ফয়জুল লতিফ চৌধুরী

ফরাসি কথাসাহিত্যিক আনি এরনো ১৯৯১ সালে প্রকাশ করেছিলেন তাঁর উপন্যাস ‘সহজ কামনা’ (প্যাশন সিম্পল)। ইংরেজিতে অনূদিত হয়ে এটি প্রকাশিত হয় ১৯৯৩ সালে।
নিউইয়র্ক টাইমস পত্রিকায় বইটির আলোচনা প্রসঙ্গে লেখা হয়েছিল: কেবল ফ্রান্সেই এ রকম একটি ক্ষুদ্রাবয়ব আত্মজৈবনিক উপন্যাস পাঠকের কাছে সমাদৃত
হতে পারে।
উপন্যাসটি ফরাসি পাঠকদের কাছে দ্রুত জনপ্রিয়তা লাভ করলেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কি ইংরেজিভাষী বিশ্বে, তেমন কোনো কদর লাভ করেনি। আলোচনায় আরও উল্লেখ করা হয়েছিল: তাঁর অপরাপর দুটি উপন্যাস যথা ১৯৮৩ সালে প্রকাশিত ‘একজন পুরুষের জগৎ’ এবং ১৯৮৮ সালে প্রকাশিত ‘এক নারীর কাহিনি’ ফ্রান্সে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেলেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে তেমন কোনো সাড়া জাগায়নি।
তবে ক্রমশ পরিস্থিতি অনুকূল হয়েছে। তাঁর ‘দ্য ইয়ারস’ ইন্টারন্যাশনাল ম্যান বুকার পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়। ভাগ্যক্রমে এতটাই প্রসন্ন হয়ে ওঠে যে সুইডিশ একাডেমি আনি এরনোকে ২০২২ সালের জন্য সাহিত্যের নোবেল পুরস্কার দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। ফ্রান্স, অন্যান্য ফরাসি ভাষী দেশে এবং ইউরোপে পরিচিত নাম হলেও পৃথিবীর অন্যান্য এলাকায় আনি এরনো এখন পর্যন্ত পরিচিত হয়ে ওঠেননি। আশা করা যায় পৃথিবীর বিভিন্ন ভাষায় এখন তাঁর গ্রন্থাবলির অনুবাদ হবে এবং সারা পৃথিবীতে দ্রুত পরিচিতি লাভ করবেন।
নোবেল বিজয়ী আনি এরনোর জন্ম ১৯৪০ সালে। কৈশোরে তিনি নিয়মিত দিনলিপি লিখতে শুরু করেছিলেন। ১৯৭২ সালে একদিন তিনি উপন্যাস লিখতে বসে যান। উপন্যাস লিখবেন শুনে তাঁর স্বামী ব্যঙ্গের হাসি হেসেছিলেন। তাই স্বামীকে সম্পূর্ণ লুকিয়ে লুকিয়ে প্রথম উপন্যাসটি লিখেছিলেন আনি এরনো। যখন একটি নামকরা প্রকাশক উপন্যাসটি প্রকাশে সম্মত হলেন, তখন তাঁর স্বামী বিস্ময়ে হতবাক হয়ে গিয়েছিলেন। নিজের পক্ষে কিছু লেখা সম্ভব নয় বলে ক্রুদ্ধও হয়েছিলেন।
১৯৭৪ সালে তাঁর প্রথম উপন্যাসটি প্রকাশিত হয় ‘ক্লিনড্আউট’ নামে। তাঁর জীবনের অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভধারণ এবং অনিবার্য গর্ভপাতের কাহিনি, অপমান ও লোকলজ্জার ঘটনাকে অবলম্বন করেছেন তিনি উপন্যাসে। পরবর্তী ৪৮ বছরে একে একে তিনি ২৪টি গ্রন্থ করেছেন। কিছুদিন আগে প্রকাশ করেছেন নতুন উপন্যাস ‘একজন যুবকের কাহিনি’। আজ তাঁর অন্যতম পরিচয় এই যে তিনি একজন আত্মজৈবনিক ঔপন্যাসিক। প্রতিটি উপন্যাসের উপজীব্য স্বীয় জীবনের কড়কড়ে অভিজ্ঞতা এবং পর্যবেক্ষণ।
তিনি নিজের জীবনের গোপন এবং প্রকাশ্য খুঁটিনাটি নানা বিষয়কে একেকটি উপন্যাসের জন্য উপজীব্য করেছেন নিঃসংকোচ সাহসিকতায়।
ষাটের দশকে, যখন আনা এরনোর বয়স কুড়ি থেকে পঁচিশ, তখন ভার্জিনিয়া উলফ পড়ে পড়ে তাঁর মধ্যে লেখালেখির তীব্র ইচ্ছা জেগে উঠেছিল। কাছাকাছি সময়ে আঁদ্রে ব্রেটনের ‘ফার্স্ট মেনিফেস্টো অব সুররিয়ালিজম’ পড়ে জীবন এবং লেখালেখির ও জীবনযাপনের একটি পথরেখার সন্ধান পেয়েছিলেন। জারমেইন গ্রিয়ারের ‘দ্য ফিমেইল ইউনাক’ বইটি তাঁর দার্শনিক চিন্তায় নারীর সামাজিক অবস্থানকে প্রবিষ্ট করে দিয়েছিল। ১৯৬৫ সালে প্রকাশিত জর্জ পেরেকের ‘ষাটের গল্প: বিষয়-আশয়’। জর্জ পেরেকের রচনাকৌশল তাঁকে ভাবিয়েছিল। এই সবকিছু তাঁকে চেনা-পরিচিত জগৎকে নতুন করে উপলব্ধির দিকনির্দেশনা দিয়েছিল। ভার্জিনিয়া উলফের মতো তাঁরও মনে হয়েছিল, লিখতে হলে প্রথমে বর্ণনাতীত বাস্তবকে তীব্রভাবে অনুভব করে নিতে হবে। লেখালেখির লক্ষ্য হবে হৃদয়ের গভীরে অনুভূত বাস্তবকে সাহিত্যের নতুন কোনো ভাষায় উত্থাপন করা। বিশেষ কোনো কাহিনি কল্পনা ফাঁদার প্রয়োজন নেই; উদ্দেশ্যমূলকভাবে বিশেষ কতগুলো চরিত্রচিত্রণের প্রয়োজন নেই; বরং নিজ জীবনের অভিজ্ঞতা ও অনুভবের মধ্যেই সুপ্ত রয়েছে যা কিছু দরকার। এভাবেই তিনি আত্মজৈবনিক কাহিনি রচনার দিকে ঝুঁকে পড়েছিলেন। শেষ পর্যন্ত তাঁর রচনা আত্মজৈবনিকতা অতিক্রম করে হয়ে উঠেছে সর্বজনীন উপন্যাস।
কৈশোর থেকে নিয়মিত দিনপঞ্জি লিখেছেন আনি এরনো। দিনপঞ্জিতে অবধৃত ঘটনাবলির অনুপুঙ্খ বর্ণনা তাঁকে নিজ অভিজ্ঞতা ও উপলব্ধির প্রতি বিশ্বস্ত থাকতে সাহায্য করেছে। ফ্রান্সের পাঠকমহল উপন্যাসের অবয়বে একজন নারীর অভিজ্ঞতা, অনুভূতি ও পর্যবেক্ষণের অপরিশোধিত পরিবেশনা সাদরে গ্রহণ করেছে। তিনি অক্লেশ জীবনের গোপনতম ঘটনাকে উপন্যাসের কাঠামোতে উপজীব্য করেছেন। তাঁর কাছে উপন্যাস যাপিত জীবনের ইন্টারপ্রিটেশন।
১৯৮৮ সালে আনি এরনো সোভিয়েত রাশিয়ায় গেলে লেনিনগ্রাদে একজন তরুণ রুশ কূটনীতিকের সঙ্গে পরিচয় ঘটে। তখন ওই তরুণ রুশ কূটনীতিকের কর্মস্থল প্যারিস। এরনোর বয়স ৪৮, নতুন প্রেমিকের বয়স ৩৫। তাঁদের ১৮ মাস স্থায়ী প্রেমের কাহিনি নিয়ে ২০০১ সালে তিনি প্রকাশ করেন ‘হারিয়ে যাওয়া’, যা গত মাসে ইংরেজিতে অনূদিত হয়ে প্রকাশিত হয়েছে। ঘনিষ্ঠ মিলনের বর্ণনায় তিনি অকপট: ‘তিন ঘণ্টায় চারবার করেছি আমরা’; ‘বাৎসায়নের কামসূত্রে আছে, এমন কিছু করতে আমরা বাকি রাখিনি’, ‘ওর বীর্যমাখা একটি জি-স্ট্রিং আমি আমার বালিশের নিচে রেখে দেব।’ একস্থানে আমরা পড়ি: ‘হঠাৎ খেয়াল করে দেখি আমি আমার একটি কনট্যাক্ট লেন্স হারিয়ে ফেলেছি। ওর পুরুষাঙ্গের মাথায় খুঁজে পেলাম অবশেষে।’ অকপটভাবে এরনো লিখেছেন: ‘ও আসে, সঙ্গম করে, ভদকা খায় আর স্তালিনকে নিয়ে বকবক করে।’ —দিনলিপিতে লিখে রাখা এই কাহিনিই তিনি উপজীব্য করেছিলেন উপরোল্লিখিত ‘সহজ কামনা’ (প্যাশন সিম্পল) উপন্যাসে।
প্রথম উপন্যাস ‘ক্লিনড্আউট’-এ যে অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে গর্ভধারণ ও গর্ভপাতের কথা বর্ণিত হয়েছে, তার একটি অংশ ছিল অনালোকিত। কে ছিল এই অকালে উৎপাটিত ভ্রূণের জনক, তা কাহিনির কোথাও উল্লেখ করা হয়নি। অনেক পরে প্রকাশিত ‘এক তরুণীর গল্প’ শিরোনামীয় উপন্যাসে তিনি তাঁর কুমারীত্ব বিসর্জন ও অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভসঞ্চারের কাহিনি অবারিত করেছেন আনি এরনো। তিনি একটি সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘এটি কোনো ধর্ষণের ঘটনা ছিল না। ধর্ষণের ঘটনা হলে হয়তো অনেক আগেই এ নিয়ে লিখে ফেলতাম।’ তিনি জানিয়েছেন, ‘আমি বাধা দিইনি, এ কথা স্পষ্ট মনে পড়ে।’
আত্মজৈবনিকতা আনি এরনোর লেখালেখির ভিত্তিমূল। আত্মজৈবনিক উপন্যাস ও আত্মজীবনী এক কথা নয়। আত্মজীবনী একজন মানুষের সমগ্র জীবনের নির্বাচিত স্মৃতি-সংকলন। অন্যদিকে আত্মজৈবনিক উপন্যাসে একজন লেখক স্বীয় জীবনের বিশেষ কোনো স্মৃতি বা ঘটনাকে অবলম্বন করে কাহিনি ভাগ রচনা করেন। আনি এরনো সর্বদাই এ বিষয়ে সচেতন। অন্য দিকে আমরা দেখি, তিনি কেবল তাঁর নিজের কথা লেখেননি, যে জনপরিসরে তিনি থেকেছেন, সেই সব মানুষের কথাও তিনি তুলে এনেছেন। ফলে তাঁর কোনো কোনো উপন্যাস আত্মজৈবনিকতার পরিসীমা অতিক্রম করে সামাজিক দর্পণ হয়ে উঠেছে।
আদ্যোপান্ত আত্মজৈবনিকতা থাকলেও আনি এরনো তাঁর উপন্যাসগুলোকে সর্বজনীন করে তুলতে সক্ষম হয়েছেন। আর এখানেই তাঁর বিশেষ কৃতিত্ব।

