Ajker Patrika

নিমগ্ন সাধক মুর্তজা বশীর

আপডেট : ২০ আগস্ট ২০২২, ০৯: ৫২
নিমগ্ন সাধক মুর্তজা বশীর

দরজার পাশে নামফলকে (নেমপ্লেট) লেখা, ‘মুর্তজা বশীর’। নিচে লেখা আছে, ‘আছেন’। আছেন! চাবি দিয়ে দরজা খুলে মুর্তজাকন্যা মুনীরা বশীর ইশারা দিয়ে প্রবেশের আহ্বান জানালেন। ঘরের ভেতর সন্তর্পণে পা ফেললাম। যেদিকেই তাকাই স্যারের (মুর্তজা বশীর) মুখাবয়ব। অনুভব করলাম, স্যার অভ্যর্থনা জানালেন, কুশলবিনিময় করলেন এবং তিনি সঙ্গে আছেন। নানা প্রশ্নোত্তরে মত্ত হয়ে থাকলাম একটা ঘোরের মধ্যে। এক এক করে ঘরে ঢুকলেন স্যারের প্রিয়ভাজন আলোকচিত্রী মোহাম্মদ আসাদ, সাংবাদিক আশফাকুর রহমান ও নিজাম বিশ্বাস। তাঁরা স্যারের সংগ্রহের অ্যান্টিক ও শিল্পকর্ম প্রদর্শন উপযোগী বিন্যস্ত করতে ব্যস্ত।

এ সময় স্যারের শয়নকক্ষ, পাঠকক্ষে ঢুকে আমি যেন গুপ্তধন পাওয়ার মতো বিস্মিত হলাম। আবিষ্কার করলাম, গবেষণাধর্মী শিল্পিত-জীবনের নিমগ্ন সাধক মুর্তজা বশীরকে। না, তাঁর বিখ্যাত সিরিজচিত্রগুলোর কথা বলছি না; এসব সিরিজচিত্রের কেবল দু-একটি কাজ চোখে পড়ল। এটা মূলত স্যারের ব্যবহৃত ফ্ল্যাট-বাসা। পুরোটাই এখন জাদুঘরের মতো। অভ্যর্থনা কক্ষ বা ড্রয়িংরুমের বড় দুই দেয়ালজুড়ে ৯০টির অধিক আত্মপ্রতিকৃতি, অ্যান্টিক, মুদ্রা, ডাকটিকিট, বই, চাবির রিং, দেশলাইয়ের বাক্স, হস্তলিপি, বিভিন্ন রকম পাথর, টেরাকোটা প্রভৃতি সুবিন্যস্ত করে রাখা। উল্টেপাল্টে দেখছি, আর নেপথ্যের স্মৃতি, তথ্য, ইতিহাসগুলো শুনিয়ে যাচ্ছিলেন মুনীরা বশীর। বিচিত্র কর্মযজ্ঞের নিদর্শনই অধিকাংশ জিজ্ঞাসার উত্তর দিচ্ছে। এত সব দেখে ভুলে যাচ্ছিলাম তাঁর ‘দেয়াল’, ‘শহীদ-শিরোনাম’, ‘পাখা’, ‘রমণী’, ‘কলেমা তৈয়বা’ প্রভৃতি বিখ্যাত সিরিজচিত্রের ড্রয়িং ও রঙের স্বতন্ত্রে উজ্জ্বল চিত্রের কথা। বিস্ময় জাগাল দেয়ালে সাজানো আত্মপ্রতিকৃতিগুলো। ১৯৫৩ থেকে মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ের জীবনপঞ্জি যেন একনজরে পাঠ মিলল; অর্থাৎ দেয়াল যেন আস্ত এক গবেষণাধর্মী পুস্তক। যার এক একটি পৃষ্ঠায় রয়েছে এক একটি আত্মপ্রতিকৃতি। তরজমা করতে হলে আলাদা করে দৃষ্টিপাঠের দাবি রাখে। রীতিমতো বর্ণাঢ্য জীবনের বিস্ময়কর ডকুমেন্টেশন। তেলরং, জলরং, প্যাস্টেল, পেনসিল, মিশ্র মাধ্যমে ড্রয়িং, চিত্রকলা, প্রিন্ট—কী নেই এসব চিত্রে? শক্তিশালী ড্রয়িং, রেখার বৈচিত্র্য, রঙের সুমিত ব্যবহার, প্রতীক-সংকেতে ভিন্ন ভিন্ন রাগ-রাগিণী সৃষ্টি হয়েছে এসব চিত্রে। দৃষ্টির পথ ধরে মর্মে পৌঁছে ভাবনার জগতে ঝড় তুলে দেয়। শুধু কি শৈল্পিক দিক? এ হলো পঞ্চাশের দশক থেকে আত্মপ্রতিকৃতি বা আত্মজীবনীর বিজ্ঞানভিত্তিক তথ্যভান্ডার। বর্ণাঢ্য বিচিত্র জীবনের সবকিছুই তিনি যেন চিত্রকর্মে, সাহিত্যে, সংগ্রহে ডকুমেন্টেশন করে রেখেছেন। ফটোগ্রাফির বড় এক আর্কাইভ রয়েছে। যেখানে বিভিন্ন জাদুঘরের শিল্প-নিদর্শনগুলোর সযত্ন ফটোগ্রাফি যেমন রয়েছে, তেমনি রয়েছে পারিবারিক আবেগময় মুহূর্ত ও শৈল্পিক বিষয়াবলির অনুসন্ধানী ফটোগ্রাফি। একজন পিতা হিসেবে সন্তানদের প্রতি তিনি ছিলেন বিনিদ্র যত্নশীল। স্ত্রীর গর্ভে প্রথম সন্তানের (মুনীরা বশীর) অস্তিত্ব পাওয়ার পর থেকে ভূমিষ্ঠ হওয়া পর্যন্ত প্রতিদিন পরম স্নেহ-ভালোবাসায় স্ত্রীর গর্ভাবস্থার প্রতিদিনের একটি করে ছবি তুলে রেখেছেন। এ নিশ্চয়ই পারিবারিক ভালোবাসামিশ্রিত বিজ্ঞানভিত্তিক ফটোগ্রাফির অনন্য দৃষ্টান্ত। শ্রম, সাধনা, নিষ্ঠা, রুচি ও ভালোবাসার আশ্চর্য পরিচয় মেলে তাঁর এ কাজে।

