সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী

অনেক সময় মনে হয় রবীন্দ্রনাথ লোক ছিলেন না অতিশয় দীনহীন এই বাংলাদেশের। পৌরুষে-প্রাণে, স্বভাবে-আচরণে, উদ্যম-উদ্ভাবনায় একক তিনি, একাকীও; তাঁর সঙ্গে এ দেশের আর-পাঁচটি খর্বাকৃতি বস্তুর সাদৃশ্য নেই। মনে হয় অনেক ঊর্ধ্বে তিনি, এসেছেন ব্যত্যয় হিসেবে, অতিপ্রাকৃতিক ঘটনার মতো আকস্মিকতায়, অপ্রত্যাশিত রূপে।
কিন্তু তবু এই দেশেরই মানুষই ছিলেন রবীন্দ্রনাথ, বাঙালিই ছিলেন ব্যক্তিজীবনে, এবং ব্যক্তিনিয়ন্ত্রিত হয় যদ্দ্বারা সেই সমাজজীবনে।
তাঁকে বলা হয়েছে বিশ্বকবি। নির্বিশেষে সর্বজনীনতা অবশ্যই আছে রবীন্দ্রনাথের, কিন্তু তাঁর বিশেষ পরিচয়, একান্ত ও অন্তরঙ্গ পরিচয় তাঁর বাঙালিত্বের মধ্যেই। রবীন্দ্রপ্রতিভার স্বভাব ও ঝোঁক তাঁর বাঙালিত্ব দ্বারাই অনিবার্য ও স্বাভাবিকরূপে প্রভাবিত, এবং সেই প্রভাবে নিয়ন্ত্রিত। বাংলা ভাষায় তিনি শ্রেষ্ঠতম লেখক; ভাষার তিনি দাস ছিলেন না, ভাষা তাঁর আজ্ঞাবহ ছিল—এ কথায় অসত্য নেই যদিও, তবু ভাষার যে নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা, তা অবজ্ঞেয় নয়। এ সেই ক্ষমতা শ্রেষ্ঠতম লেখকের ক্ষেত্রেও যা অপরিহার্য রূপে কার্যকর। কিন্তু আরও বড় সত্য আছে, একটি প্রধান সত্য, এমনকি হতে পারে প্রধানতম সত্য। সে হচ্ছে এই ঘটনা যে রবীন্দ্রনাথ ট্র্যাজেডির লেখক ছিলেন না, লেখক ছিলেন মহাকাব্যের। তাঁর অলৌকিক প্রতিভা ট্র্যাজেডির দিকে ঝুঁকে পড়েনি, ঝুঁকেছিল মহাকাব্যের দিকে। যদিও তিনি কোনো মহাকাব্য লেখেননি, গীতিকাব্যই লিখেছেন।
ব্যাপারটা ব্যক্তিগত নয়। তাঁকে সিদ্ধান্ত নিতে হয়নি যে তিনি ট্র্যাজেডির লেখক হবেন নাকি লেখক হবেন মহাকাব্যের। এই সিদ্ধান্ত এসেছে তাঁর নিয়ামক বাঙালিত্ব থেকে।
মহাকাব্য স্থানকে যত গুরুত্ব দেয়, ট্র্যাজেডি তত দেয় না। সর্বজনীন হয়েও মহাকাব্য বিশেষ দেশের ও দেশান্তর্গত কালের। বিষয়বস্তুর নির্বাচনে রবীন্দ্রনাথ তাঁর দেশেরই মানুষ—দেশের অতীত ও বর্তমানের। কিন্তু সে-কথা আমরা বিশেষভাবে ভাবছি না এখানে। বিশেষভাবে ভাববার কথা এটি যে ট্র্যাজেডির প্রতি রবীন্দ্রনাথের যে অপক্ষপাত, তাতে তাঁর বাঙালিত্বই প্রতিফলিত। বাঙালির জীবনে নাটক অল্প, ট্র্যাজেডি স্বল্পতর। দুঃখ ও পীড়া বাঙালির জীবনের নিত্যনৈমিত্তিক বস্তু, কিন্তু যে দুঃসাহস, অশুভের সঙ্গে সংগ্রামে যে দৃঢ়তা থাকলে দুঃখ ও পীড়া ট্র্যাজেডিতে উত্তীর্ণ হয়—অভাব সেই প্রচণ্ড সাহসের, সেই অনমনীয় দৃঢ়তার। এই কারণে একদিকে যেমন তুষ্টি আসে সহজে অন্যদিকে তেমনি সন্ধি ও সহযোগিতাই প্রধান নীতি হয়ে দাঁড়ায়। অশুভ অবশ্যই আছে, জানি সে রয়েছে, তবু তাকে জানতে চাই না সম্পূর্ণরূপে, চিনতে চাই না পরিপূর্ণ পরিচয়ে, কেননা ভয় আছে দ্বন্দ্বে। সম্মুখ মুখোমুখিতে। রবীন্দ্র-সাহিত্যে অশুভ আছে, কিন্তু তাঁর চিত্রকলাতে যেমন আছে সাহিত্যে তেমন নেই। সাহিত্যে অশুভ প্রায়ই অবগুণ্ঠিত, অনেক সময়ে কুণ্ঠিত, এবং যখন প্রকাশিত, যেমন ‘শিশুতীর্থ’, তখন শুভজন্মের জয়ধ্বনি দ্বারা বিধৌত। ভয়ংকর ও সুন্দর হয়ে আছে তাঁর জগতে, যেমন এসেছে রানী সুদর্শনার কাছে। অশুভ চরম নয় কোথাও, শেষ কথাও নয় কোনো রচনায়। মানুষের প্রবৃত্তিকে চিত্রিত করে দেখিয়েছেন রবীন্দ্রনাথ তাঁর উপন্যাসে। তুলনাবিহীন পাশবিক অন্ধকারের চিত্র আছে ‘চতুরঙ্গে’। কিন্তু সে প্রবৃত্তি মানবিকই, অশুভ নয়, আধিদৈবিক। কোনো বিবেচনাতেই পাপ নয়; পদস্খলনের সম্ভাবনা শুধু। বিপরীত পক্ষে সে ব্যাধিও নয় সমাজের।
জীবনে দুর্ভোগ এত বেশি রূঢ় যে আমরা নতুন করে দুর্ভোগকে দেখতে চাই না সাহিত্যে। আমরা অন্তরাল চাই। সস্তা চলচ্চিত্র, চটুল গান, যৌনতা—এসব বস্তু মধ্যবিত্ত বাঙালির পলায়ন-কেন্দ্র। সাহিত্যেও তা-ই আছে, পলায়নের আকাঙ্ক্ষা আছে খুব বড় করে। আধ্যাত্মিকতাও পলায়নের বাসনা থেকেই উদ্ভূত। সেখানে আধ্যাত্মিক চিন্তায়, আত্মার সদ্গতি কামনা নেই, দৈহিক সুখের গোপন ও ভীরু লালসা আছে বড় হয়ে। নাটক যে আমাদের সাহিত্যের উজ্জ্বলতম অংশ নয়, তার কারণ অবশ্যই দ্বন্দ্ব-ভীরুতা। রবীন্দ্রনাথের সফলতা নাটকেই সর্বাপেক্ষা স্বল্প। কেননা, তাঁর নাটকে শুভের জয় পূর্বনির্ধারিত। আর তাঁর পাঠকও ট্র্যাজেডি চায়নি পড়তে, চেয়েছে রূপকথা—যা নাকি পুরস্কারে ও তিরস্কারে পরিপূর্ণ।
রবীন্দ্রনাথের তাই ট্র্যাজেডি লেখবার কথা নয়, তিনি বাঙালি বলে। সেটাকে তাঁর দুর্বলতা বলার দরকার নেই, সেটা তাঁর প্রতিভার নিজস্ব স্বভাব। কোনো রূপকল্পে লিখেছেন লেখক তা দিয়ে তাঁর বিচার হয় না, বিচার হয় লেখার শিল্পমূল্য দিয়ে, শিল্পগত উৎকর্ষ দিয়ে। তদুপরি রূপকল্প হিসেবেও মহাকাব্য যে ট্র্যাজেডির পশ্চাদ্বর্তী এমন কথাও জোর দিয়ে বলবার আবশ্যকতা দেখি না। কিন্তু মহাকাব্য রবীন্দ্রনাথ একবারই লিখেছেন, ‘গোরা’তে। তখন উদ্দীপনা ছিল সমগ্র দেশে, ঐক্য ছিল জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে। সেই ঐক্য ও উদ্দীপনা একটা বড় বস্তু, তেমন বস্তু যার অভাব ঘটলে মহাকাব্য রচনা হয় না। বঙ্গভঙ্গবিরোধী আন্দোলন একই সঙ্গে ঐক্য ও উদ্দীপনা এনেছিল এই দেশে, অন্তত দেশের সেই অংশে যে-অংশে সামাজিক অবস্থান ছিল রবীন্দ্রনাথের। কিন্তু পরে উদ্দীপনার অবসান ঘটেছে, ঐক্যও ছিন্নভিন্ন হয়ে গেছে। বঙ্গভঙ্গবিরোধী আন্দোলনে নেতিবাচক শক্তিই ছিল প্রধান, যখন তার লক্ষ্য অর্জিত হলো তখন অবসানের ক্লান্তিতে জাতীয় বিচ্ছিন্নতা ও বিভেদ যতটা দ্রুত বিস্তারশীল হয়ে উঠল, তত দ্রুত তার বিস্তার বোধ হয় আগে আর কখনো হয়নি। আপসপন্থীরা একদিকে গেলেন, নিরাপসবাদীরা অন্যদিকে। প্রতিষ্ঠিত মধ্যবিত্ত হিন্দুর স্বার্থ এবং উন্মেষকামী মধ্যবিত্ত মুসলিম স্বার্থে সংঘাত হয়ে দাঁড়াল অপরিহার্য। গ্রাম ও শহরের বিচ্ছিন্নতা বৃদ্ধি পেল ক্রমশ। নতুন কোনো ‘গোরা’ লেখা আর সম্ভব হলো না রবীন্দ্রনাথের মতো অসামান্য শিল্পীর পক্ষেও। সেই পথে আর গেলেন না তিনি, অসামান্য বলেই গেলেন না, সামান্য হলে, কবি কায়কোবাদ হলে যেতেন হয়তো এবং ব্যর্থ হতেন দৃষ্টিকটুরূপে। কেননা, মহাকাব্য নিজস্ব সাংস্কৃতিক পটভূমি ছাড়া রচিত হয়নি কখনো, হতে পারে না কিছুতেই। অসাধারণ বাস্তববুদ্ধি ছিল রবীন্দ্রনাথের, তাই কবিতা লিখেছেন অজস্র, ছোটগল্প লিখেছেন বহু, উপন্যাস লিখেছেন অনেক কটি, কিন্তু মহাকাব্য আর লেখেননি, উদ্যমও নেননি লেখার। ‘চতুরঙ্গ’, ‘ঘরে বাইরে’, ‘চার অধ্যায়’, ‘শেষের কবিতা’—সমগ্র দেশ এদের কোনোটিতেই আসেনি, এমনকি ‘যোগাযোগ’—এ-ও নয়। ছোটগল্পে তো আসবার কথাই ছিল না, কবিতাতে ততোধিক।
মহাকাব্যিক প্রতিভা মহাকাব্য আর দ্বিতীয়বার লিখলেন না, ‘গোরা’কে ছাড়িয়ে গেল না সেই প্রতিভা, যা নিজেকে নিজে অতিক্রম করেছে সমগ্র জীবনে। এর কারণ রবীন্দ্রনাথ নিজে নন, কারণ বাঙালি জীবনের বিভেদ ও বিচ্ছিন্নতা, নির্বেদ ও গ্লানি। যে ঐক্য ও উদ্দীপনা বঙ্গভঙ্গবিরোধী আন্দোলন একদিন সম্ভব করে তুলেছিল, বাংলাদেশে আবার তার উদ্ভব হতে পারত যদি সূচনা হতো নতুনতর, প্রবলতর কোনো আন্দোলনের। সে-আন্দোলনকে অবশ্যই হতে হতো সমাজতান্ত্রিক। কেননা, অন্য কোনো আন্দোলনের পক্ষে সম্ভব হতো না শ্রেণিবিভক্ত সমাজে ঐক্য আনয়ন করা। ইংরেজবিরোধিতা বঙ্গভঙ্গ-রদের পরবর্তী সময়ে এক পথে অগ্রসর হয়নি, নানা পথে গিয়েছে—অত্যন্ত স্বাভাবিকভাবে। সমাজতান্ত্রিক আন্দোলন প্রবল হয়নি বাংলাদেশে। হলেও তাতে রবীন্দ্রনাথের থাকবার কথা ছিল না, বিপ্লব-পরবর্তী রুশ দেশ ভ্রমণ সত্ত্বেও নয়। শেষ জীবনে রবীন্দ্রনাথ অত্যন্ত দৃঢ় কণ্ঠে প্রতিবাদ করেছেন মানুষের প্রতি মানুষের অবিচারের বিরুদ্ধে, সভ্যতার গভীরে যে সংকট তাকে প্রকটিত করেছেন লেখার মধ্য দিয়ে, কিন্তু সমস্ত বক্তব্য যে একত্র ও এক হয়ে বৃহৎ কোনো রচনার আকার নেবে, তা আর হয়ে ওঠেনি।
রবীন্দ্রনাথ যে শ্রেষ্ঠতম বাঙালি সেটা সত্য এই দিক থেকেও যে বাঙালি জীবনের বিভেদ ও বিচ্ছিন্নতাকে তিনি যেভাবে প্রতীয়মান করে তুলেছেন শুধু লিখে নয়, না-লিখেও—তেমনটি অন্য কেউ পারেননি। পরবর্তীকালে বিভেদ ও বিচ্ছিন্নতা বৃদ্ধি পেয়েছে আরও, পাবে যে তার লক্ষণ রবীন্দ্রনাথেই ছিল। অন্যদিকে আবার এটাও লক্ষ করা খুব সহজ যে ‘গোরা’র লেখক যখন ‘শেষের কবিতা’ লেখেন তখন যে তাঁর শক্তি বৈচিত্র্য ও সৃজন-বিপুলতাই শুধু প্রকাশ পায় তা-ই নয়, তদ্দ্বারা মহাকাব্যের অপস্রিয়মাণতাও প্রমাণিত হয়। বাক্যবীর অমিত রায় সেই অপস্রিয়মাণতারই প্রতিভূ।
সাধারণভাবে বলতে গেলে বলা যায়, বড় লেখকেরা দুই শ্রেণির। শেক্সপিয়ারের মতো নাটকীয়, অথবা টলস্টয়ের মতো মহাকাব্যিক। রবীন্দ্রনাথ মহাকাব্যের লেখক, তবু তিনি টলস্টয়ের মতো নন, সম্পূর্ণত। রবীন্দ্রনাথের আধ্যাত্মিকতা টলস্টয়ের নেই। দরিদ্র দেশে আধ্যাত্মিকতা না থাকলেই নয়। জীবনে যে ব্যক্তি স্বপ্নের মতো সমৃদ্ধ তাঁর পক্ষে স্বপ্ন না দেখলেও চলে; কিন্তু যে ব্যক্তি দরিদ্র স্বপ্ন না থাকলে তাঁর জীবন থাকে না। বস্তুর অভাব ঘটলে আধ্যাত্মিকতার সুবিধা হয়, বিশেষ রকমের। রবীন্দ্রনাথ অবশ্যই আধ্যাত্মিক ছিলেন না ওই নোংরা বস্তুতান্ত্রিক অর্থে। তাঁর জীবনে বস্তুর অভাব ছিল না, কিন্তু তাঁর বাঙালি সত্তা, তাঁর সামাজিক ঐতিহাসিক চরিত্র যে তাঁকে অনিবার্য হাতে আধ্যাত্মিকতার পথানুসরণে বাধ্য করছে সে বিষয়ে সন্দেহ কোথায়? সমৃদ্ধ দেশে জন্মগ্রহণ করলে রবীন্দ্রনাথ আধ্যাত্মবাদী হতেন না। হয়তো হতেন বীরত্ববাদী, হয়তো-বা বুদ্ধিবাদের প্রবক্তা।
বাঙালি জীবনে শ্রেণিভেদ ও সামন্তবাদী সংস্কৃতির অত্যন্ত গভীর অবস্থান জীবনের সব ক্ষেত্রে ব্যক্তিকে, বিশেষ বিশেষ ব্যক্তিকে, বলা যায় বীরকে, গুরুত্ব দিয়েছে অত্যধিক এবং সর্বদাই সচেষ্ট থেকেছে সুবিধাভোগী শ্রেণির নেতৃত্বকে অক্ষুণ্ন রাখতে। এই মানসিকতা এমনকি রবীন্দ্রনাথকেও অব্যাহতি দেয়নি। একদিকে তিনি মহাপুরুষের কথা বারবার বলেছেন, প্রতীক্ষা করেছেন মহামানবের। অন্যদিকে আবার একক উদ্যম নিয়েছেন স্থাপন করবেন আদর্শ খামার, আদর্শ বিদ্যালয়, আদর্শ সমবায় ও গ্রাম। মহামানবিক একক উদ্যমে একাকী হয়ে পড়েছেন, সফলতা আসেনি, নাড়া খায়নি সমাজ। নেতৃত্ব থেকেছে ব্যক্তির হাতে, ব্যক্তি উপচে শ্রেণির হাতে কখনো কখনো হয়তো-বা, কিন্তু তার বাইরে কখনো যায়নি। যায়নি জনসাধারণের কাছে এবং ব্যর্থতার কারণও এইখানেই ছিল, জনসাধারণের এই অংশগ্রহণ না করায়। রবীন্দ্রনাথের পর সামন্তব্যবস্থা ক্রমশ ক্ষীণ হয়েছে। প্রবল হয়েছে মধ্যবিত্ত।
রবীন্দ্রনাথ বারবার বলেছেন তিনি রোমান্টিক! আমারে শুধাও যবে, ‘এরে কভু বলে বাস্তবিক’? আমি বলি, ‘কখনো না, আমি রোমান্টিক’ (‘নবজাতক’)। আরও স্পষ্ট কথা আছে ‘সানাই’য়ে: ‘এ গলিতে বাস মোর, তবু আমি জন্ম রোমান্টিক।’ গলিতেই বসবাস বাঙালির, তবু সে জন্ম রোমান্টিক। গলিকে গলি বলে মানে না, থেকে থেকে খোঁজে দক্ষিণের বাতাস, খোঁজে অলক্ষ্য আকাশ। ফলে গলি গলিই থেকে যায়, বদলায় না। বাতাস থাকে অবরুদ্ধ, আকাশ অলক্ষ্য; শুধু হালকা কল্পনা থাকে সজাগ। হরিপদ কেরানিরা আকবর বাদশার সঙ্গে আত্মীয়তা বোধ করে অত্যন্ত সন্তুষ্ট থাকে। ‘ছিন্নপত্র’-এ রবীন্দ্রনাথ পল্লির চিত্র দিয়েছেন এই রকম: ‘যখন গ্রামের চারদিকের জঙ্গলগুলো জলে ডুবে পাতা-লতা-গুল্ম পচতে থাকে, গোয়ালঘর ও লোকালয়ের বিবিধ আবর্জনা চারদিকে ভেসে বেড়ায়, পাট পচানির গন্ধে বাতাস ভারাক্রান্ত, উলঙ্গ পেটমোটা পা-সরু রুগ্ণ ছেলেমেয়েরা এখানে-সেখানে জলে-কাদায় মাখামাখি ঝাঁপাঝাঁপি করতে থাকে, মশার ঝাঁক স্থির জলের ওপর একটি বাষ্পস্তরের বাস্পস্তরের মতো ঝাঁক বেঁধে ভেসে বেড়ায়, গৃহস্থের মেয়েরা ভিজে শাড়ি গায়ে জড়িয়ে বাদলার ঠান্ডা হাওয়ায় বৃষ্টির জলে ভিজতে ভিজতে হাঁটুর ওপরে কাপড় তুলে জল ঠেলে ঠেলে সহিষ্ণু জন্তুর মতো ঘরকন্নার নিত্য কর্ম করে যায়—তখন সে দৃশ্য কোনোমতেই ভালো লাগে না! ঘরে ঘরে বাতে ধরছে, পা ফুলছে, সর্দি হচ্ছে, জ্বরে ধরছে, পিলে-ওয়ালা ছেলেরা অবিশ্রাম কাঁদছে, কিছুতেই কেউ তাদের বাঁচাতে পারছে না—এত অবহেলা, অস্বাস্থ্য, অসৌন্দর্য, দারিদ্র্য, মানুষের বাসস্থানে কি একমুহূর্ত সহ্য হয়?’ কিন্তু এই পল্লি ভিন্নতর হয়ে উঠেছে তাঁর কবিতায়, তাঁর বাস্তবতার জায়গায় জেগে উঠেছে কাব্যময়তা। ‘যেতে যেতে পথপাশে/পানা পুকুরের গন্ধ আসে/সেই গন্ধে পায় মন/বহুদিন রজনীর সকরুণ স্নিগ্ধ আলিঙ্গন’—এমন ক্ষেত্রে পানাপুকুরের দুর্গন্ধ সত্য নয়, সত্য অন্য এক অনুভবের আনন্দ। বাস্তববিনাশী এই রোমান্টিসিজমের মধ্যে যে বাঙালিত্ব আছে তা রবীন্দ্রনাথেও ছিল।
লেখক: ইমেরিটাস অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

অনেক সময় মনে হয় রবীন্দ্রনাথ লোক ছিলেন না অতিশয় দীনহীন এই বাংলাদেশের। পৌরুষে-প্রাণে, স্বভাবে-আচরণে, উদ্যম-উদ্ভাবনায় একক তিনি, একাকীও; তাঁর সঙ্গে এ দেশের আর-পাঁচটি খর্বাকৃতি বস্তুর সাদৃশ্য নেই। মনে হয় অনেক ঊর্ধ্বে তিনি, এসেছেন ব্যত্যয় হিসেবে, অতিপ্রাকৃতিক ঘটনার মতো আকস্মিকতায়, অপ্রত্যাশিত রূপে।
কিন্তু তবু এই দেশেরই মানুষই ছিলেন রবীন্দ্রনাথ, বাঙালিই ছিলেন ব্যক্তিজীবনে, এবং ব্যক্তিনিয়ন্ত্রিত হয় যদ্দ্বারা সেই সমাজজীবনে।
তাঁকে বলা হয়েছে বিশ্বকবি। নির্বিশেষে সর্বজনীনতা অবশ্যই আছে রবীন্দ্রনাথের, কিন্তু তাঁর বিশেষ পরিচয়, একান্ত ও অন্তরঙ্গ পরিচয় তাঁর বাঙালিত্বের মধ্যেই। রবীন্দ্রপ্রতিভার স্বভাব ও ঝোঁক তাঁর বাঙালিত্ব দ্বারাই অনিবার্য ও স্বাভাবিকরূপে প্রভাবিত, এবং সেই প্রভাবে নিয়ন্ত্রিত। বাংলা ভাষায় তিনি শ্রেষ্ঠতম লেখক; ভাষার তিনি দাস ছিলেন না, ভাষা তাঁর আজ্ঞাবহ ছিল—এ কথায় অসত্য নেই যদিও, তবু ভাষার যে নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা, তা অবজ্ঞেয় নয়। এ সেই ক্ষমতা শ্রেষ্ঠতম লেখকের ক্ষেত্রেও যা অপরিহার্য রূপে কার্যকর। কিন্তু আরও বড় সত্য আছে, একটি প্রধান সত্য, এমনকি হতে পারে প্রধানতম সত্য। সে হচ্ছে এই ঘটনা যে রবীন্দ্রনাথ ট্র্যাজেডির লেখক ছিলেন না, লেখক ছিলেন মহাকাব্যের। তাঁর অলৌকিক প্রতিভা ট্র্যাজেডির দিকে ঝুঁকে পড়েনি, ঝুঁকেছিল মহাকাব্যের দিকে। যদিও তিনি কোনো মহাকাব্য লেখেননি, গীতিকাব্যই লিখেছেন।
ব্যাপারটা ব্যক্তিগত নয়। তাঁকে সিদ্ধান্ত নিতে হয়নি যে তিনি ট্র্যাজেডির লেখক হবেন নাকি লেখক হবেন মহাকাব্যের। এই সিদ্ধান্ত এসেছে তাঁর নিয়ামক বাঙালিত্ব থেকে।
মহাকাব্য স্থানকে যত গুরুত্ব দেয়, ট্র্যাজেডি তত দেয় না। সর্বজনীন হয়েও মহাকাব্য বিশেষ দেশের ও দেশান্তর্গত কালের। বিষয়বস্তুর নির্বাচনে রবীন্দ্রনাথ তাঁর দেশেরই মানুষ—দেশের অতীত ও বর্তমানের। কিন্তু সে-কথা আমরা বিশেষভাবে ভাবছি না এখানে। বিশেষভাবে ভাববার কথা এটি যে ট্র্যাজেডির প্রতি রবীন্দ্রনাথের যে অপক্ষপাত, তাতে তাঁর বাঙালিত্বই প্রতিফলিত। বাঙালির জীবনে নাটক অল্প, ট্র্যাজেডি স্বল্পতর। দুঃখ ও পীড়া বাঙালির জীবনের নিত্যনৈমিত্তিক বস্তু, কিন্তু যে দুঃসাহস, অশুভের সঙ্গে সংগ্রামে যে দৃঢ়তা থাকলে দুঃখ ও পীড়া ট্র্যাজেডিতে উত্তীর্ণ হয়—অভাব সেই প্রচণ্ড সাহসের, সেই অনমনীয় দৃঢ়তার। এই কারণে একদিকে যেমন তুষ্টি আসে সহজে অন্যদিকে তেমনি সন্ধি ও সহযোগিতাই প্রধান নীতি হয়ে দাঁড়ায়। অশুভ অবশ্যই আছে, জানি সে রয়েছে, তবু তাকে জানতে চাই না সম্পূর্ণরূপে, চিনতে চাই না পরিপূর্ণ পরিচয়ে, কেননা ভয় আছে দ্বন্দ্বে। সম্মুখ মুখোমুখিতে। রবীন্দ্র-সাহিত্যে অশুভ আছে, কিন্তু তাঁর চিত্রকলাতে যেমন আছে সাহিত্যে তেমন নেই। সাহিত্যে অশুভ প্রায়ই অবগুণ্ঠিত, অনেক সময়ে কুণ্ঠিত, এবং যখন প্রকাশিত, যেমন ‘শিশুতীর্থ’, তখন শুভজন্মের জয়ধ্বনি দ্বারা বিধৌত। ভয়ংকর ও সুন্দর হয়ে আছে তাঁর জগতে, যেমন এসেছে রানী সুদর্শনার কাছে। অশুভ চরম নয় কোথাও, শেষ কথাও নয় কোনো রচনায়। মানুষের প্রবৃত্তিকে চিত্রিত করে দেখিয়েছেন রবীন্দ্রনাথ তাঁর উপন্যাসে। তুলনাবিহীন পাশবিক অন্ধকারের চিত্র আছে ‘চতুরঙ্গে’। কিন্তু সে প্রবৃত্তি মানবিকই, অশুভ নয়, আধিদৈবিক। কোনো বিবেচনাতেই পাপ নয়; পদস্খলনের সম্ভাবনা শুধু। বিপরীত পক্ষে সে ব্যাধিও নয় সমাজের।
জীবনে দুর্ভোগ এত বেশি রূঢ় যে আমরা নতুন করে দুর্ভোগকে দেখতে চাই না সাহিত্যে। আমরা অন্তরাল চাই। সস্তা চলচ্চিত্র, চটুল গান, যৌনতা—এসব বস্তু মধ্যবিত্ত বাঙালির পলায়ন-কেন্দ্র। সাহিত্যেও তা-ই আছে, পলায়নের আকাঙ্ক্ষা আছে খুব বড় করে। আধ্যাত্মিকতাও পলায়নের বাসনা থেকেই উদ্ভূত। সেখানে আধ্যাত্মিক চিন্তায়, আত্মার সদ্গতি কামনা নেই, দৈহিক সুখের গোপন ও ভীরু লালসা আছে বড় হয়ে। নাটক যে আমাদের সাহিত্যের উজ্জ্বলতম অংশ নয়, তার কারণ অবশ্যই দ্বন্দ্ব-ভীরুতা। রবীন্দ্রনাথের সফলতা নাটকেই সর্বাপেক্ষা স্বল্প। কেননা, তাঁর নাটকে শুভের জয় পূর্বনির্ধারিত। আর তাঁর পাঠকও ট্র্যাজেডি চায়নি পড়তে, চেয়েছে রূপকথা—যা নাকি পুরস্কারে ও তিরস্কারে পরিপূর্ণ।
রবীন্দ্রনাথের তাই ট্র্যাজেডি লেখবার কথা নয়, তিনি বাঙালি বলে। সেটাকে তাঁর দুর্বলতা বলার দরকার নেই, সেটা তাঁর প্রতিভার নিজস্ব স্বভাব। কোনো রূপকল্পে লিখেছেন লেখক তা দিয়ে তাঁর বিচার হয় না, বিচার হয় লেখার শিল্পমূল্য দিয়ে, শিল্পগত উৎকর্ষ দিয়ে। তদুপরি রূপকল্প হিসেবেও মহাকাব্য যে ট্র্যাজেডির পশ্চাদ্বর্তী এমন কথাও জোর দিয়ে বলবার আবশ্যকতা দেখি না। কিন্তু মহাকাব্য রবীন্দ্রনাথ একবারই লিখেছেন, ‘গোরা’তে। তখন উদ্দীপনা ছিল সমগ্র দেশে, ঐক্য ছিল জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে। সেই ঐক্য ও উদ্দীপনা একটা বড় বস্তু, তেমন বস্তু যার অভাব ঘটলে মহাকাব্য রচনা হয় না। বঙ্গভঙ্গবিরোধী আন্দোলন একই সঙ্গে ঐক্য ও উদ্দীপনা এনেছিল এই দেশে, অন্তত দেশের সেই অংশে যে-অংশে সামাজিক অবস্থান ছিল রবীন্দ্রনাথের। কিন্তু পরে উদ্দীপনার অবসান ঘটেছে, ঐক্যও ছিন্নভিন্ন হয়ে গেছে। বঙ্গভঙ্গবিরোধী আন্দোলনে নেতিবাচক শক্তিই ছিল প্রধান, যখন তার লক্ষ্য অর্জিত হলো তখন অবসানের ক্লান্তিতে জাতীয় বিচ্ছিন্নতা ও বিভেদ যতটা দ্রুত বিস্তারশীল হয়ে উঠল, তত দ্রুত তার বিস্তার বোধ হয় আগে আর কখনো হয়নি। আপসপন্থীরা একদিকে গেলেন, নিরাপসবাদীরা অন্যদিকে। প্রতিষ্ঠিত মধ্যবিত্ত হিন্দুর স্বার্থ এবং উন্মেষকামী মধ্যবিত্ত মুসলিম স্বার্থে সংঘাত হয়ে দাঁড়াল অপরিহার্য। গ্রাম ও শহরের বিচ্ছিন্নতা বৃদ্ধি পেল ক্রমশ। নতুন কোনো ‘গোরা’ লেখা আর সম্ভব হলো না রবীন্দ্রনাথের মতো অসামান্য শিল্পীর পক্ষেও। সেই পথে আর গেলেন না তিনি, অসামান্য বলেই গেলেন না, সামান্য হলে, কবি কায়কোবাদ হলে যেতেন হয়তো এবং ব্যর্থ হতেন দৃষ্টিকটুরূপে। কেননা, মহাকাব্য নিজস্ব সাংস্কৃতিক পটভূমি ছাড়া রচিত হয়নি কখনো, হতে পারে না কিছুতেই। অসাধারণ বাস্তববুদ্ধি ছিল রবীন্দ্রনাথের, তাই কবিতা লিখেছেন অজস্র, ছোটগল্প লিখেছেন বহু, উপন্যাস লিখেছেন অনেক কটি, কিন্তু মহাকাব্য আর লেখেননি, উদ্যমও নেননি লেখার। ‘চতুরঙ্গ’, ‘ঘরে বাইরে’, ‘চার অধ্যায়’, ‘শেষের কবিতা’—সমগ্র দেশ এদের কোনোটিতেই আসেনি, এমনকি ‘যোগাযোগ’—এ-ও নয়। ছোটগল্পে তো আসবার কথাই ছিল না, কবিতাতে ততোধিক।
মহাকাব্যিক প্রতিভা মহাকাব্য আর দ্বিতীয়বার লিখলেন না, ‘গোরা’কে ছাড়িয়ে গেল না সেই প্রতিভা, যা নিজেকে নিজে অতিক্রম করেছে সমগ্র জীবনে। এর কারণ রবীন্দ্রনাথ নিজে নন, কারণ বাঙালি জীবনের বিভেদ ও বিচ্ছিন্নতা, নির্বেদ ও গ্লানি। যে ঐক্য ও উদ্দীপনা বঙ্গভঙ্গবিরোধী আন্দোলন একদিন সম্ভব করে তুলেছিল, বাংলাদেশে আবার তার উদ্ভব হতে পারত যদি সূচনা হতো নতুনতর, প্রবলতর কোনো আন্দোলনের। সে-আন্দোলনকে অবশ্যই হতে হতো সমাজতান্ত্রিক। কেননা, অন্য কোনো আন্দোলনের পক্ষে সম্ভব হতো না শ্রেণিবিভক্ত সমাজে ঐক্য আনয়ন করা। ইংরেজবিরোধিতা বঙ্গভঙ্গ-রদের পরবর্তী সময়ে এক পথে অগ্রসর হয়নি, নানা পথে গিয়েছে—অত্যন্ত স্বাভাবিকভাবে। সমাজতান্ত্রিক আন্দোলন প্রবল হয়নি বাংলাদেশে। হলেও তাতে রবীন্দ্রনাথের থাকবার কথা ছিল না, বিপ্লব-পরবর্তী রুশ দেশ ভ্রমণ সত্ত্বেও নয়। শেষ জীবনে রবীন্দ্রনাথ অত্যন্ত দৃঢ় কণ্ঠে প্রতিবাদ করেছেন মানুষের প্রতি মানুষের অবিচারের বিরুদ্ধে, সভ্যতার গভীরে যে সংকট তাকে প্রকটিত করেছেন লেখার মধ্য দিয়ে, কিন্তু সমস্ত বক্তব্য যে একত্র ও এক হয়ে বৃহৎ কোনো রচনার আকার নেবে, তা আর হয়ে ওঠেনি।
রবীন্দ্রনাথ যে শ্রেষ্ঠতম বাঙালি সেটা সত্য এই দিক থেকেও যে বাঙালি জীবনের বিভেদ ও বিচ্ছিন্নতাকে তিনি যেভাবে প্রতীয়মান করে তুলেছেন শুধু লিখে নয়, না-লিখেও—তেমনটি অন্য কেউ পারেননি। পরবর্তীকালে বিভেদ ও বিচ্ছিন্নতা বৃদ্ধি পেয়েছে আরও, পাবে যে তার লক্ষণ রবীন্দ্রনাথেই ছিল। অন্যদিকে আবার এটাও লক্ষ করা খুব সহজ যে ‘গোরা’র লেখক যখন ‘শেষের কবিতা’ লেখেন তখন যে তাঁর শক্তি বৈচিত্র্য ও সৃজন-বিপুলতাই শুধু প্রকাশ পায় তা-ই নয়, তদ্দ্বারা মহাকাব্যের অপস্রিয়মাণতাও প্রমাণিত হয়। বাক্যবীর অমিত রায় সেই অপস্রিয়মাণতারই প্রতিভূ।
সাধারণভাবে বলতে গেলে বলা যায়, বড় লেখকেরা দুই শ্রেণির। শেক্সপিয়ারের মতো নাটকীয়, অথবা টলস্টয়ের মতো মহাকাব্যিক। রবীন্দ্রনাথ মহাকাব্যের লেখক, তবু তিনি টলস্টয়ের মতো নন, সম্পূর্ণত। রবীন্দ্রনাথের আধ্যাত্মিকতা টলস্টয়ের নেই। দরিদ্র দেশে আধ্যাত্মিকতা না থাকলেই নয়। জীবনে যে ব্যক্তি স্বপ্নের মতো সমৃদ্ধ তাঁর পক্ষে স্বপ্ন না দেখলেও চলে; কিন্তু যে ব্যক্তি দরিদ্র স্বপ্ন না থাকলে তাঁর জীবন থাকে না। বস্তুর অভাব ঘটলে আধ্যাত্মিকতার সুবিধা হয়, বিশেষ রকমের। রবীন্দ্রনাথ অবশ্যই আধ্যাত্মিক ছিলেন না ওই নোংরা বস্তুতান্ত্রিক অর্থে। তাঁর জীবনে বস্তুর অভাব ছিল না, কিন্তু তাঁর বাঙালি সত্তা, তাঁর সামাজিক ঐতিহাসিক চরিত্র যে তাঁকে অনিবার্য হাতে আধ্যাত্মিকতার পথানুসরণে বাধ্য করছে সে বিষয়ে সন্দেহ কোথায়? সমৃদ্ধ দেশে জন্মগ্রহণ করলে রবীন্দ্রনাথ আধ্যাত্মবাদী হতেন না। হয়তো হতেন বীরত্ববাদী, হয়তো-বা বুদ্ধিবাদের প্রবক্তা।
বাঙালি জীবনে শ্রেণিভেদ ও সামন্তবাদী সংস্কৃতির অত্যন্ত গভীর অবস্থান জীবনের সব ক্ষেত্রে ব্যক্তিকে, বিশেষ বিশেষ ব্যক্তিকে, বলা যায় বীরকে, গুরুত্ব দিয়েছে অত্যধিক এবং সর্বদাই সচেষ্ট থেকেছে সুবিধাভোগী শ্রেণির নেতৃত্বকে অক্ষুণ্ন রাখতে। এই মানসিকতা এমনকি রবীন্দ্রনাথকেও অব্যাহতি দেয়নি। একদিকে তিনি মহাপুরুষের কথা বারবার বলেছেন, প্রতীক্ষা করেছেন মহামানবের। অন্যদিকে আবার একক উদ্যম নিয়েছেন স্থাপন করবেন আদর্শ খামার, আদর্শ বিদ্যালয়, আদর্শ সমবায় ও গ্রাম। মহামানবিক একক উদ্যমে একাকী হয়ে পড়েছেন, সফলতা আসেনি, নাড়া খায়নি সমাজ। নেতৃত্ব থেকেছে ব্যক্তির হাতে, ব্যক্তি উপচে শ্রেণির হাতে কখনো কখনো হয়তো-বা, কিন্তু তার বাইরে কখনো যায়নি। যায়নি জনসাধারণের কাছে এবং ব্যর্থতার কারণও এইখানেই ছিল, জনসাধারণের এই অংশগ্রহণ না করায়। রবীন্দ্রনাথের পর সামন্তব্যবস্থা ক্রমশ ক্ষীণ হয়েছে। প্রবল হয়েছে মধ্যবিত্ত।
রবীন্দ্রনাথ বারবার বলেছেন তিনি রোমান্টিক! আমারে শুধাও যবে, ‘এরে কভু বলে বাস্তবিক’? আমি বলি, ‘কখনো না, আমি রোমান্টিক’ (‘নবজাতক’)। আরও স্পষ্ট কথা আছে ‘সানাই’য়ে: ‘এ গলিতে বাস মোর, তবু আমি জন্ম রোমান্টিক।’ গলিতেই বসবাস বাঙালির, তবু সে জন্ম রোমান্টিক। গলিকে গলি বলে মানে না, থেকে থেকে খোঁজে দক্ষিণের বাতাস, খোঁজে অলক্ষ্য আকাশ। ফলে গলি গলিই থেকে যায়, বদলায় না। বাতাস থাকে অবরুদ্ধ, আকাশ অলক্ষ্য; শুধু হালকা কল্পনা থাকে সজাগ। হরিপদ কেরানিরা আকবর বাদশার সঙ্গে আত্মীয়তা বোধ করে অত্যন্ত সন্তুষ্ট থাকে। ‘ছিন্নপত্র’-এ রবীন্দ্রনাথ পল্লির চিত্র দিয়েছেন এই রকম: ‘যখন গ্রামের চারদিকের জঙ্গলগুলো জলে ডুবে পাতা-লতা-গুল্ম পচতে থাকে, গোয়ালঘর ও লোকালয়ের বিবিধ আবর্জনা চারদিকে ভেসে বেড়ায়, পাট পচানির গন্ধে বাতাস ভারাক্রান্ত, উলঙ্গ পেটমোটা পা-সরু রুগ্ণ ছেলেমেয়েরা এখানে-সেখানে জলে-কাদায় মাখামাখি ঝাঁপাঝাঁপি করতে থাকে, মশার ঝাঁক স্থির জলের ওপর একটি বাষ্পস্তরের বাস্পস্তরের মতো ঝাঁক বেঁধে ভেসে বেড়ায়, গৃহস্থের মেয়েরা ভিজে শাড়ি গায়ে জড়িয়ে বাদলার ঠান্ডা হাওয়ায় বৃষ্টির জলে ভিজতে ভিজতে হাঁটুর ওপরে কাপড় তুলে জল ঠেলে ঠেলে সহিষ্ণু জন্তুর মতো ঘরকন্নার নিত্য কর্ম করে যায়—তখন সে দৃশ্য কোনোমতেই ভালো লাগে না! ঘরে ঘরে বাতে ধরছে, পা ফুলছে, সর্দি হচ্ছে, জ্বরে ধরছে, পিলে-ওয়ালা ছেলেরা অবিশ্রাম কাঁদছে, কিছুতেই কেউ তাদের বাঁচাতে পারছে না—এত অবহেলা, অস্বাস্থ্য, অসৌন্দর্য, দারিদ্র্য, মানুষের বাসস্থানে কি একমুহূর্ত সহ্য হয়?’ কিন্তু এই পল্লি ভিন্নতর হয়ে উঠেছে তাঁর কবিতায়, তাঁর বাস্তবতার জায়গায় জেগে উঠেছে কাব্যময়তা। ‘যেতে যেতে পথপাশে/পানা পুকুরের গন্ধ আসে/সেই গন্ধে পায় মন/বহুদিন রজনীর সকরুণ স্নিগ্ধ আলিঙ্গন’—এমন ক্ষেত্রে পানাপুকুরের দুর্গন্ধ সত্য নয়, সত্য অন্য এক অনুভবের আনন্দ। বাস্তববিনাশী এই রোমান্টিসিজমের মধ্যে যে বাঙালিত্ব আছে তা রবীন্দ্রনাথেও ছিল।
লেখক: ইমেরিটাস অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল।
৬ দিন আগে
জনপ্রিয় কিশোর গোয়েন্দা সিরিজ তিন গোয়েন্দার স্রষ্টা রকিব হাসান মারা গেছেন। আজ বুধবার রাজধানীর একটি হাসপাতালে ডায়ালাইসিস চলাকালে তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।
১১ দিন আগে
হাঙ্গেরির ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই এবার (২০২৫ সালে) সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন তাঁর দীর্ঘ, দার্শনিক বাক্য ও মানবজীবনের বিশৃঙ্খলার গভীর অনুসন্ধানী সাহিত্যকর্মের জন্য। সুইডিশ একাডেমি তাঁকে সম্মান জানিয়েছে ‘শিল্পের শক্তিকে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করার’ জন্য।
১৭ দিন আগে
হাঙ্গেরির সাহিত্যে অসীম জনপ্রিয়তা ও প্রভাব তাঁর; বিশ্বজোড়া আতঙ্ক ও সন্ত্রাসের দাপটেও শিল্পের শক্তি চেনায় তাঁর কলম। তিনি হাঙ্গেরিয়ান ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই; সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০২৫ সালে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।
১৭ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল। কিন্তু ভাষাবিদ ও সাহিত্য ইতিহাসবিদদের মতে, এই ধারণা আসলে পশ্চিমা দৃষ্টিকোণ থেকে তৈরি এক ‘ঔপনিবেশিক কল্পনা’ মাত্র। বাস্তবে আরবি সাহিত্য কখনোই থেমে যায়নি।
প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী, অষ্টম শতাব্দীতে আব্বাসীয় খলিফাদের অধীনে বিজ্ঞান, দর্শন ও কবিতার কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল বাগদাদ। আবু নুয়াস, আল-মুতানাব্বি, আল-ফারাবি ও ইবনে সিনার মতো কবি ও দার্শনিকদের হাত ধরে শুরু হয়েছিল এক স্বর্ণযুগ। ঊনবিংশ শতাব্দীর ইউরোপীয় গবেষকেরা—যেমন ফরাসি চিন্তাবিদ আর্নেস্ট রেনাঁ ও ডাচ ইতিহাসবিদ রেইনহার্ট দোজি সেই আমলটিকেই আরবি বুদ্ধিবৃত্তিক জীবনের শিখর বলে স্বীকার করেছিলেন এবং দাবি করেছিলেন, একাদশ শতাব্দীর পর এই ধারাবাহিকতার পতন ঘটে। তাঁদের মতে, এরপর প্রায় ৮০০ বছর আরবে আর কোনো গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্যিক বা দার্শনিক কাজ হয়নি—যতক্ষণ না ইউরোপে রেনেসাঁ শুরু হয়।
কিন্তু আধুনিক গবেষকেরা বলছেন, এই ধারণা সরলীকৃত ও পক্ষপাতদুষ্ট। ফ্রাঙ্কফুর্ট আন্তর্জাতিক বইমেলায় শেখ জায়েদ বুক অ্যাওয়ার্ডের আয়োজিত এক আলোচনায় ভাষাবিদেরা দাবি করেছেন, আরবি রচনা শৈলী কখনো বিলুপ্ত হয়নি; বরং তা ধারাবাহিকভাবে কপি, অনুবাদ ও পাঠের মাধ্যমে বেঁচে ছিল।
জার্মান গবেষক বেয়াট্রিস গ্রুন্ডলার তাঁর ‘দ্য রাইজ অব দ্য অ্যারাবিক বুক’ গ্রন্থে দাবি করেছেন, আরবি সাহিত্যে ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে যে ধারণাটি প্রচলিত আছে তা আসলে গাল-গল্প। এই বইটি এবারের শেখ জায়েদ পুরস্কারের শর্টলিস্টে রয়েছে। গ্রুন্ডলার এতে দেখিয়েছেন, নবম শতাব্দীর বাগদাদে বইয়ের ব্যবসা, কপিকারদের প্রতিযোগিতা, জনসম্মুখে পাঠ ও লেখার প্রচলন—সবই ছিল আধুনিক প্রকাশনা সংস্কৃতির পূর্বসূরি। তিনি মত দিয়েছেন, ‘বাগদাদের রাস্তায় হাঁটলে আপনি দেখতেন লোকেরা হস্তলিপি বিক্রি করছে, বিরামচিহ্ন নিয়ে তর্ক করছে—এ যেন এক জীবন্ত প্রকাশনা বাজার।’
গবেষণা বলছে, আরবি সাহিত্য আসলে কখনো এক জায়গায় স্থির থাকেনি। এর কেন্দ্র এক সময় বাগদাদ থেকে কায়রো, দামেস্ক ও আন্দালুসিয়ায় স্থানান্তরিত হয়। কিন্তু ধারাটি অব্যাহতই থাকে। নতুন ঘরানা তৈরি হয়, পুরোনো ঘরানা রূপান্তরিত হয়।
ফরাসি অধ্যাপক হাকান ওজকান তাঁর গবেষণায় দেখিয়েছেন, ‘জাজাল’ নামের কথ্য ছন্দভিত্তিক কবিতার ধারা আব্বাসীয় যুগের পরও বিকশিত হতে থাকে। তাঁর মতে, ‘এই কবিরা নিয়ম ভেঙে নতুন রূপ দিয়েছে—তাঁদের ছন্দ ও ব্যঙ্গ আধুনিক র্যাপের মতো প্রাণবন্ত।’

এদিকে এই বিষয়ে এক প্রতিবেদনে সোমবার (২০ অক্টোবর) আমিরাতভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য ন্যাশনাল জানিয়েছে, আবুধাবির নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির ‘আরবি সাহিত্য লাইব্রেরি’ প্রকল্প ইতিমধ্যেই ‘হারানো শতাব্দী’ বলে বিবেচিত সময়ের ৬০ টিরও বেশি আরবি সাহিত্যকর্ম পুনরুদ্ধার করেছে। প্রকল্পটির সম্পাদক অধ্যাপক মরিস পোমেরান্টজ বলেছেন, ‘এই বইগুলো সম্পাদনা করা মানে এক চলমান সংলাপে অংশ নেওয়া—যেখানে প্রজন্মের পর প্রজন্ম লেখক, অনুবাদক ও সমালোচকেরা একে অপরকে উত্তর দিয়ে গেছেন।’
মরিস মনে করেন, আরবি সাহিত্য স্থবির হয়ে যাওয়ার ধারণাটি মূলত অনুবাদের অভাব থেকেই জন্ম নিয়েছে। তিনি বলেন, ‘যখন কোনো লেখা অনুবাদ করা হয় না, তখন সেটি বৈশ্বিক অস্তিত্ব হারায়।’
মরিসের মতে, এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো এই সাহিত্যকে আবার জনসাধারণের কল্পনায় ফিরিয়ে আনা—স্কুলে পড়ানো, মঞ্চে উপস্থাপন করা, অনুবাদের মাধ্যমে বিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়া। তা না হলে আরবি সাহিত্যের ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে চিহ্নিত সময়টি অধরাই থেকে যাবে।

জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল। কিন্তু ভাষাবিদ ও সাহিত্য ইতিহাসবিদদের মতে, এই ধারণা আসলে পশ্চিমা দৃষ্টিকোণ থেকে তৈরি এক ‘ঔপনিবেশিক কল্পনা’ মাত্র। বাস্তবে আরবি সাহিত্য কখনোই থেমে যায়নি।
প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী, অষ্টম শতাব্দীতে আব্বাসীয় খলিফাদের অধীনে বিজ্ঞান, দর্শন ও কবিতার কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল বাগদাদ। আবু নুয়াস, আল-মুতানাব্বি, আল-ফারাবি ও ইবনে সিনার মতো কবি ও দার্শনিকদের হাত ধরে শুরু হয়েছিল এক স্বর্ণযুগ। ঊনবিংশ শতাব্দীর ইউরোপীয় গবেষকেরা—যেমন ফরাসি চিন্তাবিদ আর্নেস্ট রেনাঁ ও ডাচ ইতিহাসবিদ রেইনহার্ট দোজি সেই আমলটিকেই আরবি বুদ্ধিবৃত্তিক জীবনের শিখর বলে স্বীকার করেছিলেন এবং দাবি করেছিলেন, একাদশ শতাব্দীর পর এই ধারাবাহিকতার পতন ঘটে। তাঁদের মতে, এরপর প্রায় ৮০০ বছর আরবে আর কোনো গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্যিক বা দার্শনিক কাজ হয়নি—যতক্ষণ না ইউরোপে রেনেসাঁ শুরু হয়।
কিন্তু আধুনিক গবেষকেরা বলছেন, এই ধারণা সরলীকৃত ও পক্ষপাতদুষ্ট। ফ্রাঙ্কফুর্ট আন্তর্জাতিক বইমেলায় শেখ জায়েদ বুক অ্যাওয়ার্ডের আয়োজিত এক আলোচনায় ভাষাবিদেরা দাবি করেছেন, আরবি রচনা শৈলী কখনো বিলুপ্ত হয়নি; বরং তা ধারাবাহিকভাবে কপি, অনুবাদ ও পাঠের মাধ্যমে বেঁচে ছিল।
জার্মান গবেষক বেয়াট্রিস গ্রুন্ডলার তাঁর ‘দ্য রাইজ অব দ্য অ্যারাবিক বুক’ গ্রন্থে দাবি করেছেন, আরবি সাহিত্যে ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে যে ধারণাটি প্রচলিত আছে তা আসলে গাল-গল্প। এই বইটি এবারের শেখ জায়েদ পুরস্কারের শর্টলিস্টে রয়েছে। গ্রুন্ডলার এতে দেখিয়েছেন, নবম শতাব্দীর বাগদাদে বইয়ের ব্যবসা, কপিকারদের প্রতিযোগিতা, জনসম্মুখে পাঠ ও লেখার প্রচলন—সবই ছিল আধুনিক প্রকাশনা সংস্কৃতির পূর্বসূরি। তিনি মত দিয়েছেন, ‘বাগদাদের রাস্তায় হাঁটলে আপনি দেখতেন লোকেরা হস্তলিপি বিক্রি করছে, বিরামচিহ্ন নিয়ে তর্ক করছে—এ যেন এক জীবন্ত প্রকাশনা বাজার।’
গবেষণা বলছে, আরবি সাহিত্য আসলে কখনো এক জায়গায় স্থির থাকেনি। এর কেন্দ্র এক সময় বাগদাদ থেকে কায়রো, দামেস্ক ও আন্দালুসিয়ায় স্থানান্তরিত হয়। কিন্তু ধারাটি অব্যাহতই থাকে। নতুন ঘরানা তৈরি হয়, পুরোনো ঘরানা রূপান্তরিত হয়।
ফরাসি অধ্যাপক হাকান ওজকান তাঁর গবেষণায় দেখিয়েছেন, ‘জাজাল’ নামের কথ্য ছন্দভিত্তিক কবিতার ধারা আব্বাসীয় যুগের পরও বিকশিত হতে থাকে। তাঁর মতে, ‘এই কবিরা নিয়ম ভেঙে নতুন রূপ দিয়েছে—তাঁদের ছন্দ ও ব্যঙ্গ আধুনিক র্যাপের মতো প্রাণবন্ত।’

এদিকে এই বিষয়ে এক প্রতিবেদনে সোমবার (২০ অক্টোবর) আমিরাতভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য ন্যাশনাল জানিয়েছে, আবুধাবির নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির ‘আরবি সাহিত্য লাইব্রেরি’ প্রকল্প ইতিমধ্যেই ‘হারানো শতাব্দী’ বলে বিবেচিত সময়ের ৬০ টিরও বেশি আরবি সাহিত্যকর্ম পুনরুদ্ধার করেছে। প্রকল্পটির সম্পাদক অধ্যাপক মরিস পোমেরান্টজ বলেছেন, ‘এই বইগুলো সম্পাদনা করা মানে এক চলমান সংলাপে অংশ নেওয়া—যেখানে প্রজন্মের পর প্রজন্ম লেখক, অনুবাদক ও সমালোচকেরা একে অপরকে উত্তর দিয়ে গেছেন।’
মরিস মনে করেন, আরবি সাহিত্য স্থবির হয়ে যাওয়ার ধারণাটি মূলত অনুবাদের অভাব থেকেই জন্ম নিয়েছে। তিনি বলেন, ‘যখন কোনো লেখা অনুবাদ করা হয় না, তখন সেটি বৈশ্বিক অস্তিত্ব হারায়।’
মরিসের মতে, এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো এই সাহিত্যকে আবার জনসাধারণের কল্পনায় ফিরিয়ে আনা—স্কুলে পড়ানো, মঞ্চে উপস্থাপন করা, অনুবাদের মাধ্যমে বিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়া। তা না হলে আরবি সাহিত্যের ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে চিহ্নিত সময়টি অধরাই থেকে যাবে।

অনেক সময় মনে হয় রবীন্দ্রনাথ লোক ছিলেন না অতিশয় দীনহীন এই বাংলাদেশের। পৌরুষে-প্রাণে, স্বভাবে-আচরণে, উদ্যম-উদ্ভাবনায় একক তিনি, একাকীও; তাঁর সঙ্গে এ দেশের আর-পাঁচটি খর্বাকৃতি বস্তুর সাদৃশ্য নেই। মনে হয় অনেক ঊর্ধ্বে তিনি, এসেছেন ব্যত্যয় হিসেবে, অতিপ্রাকৃতিক ঘটনার মতো আকস্মিকতায়, অপ্রত্যাশিত রূপে। কিন্তু
০৬ আগস্ট ২০২২
জনপ্রিয় কিশোর গোয়েন্দা সিরিজ তিন গোয়েন্দার স্রষ্টা রকিব হাসান মারা গেছেন। আজ বুধবার রাজধানীর একটি হাসপাতালে ডায়ালাইসিস চলাকালে তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।
১১ দিন আগে
হাঙ্গেরির ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই এবার (২০২৫ সালে) সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন তাঁর দীর্ঘ, দার্শনিক বাক্য ও মানবজীবনের বিশৃঙ্খলার গভীর অনুসন্ধানী সাহিত্যকর্মের জন্য। সুইডিশ একাডেমি তাঁকে সম্মান জানিয়েছে ‘শিল্পের শক্তিকে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করার’ জন্য।
১৭ দিন আগে
হাঙ্গেরির সাহিত্যে অসীম জনপ্রিয়তা ও প্রভাব তাঁর; বিশ্বজোড়া আতঙ্ক ও সন্ত্রাসের দাপটেও শিল্পের শক্তি চেনায় তাঁর কলম। তিনি হাঙ্গেরিয়ান ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই; সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০২৫ সালে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।
১৭ দিন আগেনিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

জনপ্রিয় কিশোর গোয়েন্দা সিরিজ তিন গোয়েন্দার স্রষ্টা রকিব হাসান মারা গেছেন। আজ বুধবার রাজধানীর একটি হাসপাতালে ডায়ালাইসিস চলাকালে তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।
রকিব হাসানের মৃত্যুর খবরটি নিশ্চিত করেছেন সেবা প্রকাশনীর উপদেষ্টা মাসুমা মায়মুর। তিনি সেবা প্রকাশনীর প্রতিষ্ঠাতা কাজী আনোয়ার হোসেনের ছোট ছেলে কাজী মায়মুর হোসেনের স্ত্রী।
মাসুমা মায়মুর ফেসবুকে লিখেছেন, ‘তিন গোয়েন্দা ও সেবা প্রকাশনীর পাঠকদেরকে আন্তরিক দুঃখের সাথে জানাচ্ছি যে, কিছুক্ষণ আগে রকিব হাসান সাহেব পরলোক গমন করেছেন। ডায়ালাইসিস চলাকালে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে ওনার জীবনাবসান ঘটে। আপনারা ওনার পবিত্র আত্মার মাগফেরাত কামনা করুন।’
১৯৫০ সালের ১২ ডিসেম্বর কুমিল্লায় জন্মগ্রহণ করেন রকিব হাসান। বাবার চাকরির কারণে শৈশব কেটেছে ফেনীতে। সেখান থেকে স্কুলজীবন শেষ করে ভর্তি হন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজে। পড়াশোনা শেষে বিভিন্ন চাকরিতে যুক্ত হলেও অফিসের বাঁধাধরা জীবনে তাঁর মন টেকেনি। অবশেষে তিনি লেখালেখিকে বেছে নেন জীবনের একমাত্র পথ হিসেবে।

সেবা প্রকাশনী থেকে তাঁর লেখকজীবনের সূচনা হয়। প্রথমদিকে বিশ্বসেরা ক্ল্যাসিক বই অনুবাদ করে লেখালেখির জগতে প্রবেশ করেন তিনি। এরপর টারজান, গোয়েন্দা রাজু, রেজা-সুজা সিরিজসহ চার শতাধিক জনপ্রিয় বই লেখেন। তবে তাঁর পরিচয়ের সবচেয়ে বড় জায়গা হলো তিন গোয়েন্দা সিরিজ। এই সিরিজ বাংলাদেশের অসংখ্য কিশোর-কিশোরীর কৈশোরের সঙ্গী।
মূলত রবার্ট আর্থারের থ্রি ইনভেস্টিগেটরস সিরিজ অবলম্বনে তিন গোয়েন্দার সূচনা হয়। তবে রকিব হাসানের লেখনশৈলীতে এটি পেয়েছে একেবারে নতুন রূপ। বাংলাদেশি সাহিত্য হয়ে উঠেছে এটি। এই সিরিজের মাধ্যমে তিনি হয়ে ওঠেন হাজারো কিশোর পাঠকের প্রিয় লেখক।
নিজ নামে লেখার পাশাপাশি তিনি ব্যবহার করেছেন বিভিন্ন ছদ্মনাম। শামসুদ্দীন নওয়াব নামে তিনি অনুবাদ করেছিলেন জুল ভার্নের বইগুলো।
বাংলাদেশের পাঠকদের কাছে রকিব হাসান শুধু একজন গোয়েন্দা লেখক নন, তিনি কয়েক প্রজন্মের শৈশব-কৈশোরের ভালোবাসার মানুষ।

জনপ্রিয় কিশোর গোয়েন্দা সিরিজ তিন গোয়েন্দার স্রষ্টা রকিব হাসান মারা গেছেন। আজ বুধবার রাজধানীর একটি হাসপাতালে ডায়ালাইসিস চলাকালে তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।
রকিব হাসানের মৃত্যুর খবরটি নিশ্চিত করেছেন সেবা প্রকাশনীর উপদেষ্টা মাসুমা মায়মুর। তিনি সেবা প্রকাশনীর প্রতিষ্ঠাতা কাজী আনোয়ার হোসেনের ছোট ছেলে কাজী মায়মুর হোসেনের স্ত্রী।
মাসুমা মায়মুর ফেসবুকে লিখেছেন, ‘তিন গোয়েন্দা ও সেবা প্রকাশনীর পাঠকদেরকে আন্তরিক দুঃখের সাথে জানাচ্ছি যে, কিছুক্ষণ আগে রকিব হাসান সাহেব পরলোক গমন করেছেন। ডায়ালাইসিস চলাকালে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে ওনার জীবনাবসান ঘটে। আপনারা ওনার পবিত্র আত্মার মাগফেরাত কামনা করুন।’
১৯৫০ সালের ১২ ডিসেম্বর কুমিল্লায় জন্মগ্রহণ করেন রকিব হাসান। বাবার চাকরির কারণে শৈশব কেটেছে ফেনীতে। সেখান থেকে স্কুলজীবন শেষ করে ভর্তি হন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজে। পড়াশোনা শেষে বিভিন্ন চাকরিতে যুক্ত হলেও অফিসের বাঁধাধরা জীবনে তাঁর মন টেকেনি। অবশেষে তিনি লেখালেখিকে বেছে নেন জীবনের একমাত্র পথ হিসেবে।

সেবা প্রকাশনী থেকে তাঁর লেখকজীবনের সূচনা হয়। প্রথমদিকে বিশ্বসেরা ক্ল্যাসিক বই অনুবাদ করে লেখালেখির জগতে প্রবেশ করেন তিনি। এরপর টারজান, গোয়েন্দা রাজু, রেজা-সুজা সিরিজসহ চার শতাধিক জনপ্রিয় বই লেখেন। তবে তাঁর পরিচয়ের সবচেয়ে বড় জায়গা হলো তিন গোয়েন্দা সিরিজ। এই সিরিজ বাংলাদেশের অসংখ্য কিশোর-কিশোরীর কৈশোরের সঙ্গী।
মূলত রবার্ট আর্থারের থ্রি ইনভেস্টিগেটরস সিরিজ অবলম্বনে তিন গোয়েন্দার সূচনা হয়। তবে রকিব হাসানের লেখনশৈলীতে এটি পেয়েছে একেবারে নতুন রূপ। বাংলাদেশি সাহিত্য হয়ে উঠেছে এটি। এই সিরিজের মাধ্যমে তিনি হয়ে ওঠেন হাজারো কিশোর পাঠকের প্রিয় লেখক।
নিজ নামে লেখার পাশাপাশি তিনি ব্যবহার করেছেন বিভিন্ন ছদ্মনাম। শামসুদ্দীন নওয়াব নামে তিনি অনুবাদ করেছিলেন জুল ভার্নের বইগুলো।
বাংলাদেশের পাঠকদের কাছে রকিব হাসান শুধু একজন গোয়েন্দা লেখক নন, তিনি কয়েক প্রজন্মের শৈশব-কৈশোরের ভালোবাসার মানুষ।

অনেক সময় মনে হয় রবীন্দ্রনাথ লোক ছিলেন না অতিশয় দীনহীন এই বাংলাদেশের। পৌরুষে-প্রাণে, স্বভাবে-আচরণে, উদ্যম-উদ্ভাবনায় একক তিনি, একাকীও; তাঁর সঙ্গে এ দেশের আর-পাঁচটি খর্বাকৃতি বস্তুর সাদৃশ্য নেই। মনে হয় অনেক ঊর্ধ্বে তিনি, এসেছেন ব্যত্যয় হিসেবে, অতিপ্রাকৃতিক ঘটনার মতো আকস্মিকতায়, অপ্রত্যাশিত রূপে। কিন্তু
০৬ আগস্ট ২০২২
জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল।
৬ দিন আগে
হাঙ্গেরির ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই এবার (২০২৫ সালে) সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন তাঁর দীর্ঘ, দার্শনিক বাক্য ও মানবজীবনের বিশৃঙ্খলার গভীর অনুসন্ধানী সাহিত্যকর্মের জন্য। সুইডিশ একাডেমি তাঁকে সম্মান জানিয়েছে ‘শিল্পের শক্তিকে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করার’ জন্য।
১৭ দিন আগে
হাঙ্গেরির সাহিত্যে অসীম জনপ্রিয়তা ও প্রভাব তাঁর; বিশ্বজোড়া আতঙ্ক ও সন্ত্রাসের দাপটেও শিল্পের শক্তি চেনায় তাঁর কলম। তিনি হাঙ্গেরিয়ান ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই; সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০২৫ সালে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।
১৭ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

হাঙ্গেরির ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই এবার (২০২৫ সালে) সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন তাঁর দীর্ঘ, দার্শনিক বাক্য ও মানবজীবনের বিশৃঙ্খলার গভীর অনুসন্ধানী সাহিত্যকর্মের জন্য। সুইডিশ একাডেমি তাঁকে সম্মান জানিয়েছে ‘শিল্পের শক্তিকে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করার’ জন্য। লেখক সুসান সনটাগ অবশ্য তাঁকে একসময় ‘মহাপ্রলয়ের হাঙ্গেরিয়ান গুরু’ আখ্যা দিয়েছিলেন।
সাহিত্যজগতে অনেকের কাছে ক্রাসনাহোরকাইয়ের নোবেল পাওয়ার এই ঘোষণাটি যেন কয়েক দশক ধরে চলা একটি বাক্যের সমাপ্তি।
১৯৫৪ সালে হাঙ্গেরির ছোট শহর জিউলা-তে জন্ম নেওয়া ক্রাসনাহোরকাই ১৯৮০-এর দশকের শুরুতে গল্প লেখা শুরু করেন। তাঁর প্রথম উপন্যাস স্যাটানট্যাঙ্গো (১৯৮৫) একটি বৃষ্টিস্নাত, ধ্বংসপ্রায় গ্রামের কাহিনি—যেখানে প্রতারক, মাতাল ও হতাশ মানুষেরা মিথ্যা আশায় আঁকড়ে থাকে। পরিচালক বেলা-তার তাঁর এই উপন্যাসটিকে দীর্ঘ ৭ ঘণ্টার এক সাদাকালো চলচ্চিত্রে রূপ দেন। এই বইতেই ধরা পড়ে ক্রাসনাহোরকাইয়ের লেখার বৈশিষ্ট্যসমূহ, যেমন—অবিরাম দীর্ঘ বাক্য, দার্শনিক হাস্যরস ও পতনের কিনারায় দাঁড়িয়ে থাকা মানুষের প্রতিচ্ছবি।
তাঁর পরবর্তী উপন্যাসগুলো—দ্য মেলানকোলি অব রেজিস্ট্যান্স (১৯৮৯), ওয়ার অ্যান্ড ওয়ার (১৯৯৯) ও সেইবো দেয়ার বিলো (২০০৮)—তাঁর এই দৃষ্টিভঙ্গিকে মহাজাগতিক পরিসরে বিস্তৃত করেছে। ‘ওয়ার অ্যান্ড ওয়ার’–এ তিনি এক নথি প্রহরীর গল্প বলেছেন, যিনি রহস্যময় এক পাণ্ডুলিপি প্রকাশ করতে নিউইয়র্কে পালিয়ে যান এবং আত্মহত্যা করেন—যেন ক্রম বিলীন পৃথিবীতে অর্থ ধরে রাখার এক মরিয়া চেষ্টা তাঁর।
ক্রাসনাহোরকাইয়ের লেখায় কাহিনি প্রায় সময়ই বাক্যের ভেতর হারিয়ে যায়। তিনি লিখেছেন এমন বাক্য, যা একাধিক পৃষ্ঠা জুড়ে পাঠককে টেনে নেয় অবচেতনে, অবিরাম প্রবাহে।
তাঁর সাহিত্যে হাস্যরস ও ট্র্যাজেডি পাশাপাশি চলে। স্যাটানট্যাঙ্গো–এর মাতাল নাচের দৃশ্য যেমন নিঃশেষের প্রতীক, তেমনি ‘ব্যারন ওয়েঙ্কহাইমস হোমকামিং’ (২০১৬)-এ দেখা যায়, ফিরে আসা এক পরাজিত অভিজাতকে। যার মাধ্যমে প্রকাশ পায় সভ্যতার পচন ও মানুষের হাস্যকর ভ্রান্তি।
২০১৫ সালে ম্যান বুকার পুরস্কার পাওয়ার মধ্য দিয়েই প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পান ক্রাসনাহোরকাই। অনুবাদক জর্জ সির্টেস ও ওটিলি মুলজেট তাঁর জটিল হাঙ্গেরিয়ান ভাষাকে ইংরেজিতে রূপ দিতে বিশেষ ভূমিকা রাখেন। ‘হাডসন রিভিউ’ তাঁকে বর্ণনা করেছিল ‘অন্তহীন বাক্যের ভ্রমণশিল্পী’ হিসেবে।
চল্লিশ বছরের সৃষ্টিতে ক্রাসনাহোরকাইয়ের ভুবন চিত্র, সংগীত, দর্শন ও ভাষার মিলনে বিস্তৃত। সাম্প্রতিক উপন্যাস ‘হার্শট ০৭৭৬৯’ (২০২৪)–এ তিনি এক প্রবাহিত বাক্যে লিখেছেন নব্য-নাৎসি, নেকড়ে আর এক হতভাগ্য পদার্থবিদের কাহিনি—আধুনিক ইউরোপের নৈতিক পক্ষাঘাতের রূপক হিসেবে।
তাঁর সমগ্র সাহিত্যজগৎ এক অন্ধকার ও ধ্যানমগ্ন মহাবিশ্ব—যেখানে পতন, শূন্যতা ও করুণা পাশাপাশি থাকে। ‘সেইবো দেয়ার বিলো’ বইটিতে তিনি লিখেছেন, ‘সৌন্দর্য, যত ক্ষণস্থায়ীই হোক না কেন, তা পবিত্রতার প্রতিবিম্ব।’ এই বিশ্বাসই লাসলো ক্রাসনাহোরকাইকে সেই বিরল লেখক করে তুলেছে, যাঁর নৈরাশ্যও মুক্তির মতো দীপ্ত।

হাঙ্গেরির ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই এবার (২০২৫ সালে) সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন তাঁর দীর্ঘ, দার্শনিক বাক্য ও মানবজীবনের বিশৃঙ্খলার গভীর অনুসন্ধানী সাহিত্যকর্মের জন্য। সুইডিশ একাডেমি তাঁকে সম্মান জানিয়েছে ‘শিল্পের শক্তিকে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করার’ জন্য। লেখক সুসান সনটাগ অবশ্য তাঁকে একসময় ‘মহাপ্রলয়ের হাঙ্গেরিয়ান গুরু’ আখ্যা দিয়েছিলেন।
সাহিত্যজগতে অনেকের কাছে ক্রাসনাহোরকাইয়ের নোবেল পাওয়ার এই ঘোষণাটি যেন কয়েক দশক ধরে চলা একটি বাক্যের সমাপ্তি।
১৯৫৪ সালে হাঙ্গেরির ছোট শহর জিউলা-তে জন্ম নেওয়া ক্রাসনাহোরকাই ১৯৮০-এর দশকের শুরুতে গল্প লেখা শুরু করেন। তাঁর প্রথম উপন্যাস স্যাটানট্যাঙ্গো (১৯৮৫) একটি বৃষ্টিস্নাত, ধ্বংসপ্রায় গ্রামের কাহিনি—যেখানে প্রতারক, মাতাল ও হতাশ মানুষেরা মিথ্যা আশায় আঁকড়ে থাকে। পরিচালক বেলা-তার তাঁর এই উপন্যাসটিকে দীর্ঘ ৭ ঘণ্টার এক সাদাকালো চলচ্চিত্রে রূপ দেন। এই বইতেই ধরা পড়ে ক্রাসনাহোরকাইয়ের লেখার বৈশিষ্ট্যসমূহ, যেমন—অবিরাম দীর্ঘ বাক্য, দার্শনিক হাস্যরস ও পতনের কিনারায় দাঁড়িয়ে থাকা মানুষের প্রতিচ্ছবি।
তাঁর পরবর্তী উপন্যাসগুলো—দ্য মেলানকোলি অব রেজিস্ট্যান্স (১৯৮৯), ওয়ার অ্যান্ড ওয়ার (১৯৯৯) ও সেইবো দেয়ার বিলো (২০০৮)—তাঁর এই দৃষ্টিভঙ্গিকে মহাজাগতিক পরিসরে বিস্তৃত করেছে। ‘ওয়ার অ্যান্ড ওয়ার’–এ তিনি এক নথি প্রহরীর গল্প বলেছেন, যিনি রহস্যময় এক পাণ্ডুলিপি প্রকাশ করতে নিউইয়র্কে পালিয়ে যান এবং আত্মহত্যা করেন—যেন ক্রম বিলীন পৃথিবীতে অর্থ ধরে রাখার এক মরিয়া চেষ্টা তাঁর।
ক্রাসনাহোরকাইয়ের লেখায় কাহিনি প্রায় সময়ই বাক্যের ভেতর হারিয়ে যায়। তিনি লিখেছেন এমন বাক্য, যা একাধিক পৃষ্ঠা জুড়ে পাঠককে টেনে নেয় অবচেতনে, অবিরাম প্রবাহে।
তাঁর সাহিত্যে হাস্যরস ও ট্র্যাজেডি পাশাপাশি চলে। স্যাটানট্যাঙ্গো–এর মাতাল নাচের দৃশ্য যেমন নিঃশেষের প্রতীক, তেমনি ‘ব্যারন ওয়েঙ্কহাইমস হোমকামিং’ (২০১৬)-এ দেখা যায়, ফিরে আসা এক পরাজিত অভিজাতকে। যার মাধ্যমে প্রকাশ পায় সভ্যতার পচন ও মানুষের হাস্যকর ভ্রান্তি।
২০১৫ সালে ম্যান বুকার পুরস্কার পাওয়ার মধ্য দিয়েই প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পান ক্রাসনাহোরকাই। অনুবাদক জর্জ সির্টেস ও ওটিলি মুলজেট তাঁর জটিল হাঙ্গেরিয়ান ভাষাকে ইংরেজিতে রূপ দিতে বিশেষ ভূমিকা রাখেন। ‘হাডসন রিভিউ’ তাঁকে বর্ণনা করেছিল ‘অন্তহীন বাক্যের ভ্রমণশিল্পী’ হিসেবে।
চল্লিশ বছরের সৃষ্টিতে ক্রাসনাহোরকাইয়ের ভুবন চিত্র, সংগীত, দর্শন ও ভাষার মিলনে বিস্তৃত। সাম্প্রতিক উপন্যাস ‘হার্শট ০৭৭৬৯’ (২০২৪)–এ তিনি এক প্রবাহিত বাক্যে লিখেছেন নব্য-নাৎসি, নেকড়ে আর এক হতভাগ্য পদার্থবিদের কাহিনি—আধুনিক ইউরোপের নৈতিক পক্ষাঘাতের রূপক হিসেবে।
তাঁর সমগ্র সাহিত্যজগৎ এক অন্ধকার ও ধ্যানমগ্ন মহাবিশ্ব—যেখানে পতন, শূন্যতা ও করুণা পাশাপাশি থাকে। ‘সেইবো দেয়ার বিলো’ বইটিতে তিনি লিখেছেন, ‘সৌন্দর্য, যত ক্ষণস্থায়ীই হোক না কেন, তা পবিত্রতার প্রতিবিম্ব।’ এই বিশ্বাসই লাসলো ক্রাসনাহোরকাইকে সেই বিরল লেখক করে তুলেছে, যাঁর নৈরাশ্যও মুক্তির মতো দীপ্ত।

অনেক সময় মনে হয় রবীন্দ্রনাথ লোক ছিলেন না অতিশয় দীনহীন এই বাংলাদেশের। পৌরুষে-প্রাণে, স্বভাবে-আচরণে, উদ্যম-উদ্ভাবনায় একক তিনি, একাকীও; তাঁর সঙ্গে এ দেশের আর-পাঁচটি খর্বাকৃতি বস্তুর সাদৃশ্য নেই। মনে হয় অনেক ঊর্ধ্বে তিনি, এসেছেন ব্যত্যয় হিসেবে, অতিপ্রাকৃতিক ঘটনার মতো আকস্মিকতায়, অপ্রত্যাশিত রূপে। কিন্তু
০৬ আগস্ট ২০২২
জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল।
৬ দিন আগে
জনপ্রিয় কিশোর গোয়েন্দা সিরিজ তিন গোয়েন্দার স্রষ্টা রকিব হাসান মারা গেছেন। আজ বুধবার রাজধানীর একটি হাসপাতালে ডায়ালাইসিস চলাকালে তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।
১১ দিন আগে
হাঙ্গেরির সাহিত্যে অসীম জনপ্রিয়তা ও প্রভাব তাঁর; বিশ্বজোড়া আতঙ্ক ও সন্ত্রাসের দাপটেও শিল্পের শক্তি চেনায় তাঁর কলম। তিনি হাঙ্গেরিয়ান ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই; সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০২৫ সালে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।
১৭ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

হাঙ্গেরির সাহিত্যে অসীম জনপ্রিয়তা ও প্রভাব তাঁর; বিশ্বজোড়া আতঙ্ক ও সন্ত্রাসের দাপটেও শিল্পের শক্তি চেনায় তাঁর কলম। তিনি হাঙ্গেরিয়ান ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই; সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০২৫ সালে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।
আধুনিক হাঙ্গেরীয় সাহিত্যের একজন অন্যতম প্রধান ব্যক্তিত্ব লাসলো। অভিনব শৈলীর পাশাপাশি দার্শনিক গভীরতার জন্য তাঁর সাহিত্য সমাদৃত হয়েছে। তাঁকে ফ্রানৎস কাফকা ও স্যামুয়েল বেকেটের ঐতিহ্যের উত্তরাধিকারী হিসেবে বিবেচনা করা হয়। বিশ্বজোড়া আতঙ্ক ও সন্ত্রাসের মধ্যেও শিল্পের লেলিহান ঔজ্জ্বল্য ফুটে ওঠে লাসলোর লেখায়। তাই যুদ্ধবিধ্বস্ত সময়ের বুকে ফুলের মতো স্থান করে নিল তাঁর সাহিত্য।
লাসলোর জন্য সাহিত্যে এটা প্রথম পুরস্কার নয়, ২০১৪ সালে সাহিত্যকর্মের জন্য ম্যান বুকার ইন্টারন্যাশনাল পুরস্কার পান তিনি। এ পুরস্কার বিশ্বসাহিত্যে তাঁর অবস্থানকে সুদৃঢ় করে।
লাসলোর সাহিত্যের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো—স্বতন্ত্র শৈলী ও গঠন। উপন্যাসের মূল বিষয়বস্তু হলো—মানবতার অবক্ষয়, ধ্বংসের অনিবার্যতা ও আধুনিক জীবনের লক্ষ্যহীন চলন। তাঁর চরিত্রদের মধ্যে প্রায়ই একধরনের হতাশা ও বিচ্ছিন্নতা দেখা যায়; তারা এমন এক জগতের পথিক, যেখানে নৈতিকতা ও আশা বিলীনপ্রায়।
১৯৮৫ সালে প্রকাশিত ‘স্যাটানটাঙ্গো’ নামে প্রথম উপন্যাস লিখেই খ্যাতি পান লাসলো। এই উপন্যাসে বিচ্ছিন্ন ও পতিত এক কৃষি সমবায় গ্রামের জীবন তুলে ধরেছেন তিনি। সেখানে একধরনের বিভ্রম ও আশার জন্ম দেয় এক রহস্যময় আগন্তুকের আগমনে। এই উপন্যাস অবলম্বনে একই শিরোনামে সাত ঘণ্টার কালজয়ী চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন বিখ্যাত পরিচালক বেলা টর।
লাসলোর আরেকটি ফিকশন উপন্যাস হলো— ‘দ্য মেলানকোলি অব রেজিস্ট্যান্স’। হাঙ্গেরির এক কাল্পনিক শহরের জীবন ফুটে উঠেছে এই উপন্যাসে। সামুদ্রিক প্রাণী হাঙরের প্রদর্শনীকে কেন্দ্র করে মানুষের মধ্যকার উন্মাদনা, সামাজিক বিশৃঙ্খলা ও একনায়কতন্ত্রের উত্থানের চিত্র আঁকা হয়েছে তাতে।
‘ওয়ার অ্যান্ড ওয়ার’ লাসলোর আরেকটি বিখ্যাত উপন্যাস। লম্বা লম্বা বাক্যে লেখা এই উপন্যাস লাসলোর শৈলী নিয়ে পাঠকদের নতুন করে ভাবায়। উপন্যাসের নায়ক একটি পাণ্ডুলিপি রক্ষা করার জন্য বিশ্বের বিভিন্ন শহর ঘুরে বেড়ায়। বিশ্বের চূড়ান্ত ধ্বংসের একটি কাব্যিক বর্ণনা পাওয়া যায় এই উপন্যাসে।
এবার লাসলোকে পুরস্কারের জন্য মনোনীত করার নেপথ্যে নোবেল কমিটির বড় কারণ ছিল তাঁর সাহিত্যে শিল্পের জয়ধ্বনি তোলার প্রচেষ্টা। যখন সারা বিশ্বের বেশ কিছু দেশ যুদ্ধবিধ্বস্ত বা যুদ্ধের জন্য উৎসুক, তখন বারবার শিল্পের মোহিনী প্রেম ও বন্ধনের কথা মনে করিয়ে দিতে চায় লাসলোর সাহিত্য।

হাঙ্গেরির সাহিত্যে অসীম জনপ্রিয়তা ও প্রভাব তাঁর; বিশ্বজোড়া আতঙ্ক ও সন্ত্রাসের দাপটেও শিল্পের শক্তি চেনায় তাঁর কলম। তিনি হাঙ্গেরিয়ান ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই; সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০২৫ সালে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।
আধুনিক হাঙ্গেরীয় সাহিত্যের একজন অন্যতম প্রধান ব্যক্তিত্ব লাসলো। অভিনব শৈলীর পাশাপাশি দার্শনিক গভীরতার জন্য তাঁর সাহিত্য সমাদৃত হয়েছে। তাঁকে ফ্রানৎস কাফকা ও স্যামুয়েল বেকেটের ঐতিহ্যের উত্তরাধিকারী হিসেবে বিবেচনা করা হয়। বিশ্বজোড়া আতঙ্ক ও সন্ত্রাসের মধ্যেও শিল্পের লেলিহান ঔজ্জ্বল্য ফুটে ওঠে লাসলোর লেখায়। তাই যুদ্ধবিধ্বস্ত সময়ের বুকে ফুলের মতো স্থান করে নিল তাঁর সাহিত্য।
লাসলোর জন্য সাহিত্যে এটা প্রথম পুরস্কার নয়, ২০১৪ সালে সাহিত্যকর্মের জন্য ম্যান বুকার ইন্টারন্যাশনাল পুরস্কার পান তিনি। এ পুরস্কার বিশ্বসাহিত্যে তাঁর অবস্থানকে সুদৃঢ় করে।
লাসলোর সাহিত্যের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো—স্বতন্ত্র শৈলী ও গঠন। উপন্যাসের মূল বিষয়বস্তু হলো—মানবতার অবক্ষয়, ধ্বংসের অনিবার্যতা ও আধুনিক জীবনের লক্ষ্যহীন চলন। তাঁর চরিত্রদের মধ্যে প্রায়ই একধরনের হতাশা ও বিচ্ছিন্নতা দেখা যায়; তারা এমন এক জগতের পথিক, যেখানে নৈতিকতা ও আশা বিলীনপ্রায়।
১৯৮৫ সালে প্রকাশিত ‘স্যাটানটাঙ্গো’ নামে প্রথম উপন্যাস লিখেই খ্যাতি পান লাসলো। এই উপন্যাসে বিচ্ছিন্ন ও পতিত এক কৃষি সমবায় গ্রামের জীবন তুলে ধরেছেন তিনি। সেখানে একধরনের বিভ্রম ও আশার জন্ম দেয় এক রহস্যময় আগন্তুকের আগমনে। এই উপন্যাস অবলম্বনে একই শিরোনামে সাত ঘণ্টার কালজয়ী চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন বিখ্যাত পরিচালক বেলা টর।
লাসলোর আরেকটি ফিকশন উপন্যাস হলো— ‘দ্য মেলানকোলি অব রেজিস্ট্যান্স’। হাঙ্গেরির এক কাল্পনিক শহরের জীবন ফুটে উঠেছে এই উপন্যাসে। সামুদ্রিক প্রাণী হাঙরের প্রদর্শনীকে কেন্দ্র করে মানুষের মধ্যকার উন্মাদনা, সামাজিক বিশৃঙ্খলা ও একনায়কতন্ত্রের উত্থানের চিত্র আঁকা হয়েছে তাতে।
‘ওয়ার অ্যান্ড ওয়ার’ লাসলোর আরেকটি বিখ্যাত উপন্যাস। লম্বা লম্বা বাক্যে লেখা এই উপন্যাস লাসলোর শৈলী নিয়ে পাঠকদের নতুন করে ভাবায়। উপন্যাসের নায়ক একটি পাণ্ডুলিপি রক্ষা করার জন্য বিশ্বের বিভিন্ন শহর ঘুরে বেড়ায়। বিশ্বের চূড়ান্ত ধ্বংসের একটি কাব্যিক বর্ণনা পাওয়া যায় এই উপন্যাসে।
এবার লাসলোকে পুরস্কারের জন্য মনোনীত করার নেপথ্যে নোবেল কমিটির বড় কারণ ছিল তাঁর সাহিত্যে শিল্পের জয়ধ্বনি তোলার প্রচেষ্টা। যখন সারা বিশ্বের বেশ কিছু দেশ যুদ্ধবিধ্বস্ত বা যুদ্ধের জন্য উৎসুক, তখন বারবার শিল্পের মোহিনী প্রেম ও বন্ধনের কথা মনে করিয়ে দিতে চায় লাসলোর সাহিত্য।

অনেক সময় মনে হয় রবীন্দ্রনাথ লোক ছিলেন না অতিশয় দীনহীন এই বাংলাদেশের। পৌরুষে-প্রাণে, স্বভাবে-আচরণে, উদ্যম-উদ্ভাবনায় একক তিনি, একাকীও; তাঁর সঙ্গে এ দেশের আর-পাঁচটি খর্বাকৃতি বস্তুর সাদৃশ্য নেই। মনে হয় অনেক ঊর্ধ্বে তিনি, এসেছেন ব্যত্যয় হিসেবে, অতিপ্রাকৃতিক ঘটনার মতো আকস্মিকতায়, অপ্রত্যাশিত রূপে। কিন্তু
০৬ আগস্ট ২০২২
জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল।
৬ দিন আগে
জনপ্রিয় কিশোর গোয়েন্দা সিরিজ তিন গোয়েন্দার স্রষ্টা রকিব হাসান মারা গেছেন। আজ বুধবার রাজধানীর একটি হাসপাতালে ডায়ালাইসিস চলাকালে তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।
১১ দিন আগে
হাঙ্গেরির ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই এবার (২০২৫ সালে) সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন তাঁর দীর্ঘ, দার্শনিক বাক্য ও মানবজীবনের বিশৃঙ্খলার গভীর অনুসন্ধানী সাহিত্যকর্মের জন্য। সুইডিশ একাডেমি তাঁকে সম্মান জানিয়েছে ‘শিল্পের শক্তিকে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করার’ জন্য।
১৭ দিন আগে