প্রতিবেদনে সোমবার (২০ অক্টোবর) আমিরাতভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য ন্যাশনাল জানিয়েছে, আবুধাবির নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির ‘আরবি সাহিত্য লাইব্রেরি’ প্রকল্প ইতিমধ্যেই ‘হারানো শতাব্দী’ বলে বিবেচিত সময়ের ৬০ টিরও বেশি আরবি সাহিত্যকর্ম পুনরুদ্ধার করেছে। প্রকল্পটির সম্পাদক অধ্যাপক মরিস পোমেরান্টজ বলেছেন, ‘এই বইগুলো সম্পাদনা করা মানে এক চলমান সংলাপে অংশ নেওয়া—যেখানে প্রজন্মের পর প্রজন্ম লেখক, অনুবাদক ও সমালোচকেরা একে অপরকে উত্তর দিয়ে গেছেন।’
মরিস মনে করেন, আরবি সাহিত্য স্থবির হয়ে যাওয়ার ধারণাটি মূলত অনুবাদের অভাব থেকেই জন্ম নিয়েছে। তিনি বলেন, ‘যখন কোনো লেখা অনুবাদ করা হয় না, তখন সেটি বৈশ্বিক অস্তিত্ব হারায়।’
মরিসের মতে, এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো এই সাহিত্যকে আবার জনসাধারণের কল্পনায় ফিরিয়ে আনা—স্কুলে পড়ানো, মঞ্চে উপস্থাপন করা, অনুবাদের মাধ্যমে বিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়া। তা না হলে আরবি সাহিত্যের ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে চিহ্নিত সময়টি অধরাই থেকে যাবে।

জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল। কিন্তু ভাষাবিদ ও সাহিত্য ইতিহাসবিদদের মতে, এই ধারণা আসলে পশ্চিমা দৃষ্টিকোণ থেকে তৈরি এক ‘ঔপনিবেশিক কল্পনা’ মাত্র। বাস্তবে আরবি সাহিত্য কখনোই থেমে যায়নি।
প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী, অষ্টম শতাব্দীতে আব্বাসীয় খলিফাদের অধীনে বিজ্ঞান, দর্শন ও কবিতার কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল বাগদাদ। আবু নুয়াস, আল-মুতানাব্বি, আল-ফারাবি ও ইবনে সিনার মতো কবি ও দার্শনিকদের হাত ধরে শুরু হয়েছিল এক স্বর্ণযুগ। ঊনবিংশ শতাব্দীর ইউরোপীয় গবেষকেরা—যেমন ফরাসি চিন্তাবিদ আর্নেস্ট রেনাঁ ও ডাচ ইতিহাসবিদ রেইনহার্ট দোজি সেই আমলটিকেই আরবি বুদ্ধিবৃত্তিক জীবনের শিখর বলে স্বীকার করেছিলেন এবং দাবি করেছিলেন, একাদশ শতাব্দীর পর এই ধারাবাহিকতার পতন ঘটে। তাঁদের মতে, এরপর প্রায় ৮০০ বছর আরবে আর কোনো গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্যিক বা দার্শনিক কাজ হয়নি—যতক্ষণ না ইউরোপে রেনেসাঁ শুরু হয়।
কিন্তু আধুনিক গবেষকেরা বলছেন, এই ধারণা সরলীকৃত ও পক্ষপাতদুষ্ট। ফ্রাঙ্কফুর্ট আন্তর্জাতিক বইমেলায় শেখ জায়েদ বুক অ্যাওয়ার্ডের আয়োজিত এক আলোচনায় ভাষাবিদেরা দাবি করেছেন, আরবি রচনা শৈলী কখনো বিলুপ্ত হয়নি; বরং তা ধারাবাহিকভাবে কপি, অনুবাদ ও পাঠের মাধ্যমে বেঁচে ছিল।
জার্মান গবেষক বেয়াট্রিস গ্রুন্ডলার তাঁর ‘দ্য রাইজ অব দ্য অ্যারাবিক বুক’ গ্রন্থে দাবি করেছেন, আরবি সাহিত্যে ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে যে ধারণাটি প্রচলিত আছে তা আসলে গাল-গল্প। এই বইটি এবারের শেখ জায়েদ পুরস্কারের শর্টলিস্টে রয়েছে। গ্রুন্ডলার এতে দেখিয়েছেন, নবম শতাব্দীর বাগদাদে বইয়ের ব্যবসা, কপিকারদের প্রতিযোগিতা, জনসম্মুখে পাঠ ও লেখার প্রচলন—সবই ছিল আধুনিক প্রকাশনা সংস্কৃতির পূর্বসূরি। তিনি মত দিয়েছেন, ‘বাগদাদের রাস্তায় হাঁটলে আপনি দেখতেন লোকেরা হস্তলিপি বিক্রি করছে, বিরামচিহ্ন নিয়ে তর্ক করছে—এ যেন এক জীবন্ত প্রকাশনা বাজার।’
গবেষণা বলছে, আরবি সাহিত্য আসলে কখনো এক জায়গায় স্থির থাকেনি। এর কেন্দ্র এক সময় বাগদাদ থেকে কায়রো, দামেস্ক ও আন্দালুসিয়ায় স্থানান্তরিত হয়। কিন্তু ধারাটি অব্যাহতই থাকে। নতুন ঘরানা তৈরি হয়, পুরোনো ঘরানা রূপান্তরিত হয়।
ফরাসি অধ্যাপক হাকান ওজকান তাঁর গবেষণায় দেখিয়েছেন, ‘জাজাল’ নামের কথ্য ছন্দভিত্তিক কবিতার ধারা আব্বাসীয় যুগের পরও বিকশিত হতে থাকে। তাঁর মতে, ‘এই কবিরা নিয়ম ভেঙে নতুন রূপ দিয়েছে—তাঁদের ছন্দ ও ব্যঙ্গ আধুনিক র্যাপের মতো প্রাণবন্ত।’

এদিকে এই বিষয়ে এক প্রতিবেদনে সোমবার (২০ অক্টোবর) আমিরাতভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য ন্যাশনাল জানিয়েছে, আবুধাবির নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির ‘আরবি সাহিত্য লাইব্রেরি’ প্রকল্প ইতিমধ্যেই ‘হারানো শতাব্দী’ বলে বিবেচিত সময়ের ৬০ টিরও বেশি আরবি সাহিত্যকর্ম পুনরুদ্ধার করেছে। প্রকল্পটির সম্পাদক অধ্যাপক মরিস পোমেরান্টজ বলেছেন, ‘এই বইগুলো সম্পাদনা করা মানে এক চলমান সংলাপে অংশ নেওয়া—যেখানে প্রজন্মের পর প্রজন্ম লেখক, অনুবাদক ও সমালোচকেরা একে অপরকে উত্তর দিয়ে গেছেন।’
মরিস মনে করেন, আরবি সাহিত্য স্থবির হয়ে যাওয়ার ধারণাটি মূলত অনুবাদের অভাব থেকেই জন্ম নিয়েছে। তিনি বলেন, ‘যখন কোনো লেখা অনুবাদ করা হয় না, তখন সেটি বৈশ্বিক অস্তিত্ব হারায়।’
মরিসের মতে, এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো এই সাহিত্যকে আবার জনসাধারণের কল্পনায় ফিরিয়ে আনা—স্কুলে পড়ানো, মঞ্চে উপস্থাপন করা, অনুবাদের মাধ্যমে বিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়া। তা না হলে আরবি সাহিত্যের ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে চিহ্নিত সময়টি অধরাই থেকে যাবে।

প্রথমেই বলি, যেকোনো শিল্পকর্ম বহুমাত্রিক ব্যাখ্যার দাবিদার। একধরনের ব্যাখ্যা পাওয়া যায় পাঠ্যপুস্তকে, যাকে প্রথাগত বলা যায়। একাডেমিক চর্চায় মাঝেমধ্যে নতুন ব্যাখ্যা পাওয়া যায়, কিন্তু বেশির ভাগ একাডেমিক চর্চাই ঘুরেফিরে একই কথা বলে। ৭০-৮০ বছর ধরে চিন্তার জগতে নানা আলোড়ন সৃষ্টি হচ্ছে। এক-দুই দশক পর পরই ন
০৬ আগস্ট ২০২২
জনপ্রিয় কিশোর গোয়েন্দা সিরিজ তিন গোয়েন্দার স্রষ্টা রকিব হাসান মারা গেছেন। আজ বুধবার রাজধানীর একটি হাসপাতালে ডায়ালাইসিস চলাকালে তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।
১১ দিন আগে
হাঙ্গেরির ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই এবার (২০২৫ সালে) সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন তাঁর দীর্ঘ, দার্শনিক বাক্য ও মানবজীবনের বিশৃঙ্খলার গভীর অনুসন্ধানী সাহিত্যকর্মের জন্য। সুইডিশ একাডেমি তাঁকে সম্মান জানিয়েছে ‘শিল্পের শক্তিকে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করার’ জন্য।
১৭ দিন আগে
হাঙ্গেরির সাহিত্যে অসীম জনপ্রিয়তা ও প্রভাব তাঁর; বিশ্বজোড়া আতঙ্ক ও সন্ত্রাসের দাপটেও শিল্পের শক্তি চেনায় তাঁর কলম। তিনি হাঙ্গেরিয়ান ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই; সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০২৫ সালে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।
১৭ দিন আগেনিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

জনপ্রিয় কিশোর গোয়েন্দা সিরিজ তিন গোয়েন্দার স্রষ্টা রকিব হাসান মারা গেছেন। আজ বুধবার রাজধানীর একটি হাসপাতালে ডায়ালাইসিস চলাকালে তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।
রকিব হাসানের মৃত্যুর খবরটি নিশ্চিত করেছেন সেবা প্রকাশনীর উপদেষ্টা মাসুমা মায়মুর। তিনি সেবা প্রকাশনীর প্রতিষ্ঠাতা কাজী আনোয়ার হোসেনের ছোট ছেলে কাজী মায়মুর হোসেনের স্ত্রী।
মাসুমা মায়মুর ফেসবুকে লিখেছেন, ‘তিন গোয়েন্দা ও সেবা প্রকাশনীর পাঠকদেরকে আন্তরিক দুঃখের সাথে জানাচ্ছি যে, কিছুক্ষণ আগে রকিব হাসান সাহেব পরলোক গমন করেছেন। ডায়ালাইসিস চলাকালে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে ওনার জীবনাবসান ঘটে। আপনারা ওনার পবিত্র আত্মার মাগফেরাত কামনা করুন।’
১৯৫০ সালের ১২ ডিসেম্বর কুমিল্লায় জন্মগ্রহণ করেন রকিব হাসান। বাবার চাকরির কারণে শৈশব কেটেছে ফেনীতে। সেখান থেকে স্কুলজীবন শেষ করে ভর্তি হন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজে। পড়াশোনা শেষে বিভিন্ন চাকরিতে যুক্ত হলেও অফিসের বাঁধাধরা জীবনে তাঁর মন টেকেনি। অবশেষে তিনি লেখালেখিকে বেছে নেন জীবনের একমাত্র পথ হিসেবে।

সেবা প্রকাশনী থেকে তাঁর লেখকজীবনের সূচনা হয়। প্রথমদিকে বিশ্বসেরা ক্ল্যাসিক বই অনুবাদ করে লেখালেখির জগতে প্রবেশ করেন তিনি। এরপর টারজান, গোয়েন্দা রাজু, রেজা-সুজা সিরিজসহ চার শতাধিক জনপ্রিয় বই লেখেন। তবে তাঁর পরিচয়ের সবচেয়ে বড় জায়গা হলো তিন গোয়েন্দা সিরিজ। এই সিরিজ বাংলাদেশের অসংখ্য কিশোর-কিশোরীর কৈশোরের সঙ্গী।
মূলত রবার্ট আর্থারের থ্রি ইনভেস্টিগেটরস সিরিজ অবলম্বনে তিন গোয়েন্দার সূচনা হয়। তবে রকিব হাসানের লেখনশৈলীতে এটি পেয়েছে একেবারে নতুন রূপ। বাংলাদেশি সাহিত্য হয়ে উঠেছে এটি। এই সিরিজের মাধ্যমে তিনি হয়ে ওঠেন হাজারো কিশোর পাঠকের প্রিয় লেখক।
নিজ নামে লেখার পাশাপাশি তিনি ব্যবহার করেছেন বিভিন্ন ছদ্মনাম। শামসুদ্দীন নওয়াব নামে তিনি অনুবাদ করেছিলেন জুল ভার্নের বইগুলো।
বাংলাদেশের পাঠকদের কাছে রকিব হাসান শুধু একজন গোয়েন্দা লেখক নন, তিনি কয়েক প্রজন্মের শৈশব-কৈশোরের ভালোবাসার মানুষ।

জনপ্রিয় কিশোর গোয়েন্দা সিরিজ তিন গোয়েন্দার স্রষ্টা রকিব হাসান মারা গেছেন। আজ বুধবার রাজধানীর একটি হাসপাতালে ডায়ালাইসিস চলাকালে তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।
রকিব হাসানের মৃত্যুর খবরটি নিশ্চিত করেছেন সেবা প্রকাশনীর উপদেষ্টা মাসুমা মায়মুর। তিনি সেবা প্রকাশনীর প্রতিষ্ঠাতা কাজী আনোয়ার হোসেনের ছোট ছেলে কাজী মায়মুর হোসেনের স্ত্রী।
মাসুমা মায়মুর ফেসবুকে লিখেছেন, ‘তিন গোয়েন্দা ও সেবা প্রকাশনীর পাঠকদেরকে আন্তরিক দুঃখের সাথে জানাচ্ছি যে, কিছুক্ষণ আগে রকিব হাসান সাহেব পরলোক গমন করেছেন। ডায়ালাইসিস চলাকালে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে ওনার জীবনাবসান ঘটে। আপনারা ওনার পবিত্র আত্মার মাগফেরাত কামনা করুন।’
১৯৫০ সালের ১২ ডিসেম্বর কুমিল্লায় জন্মগ্রহণ করেন রকিব হাসান। বাবার চাকরির কারণে শৈশব কেটেছে ফেনীতে। সেখান থেকে স্কুলজীবন শেষ করে ভর্তি হন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজে। পড়াশোনা শেষে বিভিন্ন চাকরিতে যুক্ত হলেও অফিসের বাঁধাধরা জীবনে তাঁর মন টেকেনি। অবশেষে তিনি লেখালেখিকে বেছে নেন জীবনের একমাত্র পথ হিসেবে।

সেবা প্রকাশনী থেকে তাঁর লেখকজীবনের সূচনা হয়। প্রথমদিকে বিশ্বসেরা ক্ল্যাসিক বই অনুবাদ করে লেখালেখির জগতে প্রবেশ করেন তিনি। এরপর টারজান, গোয়েন্দা রাজু, রেজা-সুজা সিরিজসহ চার শতাধিক জনপ্রিয় বই লেখেন। তবে তাঁর পরিচয়ের সবচেয়ে বড় জায়গা হলো তিন গোয়েন্দা সিরিজ। এই সিরিজ বাংলাদেশের অসংখ্য কিশোর-কিশোরীর কৈশোরের সঙ্গী।
মূলত রবার্ট আর্থারের থ্রি ইনভেস্টিগেটরস সিরিজ অবলম্বনে তিন গোয়েন্দার সূচনা হয়। তবে রকিব হাসানের লেখনশৈলীতে এটি পেয়েছে একেবারে নতুন রূপ। বাংলাদেশি সাহিত্য হয়ে উঠেছে এটি। এই সিরিজের মাধ্যমে তিনি হয়ে ওঠেন হাজারো কিশোর পাঠকের প্রিয় লেখক।
নিজ নামে লেখার পাশাপাশি তিনি ব্যবহার করেছেন বিভিন্ন ছদ্মনাম। শামসুদ্দীন নওয়াব নামে তিনি অনুবাদ করেছিলেন জুল ভার্নের বইগুলো।
বাংলাদেশের পাঠকদের কাছে রকিব হাসান শুধু একজন গোয়েন্দা লেখক নন, তিনি কয়েক প্রজন্মের শৈশব-কৈশোরের ভালোবাসার মানুষ।

প্রথমেই বলি, যেকোনো শিল্পকর্ম বহুমাত্রিক ব্যাখ্যার দাবিদার। একধরনের ব্যাখ্যা পাওয়া যায় পাঠ্যপুস্তকে, যাকে প্রথাগত বলা যায়। একাডেমিক চর্চায় মাঝেমধ্যে নতুন ব্যাখ্যা পাওয়া যায়, কিন্তু বেশির ভাগ একাডেমিক চর্চাই ঘুরেফিরে একই কথা বলে। ৭০-৮০ বছর ধরে চিন্তার জগতে নানা আলোড়ন সৃষ্টি হচ্ছে। এক-দুই দশক পর পরই ন
০৬ আগস্ট ২০২২
জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল।
৬ দিন আগে
হাঙ্গেরির ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই এবার (২০২৫ সালে) সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন তাঁর দীর্ঘ, দার্শনিক বাক্য ও মানবজীবনের বিশৃঙ্খলার গভীর অনুসন্ধানী সাহিত্যকর্মের জন্য। সুইডিশ একাডেমি তাঁকে সম্মান জানিয়েছে ‘শিল্পের শক্তিকে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করার’ জন্য।
১৭ দিন আগে
হাঙ্গেরির সাহিত্যে অসীম জনপ্রিয়তা ও প্রভাব তাঁর; বিশ্বজোড়া আতঙ্ক ও সন্ত্রাসের দাপটেও শিল্পের শক্তি চেনায় তাঁর কলম। তিনি হাঙ্গেরিয়ান ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই; সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০২৫ সালে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।
১৭ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

হাঙ্গেরির ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই এবার (২০২৫ সালে) সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন তাঁর দীর্ঘ, দার্শনিক বাক্য ও মানবজীবনের বিশৃঙ্খলার গভীর অনুসন্ধানী সাহিত্যকর্মের জন্য। সুইডিশ একাডেমি তাঁকে সম্মান জানিয়েছে ‘শিল্পের শক্তিকে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করার’ জন্য। লেখক সুসান সনটাগ অবশ্য তাঁকে একসময় ‘মহাপ্রলয়ের হাঙ্গেরিয়ান গুরু’ আখ্যা দিয়েছিলেন।
সাহিত্যজগতে অনেকের কাছে ক্রাসনাহোরকাইয়ের নোবেল পাওয়ার এই ঘোষণাটি যেন কয়েক দশক ধরে চলা একটি বাক্যের সমাপ্তি।
১৯৫৪ সালে হাঙ্গেরির ছোট শহর জিউলা-তে জন্ম নেওয়া ক্রাসনাহোরকাই ১৯৮০-এর দশকের শুরুতে গল্প লেখা শুরু করেন। তাঁর প্রথম উপন্যাস স্যাটানট্যাঙ্গো (১৯৮৫) একটি বৃষ্টিস্নাত, ধ্বংসপ্রায় গ্রামের কাহিনি—যেখানে প্রতারক, মাতাল ও হতাশ মানুষেরা মিথ্যা আশায় আঁকড়ে থাকে। পরিচালক বেলা-তার তাঁর এই উপন্যাসটিকে দীর্ঘ ৭ ঘণ্টার এক সাদাকালো চলচ্চিত্রে রূপ দেন। এই বইতেই ধরা পড়ে ক্রাসনাহোরকাইয়ের লেখার বৈশিষ্ট্যসমূহ, যেমন—অবিরাম দীর্ঘ বাক্য, দার্শনিক হাস্যরস ও পতনের কিনারায় দাঁড়িয়ে থাকা মানুষের প্রতিচ্ছবি।
তাঁর পরবর্তী উপন্যাসগুলো—দ্য মেলানকোলি অব রেজিস্ট্যান্স (১৯৮৯), ওয়ার অ্যান্ড ওয়ার (১৯৯৯) ও সেইবো দেয়ার বিলো (২০০৮)—তাঁর এই দৃষ্টিভঙ্গিকে মহাজাগতিক পরিসরে বিস্তৃত করেছে। ‘ওয়ার অ্যান্ড ওয়ার’–এ তিনি এক নথি প্রহরীর গল্প বলেছেন, যিনি রহস্যময় এক পাণ্ডুলিপি প্রকাশ করতে নিউইয়র্কে পালিয়ে যান এবং আত্মহত্যা করেন—যেন ক্রম বিলীন পৃথিবীতে অর্থ ধরে রাখার এক মরিয়া চেষ্টা তাঁর।
ক্রাসনাহোরকাইয়ের লেখায় কাহিনি প্রায় সময়ই বাক্যের ভেতর হারিয়ে যায়। তিনি লিখেছেন এমন বাক্য, যা একাধিক পৃষ্ঠা জুড়ে পাঠককে টেনে নেয় অবচেতনে, অবিরাম প্রবাহে।
তাঁর সাহিত্যে হাস্যরস ও ট্র্যাজেডি পাশাপাশি চলে। স্যাটানট্যাঙ্গো–এর মাতাল নাচের দৃশ্য যেমন নিঃশেষের প্রতীক, তেমনি ‘ব্যারন ওয়েঙ্কহাইমস হোমকামিং’ (২০১৬)-এ দেখা যায়, ফিরে আসা এক পরাজিত অভিজাতকে। যার মাধ্যমে প্রকাশ পায় সভ্যতার পচন ও মানুষের হাস্যকর ভ্রান্তি।
২০১৫ সালে ম্যান বুকার পুরস্কার পাওয়ার মধ্য দিয়েই প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পান ক্রাসনাহোরকাই। অনুবাদক জর্জ সির্টেস ও ওটিলি মুলজেট তাঁর জটিল হাঙ্গেরিয়ান ভাষাকে ইংরেজিতে রূপ দিতে বিশেষ ভূমিকা রাখেন। ‘হাডসন রিভিউ’ তাঁকে বর্ণনা করেছিল ‘অন্তহীন বাক্যের ভ্রমণশিল্পী’ হিসেবে।
চল্লিশ বছরের সৃষ্টিতে ক্রাসনাহোরকাইয়ের ভুবন চিত্র, সংগীত, দর্শন ও ভাষার মিলনে বিস্তৃত। সাম্প্রতিক উপন্যাস ‘হার্শট ০৭৭৬৯’ (২০২৪)–এ তিনি এক প্রবাহিত বাক্যে লিখেছেন নব্য-নাৎসি, নেকড়ে আর এক হতভাগ্য পদার্থবিদের কাহিনি—আধুনিক ইউরোপের নৈতিক পক্ষাঘাতের রূপক হিসেবে।
তাঁর সমগ্র সাহিত্যজগৎ এক অন্ধকার ও ধ্যানমগ্ন মহাবিশ্ব—যেখানে পতন, শূন্যতা ও করুণা পাশাপাশি থাকে। ‘সেইবো দেয়ার বিলো’ বইটিতে তিনি লিখেছেন, ‘সৌন্দর্য, যত ক্ষণস্থায়ীই হোক না কেন, তা পবিত্রতার প্রতিবিম্ব।’ এই বিশ্বাসই লাসলো ক্রাসনাহোরকাইকে সেই বিরল লেখক করে তুলেছে, যাঁর নৈরাশ্যও মুক্তির মতো দীপ্ত।

হাঙ্গেরির ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই এবার (২০২৫ সালে) সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন তাঁর দীর্ঘ, দার্শনিক বাক্য ও মানবজীবনের বিশৃঙ্খলার গভীর অনুসন্ধানী সাহিত্যকর্মের জন্য। সুইডিশ একাডেমি তাঁকে সম্মান জানিয়েছে ‘শিল্পের শক্তিকে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করার’ জন্য। লেখক সুসান সনটাগ অবশ্য তাঁকে একসময় ‘মহাপ্রলয়ের হাঙ্গেরিয়ান গুরু’ আখ্যা দিয়েছিলেন।
সাহিত্যজগতে অনেকের কাছে ক্রাসনাহোরকাইয়ের নোবেল পাওয়ার এই ঘোষণাটি যেন কয়েক দশক ধরে চলা একটি বাক্যের সমাপ্তি।
১৯৫৪ সালে হাঙ্গেরির ছোট শহর জিউলা-তে জন্ম নেওয়া ক্রাসনাহোরকাই ১৯৮০-এর দশকের শুরুতে গল্প লেখা শুরু করেন। তাঁর প্রথম উপন্যাস স্যাটানট্যাঙ্গো (১৯৮৫) একটি বৃষ্টিস্নাত, ধ্বংসপ্রায় গ্রামের কাহিনি—যেখানে প্রতারক, মাতাল ও হতাশ মানুষেরা মিথ্যা আশায় আঁকড়ে থাকে। পরিচালক বেলা-তার তাঁর এই উপন্যাসটিকে দীর্ঘ ৭ ঘণ্টার এক সাদাকালো চলচ্চিত্রে রূপ দেন। এই বইতেই ধরা পড়ে ক্রাসনাহোরকাইয়ের লেখার বৈশিষ্ট্যসমূহ, যেমন—অবিরাম দীর্ঘ বাক্য, দার্শনিক হাস্যরস ও পতনের কিনারায় দাঁড়িয়ে থাকা মানুষের প্রতিচ্ছবি।
তাঁর পরবর্তী উপন্যাসগুলো—দ্য মেলানকোলি অব রেজিস্ট্যান্স (১৯৮৯), ওয়ার অ্যান্ড ওয়ার (১৯৯৯) ও সেইবো দেয়ার বিলো (২০০৮)—তাঁর এই দৃষ্টিভঙ্গিকে মহাজাগতিক পরিসরে বিস্তৃত করেছে। ‘ওয়ার অ্যান্ড ওয়ার’–এ তিনি এক নথি প্রহরীর গল্প বলেছেন, যিনি রহস্যময় এক পাণ্ডুলিপি প্রকাশ করতে নিউইয়র্কে পালিয়ে যান এবং আত্মহত্যা করেন—যেন ক্রম বিলীন পৃথিবীতে অর্থ ধরে রাখার এক মরিয়া চেষ্টা তাঁর।
ক্রাসনাহোরকাইয়ের লেখায় কাহিনি প্রায় সময়ই বাক্যের ভেতর হারিয়ে যায়। তিনি লিখেছেন এমন বাক্য, যা একাধিক পৃষ্ঠা জুড়ে পাঠককে টেনে নেয় অবচেতনে, অবিরাম প্রবাহে।
তাঁর সাহিত্যে হাস্যরস ও ট্র্যাজেডি পাশাপাশি চলে। স্যাটানট্যাঙ্গো–এর মাতাল নাচের দৃশ্য যেমন নিঃশেষের প্রতীক, তেমনি ‘ব্যারন ওয়েঙ্কহাইমস হোমকামিং’ (২০১৬)-এ দেখা যায়, ফিরে আসা এক পরাজিত অভিজাতকে। যার মাধ্যমে প্রকাশ পায় সভ্যতার পচন ও মানুষের হাস্যকর ভ্রান্তি।
২০১৫ সালে ম্যান বুকার পুরস্কার পাওয়ার মধ্য দিয়েই প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পান ক্রাসনাহোরকাই। অনুবাদক জর্জ সির্টেস ও ওটিলি মুলজেট তাঁর জটিল হাঙ্গেরিয়ান ভাষাকে ইংরেজিতে রূপ দিতে বিশেষ ভূমিকা রাখেন। ‘হাডসন রিভিউ’ তাঁকে বর্ণনা করেছিল ‘অন্তহীন বাক্যের ভ্রমণশিল্পী’ হিসেবে।
চল্লিশ বছরের সৃষ্টিতে ক্রাসনাহোরকাইয়ের ভুবন চিত্র, সংগীত, দর্শন ও ভাষার মিলনে বিস্তৃত। সাম্প্রতিক উপন্যাস ‘হার্শট ০৭৭৬৯’ (২০২৪)–এ তিনি এক প্রবাহিত বাক্যে লিখেছেন নব্য-নাৎসি, নেকড়ে আর এক হতভাগ্য পদার্থবিদের কাহিনি—আধুনিক ইউরোপের নৈতিক পক্ষাঘাতের রূপক হিসেবে।
তাঁর সমগ্র সাহিত্যজগৎ এক অন্ধকার ও ধ্যানমগ্ন মহাবিশ্ব—যেখানে পতন, শূন্যতা ও করুণা পাশাপাশি থাকে। ‘সেইবো দেয়ার বিলো’ বইটিতে তিনি লিখেছেন, ‘সৌন্দর্য, যত ক্ষণস্থায়ীই হোক না কেন, তা পবিত্রতার প্রতিবিম্ব।’ এই বিশ্বাসই লাসলো ক্রাসনাহোরকাইকে সেই বিরল লেখক করে তুলেছে, যাঁর নৈরাশ্যও মুক্তির মতো দীপ্ত।

প্রথমেই বলি, যেকোনো শিল্পকর্ম বহুমাত্রিক ব্যাখ্যার দাবিদার। একধরনের ব্যাখ্যা পাওয়া যায় পাঠ্যপুস্তকে, যাকে প্রথাগত বলা যায়। একাডেমিক চর্চায় মাঝেমধ্যে নতুন ব্যাখ্যা পাওয়া যায়, কিন্তু বেশির ভাগ একাডেমিক চর্চাই ঘুরেফিরে একই কথা বলে। ৭০-৮০ বছর ধরে চিন্তার জগতে নানা আলোড়ন সৃষ্টি হচ্ছে। এক-দুই দশক পর পরই ন
০৬ আগস্ট ২০২২
জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল।
৬ দিন আগে
জনপ্রিয় কিশোর গোয়েন্দা সিরিজ তিন গোয়েন্দার স্রষ্টা রকিব হাসান মারা গেছেন। আজ বুধবার রাজধানীর একটি হাসপাতালে ডায়ালাইসিস চলাকালে তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।
১১ দিন আগে
হাঙ্গেরির সাহিত্যে অসীম জনপ্রিয়তা ও প্রভাব তাঁর; বিশ্বজোড়া আতঙ্ক ও সন্ত্রাসের দাপটেও শিল্পের শক্তি চেনায় তাঁর কলম। তিনি হাঙ্গেরিয়ান ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই; সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০২৫ সালে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।
১৭ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

হাঙ্গেরির সাহিত্যে অসীম জনপ্রিয়তা ও প্রভাব তাঁর; বিশ্বজোড়া আতঙ্ক ও সন্ত্রাসের দাপটেও শিল্পের শক্তি চেনায় তাঁর কলম। তিনি হাঙ্গেরিয়ান ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই; সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০২৫ সালে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।
আধুনিক হাঙ্গেরীয় সাহিত্যের একজন অন্যতম প্রধান ব্যক্তিত্ব লাসলো। অভিনব শৈলীর পাশাপাশি দার্শনিক গভীরতার জন্য তাঁর সাহিত্য সমাদৃত হয়েছে। তাঁকে ফ্রানৎস কাফকা ও স্যামুয়েল বেকেটের ঐতিহ্যের উত্তরাধিকারী হিসেবে বিবেচনা করা হয়। বিশ্বজোড়া আতঙ্ক ও সন্ত্রাসের মধ্যেও শিল্পের লেলিহান ঔজ্জ্বল্য ফুটে ওঠে লাসলোর লেখায়। তাই যুদ্ধবিধ্বস্ত সময়ের বুকে ফুলের মতো স্থান করে নিল তাঁর সাহিত্য।
লাসলোর জন্য সাহিত্যে এটা প্রথম পুরস্কার নয়, ২০১৪ সালে সাহিত্যকর্মের জন্য ম্যান বুকার ইন্টারন্যাশনাল পুরস্কার পান তিনি। এ পুরস্কার বিশ্বসাহিত্যে তাঁর অবস্থানকে সুদৃঢ় করে।
লাসলোর সাহিত্যের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো—স্বতন্ত্র শৈলী ও গঠন। উপন্যাসের মূল বিষয়বস্তু হলো—মানবতার অবক্ষয়, ধ্বংসের অনিবার্যতা ও আধুনিক জীবনের লক্ষ্যহীন চলন। তাঁর চরিত্রদের মধ্যে প্রায়ই একধরনের হতাশা ও বিচ্ছিন্নতা দেখা যায়; তারা এমন এক জগতের পথিক, যেখানে নৈতিকতা ও আশা বিলীনপ্রায়।
১৯৮৫ সালে প্রকাশিত ‘স্যাটানটাঙ্গো’ নামে প্রথম উপন্যাস লিখেই খ্যাতি পান লাসলো। এই উপন্যাসে বিচ্ছিন্ন ও পতিত এক কৃষি সমবায় গ্রামের জীবন তুলে ধরেছেন তিনি। সেখানে একধরনের বিভ্রম ও আশার জন্ম দেয় এক রহস্যময় আগন্তুকের আগমনে। এই উপন্যাস অবলম্বনে একই শিরোনামে সাত ঘণ্টার কালজয়ী চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন বিখ্যাত পরিচালক বেলা টর।
লাসলোর আরেকটি ফিকশন উপন্যাস হলো— ‘দ্য মেলানকোলি অব রেজিস্ট্যান্স’। হাঙ্গেরির এক কাল্পনিক শহরের জীবন ফুটে উঠেছে এই উপন্যাসে। সামুদ্রিক প্রাণী হাঙরের প্রদর্শনীকে কেন্দ্র করে মানুষের মধ্যকার উন্মাদনা, সামাজিক বিশৃঙ্খলা ও একনায়কতন্ত্রের উত্থানের চিত্র আঁকা হয়েছে তাতে।
‘ওয়ার অ্যান্ড ওয়ার’ লাসলোর আরেকটি বিখ্যাত উপন্যাস। লম্বা লম্বা বাক্যে লেখা এই উপন্যাস লাসলোর শৈলী নিয়ে পাঠকদের নতুন করে ভাবায়। উপন্যাসের নায়ক একটি পাণ্ডুলিপি রক্ষা করার জন্য বিশ্বের বিভিন্ন শহর ঘুরে বেড়ায়। বিশ্বের চূড়ান্ত ধ্বংসের একটি কাব্যিক বর্ণনা পাওয়া যায় এই উপন্যাসে।
এবার লাসলোকে পুরস্কারের জন্য মনোনীত করার নেপথ্যে নোবেল কমিটির বড় কারণ ছিল তাঁর সাহিত্যে শিল্পের জয়ধ্বনি তোলার প্রচেষ্টা। যখন সারা বিশ্বের বেশ কিছু দেশ যুদ্ধবিধ্বস্ত বা যুদ্ধের জন্য উৎসুক, তখন বারবার শিল্পের মোহিনী প্রেম ও বন্ধনের কথা মনে করিয়ে দিতে চায় লাসলোর সাহিত্য।

হাঙ্গেরির সাহিত্যে অসীম জনপ্রিয়তা ও প্রভাব তাঁর; বিশ্বজোড়া আতঙ্ক ও সন্ত্রাসের দাপটেও শিল্পের শক্তি চেনায় তাঁর কলম। তিনি হাঙ্গেরিয়ান ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই; সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০২৫ সালে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।
আধুনিক হাঙ্গেরীয় সাহিত্যের একজন অন্যতম প্রধান ব্যক্তিত্ব লাসলো। অভিনব শৈলীর পাশাপাশি দার্শনিক গভীরতার জন্য তাঁর সাহিত্য সমাদৃত হয়েছে। তাঁকে ফ্রানৎস কাফকা ও স্যামুয়েল বেকেটের ঐতিহ্যের উত্তরাধিকারী হিসেবে বিবেচনা করা হয়। বিশ্বজোড়া আতঙ্ক ও সন্ত্রাসের মধ্যেও শিল্পের লেলিহান ঔজ্জ্বল্য ফুটে ওঠে লাসলোর লেখায়। তাই যুদ্ধবিধ্বস্ত সময়ের বুকে ফুলের মতো স্থান করে নিল তাঁর সাহিত্য।
লাসলোর জন্য সাহিত্যে এটা প্রথম পুরস্কার নয়, ২০১৪ সালে সাহিত্যকর্মের জন্য ম্যান বুকার ইন্টারন্যাশনাল পুরস্কার পান তিনি। এ পুরস্কার বিশ্বসাহিত্যে তাঁর অবস্থানকে সুদৃঢ় করে।
লাসলোর সাহিত্যের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো—স্বতন্ত্র শৈলী ও গঠন। উপন্যাসের মূল বিষয়বস্তু হলো—মানবতার অবক্ষয়, ধ্বংসের অনিবার্যতা ও আধুনিক জীবনের লক্ষ্যহীন চলন। তাঁর চরিত্রদের মধ্যে প্রায়ই একধরনের হতাশা ও বিচ্ছিন্নতা দেখা যায়; তারা এমন এক জগতের পথিক, যেখানে নৈতিকতা ও আশা বিলীনপ্রায়।
১৯৮৫ সালে প্রকাশিত ‘স্যাটানটাঙ্গো’ নামে প্রথম উপন্যাস লিখেই খ্যাতি পান লাসলো। এই উপন্যাসে বিচ্ছিন্ন ও পতিত এক কৃষি সমবায় গ্রামের জীবন তুলে ধরেছেন তিনি। সেখানে একধরনের বিভ্রম ও আশার জন্ম দেয় এক রহস্যময় আগন্তুকের আগমনে। এই উপন্যাস অবলম্বনে একই শিরোনামে সাত ঘণ্টার কালজয়ী চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন বিখ্যাত পরিচালক বেলা টর।
লাসলোর আরেকটি ফিকশন উপন্যাস হলো— ‘দ্য মেলানকোলি অব রেজিস্ট্যান্স’। হাঙ্গেরির এক কাল্পনিক শহরের জীবন ফুটে উঠেছে এই উপন্যাসে। সামুদ্রিক প্রাণী হাঙরের প্রদর্শনীকে কেন্দ্র করে মানুষের মধ্যকার উন্মাদনা, সামাজিক বিশৃঙ্খলা ও একনায়কতন্ত্রের উত্থানের চিত্র আঁকা হয়েছে তাতে।
‘ওয়ার অ্যান্ড ওয়ার’ লাসলোর আরেকটি বিখ্যাত উপন্যাস। লম্বা লম্বা বাক্যে লেখা এই উপন্যাস লাসলোর শৈলী নিয়ে পাঠকদের নতুন করে ভাবায়। উপন্যাসের নায়ক একটি পাণ্ডুলিপি রক্ষা করার জন্য বিশ্বের বিভিন্ন শহর ঘুরে বেড়ায়। বিশ্বের চূড়ান্ত ধ্বংসের একটি কাব্যিক বর্ণনা পাওয়া যায় এই উপন্যাসে।
এবার লাসলোকে পুরস্কারের জন্য মনোনীত করার নেপথ্যে নোবেল কমিটির বড় কারণ ছিল তাঁর সাহিত্যে শিল্পের জয়ধ্বনি তোলার প্রচেষ্টা। যখন সারা বিশ্বের বেশ কিছু দেশ যুদ্ধবিধ্বস্ত বা যুদ্ধের জন্য উৎসুক, তখন বারবার শিল্পের মোহিনী প্রেম ও বন্ধনের কথা মনে করিয়ে দিতে চায় লাসলোর সাহিত্য।

প্রথমেই বলি, যেকোনো শিল্পকর্ম বহুমাত্রিক ব্যাখ্যার দাবিদার। একধরনের ব্যাখ্যা পাওয়া যায় পাঠ্যপুস্তকে, যাকে প্রথাগত বলা যায়। একাডেমিক চর্চায় মাঝেমধ্যে নতুন ব্যাখ্যা পাওয়া যায়, কিন্তু বেশির ভাগ একাডেমিক চর্চাই ঘুরেফিরে একই কথা বলে। ৭০-৮০ বছর ধরে চিন্তার জগতে নানা আলোড়ন সৃষ্টি হচ্ছে। এক-দুই দশক পর পরই ন
০৬ আগস্ট ২০২২
জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল।
৬ দিন আগে
জনপ্রিয় কিশোর গোয়েন্দা সিরিজ তিন গোয়েন্দার স্রষ্টা রকিব হাসান মারা গেছেন। আজ বুধবার রাজধানীর একটি হাসপাতালে ডায়ালাইসিস চলাকালে তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।
১১ দিন আগে
হাঙ্গেরির ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই এবার (২০২৫ সালে) সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন তাঁর দীর্ঘ, দার্শনিক বাক্য ও মানবজীবনের বিশৃঙ্খলার গভীর অনুসন্ধানী সাহিত্যকর্মের জন্য। সুইডিশ একাডেমি তাঁকে সম্মান জানিয়েছে ‘শিল্পের শক্তিকে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করার’ জন্য।
১৭ দিন আগে