শিল্পীরা সাধারণত অগোছালো হয়ে থাকেন। ঠিক বিপরীত জীবনদর্শন দেখিয়েছেন শিল্পী মুর্তজা বশীর। তাঁর শখের সংগ্রহ আনন্দ ও আবেগকে উসকে দিত বলেই নির্ভার মনে আবার এক কাজ থেকে অন্য কাজ করার শক্তি পেতেন। ছবি আঁকায় অবকাশ পেতেন। সংগ্রহের তালিকায় অসংখ্য বই রয়েছে। বইয়ের পৃষ্ঠায় সমান্তরাল রেখা টানা দেখে বোঝা যায়, জানার জগতে কী নিমগ্ন ছিলেন। সত্যিকার অর্থে তিনি একজন নিমগ্ন সাধক। ছবি আঁকা, শিক্ষকতা, গবেষণা, লেখালেখি, সংগ্রহ—সংসারজীবনের প্রাত্যহিক দায়িত্ব পালনে বাধা হয়নি। দেশ-বিদেশের চমৎকার রান্না করা তাঁর শৈল্পিক গুণ হিসেবেই বিবেচ্য।

‘দেয়াল’ সিরিজের মধ্য দিয়ে তিনি বিমূর্ত বাস্তববাদ ধারণার সূচনা করেছেন। এই বিমূর্ত বাস্তববাদ ‘শহীদ শিরোনাম’, ‘পাখা’সহ আরও কয়েকটি সিরিজচিত্রে দেখিয়েছেন। ‘পাখা’ সিরিজচিত্রে প্রজাপতির রং-বেরঙের পাখাকে স্টাডি করে জীবনের সম্ভাবনা, চাঞ্চল্য, স্বপ্ন, অনুভূতিকে ইঙ্গিতে বুঝিয়েছেন। সব কাজের মধ্যেই তথ্য বা রেফারেন্স যুক্ত করা তাঁর সৃষ্টি শৈলীর অনন্য ভঙ্গি। ‘জ্যোতি’ সিরিজচিত্রে রয়েছে এমন তথ্যযুক্ত প্রতীকী ব্যঞ্জনা। আশির দশকে শবাগারে গিয়ে ড্রয়িং করেছেন, আবার একই হাতে ফুল ও রমণীর লাবণ্য ফুটেছে। ‘আমার জীবন ও অন্যান্য গ্রন্থে’ (২০১৪) তিনি লিখেছেন, ‘আজ পর্যন্ত আমি কোনো ফরমায়েশি ছবি আঁকিনি। আপন পর্যবেক্ষণকৃত মানুষ, জীবন, জীবনের দুঃখ-বঞ্চনা, টানাপোড়েন স্বপ্ন নিয়ে ভেতরের তাগিদ থেকে আমি ছবি আঁকছি।’ ড্রয়িং তাঁর শক্তিশালী প্রকাশ। নিজের স্ত্রী ও সন্তানদের বাস্তবানুগ প্রতিকৃতি একাধিক ড্রয়িংয়ে ধরা পড়েছে। তবে ছবির নির্মাণ-প্রক্রিয়ায় তিনি খুব সচেতন এবং উচ্চাভিলাষী ছিলেন। একটা ছবি নির্মাণের আগে একাধিক ড্রয়িং করে নিতেন। যেটা পছন্দ হতো, কাঙ্ক্ষিত অবস্থায় (পারফেকশন) পৌঁছাত, সেটিতেই কেবলমাত্র স্বাক্ষর করতেন। দেয়ালে ঝোলানো একটি ড্রয়িং দেখে বোঝা গেল তিনি ছবি আঁকার ক্ষেত্রে কালার চার্ট করে নিতেন। কোথায় কী রং বসবে, তার সুপরিকল্পিত ছক থাকত। কাচের জারের মধ্যে রাখা তাঁর ব্যক্তিগত কিছু ব্যবহৃত জিনিসপত্রের মধ্যে একটি ঘড়ি খুব সহজেই নজর কাড়ল। ঘড়িতে তিনি কালার চার্ট দিয়ে নকশা করে রেখেছেন। ঘরের নেমপ্লেটেও রয়েছে তাঁর শৈল্পিক ছোঁয়া। ব্যবহারিক জীবনে কী পরিমাণ সৌন্দর্যবোধের পিপাসা থাকলে তিনি এসব করতে পারেন—এই দুটো কাজে তার প্রমাণ মেলে।