ফরাসি কথাসাহিত্যিক আনি এরনো ১৯৯১ সালে প্রকাশ করেছিলেন তাঁর উপন্যাস ‘সহজ কামনা’ (প্যাশন সিম্পল)। ইংরেজিতে অনূদিত হয়ে এটি প্রকাশিত হয় ১৯৯৩ সালে।
নিউইয়র্ক টাইমস পত্রিকায় বইটির আলোচনা প্রসঙ্গে লেখা হয়েছিল: কেবল ফ্রান্সেই এ রকম একটি ক্ষুদ্রাবয়ব আত্মজৈবনিক উপন্যাস পাঠকের কাছে সমাদৃত
হতে পারে।
উপন্যাসটি ফরাসি পাঠকদের কাছে দ্রুত জনপ্রিয়তা লাভ করলেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কি ইংরেজিভাষী বিশ্বে, তেমন কোনো কদর লাভ করেনি। আলোচনায় আরও উল্লেখ করা হয়েছিল: তাঁর অপরাপর দুটি উপন্যাস যথা ১৯৮৩ সালে প্রকাশিত ‘একজন পুরুষের জগৎ’ এবং ১৯৮৮ সালে প্রকাশিত ‘এক নারীর কাহিনি’ ফ্রান্সে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেলেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে তেমন কোনো সাড়া জাগায়নি।
তবে ক্রমশ পরিস্থিতি অনুকূল হয়েছে। তাঁর ‘দ্য ইয়ারস’ ইন্টারন্যাশনাল ম্যান বুকার পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়। ভাগ্যক্রমে এতটাই প্রসন্ন হয়ে ওঠে যে সুইডিশ একাডেমি আনি এরনোকে ২০২২ সালের জন্য সাহিত্যের নোবেল পুরস্কার দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। ফ্রান্স, অন্যান্য ফরাসি ভাষী দেশে এবং ইউরোপে পরিচিত নাম হলেও পৃথিবীর অন্যান্য এলাকায় আনি এরনো এখন পর্যন্ত পরিচিত হয়ে ওঠেননি। আশা করা যায় পৃথিবীর বিভিন্ন ভাষায় এখন তাঁর গ্রন্থাবলির অনুবাদ হবে এবং সারা পৃথিবীতে দ্রুত পরিচিতি লাভ করবেন।
নোবেল বিজয়ী আনি এরনোর জন্ম ১৯৪০ সালে। কৈশোরে তিনি নিয়মিত দিনলিপি লিখতে শুরু করেছিলেন। ১৯৭২ সালে একদিন তিনি উপন্যাস লিখতে বসে যান। উপন্যাস লিখবেন শুনে তাঁর স্বামী ব্যঙ্গের হাসি হেসেছিলেন। তাই স্বামীকে সম্পূর্ণ লুকিয়ে লুকিয়ে প্রথম উপন্যাসটি লিখেছিলেন আনি এরনো। যখন একটি নামকরা প্রকাশক উপন্যাসটি প্রকাশে সম্মত হলেন, তখন তাঁর স্বামী বিস্ময়ে হতবাক হয়ে গিয়েছিলেন। নিজের পক্ষে কিছু লেখা সম্ভব নয় বলে ক্রুদ্ধও হয়েছিলেন।
১৯৭৪ সালে তাঁর প্রথম উপন্যাসটি প্রকাশিত হয় ‘ক্লিনড্আউট’ নামে। তাঁর জীবনের অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভধারণ এবং অনিবার্য গর্ভপাতের কাহিনি, অপমান ও লোকলজ্জার ঘটনাকে অবলম্বন করেছেন তিনি উপন্যাসে। পরবর্তী ৪৮ বছরে একে একে তিনি ২৪টি গ্রন্থ করেছেন। কিছুদিন আগে প্রকাশ করেছেন নতুন উপন্যাস ‘একজন যুবকের কাহিনি’। আজ তাঁর অন্যতম পরিচয় এই যে তিনি একজন আত্মজৈবনিক ঔপন্যাসিক। প্রতিটি উপন্যাসের উপজীব্য স্বীয় জীবনের কড়কড়ে অভিজ্ঞতা এবং পর্যবেক্ষণ।
তিনি নিজের জীবনের গোপন এবং প্রকাশ্য খুঁটিনাটি নানা বিষয়কে একেকটি উপন্যাসের জন্য উপজীব্য করেছেন নিঃসংকোচ সাহসিকতায়।
ষাটের দশকে, যখন আনা এরনোর বয়স কুড়ি থেকে পঁচিশ, তখন ভার্জিনিয়া উলফ পড়ে পড়ে তাঁর মধ্যে লেখালেখির তীব্র ইচ্ছা জেগে উঠেছিল। কাছাকাছি সময়ে আঁদ্রে ব্রেটনের ‘ফার্স্ট মেনিফেস্টো অব সুররিয়ালিজম’ পড়ে জীবন এবং লেখালেখির ও জীবনযাপনের একটি পথরেখার সন্ধান পেয়েছিলেন। জারমেইন গ্রিয়ারের ‘দ্য ফিমেইল ইউনাক’ বইটি তাঁর দার্শনিক চিন্তায় নারীর সামাজিক অবস্থানকে প্রবিষ্ট করে দিয়েছিল। ১৯৬৫ সালে প্রকাশিত জর্জ পেরেকের ‘ষাটের গল্প: বিষয়-আশয়’। জর্জ পেরেকের রচনাকৌশল তাঁকে ভাবিয়েছিল। এই সবকিছু তাঁকে চেনা-পরিচিত জগৎকে নতুন করে উপলব্ধির দিকনির্দেশনা দিয়েছিল। ভার্জিনিয়া উলফের মতো তাঁরও মনে হয়েছিল, লিখতে হলে প্রথমে বর্ণনাতীত বাস্তবকে তীব্রভাবে অনুভব করে নিতে হবে। লেখালেখির লক্ষ্য হবে হৃদয়ের গভীরে অনুভূত বাস্তবকে সাহিত্যের নতুন কোনো ভাষায় উত্থাপন করা। বিশেষ কোনো কাহিনি কল্পনা ফাঁদার প্রয়োজন নেই; উদ্দেশ্যমূলকভাবে বিশেষ কতগুলো চরিত্রচিত্রণের প্রয়োজন নেই; বরং নিজ জীবনের অভিজ্ঞতা ও অনুভবের মধ্যেই সুপ্ত রয়েছে যা কিছু দরকার। এভাবেই তিনি আত্মজৈবনিক কাহিনি রচনার দিকে ঝুঁকে পড়েছিলেন। শেষ পর্যন্ত তাঁর রচনা আত্মজৈবনিকতা অতিক্রম করে হয়ে উঠেছে সর্বজনীন উপন্যাস।
কৈশোর থেকে নিয়মিত দিনপঞ্জি লিখেছেন আনি এরনো। দিনপঞ্জিতে অবধৃত ঘটনাবলির অনুপুঙ্খ বর্ণনা তাঁকে নিজ অভিজ্ঞতা ও উপলব্ধির প্রতি বিশ্বস্ত থাকতে সাহায্য করেছে। ফ্রান্সের পাঠকমহল উপন্যাসের অবয়বে একজন নারীর অভিজ্ঞতা, অনুভূতি ও পর্যবেক্ষণের অপরিশোধিত পরিবেশনা সাদরে গ্রহণ করেছে। তিনি অক্লেশ জীবনের গোপনতম ঘটনাকে উপন্যাসের কাঠামোতে উপজীব্য করেছেন। তাঁর কাছে উপন্যাস যাপিত জীবনের ইন্টারপ্রিটেশন।
১৯৮৮ সালে আনি এরনো সোভিয়েত রাশিয়ায় গেলে লেনিনগ্রাদে একজন তরুণ রুশ কূটনীতিকের সঙ্গে পরিচয় ঘটে। তখন ওই তরুণ রুশ কূটনীতিকের কর্মস্থল প্যারিস। এরনোর বয়স ৪৮, নতুন প্রেমিকের বয়স ৩৫। তাঁদের ১৮ মাস স্থায়ী প্রেমের কাহিনি নিয়ে ২০০১ সালে তিনি প্রকাশ করেন ‘হারিয়ে যাওয়া’, যা গত মাসে ইংরেজিতে অনূদিত হয়ে প্রকাশিত হয়েছে। ঘনিষ্ঠ মিলনের বর্ণনায় তিনি অকপট: ‘তিন ঘণ্টায় চারবার করেছি আমরা’; ‘বাৎসায়নের কামসূত্রে আছে, এমন কিছু করতে আমরা বাকি রাখিনি’, ‘ওর বীর্যমাখা একটি জি-স্ট্রিং আমি আমার বালিশের নিচে রেখে দেব।’ একস্থানে আমরা পড়ি: ‘হঠাৎ খেয়াল করে দেখি আমি আমার একটি কনট্যাক্ট লেন্স হারিয়ে ফেলেছি। ওর পুরুষাঙ্গের মাথায় খুঁজে পেলাম অবশেষে।’ অকপটভাবে এরনো লিখেছেন: ‘ও আসে, সঙ্গম করে, ভদকা খায় আর স্তালিনকে নিয়ে বকবক করে।’ —দিনলিপিতে লিখে রাখা এই কাহিনিই তিনি উপজীব্য করেছিলেন উপরোল্লিখিত ‘সহজ কামনা’ (প্যাশন সিম্পল) উপন্যাসে।
প্রথম উপন্যাস ‘ক্লিনড্আউট’-এ যে অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে গর্ভধারণ ও গর্ভপাতের কথা বর্ণিত হয়েছে, তার একটি অংশ ছিল অনালোকিত। কে ছিল এই অকালে উৎপাটিত ভ্রূণের জনক, তা কাহিনির কোথাও উল্লেখ করা হয়নি। অনেক পরে প্রকাশিত ‘এক তরুণীর গল্প’ শিরোনামীয় উপন্যাসে তিনি তাঁর কুমারীত্ব বিসর্জন ও অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভসঞ্চারের কাহিনি অবারিত করেছেন আনি এরনো। তিনি একটি সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘এটি কোনো ধর্ষণের ঘটনা ছিল না। ধর্ষণের ঘটনা হলে হয়তো অনেক আগেই এ নিয়ে লিখে ফেলতাম।’ তিনি জানিয়েছেন, ‘আমি বাধা দিইনি, এ কথা স্পষ্ট মনে পড়ে।’
আত্মজৈবনিকতা আনি এরনোর লেখালেখির ভিত্তিমূল। আত্মজৈবনিক উপন্যাস ও আত্মজীবনী এক কথা নয়। আত্মজীবনী একজন মানুষের সমগ্র জীবনের নির্বাচিত স্মৃতি-সংকলন। অন্যদিকে আত্মজৈবনিক উপন্যাসে একজন লেখক স্বীয় জীবনের বিশেষ কোনো স্মৃতি বা ঘটনাকে অবলম্বন করে কাহিনি ভাগ রচনা করেন। আনি এরনো সর্বদাই এ বিষয়ে সচেতন। অন্য দিকে আমরা দেখি, তিনি কেবল তাঁর নিজের কথা লেখেননি, যে জনপরিসরে তিনি থেকেছেন, সেই সব মানুষের কথাও তিনি তুলে এনেছেন। ফলে তাঁর কোনো কোনো উপন্যাস আত্মজৈবনিকতার পরিসীমা অতিক্রম করে সামাজিক দর্পণ হয়ে উঠেছে।
আদ্যোপান্ত আত্মজৈবনিকতা থাকলেও আনি এরনো তাঁর উপন্যাসগুলোকে সর্বজনীন করে তুলতে সক্ষম হয়েছেন। আর এখানেই তাঁর বিশেষ কৃতিত্ব।
ফয়জুল লতিফ চৌধুরী

ফরাসি কথাসাহিত্যিক আনি এরনো ১৯৯১ সালে প্রকাশ করেছিলেন তাঁর উপন্যাস ‘সহজ কামনা’ (প্যাশন সিম্পল)। ইংরেজিতে অনূদিত হয়ে এটি প্রকাশিত হয় ১৯৯৩ সালে।
নিউইয়র্ক টাইমস পত্রিকায় বইটির আলোচনা প্রসঙ্গে লেখা হয়েছিল: কেবল ফ্রান্সেই এ রকম একটি ক্ষুদ্রাবয়ব আত্মজৈবনিক উপন্যাস পাঠকের কাছে সমাদৃত
হতে পারে।
উপন্যাসটি ফরাসি পাঠকদের কাছে দ্রুত জনপ্রিয়তা লাভ করলেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কি ইংরেজিভাষী বিশ্বে, তেমন কোনো কদর লাভ করেনি। আলোচনায় আরও উল্লেখ করা হয়েছিল: তাঁর অপরাপর দুটি উপন্যাস যথা ১৯৮৩ সালে প্রকাশিত ‘একজন পুরুষের জগৎ’ এবং ১৯৮৮ সালে প্রকাশিত ‘এক নারীর কাহিনি’ ফ্রান্সে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেলেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে তেমন কোনো সাড়া জাগায়নি।
তবে ক্রমশ পরিস্থিতি অনুকূল হয়েছে। তাঁর ‘দ্য ইয়ারস’ ইন্টারন্যাশনাল ম্যান বুকার পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়। ভাগ্যক্রমে এতটাই প্রসন্ন হয়ে ওঠে যে সুইডিশ একাডেমি আনি এরনোকে ২০২২ সালের জন্য সাহিত্যের নোবেল পুরস্কার দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। ফ্রান্স, অন্যান্য ফরাসি ভাষী দেশে এবং ইউরোপে পরিচিত নাম হলেও পৃথিবীর অন্যান্য এলাকায় আনি এরনো এখন পর্যন্ত পরিচিত হয়ে ওঠেননি। আশা করা যায় পৃথিবীর বিভিন্ন ভাষায় এখন তাঁর গ্রন্থাবলির অনুবাদ হবে এবং সারা পৃথিবীতে দ্রুত পরিচিতি লাভ করবেন।
নোবেল বিজয়ী আনি এরনোর জন্ম ১৯৪০ সালে। কৈশোরে তিনি নিয়মিত দিনলিপি লিখতে শুরু করেছিলেন। ১৯৭২ সালে একদিন তিনি উপন্যাস লিখতে বসে যান। উপন্যাস লিখবেন শুনে তাঁর স্বামী ব্যঙ্গের হাসি হেসেছিলেন। তাই স্বামীকে সম্পূর্ণ লুকিয়ে লুকিয়ে প্রথম উপন্যাসটি লিখেছিলেন আনি এরনো। যখন একটি নামকরা প্রকাশক উপন্যাসটি প্রকাশে সম্মত হলেন, তখন তাঁর স্বামী বিস্ময়ে হতবাক হয়ে গিয়েছিলেন। নিজের পক্ষে কিছু লেখা সম্ভব নয় বলে ক্রুদ্ধও হয়েছিলেন।
১৯৭৪ সালে তাঁর প্রথম উপন্যাসটি প্রকাশিত হয় ‘ক্লিনড্আউট’ নামে। তাঁর জীবনের অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভধারণ এবং অনিবার্য গর্ভপাতের কাহিনি, অপমান ও লোকলজ্জার ঘটনাকে অবলম্বন করেছেন তিনি উপন্যাসে। পরবর্তী ৪৮ বছরে একে একে তিনি ২৪টি গ্রন্থ করেছেন। কিছুদিন আগে প্রকাশ করেছেন নতুন উপন্যাস ‘একজন যুবকের কাহিনি’। আজ তাঁর অন্যতম পরিচয় এই যে তিনি একজন আত্মজৈবনিক ঔপন্যাসিক। প্রতিটি উপন্যাসের উপজীব্য স্বীয় জীবনের কড়কড়ে অভিজ্ঞতা এবং পর্যবেক্ষণ।
তিনি নিজের জীবনের গোপন এবং প্রকাশ্য খুঁটিনাটি নানা বিষয়কে একেকটি উপন্যাসের জন্য উপজীব্য করেছেন নিঃসংকোচ সাহসিকতায়।
ষাটের দশকে, যখন আনা এরনোর বয়স কুড়ি থেকে পঁচিশ, তখন ভার্জিনিয়া উলফ পড়ে পড়ে তাঁর মধ্যে লেখালেখির তীব্র ইচ্ছা জেগে উঠেছিল। কাছাকাছি সময়ে আঁদ্রে ব্রেটনের ‘ফার্স্ট মেনিফেস্টো অব সুররিয়ালিজম’ পড়ে জীবন এবং লেখালেখির ও জীবনযাপনের একটি পথরেখার সন্ধান পেয়েছিলেন। জারমেইন গ্রিয়ারের ‘দ্য ফিমেইল ইউনাক’ বইটি তাঁর দার্শনিক চিন্তায় নারীর সামাজিক অবস্থানকে প্রবিষ্ট করে দিয়েছিল। ১৯৬৫ সালে প্রকাশিত জর্জ পেরেকের ‘ষাটের গল্প: বিষয়-আশয়’। জর্জ পেরেকের রচনাকৌশল তাঁকে ভাবিয়েছিল। এই সবকিছু তাঁকে চেনা-পরিচিত জগৎকে নতুন করে উপলব্ধির দিকনির্দেশনা দিয়েছিল। ভার্জিনিয়া উলফের মতো তাঁরও মনে হয়েছিল, লিখতে হলে প্রথমে বর্ণনাতীত বাস্তবকে তীব্রভাবে অনুভব করে নিতে হবে। লেখালেখির লক্ষ্য হবে হৃদয়ের গভীরে অনুভূত বাস্তবকে সাহিত্যের নতুন কোনো ভাষায় উত্থাপন করা। বিশেষ কোনো কাহিনি কল্পনা ফাঁদার প্রয়োজন নেই; উদ্দেশ্যমূলকভাবে বিশেষ কতগুলো চরিত্রচিত্রণের প্রয়োজন নেই; বরং নিজ জীবনের অভিজ্ঞতা ও অনুভবের মধ্যেই সুপ্ত রয়েছে যা কিছু দরকার। এভাবেই তিনি আত্মজৈবনিক কাহিনি রচনার দিকে ঝুঁকে পড়েছিলেন। শেষ পর্যন্ত তাঁর রচনা আত্মজৈবনিকতা অতিক্রম করে হয়ে উঠেছে সর্বজনীন উপন্যাস।
কৈশোর থেকে নিয়মিত দিনপঞ্জি লিখেছেন আনি এরনো। দিনপঞ্জিতে অবধৃত ঘটনাবলির অনুপুঙ্খ বর্ণনা তাঁকে নিজ অভিজ্ঞতা ও উপলব্ধির প্রতি বিশ্বস্ত থাকতে সাহায্য করেছে। ফ্রান্সের পাঠকমহল উপন্যাসের অবয়বে একজন নারীর অভিজ্ঞতা, অনুভূতি ও পর্যবেক্ষণের অপরিশোধিত পরিবেশনা সাদরে গ্রহণ করেছে। তিনি অক্লেশ জীবনের গোপনতম ঘটনাকে উপন্যাসের কাঠামোতে উপজীব্য করেছেন। তাঁর কাছে উপন্যাস যাপিত জীবনের ইন্টারপ্রিটেশন।
১৯৮৮ সালে আনি এরনো সোভিয়েত রাশিয়ায় গেলে লেনিনগ্রাদে একজন তরুণ রুশ কূটনীতিকের সঙ্গে পরিচয় ঘটে। তখন ওই তরুণ রুশ কূটনীতিকের কর্মস্থল প্যারিস। এরনোর বয়স ৪৮, নতুন প্রেমিকের বয়স ৩৫। তাঁদের ১৮ মাস স্থায়ী প্রেমের কাহিনি নিয়ে ২০০১ সালে তিনি প্রকাশ করেন ‘হারিয়ে যাওয়া’, যা গত মাসে ইংরেজিতে অনূদিত হয়ে প্রকাশিত হয়েছে। ঘনিষ্ঠ মিলনের বর্ণনায় তিনি অকপট: ‘তিন ঘণ্টায় চারবার করেছি আমরা’; ‘বাৎসায়নের কামসূত্রে আছে, এমন কিছু করতে আমরা বাকি রাখিনি’, ‘ওর বীর্যমাখা একটি জি-স্ট্রিং আমি আমার বালিশের নিচে রেখে দেব।’ একস্থানে আমরা পড়ি: ‘হঠাৎ খেয়াল করে দেখি আমি আমার একটি কনট্যাক্ট লেন্স হারিয়ে ফেলেছি। ওর পুরুষাঙ্গের মাথায় খুঁজে পেলাম অবশেষে।’ অকপটভাবে এরনো লিখেছেন: ‘ও আসে, সঙ্গম করে, ভদকা খায় আর স্তালিনকে নিয়ে বকবক করে।’ —দিনলিপিতে লিখে রাখা এই কাহিনিই তিনি উপজীব্য করেছিলেন উপরোল্লিখিত ‘সহজ কামনা’ (প্যাশন সিম্পল) উপন্যাসে।
প্রথম উপন্যাস ‘ক্লিনড্আউট’-এ যে অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে গর্ভধারণ ও গর্ভপাতের কথা বর্ণিত হয়েছে, তার একটি অংশ ছিল অনালোকিত। কে ছিল এই অকালে উৎপাটিত ভ্রূণের জনক, তা কাহিনির কোথাও উল্লেখ করা হয়নি। অনেক পরে প্রকাশিত ‘এক তরুণীর গল্প’ শিরোনামীয় উপন্যাসে তিনি তাঁর কুমারীত্ব বিসর্জন ও অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভসঞ্চারের কাহিনি অবারিত করেছেন আনি এরনো। তিনি একটি সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘এটি কোনো ধর্ষণের ঘটনা ছিল না। ধর্ষণের ঘটনা হলে হয়তো অনেক আগেই এ নিয়ে লিখে ফেলতাম।’ তিনি জানিয়েছেন, ‘আমি বাধা দিইনি, এ কথা স্পষ্ট মনে পড়ে।’
আত্মজৈবনিকতা আনি এরনোর লেখালেখির ভিত্তিমূল। আত্মজৈবনিক উপন্যাস ও আত্মজীবনী এক কথা নয়। আত্মজীবনী একজন মানুষের সমগ্র জীবনের নির্বাচিত স্মৃতি-সংকলন। অন্যদিকে আত্মজৈবনিক উপন্যাসে একজন লেখক স্বীয় জীবনের বিশেষ কোনো স্মৃতি বা ঘটনাকে অবলম্বন করে কাহিনি ভাগ রচনা করেন। আনি এরনো সর্বদাই এ বিষয়ে সচেতন। অন্য দিকে আমরা দেখি, তিনি কেবল তাঁর নিজের কথা লেখেননি, যে জনপরিসরে তিনি থেকেছেন, সেই সব মানুষের কথাও তিনি তুলে এনেছেন। ফলে তাঁর কোনো কোনো উপন্যাস আত্মজৈবনিকতার পরিসীমা অতিক্রম করে সামাজিক দর্পণ হয়ে উঠেছে।
আদ্যোপান্ত আত্মজৈবনিকতা থাকলেও আনি এরনো তাঁর উপন্যাসগুলোকে সর্বজনীন করে তুলতে সক্ষম হয়েছেন। আর এখানেই তাঁর বিশেষ কৃতিত্ব।

ফরাসি কথাসাহিত্যিক আনি এরনো ১৯৯১ সালে প্রকাশ করেছিলেন তাঁর উপন্যাস ‘সহজ কামনা’ (প্যাশন সিম্পল)। ইংরেজিতে অনূদিত হয়ে এটি প্রকাশিত হয় ১৯৯৩ সালে।
নিউইয়র্ক টাইমস পত্রিকায় বইটির আলোচনা প্রসঙ্গে লেখা হয়েছিল: কেবল ফ্রান্সেই এ রকম একটি ক্ষুদ্রাবয়ব আত্মজৈবনিক উপন্যাস পাঠকের কাছে সমাদৃত
হতে পারে।
উপন্যাসটি ফরাসি পাঠকদের কাছে দ্রুত জনপ্রিয়তা লাভ করলেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কি ইংরেজিভাষী বিশ্বে, তেমন কোনো কদর লাভ করেনি। আলোচনায় আরও উল্লেখ করা হয়েছিল: তাঁর অপরাপর দুটি উপন্যাস যথা ১৯৮৩ সালে প্রকাশিত ‘একজন পুরুষের জগৎ’ এবং ১৯৮৮ সালে প্রকাশিত ‘এক নারীর কাহিনি’ ফ্রান্সে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেলেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে তেমন কোনো সাড়া জাগায়নি।
তবে ক্রমশ পরিস্থিতি অনুকূল হয়েছে। তাঁর ‘দ্য ইয়ারস’ ইন্টারন্যাশনাল ম্যান বুকার পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়। ভাগ্যক্রমে এতটাই প্রসন্ন হয়ে ওঠে যে সুইডিশ একাডেমি আনি এরনোকে ২০২২ সালের জন্য সাহিত্যের নোবেল পুরস্কার দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। ফ্রান্স, অন্যান্য ফরাসি ভাষী দেশে এবং ইউরোপে পরিচিত নাম হলেও পৃথিবীর অন্যান্য এলাকায় আনি এরনো এখন পর্যন্ত পরিচিত হয়ে ওঠেননি। আশা করা যায় পৃথিবীর বিভিন্ন ভাষায় এখন তাঁর গ্রন্থাবলির অনুবাদ হবে এবং সারা পৃথিবীতে দ্রুত পরিচিতি লাভ করবেন।
নোবেল বিজয়ী আনি এরনোর জন্ম ১৯৪০ সালে। কৈশোরে তিনি নিয়মিত দিনলিপি লিখতে শুরু করেছিলেন। ১৯৭২ সালে একদিন তিনি উপন্যাস লিখতে বসে যান। উপন্যাস লিখবেন শুনে তাঁর স্বামী ব্যঙ্গের হাসি হেসেছিলেন। তাই স্বামীকে সম্পূর্ণ লুকিয়ে লুকিয়ে প্রথম উপন্যাসটি লিখেছিলেন আনি এরনো। যখন একটি নামকরা প্রকাশক উপন্যাসটি প্রকাশে সম্মত হলেন, তখন তাঁর স্বামী বিস্ময়ে হতবাক হয়ে গিয়েছিলেন। নিজের পক্ষে কিছু লেখা সম্ভব নয় বলে ক্রুদ্ধও হয়েছিলেন।
১৯৭৪ সালে তাঁর প্রথম উপন্যাসটি প্রকাশিত হয় ‘ক্লিনড্আউট’ নামে। তাঁর জীবনের অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভধারণ এবং অনিবার্য গর্ভপাতের কাহিনি, অপমান ও লোকলজ্জার ঘটনাকে অবলম্বন করেছেন তিনি উপন্যাসে। পরবর্তী ৪৮ বছরে একে একে তিনি ২৪টি গ্রন্থ করেছেন। কিছুদিন আগে প্রকাশ করেছেন নতুন উপন্যাস ‘একজন যুবকের কাহিনি’। আজ তাঁর অন্যতম পরিচয় এই যে তিনি একজন আত্মজৈবনিক ঔপন্যাসিক। প্রতিটি উপন্যাসের উপজীব্য স্বীয় জীবনের কড়কড়ে অভিজ্ঞতা এবং পর্যবেক্ষণ।
তিনি নিজের জীবনের গোপন এবং প্রকাশ্য খুঁটিনাটি নানা বিষয়কে একেকটি উপন্যাসের জন্য উপজীব্য করেছেন নিঃসংকোচ সাহসিকতায়।
ষাটের দশকে, যখন আনা এরনোর বয়স কুড়ি থেকে পঁচিশ, তখন ভার্জিনিয়া উলফ পড়ে পড়ে তাঁর মধ্যে লেখালেখির তীব্র ইচ্ছা জেগে উঠেছিল। কাছাকাছি সময়ে আঁদ্রে ব্রেটনের ‘ফার্স্ট মেনিফেস্টো অব সুররিয়ালিজম’ পড়ে জীবন এবং লেখালেখির ও জীবনযাপনের একটি পথরেখার সন্ধান পেয়েছিলেন। জারমেইন গ্রিয়ারের ‘দ্য ফিমেইল ইউনাক’ বইটি তাঁর দার্শনিক চিন্তায় নারীর সামাজিক অবস্থানকে প্রবিষ্ট করে দিয়েছিল। ১৯৬৫ সালে প্রকাশিত জর্জ পেরেকের ‘ষাটের গল্প: বিষয়-আশয়’। জর্জ পেরেকের রচনাকৌশল তাঁকে ভাবিয়েছিল। এই সবকিছু তাঁকে চেনা-পরিচিত জগৎকে নতুন করে উপলব্ধির দিকনির্দেশনা দিয়েছিল। ভার্জিনিয়া উলফের মতো তাঁরও মনে হয়েছিল, লিখতে হলে প্রথমে বর্ণনাতীত বাস্তবকে তীব্রভাবে অনুভব করে নিতে হবে। লেখালেখির লক্ষ্য হবে হৃদয়ের গভীরে অনুভূত বাস্তবকে সাহিত্যের নতুন কোনো ভাষায় উত্থাপন করা। বিশেষ কোনো কাহিনি কল্পনা ফাঁদার প্রয়োজন নেই; উদ্দেশ্যমূলকভাবে বিশেষ কতগুলো চরিত্রচিত্রণের প্রয়োজন নেই; বরং নিজ জীবনের অভিজ্ঞতা ও অনুভবের মধ্যেই সুপ্ত রয়েছে যা কিছু দরকার। এভাবেই তিনি আত্মজৈবনিক কাহিনি রচনার দিকে ঝুঁকে পড়েছিলেন। শেষ পর্যন্ত তাঁর রচনা আত্মজৈবনিকতা অতিক্রম করে হয়ে উঠেছে সর্বজনীন উপন্যাস।
কৈশোর থেকে নিয়মিত দিনপঞ্জি লিখেছেন আনি এরনো। দিনপঞ্জিতে অবধৃত ঘটনাবলির অনুপুঙ্খ বর্ণনা তাঁকে নিজ অভিজ্ঞতা ও উপলব্ধির প্রতি বিশ্বস্ত থাকতে সাহায্য করেছে। ফ্রান্সের পাঠকমহল উপন্যাসের অবয়বে একজন নারীর অভিজ্ঞতা, অনুভূতি ও পর্যবেক্ষণের অপরিশোধিত পরিবেশনা সাদরে গ্রহণ করেছে। তিনি অক্লেশ জীবনের গোপনতম ঘটনাকে উপন্যাসের কাঠামোতে উপজীব্য করেছেন। তাঁর কাছে উপন্যাস যাপিত জীবনের ইন্টারপ্রিটেশন।
১৯৮৮ সালে আনি এরনো সোভিয়েত রাশিয়ায় গেলে লেনিনগ্রাদে একজন তরুণ রুশ কূটনীতিকের সঙ্গে পরিচয় ঘটে। তখন ওই তরুণ রুশ কূটনীতিকের কর্মস্থল প্যারিস। এরনোর বয়স ৪৮, নতুন প্রেমিকের বয়স ৩৫। তাঁদের ১৮ মাস স্থায়ী প্রেমের কাহিনি নিয়ে ২০০১ সালে তিনি প্রকাশ করেন ‘হারিয়ে যাওয়া’, যা গত মাসে ইংরেজিতে অনূদিত হয়ে প্রকাশিত হয়েছে। ঘনিষ্ঠ মিলনের বর্ণনায় তিনি অকপট: ‘তিন ঘণ্টায় চারবার করেছি আমরা’; ‘বাৎসায়নের কামসূত্রে আছে, এমন কিছু করতে আমরা বাকি রাখিনি’, ‘ওর বীর্যমাখা একটি জি-স্ট্রিং আমি আমার বালিশের নিচে রেখে দেব।’ একস্থানে আমরা পড়ি: ‘হঠাৎ খেয়াল করে দেখি আমি আমার একটি কনট্যাক্ট লেন্স হারিয়ে ফেলেছি। ওর পুরুষাঙ্গের মাথায় খুঁজে পেলাম অবশেষে।’ অকপটভাবে এরনো লিখেছেন: ‘ও আসে, সঙ্গম করে, ভদকা খায় আর স্তালিনকে নিয়ে বকবক করে।’ —দিনলিপিতে লিখে রাখা এই কাহিনিই তিনি উপজীব্য করেছিলেন উপরোল্লিখিত ‘সহজ কামনা’ (প্যাশন সিম্পল) উপন্যাসে।
প্রথম উপন্যাস ‘ক্লিনড্আউট’-এ যে অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে গর্ভধারণ ও গর্ভপাতের কথা বর্ণিত হয়েছে, তার একটি অংশ ছিল অনালোকিত। কে ছিল এই অকালে উৎপাটিত ভ্রূণের জনক, তা কাহিনির কোথাও উল্লেখ করা হয়নি। অনেক পরে প্রকাশিত ‘এক তরুণীর গল্প’ শিরোনামীয় উপন্যাসে তিনি তাঁর কুমারীত্ব বিসর্জন ও অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভসঞ্চারের কাহিনি অবারিত করেছেন আনি এরনো। তিনি একটি সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘এটি কোনো ধর্ষণের ঘটনা ছিল না। ধর্ষণের ঘটনা হলে হয়তো অনেক আগেই এ নিয়ে লিখে ফেলতাম।’ তিনি জানিয়েছেন, ‘আমি বাধা দিইনি, এ কথা স্পষ্ট মনে পড়ে।’
আত্মজৈবনিকতা আনি এরনোর লেখালেখির ভিত্তিমূল। আত্মজৈবনিক উপন্যাস ও আত্মজীবনী এক কথা নয়। আত্মজীবনী একজন মানুষের সমগ্র জীবনের নির্বাচিত স্মৃতি-সংকলন। অন্যদিকে আত্মজৈবনিক উপন্যাসে একজন লেখক স্বীয় জীবনের বিশেষ কোনো স্মৃতি বা ঘটনাকে অবলম্বন করে কাহিনি ভাগ রচনা করেন। আনি এরনো সর্বদাই এ বিষয়ে সচেতন। অন্য দিকে আমরা দেখি, তিনি কেবল তাঁর নিজের কথা লেখেননি, যে জনপরিসরে তিনি থেকেছেন, সেই সব মানুষের কথাও তিনি তুলে এনেছেন। ফলে তাঁর কোনো কোনো উপন্যাস আত্মজৈবনিকতার পরিসীমা অতিক্রম করে সামাজিক দর্পণ হয়ে উঠেছে।
আদ্যোপান্ত আত্মজৈবনিকতা থাকলেও আনি এরনো তাঁর উপন্যাসগুলোকে সর্বজনীন করে তুলতে সক্ষম হয়েছেন। আর এখানেই তাঁর বিশেষ কৃতিত্ব।

জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল।
৬ দিন আগে
জনপ্রিয় কিশোর গোয়েন্দা সিরিজ তিন গোয়েন্দার স্রষ্টা রকিব হাসান মারা গেছেন। আজ বুধবার রাজধানীর একটি হাসপাতালে ডায়ালাইসিস চলাকালে তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।
১১ দিন আগে
হাঙ্গেরির ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই এবার (২০২৫ সালে) সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন তাঁর দীর্ঘ, দার্শনিক বাক্য ও মানবজীবনের বিশৃঙ্খলার গভীর অনুসন্ধানী সাহিত্যকর্মের জন্য। সুইডিশ একাডেমি তাঁকে সম্মান জানিয়েছে ‘শিল্পের শক্তিকে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করার’ জন্য।
১৭ দিন আগে
হাঙ্গেরির সাহিত্যে অসীম জনপ্রিয়তা ও প্রভাব তাঁর; বিশ্বজোড়া আতঙ্ক ও সন্ত্রাসের দাপটেও শিল্পের শক্তি চেনায় তাঁর কলম। তিনি হাঙ্গেরিয়ান ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই; সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০২৫ সালে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।
১৭ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল। কিন্তু ভাষাবিদ ও সাহিত্য ইতিহাসবিদদের মতে, এই ধারণা আসলে পশ্চিমা দৃষ্টিকোণ থেকে তৈরি এক ‘ঔপনিবেশিক কল্পনা’ মাত্র। বাস্তবে আরবি সাহিত্য কখনোই থেমে যায়নি।
প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী, অষ্টম শতাব্দীতে আব্বাসীয় খলিফাদের অধীনে বিজ্ঞান, দর্শন ও কবিতার কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল বাগদাদ। আবু নুয়াস, আল-মুতানাব্বি, আল-ফারাবি ও ইবনে সিনার মতো কবি ও দার্শনিকদের হাত ধরে শুরু হয়েছিল এক স্বর্ণযুগ। ঊনবিংশ শতাব্দীর ইউরোপীয় গবেষকেরা—যেমন ফরাসি চিন্তাবিদ আর্নেস্ট রেনাঁ ও ডাচ ইতিহাসবিদ রেইনহার্ট দোজি সেই আমলটিকেই আরবি বুদ্ধিবৃত্তিক জীবনের শিখর বলে স্বীকার করেছিলেন এবং দাবি করেছিলেন, একাদশ শতাব্দীর পর এই ধারাবাহিকতার পতন ঘটে। তাঁদের মতে, এরপর প্রায় ৮০০ বছর আরবে আর কোনো গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্যিক বা দার্শনিক কাজ হয়নি—যতক্ষণ না ইউরোপে রেনেসাঁ শুরু হয়।
কিন্তু আধুনিক গবেষকেরা বলছেন, এই ধারণা সরলীকৃত ও পক্ষপাতদুষ্ট। ফ্রাঙ্কফুর্ট আন্তর্জাতিক বইমেলায় শেখ জায়েদ বুক অ্যাওয়ার্ডের আয়োজিত এক আলোচনায় ভাষাবিদেরা দাবি করেছেন, আরবি রচনা শৈলী কখনো বিলুপ্ত হয়নি; বরং তা ধারাবাহিকভাবে কপি, অনুবাদ ও পাঠের মাধ্যমে বেঁচে ছিল।
জার্মান গবেষক বেয়াট্রিস গ্রুন্ডলার তাঁর ‘দ্য রাইজ অব দ্য অ্যারাবিক বুক’ গ্রন্থে দাবি করেছেন, আরবি সাহিত্যে ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে যে ধারণাটি প্রচলিত আছে তা আসলে গাল-গল্প। এই বইটি এবারের শেখ জায়েদ পুরস্কারের শর্টলিস্টে রয়েছে। গ্রুন্ডলার এতে দেখিয়েছেন, নবম শতাব্দীর বাগদাদে বইয়ের ব্যবসা, কপিকারদের প্রতিযোগিতা, জনসম্মুখে পাঠ ও লেখার প্রচলন—সবই ছিল আধুনিক প্রকাশনা সংস্কৃতির পূর্বসূরি। তিনি মত দিয়েছেন, ‘বাগদাদের রাস্তায় হাঁটলে আপনি দেখতেন লোকেরা হস্তলিপি বিক্রি করছে, বিরামচিহ্ন নিয়ে তর্ক করছে—এ যেন এক জীবন্ত প্রকাশনা বাজার।’
গবেষণা বলছে, আরবি সাহিত্য আসলে কখনো এক জায়গায় স্থির থাকেনি। এর কেন্দ্র এক সময় বাগদাদ থেকে কায়রো, দামেস্ক ও আন্দালুসিয়ায় স্থানান্তরিত হয়। কিন্তু ধারাটি অব্যাহতই থাকে। নতুন ঘরানা তৈরি হয়, পুরোনো ঘরানা রূপান্তরিত হয়।
ফরাসি অধ্যাপক হাকান ওজকান তাঁর গবেষণায় দেখিয়েছেন, ‘জাজাল’ নামের কথ্য ছন্দভিত্তিক কবিতার ধারা আব্বাসীয় যুগের পরও বিকশিত হতে থাকে। তাঁর মতে, ‘এই কবিরা নিয়ম ভেঙে নতুন রূপ দিয়েছে—তাঁদের ছন্দ ও ব্যঙ্গ আধুনিক র্যাপের মতো প্রাণবন্ত।’

এদিকে এই বিষয়ে এক প্রতিবেদনে সোমবার (২০ অক্টোবর) আমিরাতভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য ন্যাশনাল জানিয়েছে, আবুধাবির নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির ‘আরবি সাহিত্য লাইব্রেরি’ প্রকল্প ইতিমধ্যেই ‘হারানো শতাব্দী’ বলে বিবেচিত সময়ের ৬০ টিরও বেশি আরবি সাহিত্যকর্ম পুনরুদ্ধার করেছে। প্রকল্পটির সম্পাদক অধ্যাপক মরিস পোমেরান্টজ বলেছেন, ‘এই বইগুলো সম্পাদনা করা মানে এক চলমান সংলাপে অংশ নেওয়া—যেখানে প্রজন্মের পর প্রজন্ম লেখক, অনুবাদক ও সমালোচকেরা একে অপরকে উত্তর দিয়ে গেছেন।’
মরিস মনে করেন, আরবি সাহিত্য স্থবির হয়ে যাওয়ার ধারণাটি মূলত অনুবাদের অভাব থেকেই জন্ম নিয়েছে। তিনি বলেন, ‘যখন কোনো লেখা অনুবাদ করা হয় না, তখন সেটি বৈশ্বিক অস্তিত্ব হারায়।’
মরিসের মতে, এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো এই সাহিত্যকে আবার জনসাধারণের কল্পনায় ফিরিয়ে আনা—স্কুলে পড়ানো, মঞ্চে উপস্থাপন করা, অনুবাদের মাধ্যমে বিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়া। তা না হলে আরবি সাহিত্যের ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে চিহ্নিত সময়টি অধরাই থেকে যাবে।

জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল। কিন্তু ভাষাবিদ ও সাহিত্য ইতিহাসবিদদের মতে, এই ধারণা আসলে পশ্চিমা দৃষ্টিকোণ থেকে তৈরি এক ‘ঔপনিবেশিক কল্পনা’ মাত্র। বাস্তবে আরবি সাহিত্য কখনোই থেমে যায়নি।
প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী, অষ্টম শতাব্দীতে আব্বাসীয় খলিফাদের অধীনে বিজ্ঞান, দর্শন ও কবিতার কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল বাগদাদ। আবু নুয়াস, আল-মুতানাব্বি, আল-ফারাবি ও ইবনে সিনার মতো কবি ও দার্শনিকদের হাত ধরে শুরু হয়েছিল এক স্বর্ণযুগ। ঊনবিংশ শতাব্দীর ইউরোপীয় গবেষকেরা—যেমন ফরাসি চিন্তাবিদ আর্নেস্ট রেনাঁ ও ডাচ ইতিহাসবিদ রেইনহার্ট দোজি সেই আমলটিকেই আরবি বুদ্ধিবৃত্তিক জীবনের শিখর বলে স্বীকার করেছিলেন এবং দাবি করেছিলেন, একাদশ শতাব্দীর পর এই ধারাবাহিকতার পতন ঘটে। তাঁদের মতে, এরপর প্রায় ৮০০ বছর আরবে আর কোনো গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্যিক বা দার্শনিক কাজ হয়নি—যতক্ষণ না ইউরোপে রেনেসাঁ শুরু হয়।
কিন্তু আধুনিক গবেষকেরা বলছেন, এই ধারণা সরলীকৃত ও পক্ষপাতদুষ্ট। ফ্রাঙ্কফুর্ট আন্তর্জাতিক বইমেলায় শেখ জায়েদ বুক অ্যাওয়ার্ডের আয়োজিত এক আলোচনায় ভাষাবিদেরা দাবি করেছেন, আরবি রচনা শৈলী কখনো বিলুপ্ত হয়নি; বরং তা ধারাবাহিকভাবে কপি, অনুবাদ ও পাঠের মাধ্যমে বেঁচে ছিল।
জার্মান গবেষক বেয়াট্রিস গ্রুন্ডলার তাঁর ‘দ্য রাইজ অব দ্য অ্যারাবিক বুক’ গ্রন্থে দাবি করেছেন, আরবি সাহিত্যে ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে যে ধারণাটি প্রচলিত আছে তা আসলে গাল-গল্প। এই বইটি এবারের শেখ জায়েদ পুরস্কারের শর্টলিস্টে রয়েছে। গ্রুন্ডলার এতে দেখিয়েছেন, নবম শতাব্দীর বাগদাদে বইয়ের ব্যবসা, কপিকারদের প্রতিযোগিতা, জনসম্মুখে পাঠ ও লেখার প্রচলন—সবই ছিল আধুনিক প্রকাশনা সংস্কৃতির পূর্বসূরি। তিনি মত দিয়েছেন, ‘বাগদাদের রাস্তায় হাঁটলে আপনি দেখতেন লোকেরা হস্তলিপি বিক্রি করছে, বিরামচিহ্ন নিয়ে তর্ক করছে—এ যেন এক জীবন্ত প্রকাশনা বাজার।’
গবেষণা বলছে, আরবি সাহিত্য আসলে কখনো এক জায়গায় স্থির থাকেনি। এর কেন্দ্র এক সময় বাগদাদ থেকে কায়রো, দামেস্ক ও আন্দালুসিয়ায় স্থানান্তরিত হয়। কিন্তু ধারাটি অব্যাহতই থাকে। নতুন ঘরানা তৈরি হয়, পুরোনো ঘরানা রূপান্তরিত হয়।
ফরাসি অধ্যাপক হাকান ওজকান তাঁর গবেষণায় দেখিয়েছেন, ‘জাজাল’ নামের কথ্য ছন্দভিত্তিক কবিতার ধারা আব্বাসীয় যুগের পরও বিকশিত হতে থাকে। তাঁর মতে, ‘এই কবিরা নিয়ম ভেঙে নতুন রূপ দিয়েছে—তাঁদের ছন্দ ও ব্যঙ্গ আধুনিক র্যাপের মতো প্রাণবন্ত।’

এদিকে এই বিষয়ে এক প্রতিবেদনে সোমবার (২০ অক্টোবর) আমিরাতভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য ন্যাশনাল জানিয়েছে, আবুধাবির নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির ‘আরবি সাহিত্য লাইব্রেরি’ প্রকল্প ইতিমধ্যেই ‘হারানো শতাব্দী’ বলে বিবেচিত সময়ের ৬০ টিরও বেশি আরবি সাহিত্যকর্ম পুনরুদ্ধার করেছে। প্রকল্পটির সম্পাদক অধ্যাপক মরিস পোমেরান্টজ বলেছেন, ‘এই বইগুলো সম্পাদনা করা মানে এক চলমান সংলাপে অংশ নেওয়া—যেখানে প্রজন্মের পর প্রজন্ম লেখক, অনুবাদক ও সমালোচকেরা একে অপরকে উত্তর দিয়ে গেছেন।’
মরিস মনে করেন, আরবি সাহিত্য স্থবির হয়ে যাওয়ার ধারণাটি মূলত অনুবাদের অভাব থেকেই জন্ম নিয়েছে। তিনি বলেন, ‘যখন কোনো লেখা অনুবাদ করা হয় না, তখন সেটি বৈশ্বিক অস্তিত্ব হারায়।’
মরিসের মতে, এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো এই সাহিত্যকে আবার জনসাধারণের কল্পনায় ফিরিয়ে আনা—স্কুলে পড়ানো, মঞ্চে উপস্থাপন করা, অনুবাদের মাধ্যমে বিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়া। তা না হলে আরবি সাহিত্যের ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে চিহ্নিত সময়টি অধরাই থেকে যাবে।

ফরাসি কথাসাহিত্যিক আনি এরনো ১৯৯১ সালে প্রকাশ করেছিলেন তাঁর উপন্যাস ‘সহজ কামনা’ (প্যাশন সিম্পল)। ইংরেজিতে অনূদিত হয়ে এটি প্রকাশিত হয় ১৯৯৩ সালে। নিউইয়র্ক টাইমস পত্রিকায় বইটির আলোচনা প্রসঙ্গে লেখা হয়েছিল: কেবল ফ্রান্সেই এ রকম একটি ক্ষুদ্রাবয়ব আত্মজৈবনিক উপন্যাস পাঠকের কাছে সমাদৃত হতে পারে।
০৮ অক্টোবর ২০২২
জনপ্রিয় কিশোর গোয়েন্দা সিরিজ তিন গোয়েন্দার স্রষ্টা রকিব হাসান মারা গেছেন। আজ বুধবার রাজধানীর একটি হাসপাতালে ডায়ালাইসিস চলাকালে তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।
১১ দিন আগে
হাঙ্গেরির ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই এবার (২০২৫ সালে) সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন তাঁর দীর্ঘ, দার্শনিক বাক্য ও মানবজীবনের বিশৃঙ্খলার গভীর অনুসন্ধানী সাহিত্যকর্মের জন্য। সুইডিশ একাডেমি তাঁকে সম্মান জানিয়েছে ‘শিল্পের শক্তিকে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করার’ জন্য।
১৭ দিন আগে
হাঙ্গেরির সাহিত্যে অসীম জনপ্রিয়তা ও প্রভাব তাঁর; বিশ্বজোড়া আতঙ্ক ও সন্ত্রাসের দাপটেও শিল্পের শক্তি চেনায় তাঁর কলম। তিনি হাঙ্গেরিয়ান ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই; সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০২৫ সালে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।
১৭ দিন আগেনিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

জনপ্রিয় কিশোর গোয়েন্দা সিরিজ তিন গোয়েন্দার স্রষ্টা রকিব হাসান মারা গেছেন। আজ বুধবার রাজধানীর একটি হাসপাতালে ডায়ালাইসিস চলাকালে তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।
রকিব হাসানের মৃত্যুর খবরটি নিশ্চিত করেছেন সেবা প্রকাশনীর উপদেষ্টা মাসুমা মায়মুর। তিনি সেবা প্রকাশনীর প্রতিষ্ঠাতা কাজী আনোয়ার হোসেনের ছোট ছেলে কাজী মায়মুর হোসেনের স্ত্রী।
মাসুমা মায়মুর ফেসবুকে লিখেছেন, ‘তিন গোয়েন্দা ও সেবা প্রকাশনীর পাঠকদেরকে আন্তরিক দুঃখের সাথে জানাচ্ছি যে, কিছুক্ষণ আগে রকিব হাসান সাহেব পরলোক গমন করেছেন। ডায়ালাইসিস চলাকালে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে ওনার জীবনাবসান ঘটে। আপনারা ওনার পবিত্র আত্মার মাগফেরাত কামনা করুন।’
১৯৫০ সালের ১২ ডিসেম্বর কুমিল্লায় জন্মগ্রহণ করেন রকিব হাসান। বাবার চাকরির কারণে শৈশব কেটেছে ফেনীতে। সেখান থেকে স্কুলজীবন শেষ করে ভর্তি হন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজে। পড়াশোনা শেষে বিভিন্ন চাকরিতে যুক্ত হলেও অফিসের বাঁধাধরা জীবনে তাঁর মন টেকেনি। অবশেষে তিনি লেখালেখিকে বেছে নেন জীবনের একমাত্র পথ হিসেবে।

সেবা প্রকাশনী থেকে তাঁর লেখকজীবনের সূচনা হয়। প্রথমদিকে বিশ্বসেরা ক্ল্যাসিক বই অনুবাদ করে লেখালেখির জগতে প্রবেশ করেন তিনি। এরপর টারজান, গোয়েন্দা রাজু, রেজা-সুজা সিরিজসহ চার শতাধিক জনপ্রিয় বই লেখেন। তবে তাঁর পরিচয়ের সবচেয়ে বড় জায়গা হলো তিন গোয়েন্দা সিরিজ। এই সিরিজ বাংলাদেশের অসংখ্য কিশোর-কিশোরীর কৈশোরের সঙ্গী।
মূলত রবার্ট আর্থারের থ্রি ইনভেস্টিগেটরস সিরিজ অবলম্বনে তিন গোয়েন্দার সূচনা হয়। তবে রকিব হাসানের লেখনশৈলীতে এটি পেয়েছে একেবারে নতুন রূপ। বাংলাদেশি সাহিত্য হয়ে উঠেছে এটি। এই সিরিজের মাধ্যমে তিনি হয়ে ওঠেন হাজারো কিশোর পাঠকের প্রিয় লেখক।
নিজ নামে লেখার পাশাপাশি তিনি ব্যবহার করেছেন বিভিন্ন ছদ্মনাম। শামসুদ্দীন নওয়াব নামে তিনি অনুবাদ করেছিলেন জুল ভার্নের বইগুলো।
বাংলাদেশের পাঠকদের কাছে রকিব হাসান শুধু একজন গোয়েন্দা লেখক নন, তিনি কয়েক প্রজন্মের শৈশব-কৈশোরের ভালোবাসার মানুষ।

জনপ্রিয় কিশোর গোয়েন্দা সিরিজ তিন গোয়েন্দার স্রষ্টা রকিব হাসান মারা গেছেন। আজ বুধবার রাজধানীর একটি হাসপাতালে ডায়ালাইসিস চলাকালে তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।
রকিব হাসানের মৃত্যুর খবরটি নিশ্চিত করেছেন সেবা প্রকাশনীর উপদেষ্টা মাসুমা মায়মুর। তিনি সেবা প্রকাশনীর প্রতিষ্ঠাতা কাজী আনোয়ার হোসেনের ছোট ছেলে কাজী মায়মুর হোসেনের স্ত্রী।
মাসুমা মায়মুর ফেসবুকে লিখেছেন, ‘তিন গোয়েন্দা ও সেবা প্রকাশনীর পাঠকদেরকে আন্তরিক দুঃখের সাথে জানাচ্ছি যে, কিছুক্ষণ আগে রকিব হাসান সাহেব পরলোক গমন করেছেন। ডায়ালাইসিস চলাকালে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে ওনার জীবনাবসান ঘটে। আপনারা ওনার পবিত্র আত্মার মাগফেরাত কামনা করুন।’
১৯৫০ সালের ১২ ডিসেম্বর কুমিল্লায় জন্মগ্রহণ করেন রকিব হাসান। বাবার চাকরির কারণে শৈশব কেটেছে ফেনীতে। সেখান থেকে স্কুলজীবন শেষ করে ভর্তি হন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজে। পড়াশোনা শেষে বিভিন্ন চাকরিতে যুক্ত হলেও অফিসের বাঁধাধরা জীবনে তাঁর মন টেকেনি। অবশেষে তিনি লেখালেখিকে বেছে নেন জীবনের একমাত্র পথ হিসেবে।

সেবা প্রকাশনী থেকে তাঁর লেখকজীবনের সূচনা হয়। প্রথমদিকে বিশ্বসেরা ক্ল্যাসিক বই অনুবাদ করে লেখালেখির জগতে প্রবেশ করেন তিনি। এরপর টারজান, গোয়েন্দা রাজু, রেজা-সুজা সিরিজসহ চার শতাধিক জনপ্রিয় বই লেখেন। তবে তাঁর পরিচয়ের সবচেয়ে বড় জায়গা হলো তিন গোয়েন্দা সিরিজ। এই সিরিজ বাংলাদেশের অসংখ্য কিশোর-কিশোরীর কৈশোরের সঙ্গী।
মূলত রবার্ট আর্থারের থ্রি ইনভেস্টিগেটরস সিরিজ অবলম্বনে তিন গোয়েন্দার সূচনা হয়। তবে রকিব হাসানের লেখনশৈলীতে এটি পেয়েছে একেবারে নতুন রূপ। বাংলাদেশি সাহিত্য হয়ে উঠেছে এটি। এই সিরিজের মাধ্যমে তিনি হয়ে ওঠেন হাজারো কিশোর পাঠকের প্রিয় লেখক।
নিজ নামে লেখার পাশাপাশি তিনি ব্যবহার করেছেন বিভিন্ন ছদ্মনাম। শামসুদ্দীন নওয়াব নামে তিনি অনুবাদ করেছিলেন জুল ভার্নের বইগুলো।
বাংলাদেশের পাঠকদের কাছে রকিব হাসান শুধু একজন গোয়েন্দা লেখক নন, তিনি কয়েক প্রজন্মের শৈশব-কৈশোরের ভালোবাসার মানুষ।

ফরাসি কথাসাহিত্যিক আনি এরনো ১৯৯১ সালে প্রকাশ করেছিলেন তাঁর উপন্যাস ‘সহজ কামনা’ (প্যাশন সিম্পল)। ইংরেজিতে অনূদিত হয়ে এটি প্রকাশিত হয় ১৯৯৩ সালে। নিউইয়র্ক টাইমস পত্রিকায় বইটির আলোচনা প্রসঙ্গে লেখা হয়েছিল: কেবল ফ্রান্সেই এ রকম একটি ক্ষুদ্রাবয়ব আত্মজৈবনিক উপন্যাস পাঠকের কাছে সমাদৃত হতে পারে।
০৮ অক্টোবর ২০২২
জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল।
৬ দিন আগে
হাঙ্গেরির ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই এবার (২০২৫ সালে) সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন তাঁর দীর্ঘ, দার্শনিক বাক্য ও মানবজীবনের বিশৃঙ্খলার গভীর অনুসন্ধানী সাহিত্যকর্মের জন্য। সুইডিশ একাডেমি তাঁকে সম্মান জানিয়েছে ‘শিল্পের শক্তিকে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করার’ জন্য।
১৭ দিন আগে
হাঙ্গেরির সাহিত্যে অসীম জনপ্রিয়তা ও প্রভাব তাঁর; বিশ্বজোড়া আতঙ্ক ও সন্ত্রাসের দাপটেও শিল্পের শক্তি চেনায় তাঁর কলম। তিনি হাঙ্গেরিয়ান ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই; সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০২৫ সালে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।
১৭ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

হাঙ্গেরির ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই এবার (২০২৫ সালে) সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন তাঁর দীর্ঘ, দার্শনিক বাক্য ও মানবজীবনের বিশৃঙ্খলার গভীর অনুসন্ধানী সাহিত্যকর্মের জন্য। সুইডিশ একাডেমি তাঁকে সম্মান জানিয়েছে ‘শিল্পের শক্তিকে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করার’ জন্য। লেখক সুসান সনটাগ অবশ্য তাঁকে একসময় ‘মহাপ্রলয়ের হাঙ্গেরিয়ান গুরু’ আখ্যা দিয়েছিলেন।
সাহিত্যজগতে অনেকের কাছে ক্রাসনাহোরকাইয়ের নোবেল পাওয়ার এই ঘোষণাটি যেন কয়েক দশক ধরে চলা একটি বাক্যের সমাপ্তি।
১৯৫৪ সালে হাঙ্গেরির ছোট শহর জিউলা-তে জন্ম নেওয়া ক্রাসনাহোরকাই ১৯৮০-এর দশকের শুরুতে গল্প লেখা শুরু করেন। তাঁর প্রথম উপন্যাস স্যাটানট্যাঙ্গো (১৯৮৫) একটি বৃষ্টিস্নাত, ধ্বংসপ্রায় গ্রামের কাহিনি—যেখানে প্রতারক, মাতাল ও হতাশ মানুষেরা মিথ্যা আশায় আঁকড়ে থাকে। পরিচালক বেলা-তার তাঁর এই উপন্যাসটিকে দীর্ঘ ৭ ঘণ্টার এক সাদাকালো চলচ্চিত্রে রূপ দেন। এই বইতেই ধরা পড়ে ক্রাসনাহোরকাইয়ের লেখার বৈশিষ্ট্যসমূহ, যেমন—অবিরাম দীর্ঘ বাক্য, দার্শনিক হাস্যরস ও পতনের কিনারায় দাঁড়িয়ে থাকা মানুষের প্রতিচ্ছবি।
তাঁর পরবর্তী উপন্যাসগুলো—দ্য মেলানকোলি অব রেজিস্ট্যান্স (১৯৮৯), ওয়ার অ্যান্ড ওয়ার (১৯৯৯) ও সেইবো দেয়ার বিলো (২০০৮)—তাঁর এই দৃষ্টিভঙ্গিকে মহাজাগতিক পরিসরে বিস্তৃত করেছে। ‘ওয়ার অ্যান্ড ওয়ার’–এ তিনি এক নথি প্রহরীর গল্প বলেছেন, যিনি রহস্যময় এক পাণ্ডুলিপি প্রকাশ করতে নিউইয়র্কে পালিয়ে যান এবং আত্মহত্যা করেন—যেন ক্রম বিলীন পৃথিবীতে অর্থ ধরে রাখার এক মরিয়া চেষ্টা তাঁর।
ক্রাসনাহোরকাইয়ের লেখায় কাহিনি প্রায় সময়ই বাক্যের ভেতর হারিয়ে যায়। তিনি লিখেছেন এমন বাক্য, যা একাধিক পৃষ্ঠা জুড়ে পাঠককে টেনে নেয় অবচেতনে, অবিরাম প্রবাহে।
তাঁর সাহিত্যে হাস্যরস ও ট্র্যাজেডি পাশাপাশি চলে। স্যাটানট্যাঙ্গো–এর মাতাল নাচের দৃশ্য যেমন নিঃশেষের প্রতীক, তেমনি ‘ব্যারন ওয়েঙ্কহাইমস হোমকামিং’ (২০১৬)-এ দেখা যায়, ফিরে আসা এক পরাজিত অভিজাতকে। যার মাধ্যমে প্রকাশ পায় সভ্যতার পচন ও মানুষের হাস্যকর ভ্রান্তি।
২০১৫ সালে ম্যান বুকার পুরস্কার পাওয়ার মধ্য দিয়েই প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পান ক্রাসনাহোরকাই। অনুবাদক জর্জ সির্টেস ও ওটিলি মুলজেট তাঁর জটিল হাঙ্গেরিয়ান ভাষাকে ইংরেজিতে রূপ দিতে বিশেষ ভূমিকা রাখেন। ‘হাডসন রিভিউ’ তাঁকে বর্ণনা করেছিল ‘অন্তহীন বাক্যের ভ্রমণশিল্পী’ হিসেবে।
চল্লিশ বছরের সৃষ্টিতে ক্রাসনাহোরকাইয়ের ভুবন চিত্র, সংগীত, দর্শন ও ভাষার মিলনে বিস্তৃত। সাম্প্রতিক উপন্যাস ‘হার্শট ০৭৭৬৯’ (২০২৪)–এ তিনি এক প্রবাহিত বাক্যে লিখেছেন নব্য-নাৎসি, নেকড়ে আর এক হতভাগ্য পদার্থবিদের কাহিনি—আধুনিক ইউরোপের নৈতিক পক্ষাঘাতের রূপক হিসেবে।
তাঁর সমগ্র সাহিত্যজগৎ এক অন্ধকার ও ধ্যানমগ্ন মহাবিশ্ব—যেখানে পতন, শূন্যতা ও করুণা পাশাপাশি থাকে। ‘সেইবো দেয়ার বিলো’ বইটিতে তিনি লিখেছেন, ‘সৌন্দর্য, যত ক্ষণস্থায়ীই হোক না কেন, তা পবিত্রতার প্রতিবিম্ব।’ এই বিশ্বাসই লাসলো ক্রাসনাহোরকাইকে সেই বিরল লেখক করে তুলেছে, যাঁর নৈরাশ্যও মুক্তির মতো দীপ্ত।

হাঙ্গেরির ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই এবার (২০২৫ সালে) সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন তাঁর দীর্ঘ, দার্শনিক বাক্য ও মানবজীবনের বিশৃঙ্খলার গভীর অনুসন্ধানী সাহিত্যকর্মের জন্য। সুইডিশ একাডেমি তাঁকে সম্মান জানিয়েছে ‘শিল্পের শক্তিকে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করার’ জন্য। লেখক সুসান সনটাগ অবশ্য তাঁকে একসময় ‘মহাপ্রলয়ের হাঙ্গেরিয়ান গুরু’ আখ্যা দিয়েছিলেন।
সাহিত্যজগতে অনেকের কাছে ক্রাসনাহোরকাইয়ের নোবেল পাওয়ার এই ঘোষণাটি যেন কয়েক দশক ধরে চলা একটি বাক্যের সমাপ্তি।
১৯৫৪ সালে হাঙ্গেরির ছোট শহর জিউলা-তে জন্ম নেওয়া ক্রাসনাহোরকাই ১৯৮০-এর দশকের শুরুতে গল্প লেখা শুরু করেন। তাঁর প্রথম উপন্যাস স্যাটানট্যাঙ্গো (১৯৮৫) একটি বৃষ্টিস্নাত, ধ্বংসপ্রায় গ্রামের কাহিনি—যেখানে প্রতারক, মাতাল ও হতাশ মানুষেরা মিথ্যা আশায় আঁকড়ে থাকে। পরিচালক বেলা-তার তাঁর এই উপন্যাসটিকে দীর্ঘ ৭ ঘণ্টার এক সাদাকালো চলচ্চিত্রে রূপ দেন। এই বইতেই ধরা পড়ে ক্রাসনাহোরকাইয়ের লেখার বৈশিষ্ট্যসমূহ, যেমন—অবিরাম দীর্ঘ বাক্য, দার্শনিক হাস্যরস ও পতনের কিনারায় দাঁড়িয়ে থাকা মানুষের প্রতিচ্ছবি।
তাঁর পরবর্তী উপন্যাসগুলো—দ্য মেলানকোলি অব রেজিস্ট্যান্স (১৯৮৯), ওয়ার অ্যান্ড ওয়ার (১৯৯৯) ও সেইবো দেয়ার বিলো (২০০৮)—তাঁর এই দৃষ্টিভঙ্গিকে মহাজাগতিক পরিসরে বিস্তৃত করেছে। ‘ওয়ার অ্যান্ড ওয়ার’–এ তিনি এক নথি প্রহরীর গল্প বলেছেন, যিনি রহস্যময় এক পাণ্ডুলিপি প্রকাশ করতে নিউইয়র্কে পালিয়ে যান এবং আত্মহত্যা করেন—যেন ক্রম বিলীন পৃথিবীতে অর্থ ধরে রাখার এক মরিয়া চেষ্টা তাঁর।
ক্রাসনাহোরকাইয়ের লেখায় কাহিনি প্রায় সময়ই বাক্যের ভেতর হারিয়ে যায়। তিনি লিখেছেন এমন বাক্য, যা একাধিক পৃষ্ঠা জুড়ে পাঠককে টেনে নেয় অবচেতনে, অবিরাম প্রবাহে।
তাঁর সাহিত্যে হাস্যরস ও ট্র্যাজেডি পাশাপাশি চলে। স্যাটানট্যাঙ্গো–এর মাতাল নাচের দৃশ্য যেমন নিঃশেষের প্রতীক, তেমনি ‘ব্যারন ওয়েঙ্কহাইমস হোমকামিং’ (২০১৬)-এ দেখা যায়, ফিরে আসা এক পরাজিত অভিজাতকে। যার মাধ্যমে প্রকাশ পায় সভ্যতার পচন ও মানুষের হাস্যকর ভ্রান্তি।
২০১৫ সালে ম্যান বুকার পুরস্কার পাওয়ার মধ্য দিয়েই প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পান ক্রাসনাহোরকাই। অনুবাদক জর্জ সির্টেস ও ওটিলি মুলজেট তাঁর জটিল হাঙ্গেরিয়ান ভাষাকে ইংরেজিতে রূপ দিতে বিশেষ ভূমিকা রাখেন। ‘হাডসন রিভিউ’ তাঁকে বর্ণনা করেছিল ‘অন্তহীন বাক্যের ভ্রমণশিল্পী’ হিসেবে।
চল্লিশ বছরের সৃষ্টিতে ক্রাসনাহোরকাইয়ের ভুবন চিত্র, সংগীত, দর্শন ও ভাষার মিলনে বিস্তৃত। সাম্প্রতিক উপন্যাস ‘হার্শট ০৭৭৬৯’ (২০২৪)–এ তিনি এক প্রবাহিত বাক্যে লিখেছেন নব্য-নাৎসি, নেকড়ে আর এক হতভাগ্য পদার্থবিদের কাহিনি—আধুনিক ইউরোপের নৈতিক পক্ষাঘাতের রূপক হিসেবে।
তাঁর সমগ্র সাহিত্যজগৎ এক অন্ধকার ও ধ্যানমগ্ন মহাবিশ্ব—যেখানে পতন, শূন্যতা ও করুণা পাশাপাশি থাকে। ‘সেইবো দেয়ার বিলো’ বইটিতে তিনি লিখেছেন, ‘সৌন্দর্য, যত ক্ষণস্থায়ীই হোক না কেন, তা পবিত্রতার প্রতিবিম্ব।’ এই বিশ্বাসই লাসলো ক্রাসনাহোরকাইকে সেই বিরল লেখক করে তুলেছে, যাঁর নৈরাশ্যও মুক্তির মতো দীপ্ত।

ফরাসি কথাসাহিত্যিক আনি এরনো ১৯৯১ সালে প্রকাশ করেছিলেন তাঁর উপন্যাস ‘সহজ কামনা’ (প্যাশন সিম্পল)। ইংরেজিতে অনূদিত হয়ে এটি প্রকাশিত হয় ১৯৯৩ সালে। নিউইয়র্ক টাইমস পত্রিকায় বইটির আলোচনা প্রসঙ্গে লেখা হয়েছিল: কেবল ফ্রান্সেই এ রকম একটি ক্ষুদ্রাবয়ব আত্মজৈবনিক উপন্যাস পাঠকের কাছে সমাদৃত হতে পারে।
০৮ অক্টোবর ২০২২
জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল।
৬ দিন আগে
জনপ্রিয় কিশোর গোয়েন্দা সিরিজ তিন গোয়েন্দার স্রষ্টা রকিব হাসান মারা গেছেন। আজ বুধবার রাজধানীর একটি হাসপাতালে ডায়ালাইসিস চলাকালে তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।
১১ দিন আগে
হাঙ্গেরির সাহিত্যে অসীম জনপ্রিয়তা ও প্রভাব তাঁর; বিশ্বজোড়া আতঙ্ক ও সন্ত্রাসের দাপটেও শিল্পের শক্তি চেনায় তাঁর কলম। তিনি হাঙ্গেরিয়ান ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই; সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০২৫ সালে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।
১৭ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

হাঙ্গেরির সাহিত্যে অসীম জনপ্রিয়তা ও প্রভাব তাঁর; বিশ্বজোড়া আতঙ্ক ও সন্ত্রাসের দাপটেও শিল্পের শক্তি চেনায় তাঁর কলম। তিনি হাঙ্গেরিয়ান ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই; সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০২৫ সালে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।
আধুনিক হাঙ্গেরীয় সাহিত্যের একজন অন্যতম প্রধান ব্যক্তিত্ব লাসলো। অভিনব শৈলীর পাশাপাশি দার্শনিক গভীরতার জন্য তাঁর সাহিত্য সমাদৃত হয়েছে। তাঁকে ফ্রানৎস কাফকা ও স্যামুয়েল বেকেটের ঐতিহ্যের উত্তরাধিকারী হিসেবে বিবেচনা করা হয়। বিশ্বজোড়া আতঙ্ক ও সন্ত্রাসের মধ্যেও শিল্পের লেলিহান ঔজ্জ্বল্য ফুটে ওঠে লাসলোর লেখায়। তাই যুদ্ধবিধ্বস্ত সময়ের বুকে ফুলের মতো স্থান করে নিল তাঁর সাহিত্য।
লাসলোর জন্য সাহিত্যে এটা প্রথম পুরস্কার নয়, ২০১৪ সালে সাহিত্যকর্মের জন্য ম্যান বুকার ইন্টারন্যাশনাল পুরস্কার পান তিনি। এ পুরস্কার বিশ্বসাহিত্যে তাঁর অবস্থানকে সুদৃঢ় করে।
লাসলোর সাহিত্যের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো—স্বতন্ত্র শৈলী ও গঠন। উপন্যাসের মূল বিষয়বস্তু হলো—মানবতার অবক্ষয়, ধ্বংসের অনিবার্যতা ও আধুনিক জীবনের লক্ষ্যহীন চলন। তাঁর চরিত্রদের মধ্যে প্রায়ই একধরনের হতাশা ও বিচ্ছিন্নতা দেখা যায়; তারা এমন এক জগতের পথিক, যেখানে নৈতিকতা ও আশা বিলীনপ্রায়।
১৯৮৫ সালে প্রকাশিত ‘স্যাটানটাঙ্গো’ নামে প্রথম উপন্যাস লিখেই খ্যাতি পান লাসলো। এই উপন্যাসে বিচ্ছিন্ন ও পতিত এক কৃষি সমবায় গ্রামের জীবন তুলে ধরেছেন তিনি। সেখানে একধরনের বিভ্রম ও আশার জন্ম দেয় এক রহস্যময় আগন্তুকের আগমনে। এই উপন্যাস অবলম্বনে একই শিরোনামে সাত ঘণ্টার কালজয়ী চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন বিখ্যাত পরিচালক বেলা টর।
লাসলোর আরেকটি ফিকশন উপন্যাস হলো— ‘দ্য মেলানকোলি অব রেজিস্ট্যান্স’। হাঙ্গেরির এক কাল্পনিক শহরের জীবন ফুটে উঠেছে এই উপন্যাসে। সামুদ্রিক প্রাণী হাঙরের প্রদর্শনীকে কেন্দ্র করে মানুষের মধ্যকার উন্মাদনা, সামাজিক বিশৃঙ্খলা ও একনায়কতন্ত্রের উত্থানের চিত্র আঁকা হয়েছে তাতে।
‘ওয়ার অ্যান্ড ওয়ার’ লাসলোর আরেকটি বিখ্যাত উপন্যাস। লম্বা লম্বা বাক্যে লেখা এই উপন্যাস লাসলোর শৈলী নিয়ে পাঠকদের নতুন করে ভাবায়। উপন্যাসের নায়ক একটি পাণ্ডুলিপি রক্ষা করার জন্য বিশ্বের বিভিন্ন শহর ঘুরে বেড়ায়। বিশ্বের চূড়ান্ত ধ্বংসের একটি কাব্যিক বর্ণনা পাওয়া যায় এই উপন্যাসে।
এবার লাসলোকে পুরস্কারের জন্য মনোনীত করার নেপথ্যে নোবেল কমিটির বড় কারণ ছিল তাঁর সাহিত্যে শিল্পের জয়ধ্বনি তোলার প্রচেষ্টা। যখন সারা বিশ্বের বেশ কিছু দেশ যুদ্ধবিধ্বস্ত বা যুদ্ধের জন্য উৎসুক, তখন বারবার শিল্পের মোহিনী প্রেম ও বন্ধনের কথা মনে করিয়ে দিতে চায় লাসলোর সাহিত্য।

হাঙ্গেরির সাহিত্যে অসীম জনপ্রিয়তা ও প্রভাব তাঁর; বিশ্বজোড়া আতঙ্ক ও সন্ত্রাসের দাপটেও শিল্পের শক্তি চেনায় তাঁর কলম। তিনি হাঙ্গেরিয়ান ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই; সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০২৫ সালে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।
আধুনিক হাঙ্গেরীয় সাহিত্যের একজন অন্যতম প্রধান ব্যক্তিত্ব লাসলো। অভিনব শৈলীর পাশাপাশি দার্শনিক গভীরতার জন্য তাঁর সাহিত্য সমাদৃত হয়েছে। তাঁকে ফ্রানৎস কাফকা ও স্যামুয়েল বেকেটের ঐতিহ্যের উত্তরাধিকারী হিসেবে বিবেচনা করা হয়। বিশ্বজোড়া আতঙ্ক ও সন্ত্রাসের মধ্যেও শিল্পের লেলিহান ঔজ্জ্বল্য ফুটে ওঠে লাসলোর লেখায়। তাই যুদ্ধবিধ্বস্ত সময়ের বুকে ফুলের মতো স্থান করে নিল তাঁর সাহিত্য।
লাসলোর জন্য সাহিত্যে এটা প্রথম পুরস্কার নয়, ২০১৪ সালে সাহিত্যকর্মের জন্য ম্যান বুকার ইন্টারন্যাশনাল পুরস্কার পান তিনি। এ পুরস্কার বিশ্বসাহিত্যে তাঁর অবস্থানকে সুদৃঢ় করে।
লাসলোর সাহিত্যের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো—স্বতন্ত্র শৈলী ও গঠন। উপন্যাসের মূল বিষয়বস্তু হলো—মানবতার অবক্ষয়, ধ্বংসের অনিবার্যতা ও আধুনিক জীবনের লক্ষ্যহীন চলন। তাঁর চরিত্রদের মধ্যে প্রায়ই একধরনের হতাশা ও বিচ্ছিন্নতা দেখা যায়; তারা এমন এক জগতের পথিক, যেখানে নৈতিকতা ও আশা বিলীনপ্রায়।
১৯৮৫ সালে প্রকাশিত ‘স্যাটানটাঙ্গো’ নামে প্রথম উপন্যাস লিখেই খ্যাতি পান লাসলো। এই উপন্যাসে বিচ্ছিন্ন ও পতিত এক কৃষি সমবায় গ্রামের জীবন তুলে ধরেছেন তিনি। সেখানে একধরনের বিভ্রম ও আশার জন্ম দেয় এক রহস্যময় আগন্তুকের আগমনে। এই উপন্যাস অবলম্বনে একই শিরোনামে সাত ঘণ্টার কালজয়ী চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন বিখ্যাত পরিচালক বেলা টর।
লাসলোর আরেকটি ফিকশন উপন্যাস হলো— ‘দ্য মেলানকোলি অব রেজিস্ট্যান্স’। হাঙ্গেরির এক কাল্পনিক শহরের জীবন ফুটে উঠেছে এই উপন্যাসে। সামুদ্রিক প্রাণী হাঙরের প্রদর্শনীকে কেন্দ্র করে মানুষের মধ্যকার উন্মাদনা, সামাজিক বিশৃঙ্খলা ও একনায়কতন্ত্রের উত্থানের চিত্র আঁকা হয়েছে তাতে।
‘ওয়ার অ্যান্ড ওয়ার’ লাসলোর আরেকটি বিখ্যাত উপন্যাস। লম্বা লম্বা বাক্যে লেখা এই উপন্যাস লাসলোর শৈলী নিয়ে পাঠকদের নতুন করে ভাবায়। উপন্যাসের নায়ক একটি পাণ্ডুলিপি রক্ষা করার জন্য বিশ্বের বিভিন্ন শহর ঘুরে বেড়ায়। বিশ্বের চূড়ান্ত ধ্বংসের একটি কাব্যিক বর্ণনা পাওয়া যায় এই উপন্যাসে।
এবার লাসলোকে পুরস্কারের জন্য মনোনীত করার নেপথ্যে নোবেল কমিটির বড় কারণ ছিল তাঁর সাহিত্যে শিল্পের জয়ধ্বনি তোলার প্রচেষ্টা। যখন সারা বিশ্বের বেশ কিছু দেশ যুদ্ধবিধ্বস্ত বা যুদ্ধের জন্য উৎসুক, তখন বারবার শিল্পের মোহিনী প্রেম ও বন্ধনের কথা মনে করিয়ে দিতে চায় লাসলোর সাহিত্য।

ফরাসি কথাসাহিত্যিক আনি এরনো ১৯৯১ সালে প্রকাশ করেছিলেন তাঁর উপন্যাস ‘সহজ কামনা’ (প্যাশন সিম্পল)। ইংরেজিতে অনূদিত হয়ে এটি প্রকাশিত হয় ১৯৯৩ সালে। নিউইয়র্ক টাইমস পত্রিকায় বইটির আলোচনা প্রসঙ্গে লেখা হয়েছিল: কেবল ফ্রান্সেই এ রকম একটি ক্ষুদ্রাবয়ব আত্মজৈবনিক উপন্যাস পাঠকের কাছে সমাদৃত হতে পারে।
০৮ অক্টোবর ২০২২
জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল।
৬ দিন আগে
জনপ্রিয় কিশোর গোয়েন্দা সিরিজ তিন গোয়েন্দার স্রষ্টা রকিব হাসান মারা গেছেন। আজ বুধবার রাজধানীর একটি হাসপাতালে ডায়ালাইসিস চলাকালে তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।
১১ দিন আগে
হাঙ্গেরির ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই এবার (২০২৫ সালে) সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন তাঁর দীর্ঘ, দার্শনিক বাক্য ও মানবজীবনের বিশৃঙ্খলার গভীর অনুসন্ধানী সাহিত্যকর্মের জন্য। সুইডিশ একাডেমি তাঁকে সম্মান জানিয়েছে ‘শিল্পের শক্তিকে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করার’ জন্য।
১৭ দিন আগে