শাহাদুজ্জামান

সম্প্রতি প্রায় দেড় শ বছর পর বিলাতে রবীন্দ্রনাথের প্রথম ঠিকানাটি খুঁজে বের করা হলো এবং সেখানে বসানো হলো একটা ফলক। সুযোগ হলো সেই আয়োজনের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার। সে গল্পটাই শোনাই।
রবীন্দ্রনাথকে প্রথম বিলাতে পাঠানো হয়েছিল ১৮৭৮ সালে, ব্যারিস্টারি পড়তে। তখন তাঁর বয়স ১৭ বছর। তখনকার ভারতীয় অভিজাত পরিবারের অনেকেই বিলাতে ব্যারিস্টারি পড়তে আসতেন। সে সময়ে বিলাতের নানা শহরেই ঠাকুর পরিবারের বিভিন্ন সদস্য ছড়িয়ে ছিলেন। রবীন্দ্রনাথ উঠেছিলেন ব্রাইটন শহরে তাঁর এক আত্মীয়ের বাড়িতে। সে বাড়ি ব্রাইটন শহরেরই প্রান্তে হোভ এলাকায়। বাড়ির নাম ছিল ‘মেডিনা ভিলা’। পাঠক হিসেবে এ তথ্য জানা ছিল আমার। এ ব্যাপারে আমার বিশেষ কৌতূহল ছিল এই কারণে, এ শহরেই আমার কর্মস্থল সাসেক্স বিশ্ববিদ্যালয়। থাকি ব্রাইটনের গা-ঘেঁষা এক শহরে। নিত্যদিন বিলাতের যে শহরে আসা-যাওয়া করি, সে শহরের যে বাড়িটাতে রবীন্দ্রনাথ থেকেছেন, তার সামনে দাঁড়াবার ইচ্ছা জাগে। কিন্তু মেডিনা ভিলার খোঁজ কেউ দিতে পারে না। প্রথম বিলাতযাত্রার অভিজ্ঞতার কথা বলতে গিয়ে রবীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন, তিনি যখন জানলেন ব্রাইটনের মেডিনা ভিলা নামে এক বাড়িতে থাকবেন, তখন তিনি বেশ উত্তেজিত ছিলেন এই ভেবে, এ নিশ্চয়ই গাছগাছালি, পাখপাখালি ঘেরা এক বিশাল বাড়ি হবে। কিন্তু এসে হতাশ হয়েছিলেন। কারণ, সে বাড়িটা ছিল সারি বাঁধা অসংখ্য বাড়ির একটি মাত্র। এর আশপাশে গাছপালা বিশেষ ছিল না। তবে তাঁর একটাই সান্ত্বনা ছিল, বাড়িটা সমুদ্রের ধারে। এ ধরনের গায়ে গায়ে লাগোয়া বাড়ির সারিকে বিলাতে বলে ‘ট্যারেস হাউস’।
গাছগাছালি ভরা একক ভিলাও বিস্তর আছে। তবে ভারতে ধনবান হলেও বিলাতে তেমন বিলাসবহুল বাড়িতে থাকার সংগতি বা ইচ্ছা হয়তো ছিল না ঠাকুর পরিবারের। আর ব্রাইটন তো সমুদ্রেরই শহর। পাথুরে সৈকতে ভ্রমণ করতে সে দেশের নানা অঞ্চল থেকে মানুষ সুযোগ পেলেই চলে আসে ব্রাইটনে। বোঝা যায়, বাড়ির পাশের সমুদ্র রবীন্দ্রনাথের জন্য ছিল স্বস্তির। সেই সমুদ্রের পাড়ে আমি হাঁটি প্রায়ই, দেখি সমুদ্রের দিকে মুখ করা সারি সারি বাড়ি। কিন্তু এর মধ্যে কোনটা যে সেই বিশেষ বাড়ি, সেটা জানার তো উপায় নেই।
কিন্তু ভবের লীলা বলে কথা। কাকতালীয় ঘটনা ঘটে একদিন। আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সহকর্মীর সুবাদে ঘটনাক্রমে একদিন পরিচয় ঘটে ব্রাইটনবাসী ব্রিটিশ বাউলবিষয়ক গবেষক জান ওপেনশের (Jeanne Openshow) সঙ্গে। তাঁর নামের উচ্চারণ ঠিক কী হবে, এ নিয়ে দ্বিধান্বিত ছিলাম। জিজ্ঞেস করাতে চমৎকার বাংলা বলতে পারা ওই ব্রিটিশ নারী ঠাট্টা করে বললেন, ‘জান আমার নাম। প্রাণের কথা মনে থাকলে জানের কথাও মনে থাকবে।’ জান বেশির ভাগ সময়ই গবেষণার কাজে শান্তিনিকেতনের কাছে বোলপুরে থাকেন। মাঝে মাঝে ব্রাইটনে আসেন তাঁর বাড়িতে। পরে দেখেছি বাউলদের ওপর Seeking Baul’s of Bengal নামে চমৎকার গবেষণামূলক বই আছে জানের। তাঁকে রবীন্দ্রনাথের বাড়ির প্রসঙ্গ তুলতেই বললেন, ‘আমি ব্রাইটনবাসী, থাকি শান্তিনিকেতনে আর রবীন্দ্রনাথের ব্রাইটের বাড়ি নিয়ে আমার কৌতূহল থাকবে না, তা কি হয়?’ তারপর জান আমাকে জানালেন অভিযানের বিস্তারিত কাহিনি এবং আমাদের এই পরিচয় যে বেশ এক অদ্ভুত কাকতালীয় মুহূর্তে ঘটল, জানালেন সেটাও।
ঘটনা এই, আমার মতোই জান দীর্ঘদিন হোভের সেই মেডিনা ভিলা খুঁজে বেরিয়েছেন। রবীন্দ্রনাথ তাঁর স্মৃতিচারণায় মেডিনা ভিলা নাম লিখলেও তার কোনো সুনির্দিষ্ট ঠিকানা লেখেননি। জান এই শহরের পুরোনো নথিপত্র ঘেঁটেও এই বাড়ির কোনো হদিস করতে পারেননি। হয়তো ভেঙেই ফেলা হয়েছে সেই বাড়ি। কিন্তু জান নাছোড়বান্দা। তাঁরই শহরে রবীন্দ্রনাথ দিন কাটিয়ে গেছেন অথচ রবীন্দ্রনাথের কোনো স্মৃতিচিহ্ন এই শহরে থাকবে না, সেটা তিনি মানতে পারছিলেন না। জান তখন বিকল্প পথ ধরলেন। রবীন্দ্রনাথের স্মৃতিচারণ থেকে জানা গেছে, ব্যারিস্টারি পড়ার প্রস্তুতি হিসেবে তাঁকে প্রথম ভর্তি করানো হয়েছিল ব্রাইটন প্রিপারেটরি নামে একটা স্কুলে। তিনি সেই স্কুলের সন্ধানে নামলেন। সে স্কুল এখন নেই কিন্তু স্কুলটির ইতিহাস পাওয়া গেল। জানা গেল সেই স্কুলের নির্দিষ্ট ঠিকানাও। স্কুলটি ছিল ব্রাইটন শহরের একেবারে কেন্দ্রেই, ৭ নম্বর শিপ স্ট্রিটে। সেই ঠিকানায় গিয়ে দেখতে পেলেন এখন সেটা একটা পুরোদস্তুর চার তারকা হোটেল, নাম ডু ভিন। হোটেল কর্তৃপক্ষ ইতিহাসের স্বার্থে সেই স্কুলের একটা ক্লাসরুম এবং কিছু অংশ গত শতাব্দীর মতোই অবশ্য অক্ষত রেখেছে। জান এই আবিষ্কারে যারপরনাই উত্তেজিত। হোটেল কর্তৃপক্ষকে এই তথ্য দেওয়াতে তাদের ভেতর বিশেষ কোনো ভাবান্তর দেখা গেল না।

কারণ, রবীন্দ্রনাথ বলে কারও নাম তারা কখনো শোনেনি। এরপর শুরু হলো জানের ভিন্নতর যাত্রা। তিনি ঠিক করলেন রবীন্দ্রনাথের বাড়ি যখন পাওয়া গেল না, এই স্কুলটিতেই তিনি রবীন্দ্রনাথের একটা ফলক বসাবেন। ইউরোপের কোনো শহরে জগৎখ্যাত কোনো ব্যক্তির পদচারণা থাকলে সেখানে একটা ফলক লাগিয়ে তাঁকে স্মরণ করার রেওয়াজ আছে। কিন্তু জান চাইলেই তো আর ব্যক্তিগতভাবে এমন একটা ফলক বসিয়ে দিতে পারেন না। শহরের কর্তৃপক্ষের অনুমোদন লাগে। সে নানা জটিল প্রক্রিয়া। জান ব্রাইটন শহরের মেয়রের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাঁর এই প্রস্তাব দিতে মেয়র সাহেব টেগোর নামটিকে খানিকটা স্মরণ করতে পারলেও তার গুরুত্ব ঠিক অনুধাবন করলেন না। বলা বাহুল্য, ভারত বিষয়ে উৎসাহী কিছু মানুষের বাইরে রবীন্দ্রনাথ সাম্প্রতিক ইউরোপের কোনো পরিচিত নাম নন। কিন্তু জান মেয়রকে নানা রকম তথ্য সরবরাহ করতে থাকেন।
মেয়র নিজেও তখন খোঁজখবর করতে শুরু করেন। তিনি জানতে পারেন, ইউরোপের বাইরে তিনিই প্রথম নোবেল বিজয়ী। আরও জানতে পারেন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধপূর্ব টালমাটাল ইউরোপে রবীন্দ্রনাথ ছিলেন রীতিমতো এক তারকা ব্যক্তিত্ব। একপর্যায়ে ব্রাইটনের মেয়র নিজেই উদ্যোগী হন রবীন্দ্রনাথের ওপর তাঁর শহরে একটা ফলক বসানোর ব্যাপারে। তিনি এর মাধ্যমে তাঁর শহরের একটা পর্যটন গুরুত্বও অনুধাবন করেন। ইতিমধ্যে খোঁজখবর নিয়ে ৭ শিপ রোডের ‘ডু ভিন’ হোটেল কর্তৃপক্ষও এ ব্যাপারে উৎসাহী হয়ে ওঠে। তারা টের পায় এতে করে মুহূর্তে তাদের এই সাধারণ হোটেলটি পেয়ে যাবে ঐতিহাসিক গুরুত্ব। মেয়র ঘোষণা দেন, বিশেষ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তিনিই এই ফলক উন্মোচন করবেন। মেয়র জানকেই অনুরোধ করেন এই অনুষ্ঠানের সার্বিক দায়িত্ব নিতে এবং জানান, তাঁকে সব রকম প্রশাসনিক এবং আর্থিক সহায়তা দেবেন। জান ব্যাপক উৎসাহে নেমে পড়েন অনুষ্ঠান আয়োজনে। আমার সঙ্গে জানের পরিচয় সেই কাকতালীয় মুহূর্তে, যখন তিনি এই অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এ-ও জানলাম, সেই ফলক উন্মোচনের তারিখ পরের মাসেই।
পুরো বিষয়টার এই অদ্ভুত সমাপতনে আমি স্বভাবতই আনন্দিত, বিস্মিত। কিন্তু জানতাম না, আরও বিস্ময় অপেক্ষা করছে আমার জন্য। পরিচয়ের পরের সপ্তাহেই জানের কাছ থেকে মেইল পেলাম। জান আমাকে আমন্ত্রণ জানালেন সেই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিতে। আমার সহকর্মী মারফত এবং অন্যান্য সূত্র থেকে ইতিমধ্যে আমার লেখক পরিচয়ের খোঁজ পেয়ে গেছেন জান। তিনি জানালেন, অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেবেন লন্ডনের টেগোর সেন্টারের পরিচালক ড. কল্যাণ কুণ্ডু। অনুষ্ঠানের ফলক উন্মোচন করবেন ব্রাইটনের মেয়র, আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে ব্রিটেনে বাংলাদেশ ও ভারতের দুই হাইকমিশনারকে। জান বললেন, ব্রাইটনবাসী বাংলাদেশি একজন লেখক হিসেবে আমার এ অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখা প্রাসঙ্গিক হবে। এ আমন্ত্রণকে আমি বিশেষ সম্মান হিসেবেই গ্রহণ করি এবং সাগ্রহে রাজি হই অনুষ্ঠানে অংশ নিতে। অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করি সেই দিনটির।
অবশেষে ২০২১ সালের ২৮ অক্টোবর হয় সেই ফলক উন্মোচন অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানের দিনের নির্ধারিত সময়ের আগেই এসে হাজির হই ৭ শিপ স্ট্রিটে। একটা চাপা উত্তেজনায় হোটেলের করিডর দিয়ে ধীরে ঢুকে পড়ি অক্ষত রাখা শতাব্দীপ্রাচীন সেই স্কুলের ক্লাসরুমে। আজ থেকে প্রায় দেড় শ বছর আগে এই ক্লাসরুমেই বসে থাকা কিশোর রবীন্দ্রনাথের কথা ভাবি। এই স্কুলে কয়েক মাস পড়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ। পড়াশোনায় বিশেষ অগ্রগতি হচ্ছিল না দেখে তাঁকে পরে নিয়ে যাওয়া হয় লন্ডনে। রবীন্দ্রনাথের প্রথম বিলাত ভ্রমণে যে বিচিত্র অভিজ্ঞতা হয়েছিল, তার সবই সুখকর ছিল না। তবে এই ব্রাইটন প্রিপারেটরি স্কুল নিয়ে আনন্দের স্মৃতির কথাই লিখেছেন তিনি। লিখেছেন, এই স্কুলের ছেলেরা তাঁর সঙ্গে কোনো দুর্ব্যবহার করেনি বরং মাঝে মাঝে তাঁর কোটের পকেটে আপেল কিংবা কমলা গুঁজে দিয়ে দৌড়ে পালিয়েছে।
ব্রিটিশ কায়দায় অর্কেস্ট্রা বাজিয়ে, পতাকা তুলে মেয়র উন্মোচন করলেন রবীন্দ্রনাথের স্মৃতিফলক। তারপর ব্রাইটনের সেই রাজপথে হঠাৎ যেন জমল এক মিলনমেলা। সমবেত ব্রিটিশ, ভারতীয়, বাংলাদেশি অধিকাংশই একে অন্যকে চেনেন না কিন্তু এক জায়গায় তাঁদের আত্মার মিল। তাঁরা সবাই রবীন্দ্রপ্রেমী। তাঁরা আলাপ জুড়লেন। এক বয়স্ক ব্রিটিশ নারী উৎসাহে আমার দিকে এগিয়ে এসে বললেন, তিনি আমাকে একটা জিনিস দেখাতে চান। তিনি তাঁর ব্যাগ থেকে একটা বই বের করলেন। দেখলাম রবীন্দ্রনাথের গীতাঞ্জলির অনুবাদের বহু পুরোনো একটা সংস্করণ। জানালেন, এটি বইয়ের প্রথম সংস্করণ। এরপর তিনি বইটির প্রথম পৃষ্ঠা উল্টে আমাকে দেখালেন কালো কালিতে উজ্জ্বল রবীন্দ্রনাথের হাতে লেখা স্বাক্ষর। মহিলা বললেন, এই বই পারিবারিক সম্পদ হিসেবে তাঁরা সংরক্ষণ করছেন প্রজন্মের পর প্রজন্ম। ফাউন্টেন কলমে লেখা রবীন্দ্রনাথের অটোগ্রাফটি একটু ম্লান হয়েছে, আমি হাত দিয়ে ছুঁয়ে দেখলাম। মিলনমেলা ভাঙলে ফিরতি পথে ব্রাইটনের সমুদ্রপাড়ে হাঁটি।
গায়ে এসে লাগে সমুদ্রের হাওয়া। বিদেশ-বিভূঁইয়ের এই অচেনা সৈকতে তাঁর গানই জেগে ওঠে মনে: ‘আমার তরী ছিল চেনার কূলে, বাঁধন যে তার গেল খুলে/তারে হাওয়ায় হাওয়ায় নিয়ে গেল কোন্ অচেনার ধারে।।’

সম্প্রতি প্রায় দেড় শ বছর পর বিলাতে রবীন্দ্রনাথের প্রথম ঠিকানাটি খুঁজে বের করা হলো এবং সেখানে বসানো হলো একটা ফলক। সুযোগ হলো সেই আয়োজনের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার। সে গল্পটাই শোনাই।
রবীন্দ্রনাথকে প্রথম বিলাতে পাঠানো হয়েছিল ১৮৭৮ সালে, ব্যারিস্টারি পড়তে। তখন তাঁর বয়স ১৭ বছর। তখনকার ভারতীয় অভিজাত পরিবারের অনেকেই বিলাতে ব্যারিস্টারি পড়তে আসতেন। সে সময়ে বিলাতের নানা শহরেই ঠাকুর পরিবারের বিভিন্ন সদস্য ছড়িয়ে ছিলেন। রবীন্দ্রনাথ উঠেছিলেন ব্রাইটন শহরে তাঁর এক আত্মীয়ের বাড়িতে। সে বাড়ি ব্রাইটন শহরেরই প্রান্তে হোভ এলাকায়। বাড়ির নাম ছিল ‘মেডিনা ভিলা’। পাঠক হিসেবে এ তথ্য জানা ছিল আমার। এ ব্যাপারে আমার বিশেষ কৌতূহল ছিল এই কারণে, এ শহরেই আমার কর্মস্থল সাসেক্স বিশ্ববিদ্যালয়। থাকি ব্রাইটনের গা-ঘেঁষা এক শহরে। নিত্যদিন বিলাতের যে শহরে আসা-যাওয়া করি, সে শহরের যে বাড়িটাতে রবীন্দ্রনাথ থেকেছেন, তার সামনে দাঁড়াবার ইচ্ছা জাগে। কিন্তু মেডিনা ভিলার খোঁজ কেউ দিতে পারে না। প্রথম বিলাতযাত্রার অভিজ্ঞতার কথা বলতে গিয়ে রবীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন, তিনি যখন জানলেন ব্রাইটনের মেডিনা ভিলা নামে এক বাড়িতে থাকবেন, তখন তিনি বেশ উত্তেজিত ছিলেন এই ভেবে, এ নিশ্চয়ই গাছগাছালি, পাখপাখালি ঘেরা এক বিশাল বাড়ি হবে। কিন্তু এসে হতাশ হয়েছিলেন। কারণ, সে বাড়িটা ছিল সারি বাঁধা অসংখ্য বাড়ির একটি মাত্র। এর আশপাশে গাছপালা বিশেষ ছিল না। তবে তাঁর একটাই সান্ত্বনা ছিল, বাড়িটা সমুদ্রের ধারে। এ ধরনের গায়ে গায়ে লাগোয়া বাড়ির সারিকে বিলাতে বলে ‘ট্যারেস হাউস’।
গাছগাছালি ভরা একক ভিলাও বিস্তর আছে। তবে ভারতে ধনবান হলেও বিলাতে তেমন বিলাসবহুল বাড়িতে থাকার সংগতি বা ইচ্ছা হয়তো ছিল না ঠাকুর পরিবারের। আর ব্রাইটন তো সমুদ্রেরই শহর। পাথুরে সৈকতে ভ্রমণ করতে সে দেশের নানা অঞ্চল থেকে মানুষ সুযোগ পেলেই চলে আসে ব্রাইটনে। বোঝা যায়, বাড়ির পাশের সমুদ্র রবীন্দ্রনাথের জন্য ছিল স্বস্তির। সেই সমুদ্রের পাড়ে আমি হাঁটি প্রায়ই, দেখি সমুদ্রের দিকে মুখ করা সারি সারি বাড়ি। কিন্তু এর মধ্যে কোনটা যে সেই বিশেষ বাড়ি, সেটা জানার তো উপায় নেই।
কিন্তু ভবের লীলা বলে কথা। কাকতালীয় ঘটনা ঘটে একদিন। আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সহকর্মীর সুবাদে ঘটনাক্রমে একদিন পরিচয় ঘটে ব্রাইটনবাসী ব্রিটিশ বাউলবিষয়ক গবেষক জান ওপেনশের (Jeanne Openshow) সঙ্গে। তাঁর নামের উচ্চারণ ঠিক কী হবে, এ নিয়ে দ্বিধান্বিত ছিলাম। জিজ্ঞেস করাতে চমৎকার বাংলা বলতে পারা ওই ব্রিটিশ নারী ঠাট্টা করে বললেন, ‘জান আমার নাম। প্রাণের কথা মনে থাকলে জানের কথাও মনে থাকবে।’ জান বেশির ভাগ সময়ই গবেষণার কাজে শান্তিনিকেতনের কাছে বোলপুরে থাকেন। মাঝে মাঝে ব্রাইটনে আসেন তাঁর বাড়িতে। পরে দেখেছি বাউলদের ওপর Seeking Baul’s of Bengal নামে চমৎকার গবেষণামূলক বই আছে জানের। তাঁকে রবীন্দ্রনাথের বাড়ির প্রসঙ্গ তুলতেই বললেন, ‘আমি ব্রাইটনবাসী, থাকি শান্তিনিকেতনে আর রবীন্দ্রনাথের ব্রাইটের বাড়ি নিয়ে আমার কৌতূহল থাকবে না, তা কি হয়?’ তারপর জান আমাকে জানালেন অভিযানের বিস্তারিত কাহিনি এবং আমাদের এই পরিচয় যে বেশ এক অদ্ভুত কাকতালীয় মুহূর্তে ঘটল, জানালেন সেটাও।
ঘটনা এই, আমার মতোই জান দীর্ঘদিন হোভের সেই মেডিনা ভিলা খুঁজে বেরিয়েছেন। রবীন্দ্রনাথ তাঁর স্মৃতিচারণায় মেডিনা ভিলা নাম লিখলেও তার কোনো সুনির্দিষ্ট ঠিকানা লেখেননি। জান এই শহরের পুরোনো নথিপত্র ঘেঁটেও এই বাড়ির কোনো হদিস করতে পারেননি। হয়তো ভেঙেই ফেলা হয়েছে সেই বাড়ি। কিন্তু জান নাছোড়বান্দা। তাঁরই শহরে রবীন্দ্রনাথ দিন কাটিয়ে গেছেন অথচ রবীন্দ্রনাথের কোনো স্মৃতিচিহ্ন এই শহরে থাকবে না, সেটা তিনি মানতে পারছিলেন না। জান তখন বিকল্প পথ ধরলেন। রবীন্দ্রনাথের স্মৃতিচারণ থেকে জানা গেছে, ব্যারিস্টারি পড়ার প্রস্তুতি হিসেবে তাঁকে প্রথম ভর্তি করানো হয়েছিল ব্রাইটন প্রিপারেটরি নামে একটা স্কুলে। তিনি সেই স্কুলের সন্ধানে নামলেন। সে স্কুল এখন নেই কিন্তু স্কুলটির ইতিহাস পাওয়া গেল। জানা গেল সেই স্কুলের নির্দিষ্ট ঠিকানাও। স্কুলটি ছিল ব্রাইটন শহরের একেবারে কেন্দ্রেই, ৭ নম্বর শিপ স্ট্রিটে। সেই ঠিকানায় গিয়ে দেখতে পেলেন এখন সেটা একটা পুরোদস্তুর চার তারকা হোটেল, নাম ডু ভিন। হোটেল কর্তৃপক্ষ ইতিহাসের স্বার্থে সেই স্কুলের একটা ক্লাসরুম এবং কিছু অংশ গত শতাব্দীর মতোই অবশ্য অক্ষত রেখেছে। জান এই আবিষ্কারে যারপরনাই উত্তেজিত। হোটেল কর্তৃপক্ষকে এই তথ্য দেওয়াতে তাদের ভেতর বিশেষ কোনো ভাবান্তর দেখা গেল না।

কারণ, রবীন্দ্রনাথ বলে কারও নাম তারা কখনো শোনেনি। এরপর শুরু হলো জানের ভিন্নতর যাত্রা। তিনি ঠিক করলেন রবীন্দ্রনাথের বাড়ি যখন পাওয়া গেল না, এই স্কুলটিতেই তিনি রবীন্দ্রনাথের একটা ফলক বসাবেন। ইউরোপের কোনো শহরে জগৎখ্যাত কোনো ব্যক্তির পদচারণা থাকলে সেখানে একটা ফলক লাগিয়ে তাঁকে স্মরণ করার রেওয়াজ আছে। কিন্তু জান চাইলেই তো আর ব্যক্তিগতভাবে এমন একটা ফলক বসিয়ে দিতে পারেন না। শহরের কর্তৃপক্ষের অনুমোদন লাগে। সে নানা জটিল প্রক্রিয়া। জান ব্রাইটন শহরের মেয়রের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাঁর এই প্রস্তাব দিতে মেয়র সাহেব টেগোর নামটিকে খানিকটা স্মরণ করতে পারলেও তার গুরুত্ব ঠিক অনুধাবন করলেন না। বলা বাহুল্য, ভারত বিষয়ে উৎসাহী কিছু মানুষের বাইরে রবীন্দ্রনাথ সাম্প্রতিক ইউরোপের কোনো পরিচিত নাম নন। কিন্তু জান মেয়রকে নানা রকম তথ্য সরবরাহ করতে থাকেন।
মেয়র নিজেও তখন খোঁজখবর করতে শুরু করেন। তিনি জানতে পারেন, ইউরোপের বাইরে তিনিই প্রথম নোবেল বিজয়ী। আরও জানতে পারেন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধপূর্ব টালমাটাল ইউরোপে রবীন্দ্রনাথ ছিলেন রীতিমতো এক তারকা ব্যক্তিত্ব। একপর্যায়ে ব্রাইটনের মেয়র নিজেই উদ্যোগী হন রবীন্দ্রনাথের ওপর তাঁর শহরে একটা ফলক বসানোর ব্যাপারে। তিনি এর মাধ্যমে তাঁর শহরের একটা পর্যটন গুরুত্বও অনুধাবন করেন। ইতিমধ্যে খোঁজখবর নিয়ে ৭ শিপ রোডের ‘ডু ভিন’ হোটেল কর্তৃপক্ষও এ ব্যাপারে উৎসাহী হয়ে ওঠে। তারা টের পায় এতে করে মুহূর্তে তাদের এই সাধারণ হোটেলটি পেয়ে যাবে ঐতিহাসিক গুরুত্ব। মেয়র ঘোষণা দেন, বিশেষ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তিনিই এই ফলক উন্মোচন করবেন। মেয়র জানকেই অনুরোধ করেন এই অনুষ্ঠানের সার্বিক দায়িত্ব নিতে এবং জানান, তাঁকে সব রকম প্রশাসনিক এবং আর্থিক সহায়তা দেবেন। জান ব্যাপক উৎসাহে নেমে পড়েন অনুষ্ঠান আয়োজনে। আমার সঙ্গে জানের পরিচয় সেই কাকতালীয় মুহূর্তে, যখন তিনি এই অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এ-ও জানলাম, সেই ফলক উন্মোচনের তারিখ পরের মাসেই।
পুরো বিষয়টার এই অদ্ভুত সমাপতনে আমি স্বভাবতই আনন্দিত, বিস্মিত। কিন্তু জানতাম না, আরও বিস্ময় অপেক্ষা করছে আমার জন্য। পরিচয়ের পরের সপ্তাহেই জানের কাছ থেকে মেইল পেলাম। জান আমাকে আমন্ত্রণ জানালেন সেই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিতে। আমার সহকর্মী মারফত এবং অন্যান্য সূত্র থেকে ইতিমধ্যে আমার লেখক পরিচয়ের খোঁজ পেয়ে গেছেন জান। তিনি জানালেন, অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেবেন লন্ডনের টেগোর সেন্টারের পরিচালক ড. কল্যাণ কুণ্ডু। অনুষ্ঠানের ফলক উন্মোচন করবেন ব্রাইটনের মেয়র, আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে ব্রিটেনে বাংলাদেশ ও ভারতের দুই হাইকমিশনারকে। জান বললেন, ব্রাইটনবাসী বাংলাদেশি একজন লেখক হিসেবে আমার এ অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখা প্রাসঙ্গিক হবে। এ আমন্ত্রণকে আমি বিশেষ সম্মান হিসেবেই গ্রহণ করি এবং সাগ্রহে রাজি হই অনুষ্ঠানে অংশ নিতে। অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করি সেই দিনটির।
অবশেষে ২০২১ সালের ২৮ অক্টোবর হয় সেই ফলক উন্মোচন অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানের দিনের নির্ধারিত সময়ের আগেই এসে হাজির হই ৭ শিপ স্ট্রিটে। একটা চাপা উত্তেজনায় হোটেলের করিডর দিয়ে ধীরে ঢুকে পড়ি অক্ষত রাখা শতাব্দীপ্রাচীন সেই স্কুলের ক্লাসরুমে। আজ থেকে প্রায় দেড় শ বছর আগে এই ক্লাসরুমেই বসে থাকা কিশোর রবীন্দ্রনাথের কথা ভাবি। এই স্কুলে কয়েক মাস পড়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ। পড়াশোনায় বিশেষ অগ্রগতি হচ্ছিল না দেখে তাঁকে পরে নিয়ে যাওয়া হয় লন্ডনে। রবীন্দ্রনাথের প্রথম বিলাত ভ্রমণে যে বিচিত্র অভিজ্ঞতা হয়েছিল, তার সবই সুখকর ছিল না। তবে এই ব্রাইটন প্রিপারেটরি স্কুল নিয়ে আনন্দের স্মৃতির কথাই লিখেছেন তিনি। লিখেছেন, এই স্কুলের ছেলেরা তাঁর সঙ্গে কোনো দুর্ব্যবহার করেনি বরং মাঝে মাঝে তাঁর কোটের পকেটে আপেল কিংবা কমলা গুঁজে দিয়ে দৌড়ে পালিয়েছে।
ব্রিটিশ কায়দায় অর্কেস্ট্রা বাজিয়ে, পতাকা তুলে মেয়র উন্মোচন করলেন রবীন্দ্রনাথের স্মৃতিফলক। তারপর ব্রাইটনের সেই রাজপথে হঠাৎ যেন জমল এক মিলনমেলা। সমবেত ব্রিটিশ, ভারতীয়, বাংলাদেশি অধিকাংশই একে অন্যকে চেনেন না কিন্তু এক জায়গায় তাঁদের আত্মার মিল। তাঁরা সবাই রবীন্দ্রপ্রেমী। তাঁরা আলাপ জুড়লেন। এক বয়স্ক ব্রিটিশ নারী উৎসাহে আমার দিকে এগিয়ে এসে বললেন, তিনি আমাকে একটা জিনিস দেখাতে চান। তিনি তাঁর ব্যাগ থেকে একটা বই বের করলেন। দেখলাম রবীন্দ্রনাথের গীতাঞ্জলির অনুবাদের বহু পুরোনো একটা সংস্করণ। জানালেন, এটি বইয়ের প্রথম সংস্করণ। এরপর তিনি বইটির প্রথম পৃষ্ঠা উল্টে আমাকে দেখালেন কালো কালিতে উজ্জ্বল রবীন্দ্রনাথের হাতে লেখা স্বাক্ষর। মহিলা বললেন, এই বই পারিবারিক সম্পদ হিসেবে তাঁরা সংরক্ষণ করছেন প্রজন্মের পর প্রজন্ম। ফাউন্টেন কলমে লেখা রবীন্দ্রনাথের অটোগ্রাফটি একটু ম্লান হয়েছে, আমি হাত দিয়ে ছুঁয়ে দেখলাম। মিলনমেলা ভাঙলে ফিরতি পথে ব্রাইটনের সমুদ্রপাড়ে হাঁটি।
গায়ে এসে লাগে সমুদ্রের হাওয়া। বিদেশ-বিভূঁইয়ের এই অচেনা সৈকতে তাঁর গানই জেগে ওঠে মনে: ‘আমার তরী ছিল চেনার কূলে, বাঁধন যে তার গেল খুলে/তারে হাওয়ায় হাওয়ায় নিয়ে গেল কোন্ অচেনার ধারে।।’

জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল।
৬ দিন আগে
জনপ্রিয় কিশোর গোয়েন্দা সিরিজ তিন গোয়েন্দার স্রষ্টা রকিব হাসান মারা গেছেন। আজ বুধবার রাজধানীর একটি হাসপাতালে ডায়ালাইসিস চলাকালে তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।
১১ দিন আগে
হাঙ্গেরির ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই এবার (২০২৫ সালে) সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন তাঁর দীর্ঘ, দার্শনিক বাক্য ও মানবজীবনের বিশৃঙ্খলার গভীর অনুসন্ধানী সাহিত্যকর্মের জন্য। সুইডিশ একাডেমি তাঁকে সম্মান জানিয়েছে ‘শিল্পের শক্তিকে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করার’ জন্য।
১৭ দিন আগে
হাঙ্গেরির সাহিত্যে অসীম জনপ্রিয়তা ও প্রভাব তাঁর; বিশ্বজোড়া আতঙ্ক ও সন্ত্রাসের দাপটেও শিল্পের শক্তি চেনায় তাঁর কলম। তিনি হাঙ্গেরিয়ান ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই; সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০২৫ সালে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।
১৭ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল। কিন্তু ভাষাবিদ ও সাহিত্য ইতিহাসবিদদের মতে, এই ধারণা আসলে পশ্চিমা দৃষ্টিকোণ থেকে তৈরি এক ‘ঔপনিবেশিক কল্পনা’ মাত্র। বাস্তবে আরবি সাহিত্য কখনোই থেমে যায়নি।
প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী, অষ্টম শতাব্দীতে আব্বাসীয় খলিফাদের অধীনে বিজ্ঞান, দর্শন ও কবিতার কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল বাগদাদ। আবু নুয়াস, আল-মুতানাব্বি, আল-ফারাবি ও ইবনে সিনার মতো কবি ও দার্শনিকদের হাত ধরে শুরু হয়েছিল এক স্বর্ণযুগ। ঊনবিংশ শতাব্দীর ইউরোপীয় গবেষকেরা—যেমন ফরাসি চিন্তাবিদ আর্নেস্ট রেনাঁ ও ডাচ ইতিহাসবিদ রেইনহার্ট দোজি সেই আমলটিকেই আরবি বুদ্ধিবৃত্তিক জীবনের শিখর বলে স্বীকার করেছিলেন এবং দাবি করেছিলেন, একাদশ শতাব্দীর পর এই ধারাবাহিকতার পতন ঘটে। তাঁদের মতে, এরপর প্রায় ৮০০ বছর আরবে আর কোনো গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্যিক বা দার্শনিক কাজ হয়নি—যতক্ষণ না ইউরোপে রেনেসাঁ শুরু হয়।
কিন্তু আধুনিক গবেষকেরা বলছেন, এই ধারণা সরলীকৃত ও পক্ষপাতদুষ্ট। ফ্রাঙ্কফুর্ট আন্তর্জাতিক বইমেলায় শেখ জায়েদ বুক অ্যাওয়ার্ডের আয়োজিত এক আলোচনায় ভাষাবিদেরা দাবি করেছেন, আরবি রচনা শৈলী কখনো বিলুপ্ত হয়নি; বরং তা ধারাবাহিকভাবে কপি, অনুবাদ ও পাঠের মাধ্যমে বেঁচে ছিল।
জার্মান গবেষক বেয়াট্রিস গ্রুন্ডলার তাঁর ‘দ্য রাইজ অব দ্য অ্যারাবিক বুক’ গ্রন্থে দাবি করেছেন, আরবি সাহিত্যে ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে যে ধারণাটি প্রচলিত আছে তা আসলে গাল-গল্প। এই বইটি এবারের শেখ জায়েদ পুরস্কারের শর্টলিস্টে রয়েছে। গ্রুন্ডলার এতে দেখিয়েছেন, নবম শতাব্দীর বাগদাদে বইয়ের ব্যবসা, কপিকারদের প্রতিযোগিতা, জনসম্মুখে পাঠ ও লেখার প্রচলন—সবই ছিল আধুনিক প্রকাশনা সংস্কৃতির পূর্বসূরি। তিনি মত দিয়েছেন, ‘বাগদাদের রাস্তায় হাঁটলে আপনি দেখতেন লোকেরা হস্তলিপি বিক্রি করছে, বিরামচিহ্ন নিয়ে তর্ক করছে—এ যেন এক জীবন্ত প্রকাশনা বাজার।’
গবেষণা বলছে, আরবি সাহিত্য আসলে কখনো এক জায়গায় স্থির থাকেনি। এর কেন্দ্র এক সময় বাগদাদ থেকে কায়রো, দামেস্ক ও আন্দালুসিয়ায় স্থানান্তরিত হয়। কিন্তু ধারাটি অব্যাহতই থাকে। নতুন ঘরানা তৈরি হয়, পুরোনো ঘরানা রূপান্তরিত হয়।
ফরাসি অধ্যাপক হাকান ওজকান তাঁর গবেষণায় দেখিয়েছেন, ‘জাজাল’ নামের কথ্য ছন্দভিত্তিক কবিতার ধারা আব্বাসীয় যুগের পরও বিকশিত হতে থাকে। তাঁর মতে, ‘এই কবিরা নিয়ম ভেঙে নতুন রূপ দিয়েছে—তাঁদের ছন্দ ও ব্যঙ্গ আধুনিক র্যাপের মতো প্রাণবন্ত।’

এদিকে এই বিষয়ে এক প্রতিবেদনে সোমবার (২০ অক্টোবর) আমিরাতভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য ন্যাশনাল জানিয়েছে, আবুধাবির নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির ‘আরবি সাহিত্য লাইব্রেরি’ প্রকল্প ইতিমধ্যেই ‘হারানো শতাব্দী’ বলে বিবেচিত সময়ের ৬০ টিরও বেশি আরবি সাহিত্যকর্ম পুনরুদ্ধার করেছে। প্রকল্পটির সম্পাদক অধ্যাপক মরিস পোমেরান্টজ বলেছেন, ‘এই বইগুলো সম্পাদনা করা মানে এক চলমান সংলাপে অংশ নেওয়া—যেখানে প্রজন্মের পর প্রজন্ম লেখক, অনুবাদক ও সমালোচকেরা একে অপরকে উত্তর দিয়ে গেছেন।’
মরিস মনে করেন, আরবি সাহিত্য স্থবির হয়ে যাওয়ার ধারণাটি মূলত অনুবাদের অভাব থেকেই জন্ম নিয়েছে। তিনি বলেন, ‘যখন কোনো লেখা অনুবাদ করা হয় না, তখন সেটি বৈশ্বিক অস্তিত্ব হারায়।’
মরিসের মতে, এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো এই সাহিত্যকে আবার জনসাধারণের কল্পনায় ফিরিয়ে আনা—স্কুলে পড়ানো, মঞ্চে উপস্থাপন করা, অনুবাদের মাধ্যমে বিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়া। তা না হলে আরবি সাহিত্যের ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে চিহ্নিত সময়টি অধরাই থেকে যাবে।

জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল। কিন্তু ভাষাবিদ ও সাহিত্য ইতিহাসবিদদের মতে, এই ধারণা আসলে পশ্চিমা দৃষ্টিকোণ থেকে তৈরি এক ‘ঔপনিবেশিক কল্পনা’ মাত্র। বাস্তবে আরবি সাহিত্য কখনোই থেমে যায়নি।
প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী, অষ্টম শতাব্দীতে আব্বাসীয় খলিফাদের অধীনে বিজ্ঞান, দর্শন ও কবিতার কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল বাগদাদ। আবু নুয়াস, আল-মুতানাব্বি, আল-ফারাবি ও ইবনে সিনার মতো কবি ও দার্শনিকদের হাত ধরে শুরু হয়েছিল এক স্বর্ণযুগ। ঊনবিংশ শতাব্দীর ইউরোপীয় গবেষকেরা—যেমন ফরাসি চিন্তাবিদ আর্নেস্ট রেনাঁ ও ডাচ ইতিহাসবিদ রেইনহার্ট দোজি সেই আমলটিকেই আরবি বুদ্ধিবৃত্তিক জীবনের শিখর বলে স্বীকার করেছিলেন এবং দাবি করেছিলেন, একাদশ শতাব্দীর পর এই ধারাবাহিকতার পতন ঘটে। তাঁদের মতে, এরপর প্রায় ৮০০ বছর আরবে আর কোনো গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্যিক বা দার্শনিক কাজ হয়নি—যতক্ষণ না ইউরোপে রেনেসাঁ শুরু হয়।
কিন্তু আধুনিক গবেষকেরা বলছেন, এই ধারণা সরলীকৃত ও পক্ষপাতদুষ্ট। ফ্রাঙ্কফুর্ট আন্তর্জাতিক বইমেলায় শেখ জায়েদ বুক অ্যাওয়ার্ডের আয়োজিত এক আলোচনায় ভাষাবিদেরা দাবি করেছেন, আরবি রচনা শৈলী কখনো বিলুপ্ত হয়নি; বরং তা ধারাবাহিকভাবে কপি, অনুবাদ ও পাঠের মাধ্যমে বেঁচে ছিল।
জার্মান গবেষক বেয়াট্রিস গ্রুন্ডলার তাঁর ‘দ্য রাইজ অব দ্য অ্যারাবিক বুক’ গ্রন্থে দাবি করেছেন, আরবি সাহিত্যে ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে যে ধারণাটি প্রচলিত আছে তা আসলে গাল-গল্প। এই বইটি এবারের শেখ জায়েদ পুরস্কারের শর্টলিস্টে রয়েছে। গ্রুন্ডলার এতে দেখিয়েছেন, নবম শতাব্দীর বাগদাদে বইয়ের ব্যবসা, কপিকারদের প্রতিযোগিতা, জনসম্মুখে পাঠ ও লেখার প্রচলন—সবই ছিল আধুনিক প্রকাশনা সংস্কৃতির পূর্বসূরি। তিনি মত দিয়েছেন, ‘বাগদাদের রাস্তায় হাঁটলে আপনি দেখতেন লোকেরা হস্তলিপি বিক্রি করছে, বিরামচিহ্ন নিয়ে তর্ক করছে—এ যেন এক জীবন্ত প্রকাশনা বাজার।’
গবেষণা বলছে, আরবি সাহিত্য আসলে কখনো এক জায়গায় স্থির থাকেনি। এর কেন্দ্র এক সময় বাগদাদ থেকে কায়রো, দামেস্ক ও আন্দালুসিয়ায় স্থানান্তরিত হয়। কিন্তু ধারাটি অব্যাহতই থাকে। নতুন ঘরানা তৈরি হয়, পুরোনো ঘরানা রূপান্তরিত হয়।
ফরাসি অধ্যাপক হাকান ওজকান তাঁর গবেষণায় দেখিয়েছেন, ‘জাজাল’ নামের কথ্য ছন্দভিত্তিক কবিতার ধারা আব্বাসীয় যুগের পরও বিকশিত হতে থাকে। তাঁর মতে, ‘এই কবিরা নিয়ম ভেঙে নতুন রূপ দিয়েছে—তাঁদের ছন্দ ও ব্যঙ্গ আধুনিক র্যাপের মতো প্রাণবন্ত।’

এদিকে এই বিষয়ে এক প্রতিবেদনে সোমবার (২০ অক্টোবর) আমিরাতভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য ন্যাশনাল জানিয়েছে, আবুধাবির নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির ‘আরবি সাহিত্য লাইব্রেরি’ প্রকল্প ইতিমধ্যেই ‘হারানো শতাব্দী’ বলে বিবেচিত সময়ের ৬০ টিরও বেশি আরবি সাহিত্যকর্ম পুনরুদ্ধার করেছে। প্রকল্পটির সম্পাদক অধ্যাপক মরিস পোমেরান্টজ বলেছেন, ‘এই বইগুলো সম্পাদনা করা মানে এক চলমান সংলাপে অংশ নেওয়া—যেখানে প্রজন্মের পর প্রজন্ম লেখক, অনুবাদক ও সমালোচকেরা একে অপরকে উত্তর দিয়ে গেছেন।’
মরিস মনে করেন, আরবি সাহিত্য স্থবির হয়ে যাওয়ার ধারণাটি মূলত অনুবাদের অভাব থেকেই জন্ম নিয়েছে। তিনি বলেন, ‘যখন কোনো লেখা অনুবাদ করা হয় না, তখন সেটি বৈশ্বিক অস্তিত্ব হারায়।’
মরিসের মতে, এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো এই সাহিত্যকে আবার জনসাধারণের কল্পনায় ফিরিয়ে আনা—স্কুলে পড়ানো, মঞ্চে উপস্থাপন করা, অনুবাদের মাধ্যমে বিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়া। তা না হলে আরবি সাহিত্যের ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে চিহ্নিত সময়টি অধরাই থেকে যাবে।

সম্প্রতি প্রায় দেড় শ বছর পর বিলাতে রবীন্দ্রনাথের প্রথম ঠিকানাটি খুঁজে বের করা হলো এবং সেখানে বসানো হলো একটা ফলক। সুযোগ হলো সেই আয়োজনের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার। সে গল্পটাই শোনাই।
০৬ আগস্ট ২০২২
জনপ্রিয় কিশোর গোয়েন্দা সিরিজ তিন গোয়েন্দার স্রষ্টা রকিব হাসান মারা গেছেন। আজ বুধবার রাজধানীর একটি হাসপাতালে ডায়ালাইসিস চলাকালে তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।
১১ দিন আগে
হাঙ্গেরির ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই এবার (২০২৫ সালে) সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন তাঁর দীর্ঘ, দার্শনিক বাক্য ও মানবজীবনের বিশৃঙ্খলার গভীর অনুসন্ধানী সাহিত্যকর্মের জন্য। সুইডিশ একাডেমি তাঁকে সম্মান জানিয়েছে ‘শিল্পের শক্তিকে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করার’ জন্য।
১৭ দিন আগে
হাঙ্গেরির সাহিত্যে অসীম জনপ্রিয়তা ও প্রভাব তাঁর; বিশ্বজোড়া আতঙ্ক ও সন্ত্রাসের দাপটেও শিল্পের শক্তি চেনায় তাঁর কলম। তিনি হাঙ্গেরিয়ান ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই; সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০২৫ সালে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।
১৭ দিন আগেনিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

জনপ্রিয় কিশোর গোয়েন্দা সিরিজ তিন গোয়েন্দার স্রষ্টা রকিব হাসান মারা গেছেন। আজ বুধবার রাজধানীর একটি হাসপাতালে ডায়ালাইসিস চলাকালে তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।
রকিব হাসানের মৃত্যুর খবরটি নিশ্চিত করেছেন সেবা প্রকাশনীর উপদেষ্টা মাসুমা মায়মুর। তিনি সেবা প্রকাশনীর প্রতিষ্ঠাতা কাজী আনোয়ার হোসেনের ছোট ছেলে কাজী মায়মুর হোসেনের স্ত্রী।
মাসুমা মায়মুর ফেসবুকে লিখেছেন, ‘তিন গোয়েন্দা ও সেবা প্রকাশনীর পাঠকদেরকে আন্তরিক দুঃখের সাথে জানাচ্ছি যে, কিছুক্ষণ আগে রকিব হাসান সাহেব পরলোক গমন করেছেন। ডায়ালাইসিস চলাকালে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে ওনার জীবনাবসান ঘটে। আপনারা ওনার পবিত্র আত্মার মাগফেরাত কামনা করুন।’
১৯৫০ সালের ১২ ডিসেম্বর কুমিল্লায় জন্মগ্রহণ করেন রকিব হাসান। বাবার চাকরির কারণে শৈশব কেটেছে ফেনীতে। সেখান থেকে স্কুলজীবন শেষ করে ভর্তি হন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজে। পড়াশোনা শেষে বিভিন্ন চাকরিতে যুক্ত হলেও অফিসের বাঁধাধরা জীবনে তাঁর মন টেকেনি। অবশেষে তিনি লেখালেখিকে বেছে নেন জীবনের একমাত্র পথ হিসেবে।

সেবা প্রকাশনী থেকে তাঁর লেখকজীবনের সূচনা হয়। প্রথমদিকে বিশ্বসেরা ক্ল্যাসিক বই অনুবাদ করে লেখালেখির জগতে প্রবেশ করেন তিনি। এরপর টারজান, গোয়েন্দা রাজু, রেজা-সুজা সিরিজসহ চার শতাধিক জনপ্রিয় বই লেখেন। তবে তাঁর পরিচয়ের সবচেয়ে বড় জায়গা হলো তিন গোয়েন্দা সিরিজ। এই সিরিজ বাংলাদেশের অসংখ্য কিশোর-কিশোরীর কৈশোরের সঙ্গী।
মূলত রবার্ট আর্থারের থ্রি ইনভেস্টিগেটরস সিরিজ অবলম্বনে তিন গোয়েন্দার সূচনা হয়। তবে রকিব হাসানের লেখনশৈলীতে এটি পেয়েছে একেবারে নতুন রূপ। বাংলাদেশি সাহিত্য হয়ে উঠেছে এটি। এই সিরিজের মাধ্যমে তিনি হয়ে ওঠেন হাজারো কিশোর পাঠকের প্রিয় লেখক।
নিজ নামে লেখার পাশাপাশি তিনি ব্যবহার করেছেন বিভিন্ন ছদ্মনাম। শামসুদ্দীন নওয়াব নামে তিনি অনুবাদ করেছিলেন জুল ভার্নের বইগুলো।
বাংলাদেশের পাঠকদের কাছে রকিব হাসান শুধু একজন গোয়েন্দা লেখক নন, তিনি কয়েক প্রজন্মের শৈশব-কৈশোরের ভালোবাসার মানুষ।

জনপ্রিয় কিশোর গোয়েন্দা সিরিজ তিন গোয়েন্দার স্রষ্টা রকিব হাসান মারা গেছেন। আজ বুধবার রাজধানীর একটি হাসপাতালে ডায়ালাইসিস চলাকালে তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।
রকিব হাসানের মৃত্যুর খবরটি নিশ্চিত করেছেন সেবা প্রকাশনীর উপদেষ্টা মাসুমা মায়মুর। তিনি সেবা প্রকাশনীর প্রতিষ্ঠাতা কাজী আনোয়ার হোসেনের ছোট ছেলে কাজী মায়মুর হোসেনের স্ত্রী।
মাসুমা মায়মুর ফেসবুকে লিখেছেন, ‘তিন গোয়েন্দা ও সেবা প্রকাশনীর পাঠকদেরকে আন্তরিক দুঃখের সাথে জানাচ্ছি যে, কিছুক্ষণ আগে রকিব হাসান সাহেব পরলোক গমন করেছেন। ডায়ালাইসিস চলাকালে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে ওনার জীবনাবসান ঘটে। আপনারা ওনার পবিত্র আত্মার মাগফেরাত কামনা করুন।’
১৯৫০ সালের ১২ ডিসেম্বর কুমিল্লায় জন্মগ্রহণ করেন রকিব হাসান। বাবার চাকরির কারণে শৈশব কেটেছে ফেনীতে। সেখান থেকে স্কুলজীবন শেষ করে ভর্তি হন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজে। পড়াশোনা শেষে বিভিন্ন চাকরিতে যুক্ত হলেও অফিসের বাঁধাধরা জীবনে তাঁর মন টেকেনি। অবশেষে তিনি লেখালেখিকে বেছে নেন জীবনের একমাত্র পথ হিসেবে।

সেবা প্রকাশনী থেকে তাঁর লেখকজীবনের সূচনা হয়। প্রথমদিকে বিশ্বসেরা ক্ল্যাসিক বই অনুবাদ করে লেখালেখির জগতে প্রবেশ করেন তিনি। এরপর টারজান, গোয়েন্দা রাজু, রেজা-সুজা সিরিজসহ চার শতাধিক জনপ্রিয় বই লেখেন। তবে তাঁর পরিচয়ের সবচেয়ে বড় জায়গা হলো তিন গোয়েন্দা সিরিজ। এই সিরিজ বাংলাদেশের অসংখ্য কিশোর-কিশোরীর কৈশোরের সঙ্গী।
মূলত রবার্ট আর্থারের থ্রি ইনভেস্টিগেটরস সিরিজ অবলম্বনে তিন গোয়েন্দার সূচনা হয়। তবে রকিব হাসানের লেখনশৈলীতে এটি পেয়েছে একেবারে নতুন রূপ। বাংলাদেশি সাহিত্য হয়ে উঠেছে এটি। এই সিরিজের মাধ্যমে তিনি হয়ে ওঠেন হাজারো কিশোর পাঠকের প্রিয় লেখক।
নিজ নামে লেখার পাশাপাশি তিনি ব্যবহার করেছেন বিভিন্ন ছদ্মনাম। শামসুদ্দীন নওয়াব নামে তিনি অনুবাদ করেছিলেন জুল ভার্নের বইগুলো।
বাংলাদেশের পাঠকদের কাছে রকিব হাসান শুধু একজন গোয়েন্দা লেখক নন, তিনি কয়েক প্রজন্মের শৈশব-কৈশোরের ভালোবাসার মানুষ।

সম্প্রতি প্রায় দেড় শ বছর পর বিলাতে রবীন্দ্রনাথের প্রথম ঠিকানাটি খুঁজে বের করা হলো এবং সেখানে বসানো হলো একটা ফলক। সুযোগ হলো সেই আয়োজনের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার। সে গল্পটাই শোনাই।
০৬ আগস্ট ২০২২
জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল।
৬ দিন আগে
হাঙ্গেরির ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই এবার (২০২৫ সালে) সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন তাঁর দীর্ঘ, দার্শনিক বাক্য ও মানবজীবনের বিশৃঙ্খলার গভীর অনুসন্ধানী সাহিত্যকর্মের জন্য। সুইডিশ একাডেমি তাঁকে সম্মান জানিয়েছে ‘শিল্পের শক্তিকে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করার’ জন্য।
১৭ দিন আগে
হাঙ্গেরির সাহিত্যে অসীম জনপ্রিয়তা ও প্রভাব তাঁর; বিশ্বজোড়া আতঙ্ক ও সন্ত্রাসের দাপটেও শিল্পের শক্তি চেনায় তাঁর কলম। তিনি হাঙ্গেরিয়ান ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই; সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০২৫ সালে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।
১৭ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

হাঙ্গেরির ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই এবার (২০২৫ সালে) সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন তাঁর দীর্ঘ, দার্শনিক বাক্য ও মানবজীবনের বিশৃঙ্খলার গভীর অনুসন্ধানী সাহিত্যকর্মের জন্য। সুইডিশ একাডেমি তাঁকে সম্মান জানিয়েছে ‘শিল্পের শক্তিকে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করার’ জন্য। লেখক সুসান সনটাগ অবশ্য তাঁকে একসময় ‘মহাপ্রলয়ের হাঙ্গেরিয়ান গুরু’ আখ্যা দিয়েছিলেন।
সাহিত্যজগতে অনেকের কাছে ক্রাসনাহোরকাইয়ের নোবেল পাওয়ার এই ঘোষণাটি যেন কয়েক দশক ধরে চলা একটি বাক্যের সমাপ্তি।
১৯৫৪ সালে হাঙ্গেরির ছোট শহর জিউলা-তে জন্ম নেওয়া ক্রাসনাহোরকাই ১৯৮০-এর দশকের শুরুতে গল্প লেখা শুরু করেন। তাঁর প্রথম উপন্যাস স্যাটানট্যাঙ্গো (১৯৮৫) একটি বৃষ্টিস্নাত, ধ্বংসপ্রায় গ্রামের কাহিনি—যেখানে প্রতারক, মাতাল ও হতাশ মানুষেরা মিথ্যা আশায় আঁকড়ে থাকে। পরিচালক বেলা-তার তাঁর এই উপন্যাসটিকে দীর্ঘ ৭ ঘণ্টার এক সাদাকালো চলচ্চিত্রে রূপ দেন। এই বইতেই ধরা পড়ে ক্রাসনাহোরকাইয়ের লেখার বৈশিষ্ট্যসমূহ, যেমন—অবিরাম দীর্ঘ বাক্য, দার্শনিক হাস্যরস ও পতনের কিনারায় দাঁড়িয়ে থাকা মানুষের প্রতিচ্ছবি।
তাঁর পরবর্তী উপন্যাসগুলো—দ্য মেলানকোলি অব রেজিস্ট্যান্স (১৯৮৯), ওয়ার অ্যান্ড ওয়ার (১৯৯৯) ও সেইবো দেয়ার বিলো (২০০৮)—তাঁর এই দৃষ্টিভঙ্গিকে মহাজাগতিক পরিসরে বিস্তৃত করেছে। ‘ওয়ার অ্যান্ড ওয়ার’–এ তিনি এক নথি প্রহরীর গল্প বলেছেন, যিনি রহস্যময় এক পাণ্ডুলিপি প্রকাশ করতে নিউইয়র্কে পালিয়ে যান এবং আত্মহত্যা করেন—যেন ক্রম বিলীন পৃথিবীতে অর্থ ধরে রাখার এক মরিয়া চেষ্টা তাঁর।
ক্রাসনাহোরকাইয়ের লেখায় কাহিনি প্রায় সময়ই বাক্যের ভেতর হারিয়ে যায়। তিনি লিখেছেন এমন বাক্য, যা একাধিক পৃষ্ঠা জুড়ে পাঠককে টেনে নেয় অবচেতনে, অবিরাম প্রবাহে।
তাঁর সাহিত্যে হাস্যরস ও ট্র্যাজেডি পাশাপাশি চলে। স্যাটানট্যাঙ্গো–এর মাতাল নাচের দৃশ্য যেমন নিঃশেষের প্রতীক, তেমনি ‘ব্যারন ওয়েঙ্কহাইমস হোমকামিং’ (২০১৬)-এ দেখা যায়, ফিরে আসা এক পরাজিত অভিজাতকে। যার মাধ্যমে প্রকাশ পায় সভ্যতার পচন ও মানুষের হাস্যকর ভ্রান্তি।
২০১৫ সালে ম্যান বুকার পুরস্কার পাওয়ার মধ্য দিয়েই প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পান ক্রাসনাহোরকাই। অনুবাদক জর্জ সির্টেস ও ওটিলি মুলজেট তাঁর জটিল হাঙ্গেরিয়ান ভাষাকে ইংরেজিতে রূপ দিতে বিশেষ ভূমিকা রাখেন। ‘হাডসন রিভিউ’ তাঁকে বর্ণনা করেছিল ‘অন্তহীন বাক্যের ভ্রমণশিল্পী’ হিসেবে।
চল্লিশ বছরের সৃষ্টিতে ক্রাসনাহোরকাইয়ের ভুবন চিত্র, সংগীত, দর্শন ও ভাষার মিলনে বিস্তৃত। সাম্প্রতিক উপন্যাস ‘হার্শট ০৭৭৬৯’ (২০২৪)–এ তিনি এক প্রবাহিত বাক্যে লিখেছেন নব্য-নাৎসি, নেকড়ে আর এক হতভাগ্য পদার্থবিদের কাহিনি—আধুনিক ইউরোপের নৈতিক পক্ষাঘাতের রূপক হিসেবে।
তাঁর সমগ্র সাহিত্যজগৎ এক অন্ধকার ও ধ্যানমগ্ন মহাবিশ্ব—যেখানে পতন, শূন্যতা ও করুণা পাশাপাশি থাকে। ‘সেইবো দেয়ার বিলো’ বইটিতে তিনি লিখেছেন, ‘সৌন্দর্য, যত ক্ষণস্থায়ীই হোক না কেন, তা পবিত্রতার প্রতিবিম্ব।’ এই বিশ্বাসই লাসলো ক্রাসনাহোরকাইকে সেই বিরল লেখক করে তুলেছে, যাঁর নৈরাশ্যও মুক্তির মতো দীপ্ত।

হাঙ্গেরির ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই এবার (২০২৫ সালে) সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন তাঁর দীর্ঘ, দার্শনিক বাক্য ও মানবজীবনের বিশৃঙ্খলার গভীর অনুসন্ধানী সাহিত্যকর্মের জন্য। সুইডিশ একাডেমি তাঁকে সম্মান জানিয়েছে ‘শিল্পের শক্তিকে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করার’ জন্য। লেখক সুসান সনটাগ অবশ্য তাঁকে একসময় ‘মহাপ্রলয়ের হাঙ্গেরিয়ান গুরু’ আখ্যা দিয়েছিলেন।
সাহিত্যজগতে অনেকের কাছে ক্রাসনাহোরকাইয়ের নোবেল পাওয়ার এই ঘোষণাটি যেন কয়েক দশক ধরে চলা একটি বাক্যের সমাপ্তি।
১৯৫৪ সালে হাঙ্গেরির ছোট শহর জিউলা-তে জন্ম নেওয়া ক্রাসনাহোরকাই ১৯৮০-এর দশকের শুরুতে গল্প লেখা শুরু করেন। তাঁর প্রথম উপন্যাস স্যাটানট্যাঙ্গো (১৯৮৫) একটি বৃষ্টিস্নাত, ধ্বংসপ্রায় গ্রামের কাহিনি—যেখানে প্রতারক, মাতাল ও হতাশ মানুষেরা মিথ্যা আশায় আঁকড়ে থাকে। পরিচালক বেলা-তার তাঁর এই উপন্যাসটিকে দীর্ঘ ৭ ঘণ্টার এক সাদাকালো চলচ্চিত্রে রূপ দেন। এই বইতেই ধরা পড়ে ক্রাসনাহোরকাইয়ের লেখার বৈশিষ্ট্যসমূহ, যেমন—অবিরাম দীর্ঘ বাক্য, দার্শনিক হাস্যরস ও পতনের কিনারায় দাঁড়িয়ে থাকা মানুষের প্রতিচ্ছবি।
তাঁর পরবর্তী উপন্যাসগুলো—দ্য মেলানকোলি অব রেজিস্ট্যান্স (১৯৮৯), ওয়ার অ্যান্ড ওয়ার (১৯৯৯) ও সেইবো দেয়ার বিলো (২০০৮)—তাঁর এই দৃষ্টিভঙ্গিকে মহাজাগতিক পরিসরে বিস্তৃত করেছে। ‘ওয়ার অ্যান্ড ওয়ার’–এ তিনি এক নথি প্রহরীর গল্প বলেছেন, যিনি রহস্যময় এক পাণ্ডুলিপি প্রকাশ করতে নিউইয়র্কে পালিয়ে যান এবং আত্মহত্যা করেন—যেন ক্রম বিলীন পৃথিবীতে অর্থ ধরে রাখার এক মরিয়া চেষ্টা তাঁর।
ক্রাসনাহোরকাইয়ের লেখায় কাহিনি প্রায় সময়ই বাক্যের ভেতর হারিয়ে যায়। তিনি লিখেছেন এমন বাক্য, যা একাধিক পৃষ্ঠা জুড়ে পাঠককে টেনে নেয় অবচেতনে, অবিরাম প্রবাহে।
তাঁর সাহিত্যে হাস্যরস ও ট্র্যাজেডি পাশাপাশি চলে। স্যাটানট্যাঙ্গো–এর মাতাল নাচের দৃশ্য যেমন নিঃশেষের প্রতীক, তেমনি ‘ব্যারন ওয়েঙ্কহাইমস হোমকামিং’ (২০১৬)-এ দেখা যায়, ফিরে আসা এক পরাজিত অভিজাতকে। যার মাধ্যমে প্রকাশ পায় সভ্যতার পচন ও মানুষের হাস্যকর ভ্রান্তি।
২০১৫ সালে ম্যান বুকার পুরস্কার পাওয়ার মধ্য দিয়েই প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পান ক্রাসনাহোরকাই। অনুবাদক জর্জ সির্টেস ও ওটিলি মুলজেট তাঁর জটিল হাঙ্গেরিয়ান ভাষাকে ইংরেজিতে রূপ দিতে বিশেষ ভূমিকা রাখেন। ‘হাডসন রিভিউ’ তাঁকে বর্ণনা করেছিল ‘অন্তহীন বাক্যের ভ্রমণশিল্পী’ হিসেবে।
চল্লিশ বছরের সৃষ্টিতে ক্রাসনাহোরকাইয়ের ভুবন চিত্র, সংগীত, দর্শন ও ভাষার মিলনে বিস্তৃত। সাম্প্রতিক উপন্যাস ‘হার্শট ০৭৭৬৯’ (২০২৪)–এ তিনি এক প্রবাহিত বাক্যে লিখেছেন নব্য-নাৎসি, নেকড়ে আর এক হতভাগ্য পদার্থবিদের কাহিনি—আধুনিক ইউরোপের নৈতিক পক্ষাঘাতের রূপক হিসেবে।
তাঁর সমগ্র সাহিত্যজগৎ এক অন্ধকার ও ধ্যানমগ্ন মহাবিশ্ব—যেখানে পতন, শূন্যতা ও করুণা পাশাপাশি থাকে। ‘সেইবো দেয়ার বিলো’ বইটিতে তিনি লিখেছেন, ‘সৌন্দর্য, যত ক্ষণস্থায়ীই হোক না কেন, তা পবিত্রতার প্রতিবিম্ব।’ এই বিশ্বাসই লাসলো ক্রাসনাহোরকাইকে সেই বিরল লেখক করে তুলেছে, যাঁর নৈরাশ্যও মুক্তির মতো দীপ্ত।

সম্প্রতি প্রায় দেড় শ বছর পর বিলাতে রবীন্দ্রনাথের প্রথম ঠিকানাটি খুঁজে বের করা হলো এবং সেখানে বসানো হলো একটা ফলক। সুযোগ হলো সেই আয়োজনের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার। সে গল্পটাই শোনাই।
০৬ আগস্ট ২০২২
জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল।
৬ দিন আগে
জনপ্রিয় কিশোর গোয়েন্দা সিরিজ তিন গোয়েন্দার স্রষ্টা রকিব হাসান মারা গেছেন। আজ বুধবার রাজধানীর একটি হাসপাতালে ডায়ালাইসিস চলাকালে তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।
১১ দিন আগে
হাঙ্গেরির সাহিত্যে অসীম জনপ্রিয়তা ও প্রভাব তাঁর; বিশ্বজোড়া আতঙ্ক ও সন্ত্রাসের দাপটেও শিল্পের শক্তি চেনায় তাঁর কলম। তিনি হাঙ্গেরিয়ান ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই; সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০২৫ সালে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।
১৭ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

হাঙ্গেরির সাহিত্যে অসীম জনপ্রিয়তা ও প্রভাব তাঁর; বিশ্বজোড়া আতঙ্ক ও সন্ত্রাসের দাপটেও শিল্পের শক্তি চেনায় তাঁর কলম। তিনি হাঙ্গেরিয়ান ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই; সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০২৫ সালে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।
আধুনিক হাঙ্গেরীয় সাহিত্যের একজন অন্যতম প্রধান ব্যক্তিত্ব লাসলো। অভিনব শৈলীর পাশাপাশি দার্শনিক গভীরতার জন্য তাঁর সাহিত্য সমাদৃত হয়েছে। তাঁকে ফ্রানৎস কাফকা ও স্যামুয়েল বেকেটের ঐতিহ্যের উত্তরাধিকারী হিসেবে বিবেচনা করা হয়। বিশ্বজোড়া আতঙ্ক ও সন্ত্রাসের মধ্যেও শিল্পের লেলিহান ঔজ্জ্বল্য ফুটে ওঠে লাসলোর লেখায়। তাই যুদ্ধবিধ্বস্ত সময়ের বুকে ফুলের মতো স্থান করে নিল তাঁর সাহিত্য।
লাসলোর জন্য সাহিত্যে এটা প্রথম পুরস্কার নয়, ২০১৪ সালে সাহিত্যকর্মের জন্য ম্যান বুকার ইন্টারন্যাশনাল পুরস্কার পান তিনি। এ পুরস্কার বিশ্বসাহিত্যে তাঁর অবস্থানকে সুদৃঢ় করে।
লাসলোর সাহিত্যের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো—স্বতন্ত্র শৈলী ও গঠন। উপন্যাসের মূল বিষয়বস্তু হলো—মানবতার অবক্ষয়, ধ্বংসের অনিবার্যতা ও আধুনিক জীবনের লক্ষ্যহীন চলন। তাঁর চরিত্রদের মধ্যে প্রায়ই একধরনের হতাশা ও বিচ্ছিন্নতা দেখা যায়; তারা এমন এক জগতের পথিক, যেখানে নৈতিকতা ও আশা বিলীনপ্রায়।
১৯৮৫ সালে প্রকাশিত ‘স্যাটানটাঙ্গো’ নামে প্রথম উপন্যাস লিখেই খ্যাতি পান লাসলো। এই উপন্যাসে বিচ্ছিন্ন ও পতিত এক কৃষি সমবায় গ্রামের জীবন তুলে ধরেছেন তিনি। সেখানে একধরনের বিভ্রম ও আশার জন্ম দেয় এক রহস্যময় আগন্তুকের আগমনে। এই উপন্যাস অবলম্বনে একই শিরোনামে সাত ঘণ্টার কালজয়ী চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন বিখ্যাত পরিচালক বেলা টর।
লাসলোর আরেকটি ফিকশন উপন্যাস হলো— ‘দ্য মেলানকোলি অব রেজিস্ট্যান্স’। হাঙ্গেরির এক কাল্পনিক শহরের জীবন ফুটে উঠেছে এই উপন্যাসে। সামুদ্রিক প্রাণী হাঙরের প্রদর্শনীকে কেন্দ্র করে মানুষের মধ্যকার উন্মাদনা, সামাজিক বিশৃঙ্খলা ও একনায়কতন্ত্রের উত্থানের চিত্র আঁকা হয়েছে তাতে।
‘ওয়ার অ্যান্ড ওয়ার’ লাসলোর আরেকটি বিখ্যাত উপন্যাস। লম্বা লম্বা বাক্যে লেখা এই উপন্যাস লাসলোর শৈলী নিয়ে পাঠকদের নতুন করে ভাবায়। উপন্যাসের নায়ক একটি পাণ্ডুলিপি রক্ষা করার জন্য বিশ্বের বিভিন্ন শহর ঘুরে বেড়ায়। বিশ্বের চূড়ান্ত ধ্বংসের একটি কাব্যিক বর্ণনা পাওয়া যায় এই উপন্যাসে।
এবার লাসলোকে পুরস্কারের জন্য মনোনীত করার নেপথ্যে নোবেল কমিটির বড় কারণ ছিল তাঁর সাহিত্যে শিল্পের জয়ধ্বনি তোলার প্রচেষ্টা। যখন সারা বিশ্বের বেশ কিছু দেশ যুদ্ধবিধ্বস্ত বা যুদ্ধের জন্য উৎসুক, তখন বারবার শিল্পের মোহিনী প্রেম ও বন্ধনের কথা মনে করিয়ে দিতে চায় লাসলোর সাহিত্য।

হাঙ্গেরির সাহিত্যে অসীম জনপ্রিয়তা ও প্রভাব তাঁর; বিশ্বজোড়া আতঙ্ক ও সন্ত্রাসের দাপটেও শিল্পের শক্তি চেনায় তাঁর কলম। তিনি হাঙ্গেরিয়ান ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই; সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০২৫ সালে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।
আধুনিক হাঙ্গেরীয় সাহিত্যের একজন অন্যতম প্রধান ব্যক্তিত্ব লাসলো। অভিনব শৈলীর পাশাপাশি দার্শনিক গভীরতার জন্য তাঁর সাহিত্য সমাদৃত হয়েছে। তাঁকে ফ্রানৎস কাফকা ও স্যামুয়েল বেকেটের ঐতিহ্যের উত্তরাধিকারী হিসেবে বিবেচনা করা হয়। বিশ্বজোড়া আতঙ্ক ও সন্ত্রাসের মধ্যেও শিল্পের লেলিহান ঔজ্জ্বল্য ফুটে ওঠে লাসলোর লেখায়। তাই যুদ্ধবিধ্বস্ত সময়ের বুকে ফুলের মতো স্থান করে নিল তাঁর সাহিত্য।
লাসলোর জন্য সাহিত্যে এটা প্রথম পুরস্কার নয়, ২০১৪ সালে সাহিত্যকর্মের জন্য ম্যান বুকার ইন্টারন্যাশনাল পুরস্কার পান তিনি। এ পুরস্কার বিশ্বসাহিত্যে তাঁর অবস্থানকে সুদৃঢ় করে।
লাসলোর সাহিত্যের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো—স্বতন্ত্র শৈলী ও গঠন। উপন্যাসের মূল বিষয়বস্তু হলো—মানবতার অবক্ষয়, ধ্বংসের অনিবার্যতা ও আধুনিক জীবনের লক্ষ্যহীন চলন। তাঁর চরিত্রদের মধ্যে প্রায়ই একধরনের হতাশা ও বিচ্ছিন্নতা দেখা যায়; তারা এমন এক জগতের পথিক, যেখানে নৈতিকতা ও আশা বিলীনপ্রায়।
১৯৮৫ সালে প্রকাশিত ‘স্যাটানটাঙ্গো’ নামে প্রথম উপন্যাস লিখেই খ্যাতি পান লাসলো। এই উপন্যাসে বিচ্ছিন্ন ও পতিত এক কৃষি সমবায় গ্রামের জীবন তুলে ধরেছেন তিনি। সেখানে একধরনের বিভ্রম ও আশার জন্ম দেয় এক রহস্যময় আগন্তুকের আগমনে। এই উপন্যাস অবলম্বনে একই শিরোনামে সাত ঘণ্টার কালজয়ী চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন বিখ্যাত পরিচালক বেলা টর।
লাসলোর আরেকটি ফিকশন উপন্যাস হলো— ‘দ্য মেলানকোলি অব রেজিস্ট্যান্স’। হাঙ্গেরির এক কাল্পনিক শহরের জীবন ফুটে উঠেছে এই উপন্যাসে। সামুদ্রিক প্রাণী হাঙরের প্রদর্শনীকে কেন্দ্র করে মানুষের মধ্যকার উন্মাদনা, সামাজিক বিশৃঙ্খলা ও একনায়কতন্ত্রের উত্থানের চিত্র আঁকা হয়েছে তাতে।
‘ওয়ার অ্যান্ড ওয়ার’ লাসলোর আরেকটি বিখ্যাত উপন্যাস। লম্বা লম্বা বাক্যে লেখা এই উপন্যাস লাসলোর শৈলী নিয়ে পাঠকদের নতুন করে ভাবায়। উপন্যাসের নায়ক একটি পাণ্ডুলিপি রক্ষা করার জন্য বিশ্বের বিভিন্ন শহর ঘুরে বেড়ায়। বিশ্বের চূড়ান্ত ধ্বংসের একটি কাব্যিক বর্ণনা পাওয়া যায় এই উপন্যাসে।
এবার লাসলোকে পুরস্কারের জন্য মনোনীত করার নেপথ্যে নোবেল কমিটির বড় কারণ ছিল তাঁর সাহিত্যে শিল্পের জয়ধ্বনি তোলার প্রচেষ্টা। যখন সারা বিশ্বের বেশ কিছু দেশ যুদ্ধবিধ্বস্ত বা যুদ্ধের জন্য উৎসুক, তখন বারবার শিল্পের মোহিনী প্রেম ও বন্ধনের কথা মনে করিয়ে দিতে চায় লাসলোর সাহিত্য।

সম্প্রতি প্রায় দেড় শ বছর পর বিলাতে রবীন্দ্রনাথের প্রথম ঠিকানাটি খুঁজে বের করা হলো এবং সেখানে বসানো হলো একটা ফলক। সুযোগ হলো সেই আয়োজনের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার। সে গল্পটাই শোনাই।
০৬ আগস্ট ২০২২
জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল।
৬ দিন আগে
জনপ্রিয় কিশোর গোয়েন্দা সিরিজ তিন গোয়েন্দার স্রষ্টা রকিব হাসান মারা গেছেন। আজ বুধবার রাজধানীর একটি হাসপাতালে ডায়ালাইসিস চলাকালে তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।
১১ দিন আগে
হাঙ্গেরির ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই এবার (২০২৫ সালে) সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন তাঁর দীর্ঘ, দার্শনিক বাক্য ও মানবজীবনের বিশৃঙ্খলার গভীর অনুসন্ধানী সাহিত্যকর্মের জন্য। সুইডিশ একাডেমি তাঁকে সম্মান জানিয়েছে ‘শিল্পের শক্তিকে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করার’ জন্য।
১৭ দিন আগে