তাঁকে মুদ্রা ও ডাকটিকিটের সংগ্রাহক হিসেবে আমার জানা থাকলেও ব্যক্তিগত অ্যান্টিক সংগ্রহের বিষয়টি জানা ছিল না। ব্রহ্মাণ্ডের অফুরন্ত সামগ্রীর মধ্য থেকে শৈল্পিক, শিক্ষণীয় ও প্রয়োজনের বস্তুটি সংগ্রহ করার দৃষ্টি না থাকলে সংগ্রহও জঞ্জাল হতে পারে। কিন্তু না, মুর্তজা বশীরের প্রতিটি সংগ্রহে তাঁর গবেষণা ও দৃষ্টি শক্তির গভীরতাকে সাধুবাদ জানানো যায়। দেয়ালে ঝোলানো একটি টালি (টেরাকোটা) ময়ূরখচিত। লোকশিল্পীদের তৈরি ঘরে ব্যবহারের জন্য টালির এই শৈল্পিক সৌন্দর্যটি তিনি খুঁজে নিয়েছেন, যা কালান্তরে গবেষণার উপাত্ত হয়ে রইল। এ ছাড়া রয়েছে অনেক নামীদামি ভাস্কর্য ও মূর্তি। মুনীরা বললেন, সংসারের অর্থাভাব থাকলেও অ্যান্টিক সংগ্রহের তিনি কার্পণ্য করেননি। কখনো কখনো দামি দ্রব্যাদি কিনে দিনের পর দিন লুকিয়ে রেখেছেন। ছোট্ট একটি বেসমেন্টের ওপর রাখা হয়েছে অনেকগুলো চাবির রিং, দেশ-বিদেশে ভ্রমণের সময় চাবির রিং সংগ্রহ করা তাঁর আরেক শখ ছিল। প্রায় ৫০০-এর মতো এসব রিং দেশ-বিদেশের সামাজিক-সাংস্কৃতিক-অর্থনৈতিক পরিচয়ের আধার হয়ে আছে। অবাক হতে হয়, কতটা গোছাল থাকলে প্রতিটি সিরিজচিত্র যে রঙের প্লেট ব্যবহারে করেছেন তা পেইন্টিংয়ে রূপদান করেছেন। দেয়ালে ঝোলানো এই পেইন্টিং দেখে বোঝা যায় তিনি কোন সিরিজের কাজ কোন রং ব্যবহার করে করেছিলেন। সর্বোপরি বলা যায়, তিনি যা কিছু করেছেন, সবকিছুই যেন ডকুমেন্টেশন করে রেখেছেন। শখ, রুচি ও সংগ্রহে তাঁর একাগ্রতা ও নিষ্ঠা শিল্পী ও সাধারণ মানুষের আদর্শ এবং কর্মময় জীবন পাঠ্য হয়ে থাকবে। ৯০তম জন্মবার্ষিকীতে স্যারের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মসজিদে আমির হামজাকে রাজনৈতিক আলোচনা করতে নিষেধ করায় লাঞ্ছিত বিএনপি নেতা

বিয়ারিং প্যাড খুলে পড়ে পথচারীর মৃত্যু, মেট্রোরেল চলাচল বন্ধ

বিমানবন্দর রেলস্টেশনে ট্রেন থেকে আগ্নেয়াস্ত্রভর্তি ট্রলি ব্যাগ উদ্ধার

মেট্রোরেলের বিয়ারিং প্যাড পড়ে নিহত কালাম ভাইয়ের সংসারও সামলাতেন, পরিবারে হাহাকার

ঘুষ হিসেবে পাকা কলা নেওয়ার কথা স্বীকার, দুদকের গণশুনানিতে তাৎক্ষণিক বদলির আদেশ

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

গবেষণায় বেরিয়ে এল আরবি সাহিত্যের ‘হারানো শতাব্দী’র গল্প

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল। কিন্তু ভাষাবিদ ও সাহিত্য ইতিহাসবিদদের মতে, এই ধারণা আসলে পশ্চিমা দৃষ্টিকোণ থেকে তৈরি এক ‘ঔপনিবেশিক কল্পনা’ মাত্র। বাস্তবে আরবি সাহিত্য কখনোই থেমে যায়নি।

প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী, অষ্টম শতাব্দীতে আব্বাসীয় খলিফাদের অধীনে বিজ্ঞান, দর্শন ও কবিতার কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল বাগদাদ। আবু নুয়াস, আল-মুতানাব্বি, আল-ফারাবি ও ইবনে সিনার মতো কবি ও দার্শনিকদের হাত ধরে শুরু হয়েছিল এক স্বর্ণযুগ। ঊনবিংশ শতাব্দীর ইউরোপীয় গবেষকেরা—যেমন ফরাসি চিন্তাবিদ আর্নেস্ট রেনাঁ ও ডাচ ইতিহাসবিদ রেইনহার্ট দোজি সেই আমলটিকেই আরবি বুদ্ধিবৃত্তিক জীবনের শিখর বলে স্বীকার করেছিলেন এবং দাবি করেছিলেন, একাদশ শতাব্দীর পর এই ধারাবাহিকতার পতন ঘটে। তাঁদের মতে, এরপর প্রায় ৮০০ বছর আরবে আর কোনো গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্যিক বা দার্শনিক কাজ হয়নি—যতক্ষণ না ইউরোপে রেনেসাঁ শুরু হয়।

কিন্তু আধুনিক গবেষকেরা বলছেন, এই ধারণা সরলীকৃত ও পক্ষপাতদুষ্ট। ফ্রাঙ্কফুর্ট আন্তর্জাতিক বইমেলায় শেখ জায়েদ বুক অ্যাওয়ার্ডের আয়োজিত এক আলোচনায় ভাষাবিদেরা দাবি করেছেন, আরবি রচনা শৈলী কখনো বিলুপ্ত হয়নি; বরং তা ধারাবাহিকভাবে কপি, অনুবাদ ও পাঠের মাধ্যমে বেঁচে ছিল।

জার্মান গবেষক বেয়াট্রিস গ্রুন্ডলার তাঁর ‘দ্য রাইজ অব দ্য অ্যারাবিক বুক’ গ্রন্থে দাবি করেছেন, আরবি সাহিত্যে ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে যে ধারণাটি প্রচলিত আছে তা আসলে গাল-গল্প। এই বইটি এবারের শেখ জায়েদ পুরস্কারের শর্টলিস্টে রয়েছে। গ্রুন্ডলার এতে দেখিয়েছেন, নবম শতাব্দীর বাগদাদে বইয়ের ব্যবসা, কপিকারদের প্রতিযোগিতা, জনসম্মুখে পাঠ ও লেখার প্রচলন—সবই ছিল আধুনিক প্রকাশনা সংস্কৃতির পূর্বসূরি। তিনি মত দিয়েছেন, ‘বাগদাদের রাস্তায় হাঁটলে আপনি দেখতেন লোকেরা হস্তলিপি বিক্রি করছে, বিরামচিহ্ন নিয়ে তর্ক করছে—এ যেন এক জীবন্ত প্রকাশনা বাজার।’

গবেষণা বলছে, আরবি সাহিত্য আসলে কখনো এক জায়গায় স্থির থাকেনি। এর কেন্দ্র এক সময় বাগদাদ থেকে কায়রো, দামেস্ক ও আন্দালুসিয়ায় স্থানান্তরিত হয়। কিন্তু ধারাটি অব্যাহতই থাকে। নতুন ঘরানা তৈরি হয়, পুরোনো ঘরানা রূপান্তরিত হয়।

ফরাসি অধ্যাপক হাকান ওজকান তাঁর গবেষণায় দেখিয়েছেন, ‘জাজাল’ নামের কথ্য ছন্দভিত্তিক কবিতার ধারা আব্বাসীয় যুগের পরও বিকশিত হতে থাকে। তাঁর মতে, ‘এই কবিরা নিয়ম ভেঙে নতুন রূপ দিয়েছে—তাঁদের ছন্দ ও ব্যঙ্গ আধুনিক র্যাপের মতো প্রাণবন্ত।’

জার্মান গবেষক বেয়াট্রিস গ্রুন্ডলারের ‘দ্য রাইজ অব দ্য অ্যারাবিক বুক’ বইটি এবারের শেখ জায়েদ পুরস্কারের শর্টলিস্টে রয়েছে। ছবি: দ্য ন্যাশনাল
জার্মান গবেষক বেয়াট্রিস গ্রুন্ডলারের ‘দ্য রাইজ অব দ্য অ্যারাবিক বুক’ বইটি এবারের শেখ জায়েদ পুরস্কারের শর্টলিস্টে রয়েছে। ছবি: দ্য ন্যাশনাল

এদিকে এই বিষয়ে এক প্রতিবেদনে সোমবার (২০ অক্টোবর) আমিরাতভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য ন্যাশনাল জানিয়েছে, আবুধাবির নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির ‘আরবি সাহিত্য লাইব্রেরি’ প্রকল্প ইতিমধ্যেই ‘হারানো শতাব্দী’ বলে বিবেচিত সময়ের ৬০ টিরও বেশি আরবি সাহিত্যকর্ম পুনরুদ্ধার করেছে। প্রকল্পটির সম্পাদক অধ্যাপক মরিস পোমেরান্টজ বলেছেন, ‘এই বইগুলো সম্পাদনা করা মানে এক চলমান সংলাপে অংশ নেওয়া—যেখানে প্রজন্মের পর প্রজন্ম লেখক, অনুবাদক ও সমালোচকেরা একে অপরকে উত্তর দিয়ে গেছেন।’

মরিস মনে করেন, আরবি সাহিত্য স্থবির হয়ে যাওয়ার ধারণাটি মূলত অনুবাদের অভাব থেকেই জন্ম নিয়েছে। তিনি বলেন, ‘যখন কোনো লেখা অনুবাদ করা হয় না, তখন সেটি বৈশ্বিক অস্তিত্ব হারায়।’

মরিসের মতে, এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো এই সাহিত্যকে আবার জনসাধারণের কল্পনায় ফিরিয়ে আনা—স্কুলে পড়ানো, মঞ্চে উপস্থাপন করা, অনুবাদের মাধ্যমে বিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়া। তা না হলে আরবি সাহিত্যের ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে চিহ্নিত সময়টি অধরাই থেকে যাবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মসজিদে আমির হামজাকে রাজনৈতিক আলোচনা করতে নিষেধ করায় লাঞ্ছিত বিএনপি নেতা

বিয়ারিং প্যাড খুলে পড়ে পথচারীর মৃত্যু, মেট্রোরেল চলাচল বন্ধ

বিমানবন্দর রেলস্টেশনে ট্রেন থেকে আগ্নেয়াস্ত্রভর্তি ট্রলি ব্যাগ উদ্ধার

মেট্রোরেলের বিয়ারিং প্যাড পড়ে নিহত কালাম ভাইয়ের সংসারও সামলাতেন, পরিবারে হাহাকার

ঘুষ হিসেবে পাকা কলা নেওয়ার কথা স্বীকার, দুদকের গণশুনানিতে তাৎক্ষণিক বদলির আদেশ

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

তিন গোয়েন্দার স্রষ্টা রকিব হাসান মারা গেছেন

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
জনপ্রিয় কিশোর গোয়েন্দা সিরিজ তিন গোয়েন্দার স্রষ্টা রকিব হাসান। ছবি: সংগৃহীত
জনপ্রিয় কিশোর গোয়েন্দা সিরিজ তিন গোয়েন্দার স্রষ্টা রকিব হাসান। ছবি: সংগৃহীত

জনপ্রিয় কিশোর গোয়েন্দা সিরিজ তিন গোয়েন্দার স্রষ্টা রকিব হাসান মারা গেছেন। আজ বুধবার রাজধানীর একটি হাসপাতালে ডায়ালাইসিস চলাকালে তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।

রকিব হাসানের মৃত্যুর খবরটি নিশ্চিত করেছেন সেবা প্রকাশনীর উপদেষ্টা মাসুমা মায়মুর। তিনি সেবা প্রকাশনীর প্রতিষ্ঠাতা কাজী আনোয়ার হোসেনের ছোট ছেলে কাজী মায়মুর হোসেনের স্ত্রী।

মাসুমা মায়মুর ফেসবুকে লিখেছেন, ‘তিন গোয়েন্দা ও সেবা প্রকাশনীর পাঠকদেরকে আন্তরিক দুঃখের সাথে জানাচ্ছি যে, কিছুক্ষণ আগে রকিব হাসান সাহেব পরলোক গমন করেছেন। ডায়ালাইসিস চলাকালে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে ওনার জীবনাবসান ঘটে। আপনারা ওনার পবিত্র আত্মার মাগফেরাত কামনা করুন।’

১৯৫০ সালের ১২ ডিসেম্বর কুমিল্লায় জন্মগ্রহণ করেন রকিব হাসান। বাবার চাকরির কারণে শৈশব কেটেছে ফেনীতে। সেখান থেকে স্কুলজীবন শেষ করে ভর্তি হন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজে। পড়াশোনা শেষে বিভিন্ন চাকরিতে যুক্ত হলেও অফিসের বাঁধাধরা জীবনে তাঁর মন টেকেনি। অবশেষে তিনি লেখালেখিকে বেছে নেন জীবনের একমাত্র পথ হিসেবে।

জনপ্রিয় কিশোর গোয়েন্দা সিরিজ। ছবি: সংগৃহীত
জনপ্রিয় কিশোর গোয়েন্দা সিরিজ। ছবি: সংগৃহীত

সেবা প্রকাশনী থেকে তাঁর লেখকজীবনের সূচনা হয়। প্রথমদিকে বিশ্বসেরা ক্ল্যাসিক বই অনুবাদ করে লেখালেখির জগতে প্রবেশ করেন তিনি। এরপর টারজান, গোয়েন্দা রাজু, রেজা-সুজা সিরিজসহ চার শতাধিক জনপ্রিয় বই লেখেন। তবে তাঁর পরিচয়ের সবচেয়ে বড় জায়গা হলো তিন গোয়েন্দা সিরিজ। এই সিরিজ বাংলাদেশের অসংখ্য কিশোর-কিশোরীর কৈশোরের সঙ্গী।

মূলত রবার্ট আর্থারের থ্রি ইনভেস্টিগেটরস সিরিজ অবলম্বনে তিন গোয়েন্দার সূচনা হয়। তবে রকিব হাসানের লেখনশৈলীতে এটি পেয়েছে একেবারে নতুন রূপ। বাংলাদেশি সাহিত্য হয়ে উঠেছে এটি। এই সিরিজের মাধ্যমে তিনি হয়ে ওঠেন হাজারো কিশোর পাঠকের প্রিয় লেখক।

নিজ নামে লেখার পাশাপাশি তিনি ব্যবহার করেছেন বিভিন্ন ছদ্মনাম। শামসুদ্দীন নওয়াব নামে তিনি অনুবাদ করেছিলেন জুল ভার্নের বইগুলো।

বাংলাদেশের পাঠকদের কাছে রকিব হাসান শুধু একজন গোয়েন্দা লেখক নন, তিনি কয়েক প্রজন্মের শৈশব-কৈশোরের ভালোবাসার মানুষ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মসজিদে আমির হামজাকে রাজনৈতিক আলোচনা করতে নিষেধ করায় লাঞ্ছিত বিএনপি নেতা

বিয়ারিং প্যাড খুলে পড়ে পথচারীর মৃত্যু, মেট্রোরেল চলাচল বন্ধ

বিমানবন্দর রেলস্টেশনে ট্রেন থেকে আগ্নেয়াস্ত্রভর্তি ট্রলি ব্যাগ উদ্ধার

মেট্রোরেলের বিয়ারিং প্যাড পড়ে নিহত কালাম ভাইয়ের সংসারও সামলাতেন, পরিবারে হাহাকার

ঘুষ হিসেবে পাকা কলা নেওয়ার কথা স্বীকার, দুদকের গণশুনানিতে তাৎক্ষণিক বদলির আদেশ

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ক্রাসনাহোরকাইয়ের নোবেল যেন তাঁর দীর্ঘ কোনো বাক্যের সমাপ্তি

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
লাসলো ক্রাসনাহোরকাই। ছবি: সংগৃহীত
লাসলো ক্রাসনাহোরকাই। ছবি: সংগৃহীত

হাঙ্গেরির ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই এবার (২০২৫ সালে) সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন তাঁর দীর্ঘ, দার্শনিক বাক্য ও মানবজীবনের বিশৃঙ্খলার গভীর অনুসন্ধানী সাহিত্যকর্মের জন্য। সুইডিশ একাডেমি তাঁকে সম্মান জানিয়েছে ‘শিল্পের শক্তিকে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করার’ জন্য। লেখক সুসান সনটাগ অবশ্য তাঁকে একসময় ‘মহাপ্রলয়ের হাঙ্গেরিয়ান গুরু’ আখ্যা দিয়েছিলেন।

সাহিত্যজগতে অনেকের কাছে ক্রাসনাহোরকাইয়ের নোবেল পাওয়ার এই ঘোষণাটি যেন কয়েক দশক ধরে চলা একটি বাক্যের সমাপ্তি।

১৯৫৪ সালে হাঙ্গেরির ছোট শহর জিউলা-তে জন্ম নেওয়া ক্রাসনাহোরকাই ১৯৮০-এর দশকের শুরুতে গল্প লেখা শুরু করেন। তাঁর প্রথম উপন্যাস স্যাটানট্যাঙ্গো (১৯৮৫) একটি বৃষ্টিস্নাত, ধ্বংসপ্রায় গ্রামের কাহিনি—যেখানে প্রতারক, মাতাল ও হতাশ মানুষেরা মিথ্যা আশায় আঁকড়ে থাকে। পরিচালক বেলা-তার তাঁর এই উপন্যাসটিকে দীর্ঘ ৭ ঘণ্টার এক সাদাকালো চলচ্চিত্রে রূপ দেন। এই বইতেই ধরা পড়ে ক্রাসনাহোরকাইয়ের লেখার বৈশিষ্ট্যসমূহ, যেমন—অবিরাম দীর্ঘ বাক্য, দার্শনিক হাস্যরস ও পতনের কিনারায় দাঁড়িয়ে থাকা মানুষের প্রতিচ্ছবি।

তাঁর পরবর্তী উপন্যাসগুলো—দ্য মেলানকোলি অব রেজিস্ট্যান্স (১৯৮৯), ওয়ার অ্যান্ড ওয়ার (১৯৯৯) ও সেইবো দেয়ার বিলো (২০০৮)—তাঁর এই দৃষ্টিভঙ্গিকে মহাজাগতিক পরিসরে বিস্তৃত করেছে। ‘ওয়ার অ্যান্ড ওয়ার’–এ তিনি এক নথি প্রহরীর গল্প বলেছেন, যিনি রহস্যময় এক পাণ্ডুলিপি প্রকাশ করতে নিউইয়র্কে পালিয়ে যান এবং আত্মহত্যা করেন—যেন ক্রম বিলীন পৃথিবীতে অর্থ ধরে রাখার এক মরিয়া চেষ্টা তাঁর।

ক্রাসনাহোরকাইয়ের লেখায় কাহিনি প্রায় সময়ই বাক্যের ভেতর হারিয়ে যায়। তিনি লিখেছেন এমন বাক্য, যা একাধিক পৃষ্ঠা জুড়ে পাঠককে টেনে নেয় অবচেতনে, অবিরাম প্রবাহে।

তাঁর সাহিত্যে হাস্যরস ও ট্র্যাজেডি পাশাপাশি চলে। স্যাটানট্যাঙ্গো–এর মাতাল নাচের দৃশ্য যেমন নিঃশেষের প্রতীক, তেমনি ‘ব্যারন ওয়েঙ্কহাইমস হোমকামিং’ (২০১৬)-এ দেখা যায়, ফিরে আসা এক পরাজিত অভিজাতকে। যার মাধ্যমে প্রকাশ পায় সভ্যতার পচন ও মানুষের হাস্যকর ভ্রান্তি।

২০১৫ সালে ম্যান বুকার পুরস্কার পাওয়ার মধ্য দিয়েই প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পান ক্রাসনাহোরকাই। অনুবাদক জর্জ সির্টেস ও ওটিলি মুলজেট তাঁর জটিল হাঙ্গেরিয়ান ভাষাকে ইংরেজিতে রূপ দিতে বিশেষ ভূমিকা রাখেন। ‘হাডসন রিভিউ’ তাঁকে বর্ণনা করেছিল ‘অন্তহীন বাক্যের ভ্রমণশিল্পী’ হিসেবে।

চল্লিশ বছরের সৃষ্টিতে ক্রাসনাহোরকাইয়ের ভুবন চিত্র, সংগীত, দর্শন ও ভাষার মিলনে বিস্তৃত। সাম্প্রতিক উপন্যাস ‘হার্শট ০৭৭৬৯’ (২০২৪)–এ তিনি এক প্রবাহিত বাক্যে লিখেছেন নব্য-নাৎসি, নেকড়ে আর এক হতভাগ্য পদার্থবিদের কাহিনি—আধুনিক ইউরোপের নৈতিক পক্ষাঘাতের রূপক হিসেবে।

তাঁর সমগ্র সাহিত্যজগৎ এক অন্ধকার ও ধ্যানমগ্ন মহাবিশ্ব—যেখানে পতন, শূন্যতা ও করুণা পাশাপাশি থাকে। ‘সেইবো দেয়ার বিলো’ বইটিতে তিনি লিখেছেন, ‘সৌন্দর্য, যত ক্ষণস্থায়ীই হোক না কেন, তা পবিত্রতার প্রতিবিম্ব।’ এই বিশ্বাসই লাসলো ক্রাসনাহোরকাইকে সেই বিরল লেখক করে তুলেছে, যাঁর নৈরাশ্যও মুক্তির মতো দীপ্ত।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মসজিদে আমির হামজাকে রাজনৈতিক আলোচনা করতে নিষেধ করায় লাঞ্ছিত বিএনপি নেতা

বিয়ারিং প্যাড খুলে পড়ে পথচারীর মৃত্যু, মেট্রোরেল চলাচল বন্ধ

বিমানবন্দর রেলস্টেশনে ট্রেন থেকে আগ্নেয়াস্ত্রভর্তি ট্রলি ব্যাগ উদ্ধার

মেট্রোরেলের বিয়ারিং প্যাড পড়ে নিহত কালাম ভাইয়ের সংসারও সামলাতেন, পরিবারে হাহাকার

ঘুষ হিসেবে পাকা কলা নেওয়ার কথা স্বীকার, দুদকের গণশুনানিতে তাৎক্ষণিক বদলির আদেশ

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সন্ত্রাসের দাপটেও শিল্পের শক্তি চেনায় লাসলো ক্রাসনাহোরকাইয়ের কলম

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১০ অক্টোবর ২০২৫, ০০: ১০
সন্ত্রাসের দাপটেও শিল্পের শক্তি চেনায় লাসলো ক্রাসনাহোরকাইয়ের কলম

হাঙ্গেরির সাহিত্যে অসীম জনপ্রিয়তা ও প্রভাব তাঁর; বিশ্বজোড়া আতঙ্ক ও সন্ত্রাসের দাপটেও শিল্পের শক্তি চেনায় তাঁর কলম। তিনি হাঙ্গেরিয়ান ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই; সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০২৫ সালে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।

আধুনিক হাঙ্গেরীয় সাহিত্যের একজন অন্যতম প্রধান ব্যক্তিত্ব লাসলো। অভিনব শৈলীর পাশাপাশি দার্শনিক গভীরতার জন্য তাঁর সাহিত্য সমাদৃত হয়েছে। তাঁকে ফ্রানৎস কাফকা ও স্যামুয়েল বেকেটের ঐতিহ্যের উত্তরাধিকারী হিসেবে বিবেচনা করা হয়। বিশ্বজোড়া আতঙ্ক ও সন্ত্রাসের মধ্যেও শিল্পের লেলিহান ঔজ্জ্বল্য ফুটে ওঠে লাসলোর লেখায়। তাই যুদ্ধবিধ্বস্ত সময়ের বুকে ফুলের মতো স্থান করে নিল তাঁর সাহিত্য।

লাসলোর জন্য সাহিত্যে এটা প্রথম পুরস্কার নয়, ২০১৪ সালে সাহিত্যকর্মের জন্য ম্যান বুকার ইন্টারন্যাশনাল পুরস্কার পান তিনি। এ পুরস্কার বিশ্বসাহিত্যে তাঁর অবস্থানকে সুদৃঢ় করে।

লাসলোর সাহিত্যের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো—স্বতন্ত্র শৈলী ও গঠন। উপন্যাসের মূল বিষয়বস্তু হলো—মানবতার অবক্ষয়, ধ্বংসের অনিবার্যতা ও আধুনিক জীবনের লক্ষ্যহীন চলন। তাঁর চরিত্রদের মধ্যে প্রায়ই একধরনের হতাশা ও বিচ্ছিন্নতা দেখা যায়; তারা এমন এক জগতের পথিক, যেখানে নৈতিকতা ও আশা বিলীনপ্রায়।

১৯৮৫ সালে প্রকাশিত ‘স্যাটানটাঙ্গো’ নামে প্রথম উপন্যাস লিখেই খ্যাতি পান লাসলো। এই উপন্যাসে বিচ্ছিন্ন ও পতিত এক কৃষি সমবায় গ্রামের জীবন তুলে ধরেছেন তিনি। সেখানে একধরনের বিভ্রম ও আশার জন্ম দেয় এক রহস্যময় আগন্তুকের আগমনে। এই উপন্যাস অবলম্বনে একই শিরোনামে সাত ঘণ্টার কালজয়ী চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন বিখ্যাত পরিচালক বেলা টর।

লাসলোর আরেকটি ফিকশন উপন্যাস হলো— ‘দ্য মেলানকোলি অব রেজিস্ট্যান্স’। হাঙ্গেরির এক কাল্পনিক শহরের জীবন ফুটে উঠেছে এই উপন্যাসে। সামুদ্রিক প্রাণী হাঙরের প্রদর্শনীকে কেন্দ্র করে মানুষের মধ্যকার উন্মাদনা, সামাজিক বিশৃঙ্খলা ও একনায়কতন্ত্রের উত্থানের চিত্র আঁকা হয়েছে তাতে।

‘ওয়ার অ্যান্ড ওয়ার’ লাসলোর আরেকটি বিখ্যাত উপন্যাস। লম্বা লম্বা বাক্যে লেখা এই উপন্যাস লাসলোর শৈলী নিয়ে পাঠকদের নতুন করে ভাবায়। উপন্যাসের নায়ক একটি পাণ্ডুলিপি রক্ষা করার জন্য বিশ্বের বিভিন্ন শহর ঘুরে বেড়ায়। বিশ্বের চূড়ান্ত ধ্বংসের একটি কাব্যিক বর্ণনা পাওয়া যায় এই উপন্যাসে।

এবার লাসলোকে পুরস্কারের জন্য মনোনীত করার নেপথ্যে নোবেল কমিটির বড় কারণ ছিল তাঁর সাহিত্যে শিল্পের জয়ধ্বনি তোলার প্রচেষ্টা। যখন সারা বিশ্বের বেশ কিছু দেশ যুদ্ধবিধ্বস্ত বা যুদ্ধের জন্য উৎসুক, তখন বারবার শিল্পের মোহিনী প্রেম ও বন্ধনের কথা মনে করিয়ে দিতে চায় লাসলোর সাহিত্য।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মসজিদে আমির হামজাকে রাজনৈতিক আলোচনা করতে নিষেধ করায় লাঞ্ছিত বিএনপি নেতা

বিয়ারিং প্যাড খুলে পড়ে পথচারীর মৃত্যু, মেট্রোরেল চলাচল বন্ধ

বিমানবন্দর রেলস্টেশনে ট্রেন থেকে আগ্নেয়াস্ত্রভর্তি ট্রলি ব্যাগ উদ্ধার

মেট্রোরেলের বিয়ারিং প্যাড পড়ে নিহত কালাম ভাইয়ের সংসারও সামলাতেন, পরিবারে হাহাকার

ঘুষ হিসেবে পাকা কলা নেওয়ার কথা স্বীকার, দুদকের গণশুনানিতে তাৎক্ষণিক বদলির আদেশ

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত