Ajker Patrika

শতবর্ষে ‘সিদ্ধার্থ’

রাজীব সরকার
শতবর্ষে ‘সিদ্ধার্থ’

নোবেল পুরস্কারপ্রাপ্ত জার্মান লেখক হেরমান হেসের উপন্যাস ‘সিদ্ধার্থ’ ১৯২২ সালে প্রকাশলগ্নেই অসামান্য খ্যাতি অর্জন করে। পরবর্তী এক শ বছরে বিশ্বসাহিত্যের অন্যতম ধ্রুপদি সম্পদ হয়ে উঠেছে এটি। হেসের আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্যকর্ম রয়েছে। কথাসাহিত্য, কবিতা রচনার পাশাপাশি চিত্রকর হিসেবেও তিনি খ্যাতিমান ছিলেন। তবে তাঁর জগৎজোড়া বিস্তৃত খ্যাতির প্রধান উৎস ‘সিদ্ধার্থ’।

উপন্যাসের কাহিনি শুরু হয়েছে তরুণ ব্রাহ্মণ সিদ্ধার্থের অনুসন্ধিৎসু মনের পরিচয় দিয়ে। গোবিন্দ তাঁর অন্তরঙ্গ সহচর। সিদ্ধার্থের মেধা, পরিচ্ছন্ন চিন্তা, দৃঢ় সংকল্প ও জীবনের মহৎ লক্ষ্য গোবিন্দকে মুগ্ধ করে। তাঁর নিষ্ঠা ও জ্ঞানতৃষ্ণা দেখে পিতা স্বপ্ন দেখেন, ছেলে একদিন অসাধারণ পণ্ডিত ও শ্রেষ্ঠ ব্রাহ্মণ হবেন। সুদর্শন সিদ্ধার্থের সুকুমার কান্তি ও পরিশীলিত চলাফেরা দেখে মায়ের মন গর্বে ভরে ওঠে। তাঁর উন্নত ললাট, রাজোচিত চোখ, আকর্ষণীয় শারীরিক গঠন তরুণীদের হৃদয়ে প্রেমের ঢেউ জাগায়। কিন্তু সিদ্ধার্থের মনে শান্তি নেই। এক অতৃপ্তির বীজ তিনি বহন করে চলেছেন।

সিদ্ধার্থ লক্ষ করেছেন, পুরুষানুক্রমে ব্রাহ্মণেরা বিপুল পরিমাণ জ্ঞান সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করেছেন। কিন্তু কোথায় সেই ব্রাহ্মণ, পুরোহিত ও পণ্ডিত, যাঁরা শুধু বইয়ের পৃষ্ঠায় সুগভীর জ্ঞানরাশি সঞ্চয় করেননি, জীবনেও তাদের উপলব্ধি করেছেন? তাঁর পিতা ধর্মপরায়ণ ও বিদ্বান। সূক্ষ্ম ও মহৎ চিন্তায় তাঁর মস্তিষ্ক পূর্ণ। এত জেনেও কি তিনি অতৃপ্ত তত্ত্বানুসন্ধানী নন? এসব প্রশ্ন প্রতিনিয়ত সিদ্ধার্থকে উদ্বেলিত করে। তাঁর মনে হয় নিজের গভীর সত্তার মধ্যেই তো সবকিছুর মূল কারণ রয়েছে। তাঁকে জানতে হবে, আয়ত্ত করতে হবে। অন্তহীন জীবন জিজ্ঞাসার একপর্যায়ে সিদ্ধার্থ সন্ন্যাসব্রত গ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নেন। শুরুতে পিতা অমত করলেও পরে তিনি সম্মতি দেন। গোবিন্দ সিদ্ধার্থের অনুগামী হয়।

সন্ন্যাসীদের সান্নিধ্যে তিন বছর অতিক্রান্ত হওয়ার পর দুই বন্ধু জানতে পারেন গৌতম বুদ্ধ নামে একজন মহাত্মার আবির্ভাব ঘটেছে। তিনি জয় করেছেন জীবনের সব দুঃখ এবং রুদ্ধ করে দিয়েছেন জীবন-মৃত্যুর চক্রাকার গতি। তাঁরা সিদ্ধান্ত নেয় সন্ন্যাসীদের সঙ্গ ছেড়ে বুদ্ধের সান্নিধ্য লাভ করার। গৌতম বুদ্ধের সান্নিধ্যে কিছুদিন কাটানোর পর গোবিন্দ বুদ্ধের শিষ্যত্ব গ্রহণ করে। কিন্তু সিদ্ধার্থ গ্রহণ করে ভিন্ন সিদ্ধান্ত। বুদ্ধের মহত্ত্ব এবং কীর্তির প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া সত্ত্বেও তিনি যেতে চান নতুন কোনো তীর্থে। গোবিন্দ চিরকাল সিদ্ধার্থকে অনুসরণ করে এসেছেন। এই প্রথম তাঁরা বিচ্ছিন্ন হলেন। গোবিন্দ নিজের পথ খুঁজে নেওয়ায় সিদ্ধার্থ খুশি হন। অশ্রুসিক্ত হয়ে তাঁর কাছ থেকে গোবিন্দ বিদায় নেন। নিজের অতৃপ্ত জিজ্ঞাসাকে বুদ্ধের কাছে উপস্থাপন করে সংশয়মুক্ত হওয়ার চেষ্টা করেন সিদ্ধার্থ। যেহেতু বুদ্ধের ধর্মশিক্ষাই তাঁকে আকৃষ্ট করতে পারেনি, তাই অন্য কারও ধর্মোপদেশও তা পারবে না। বুদ্ধের প্রতি কৃতজ্ঞতায় নত হয়ে সিদ্ধার্থ অনুভব করেন, ‘বুদ্ধ আমার সব কেড়ে নিয়েছেন। কিন্তু আমার সবকিছু হরণ করেও ফিরিয়ে দিয়েছেন তার চেয়ে মূল্যবান জিনিস। তিনি অপহরণ করেছেন আমার বন্ধুকে। গোবিন্দের আস্থা ছিল আমার ওপর, সে এখন নির্ভর করবে বুদ্ধের ওপর। একদিন গোবিন্দ ছিল আমার ছায়া, সে এখন হয়েছে গৌতমের ছায়া। কিন্তু তিনি আমার কাছে ফিরিয়ে দিয়েছেন সিদ্ধার্থকে, আমাকে।’

বুদ্ধের মতো মহাত্মা ও শ্রেষ্ঠ পুণ্যাত্মাকেও সিদ্ধার্থ গুরু হিসেবে গ্রহণ করতে পারেননি। অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে নিজেকে প্রতিনিয়ত জানতে তৎপর হয় সিদ্ধার্থ। আত্মাকে, ব্রহ্মকে খুঁজতে গিয়ে নিজের কাছ থেকে পালিয়ে বেড়িয়েছেন তিনি, অগ্রাহ্য করেছেন নিজের অস্তিত্বকে। দৃশ্যমান জগৎকে মায়া বলে উড়িয়ে দিয়েছেন। এই ভ্রান্তির নাগপাশ মোচন করে সিদ্ধার্থ জেগে ওঠেন। নবজন্ম হয় তাঁর। বুদ্ধের অন্যতম বাণী ছিল, ‘আত্মদীপো ভব’, অর্থাৎ নিজেই নিজের প্রদীপ হও। বুদ্ধের প্রত্যক্ষ শিষ্যত্ব গ্রহণ না করলেও এই বাণীই যেন পরিচালিত করেছেন সিদ্ধার্থকে। সন্ন্যাসী, পুরোহিত, ব্রাহ্মণ—কোনো পরিচয়েই আর নিজেকে খুঁজে পান না তিনি। তাঁর লক্ষ্য শুধু সামনে এগিয়ে যাওয়া। তিনি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন, অন্যের উপদেশ থেকে কিছু শেখা যায় না। নিজের জীবন ক্ষয় করে অভিজ্ঞতা অর্জন করতে হয়। নিজের পথের সন্ধানে বেরিয়ে পড়েন সিদ্ধার্থ।

নদী পার হতে গিয়ে মাঝি বাসুদেবের সঙ্গে পরিচয় হয় সিদ্ধার্থের। তাঁর কাছে নদীর অসামান্য তাৎপর্য সম্বন্ধে শিক্ষালাভ করেন তিনি। নদী পার হয়ে সন্ধ্যায় নগরে উপস্থিত হন। নগরে ঢুকেই সুপরিচিতা বীরাঙ্গনা কমলার মুখোমুখি হন তিনি। লাস্যময়ী কমলার অপূর্ব দেহসৌন্দর্য সিদ্ধার্থকে আকৃষ্ট করে। তাকে নিজের গুরু হিসেবে গ্রহণ করতে চান সিদ্ধার্থ। আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে কমলাকে নিজের তিনটি গুণের কথা বলেন—ধ্যান, অপেক্ষা ও ধৈর্য। অসাধারণ আবৃত্তির বিনিময়ে কমলা তাঁকে চুম্বনসিক্ত করে। কমলার উদ্যোগে বণিক কামস্বামীর কাছে কাজের অভিজ্ঞতা লাভ করেন সিদ্ধার্থ। এভাবে জগৎ ও জীবন সম্পর্কে বাস্তবতার সম্মুখীন হন। কামকলানিপুণা কমলার সান্নিধ্যে সিদ্ধার্থ যৌন ক্রীড়ায় নৈপুণ্য অর্জন করেন। তাঁদের মিলনে একসময়ে কমলা সন্তানসম্ভবা হয়। এই সংবাদ জানার আগেই সিদ্ধার্থ কামিনী কাঞ্চনের প্রতি বীতশ্রদ্ধ হয়ে কমলার রমণীয় উদ্যান ত্যাগ করেন।

পথ চলতে চলতে সিদ্ধার্থ আবার এসে দাঁড়ান সেই সুন্দর নদীতীরে। একদিন এই নদী পার হয়ে নগরে পৌঁছেছিলেন তিনি। পুরোনো মাঝি বাসুদেবের সাক্ষাৎ পান। তাঁর কুটিরে রাত কাটিয়ে মাঝিকে নিজের জীবনের গল্প বলেন সিদ্ধার্থ। নদীর তীরে বছরের পর বছর কেটে যায় সিদ্ধার্থ ও বাসুদেবের। একসময় খবর এল ভগবান বুদ্ধ শয্যাশায়ী, তাঁর মহানির্বাণ লাভ আসন্ন।

দলে দলে পুণ্যার্থী, ভক্ত ও শিষ্যরা ছুটে আসে শেষবারের মতো তাঁকে দেখার আশায়। মাঝি তাঁদের নৌকায় পারাপার করে। এককালের প্রসিদ্ধ বীরাঙ্গনা কমলা তার সব ঐশ্বর্য ও উদ্যান দান করেছে বুদ্ধের শিষ্যদের সেবার জন্য। সে নিজেও বুদ্ধের শিষ্যত্ব গ্রহণ করে। বুদ্ধের দেহত্যাগ আসন্ন জেনে সে-ও পৌঁছে যায় নদীতীরে একমাত্র পুত্রের হাত ধরে। সাপের কামড়ে আহত হয় কমলা। ঘটনাচক্রে তার সেবায় এগিয়ে আসেন বাসুদেব ও সিদ্ধার্থ। কমলা ও নিজের পুত্রকে চিনতে পারেন সিদ্ধার্থ। শেষ মিলনের ক্ষণে কমলা ও সিদ্ধার্থের কথোপকথনের ভাষা হৃদয়স্পর্শী। বুদ্ধের দেখা না পাওয়ার অতৃপ্তি ঘুচে যায় সিদ্ধার্থকে দেখে। কমলার জীবনদীপ নির্বাপিত হয়।

পুত্রকে কাছে পেয়ে সিদ্ধার্থ নিজেকে সবচেয়ে সুখী ব্যক্তি বলে অনুভব করে কিন্তু অচিরেই তাঁর ভুল ভাঙে। পুত্র মায়ের বিলাসী জীবনধারায় বড় হয়েছে। সিদ্ধার্থের দরিদ্র কুটিরে কষ্টকর জীবনের সঙ্গে সে খাপ খাওয়াতে পারে না। সিদ্ধার্থ সর্বোচ্চ ধৈর্য ও নিষ্ঠার পরিচয় দেন পুত্রের হৃদয় জয় করার জন্য। কিন্তু পুত্রের ঔদ্ধত্য ও পুঞ্জীভূত ক্ষোভ বাড়তেই থাকে। একদিন ক্ষোভের বিস্ফোরণ ঘটিয়ে সিদ্ধার্থের উদ্দেশে পুত্র বলে, ‘তুমি আমার মায়ের প্রেমিক হলেও তোমাকে আমি পিতা বলে স্বীকার করি না, তোমাকে ঘৃণা করি।’ কুটির থেকে পালিয়ে যায় পুত্র।

নিঃসঙ্গ বৃদ্ধ সিদ্ধার্থ জীবনের শেষ পর্বে আবারও মুখোমুখি হন গোবিন্দের। দুই অকৃত্রিম বন্ধু নিজেদের অভিজ্ঞতালব্ধ শিক্ষা বিনিময় করেন পরস্পরের সঙ্গে। মাঝি বাসুদেব ও নদীকে নিজের শিক্ষক হিসেবে গ্রহণ করেন সিদ্ধার্থ। সিদ্ধার্থ নিঃসংকোচে বলেন, ‘গোবিন্দ, আমার মনে হয় ভালোবাসা সংসারের সবচেয়ে বড় জিনিস। বড় বড় দার্শনিক পৃথিবীকে খুঁটিয়ে পরীক্ষা করতে পারেন, সংসার-কর্মকাণ্ডের চমৎকার ব্যাখ্যা দিতে পারেন, ত্রিশটি বিচ্যুতির জন্য পৃথিবীকে ঘৃণাও করতে পারেন, কিন্তু আমাদের পক্ষে সবচেয়ে বড় কথা, এই পৃথিবীকে ভালোবাসা, তাকে ঘৃণা করা নয়। আমরা পরস্পরকে ভালোবাসব, এখানকার প্রতিটি প্রাণী ও বস্তুকে ভালোবাসব, সম্মান করব, শ্রদ্ধা করব এই সৃষ্টির সঙ্গে একাত্ম হয়ে।’ সিদ্ধার্থের অনন্ত জীবনতৃষ্ণা এভাবেই তৃপ্ত হয়। প্রকৃতি ও সৃষ্টিজগতের প্রতি ভালোবাসাই মোক্ষলাভের শ্রেষ্ঠ উপায়। সন্দেহ নেই, সিদ্ধার্থের এই শিক্ষা লেখক হেরমান হেসেরও জীবনদর্শন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

গবেষণায় বেরিয়ে এল আরবি সাহিত্যের ‘হারানো শতাব্দী’র গল্প

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল। কিন্তু ভাষাবিদ ও সাহিত্য ইতিহাসবিদদের মতে, এই ধারণা আসলে পশ্চিমা দৃষ্টিকোণ থেকে তৈরি এক ‘ঔপনিবেশিক কল্পনা’ মাত্র। বাস্তবে আরবি সাহিত্য কখনোই থেমে যায়নি।

প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী, অষ্টম শতাব্দীতে আব্বাসীয় খলিফাদের অধীনে বিজ্ঞান, দর্শন ও কবিতার কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল বাগদাদ। আবু নুয়াস, আল-মুতানাব্বি, আল-ফারাবি ও ইবনে সিনার মতো কবি ও দার্শনিকদের হাত ধরে শুরু হয়েছিল এক স্বর্ণযুগ। ঊনবিংশ শতাব্দীর ইউরোপীয় গবেষকেরা—যেমন ফরাসি চিন্তাবিদ আর্নেস্ট রেনাঁ ও ডাচ ইতিহাসবিদ রেইনহার্ট দোজি সেই আমলটিকেই আরবি বুদ্ধিবৃত্তিক জীবনের শিখর বলে স্বীকার করেছিলেন এবং দাবি করেছিলেন, একাদশ শতাব্দীর পর এই ধারাবাহিকতার পতন ঘটে। তাঁদের মতে, এরপর প্রায় ৮০০ বছর আরবে আর কোনো গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্যিক বা দার্শনিক কাজ হয়নি—যতক্ষণ না ইউরোপে রেনেসাঁ শুরু হয়।

কিন্তু আধুনিক গবেষকেরা বলছেন, এই ধারণা সরলীকৃত ও পক্ষপাতদুষ্ট। ফ্রাঙ্কফুর্ট আন্তর্জাতিক বইমেলায় শেখ জায়েদ বুক অ্যাওয়ার্ডের আয়োজিত এক আলোচনায় ভাষাবিদেরা দাবি করেছেন, আরবি রচনা শৈলী কখনো বিলুপ্ত হয়নি; বরং তা ধারাবাহিকভাবে কপি, অনুবাদ ও পাঠের মাধ্যমে বেঁচে ছিল।

জার্মান গবেষক বেয়াট্রিস গ্রুন্ডলার তাঁর ‘দ্য রাইজ অব দ্য অ্যারাবিক বুক’ গ্রন্থে দাবি করেছেন, আরবি সাহিত্যে ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে যে ধারণাটি প্রচলিত আছে তা আসলে গাল-গল্প। এই বইটি এবারের শেখ জায়েদ পুরস্কারের শর্টলিস্টে রয়েছে। গ্রুন্ডলার এতে দেখিয়েছেন, নবম শতাব্দীর বাগদাদে বইয়ের ব্যবসা, কপিকারদের প্রতিযোগিতা, জনসম্মুখে পাঠ ও লেখার প্রচলন—সবই ছিল আধুনিক প্রকাশনা সংস্কৃতির পূর্বসূরি। তিনি মত দিয়েছেন, ‘বাগদাদের রাস্তায় হাঁটলে আপনি দেখতেন লোকেরা হস্তলিপি বিক্রি করছে, বিরামচিহ্ন নিয়ে তর্ক করছে—এ যেন এক জীবন্ত প্রকাশনা বাজার।’

গবেষণা বলছে, আরবি সাহিত্য আসলে কখনো এক জায়গায় স্থির থাকেনি। এর কেন্দ্র এক সময় বাগদাদ থেকে কায়রো, দামেস্ক ও আন্দালুসিয়ায় স্থানান্তরিত হয়। কিন্তু ধারাটি অব্যাহতই থাকে। নতুন ঘরানা তৈরি হয়, পুরোনো ঘরানা রূপান্তরিত হয়।

ফরাসি অধ্যাপক হাকান ওজকান তাঁর গবেষণায় দেখিয়েছেন, ‘জাজাল’ নামের কথ্য ছন্দভিত্তিক কবিতার ধারা আব্বাসীয় যুগের পরও বিকশিত হতে থাকে। তাঁর মতে, ‘এই কবিরা নিয়ম ভেঙে নতুন রূপ দিয়েছে—তাঁদের ছন্দ ও ব্যঙ্গ আধুনিক র্যাপের মতো প্রাণবন্ত।’

জার্মান গবেষক বেয়াট্রিস গ্রুন্ডলারের ‘দ্য রাইজ অব দ্য অ্যারাবিক বুক’ বইটি এবারের শেখ জায়েদ পুরস্কারের শর্টলিস্টে রয়েছে। ছবি: দ্য ন্যাশনাল
জার্মান গবেষক বেয়াট্রিস গ্রুন্ডলারের ‘দ্য রাইজ অব দ্য অ্যারাবিক বুক’ বইটি এবারের শেখ জায়েদ পুরস্কারের শর্টলিস্টে রয়েছে। ছবি: দ্য ন্যাশনাল

এদিকে এই বিষয়ে এক প্রতিবেদনে সোমবার (২০ অক্টোবর) আমিরাতভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য ন্যাশনাল জানিয়েছে, আবুধাবির নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির ‘আরবি সাহিত্য লাইব্রেরি’ প্রকল্প ইতিমধ্যেই ‘হারানো শতাব্দী’ বলে বিবেচিত সময়ের ৬০ টিরও বেশি আরবি সাহিত্যকর্ম পুনরুদ্ধার করেছে। প্রকল্পটির সম্পাদক অধ্যাপক মরিস পোমেরান্টজ বলেছেন, ‘এই বইগুলো সম্পাদনা করা মানে এক চলমান সংলাপে অংশ নেওয়া—যেখানে প্রজন্মের পর প্রজন্ম লেখক, অনুবাদক ও সমালোচকেরা একে অপরকে উত্তর দিয়ে গেছেন।’

মরিস মনে করেন, আরবি সাহিত্য স্থবির হয়ে যাওয়ার ধারণাটি মূলত অনুবাদের অভাব থেকেই জন্ম নিয়েছে। তিনি বলেন, ‘যখন কোনো লেখা অনুবাদ করা হয় না, তখন সেটি বৈশ্বিক অস্তিত্ব হারায়।’

মরিসের মতে, এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো এই সাহিত্যকে আবার জনসাধারণের কল্পনায় ফিরিয়ে আনা—স্কুলে পড়ানো, মঞ্চে উপস্থাপন করা, অনুবাদের মাধ্যমে বিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়া। তা না হলে আরবি সাহিত্যের ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে চিহ্নিত সময়টি অধরাই থেকে যাবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

তিন গোয়েন্দার স্রষ্টা রকিব হাসান মারা গেছেন

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
জনপ্রিয় কিশোর গোয়েন্দা সিরিজ তিন গোয়েন্দার স্রষ্টা রকিব হাসান। ছবি: সংগৃহীত
জনপ্রিয় কিশোর গোয়েন্দা সিরিজ তিন গোয়েন্দার স্রষ্টা রকিব হাসান। ছবি: সংগৃহীত

জনপ্রিয় কিশোর গোয়েন্দা সিরিজ তিন গোয়েন্দার স্রষ্টা রকিব হাসান মারা গেছেন। আজ বুধবার রাজধানীর একটি হাসপাতালে ডায়ালাইসিস চলাকালে তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।

রকিব হাসানের মৃত্যুর খবরটি নিশ্চিত করেছেন সেবা প্রকাশনীর উপদেষ্টা মাসুমা মায়মুর। তিনি সেবা প্রকাশনীর প্রতিষ্ঠাতা কাজী আনোয়ার হোসেনের ছোট ছেলে কাজী মায়মুর হোসেনের স্ত্রী।

মাসুমা মায়মুর ফেসবুকে লিখেছেন, ‘তিন গোয়েন্দা ও সেবা প্রকাশনীর পাঠকদেরকে আন্তরিক দুঃখের সাথে জানাচ্ছি যে, কিছুক্ষণ আগে রকিব হাসান সাহেব পরলোক গমন করেছেন। ডায়ালাইসিস চলাকালে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে ওনার জীবনাবসান ঘটে। আপনারা ওনার পবিত্র আত্মার মাগফেরাত কামনা করুন।’

১৯৫০ সালের ১২ ডিসেম্বর কুমিল্লায় জন্মগ্রহণ করেন রকিব হাসান। বাবার চাকরির কারণে শৈশব কেটেছে ফেনীতে। সেখান থেকে স্কুলজীবন শেষ করে ভর্তি হন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজে। পড়াশোনা শেষে বিভিন্ন চাকরিতে যুক্ত হলেও অফিসের বাঁধাধরা জীবনে তাঁর মন টেকেনি। অবশেষে তিনি লেখালেখিকে বেছে নেন জীবনের একমাত্র পথ হিসেবে।

জনপ্রিয় কিশোর গোয়েন্দা সিরিজ। ছবি: সংগৃহীত
জনপ্রিয় কিশোর গোয়েন্দা সিরিজ। ছবি: সংগৃহীত

সেবা প্রকাশনী থেকে তাঁর লেখকজীবনের সূচনা হয়। প্রথমদিকে বিশ্বসেরা ক্ল্যাসিক বই অনুবাদ করে লেখালেখির জগতে প্রবেশ করেন তিনি। এরপর টারজান, গোয়েন্দা রাজু, রেজা-সুজা সিরিজসহ চার শতাধিক জনপ্রিয় বই লেখেন। তবে তাঁর পরিচয়ের সবচেয়ে বড় জায়গা হলো তিন গোয়েন্দা সিরিজ। এই সিরিজ বাংলাদেশের অসংখ্য কিশোর-কিশোরীর কৈশোরের সঙ্গী।

মূলত রবার্ট আর্থারের থ্রি ইনভেস্টিগেটরস সিরিজ অবলম্বনে তিন গোয়েন্দার সূচনা হয়। তবে রকিব হাসানের লেখনশৈলীতে এটি পেয়েছে একেবারে নতুন রূপ। বাংলাদেশি সাহিত্য হয়ে উঠেছে এটি। এই সিরিজের মাধ্যমে তিনি হয়ে ওঠেন হাজারো কিশোর পাঠকের প্রিয় লেখক।

নিজ নামে লেখার পাশাপাশি তিনি ব্যবহার করেছেন বিভিন্ন ছদ্মনাম। শামসুদ্দীন নওয়াব নামে তিনি অনুবাদ করেছিলেন জুল ভার্নের বইগুলো।

বাংলাদেশের পাঠকদের কাছে রকিব হাসান শুধু একজন গোয়েন্দা লেখক নন, তিনি কয়েক প্রজন্মের শৈশব-কৈশোরের ভালোবাসার মানুষ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ক্রাসনাহোরকাইয়ের নোবেল যেন তাঁর দীর্ঘ কোনো বাক্যের সমাপ্তি

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
লাসলো ক্রাসনাহোরকাই। ছবি: সংগৃহীত
লাসলো ক্রাসনাহোরকাই। ছবি: সংগৃহীত

হাঙ্গেরির ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই এবার (২০২৫ সালে) সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন তাঁর দীর্ঘ, দার্শনিক বাক্য ও মানবজীবনের বিশৃঙ্খলার গভীর অনুসন্ধানী সাহিত্যকর্মের জন্য। সুইডিশ একাডেমি তাঁকে সম্মান জানিয়েছে ‘শিল্পের শক্তিকে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করার’ জন্য। লেখক সুসান সনটাগ অবশ্য তাঁকে একসময় ‘মহাপ্রলয়ের হাঙ্গেরিয়ান গুরু’ আখ্যা দিয়েছিলেন।

সাহিত্যজগতে অনেকের কাছে ক্রাসনাহোরকাইয়ের নোবেল পাওয়ার এই ঘোষণাটি যেন কয়েক দশক ধরে চলা একটি বাক্যের সমাপ্তি।

১৯৫৪ সালে হাঙ্গেরির ছোট শহর জিউলা-তে জন্ম নেওয়া ক্রাসনাহোরকাই ১৯৮০-এর দশকের শুরুতে গল্প লেখা শুরু করেন। তাঁর প্রথম উপন্যাস স্যাটানট্যাঙ্গো (১৯৮৫) একটি বৃষ্টিস্নাত, ধ্বংসপ্রায় গ্রামের কাহিনি—যেখানে প্রতারক, মাতাল ও হতাশ মানুষেরা মিথ্যা আশায় আঁকড়ে থাকে। পরিচালক বেলা-তার তাঁর এই উপন্যাসটিকে দীর্ঘ ৭ ঘণ্টার এক সাদাকালো চলচ্চিত্রে রূপ দেন। এই বইতেই ধরা পড়ে ক্রাসনাহোরকাইয়ের লেখার বৈশিষ্ট্যসমূহ, যেমন—অবিরাম দীর্ঘ বাক্য, দার্শনিক হাস্যরস ও পতনের কিনারায় দাঁড়িয়ে থাকা মানুষের প্রতিচ্ছবি।

তাঁর পরবর্তী উপন্যাসগুলো—দ্য মেলানকোলি অব রেজিস্ট্যান্স (১৯৮৯), ওয়ার অ্যান্ড ওয়ার (১৯৯৯) ও সেইবো দেয়ার বিলো (২০০৮)—তাঁর এই দৃষ্টিভঙ্গিকে মহাজাগতিক পরিসরে বিস্তৃত করেছে। ‘ওয়ার অ্যান্ড ওয়ার’–এ তিনি এক নথি প্রহরীর গল্প বলেছেন, যিনি রহস্যময় এক পাণ্ডুলিপি প্রকাশ করতে নিউইয়র্কে পালিয়ে যান এবং আত্মহত্যা করেন—যেন ক্রম বিলীন পৃথিবীতে অর্থ ধরে রাখার এক মরিয়া চেষ্টা তাঁর।

ক্রাসনাহোরকাইয়ের লেখায় কাহিনি প্রায় সময়ই বাক্যের ভেতর হারিয়ে যায়। তিনি লিখেছেন এমন বাক্য, যা একাধিক পৃষ্ঠা জুড়ে পাঠককে টেনে নেয় অবচেতনে, অবিরাম প্রবাহে।

তাঁর সাহিত্যে হাস্যরস ও ট্র্যাজেডি পাশাপাশি চলে। স্যাটানট্যাঙ্গো–এর মাতাল নাচের দৃশ্য যেমন নিঃশেষের প্রতীক, তেমনি ‘ব্যারন ওয়েঙ্কহাইমস হোমকামিং’ (২০১৬)-এ দেখা যায়, ফিরে আসা এক পরাজিত অভিজাতকে। যার মাধ্যমে প্রকাশ পায় সভ্যতার পচন ও মানুষের হাস্যকর ভ্রান্তি।

২০১৫ সালে ম্যান বুকার পুরস্কার পাওয়ার মধ্য দিয়েই প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পান ক্রাসনাহোরকাই। অনুবাদক জর্জ সির্টেস ও ওটিলি মুলজেট তাঁর জটিল হাঙ্গেরিয়ান ভাষাকে ইংরেজিতে রূপ দিতে বিশেষ ভূমিকা রাখেন। ‘হাডসন রিভিউ’ তাঁকে বর্ণনা করেছিল ‘অন্তহীন বাক্যের ভ্রমণশিল্পী’ হিসেবে।

চল্লিশ বছরের সৃষ্টিতে ক্রাসনাহোরকাইয়ের ভুবন চিত্র, সংগীত, দর্শন ও ভাষার মিলনে বিস্তৃত। সাম্প্রতিক উপন্যাস ‘হার্শট ০৭৭৬৯’ (২০২৪)–এ তিনি এক প্রবাহিত বাক্যে লিখেছেন নব্য-নাৎসি, নেকড়ে আর এক হতভাগ্য পদার্থবিদের কাহিনি—আধুনিক ইউরোপের নৈতিক পক্ষাঘাতের রূপক হিসেবে।

তাঁর সমগ্র সাহিত্যজগৎ এক অন্ধকার ও ধ্যানমগ্ন মহাবিশ্ব—যেখানে পতন, শূন্যতা ও করুণা পাশাপাশি থাকে। ‘সেইবো দেয়ার বিলো’ বইটিতে তিনি লিখেছেন, ‘সৌন্দর্য, যত ক্ষণস্থায়ীই হোক না কেন, তা পবিত্রতার প্রতিবিম্ব।’ এই বিশ্বাসই লাসলো ক্রাসনাহোরকাইকে সেই বিরল লেখক করে তুলেছে, যাঁর নৈরাশ্যও মুক্তির মতো দীপ্ত।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

সন্ত্রাসের দাপটেও শিল্পের শক্তি চেনায় লাসলো ক্রাসনাহোরকাইয়ের কলম

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১০ অক্টোবর ২০২৫, ০০: ১০
সন্ত্রাসের দাপটেও শিল্পের শক্তি চেনায় লাসলো ক্রাসনাহোরকাইয়ের কলম

হাঙ্গেরির সাহিত্যে অসীম জনপ্রিয়তা ও প্রভাব তাঁর; বিশ্বজোড়া আতঙ্ক ও সন্ত্রাসের দাপটেও শিল্পের শক্তি চেনায় তাঁর কলম। তিনি হাঙ্গেরিয়ান ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই; সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০২৫ সালে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।

আধুনিক হাঙ্গেরীয় সাহিত্যের একজন অন্যতম প্রধান ব্যক্তিত্ব লাসলো। অভিনব শৈলীর পাশাপাশি দার্শনিক গভীরতার জন্য তাঁর সাহিত্য সমাদৃত হয়েছে। তাঁকে ফ্রানৎস কাফকা ও স্যামুয়েল বেকেটের ঐতিহ্যের উত্তরাধিকারী হিসেবে বিবেচনা করা হয়। বিশ্বজোড়া আতঙ্ক ও সন্ত্রাসের মধ্যেও শিল্পের লেলিহান ঔজ্জ্বল্য ফুটে ওঠে লাসলোর লেখায়। তাই যুদ্ধবিধ্বস্ত সময়ের বুকে ফুলের মতো স্থান করে নিল তাঁর সাহিত্য।

লাসলোর জন্য সাহিত্যে এটা প্রথম পুরস্কার নয়, ২০১৪ সালে সাহিত্যকর্মের জন্য ম্যান বুকার ইন্টারন্যাশনাল পুরস্কার পান তিনি। এ পুরস্কার বিশ্বসাহিত্যে তাঁর অবস্থানকে সুদৃঢ় করে।

লাসলোর সাহিত্যের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো—স্বতন্ত্র শৈলী ও গঠন। উপন্যাসের মূল বিষয়বস্তু হলো—মানবতার অবক্ষয়, ধ্বংসের অনিবার্যতা ও আধুনিক জীবনের লক্ষ্যহীন চলন। তাঁর চরিত্রদের মধ্যে প্রায়ই একধরনের হতাশা ও বিচ্ছিন্নতা দেখা যায়; তারা এমন এক জগতের পথিক, যেখানে নৈতিকতা ও আশা বিলীনপ্রায়।

১৯৮৫ সালে প্রকাশিত ‘স্যাটানটাঙ্গো’ নামে প্রথম উপন্যাস লিখেই খ্যাতি পান লাসলো। এই উপন্যাসে বিচ্ছিন্ন ও পতিত এক কৃষি সমবায় গ্রামের জীবন তুলে ধরেছেন তিনি। সেখানে একধরনের বিভ্রম ও আশার জন্ম দেয় এক রহস্যময় আগন্তুকের আগমনে। এই উপন্যাস অবলম্বনে একই শিরোনামে সাত ঘণ্টার কালজয়ী চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন বিখ্যাত পরিচালক বেলা টর।

লাসলোর আরেকটি ফিকশন উপন্যাস হলো— ‘দ্য মেলানকোলি অব রেজিস্ট্যান্স’। হাঙ্গেরির এক কাল্পনিক শহরের জীবন ফুটে উঠেছে এই উপন্যাসে। সামুদ্রিক প্রাণী হাঙরের প্রদর্শনীকে কেন্দ্র করে মানুষের মধ্যকার উন্মাদনা, সামাজিক বিশৃঙ্খলা ও একনায়কতন্ত্রের উত্থানের চিত্র আঁকা হয়েছে তাতে।

‘ওয়ার অ্যান্ড ওয়ার’ লাসলোর আরেকটি বিখ্যাত উপন্যাস। লম্বা লম্বা বাক্যে লেখা এই উপন্যাস লাসলোর শৈলী নিয়ে পাঠকদের নতুন করে ভাবায়। উপন্যাসের নায়ক একটি পাণ্ডুলিপি রক্ষা করার জন্য বিশ্বের বিভিন্ন শহর ঘুরে বেড়ায়। বিশ্বের চূড়ান্ত ধ্বংসের একটি কাব্যিক বর্ণনা পাওয়া যায় এই উপন্যাসে।

এবার লাসলোকে পুরস্কারের জন্য মনোনীত করার নেপথ্যে নোবেল কমিটির বড় কারণ ছিল তাঁর সাহিত্যে শিল্পের জয়ধ্বনি তোলার প্রচেষ্টা। যখন সারা বিশ্বের বেশ কিছু দেশ যুদ্ধবিধ্বস্ত বা যুদ্ধের জন্য উৎসুক, তখন বারবার শিল্পের মোহিনী প্রেম ও বন্ধনের কথা মনে করিয়ে দিতে চায় লাসলোর সাহিত্য।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত