Ajker Patrika

নজরুলের তিন নারী যেভাবে উঠে এলেন উপন্যাসে

বিশ্বজিৎ চৌধুরী
নজরুলের তিন নারী যেভাবে  উঠে এলেন উপন্যাসে

কবি নজরুলের জন্য ১৭ বছর অপেক্ষা করেছিলেন এক নারী। এই একটি তথ্যই কৌতূহলী করে তুলেছিল আমাকে। তাঁর প্রথম প্রেম নার্গিস। মিলনের পূর্ণতা 
পায়নি এই প্রেম। সেই হাহাকার উৎকীর্ণ হয়ে আছে তাঁর গানে-কবিতায়।

স্কুলজীবনের শেষ দিকে কিংবা কলেজজীবনের শুরুতে, আজ আর নির্দিষ্ট দিনক্ষণ মনে করতে পারি না, একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে একজন আবৃত্তিকারের ভরাট কণ্ঠে নজরুলের একটি চিঠির পাঠ শুনেছিলাম।

চিঠির সব কথা স্মৃতিতে ধারণ করতে পারিনি, শুধু মনে পড়ে অদ্ভুত এক আবেগে আক্রান্ত হয়েছিলাম সেদিন। বেশ কিছুকাল পর যখন নিজেরই সেই চিঠি পাঠের সুযোগ হলো, তখন আর আমি নবীন কিশোর নই, কিন্তু কী আশ্চর্য! পরিণত বয়সেও সেই চিঠি আমাকে যেন একইভাবে রোমাঞ্চিত করে তোলে, আবেগে ভাসিয়ে নিয়ে যায়। 

চিঠিতে নজরুল লিখেছিলেন—
 “কল্যাণীয়াসু, 
তোমার পত্র পেয়েছি সেদিন নববর্ষার নবঘন-সিক্ত প্রভাতে। মেঘ-মেদুর গগনে সেদিন অশান্ত ধারায় বারি ঝরছিল। পনর বছর আগে এমনি এক আষাঢ়ে এমনি বারিধারার প্লাবন নেমেছিল—তা তুমিও স্মরণ করতে পারো। আষাঢ়ের নব মেঘপুঞ্জকে আমার নমস্কার।...এই আষাঢ় আমায় কল্পনার স্বর্গলোক থেকে টেনে ভাসিয়ে দিয়েছে বেদনার অনন্ত স্রোতে। যাক্ তোমার অনুযোগের অভিযোগের উত্তর দিই। তুমি বিশ্বাস করো, আমি যা লিখছি তা সত্য। লোকের মুখের শোনা কথা দিয়ে যদি আমার মূর্তির কল্পনা করে থাকো, তাহলে আমায় ভুল বুঝবে—আর তা মিথ্যা।

তোমার উপর আমি কোন জিঘাংসা পোষণ করি না—এ আমি সকল অন্তর দিয়ে বলছি। আমার অন্তর্যামী জানেন, তোমার জন্য আমার হৃদয়ে কী গভীর ক্ষত, কী অসীম বেদনা! সে বেদনার আগুনে আমিই পুড়েছি—তা দিয়ে তোমায় কোনো দিন দগ্ধ করতে চাইনি। তুমি এই আগুনের পরশমানিক না দিলে আমি ‘অগ্নিবীণা’ বাজাতে পারতাম না—‘ধূমকেতু’র বিস্ময় নিয়ে উদিত হতে পারতাম না।”

দীর্ঘ চিঠির এটুকু অংশ পড়েই অজস্র প্রশ্ন জাগে মনে। কে এই নারী? কেন তাঁর কাছে নিজের অবস্থান ব্যাখ্যা করছেন কবি? সেই নারীর জন্য যদি সত্যিই তাঁর হৃদয়জুড়ে ‘গভীর ক্ষত’ ও ‘অসীম বেদনা’, তাহলে কেন বিচ্ছেদের করুণ পরিণতি পেয়েছিল এই সম্পর্ক? কেন বিয়ের সাজ ও স্বপ্নে সজ্জিতা একটি মেয়েকে বাসররাত ফুরোবার আগেই ফেলে রেখে এসেছিলেন কবি? ১৫ বছর পর এই পত্র কি নিজের অপরাধকে লঘু করার চেষ্টা?

এসব প্রশ্নের সূত্র ধরে কুমিল্লার মুরাদনগরের দৌলতপুর গ্রামের নার্গিসকে খুঁজতে বেরিয়েছিলাম আমি, তাঁকে নিয়ে একটি উপন্যাস লিখব এই অভিপ্রায়ে। কিন্তু সেই পথ বড় অসহজ, দুর্গম। কবি নজরুল ইসলামের জীবনীভিত্তিক বহু গ্রন্থ পাঠ করে দেখি, এই নার্গিস প্রসঙ্গ কুয়াশাচ্ছন্ন করে তুলেছেন লেখকেরা। নজরুল-নার্গিস সম্পর্ক ও তার পরিণতি সম্পর্কে গবেষকেরা রীতিমতো দ্বিধাবিভক্ত।

১৯২১ সালে আলী আকবর খানের সঙ্গে দৌলতপুরে তাঁর বাড়িতে গিয়েছিলেন নজরুল। সেখানে প্রায় আড়াই মাস অবস্থানকালে খান সাহেবের ভাগনি নার্গিসের সঙ্গে নজরুলের প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে—এ তথ্য নিয়ে দ্বিমত নেই। কিন্তু ১৯২১ সালের ১৭ জুন নির্ধারিত তারিখে তাঁদের বিয়ে হয়েছিল, নাকি কাবিননামা বা অন্য কোনো মতবিরোধের কারণে নজরুল বিয়ের আসর ছেড়ে উঠে চলে গিয়েছিলেন—এ নিয়েই যাবতীয় মতভিন্নতা।

কমরেড মুজফ্‌ফর আহমদ ছিলেন নজরুলের ঘনিষ্ঠ সুহৃদ ও অভিভাবকতুল্য। তাঁর ‘কাজী নজরুল ইসলাম: স্মৃতিকথা’ গ্রন্থে বিয়ের প্রসঙ্গটি যেভাবে বর্ণিত হয়েছে, তা-ই যথার্থ বিবেচনা করেছেন রফিকুল ইসলাম, হায়াৎ মামুদ, জিয়াদ আলী ও শান্তনু কায়সারদের মতো বিজ্ঞ নজরুল গবেষকেরা; অর্থাৎ নজরুল ও নার্গিসের বিয়েটা শেষ অবধি হয়নি। বিয়ের আসর থেকেই উঠে চলে গিয়েছিলেন নজরুল। কিন্তু মুজফ্‌ফরের বক্তব্যের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেছেন খোদ তাঁর জামাতা কবি আবদুল কাদির।

তিনি মুসলিম বিবাহ আইন উদ্ধৃত করে, ঘটনাপরম্পরা উল্লেখ করে বলেছিলেন, শাস্ত্রসম্মত পদ্ধতিতে বিয়েটা হয়েছিল। বিয়ের পরদিন সকালে নজরুল কুমিল্লা ছেড়ে গিয়েছিলেন।

নজরুল গবেষক আজহার আলী খান তো বটেই, সুফী জুলফিকার হায়দার, কাজী মোতাহের হোসেন, খান মোহাম্মদ মঈনুদ্দীন প্রমুখ নজরুলের ঘনিষ্ঠজনদের বক্তব্যও ছিল আবদুল কাদিরের অনুরূপ। তবে বিয়েতে কিছু একটা গোলযোগ হয়েছিল, এ বিষয়ে সবাই ছিলেন একমত।

উপন্যাস তো গবেষণা নয়, গবেষকদের দোটানার মধ্যে নিজের মতো করে পথ কেটে নিয়েছি আমি। তথ্য যেখানে শেষ, সেখানেই বিস্তৃতি ঘটেছে কল্পনার। এটুকু স্বাধীনতা ঔপন্যাসিকের প্রাপ্য বলেই মনে করি।

কাজী নজরুল ইসলামের জীবনে গুরুত্বপূর্ণ তিন নারীউপন্যাসে আমি সৈয়দা আসার খানম নামের একটি গ্রাম্য কিশোরীর কথা তুলে ধরতে চেষ্টা করেছি, যাঁকে ভালোবেসে নজরুল তাঁর প্রিয় ফুলের নামে নাম দিয়েছিলেন নার্গিস। আষাঢ় মাসে বিয়ে হয়েছিল। বিয়ের পরদিন চলে যাওয়ার সময় কবি তাঁকে বলে গিয়েছিলেন, শ্রাবণ মাসে পরিবার-পরিজনসমেত এসে তুলে নিয়ে যাবেন। কিন্তু সেই যে গেলেন, ১৭টি বছর কাটল, ‘শাওন আসিল ফিরে, সে ফিরে এল না।’

 ‘নার্গিস’ উপন্যাসটি লেখার সময় নজরুলের জীবনসংক্রান্ত প্রচুর বইপত্র ঘাঁটাঘাঁটি করতে হয়েছে। তখনই আরেকটি চরিত্র আমার মনে দারুণ রেখাপাত করে। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম মুসলিম ছাত্রী এবং অঙ্কশাস্ত্রে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হওয়া ফজিলতুন্নেসা।

কাজী নজরুল ইসলাম ঢাকায় এসেছিলেন মুসলিম সাহিত্য সমাজের  দ্বিবার্ষিক সম্মেলনে অতিথি হয়ে। সেটা ১৯২৮ সাল। সেই সম্মেলনে একটি প্রবন্ধ পাঠ করেছিলেন বিদূষী ফজিলতুন্নেসা। কিন্তু সেখানে নয়, এই শ্যামাঙ্গী মেধাবী তরুণীর সঙ্গে নজরুলের পরিচয় হয় কাজী মোতাহের হোসেনের বর্ধমান হাউসের বাড়িতে।

এই দীপ্তিময়ীর সঙ্গে প্রথম আলাপেই মুগ্ধ হন কবি এবং সেই মুগ্ধতা দ্রুত প্রেমে রূপান্তরিত হয়। কিন্তু ফজিলতুন্নেসা তো নার্গিস নন। ঢাকার ইডেন কলেজ ও কলকাতার বেথুন কলেজে কৃতিত্বের সঙ্গে লেখাপড়ার পাঠ চুকিয়ে আসা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই তুখোড় ছাত্রীর সামনে তখন ভবিষ্যতের দিগন্ত অনেক দূর বিস্তৃত। কবির সান্নিধ্য, তাঁর গান ও কবিতা তাঁকে মুগ্ধ করে বটে, কিন্তু এই বিবাহিত পুরুষের প্রেমে পড়ার মতো হঠকারিতা তিনি করতে পারেন না। কোথাও হয়তো প্রশ্রয় কিছুটা ছিল, এদিকে নজরুলের ছিল নারীর হৃদয় জয় করার সহজাত ক্ষমতা।

তাই তিনি ভেবেছিলেন এখানেও সফল হবেন তিনি। তা হয়নি। প্রত্যাখ্যানের আঘাতে জর্জরিত হয়েছিলেন। নজরুলের অনেক কালজয়ী কবিতা ও গানে আছে সেই বেদনার বয়ান।

ফজিলতুন্নেসা ইংল্যান্ড চলে গিয়েছিলেন উচ্চশিক্ষার জন্য। এখানেই চূড়ান্ত সমাপ্তি ঘটতে পারত এই সম্পর্কের; ঘটেনি। ঘটেনি বলেই ফজিলতুন্নেসাকে নিয়ে কবি যেমন কবিতা লিখেছিলেন ‘রহস্যময়ী’ নামে, আমাদেরও তাঁকে কিছুটা রহস্যময়ীই মনে হয়েছে। এই সম্পর্ক–বৈচিত্র্যকেই আমি তুলে ধরতে চেয়েছি ‘কবি ও রহস্যময়ী’ উপন্যাসে।

নার্গিস বা ফজিলতুন্নেসা ছাড়াও নজরুলের জীবনে এসেছেন আরও অনেক নারী। এসব সম্পর্ক অনেকটা ‘ঘরেতে এল না সে তো মনে তার নিত্য আসা-যাওয়া...’ গোছের।

কিন্তু আশালতা সেনগুপ্তের (প্রমীলা) সঙ্গে নজরুলের অসবর্ণ প্রেম সমাজের নানা ভ্রুকুটি বা আপত্তি সত্ত্বেও গৃহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিল। পূর্ববর্তী দুটি উপন্যাস লেখার সময় নজরুল-জীবনীতে আমি বারবার আশালতার দিকে সবিস্ময়ে তাকিয়েছি। দেশব্যাপী তুমুল জনপ্রিয় এই মানুষটির সঙ্গে ঘর করা আর ঝড়কে নিজের ঘরে বন্দী করার চেষ্টা তো সমার্থক।

কখনো অভাব-দারিদ্র্য, কখনোবা প্রাচুর্য ও অপচয়—সবকিছুতেই লাগামহীন জীবনে অভ্যস্ত একটি মানুষকে নিজের শেষ দিনটি পর্যন্ত আগলে রেখেছিলেন যে নারী, তাঁকে নিয়ে না লিখলে বৃত্তটা তো সম্পূর্ণ হয় না! সেই ভাবনা থেকে ‘আশালতা’ নামের একটি উপন্যাস লিখতে শুরু করি। ২০২১ সালের একটি ঈদসংখ্যায় এ উপন্যাস সংক্ষিপ্তাকারে প্রকাশিত হয়েছে। আশা করছি, আগামী ফেব্রুয়ারির বইমেলায় পূর্ণাঙ্গ ‘আশালতা’ প্রকাশ পাবে।

২০১৪ সালে প্রকাশিত ‘নার্গিস’-এর সাতটি মুদ্রণ এবং ২০২০ সালে প্রকাশিত ‘কবি ও রহস্যময়ী’র দুটি মুদ্রণ এযাবৎ প্রকাশিত হয়েছে। পাঠকদের কাছ থেকে পাওয়া এই আনুকূল্যের কারণ খুঁজতে গিয়ে আমার মনে হয়, নজরুলের কবিতা এখনো যেমন সমান আগ্রহে পাঠ করেন পাঠক, তেমনি তাঁর বর্ণময় ঘটনাবহুল জীবন নিয়ে অনুসন্ধিৎসাও কমেনি। সে ক্ষেত্রে নিরেট ইতিহাস পাঠের চেয়ে আখ্যান পাঠের আনন্দ যে বেশি, তা তো বলাই বাহুল্য। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মসজিদে আমির হামজাকে রাজনৈতিক আলোচনা করতে নিষেধ করায় লাঞ্ছিত বিএনপি নেতা

বিয়ারিং প্যাড খুলে পড়ে পথচারীর মৃত্যু, মেট্রোরেল চলাচল বন্ধ

বিমানবন্দর রেলস্টেশনে ট্রেন থেকে আগ্নেয়াস্ত্রভর্তি ট্রলি ব্যাগ উদ্ধার

মেট্রোরেলের বিয়ারিং প্যাড পড়ে নিহত কালাম ভাইয়ের সংসারও সামলাতেন, পরিবারে হাহাকার

ঘুষ হিসেবে পাকা কলা নেওয়ার কথা স্বীকার, দুদকের গণশুনানিতে তাৎক্ষণিক বদলির আদেশ

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

গবেষণায় বেরিয়ে এল আরবি সাহিত্যের ‘হারানো শতাব্দী’র গল্প

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল। কিন্তু ভাষাবিদ ও সাহিত্য ইতিহাসবিদদের মতে, এই ধারণা আসলে পশ্চিমা দৃষ্টিকোণ থেকে তৈরি এক ‘ঔপনিবেশিক কল্পনা’ মাত্র। বাস্তবে আরবি সাহিত্য কখনোই থেমে যায়নি।

প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী, অষ্টম শতাব্দীতে আব্বাসীয় খলিফাদের অধীনে বিজ্ঞান, দর্শন ও কবিতার কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল বাগদাদ। আবু নুয়াস, আল-মুতানাব্বি, আল-ফারাবি ও ইবনে সিনার মতো কবি ও দার্শনিকদের হাত ধরে শুরু হয়েছিল এক স্বর্ণযুগ। ঊনবিংশ শতাব্দীর ইউরোপীয় গবেষকেরা—যেমন ফরাসি চিন্তাবিদ আর্নেস্ট রেনাঁ ও ডাচ ইতিহাসবিদ রেইনহার্ট দোজি সেই আমলটিকেই আরবি বুদ্ধিবৃত্তিক জীবনের শিখর বলে স্বীকার করেছিলেন এবং দাবি করেছিলেন, একাদশ শতাব্দীর পর এই ধারাবাহিকতার পতন ঘটে। তাঁদের মতে, এরপর প্রায় ৮০০ বছর আরবে আর কোনো গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্যিক বা দার্শনিক কাজ হয়নি—যতক্ষণ না ইউরোপে রেনেসাঁ শুরু হয়।

কিন্তু আধুনিক গবেষকেরা বলছেন, এই ধারণা সরলীকৃত ও পক্ষপাতদুষ্ট। ফ্রাঙ্কফুর্ট আন্তর্জাতিক বইমেলায় শেখ জায়েদ বুক অ্যাওয়ার্ডের আয়োজিত এক আলোচনায় ভাষাবিদেরা দাবি করেছেন, আরবি রচনা শৈলী কখনো বিলুপ্ত হয়নি; বরং তা ধারাবাহিকভাবে কপি, অনুবাদ ও পাঠের মাধ্যমে বেঁচে ছিল।

জার্মান গবেষক বেয়াট্রিস গ্রুন্ডলার তাঁর ‘দ্য রাইজ অব দ্য অ্যারাবিক বুক’ গ্রন্থে দাবি করেছেন, আরবি সাহিত্যে ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে যে ধারণাটি প্রচলিত আছে তা আসলে গাল-গল্প। এই বইটি এবারের শেখ জায়েদ পুরস্কারের শর্টলিস্টে রয়েছে। গ্রুন্ডলার এতে দেখিয়েছেন, নবম শতাব্দীর বাগদাদে বইয়ের ব্যবসা, কপিকারদের প্রতিযোগিতা, জনসম্মুখে পাঠ ও লেখার প্রচলন—সবই ছিল আধুনিক প্রকাশনা সংস্কৃতির পূর্বসূরি। তিনি মত দিয়েছেন, ‘বাগদাদের রাস্তায় হাঁটলে আপনি দেখতেন লোকেরা হস্তলিপি বিক্রি করছে, বিরামচিহ্ন নিয়ে তর্ক করছে—এ যেন এক জীবন্ত প্রকাশনা বাজার।’

গবেষণা বলছে, আরবি সাহিত্য আসলে কখনো এক জায়গায় স্থির থাকেনি। এর কেন্দ্র এক সময় বাগদাদ থেকে কায়রো, দামেস্ক ও আন্দালুসিয়ায় স্থানান্তরিত হয়। কিন্তু ধারাটি অব্যাহতই থাকে। নতুন ঘরানা তৈরি হয়, পুরোনো ঘরানা রূপান্তরিত হয়।

ফরাসি অধ্যাপক হাকান ওজকান তাঁর গবেষণায় দেখিয়েছেন, ‘জাজাল’ নামের কথ্য ছন্দভিত্তিক কবিতার ধারা আব্বাসীয় যুগের পরও বিকশিত হতে থাকে। তাঁর মতে, ‘এই কবিরা নিয়ম ভেঙে নতুন রূপ দিয়েছে—তাঁদের ছন্দ ও ব্যঙ্গ আধুনিক র্যাপের মতো প্রাণবন্ত।’

জার্মান গবেষক বেয়াট্রিস গ্রুন্ডলারের ‘দ্য রাইজ অব দ্য অ্যারাবিক বুক’ বইটি এবারের শেখ জায়েদ পুরস্কারের শর্টলিস্টে রয়েছে। ছবি: দ্য ন্যাশনাল
জার্মান গবেষক বেয়াট্রিস গ্রুন্ডলারের ‘দ্য রাইজ অব দ্য অ্যারাবিক বুক’ বইটি এবারের শেখ জায়েদ পুরস্কারের শর্টলিস্টে রয়েছে। ছবি: দ্য ন্যাশনাল

এদিকে এই বিষয়ে এক প্রতিবেদনে সোমবার (২০ অক্টোবর) আমিরাতভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য ন্যাশনাল জানিয়েছে, আবুধাবির নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির ‘আরবি সাহিত্য লাইব্রেরি’ প্রকল্প ইতিমধ্যেই ‘হারানো শতাব্দী’ বলে বিবেচিত সময়ের ৬০ টিরও বেশি আরবি সাহিত্যকর্ম পুনরুদ্ধার করেছে। প্রকল্পটির সম্পাদক অধ্যাপক মরিস পোমেরান্টজ বলেছেন, ‘এই বইগুলো সম্পাদনা করা মানে এক চলমান সংলাপে অংশ নেওয়া—যেখানে প্রজন্মের পর প্রজন্ম লেখক, অনুবাদক ও সমালোচকেরা একে অপরকে উত্তর দিয়ে গেছেন।’

মরিস মনে করেন, আরবি সাহিত্য স্থবির হয়ে যাওয়ার ধারণাটি মূলত অনুবাদের অভাব থেকেই জন্ম নিয়েছে। তিনি বলেন, ‘যখন কোনো লেখা অনুবাদ করা হয় না, তখন সেটি বৈশ্বিক অস্তিত্ব হারায়।’

মরিসের মতে, এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো এই সাহিত্যকে আবার জনসাধারণের কল্পনায় ফিরিয়ে আনা—স্কুলে পড়ানো, মঞ্চে উপস্থাপন করা, অনুবাদের মাধ্যমে বিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়া। তা না হলে আরবি সাহিত্যের ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে চিহ্নিত সময়টি অধরাই থেকে যাবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মসজিদে আমির হামজাকে রাজনৈতিক আলোচনা করতে নিষেধ করায় লাঞ্ছিত বিএনপি নেতা

বিয়ারিং প্যাড খুলে পড়ে পথচারীর মৃত্যু, মেট্রোরেল চলাচল বন্ধ

বিমানবন্দর রেলস্টেশনে ট্রেন থেকে আগ্নেয়াস্ত্রভর্তি ট্রলি ব্যাগ উদ্ধার

মেট্রোরেলের বিয়ারিং প্যাড পড়ে নিহত কালাম ভাইয়ের সংসারও সামলাতেন, পরিবারে হাহাকার

ঘুষ হিসেবে পাকা কলা নেওয়ার কথা স্বীকার, দুদকের গণশুনানিতে তাৎক্ষণিক বদলির আদেশ

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

তিন গোয়েন্দার স্রষ্টা রকিব হাসান মারা গেছেন

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
জনপ্রিয় কিশোর গোয়েন্দা সিরিজ তিন গোয়েন্দার স্রষ্টা রকিব হাসান। ছবি: সংগৃহীত
জনপ্রিয় কিশোর গোয়েন্দা সিরিজ তিন গোয়েন্দার স্রষ্টা রকিব হাসান। ছবি: সংগৃহীত

জনপ্রিয় কিশোর গোয়েন্দা সিরিজ তিন গোয়েন্দার স্রষ্টা রকিব হাসান মারা গেছেন। আজ বুধবার রাজধানীর একটি হাসপাতালে ডায়ালাইসিস চলাকালে তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।

রকিব হাসানের মৃত্যুর খবরটি নিশ্চিত করেছেন সেবা প্রকাশনীর উপদেষ্টা মাসুমা মায়মুর। তিনি সেবা প্রকাশনীর প্রতিষ্ঠাতা কাজী আনোয়ার হোসেনের ছোট ছেলে কাজী মায়মুর হোসেনের স্ত্রী।

মাসুমা মায়মুর ফেসবুকে লিখেছেন, ‘তিন গোয়েন্দা ও সেবা প্রকাশনীর পাঠকদেরকে আন্তরিক দুঃখের সাথে জানাচ্ছি যে, কিছুক্ষণ আগে রকিব হাসান সাহেব পরলোক গমন করেছেন। ডায়ালাইসিস চলাকালে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে ওনার জীবনাবসান ঘটে। আপনারা ওনার পবিত্র আত্মার মাগফেরাত কামনা করুন।’

১৯৫০ সালের ১২ ডিসেম্বর কুমিল্লায় জন্মগ্রহণ করেন রকিব হাসান। বাবার চাকরির কারণে শৈশব কেটেছে ফেনীতে। সেখান থেকে স্কুলজীবন শেষ করে ভর্তি হন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজে। পড়াশোনা শেষে বিভিন্ন চাকরিতে যুক্ত হলেও অফিসের বাঁধাধরা জীবনে তাঁর মন টেকেনি। অবশেষে তিনি লেখালেখিকে বেছে নেন জীবনের একমাত্র পথ হিসেবে।

জনপ্রিয় কিশোর গোয়েন্দা সিরিজ। ছবি: সংগৃহীত
জনপ্রিয় কিশোর গোয়েন্দা সিরিজ। ছবি: সংগৃহীত

সেবা প্রকাশনী থেকে তাঁর লেখকজীবনের সূচনা হয়। প্রথমদিকে বিশ্বসেরা ক্ল্যাসিক বই অনুবাদ করে লেখালেখির জগতে প্রবেশ করেন তিনি। এরপর টারজান, গোয়েন্দা রাজু, রেজা-সুজা সিরিজসহ চার শতাধিক জনপ্রিয় বই লেখেন। তবে তাঁর পরিচয়ের সবচেয়ে বড় জায়গা হলো তিন গোয়েন্দা সিরিজ। এই সিরিজ বাংলাদেশের অসংখ্য কিশোর-কিশোরীর কৈশোরের সঙ্গী।

মূলত রবার্ট আর্থারের থ্রি ইনভেস্টিগেটরস সিরিজ অবলম্বনে তিন গোয়েন্দার সূচনা হয়। তবে রকিব হাসানের লেখনশৈলীতে এটি পেয়েছে একেবারে নতুন রূপ। বাংলাদেশি সাহিত্য হয়ে উঠেছে এটি। এই সিরিজের মাধ্যমে তিনি হয়ে ওঠেন হাজারো কিশোর পাঠকের প্রিয় লেখক।

নিজ নামে লেখার পাশাপাশি তিনি ব্যবহার করেছেন বিভিন্ন ছদ্মনাম। শামসুদ্দীন নওয়াব নামে তিনি অনুবাদ করেছিলেন জুল ভার্নের বইগুলো।

বাংলাদেশের পাঠকদের কাছে রকিব হাসান শুধু একজন গোয়েন্দা লেখক নন, তিনি কয়েক প্রজন্মের শৈশব-কৈশোরের ভালোবাসার মানুষ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মসজিদে আমির হামজাকে রাজনৈতিক আলোচনা করতে নিষেধ করায় লাঞ্ছিত বিএনপি নেতা

বিয়ারিং প্যাড খুলে পড়ে পথচারীর মৃত্যু, মেট্রোরেল চলাচল বন্ধ

বিমানবন্দর রেলস্টেশনে ট্রেন থেকে আগ্নেয়াস্ত্রভর্তি ট্রলি ব্যাগ উদ্ধার

মেট্রোরেলের বিয়ারিং প্যাড পড়ে নিহত কালাম ভাইয়ের সংসারও সামলাতেন, পরিবারে হাহাকার

ঘুষ হিসেবে পাকা কলা নেওয়ার কথা স্বীকার, দুদকের গণশুনানিতে তাৎক্ষণিক বদলির আদেশ

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ক্রাসনাহোরকাইয়ের নোবেল যেন তাঁর দীর্ঘ কোনো বাক্যের সমাপ্তি

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
লাসলো ক্রাসনাহোরকাই। ছবি: সংগৃহীত
লাসলো ক্রাসনাহোরকাই। ছবি: সংগৃহীত

হাঙ্গেরির ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই এবার (২০২৫ সালে) সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন তাঁর দীর্ঘ, দার্শনিক বাক্য ও মানবজীবনের বিশৃঙ্খলার গভীর অনুসন্ধানী সাহিত্যকর্মের জন্য। সুইডিশ একাডেমি তাঁকে সম্মান জানিয়েছে ‘শিল্পের শক্তিকে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করার’ জন্য। লেখক সুসান সনটাগ অবশ্য তাঁকে একসময় ‘মহাপ্রলয়ের হাঙ্গেরিয়ান গুরু’ আখ্যা দিয়েছিলেন।

সাহিত্যজগতে অনেকের কাছে ক্রাসনাহোরকাইয়ের নোবেল পাওয়ার এই ঘোষণাটি যেন কয়েক দশক ধরে চলা একটি বাক্যের সমাপ্তি।

১৯৫৪ সালে হাঙ্গেরির ছোট শহর জিউলা-তে জন্ম নেওয়া ক্রাসনাহোরকাই ১৯৮০-এর দশকের শুরুতে গল্প লেখা শুরু করেন। তাঁর প্রথম উপন্যাস স্যাটানট্যাঙ্গো (১৯৮৫) একটি বৃষ্টিস্নাত, ধ্বংসপ্রায় গ্রামের কাহিনি—যেখানে প্রতারক, মাতাল ও হতাশ মানুষেরা মিথ্যা আশায় আঁকড়ে থাকে। পরিচালক বেলা-তার তাঁর এই উপন্যাসটিকে দীর্ঘ ৭ ঘণ্টার এক সাদাকালো চলচ্চিত্রে রূপ দেন। এই বইতেই ধরা পড়ে ক্রাসনাহোরকাইয়ের লেখার বৈশিষ্ট্যসমূহ, যেমন—অবিরাম দীর্ঘ বাক্য, দার্শনিক হাস্যরস ও পতনের কিনারায় দাঁড়িয়ে থাকা মানুষের প্রতিচ্ছবি।

তাঁর পরবর্তী উপন্যাসগুলো—দ্য মেলানকোলি অব রেজিস্ট্যান্স (১৯৮৯), ওয়ার অ্যান্ড ওয়ার (১৯৯৯) ও সেইবো দেয়ার বিলো (২০০৮)—তাঁর এই দৃষ্টিভঙ্গিকে মহাজাগতিক পরিসরে বিস্তৃত করেছে। ‘ওয়ার অ্যান্ড ওয়ার’–এ তিনি এক নথি প্রহরীর গল্প বলেছেন, যিনি রহস্যময় এক পাণ্ডুলিপি প্রকাশ করতে নিউইয়র্কে পালিয়ে যান এবং আত্মহত্যা করেন—যেন ক্রম বিলীন পৃথিবীতে অর্থ ধরে রাখার এক মরিয়া চেষ্টা তাঁর।

ক্রাসনাহোরকাইয়ের লেখায় কাহিনি প্রায় সময়ই বাক্যের ভেতর হারিয়ে যায়। তিনি লিখেছেন এমন বাক্য, যা একাধিক পৃষ্ঠা জুড়ে পাঠককে টেনে নেয় অবচেতনে, অবিরাম প্রবাহে।

তাঁর সাহিত্যে হাস্যরস ও ট্র্যাজেডি পাশাপাশি চলে। স্যাটানট্যাঙ্গো–এর মাতাল নাচের দৃশ্য যেমন নিঃশেষের প্রতীক, তেমনি ‘ব্যারন ওয়েঙ্কহাইমস হোমকামিং’ (২০১৬)-এ দেখা যায়, ফিরে আসা এক পরাজিত অভিজাতকে। যার মাধ্যমে প্রকাশ পায় সভ্যতার পচন ও মানুষের হাস্যকর ভ্রান্তি।

২০১৫ সালে ম্যান বুকার পুরস্কার পাওয়ার মধ্য দিয়েই প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পান ক্রাসনাহোরকাই। অনুবাদক জর্জ সির্টেস ও ওটিলি মুলজেট তাঁর জটিল হাঙ্গেরিয়ান ভাষাকে ইংরেজিতে রূপ দিতে বিশেষ ভূমিকা রাখেন। ‘হাডসন রিভিউ’ তাঁকে বর্ণনা করেছিল ‘অন্তহীন বাক্যের ভ্রমণশিল্পী’ হিসেবে।

চল্লিশ বছরের সৃষ্টিতে ক্রাসনাহোরকাইয়ের ভুবন চিত্র, সংগীত, দর্শন ও ভাষার মিলনে বিস্তৃত। সাম্প্রতিক উপন্যাস ‘হার্শট ০৭৭৬৯’ (২০২৪)–এ তিনি এক প্রবাহিত বাক্যে লিখেছেন নব্য-নাৎসি, নেকড়ে আর এক হতভাগ্য পদার্থবিদের কাহিনি—আধুনিক ইউরোপের নৈতিক পক্ষাঘাতের রূপক হিসেবে।

তাঁর সমগ্র সাহিত্যজগৎ এক অন্ধকার ও ধ্যানমগ্ন মহাবিশ্ব—যেখানে পতন, শূন্যতা ও করুণা পাশাপাশি থাকে। ‘সেইবো দেয়ার বিলো’ বইটিতে তিনি লিখেছেন, ‘সৌন্দর্য, যত ক্ষণস্থায়ীই হোক না কেন, তা পবিত্রতার প্রতিবিম্ব।’ এই বিশ্বাসই লাসলো ক্রাসনাহোরকাইকে সেই বিরল লেখক করে তুলেছে, যাঁর নৈরাশ্যও মুক্তির মতো দীপ্ত।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মসজিদে আমির হামজাকে রাজনৈতিক আলোচনা করতে নিষেধ করায় লাঞ্ছিত বিএনপি নেতা

বিয়ারিং প্যাড খুলে পড়ে পথচারীর মৃত্যু, মেট্রোরেল চলাচল বন্ধ

বিমানবন্দর রেলস্টেশনে ট্রেন থেকে আগ্নেয়াস্ত্রভর্তি ট্রলি ব্যাগ উদ্ধার

মেট্রোরেলের বিয়ারিং প্যাড পড়ে নিহত কালাম ভাইয়ের সংসারও সামলাতেন, পরিবারে হাহাকার

ঘুষ হিসেবে পাকা কলা নেওয়ার কথা স্বীকার, দুদকের গণশুনানিতে তাৎক্ষণিক বদলির আদেশ

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সন্ত্রাসের দাপটেও শিল্পের শক্তি চেনায় লাসলো ক্রাসনাহোরকাইয়ের কলম

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১০ অক্টোবর ২০২৫, ০০: ১০
সন্ত্রাসের দাপটেও শিল্পের শক্তি চেনায় লাসলো ক্রাসনাহোরকাইয়ের কলম

হাঙ্গেরির সাহিত্যে অসীম জনপ্রিয়তা ও প্রভাব তাঁর; বিশ্বজোড়া আতঙ্ক ও সন্ত্রাসের দাপটেও শিল্পের শক্তি চেনায় তাঁর কলম। তিনি হাঙ্গেরিয়ান ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই; সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০২৫ সালে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।

আধুনিক হাঙ্গেরীয় সাহিত্যের একজন অন্যতম প্রধান ব্যক্তিত্ব লাসলো। অভিনব শৈলীর পাশাপাশি দার্শনিক গভীরতার জন্য তাঁর সাহিত্য সমাদৃত হয়েছে। তাঁকে ফ্রানৎস কাফকা ও স্যামুয়েল বেকেটের ঐতিহ্যের উত্তরাধিকারী হিসেবে বিবেচনা করা হয়। বিশ্বজোড়া আতঙ্ক ও সন্ত্রাসের মধ্যেও শিল্পের লেলিহান ঔজ্জ্বল্য ফুটে ওঠে লাসলোর লেখায়। তাই যুদ্ধবিধ্বস্ত সময়ের বুকে ফুলের মতো স্থান করে নিল তাঁর সাহিত্য।

লাসলোর জন্য সাহিত্যে এটা প্রথম পুরস্কার নয়, ২০১৪ সালে সাহিত্যকর্মের জন্য ম্যান বুকার ইন্টারন্যাশনাল পুরস্কার পান তিনি। এ পুরস্কার বিশ্বসাহিত্যে তাঁর অবস্থানকে সুদৃঢ় করে।

লাসলোর সাহিত্যের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো—স্বতন্ত্র শৈলী ও গঠন। উপন্যাসের মূল বিষয়বস্তু হলো—মানবতার অবক্ষয়, ধ্বংসের অনিবার্যতা ও আধুনিক জীবনের লক্ষ্যহীন চলন। তাঁর চরিত্রদের মধ্যে প্রায়ই একধরনের হতাশা ও বিচ্ছিন্নতা দেখা যায়; তারা এমন এক জগতের পথিক, যেখানে নৈতিকতা ও আশা বিলীনপ্রায়।

১৯৮৫ সালে প্রকাশিত ‘স্যাটানটাঙ্গো’ নামে প্রথম উপন্যাস লিখেই খ্যাতি পান লাসলো। এই উপন্যাসে বিচ্ছিন্ন ও পতিত এক কৃষি সমবায় গ্রামের জীবন তুলে ধরেছেন তিনি। সেখানে একধরনের বিভ্রম ও আশার জন্ম দেয় এক রহস্যময় আগন্তুকের আগমনে। এই উপন্যাস অবলম্বনে একই শিরোনামে সাত ঘণ্টার কালজয়ী চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন বিখ্যাত পরিচালক বেলা টর।

লাসলোর আরেকটি ফিকশন উপন্যাস হলো— ‘দ্য মেলানকোলি অব রেজিস্ট্যান্স’। হাঙ্গেরির এক কাল্পনিক শহরের জীবন ফুটে উঠেছে এই উপন্যাসে। সামুদ্রিক প্রাণী হাঙরের প্রদর্শনীকে কেন্দ্র করে মানুষের মধ্যকার উন্মাদনা, সামাজিক বিশৃঙ্খলা ও একনায়কতন্ত্রের উত্থানের চিত্র আঁকা হয়েছে তাতে।

‘ওয়ার অ্যান্ড ওয়ার’ লাসলোর আরেকটি বিখ্যাত উপন্যাস। লম্বা লম্বা বাক্যে লেখা এই উপন্যাস লাসলোর শৈলী নিয়ে পাঠকদের নতুন করে ভাবায়। উপন্যাসের নায়ক একটি পাণ্ডুলিপি রক্ষা করার জন্য বিশ্বের বিভিন্ন শহর ঘুরে বেড়ায়। বিশ্বের চূড়ান্ত ধ্বংসের একটি কাব্যিক বর্ণনা পাওয়া যায় এই উপন্যাসে।

এবার লাসলোকে পুরস্কারের জন্য মনোনীত করার নেপথ্যে নোবেল কমিটির বড় কারণ ছিল তাঁর সাহিত্যে শিল্পের জয়ধ্বনি তোলার প্রচেষ্টা। যখন সারা বিশ্বের বেশ কিছু দেশ যুদ্ধবিধ্বস্ত বা যুদ্ধের জন্য উৎসুক, তখন বারবার শিল্পের মোহিনী প্রেম ও বন্ধনের কথা মনে করিয়ে দিতে চায় লাসলোর সাহিত্য।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মসজিদে আমির হামজাকে রাজনৈতিক আলোচনা করতে নিষেধ করায় লাঞ্ছিত বিএনপি নেতা

বিয়ারিং প্যাড খুলে পড়ে পথচারীর মৃত্যু, মেট্রোরেল চলাচল বন্ধ

বিমানবন্দর রেলস্টেশনে ট্রেন থেকে আগ্নেয়াস্ত্রভর্তি ট্রলি ব্যাগ উদ্ধার

মেট্রোরেলের বিয়ারিং প্যাড পড়ে নিহত কালাম ভাইয়ের সংসারও সামলাতেন, পরিবারে হাহাকার

ঘুষ হিসেবে পাকা কলা নেওয়ার কথা স্বীকার, দুদকের গণশুনানিতে তাৎক্ষণিক বদলির আদেশ

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত