নওশাদ জামিল
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে নিয়ে বাংলাদেশ, ভারতসহ পৃথিবীর নানা দেশে বিপুল পরিমাণ সৃজনশীল ও মননশীল কাজ হয়েছে। আপনি কি মনে করেন, রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে নতুন কোনো কাজ করার বাকি আছে?
প্রথমেই বলি, যেকোনো শিল্পকর্ম বহুমাত্রিক ব্যাখ্যার দাবিদার। একধরনের ব্যাখ্যা পাওয়া যায় পাঠ্যপুস্তকে, যাকে প্রথাগত বলা যায়। একাডেমিক চর্চায় মাঝেমধ্যে নতুন ব্যাখ্যা পাওয়া যায়, কিন্তু বেশির ভাগ একাডেমিক চর্চাই ঘুরেফিরে একই কথা বলে। ৭০-৮০ বছর ধরে চিন্তার জগতে নানা আলোড়ন সৃষ্টি হচ্ছে। এক-দুই দশক পর পরই নতুন চিন্তার উদ্ভব হচ্ছে। বৈচিত্র্যময় ও বিস্ময়কর সব চিন্তা মানুষকে ভাবাচ্ছে, নতুন পথ দেখাচ্ছে। নতুন তত্ত্ব উপস্থিত হচ্ছে, যাকে আমরা থিওরি বলি। যেমন কার্ল মার্ক্স সমাজ পরিবর্তনের থিওরি দিয়েছেন। নারীবাদীরা বিভিন্ন থিওরি দিয়েছেন। একটা থিওরি থেকে একাধিক থিওরির উদ্ভব হতে পারে। এ রকমভাবে আমরা কাঠামোবাদ পেরিয়ে উত্তর-কাঠামোবাদে প্রবেশ করলাম, আধুনিকতা পেরিয়ে উত্তরাধুনিকতায় পা রাখলাম। উত্তরাধুনিক চিন্তাভাবনা স্থাপত্য থেকে নিয়ে সংস্কৃতি পাঠ ও সাহিত্য সমালোচনাকে প্রভাবিত করছে। পুরোনো কাজের নতুন নতুন ব্যাখ্যা তৈরি হচ্ছে। এ অবস্থায় পরিবর্তিত তত্ত্ব ও চিন্তার আলোকে যেকোনো শিল্পকর্মকে নতুন করে যাচাই করা যায়। রবীন্দ্রনাথকে এসব তত্ত্ব দিয়ে নতুন করে ব্যাখ্যার সুযোগ রয়েছে।
বাংলাদেশে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে রবীন্দ্রচর্চা হচ্ছে অনেক দিন ধরেই। তাঁর নামাঙ্কিত বিশ্ববিদ্যালয় হয়েছে, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান হয়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলোয় নানাধর্মী গবেষণা হচ্ছে। বাংলাদেশে প্রাতিষ্ঠানিক চর্চার মান ও রবীন্দ্রচর্চা সম্পর্কে আপনার অভিমত জানতে চাই।
প্রাতিষ্ঠানিক ও অপ্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে নানা কাজ হয়েছে। প্রাতিষ্ঠানিক চর্চার ভালো-মন্দ দুটো দিকই আছে। বিশ্ববিদ্যালয়কেন্দ্রিক চর্চায় বেশ কিছু ভালো কাজ হয়েছে। রবীন্দ্র শতবার্ষিকী এবং সার্ধশতবার্ষিকীতেও কিছু ভালো মানের প্রবন্ধ ও বই লেখা হয়েছে। আবার অনেক কাজ আছে দায়সারা গোছের, শুধু পিএইচডি ডিগ্রি অর্জনের জন্য কিংবা প্রমোশনের জন্য। তবে মানসম্পন্ন কাজ হচ্ছে না তা নয়, যদিও সংখ্যাটা কম। মানের ক্ষেত্রে সব সময়ই আমাদের কিছু ঘাটতি রয়ে যায়। এটা শুধু রবীন্দ্র গবেষণার ক্ষেত্রে নয়, সমাজ গবেষণা ও অন্যান্য ক্ষেত্রেও হয়। তবে আমাদের গবেষণাগত নানা সীমাবদ্ধতা বিবেচনায় নিলে সার্বিকভাবে আমি হতাশ নই, অন্তত রবীন্দ্রনাথকে বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে দেখার একটা চেষ্টা হচ্ছে।
এখন তরুণ গবেষকেরাও রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে কাজে আগ্রহী হচ্ছেন। বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে তাঁরা রবীন্দ্রনাথের সৃষ্টিকে ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করছেন, নানা রকম কাজ করছেন।
তরুণদের মধ্যে কেউ কেউ খুব ভালো কাজ করছেন। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের একটা অভিসন্দর্ভ সেদিন পড়লাম, রবীন্দ্রনাথের নৃত্যনাট্য নিয়ে চমৎকার একটি গবেষণা। যাঁরা ব্যাপক পড়াশোনা করে, পরিশ্রম করে, বিভিন্ন তত্ত্বের আলোকে রবীন্দ্রনাথকে গবেষণা করছেন, তাঁদের কেউ কেউ কাজের মধ্যে নতুনত্ব সৃষ্টি করছেন। সম্প্রতি উত্তরাধিকার পত্রিকায় রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে একটা নিবন্ধ পড়েছি, তাতে নতুন চিন্তাভাবনা দেখেছি। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়েও বিচ্ছিন্নভাবে রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে নতুন চিন্তার প্রকাশ হচ্ছে। কয়েক বছর আগে রবীন্দ্রনাথের নামে বিশ্ববিদ্যালয় হয়েছে, সেখানে একাডেমি চর্চা হচ্ছে, গবেষণা পুরোপুরি শুরু হয়নি।
বাংলাদেশে রবীন্দ্র-চিত্রকলা নিয়ে যাঁরা কাজ করেছেন, আপনি তাঁদের মধ্য অন্যতম। রবীন্দ্রনাথের চিত্রকলা নিয়ে নতুন কী কাজ করা যায়?
রবীন্দ্রনাথের চিত্রকলা নিয়ে নতুন লেখার অবকাশ আছে, কিন্তু আমাদের পক্ষে তাঁর চিত্রকলা, যেগুলো শান্তিনিকেতনে ও ভারতের অন্যান্য জায়গায় সংরক্ষিত আছে, তা দেখার প্রয়োজন। সেই সুযোগ নেই। এ জন্য তাঁর চিত্রকলা সম্পর্কে লেখালেখিতে প্রথাগত কথাবার্তাই বেশি উঠে আসে। তা ছাড়া বাংলাদেশে এখন শিল্পকলা নিয়ে কজনই বা লেখালেখি করেন? তরুণেরা কোথায়? যদি তরুণেরা উৎসাহিত না হন, নতুন চিন্তা আসবে কোত্থেকে?
বাংলাদেশে রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে নানা সময় বিতর্ক সৃষ্টি করতে চায় কিছু মহল। এ প্রসঙ্গে আপনার অভিমত কী?
সাহিত্যকর্ম নিয়ে বিতর্ক থাকা ভালো, তাতে বোঝা যায়, মনোযোগের কেন্দ্রে আছে সাহিত্য। বিতর্ক যদি হয় জেনে-বুঝে, যাকে আমরা বলি শিক্ষিত ও বুদ্ধিবৃত্তিক বিতর্ক, তাহলে তাকে স্বাগত জানানো উচিত। পুবে-পশ্চিমে তাকালে দেখতে পাব, কবি, সাহিত্যিক, শিল্পীকে নিয়ে নিরন্তর বিতর্ক হচ্ছে। শেক্সপিয়ারকে নিয়ে যুগের পর যুগ বিতর্ক হয়েছে। তাতে দিন শেষে পাঠকদের উপকার হয়, নতুন করে জানার ও চিন্তার সুযোগ সৃষ্টি হয়। অন্যদিকে মানুষ যখন না জেনে-বুঝে, না পড়ে বিতর্ক করে, তখন সমস্যা তৈরি হতে পারে। এ রকম বিতর্ক উপকারী নয়। এটাই বাংলাদেশে হচ্ছে বলা যায়। রবীন্দ্রনাথকে কতজন গভীরভাবে পড়েছেন, জেনেছেন, সে প্রশ্ন থেকে যায়। রবীন্দ্রনাথকে পড়া মানে কয়েক শ থেকে কয়েক হাজার পৃষ্ঠা পড়া, এ পরিশ্রম অনেকেই করছেন না। পড়ার গভীরতা না থাকলে বিতর্কের কোনো মানে নেই, অর্থ নেই। এটা শুধু কিছু মানুষকে উত্তেজিত করবে। উত্তেজনা প্রয়োজন বটে, কিন্তু অর্থহীন উত্তেজনা মানুষকে কিছুই দেয় না।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে নিয়ে অনেকে রক্ষণশীল আচরণ করেন। রক্ষণশীল আচরণ কি বিতর্ককে উসকে দেয়?
যখনই রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে বিতর্ক হয়, তখনই বুঝতে হবে রবীন্দ্রনাথ গুরুত্বপূর্ণ ও প্রাসঙ্গিক। কেউ যখন রবীন্দ্রসংগীত বিকৃতভাবে গাইছেন, তখন তিনি রবীন্দ্রনাথকেই আশ্রয় করছেন, তাতে বিচলিত হওয়ার কিছু নেই। অনেকে দেখি এসব ব্যাপারে খুবই রক্ষণশীল, কিন্তু যুগ পাল্টেছে। দৃশ্যমাধ্যম এখন মানুষের মনোজগৎ দখল করে নিয়েছে। এখন পড়ার চেয়ে দেখার চর্চা বেশি, দেখানোর চর্চাও। এ জন্য কি চাইলেই ইউটিউব-ফেসবুকে রবীন্দ্র-নজরুলের গান গাইতে পারেন। তাতে তাঁরা আনন্দ পান। রক্ষণশীলরা তা না শুনলেই পারেন। অতি-রক্ষণশীলতা কখনো কখনো ক্ষতির কারণ হতে পারে। এতে নতুন সময়টাকে অনুধাবন করা যায় না, নতুন চিন্তার বিস্তার ঘটে না, অন্তত তাঁদের ক্ষেত্রে এ কথাটা বলা যায়। মনে রাখতে হবে ওই বিকৃত গানের তোড়ে রবীন্দ্রনাথ ভেসে যাবেন না। রবীন্দ্রনাথ রবীন্দ্রনাথই থাকবেন।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে নিয়ে বাংলাদেশ, ভারতসহ পৃথিবীর নানা দেশে বিপুল পরিমাণ সৃজনশীল ও মননশীল কাজ হয়েছে। আপনি কি মনে করেন, রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে নতুন কোনো কাজ করার বাকি আছে?
প্রথমেই বলি, যেকোনো শিল্পকর্ম বহুমাত্রিক ব্যাখ্যার দাবিদার। একধরনের ব্যাখ্যা পাওয়া যায় পাঠ্যপুস্তকে, যাকে প্রথাগত বলা যায়। একাডেমিক চর্চায় মাঝেমধ্যে নতুন ব্যাখ্যা পাওয়া যায়, কিন্তু বেশির ভাগ একাডেমিক চর্চাই ঘুরেফিরে একই কথা বলে। ৭০-৮০ বছর ধরে চিন্তার জগতে নানা আলোড়ন সৃষ্টি হচ্ছে। এক-দুই দশক পর পরই নতুন চিন্তার উদ্ভব হচ্ছে। বৈচিত্র্যময় ও বিস্ময়কর সব চিন্তা মানুষকে ভাবাচ্ছে, নতুন পথ দেখাচ্ছে। নতুন তত্ত্ব উপস্থিত হচ্ছে, যাকে আমরা থিওরি বলি। যেমন কার্ল মার্ক্স সমাজ পরিবর্তনের থিওরি দিয়েছেন। নারীবাদীরা বিভিন্ন থিওরি দিয়েছেন। একটা থিওরি থেকে একাধিক থিওরির উদ্ভব হতে পারে। এ রকমভাবে আমরা কাঠামোবাদ পেরিয়ে উত্তর-কাঠামোবাদে প্রবেশ করলাম, আধুনিকতা পেরিয়ে উত্তরাধুনিকতায় পা রাখলাম। উত্তরাধুনিক চিন্তাভাবনা স্থাপত্য থেকে নিয়ে সংস্কৃতি পাঠ ও সাহিত্য সমালোচনাকে প্রভাবিত করছে। পুরোনো কাজের নতুন নতুন ব্যাখ্যা তৈরি হচ্ছে। এ অবস্থায় পরিবর্তিত তত্ত্ব ও চিন্তার আলোকে যেকোনো শিল্পকর্মকে নতুন করে যাচাই করা যায়। রবীন্দ্রনাথকে এসব তত্ত্ব দিয়ে নতুন করে ব্যাখ্যার সুযোগ রয়েছে।
বাংলাদেশে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে রবীন্দ্রচর্চা হচ্ছে অনেক দিন ধরেই। তাঁর নামাঙ্কিত বিশ্ববিদ্যালয় হয়েছে, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান হয়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলোয় নানাধর্মী গবেষণা হচ্ছে। বাংলাদেশে প্রাতিষ্ঠানিক চর্চার মান ও রবীন্দ্রচর্চা সম্পর্কে আপনার অভিমত জানতে চাই।
প্রাতিষ্ঠানিক ও অপ্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে নানা কাজ হয়েছে। প্রাতিষ্ঠানিক চর্চার ভালো-মন্দ দুটো দিকই আছে। বিশ্ববিদ্যালয়কেন্দ্রিক চর্চায় বেশ কিছু ভালো কাজ হয়েছে। রবীন্দ্র শতবার্ষিকী এবং সার্ধশতবার্ষিকীতেও কিছু ভালো মানের প্রবন্ধ ও বই লেখা হয়েছে। আবার অনেক কাজ আছে দায়সারা গোছের, শুধু পিএইচডি ডিগ্রি অর্জনের জন্য কিংবা প্রমোশনের জন্য। তবে মানসম্পন্ন কাজ হচ্ছে না তা নয়, যদিও সংখ্যাটা কম। মানের ক্ষেত্রে সব সময়ই আমাদের কিছু ঘাটতি রয়ে যায়। এটা শুধু রবীন্দ্র গবেষণার ক্ষেত্রে নয়, সমাজ গবেষণা ও অন্যান্য ক্ষেত্রেও হয়। তবে আমাদের গবেষণাগত নানা সীমাবদ্ধতা বিবেচনায় নিলে সার্বিকভাবে আমি হতাশ নই, অন্তত রবীন্দ্রনাথকে বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে দেখার একটা চেষ্টা হচ্ছে।
এখন তরুণ গবেষকেরাও রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে কাজে আগ্রহী হচ্ছেন। বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে তাঁরা রবীন্দ্রনাথের সৃষ্টিকে ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করছেন, নানা রকম কাজ করছেন।
তরুণদের মধ্যে কেউ কেউ খুব ভালো কাজ করছেন। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের একটা অভিসন্দর্ভ সেদিন পড়লাম, রবীন্দ্রনাথের নৃত্যনাট্য নিয়ে চমৎকার একটি গবেষণা। যাঁরা ব্যাপক পড়াশোনা করে, পরিশ্রম করে, বিভিন্ন তত্ত্বের আলোকে রবীন্দ্রনাথকে গবেষণা করছেন, তাঁদের কেউ কেউ কাজের মধ্যে নতুনত্ব সৃষ্টি করছেন। সম্প্রতি উত্তরাধিকার পত্রিকায় রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে একটা নিবন্ধ পড়েছি, তাতে নতুন চিন্তাভাবনা দেখেছি। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়েও বিচ্ছিন্নভাবে রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে নতুন চিন্তার প্রকাশ হচ্ছে। কয়েক বছর আগে রবীন্দ্রনাথের নামে বিশ্ববিদ্যালয় হয়েছে, সেখানে একাডেমি চর্চা হচ্ছে, গবেষণা পুরোপুরি শুরু হয়নি।
বাংলাদেশে রবীন্দ্র-চিত্রকলা নিয়ে যাঁরা কাজ করেছেন, আপনি তাঁদের মধ্য অন্যতম। রবীন্দ্রনাথের চিত্রকলা নিয়ে নতুন কী কাজ করা যায়?
রবীন্দ্রনাথের চিত্রকলা নিয়ে নতুন লেখার অবকাশ আছে, কিন্তু আমাদের পক্ষে তাঁর চিত্রকলা, যেগুলো শান্তিনিকেতনে ও ভারতের অন্যান্য জায়গায় সংরক্ষিত আছে, তা দেখার প্রয়োজন। সেই সুযোগ নেই। এ জন্য তাঁর চিত্রকলা সম্পর্কে লেখালেখিতে প্রথাগত কথাবার্তাই বেশি উঠে আসে। তা ছাড়া বাংলাদেশে এখন শিল্পকলা নিয়ে কজনই বা লেখালেখি করেন? তরুণেরা কোথায়? যদি তরুণেরা উৎসাহিত না হন, নতুন চিন্তা আসবে কোত্থেকে?
বাংলাদেশে রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে নানা সময় বিতর্ক সৃষ্টি করতে চায় কিছু মহল। এ প্রসঙ্গে আপনার অভিমত কী?
সাহিত্যকর্ম নিয়ে বিতর্ক থাকা ভালো, তাতে বোঝা যায়, মনোযোগের কেন্দ্রে আছে সাহিত্য। বিতর্ক যদি হয় জেনে-বুঝে, যাকে আমরা বলি শিক্ষিত ও বুদ্ধিবৃত্তিক বিতর্ক, তাহলে তাকে স্বাগত জানানো উচিত। পুবে-পশ্চিমে তাকালে দেখতে পাব, কবি, সাহিত্যিক, শিল্পীকে নিয়ে নিরন্তর বিতর্ক হচ্ছে। শেক্সপিয়ারকে নিয়ে যুগের পর যুগ বিতর্ক হয়েছে। তাতে দিন শেষে পাঠকদের উপকার হয়, নতুন করে জানার ও চিন্তার সুযোগ সৃষ্টি হয়। অন্যদিকে মানুষ যখন না জেনে-বুঝে, না পড়ে বিতর্ক করে, তখন সমস্যা তৈরি হতে পারে। এ রকম বিতর্ক উপকারী নয়। এটাই বাংলাদেশে হচ্ছে বলা যায়। রবীন্দ্রনাথকে কতজন গভীরভাবে পড়েছেন, জেনেছেন, সে প্রশ্ন থেকে যায়। রবীন্দ্রনাথকে পড়া মানে কয়েক শ থেকে কয়েক হাজার পৃষ্ঠা পড়া, এ পরিশ্রম অনেকেই করছেন না। পড়ার গভীরতা না থাকলে বিতর্কের কোনো মানে নেই, অর্থ নেই। এটা শুধু কিছু মানুষকে উত্তেজিত করবে। উত্তেজনা প্রয়োজন বটে, কিন্তু অর্থহীন উত্তেজনা মানুষকে কিছুই দেয় না।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে নিয়ে অনেকে রক্ষণশীল আচরণ করেন। রক্ষণশীল আচরণ কি বিতর্ককে উসকে দেয়?
যখনই রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে বিতর্ক হয়, তখনই বুঝতে হবে রবীন্দ্রনাথ গুরুত্বপূর্ণ ও প্রাসঙ্গিক। কেউ যখন রবীন্দ্রসংগীত বিকৃতভাবে গাইছেন, তখন তিনি রবীন্দ্রনাথকেই আশ্রয় করছেন, তাতে বিচলিত হওয়ার কিছু নেই। অনেকে দেখি এসব ব্যাপারে খুবই রক্ষণশীল, কিন্তু যুগ পাল্টেছে। দৃশ্যমাধ্যম এখন মানুষের মনোজগৎ দখল করে নিয়েছে। এখন পড়ার চেয়ে দেখার চর্চা বেশি, দেখানোর চর্চাও। এ জন্য কি চাইলেই ইউটিউব-ফেসবুকে রবীন্দ্র-নজরুলের গান গাইতে পারেন। তাতে তাঁরা আনন্দ পান। রক্ষণশীলরা তা না শুনলেই পারেন। অতি-রক্ষণশীলতা কখনো কখনো ক্ষতির কারণ হতে পারে। এতে নতুন সময়টাকে অনুধাবন করা যায় না, নতুন চিন্তার বিস্তার ঘটে না, অন্তত তাঁদের ক্ষেত্রে এ কথাটা বলা যায়। মনে রাখতে হবে ওই বিকৃত গানের তোড়ে রবীন্দ্রনাথ ভেসে যাবেন না। রবীন্দ্রনাথ রবীন্দ্রনাথই থাকবেন।
সামগ্রিকভাবে পশ্চিমা সাহিত্য, সংস্কৃতি ও শিল্পকর্মকে ‘বুর্জোয়া’ ও ‘প্রতিক্রিয়াশীল’ বলে চিহ্নিত করে নিষিদ্ধ করা হয় চীনে। এই পরিপ্রেক্ষিতেই শেকসপিয়ারের সব সাহিত্যকর্ম—যেমন হ্যামলেট, ম্যাকবেথ, রোমিও অ্যান্ড জুলিয়েট, ওথেলো ইত্যাদি—চীনে নিষিদ্ধ হয়, কারণ সেগুলোতে চীনা কমিউনিস্ট আদর্শের ‘সঠিক রাজনৈতিক
১৩ দিন আগেকবি নজরুল ইসলামের বহুল পরিচিতি ‘বিদ্রোহী কবি’ হিসেবে, কিন্তু নজরুল উঁচুমার্গের ‘সাম্যবাদী কবি’ও বটেন। নজরুলের সাম্যচিন্তা তাঁর জীবনের বাস্তবতা থেকে উদ্ভূত। তাঁর শৈশব-কৈশোরের জীবন-অভিজ্ঞতা, তাঁর যৌবনের যাপিত জীবন তাঁকে বাস্তব পৃথিবীর দারিদ্র্য, অসমতা ও অসাম্যের সঙ্গে পরিচিত করেছে অত্যন্ত নগ্নভাবে...
১৪ দিন আগেবাংলা সাহিত্যে জনপ্রিয় সাহিত্যিকদের মধ্যে নজরুল অন্যতম। সাধারণত জনপ্রিয় সাহিত্যিকদের বেলায় দেখা যায় কালের সীমা অতিক্রম করলে তাঁদের নাম ইতিহাসের পাতায় আর পাওয়া যায় না। এ ক্ষেত্রে নজরুলের জীবন ও সাহিত্য কালের সীমা অতিক্রম করে আজও পাঠকপ্রিয় হয়ে আছে। এর মূলে রয়েছে তাঁর সচেতন জীবনবোধ...
১৪ দিন আগেনজরুলকে ভুল ভাবে পড়ার আরেকটি বড় উদাহরণ হলো তাঁকে প্রায়শই রবীন্দ্রনাথের ‘প্রতিপক্ষ’ হিসেবে দাঁড় করানোর রাজনৈতিক প্রবণতা। এই আইডেনটিটি পলিটিকস শুধু বিভাজন তৈরি করে না, নজরুলের মৌলিক অবস্থানকেও বিকৃত করে।
১৪ দিন আগে