সুমন সাজ্জাদ

সাম্প্রতিক কালে রবীন্দ্রনাথ ও রবীন্দ্রসাহিত্য কতখানি প্রাসঙ্গিক—এ রকম একটি প্রশ্ন কেউ কেউ তুলতে চান, তুলেও থাকেন। সাহিত্যের দীক্ষিত পাঠক থেকে শুরু করে অদীক্ষিত শখের পাঠকও দ্বিধান্বিত হয়ে পড়েন—আদতেই রবীন্দ্রনাথ কিংবা রবীন্দ্রসাহিত্যের ‘দরকার’ আছে কি না! প্রশ্নটি অথবা প্রশ্নগুচ্ছে জড়িয়ে থাকে প্রায়োগিক জীবনব্যবস্থার চিহ্ন। যেমন করে আমরা প্রশ্ন তুলে থাকি পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, নাসার মঙ্গল অভিযান কিংবা শীতাতপনিয়ন্ত্রণ যন্ত্রের ব্যবহারিক গুরুত্ব আছে কি নেই! একইভাবে যেন জিজ্ঞাসা জন্মায়, ফলিত বিশ্বে রবীন্দ্রনাথ দরকারি কি না! মজার ব্যাপার এই যে, প্রাসঙ্গিক-অপ্রাসঙ্গিকতার প্রশ্ন তোলা যায় আরও আরও মহাজন প্রসঙ্গে। তবে ঘুরেফিরে রবীন্দ্রনাথ প্রসঙ্গে এই প্রশ্নের মরা গাঙে জোয়ার আসে।
গ্রিক তরুণ কবিরা নিশ্চয়ই দল বেঁধে প্রশ্ন তুলতে পারেন, দেউলিয়া ও ঋণগ্রস্ত সমকালীন গ্রিসে হোমারের প্রাসঙ্গিকতা কোথায়? হোমারের প্রাচীন লেখাপত্র পড়েই-বা কী লাভ? হোমারের কলাকৌশল একালের গ্রিক কবিতাকে কতটুকু উৎকর্ষের দিকে নিয়ে যাবে? প্রযুক্তি আচ্ছাদিত দুনিয়ায় সফোক্লিস, কালিদাস, ওভিদেরই বা কোন প্রাসঙ্গিকতা পাওয়া যাবে? এসব প্রশ্নের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাঙালি নবীন কবি-লেখকেরাও তুলতে পারেন সমান তালের প্রশ্ন। প্রশ্ন তুলতে সমস্যা নেই। তবে প্রশ্নটি নিজেই যৌক্তিক কি না, সে বিষয়ে ভাবার সুযোগ আছে।
রবীন্দ্রসাহিত্যকে অনেকেই তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিতে চান। কিন্তু ইতিহাসের মুষ্টাঘাতে তুড়ি ঠিক তালে তাল ঠুকে বাজে না। কারণটা এই: নন্দনতাত্ত্বিকতা ছাড়িয়েই রবীন্দ্রনাথ হয়ে উঠেছেন বাংলা অঞ্চলের সাংস্কৃতিক প্রতীক। এক দিন-দুই দিনের আনুষ্ঠানিক আলাপ আর বৈঠকে বসে তাঁকে সম্মিলিতভাবে প্রতীক হিসেবে গড়ে তোলা হয়নি। ইতিহাসের এক দীর্ঘ পর্ব তাঁকে নির্মাণ করেছে। সময়ের সঙ্গে সাড়া দিয়ে, সময়কে নেড়েচেড়ে নিজের মতো গড়েপিটে তিনিও সময়কে নিজের জন্য নির্মাণ করে নিয়েছেন। তাহলে ঐতিহাসিকতা আর ঐতিহাসিক পাঠই কি সাহিত্যের প্রতীক-প্রতিম কবি-লেখকদের জন্য পরম নিয়তি? সেই সূত্রেই ধেয়ে আসে অপর এক জিজ্ঞাসা : নন্দনতাত্ত্বিকভাবে রবীন্দ্রনাথ কি প্রাসঙ্গিক নন? জরুরি নন?
বিনা দ্বিধায় বলা যায়, ঘোরতরভাবে প্রাসঙ্গিক। আমাদের মনে রাখতে হবে, উনিশ শতকের সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপটে বাংলা একটি অবিকশিত প্রাদেশিক ভাষামাত্র। ওড়িয়া, অসমিয়া ভাষার মতোই বাংলা খুঁজে বেড়াচ্ছে ভবিষ্যতের দিশা। বাংলা ভাষাকে কেন্দ্র করে একদিকে চলছে ঔপনিবেশিক পণ্ডিত ও কর্মকর্তাদের অনুশীলন, অন্যদিকে চলছে সংস্কৃতসেবীদের শুদ্ধি অভিযান। তার ওপর সবকিছু টপকে গিয়ে চূড়ায় বসে আছে নব্য বাঙালির ইংরেজিয়ানা। ভাষাগত এই পটভূমির ওপর গড়ে উঠেছেন রবীন্দ্রনাথ। তাঁর প্রাসঙ্গিকতা ফুরিয়ে যাবে, দুম করে এমন কথা বলা যায় না।
শিল্প-সাহিত্যের নানা নিরীক্ষায় রবীন্দ্রনাথ হতে পারেন প্রেরণার উৎসভূমি। আমরা হয়তো জানি না যে রবীন্দ্রনাথ সৃষ্টিশীল নিরীক্ষার ভেতর দিয়ে সৃষ্টি ও পুনঃসৃষ্টি করেছেন। কবিতাকে করেছেন নাটক, কাব্যনাট্যকে করেছেন গীতিনাট্য। যেমন—‘পরিশোধ’ কবিতাটি হয়ে গেল নৃত্যনাট্য শ্যামা। চিত্রাঙ্গদার কাহিনি পেয়ে গেল নৃত্যনাট্যের রূপ। লেখার এই রূপান্তরের পক্ষে রবীন্দ্রনাথ জুড়ে দিয়েছেন ব্যাখ্যা। শেষ জীবনে ঝুঁকেছিলেন চিত্রকলায়। সেখানেও ফলেছে নতুন শস্য।
সাহিত্যের ভাব ও ভাষার খোঁজে অনেক পথ খুঁড়তে হয়েছে তাঁকে। তরুণ রবীন্দ্রনাথের সামনে ছিল মধুসূদন-বঙ্কিমচন্দ্র অধ্যুষিত পথ। আজ আমাদের পক্ষে কল্পনা করাও অসম্ভব যে উনিশ শতকের বাংলা কবিতায় মধুসূদন কতখানি প্রভাববিস্তারী হয়ে উঠেছিলেন; নানাবিধ ‘বধ-কাব্যে’ ভরে উঠেছিল বাংলা কবিতা। নতুন কবিদের জন্য মধুসূদন ছিলেন এক বিরাট বাধা। মধুসূদনকে অনুসরণ করতে গিয়ে প্রভাবের চোরাবালিতে ডুবে মরেছেন অনেক অনেক কবি। ব্যতিক্রমী ছিলেন বিহারীলাল চক্রবর্তী। রবীন্দ্রনাথ যাঁর খাঁটি ঐতিহাসিক ও নন্দনতাত্ত্বিক মূল্যায়ন করতে পেরেছিলেন।
বাংলা সাহিত্যের বাজারে তত দিনে এসে গেছেন শেক্সপিয়ার, মিলটন, শেলি, কিটস, বায়রন। বিহারীলালের মতো করেই রবীন্দ্রনাথ বেছে নিলেন গীতিকবিতার পথ। বিরহী রাধার নূপুরধ্বনির মতো তাঁর কবিতায় শোনা গেল বৈষ্ণব কবিতার মৃদুমন্দ স্বর। ব্রজেন্দ্রনাথ শীলকে লেখা এক চিঠিতে রবীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন, ‘বৈষ্ণব সাহিত্য ও উপনিষদ বিমিশ্রিত হইয়া আমার মনের হাওয়া তৈরি করিয়াছে।’ আর সেই হাওয়াতেই রচিত হলো গীতবিতানের কতশত গান।
ছোটগল্প নামক সাহিত্য আঙ্গিকটিকে নানা ভঙ্গিতে বিস্তৃত করেছেন তিনি। তাঁর হাতেই পাচ্ছি ‘ঘাটের কথা’, ‘রাজপথের কথা’, ‘স্ত্রীর পত্র’, ‘গুপ্তধন’, ‘ক্ষুধিত পাষাণ’, ‘নষ্টনীড়ে’র মতো বিচিত্র ভঙ্গি ও স্বাদের গল্প; প্রয়োজন মাফিক তিনি বদলে নিয়েছেন কথকের রীতিগত অবস্থান, বেড়ে গিয়েছে গল্পের আকার ও প্রকার; আমাদের মনে পড়বে ‘রবিবার’ কিংবা ‘ল্যাবরেটরি’ গল্পের কথা। গল্প লেখার হুলুস্থুল কাণ্ডকে নিজেই ব্যঙ্গ করে বলেছেন, ‘উল্কাবৃষ্টি’।
বঙ্কিমচন্দ্র-শাসিত কথকতায় রবীন্দ্রনাথ বের করে আনতে চাইলেন ‘আঁতের কথা’; ‘চোখের বালি’ উপন্যাসের সূচনায় জানান দিয়েছেন, নতুন এই উপন্যাস শুধু তাঁর নিজের জন্য নয়, সেকালের বাংলা সাহিত্যের ক্ষেত্রেই এক ‘আকস্মিক’ ঘটনা। আরও বললেন, ‘এবারকার গল্প বানাতে হবে এ যুগের কারখানা ঘরে।’ কিন্তু কী আছে সেই ঘরে? রবীন্দ্রনাথ বলেছেন, ‘মনের সংসারের সেই কারখানা-ঘরে যেখানে আগুনের জ্বলুনি হাতুড়ির পিটুনি থেকে দৃঢ় ধাতুর মূর্তি জেগে উঠতে থাকে।’ আর তারপর? তিনি লিখলেন, ‘যেন পশুশালার দরজা খুলে দেওয়া হল, বেরিয়ে পড়ল হিংস্র ঘটনাগুলো অসংযত হয়ে।’ যার সঙ্গে মিশে আছে মানুষের ঈর্ষা, রিপু। রবীন্দ্রনাথ চিনতে চাইলেন মানুষের অন্ধ কুঠুরি। কারণ, ‘সাহিত্যের নবপর্যায়ের পদ্ধতি হচ্ছে ঘটনাপরম্পরার বিবরণ দেওয়া নয়, বিশ্লেষণ করে তাদের আঁতের কথা বের করে দেখানো।’ ‘চোখের বালি’তে এই পদ্ধতির প্রয়োগ ঘটালেন তিনি; আবার এ-ও বলতে ভুললেন না যে গল্প লেখার দিনগুলোতেই চলছিল তাঁর প্রস্তুতি।
রবিঠাকুর সম্পর্কে সাধারণ ধারণা এই যে অলৌকিক আন্তর প্রেরণায় অভিভূত হয়ে রবীন্দ্রনাথ একের পর এক সাহিত্য সৃজন করে গিয়েছেন। তাঁর ওপর ভর করেছেন ‘জীবনদেবতা’, যিনি তাঁকে দিয়ে সবকিছু লিখিয়ে নিয়েছেন। রবীন্দ্রভাষ্য মোতাবেক এ কথা সত্যের এক পিঠ মাত্র। অপর পিঠে লুকিয়ে আছে অন্য এক সত্য; যেখানে রবীন্দ্রনাথ অনবরত লিখে যাচ্ছেন ফরমাশের চাপে; সৃষ্টিশীল আবেগের চেয়েও মনের ওপর জোরালোভাবে চেপে বসেছে নিরীক্ষার তাড়না। আসলে বলতে চাইছি, রবীন্দ্রনাথ আমাদের সেই বিরল প্রতিভা, ঋতুবদলের সঙ্গে সঙ্গে যিনি ধারণ করেছেন নতুন মুখ ও মুখশ্রী।
ব্যক্তির আত্মসচেতনতা, বিরাট ব্রহ্মাণ্ডে নিজেকে শনাক্ত করতে পারার দীক্ষা মেলে রবীন্দ্রসাহিত্যে। আর কে না জানে রোমান্টিক এই আত্মসচেতনতা আধুনিকতারও উৎস। কিন্তু রবীন্দ্রনাথের জন্য অহমের আত্মকেন্দ্রিকতা ছিল একেবারেই না-পছন্দ ব্যাপার। তার বদলে তিনি বলেন আত্মশক্তির কথা, যা সামষ্টিকতার অংশ। সবার সঙ্গে সবাই মেলার আয়োজন হিসেবে জাতীয় সাহিত্যকে পছন্দ করলেও জাতীয়তাবাদের সমালোচনায় তিনি দাঁড়াতে গেলেন ভিন্ন পাটাতনে। অথচ বাঙালির জাতীয় চৈতন্য ও জাতীয়তাবাদ গড়ে ওঠার পেছনে শেষ পর্যন্ত প্রবল প্রভাব রেখেছে রবীন্দ্রসাহিত্য। অনুমান করি, আজকের যুগের কট্টর জাতীয়তাবাদী প্রকাশগুলোর বিরুদ্ধে তিনি ভিন্ন মতই প্রকাশ করতেন।
প্রতিরোধের চৈতন্য বোঝার ক্ষেত্রে রবীন্দ্রনাথ হতে পারেন দারুণ এক শক্তি। তাঁর এই দিকটি নিয়ে দরকারি আলোচনার ভাগ কম বলেই মনে হয়। আমরা রবীন্দ্রনাথকে একজন নিষ্ক্রিয় রোমান্টিক হিসেবে দেখতেই অভ্যস্ত। অথচ তাঁর বিস্তৃত জীবনজুড়ে খুঁজে পাব সক্রিয় সব কর্মযজ্ঞের ইতিহাস। তাঁর মধ্যে ব্যাপকভাবে বিদ্যমান সমকালকে বোঝার তাগিদ। আপন দেশ ও বিশ্বপরিস্থিতিকে তিনি চমৎকারভাবে বুঝতে পেরেছিলেন। সেই সবের ঐতিহাসিক সাক্ষ্য হয়ে আছে কালান্তর বইয়ের প্রবন্ধগুলো। আমি বিশেষভাবে বলব তাঁর ‘সভ্যতার সংকট’ প্রবন্ধটির কথা। এই প্রবন্ধে ঔপনিবেশিক শাসন ও সাম্রাজ্যবাদের তীব্র সমালোচনা করেছেন। আশি বছরব্যাপী প্রসারিত জীবনের পটভূমিকায় রবীন্দ্রনাথ যেন দাঁড়িয়ে ছিলেন আত্মসমীক্ষার সামনে। তাঁর মনে হয়েছে, তিনি এবং তাঁর দেশের ‘মনোবৃত্তির পরিণতি দ্বিখণ্ডিত হয়ে গেছে।’ গভীরতরভাবে বাসা বেঁধেছে বিচ্ছিন্নতা।
রবীন্দ্রনাথের উপনিবেশিত মন আজ যেন বুঝতে পারল ‘সাম্রাজ্যমদমত্ততা’য় ভরা ইংরেজদের কলুষিত হৃদয়। তার আগ পর্যন্ত নব্য শিক্ষিত বাঙালি ভদ্রলোকের সাংস্কৃতিক সূত্র মেনে রবীন্দ্রনাথও মুগ্ধ ছিলেন ‘বার্কের বাগ্মিতায়, মেকলের ভাষাপ্রবাহের তরঙ্গভঙ্গে’; সাহিত্যিক সংস্পর্শ হিসেবে অন্তরের অন্দরমহলে টোকা দিয়েছিল শেকশপিয়রের নাটক, বায়রনের কবিতা। ইংরেজের রাজনীতি সম্পর্কে উপলব্ধি ছিল ‘সর্বমানবের বিজয়ঘোষণা’। ইংল্যান্ড ছিল ‘অত্যাচারপ্রপীড়িত জাতির আশ্রয়স্থল’। স্মৃতির অন্দর হাতড়ে রবীন্দ্রনাথ বলছেন, ‘মানবমৈত্রীর বিশুদ্ধ পরিচয় দেখেছি ইংরেজ-চরিত্রে, তাই আন্তরিক শ্রদ্ধা নিয়ে ইংরেজকে হৃদয়ের উচ্চাসনে বসিয়েছিলেম।’ অর্থাৎ রবীন্দ্রনাথের মনে আসন পেয়েছিল ইউরোপের উদার মানবিকতাবাদ।
কিন্তু প্রৌঢ়ত্বের গোধূলিতে রবীন্দ্রনাথ বলেছেন অন্য কথা; ‘সভ্যতা’র ধারণাটিই আজ তাঁর কাছে প্রশ্নবিদ্ধ। তিনি দেখতে পেলেন, ‘সভ্যতাকে যারা চরিত্র-উৎস থেকে উৎসারিতরূপে স্বীকার করেছে, রিপুর প্রবর্তনায় তারা তাকে কী অনায়াসে লঙ্ঘন করতে পারে।’ ইংরেজি সাহিত্যের ‘স্বর্গ হইতে বিদায়’ ঘটল রবীন্দ্রনাথের। উন্মোচিত হলো অন্য এক দৃশ্যপট। রবীন্দ্রনাথ বললেন, ‘নিভৃতে সাহিত্যের রস সম্ভোগের উপকরণের বেষ্টন হতে একদিন আমাকে বেরিয়ে আসতে হয়েছিল। সেদিন ভারতবর্ষের জনসাধারণের যে নিদারুণ দারিদ্র্য আমার সম্মুখে উদ্ঘাটিত হলো, তা হৃদয়বিদারক। অন্ন বস্ত্র পানীয় শিক্ষা আরোগ্য প্রভৃতি মানুষের শরীর-মনের পক্ষে যা-কিছু অত্যাবশ্যক, তার এমন নিরতিশয় অভাব বোধ হয় পৃথিবীর আধুনিক শাসনচালিত কোনো দেশেই ঘটেনি। অথচ এই দেশ ইংরেজকে দীর্ঘকাল ধরে তার ঐশ্বর্য জুগিয়ে এসেছে। যখন সভ্যজগতের মহিমা ধ্যানে একান্ত মনে নিবিষ্ট ছিলেম, তখন কোনো দিন সভ্য নামধারী মানব-আদর্শের এত বড়ো নিষ্ঠুর বিকৃত রূপ কল্পনা করতেই পারিনি ; অবশেষে দেখছি, একদিন এই বিকারের ভেতর দিয়ে বহু কোটি জনসাধারণের প্রতি সভ্য জাতির অপরিসীম অবজ্ঞাপূর্ণ ঔদাসীন্য।’
একই দেহে লীন সভ্যতা ও সাম্রাজ্যবাদের জাতিক ও আন্তর্জাতিক বিস্তার তাঁকে ভাবিয়ে তুলেছে। আর তাই ভাবনার পরিসরে এসে গেছে সেকালের চীন, জাপান, আফগানিস্তান, রাশিয়া, ইরান। ইউরোপ সম্পর্কে রবীন্দ্রনাথ বলছেন, ‘সমস্ত ইউরোপে বর্বরতা কী রকম নখদন্ত বিকাশ করে বিভীষিকা বিস্তার করতে উদ্যত। এই মানবপীড়নের মহামারি পাশ্চাত্য সভ্যতার মজ্জার ভেতর থেকে জাগ্রত হয়ে উঠে আজ মানবাত্মার অপমানে দিগন্ত থেকে দিগন্ত পর্যন্ত বাতাস কলুষিত করে দিয়েছে।’ রবীন্দ্রনাথের এই সব উক্তি ও উপলব্ধি আজও কি প্রাসঙ্গিক নয়? খানিকটা আত্মগ্লানিতে ভরা মন নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন, ‘আমাদের হতভাগ্য নিঃসহায় নীরন্ধ্র অকিঞ্চনতার মধ্যে আমরা কি তার কোনো আভাস পাইনি?’
আভাস নিশ্চয়ই তিনি পেয়েছিলেন। কিন্তু মানুষের ওপর বিশ্বাস হারানো পাপ বলে যিনি জ্ঞান করেন, তার পক্ষে ‘সমালোচনাত্মক’ দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করা খানিকটা মুশকিলের ব্যাপার। তবে তিনি ঠিকঠাক বুঝতে পেরেছিলেন, ‘ভাগ্যচক্রের পরিবর্তনের দ্বারা একদিন না একদিন ইংরেজকে এই ভারত সাম্রাজ্য ত্যাগ করে যেতে হবে।’ পরিত্যক্ত ভারতবর্ষের জন্য তারা রেখে যাবে ‘দীনতার আবর্জনা’, ‘বিস্তীর্ণ পঙ্কশয্যা’, ‘দুর্বিষহ নিষ্ফলতা’; বিশেষণে ঢাকা এসব চিত্রায়ণের পর রবীন্দ্রনাথ স্বীকারোক্তি করছেন, ‘জীবনের প্রথম আরম্ভে সমস্ত মন থেকে বিশ্বাস করেছিলুম য়ুরোপের অন্তরের সম্পদ এই সভ্যতার দানকে। আর আজ আমার বিদায়ের দিনে সে বিশ্বাস একেবারে দেউলিয়া হয়ে গেল।’ কিন্তু রবীন্দ্রনাথ আমাদের জন্য কী রেখে গেলেন?
রবীন্দ্রনাথ দিয়ে গেলেন বিপুল সাহিত্যসম্ভার, বিকশিত বাংলা ভাষা, বহুবিধ সাংস্কৃতিক কৃত্য, জাতীয় চৈতন্য আর এক সর্বগ্রাহী মন। বাঙালির মনে অবচেতনে রেখে গেলেন স্বপ্নগ্রস্ত ‘ইউটোপিয়া’। শান্তিনিকেতন, তপোবন, আশ্রমকেন্দ্রিক প্রকল্পনা এখনো ধরা দেয় কোনো কোনো বাঙালির স্বপ্ন ও কল্পনায়। ব্রাহ্মধর্ম ও ব্রহ্মবিশ্বাসের সুতো দিয়ে বেঁধে নিয়ে এই ইউটোপিয়াকে যাঁরা পড়তে চান, তাঁরা পড়তে পারেন; তার আগে কল্পনা করে দেখুন, একজন দিগন্তবিহারী কবি মগ্ন হয়ে ভাবছেন প্রকৃতি-আশ্রিত শিক্ষা প্রসঙ্গে, প্রকৃতির সঙ্গে সঙ্গে যোগ করে নিচ্ছেন উৎসব ও আনন্দকে, সনাতন গ্রাম-কৃষি ও কৃষকের সম্পর্ককে দিতে চাইছেন নতুন এক বন্দোবস্ত, প্রকৃতি ও মানুষের চিরায়ত সম্বন্ধকে বুঝতে চাইছেন দার্শনিক ও প্রায়োগিকভাবে। একালে এই সব ভাবনা কি অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়েছে? রবীন্দ্রনাথের শিক্ষাচিন্তার বিপরীতে হাল আমলের শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে বঙ্গদেশে এত হাহাকার কেন? প্রকৃতি কিংবা ছয় ঋতু ‘গেল গেল’, ‘নেই নেই’ বলে এত কোলাহল কেন? অসহিষ্ণু মন নিয়ে কেন এত মাথাব্যথা আমাদের?
সত্যি বলতে কি, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাঙালির জন্য এক মহাবয়ান। ‘উচ্চ সংস্কৃতি’র অভিযোগে মামলা দায়ের করে এই বয়ানের বিরুদ্ধে রায় ঘোষণা করা যায়; একে ভাঙা যায়, হ্যাঁচকা টানও দেওয়া যায়, কিন্তু উপড়ে ফেলা যায় না। যদি তা-ই হতো, রুশ বিপ্লবের পর একেবারেই অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়তেন লিয়েফ তলস্তয়। উল্টো ভ্লাদিমির লেনিন তাঁকে বললেন রুশ বিপ্লবের দর্পণ। এই ধরনের সাংস্কৃতিক প্রতীককে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নবায়নও করে নিতে হয়। যেমন শেক্সপিয়র নবায়িত হন ভিন্ন দেশের ভিন্ন সংস্কৃতি ও ভাষার ভেতর দিয়ে, যেমন বহু ভাষায় নবায়িত হয়েছেন হোমার। আমরা কি প্রস্তুত রবীন্দ্রনাথকে ‘নতুন করে পাবো বলে’? নাকি তাঁকে আটকে রাখব প্রাতিষ্ঠানিক খোঁয়াড়ে? তাঁর সাহিত্য ও সৃষ্টিশীলতাকে কতখানি ভাঙব, কতখানি গড়ব, প্যারোডি আর ক্যারিকেচারের ঠোঙায় কতখানি মোড়াব তাঁর লেখাকে—সেটুকু কাণ্ডজ্ঞান কি আমাদের হয়েছে? নাকি জ্ঞানকাণ্ডের বোঝার ভারে মূলসহ নিজেরাই উপড়ে পড়ছি লন্ডভণ্ড কাণ্ডকারখানায়?

সাম্প্রতিক কালে রবীন্দ্রনাথ ও রবীন্দ্রসাহিত্য কতখানি প্রাসঙ্গিক—এ রকম একটি প্রশ্ন কেউ কেউ তুলতে চান, তুলেও থাকেন। সাহিত্যের দীক্ষিত পাঠক থেকে শুরু করে অদীক্ষিত শখের পাঠকও দ্বিধান্বিত হয়ে পড়েন—আদতেই রবীন্দ্রনাথ কিংবা রবীন্দ্রসাহিত্যের ‘দরকার’ আছে কি না! প্রশ্নটি অথবা প্রশ্নগুচ্ছে জড়িয়ে থাকে প্রায়োগিক জীবনব্যবস্থার চিহ্ন। যেমন করে আমরা প্রশ্ন তুলে থাকি পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, নাসার মঙ্গল অভিযান কিংবা শীতাতপনিয়ন্ত্রণ যন্ত্রের ব্যবহারিক গুরুত্ব আছে কি নেই! একইভাবে যেন জিজ্ঞাসা জন্মায়, ফলিত বিশ্বে রবীন্দ্রনাথ দরকারি কি না! মজার ব্যাপার এই যে, প্রাসঙ্গিক-অপ্রাসঙ্গিকতার প্রশ্ন তোলা যায় আরও আরও মহাজন প্রসঙ্গে। তবে ঘুরেফিরে রবীন্দ্রনাথ প্রসঙ্গে এই প্রশ্নের মরা গাঙে জোয়ার আসে।
গ্রিক তরুণ কবিরা নিশ্চয়ই দল বেঁধে প্রশ্ন তুলতে পারেন, দেউলিয়া ও ঋণগ্রস্ত সমকালীন গ্রিসে হোমারের প্রাসঙ্গিকতা কোথায়? হোমারের প্রাচীন লেখাপত্র পড়েই-বা কী লাভ? হোমারের কলাকৌশল একালের গ্রিক কবিতাকে কতটুকু উৎকর্ষের দিকে নিয়ে যাবে? প্রযুক্তি আচ্ছাদিত দুনিয়ায় সফোক্লিস, কালিদাস, ওভিদেরই বা কোন প্রাসঙ্গিকতা পাওয়া যাবে? এসব প্রশ্নের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাঙালি নবীন কবি-লেখকেরাও তুলতে পারেন সমান তালের প্রশ্ন। প্রশ্ন তুলতে সমস্যা নেই। তবে প্রশ্নটি নিজেই যৌক্তিক কি না, সে বিষয়ে ভাবার সুযোগ আছে।
রবীন্দ্রসাহিত্যকে অনেকেই তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিতে চান। কিন্তু ইতিহাসের মুষ্টাঘাতে তুড়ি ঠিক তালে তাল ঠুকে বাজে না। কারণটা এই: নন্দনতাত্ত্বিকতা ছাড়িয়েই রবীন্দ্রনাথ হয়ে উঠেছেন বাংলা অঞ্চলের সাংস্কৃতিক প্রতীক। এক দিন-দুই দিনের আনুষ্ঠানিক আলাপ আর বৈঠকে বসে তাঁকে সম্মিলিতভাবে প্রতীক হিসেবে গড়ে তোলা হয়নি। ইতিহাসের এক দীর্ঘ পর্ব তাঁকে নির্মাণ করেছে। সময়ের সঙ্গে সাড়া দিয়ে, সময়কে নেড়েচেড়ে নিজের মতো গড়েপিটে তিনিও সময়কে নিজের জন্য নির্মাণ করে নিয়েছেন। তাহলে ঐতিহাসিকতা আর ঐতিহাসিক পাঠই কি সাহিত্যের প্রতীক-প্রতিম কবি-লেখকদের জন্য পরম নিয়তি? সেই সূত্রেই ধেয়ে আসে অপর এক জিজ্ঞাসা : নন্দনতাত্ত্বিকভাবে রবীন্দ্রনাথ কি প্রাসঙ্গিক নন? জরুরি নন?
বিনা দ্বিধায় বলা যায়, ঘোরতরভাবে প্রাসঙ্গিক। আমাদের মনে রাখতে হবে, উনিশ শতকের সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপটে বাংলা একটি অবিকশিত প্রাদেশিক ভাষামাত্র। ওড়িয়া, অসমিয়া ভাষার মতোই বাংলা খুঁজে বেড়াচ্ছে ভবিষ্যতের দিশা। বাংলা ভাষাকে কেন্দ্র করে একদিকে চলছে ঔপনিবেশিক পণ্ডিত ও কর্মকর্তাদের অনুশীলন, অন্যদিকে চলছে সংস্কৃতসেবীদের শুদ্ধি অভিযান। তার ওপর সবকিছু টপকে গিয়ে চূড়ায় বসে আছে নব্য বাঙালির ইংরেজিয়ানা। ভাষাগত এই পটভূমির ওপর গড়ে উঠেছেন রবীন্দ্রনাথ। তাঁর প্রাসঙ্গিকতা ফুরিয়ে যাবে, দুম করে এমন কথা বলা যায় না।
শিল্প-সাহিত্যের নানা নিরীক্ষায় রবীন্দ্রনাথ হতে পারেন প্রেরণার উৎসভূমি। আমরা হয়তো জানি না যে রবীন্দ্রনাথ সৃষ্টিশীল নিরীক্ষার ভেতর দিয়ে সৃষ্টি ও পুনঃসৃষ্টি করেছেন। কবিতাকে করেছেন নাটক, কাব্যনাট্যকে করেছেন গীতিনাট্য। যেমন—‘পরিশোধ’ কবিতাটি হয়ে গেল নৃত্যনাট্য শ্যামা। চিত্রাঙ্গদার কাহিনি পেয়ে গেল নৃত্যনাট্যের রূপ। লেখার এই রূপান্তরের পক্ষে রবীন্দ্রনাথ জুড়ে দিয়েছেন ব্যাখ্যা। শেষ জীবনে ঝুঁকেছিলেন চিত্রকলায়। সেখানেও ফলেছে নতুন শস্য।
সাহিত্যের ভাব ও ভাষার খোঁজে অনেক পথ খুঁড়তে হয়েছে তাঁকে। তরুণ রবীন্দ্রনাথের সামনে ছিল মধুসূদন-বঙ্কিমচন্দ্র অধ্যুষিত পথ। আজ আমাদের পক্ষে কল্পনা করাও অসম্ভব যে উনিশ শতকের বাংলা কবিতায় মধুসূদন কতখানি প্রভাববিস্তারী হয়ে উঠেছিলেন; নানাবিধ ‘বধ-কাব্যে’ ভরে উঠেছিল বাংলা কবিতা। নতুন কবিদের জন্য মধুসূদন ছিলেন এক বিরাট বাধা। মধুসূদনকে অনুসরণ করতে গিয়ে প্রভাবের চোরাবালিতে ডুবে মরেছেন অনেক অনেক কবি। ব্যতিক্রমী ছিলেন বিহারীলাল চক্রবর্তী। রবীন্দ্রনাথ যাঁর খাঁটি ঐতিহাসিক ও নন্দনতাত্ত্বিক মূল্যায়ন করতে পেরেছিলেন।
বাংলা সাহিত্যের বাজারে তত দিনে এসে গেছেন শেক্সপিয়ার, মিলটন, শেলি, কিটস, বায়রন। বিহারীলালের মতো করেই রবীন্দ্রনাথ বেছে নিলেন গীতিকবিতার পথ। বিরহী রাধার নূপুরধ্বনির মতো তাঁর কবিতায় শোনা গেল বৈষ্ণব কবিতার মৃদুমন্দ স্বর। ব্রজেন্দ্রনাথ শীলকে লেখা এক চিঠিতে রবীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন, ‘বৈষ্ণব সাহিত্য ও উপনিষদ বিমিশ্রিত হইয়া আমার মনের হাওয়া তৈরি করিয়াছে।’ আর সেই হাওয়াতেই রচিত হলো গীতবিতানের কতশত গান।
ছোটগল্প নামক সাহিত্য আঙ্গিকটিকে নানা ভঙ্গিতে বিস্তৃত করেছেন তিনি। তাঁর হাতেই পাচ্ছি ‘ঘাটের কথা’, ‘রাজপথের কথা’, ‘স্ত্রীর পত্র’, ‘গুপ্তধন’, ‘ক্ষুধিত পাষাণ’, ‘নষ্টনীড়ে’র মতো বিচিত্র ভঙ্গি ও স্বাদের গল্প; প্রয়োজন মাফিক তিনি বদলে নিয়েছেন কথকের রীতিগত অবস্থান, বেড়ে গিয়েছে গল্পের আকার ও প্রকার; আমাদের মনে পড়বে ‘রবিবার’ কিংবা ‘ল্যাবরেটরি’ গল্পের কথা। গল্প লেখার হুলুস্থুল কাণ্ডকে নিজেই ব্যঙ্গ করে বলেছেন, ‘উল্কাবৃষ্টি’।
বঙ্কিমচন্দ্র-শাসিত কথকতায় রবীন্দ্রনাথ বের করে আনতে চাইলেন ‘আঁতের কথা’; ‘চোখের বালি’ উপন্যাসের সূচনায় জানান দিয়েছেন, নতুন এই উপন্যাস শুধু তাঁর নিজের জন্য নয়, সেকালের বাংলা সাহিত্যের ক্ষেত্রেই এক ‘আকস্মিক’ ঘটনা। আরও বললেন, ‘এবারকার গল্প বানাতে হবে এ যুগের কারখানা ঘরে।’ কিন্তু কী আছে সেই ঘরে? রবীন্দ্রনাথ বলেছেন, ‘মনের সংসারের সেই কারখানা-ঘরে যেখানে আগুনের জ্বলুনি হাতুড়ির পিটুনি থেকে দৃঢ় ধাতুর মূর্তি জেগে উঠতে থাকে।’ আর তারপর? তিনি লিখলেন, ‘যেন পশুশালার দরজা খুলে দেওয়া হল, বেরিয়ে পড়ল হিংস্র ঘটনাগুলো অসংযত হয়ে।’ যার সঙ্গে মিশে আছে মানুষের ঈর্ষা, রিপু। রবীন্দ্রনাথ চিনতে চাইলেন মানুষের অন্ধ কুঠুরি। কারণ, ‘সাহিত্যের নবপর্যায়ের পদ্ধতি হচ্ছে ঘটনাপরম্পরার বিবরণ দেওয়া নয়, বিশ্লেষণ করে তাদের আঁতের কথা বের করে দেখানো।’ ‘চোখের বালি’তে এই পদ্ধতির প্রয়োগ ঘটালেন তিনি; আবার এ-ও বলতে ভুললেন না যে গল্প লেখার দিনগুলোতেই চলছিল তাঁর প্রস্তুতি।
রবিঠাকুর সম্পর্কে সাধারণ ধারণা এই যে অলৌকিক আন্তর প্রেরণায় অভিভূত হয়ে রবীন্দ্রনাথ একের পর এক সাহিত্য সৃজন করে গিয়েছেন। তাঁর ওপর ভর করেছেন ‘জীবনদেবতা’, যিনি তাঁকে দিয়ে সবকিছু লিখিয়ে নিয়েছেন। রবীন্দ্রভাষ্য মোতাবেক এ কথা সত্যের এক পিঠ মাত্র। অপর পিঠে লুকিয়ে আছে অন্য এক সত্য; যেখানে রবীন্দ্রনাথ অনবরত লিখে যাচ্ছেন ফরমাশের চাপে; সৃষ্টিশীল আবেগের চেয়েও মনের ওপর জোরালোভাবে চেপে বসেছে নিরীক্ষার তাড়না। আসলে বলতে চাইছি, রবীন্দ্রনাথ আমাদের সেই বিরল প্রতিভা, ঋতুবদলের সঙ্গে সঙ্গে যিনি ধারণ করেছেন নতুন মুখ ও মুখশ্রী।
ব্যক্তির আত্মসচেতনতা, বিরাট ব্রহ্মাণ্ডে নিজেকে শনাক্ত করতে পারার দীক্ষা মেলে রবীন্দ্রসাহিত্যে। আর কে না জানে রোমান্টিক এই আত্মসচেতনতা আধুনিকতারও উৎস। কিন্তু রবীন্দ্রনাথের জন্য অহমের আত্মকেন্দ্রিকতা ছিল একেবারেই না-পছন্দ ব্যাপার। তার বদলে তিনি বলেন আত্মশক্তির কথা, যা সামষ্টিকতার অংশ। সবার সঙ্গে সবাই মেলার আয়োজন হিসেবে জাতীয় সাহিত্যকে পছন্দ করলেও জাতীয়তাবাদের সমালোচনায় তিনি দাঁড়াতে গেলেন ভিন্ন পাটাতনে। অথচ বাঙালির জাতীয় চৈতন্য ও জাতীয়তাবাদ গড়ে ওঠার পেছনে শেষ পর্যন্ত প্রবল প্রভাব রেখেছে রবীন্দ্রসাহিত্য। অনুমান করি, আজকের যুগের কট্টর জাতীয়তাবাদী প্রকাশগুলোর বিরুদ্ধে তিনি ভিন্ন মতই প্রকাশ করতেন।
প্রতিরোধের চৈতন্য বোঝার ক্ষেত্রে রবীন্দ্রনাথ হতে পারেন দারুণ এক শক্তি। তাঁর এই দিকটি নিয়ে দরকারি আলোচনার ভাগ কম বলেই মনে হয়। আমরা রবীন্দ্রনাথকে একজন নিষ্ক্রিয় রোমান্টিক হিসেবে দেখতেই অভ্যস্ত। অথচ তাঁর বিস্তৃত জীবনজুড়ে খুঁজে পাব সক্রিয় সব কর্মযজ্ঞের ইতিহাস। তাঁর মধ্যে ব্যাপকভাবে বিদ্যমান সমকালকে বোঝার তাগিদ। আপন দেশ ও বিশ্বপরিস্থিতিকে তিনি চমৎকারভাবে বুঝতে পেরেছিলেন। সেই সবের ঐতিহাসিক সাক্ষ্য হয়ে আছে কালান্তর বইয়ের প্রবন্ধগুলো। আমি বিশেষভাবে বলব তাঁর ‘সভ্যতার সংকট’ প্রবন্ধটির কথা। এই প্রবন্ধে ঔপনিবেশিক শাসন ও সাম্রাজ্যবাদের তীব্র সমালোচনা করেছেন। আশি বছরব্যাপী প্রসারিত জীবনের পটভূমিকায় রবীন্দ্রনাথ যেন দাঁড়িয়ে ছিলেন আত্মসমীক্ষার সামনে। তাঁর মনে হয়েছে, তিনি এবং তাঁর দেশের ‘মনোবৃত্তির পরিণতি দ্বিখণ্ডিত হয়ে গেছে।’ গভীরতরভাবে বাসা বেঁধেছে বিচ্ছিন্নতা।
রবীন্দ্রনাথের উপনিবেশিত মন আজ যেন বুঝতে পারল ‘সাম্রাজ্যমদমত্ততা’য় ভরা ইংরেজদের কলুষিত হৃদয়। তার আগ পর্যন্ত নব্য শিক্ষিত বাঙালি ভদ্রলোকের সাংস্কৃতিক সূত্র মেনে রবীন্দ্রনাথও মুগ্ধ ছিলেন ‘বার্কের বাগ্মিতায়, মেকলের ভাষাপ্রবাহের তরঙ্গভঙ্গে’; সাহিত্যিক সংস্পর্শ হিসেবে অন্তরের অন্দরমহলে টোকা দিয়েছিল শেকশপিয়রের নাটক, বায়রনের কবিতা। ইংরেজের রাজনীতি সম্পর্কে উপলব্ধি ছিল ‘সর্বমানবের বিজয়ঘোষণা’। ইংল্যান্ড ছিল ‘অত্যাচারপ্রপীড়িত জাতির আশ্রয়স্থল’। স্মৃতির অন্দর হাতড়ে রবীন্দ্রনাথ বলছেন, ‘মানবমৈত্রীর বিশুদ্ধ পরিচয় দেখেছি ইংরেজ-চরিত্রে, তাই আন্তরিক শ্রদ্ধা নিয়ে ইংরেজকে হৃদয়ের উচ্চাসনে বসিয়েছিলেম।’ অর্থাৎ রবীন্দ্রনাথের মনে আসন পেয়েছিল ইউরোপের উদার মানবিকতাবাদ।
কিন্তু প্রৌঢ়ত্বের গোধূলিতে রবীন্দ্রনাথ বলেছেন অন্য কথা; ‘সভ্যতা’র ধারণাটিই আজ তাঁর কাছে প্রশ্নবিদ্ধ। তিনি দেখতে পেলেন, ‘সভ্যতাকে যারা চরিত্র-উৎস থেকে উৎসারিতরূপে স্বীকার করেছে, রিপুর প্রবর্তনায় তারা তাকে কী অনায়াসে লঙ্ঘন করতে পারে।’ ইংরেজি সাহিত্যের ‘স্বর্গ হইতে বিদায়’ ঘটল রবীন্দ্রনাথের। উন্মোচিত হলো অন্য এক দৃশ্যপট। রবীন্দ্রনাথ বললেন, ‘নিভৃতে সাহিত্যের রস সম্ভোগের উপকরণের বেষ্টন হতে একদিন আমাকে বেরিয়ে আসতে হয়েছিল। সেদিন ভারতবর্ষের জনসাধারণের যে নিদারুণ দারিদ্র্য আমার সম্মুখে উদ্ঘাটিত হলো, তা হৃদয়বিদারক। অন্ন বস্ত্র পানীয় শিক্ষা আরোগ্য প্রভৃতি মানুষের শরীর-মনের পক্ষে যা-কিছু অত্যাবশ্যক, তার এমন নিরতিশয় অভাব বোধ হয় পৃথিবীর আধুনিক শাসনচালিত কোনো দেশেই ঘটেনি। অথচ এই দেশ ইংরেজকে দীর্ঘকাল ধরে তার ঐশ্বর্য জুগিয়ে এসেছে। যখন সভ্যজগতের মহিমা ধ্যানে একান্ত মনে নিবিষ্ট ছিলেম, তখন কোনো দিন সভ্য নামধারী মানব-আদর্শের এত বড়ো নিষ্ঠুর বিকৃত রূপ কল্পনা করতেই পারিনি ; অবশেষে দেখছি, একদিন এই বিকারের ভেতর দিয়ে বহু কোটি জনসাধারণের প্রতি সভ্য জাতির অপরিসীম অবজ্ঞাপূর্ণ ঔদাসীন্য।’
একই দেহে লীন সভ্যতা ও সাম্রাজ্যবাদের জাতিক ও আন্তর্জাতিক বিস্তার তাঁকে ভাবিয়ে তুলেছে। আর তাই ভাবনার পরিসরে এসে গেছে সেকালের চীন, জাপান, আফগানিস্তান, রাশিয়া, ইরান। ইউরোপ সম্পর্কে রবীন্দ্রনাথ বলছেন, ‘সমস্ত ইউরোপে বর্বরতা কী রকম নখদন্ত বিকাশ করে বিভীষিকা বিস্তার করতে উদ্যত। এই মানবপীড়নের মহামারি পাশ্চাত্য সভ্যতার মজ্জার ভেতর থেকে জাগ্রত হয়ে উঠে আজ মানবাত্মার অপমানে দিগন্ত থেকে দিগন্ত পর্যন্ত বাতাস কলুষিত করে দিয়েছে।’ রবীন্দ্রনাথের এই সব উক্তি ও উপলব্ধি আজও কি প্রাসঙ্গিক নয়? খানিকটা আত্মগ্লানিতে ভরা মন নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন, ‘আমাদের হতভাগ্য নিঃসহায় নীরন্ধ্র অকিঞ্চনতার মধ্যে আমরা কি তার কোনো আভাস পাইনি?’
আভাস নিশ্চয়ই তিনি পেয়েছিলেন। কিন্তু মানুষের ওপর বিশ্বাস হারানো পাপ বলে যিনি জ্ঞান করেন, তার পক্ষে ‘সমালোচনাত্মক’ দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করা খানিকটা মুশকিলের ব্যাপার। তবে তিনি ঠিকঠাক বুঝতে পেরেছিলেন, ‘ভাগ্যচক্রের পরিবর্তনের দ্বারা একদিন না একদিন ইংরেজকে এই ভারত সাম্রাজ্য ত্যাগ করে যেতে হবে।’ পরিত্যক্ত ভারতবর্ষের জন্য তারা রেখে যাবে ‘দীনতার আবর্জনা’, ‘বিস্তীর্ণ পঙ্কশয্যা’, ‘দুর্বিষহ নিষ্ফলতা’; বিশেষণে ঢাকা এসব চিত্রায়ণের পর রবীন্দ্রনাথ স্বীকারোক্তি করছেন, ‘জীবনের প্রথম আরম্ভে সমস্ত মন থেকে বিশ্বাস করেছিলুম য়ুরোপের অন্তরের সম্পদ এই সভ্যতার দানকে। আর আজ আমার বিদায়ের দিনে সে বিশ্বাস একেবারে দেউলিয়া হয়ে গেল।’ কিন্তু রবীন্দ্রনাথ আমাদের জন্য কী রেখে গেলেন?
রবীন্দ্রনাথ দিয়ে গেলেন বিপুল সাহিত্যসম্ভার, বিকশিত বাংলা ভাষা, বহুবিধ সাংস্কৃতিক কৃত্য, জাতীয় চৈতন্য আর এক সর্বগ্রাহী মন। বাঙালির মনে অবচেতনে রেখে গেলেন স্বপ্নগ্রস্ত ‘ইউটোপিয়া’। শান্তিনিকেতন, তপোবন, আশ্রমকেন্দ্রিক প্রকল্পনা এখনো ধরা দেয় কোনো কোনো বাঙালির স্বপ্ন ও কল্পনায়। ব্রাহ্মধর্ম ও ব্রহ্মবিশ্বাসের সুতো দিয়ে বেঁধে নিয়ে এই ইউটোপিয়াকে যাঁরা পড়তে চান, তাঁরা পড়তে পারেন; তার আগে কল্পনা করে দেখুন, একজন দিগন্তবিহারী কবি মগ্ন হয়ে ভাবছেন প্রকৃতি-আশ্রিত শিক্ষা প্রসঙ্গে, প্রকৃতির সঙ্গে সঙ্গে যোগ করে নিচ্ছেন উৎসব ও আনন্দকে, সনাতন গ্রাম-কৃষি ও কৃষকের সম্পর্ককে দিতে চাইছেন নতুন এক বন্দোবস্ত, প্রকৃতি ও মানুষের চিরায়ত সম্বন্ধকে বুঝতে চাইছেন দার্শনিক ও প্রায়োগিকভাবে। একালে এই সব ভাবনা কি অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়েছে? রবীন্দ্রনাথের শিক্ষাচিন্তার বিপরীতে হাল আমলের শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে বঙ্গদেশে এত হাহাকার কেন? প্রকৃতি কিংবা ছয় ঋতু ‘গেল গেল’, ‘নেই নেই’ বলে এত কোলাহল কেন? অসহিষ্ণু মন নিয়ে কেন এত মাথাব্যথা আমাদের?
সত্যি বলতে কি, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাঙালির জন্য এক মহাবয়ান। ‘উচ্চ সংস্কৃতি’র অভিযোগে মামলা দায়ের করে এই বয়ানের বিরুদ্ধে রায় ঘোষণা করা যায়; একে ভাঙা যায়, হ্যাঁচকা টানও দেওয়া যায়, কিন্তু উপড়ে ফেলা যায় না। যদি তা-ই হতো, রুশ বিপ্লবের পর একেবারেই অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়তেন লিয়েফ তলস্তয়। উল্টো ভ্লাদিমির লেনিন তাঁকে বললেন রুশ বিপ্লবের দর্পণ। এই ধরনের সাংস্কৃতিক প্রতীককে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নবায়নও করে নিতে হয়। যেমন শেক্সপিয়র নবায়িত হন ভিন্ন দেশের ভিন্ন সংস্কৃতি ও ভাষার ভেতর দিয়ে, যেমন বহু ভাষায় নবায়িত হয়েছেন হোমার। আমরা কি প্রস্তুত রবীন্দ্রনাথকে ‘নতুন করে পাবো বলে’? নাকি তাঁকে আটকে রাখব প্রাতিষ্ঠানিক খোঁয়াড়ে? তাঁর সাহিত্য ও সৃষ্টিশীলতাকে কতখানি ভাঙব, কতখানি গড়ব, প্যারোডি আর ক্যারিকেচারের ঠোঙায় কতখানি মোড়াব তাঁর লেখাকে—সেটুকু কাণ্ডজ্ঞান কি আমাদের হয়েছে? নাকি জ্ঞানকাণ্ডের বোঝার ভারে মূলসহ নিজেরাই উপড়ে পড়ছি লন্ডভণ্ড কাণ্ডকারখানায়?

জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল।
৬ দিন আগে
জনপ্রিয় কিশোর গোয়েন্দা সিরিজ তিন গোয়েন্দার স্রষ্টা রকিব হাসান মারা গেছেন। আজ বুধবার রাজধানীর একটি হাসপাতালে ডায়ালাইসিস চলাকালে তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।
১১ দিন আগে
হাঙ্গেরির ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই এবার (২০২৫ সালে) সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন তাঁর দীর্ঘ, দার্শনিক বাক্য ও মানবজীবনের বিশৃঙ্খলার গভীর অনুসন্ধানী সাহিত্যকর্মের জন্য। সুইডিশ একাডেমি তাঁকে সম্মান জানিয়েছে ‘শিল্পের শক্তিকে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করার’ জন্য।
১৭ দিন আগে
হাঙ্গেরির সাহিত্যে অসীম জনপ্রিয়তা ও প্রভাব তাঁর; বিশ্বজোড়া আতঙ্ক ও সন্ত্রাসের দাপটেও শিল্পের শক্তি চেনায় তাঁর কলম। তিনি হাঙ্গেরিয়ান ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই; সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০২৫ সালে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।
১৭ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল। কিন্তু ভাষাবিদ ও সাহিত্য ইতিহাসবিদদের মতে, এই ধারণা আসলে পশ্চিমা দৃষ্টিকোণ থেকে তৈরি এক ‘ঔপনিবেশিক কল্পনা’ মাত্র। বাস্তবে আরবি সাহিত্য কখনোই থেমে যায়নি।
প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী, অষ্টম শতাব্দীতে আব্বাসীয় খলিফাদের অধীনে বিজ্ঞান, দর্শন ও কবিতার কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল বাগদাদ। আবু নুয়াস, আল-মুতানাব্বি, আল-ফারাবি ও ইবনে সিনার মতো কবি ও দার্শনিকদের হাত ধরে শুরু হয়েছিল এক স্বর্ণযুগ। ঊনবিংশ শতাব্দীর ইউরোপীয় গবেষকেরা—যেমন ফরাসি চিন্তাবিদ আর্নেস্ট রেনাঁ ও ডাচ ইতিহাসবিদ রেইনহার্ট দোজি সেই আমলটিকেই আরবি বুদ্ধিবৃত্তিক জীবনের শিখর বলে স্বীকার করেছিলেন এবং দাবি করেছিলেন, একাদশ শতাব্দীর পর এই ধারাবাহিকতার পতন ঘটে। তাঁদের মতে, এরপর প্রায় ৮০০ বছর আরবে আর কোনো গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্যিক বা দার্শনিক কাজ হয়নি—যতক্ষণ না ইউরোপে রেনেসাঁ শুরু হয়।
কিন্তু আধুনিক গবেষকেরা বলছেন, এই ধারণা সরলীকৃত ও পক্ষপাতদুষ্ট। ফ্রাঙ্কফুর্ট আন্তর্জাতিক বইমেলায় শেখ জায়েদ বুক অ্যাওয়ার্ডের আয়োজিত এক আলোচনায় ভাষাবিদেরা দাবি করেছেন, আরবি রচনা শৈলী কখনো বিলুপ্ত হয়নি; বরং তা ধারাবাহিকভাবে কপি, অনুবাদ ও পাঠের মাধ্যমে বেঁচে ছিল।
জার্মান গবেষক বেয়াট্রিস গ্রুন্ডলার তাঁর ‘দ্য রাইজ অব দ্য অ্যারাবিক বুক’ গ্রন্থে দাবি করেছেন, আরবি সাহিত্যে ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে যে ধারণাটি প্রচলিত আছে তা আসলে গাল-গল্প। এই বইটি এবারের শেখ জায়েদ পুরস্কারের শর্টলিস্টে রয়েছে। গ্রুন্ডলার এতে দেখিয়েছেন, নবম শতাব্দীর বাগদাদে বইয়ের ব্যবসা, কপিকারদের প্রতিযোগিতা, জনসম্মুখে পাঠ ও লেখার প্রচলন—সবই ছিল আধুনিক প্রকাশনা সংস্কৃতির পূর্বসূরি। তিনি মত দিয়েছেন, ‘বাগদাদের রাস্তায় হাঁটলে আপনি দেখতেন লোকেরা হস্তলিপি বিক্রি করছে, বিরামচিহ্ন নিয়ে তর্ক করছে—এ যেন এক জীবন্ত প্রকাশনা বাজার।’
গবেষণা বলছে, আরবি সাহিত্য আসলে কখনো এক জায়গায় স্থির থাকেনি। এর কেন্দ্র এক সময় বাগদাদ থেকে কায়রো, দামেস্ক ও আন্দালুসিয়ায় স্থানান্তরিত হয়। কিন্তু ধারাটি অব্যাহতই থাকে। নতুন ঘরানা তৈরি হয়, পুরোনো ঘরানা রূপান্তরিত হয়।
ফরাসি অধ্যাপক হাকান ওজকান তাঁর গবেষণায় দেখিয়েছেন, ‘জাজাল’ নামের কথ্য ছন্দভিত্তিক কবিতার ধারা আব্বাসীয় যুগের পরও বিকশিত হতে থাকে। তাঁর মতে, ‘এই কবিরা নিয়ম ভেঙে নতুন রূপ দিয়েছে—তাঁদের ছন্দ ও ব্যঙ্গ আধুনিক র্যাপের মতো প্রাণবন্ত।’

এদিকে এই বিষয়ে এক প্রতিবেদনে সোমবার (২০ অক্টোবর) আমিরাতভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য ন্যাশনাল জানিয়েছে, আবুধাবির নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির ‘আরবি সাহিত্য লাইব্রেরি’ প্রকল্প ইতিমধ্যেই ‘হারানো শতাব্দী’ বলে বিবেচিত সময়ের ৬০ টিরও বেশি আরবি সাহিত্যকর্ম পুনরুদ্ধার করেছে। প্রকল্পটির সম্পাদক অধ্যাপক মরিস পোমেরান্টজ বলেছেন, ‘এই বইগুলো সম্পাদনা করা মানে এক চলমান সংলাপে অংশ নেওয়া—যেখানে প্রজন্মের পর প্রজন্ম লেখক, অনুবাদক ও সমালোচকেরা একে অপরকে উত্তর দিয়ে গেছেন।’
মরিস মনে করেন, আরবি সাহিত্য স্থবির হয়ে যাওয়ার ধারণাটি মূলত অনুবাদের অভাব থেকেই জন্ম নিয়েছে। তিনি বলেন, ‘যখন কোনো লেখা অনুবাদ করা হয় না, তখন সেটি বৈশ্বিক অস্তিত্ব হারায়।’
মরিসের মতে, এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো এই সাহিত্যকে আবার জনসাধারণের কল্পনায় ফিরিয়ে আনা—স্কুলে পড়ানো, মঞ্চে উপস্থাপন করা, অনুবাদের মাধ্যমে বিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়া। তা না হলে আরবি সাহিত্যের ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে চিহ্নিত সময়টি অধরাই থেকে যাবে।

জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল। কিন্তু ভাষাবিদ ও সাহিত্য ইতিহাসবিদদের মতে, এই ধারণা আসলে পশ্চিমা দৃষ্টিকোণ থেকে তৈরি এক ‘ঔপনিবেশিক কল্পনা’ মাত্র। বাস্তবে আরবি সাহিত্য কখনোই থেমে যায়নি।
প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী, অষ্টম শতাব্দীতে আব্বাসীয় খলিফাদের অধীনে বিজ্ঞান, দর্শন ও কবিতার কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল বাগদাদ। আবু নুয়াস, আল-মুতানাব্বি, আল-ফারাবি ও ইবনে সিনার মতো কবি ও দার্শনিকদের হাত ধরে শুরু হয়েছিল এক স্বর্ণযুগ। ঊনবিংশ শতাব্দীর ইউরোপীয় গবেষকেরা—যেমন ফরাসি চিন্তাবিদ আর্নেস্ট রেনাঁ ও ডাচ ইতিহাসবিদ রেইনহার্ট দোজি সেই আমলটিকেই আরবি বুদ্ধিবৃত্তিক জীবনের শিখর বলে স্বীকার করেছিলেন এবং দাবি করেছিলেন, একাদশ শতাব্দীর পর এই ধারাবাহিকতার পতন ঘটে। তাঁদের মতে, এরপর প্রায় ৮০০ বছর আরবে আর কোনো গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্যিক বা দার্শনিক কাজ হয়নি—যতক্ষণ না ইউরোপে রেনেসাঁ শুরু হয়।
কিন্তু আধুনিক গবেষকেরা বলছেন, এই ধারণা সরলীকৃত ও পক্ষপাতদুষ্ট। ফ্রাঙ্কফুর্ট আন্তর্জাতিক বইমেলায় শেখ জায়েদ বুক অ্যাওয়ার্ডের আয়োজিত এক আলোচনায় ভাষাবিদেরা দাবি করেছেন, আরবি রচনা শৈলী কখনো বিলুপ্ত হয়নি; বরং তা ধারাবাহিকভাবে কপি, অনুবাদ ও পাঠের মাধ্যমে বেঁচে ছিল।
জার্মান গবেষক বেয়াট্রিস গ্রুন্ডলার তাঁর ‘দ্য রাইজ অব দ্য অ্যারাবিক বুক’ গ্রন্থে দাবি করেছেন, আরবি সাহিত্যে ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে যে ধারণাটি প্রচলিত আছে তা আসলে গাল-গল্প। এই বইটি এবারের শেখ জায়েদ পুরস্কারের শর্টলিস্টে রয়েছে। গ্রুন্ডলার এতে দেখিয়েছেন, নবম শতাব্দীর বাগদাদে বইয়ের ব্যবসা, কপিকারদের প্রতিযোগিতা, জনসম্মুখে পাঠ ও লেখার প্রচলন—সবই ছিল আধুনিক প্রকাশনা সংস্কৃতির পূর্বসূরি। তিনি মত দিয়েছেন, ‘বাগদাদের রাস্তায় হাঁটলে আপনি দেখতেন লোকেরা হস্তলিপি বিক্রি করছে, বিরামচিহ্ন নিয়ে তর্ক করছে—এ যেন এক জীবন্ত প্রকাশনা বাজার।’
গবেষণা বলছে, আরবি সাহিত্য আসলে কখনো এক জায়গায় স্থির থাকেনি। এর কেন্দ্র এক সময় বাগদাদ থেকে কায়রো, দামেস্ক ও আন্দালুসিয়ায় স্থানান্তরিত হয়। কিন্তু ধারাটি অব্যাহতই থাকে। নতুন ঘরানা তৈরি হয়, পুরোনো ঘরানা রূপান্তরিত হয়।
ফরাসি অধ্যাপক হাকান ওজকান তাঁর গবেষণায় দেখিয়েছেন, ‘জাজাল’ নামের কথ্য ছন্দভিত্তিক কবিতার ধারা আব্বাসীয় যুগের পরও বিকশিত হতে থাকে। তাঁর মতে, ‘এই কবিরা নিয়ম ভেঙে নতুন রূপ দিয়েছে—তাঁদের ছন্দ ও ব্যঙ্গ আধুনিক র্যাপের মতো প্রাণবন্ত।’

এদিকে এই বিষয়ে এক প্রতিবেদনে সোমবার (২০ অক্টোবর) আমিরাতভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য ন্যাশনাল জানিয়েছে, আবুধাবির নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির ‘আরবি সাহিত্য লাইব্রেরি’ প্রকল্প ইতিমধ্যেই ‘হারানো শতাব্দী’ বলে বিবেচিত সময়ের ৬০ টিরও বেশি আরবি সাহিত্যকর্ম পুনরুদ্ধার করেছে। প্রকল্পটির সম্পাদক অধ্যাপক মরিস পোমেরান্টজ বলেছেন, ‘এই বইগুলো সম্পাদনা করা মানে এক চলমান সংলাপে অংশ নেওয়া—যেখানে প্রজন্মের পর প্রজন্ম লেখক, অনুবাদক ও সমালোচকেরা একে অপরকে উত্তর দিয়ে গেছেন।’
মরিস মনে করেন, আরবি সাহিত্য স্থবির হয়ে যাওয়ার ধারণাটি মূলত অনুবাদের অভাব থেকেই জন্ম নিয়েছে। তিনি বলেন, ‘যখন কোনো লেখা অনুবাদ করা হয় না, তখন সেটি বৈশ্বিক অস্তিত্ব হারায়।’
মরিসের মতে, এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো এই সাহিত্যকে আবার জনসাধারণের কল্পনায় ফিরিয়ে আনা—স্কুলে পড়ানো, মঞ্চে উপস্থাপন করা, অনুবাদের মাধ্যমে বিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়া। তা না হলে আরবি সাহিত্যের ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে চিহ্নিত সময়টি অধরাই থেকে যাবে।

সাম্প্রতিক কালে রবীন্দ্রনাথ ও রবীন্দ্রসাহিত্য কতখানি প্রাসঙ্গিক—এ রকম একটি প্রশ্ন কেউ কেউ তুলতে চান, তুলেও থাকেন। সাহিত্যের দীক্ষিত পাঠক থেকে শুরু করে অদীক্ষিত শখের পাঠকও দ্বিধান্বিত হয়ে পড়েন—আদতেই রবীন্দ্রনাথ কিংবা রবীন্দ্রসাহিত্যের ‘দরকার’ আছে কি না! প্রশ্নটি অথবা প্রশ্নগুচ্ছে জড়িয়ে থাকে প্রায়োগিক
০৫ আগস্ট ২০২২
জনপ্রিয় কিশোর গোয়েন্দা সিরিজ তিন গোয়েন্দার স্রষ্টা রকিব হাসান মারা গেছেন। আজ বুধবার রাজধানীর একটি হাসপাতালে ডায়ালাইসিস চলাকালে তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।
১১ দিন আগে
হাঙ্গেরির ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই এবার (২০২৫ সালে) সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন তাঁর দীর্ঘ, দার্শনিক বাক্য ও মানবজীবনের বিশৃঙ্খলার গভীর অনুসন্ধানী সাহিত্যকর্মের জন্য। সুইডিশ একাডেমি তাঁকে সম্মান জানিয়েছে ‘শিল্পের শক্তিকে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করার’ জন্য।
১৭ দিন আগে
হাঙ্গেরির সাহিত্যে অসীম জনপ্রিয়তা ও প্রভাব তাঁর; বিশ্বজোড়া আতঙ্ক ও সন্ত্রাসের দাপটেও শিল্পের শক্তি চেনায় তাঁর কলম। তিনি হাঙ্গেরিয়ান ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই; সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০২৫ সালে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।
১৭ দিন আগেনিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

জনপ্রিয় কিশোর গোয়েন্দা সিরিজ তিন গোয়েন্দার স্রষ্টা রকিব হাসান মারা গেছেন। আজ বুধবার রাজধানীর একটি হাসপাতালে ডায়ালাইসিস চলাকালে তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।
রকিব হাসানের মৃত্যুর খবরটি নিশ্চিত করেছেন সেবা প্রকাশনীর উপদেষ্টা মাসুমা মায়মুর। তিনি সেবা প্রকাশনীর প্রতিষ্ঠাতা কাজী আনোয়ার হোসেনের ছোট ছেলে কাজী মায়মুর হোসেনের স্ত্রী।
মাসুমা মায়মুর ফেসবুকে লিখেছেন, ‘তিন গোয়েন্দা ও সেবা প্রকাশনীর পাঠকদেরকে আন্তরিক দুঃখের সাথে জানাচ্ছি যে, কিছুক্ষণ আগে রকিব হাসান সাহেব পরলোক গমন করেছেন। ডায়ালাইসিস চলাকালে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে ওনার জীবনাবসান ঘটে। আপনারা ওনার পবিত্র আত্মার মাগফেরাত কামনা করুন।’
১৯৫০ সালের ১২ ডিসেম্বর কুমিল্লায় জন্মগ্রহণ করেন রকিব হাসান। বাবার চাকরির কারণে শৈশব কেটেছে ফেনীতে। সেখান থেকে স্কুলজীবন শেষ করে ভর্তি হন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজে। পড়াশোনা শেষে বিভিন্ন চাকরিতে যুক্ত হলেও অফিসের বাঁধাধরা জীবনে তাঁর মন টেকেনি। অবশেষে তিনি লেখালেখিকে বেছে নেন জীবনের একমাত্র পথ হিসেবে।

সেবা প্রকাশনী থেকে তাঁর লেখকজীবনের সূচনা হয়। প্রথমদিকে বিশ্বসেরা ক্ল্যাসিক বই অনুবাদ করে লেখালেখির জগতে প্রবেশ করেন তিনি। এরপর টারজান, গোয়েন্দা রাজু, রেজা-সুজা সিরিজসহ চার শতাধিক জনপ্রিয় বই লেখেন। তবে তাঁর পরিচয়ের সবচেয়ে বড় জায়গা হলো তিন গোয়েন্দা সিরিজ। এই সিরিজ বাংলাদেশের অসংখ্য কিশোর-কিশোরীর কৈশোরের সঙ্গী।
মূলত রবার্ট আর্থারের থ্রি ইনভেস্টিগেটরস সিরিজ অবলম্বনে তিন গোয়েন্দার সূচনা হয়। তবে রকিব হাসানের লেখনশৈলীতে এটি পেয়েছে একেবারে নতুন রূপ। বাংলাদেশি সাহিত্য হয়ে উঠেছে এটি। এই সিরিজের মাধ্যমে তিনি হয়ে ওঠেন হাজারো কিশোর পাঠকের প্রিয় লেখক।
নিজ নামে লেখার পাশাপাশি তিনি ব্যবহার করেছেন বিভিন্ন ছদ্মনাম। শামসুদ্দীন নওয়াব নামে তিনি অনুবাদ করেছিলেন জুল ভার্নের বইগুলো।
বাংলাদেশের পাঠকদের কাছে রকিব হাসান শুধু একজন গোয়েন্দা লেখক নন, তিনি কয়েক প্রজন্মের শৈশব-কৈশোরের ভালোবাসার মানুষ।

জনপ্রিয় কিশোর গোয়েন্দা সিরিজ তিন গোয়েন্দার স্রষ্টা রকিব হাসান মারা গেছেন। আজ বুধবার রাজধানীর একটি হাসপাতালে ডায়ালাইসিস চলাকালে তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।
রকিব হাসানের মৃত্যুর খবরটি নিশ্চিত করেছেন সেবা প্রকাশনীর উপদেষ্টা মাসুমা মায়মুর। তিনি সেবা প্রকাশনীর প্রতিষ্ঠাতা কাজী আনোয়ার হোসেনের ছোট ছেলে কাজী মায়মুর হোসেনের স্ত্রী।
মাসুমা মায়মুর ফেসবুকে লিখেছেন, ‘তিন গোয়েন্দা ও সেবা প্রকাশনীর পাঠকদেরকে আন্তরিক দুঃখের সাথে জানাচ্ছি যে, কিছুক্ষণ আগে রকিব হাসান সাহেব পরলোক গমন করেছেন। ডায়ালাইসিস চলাকালে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে ওনার জীবনাবসান ঘটে। আপনারা ওনার পবিত্র আত্মার মাগফেরাত কামনা করুন।’
১৯৫০ সালের ১২ ডিসেম্বর কুমিল্লায় জন্মগ্রহণ করেন রকিব হাসান। বাবার চাকরির কারণে শৈশব কেটেছে ফেনীতে। সেখান থেকে স্কুলজীবন শেষ করে ভর্তি হন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজে। পড়াশোনা শেষে বিভিন্ন চাকরিতে যুক্ত হলেও অফিসের বাঁধাধরা জীবনে তাঁর মন টেকেনি। অবশেষে তিনি লেখালেখিকে বেছে নেন জীবনের একমাত্র পথ হিসেবে।

সেবা প্রকাশনী থেকে তাঁর লেখকজীবনের সূচনা হয়। প্রথমদিকে বিশ্বসেরা ক্ল্যাসিক বই অনুবাদ করে লেখালেখির জগতে প্রবেশ করেন তিনি। এরপর টারজান, গোয়েন্দা রাজু, রেজা-সুজা সিরিজসহ চার শতাধিক জনপ্রিয় বই লেখেন। তবে তাঁর পরিচয়ের সবচেয়ে বড় জায়গা হলো তিন গোয়েন্দা সিরিজ। এই সিরিজ বাংলাদেশের অসংখ্য কিশোর-কিশোরীর কৈশোরের সঙ্গী।
মূলত রবার্ট আর্থারের থ্রি ইনভেস্টিগেটরস সিরিজ অবলম্বনে তিন গোয়েন্দার সূচনা হয়। তবে রকিব হাসানের লেখনশৈলীতে এটি পেয়েছে একেবারে নতুন রূপ। বাংলাদেশি সাহিত্য হয়ে উঠেছে এটি। এই সিরিজের মাধ্যমে তিনি হয়ে ওঠেন হাজারো কিশোর পাঠকের প্রিয় লেখক।
নিজ নামে লেখার পাশাপাশি তিনি ব্যবহার করেছেন বিভিন্ন ছদ্মনাম। শামসুদ্দীন নওয়াব নামে তিনি অনুবাদ করেছিলেন জুল ভার্নের বইগুলো।
বাংলাদেশের পাঠকদের কাছে রকিব হাসান শুধু একজন গোয়েন্দা লেখক নন, তিনি কয়েক প্রজন্মের শৈশব-কৈশোরের ভালোবাসার মানুষ।

সাম্প্রতিক কালে রবীন্দ্রনাথ ও রবীন্দ্রসাহিত্য কতখানি প্রাসঙ্গিক—এ রকম একটি প্রশ্ন কেউ কেউ তুলতে চান, তুলেও থাকেন। সাহিত্যের দীক্ষিত পাঠক থেকে শুরু করে অদীক্ষিত শখের পাঠকও দ্বিধান্বিত হয়ে পড়েন—আদতেই রবীন্দ্রনাথ কিংবা রবীন্দ্রসাহিত্যের ‘দরকার’ আছে কি না! প্রশ্নটি অথবা প্রশ্নগুচ্ছে জড়িয়ে থাকে প্রায়োগিক
০৫ আগস্ট ২০২২
জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল।
৬ দিন আগে
হাঙ্গেরির ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই এবার (২০২৫ সালে) সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন তাঁর দীর্ঘ, দার্শনিক বাক্য ও মানবজীবনের বিশৃঙ্খলার গভীর অনুসন্ধানী সাহিত্যকর্মের জন্য। সুইডিশ একাডেমি তাঁকে সম্মান জানিয়েছে ‘শিল্পের শক্তিকে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করার’ জন্য।
১৭ দিন আগে
হাঙ্গেরির সাহিত্যে অসীম জনপ্রিয়তা ও প্রভাব তাঁর; বিশ্বজোড়া আতঙ্ক ও সন্ত্রাসের দাপটেও শিল্পের শক্তি চেনায় তাঁর কলম। তিনি হাঙ্গেরিয়ান ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই; সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০২৫ সালে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।
১৭ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

হাঙ্গেরির ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই এবার (২০২৫ সালে) সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন তাঁর দীর্ঘ, দার্শনিক বাক্য ও মানবজীবনের বিশৃঙ্খলার গভীর অনুসন্ধানী সাহিত্যকর্মের জন্য। সুইডিশ একাডেমি তাঁকে সম্মান জানিয়েছে ‘শিল্পের শক্তিকে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করার’ জন্য। লেখক সুসান সনটাগ অবশ্য তাঁকে একসময় ‘মহাপ্রলয়ের হাঙ্গেরিয়ান গুরু’ আখ্যা দিয়েছিলেন।
সাহিত্যজগতে অনেকের কাছে ক্রাসনাহোরকাইয়ের নোবেল পাওয়ার এই ঘোষণাটি যেন কয়েক দশক ধরে চলা একটি বাক্যের সমাপ্তি।
১৯৫৪ সালে হাঙ্গেরির ছোট শহর জিউলা-তে জন্ম নেওয়া ক্রাসনাহোরকাই ১৯৮০-এর দশকের শুরুতে গল্প লেখা শুরু করেন। তাঁর প্রথম উপন্যাস স্যাটানট্যাঙ্গো (১৯৮৫) একটি বৃষ্টিস্নাত, ধ্বংসপ্রায় গ্রামের কাহিনি—যেখানে প্রতারক, মাতাল ও হতাশ মানুষেরা মিথ্যা আশায় আঁকড়ে থাকে। পরিচালক বেলা-তার তাঁর এই উপন্যাসটিকে দীর্ঘ ৭ ঘণ্টার এক সাদাকালো চলচ্চিত্রে রূপ দেন। এই বইতেই ধরা পড়ে ক্রাসনাহোরকাইয়ের লেখার বৈশিষ্ট্যসমূহ, যেমন—অবিরাম দীর্ঘ বাক্য, দার্শনিক হাস্যরস ও পতনের কিনারায় দাঁড়িয়ে থাকা মানুষের প্রতিচ্ছবি।
তাঁর পরবর্তী উপন্যাসগুলো—দ্য মেলানকোলি অব রেজিস্ট্যান্স (১৯৮৯), ওয়ার অ্যান্ড ওয়ার (১৯৯৯) ও সেইবো দেয়ার বিলো (২০০৮)—তাঁর এই দৃষ্টিভঙ্গিকে মহাজাগতিক পরিসরে বিস্তৃত করেছে। ‘ওয়ার অ্যান্ড ওয়ার’–এ তিনি এক নথি প্রহরীর গল্প বলেছেন, যিনি রহস্যময় এক পাণ্ডুলিপি প্রকাশ করতে নিউইয়র্কে পালিয়ে যান এবং আত্মহত্যা করেন—যেন ক্রম বিলীন পৃথিবীতে অর্থ ধরে রাখার এক মরিয়া চেষ্টা তাঁর।
ক্রাসনাহোরকাইয়ের লেখায় কাহিনি প্রায় সময়ই বাক্যের ভেতর হারিয়ে যায়। তিনি লিখেছেন এমন বাক্য, যা একাধিক পৃষ্ঠা জুড়ে পাঠককে টেনে নেয় অবচেতনে, অবিরাম প্রবাহে।
তাঁর সাহিত্যে হাস্যরস ও ট্র্যাজেডি পাশাপাশি চলে। স্যাটানট্যাঙ্গো–এর মাতাল নাচের দৃশ্য যেমন নিঃশেষের প্রতীক, তেমনি ‘ব্যারন ওয়েঙ্কহাইমস হোমকামিং’ (২০১৬)-এ দেখা যায়, ফিরে আসা এক পরাজিত অভিজাতকে। যার মাধ্যমে প্রকাশ পায় সভ্যতার পচন ও মানুষের হাস্যকর ভ্রান্তি।
২০১৫ সালে ম্যান বুকার পুরস্কার পাওয়ার মধ্য দিয়েই প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পান ক্রাসনাহোরকাই। অনুবাদক জর্জ সির্টেস ও ওটিলি মুলজেট তাঁর জটিল হাঙ্গেরিয়ান ভাষাকে ইংরেজিতে রূপ দিতে বিশেষ ভূমিকা রাখেন। ‘হাডসন রিভিউ’ তাঁকে বর্ণনা করেছিল ‘অন্তহীন বাক্যের ভ্রমণশিল্পী’ হিসেবে।
চল্লিশ বছরের সৃষ্টিতে ক্রাসনাহোরকাইয়ের ভুবন চিত্র, সংগীত, দর্শন ও ভাষার মিলনে বিস্তৃত। সাম্প্রতিক উপন্যাস ‘হার্শট ০৭৭৬৯’ (২০২৪)–এ তিনি এক প্রবাহিত বাক্যে লিখেছেন নব্য-নাৎসি, নেকড়ে আর এক হতভাগ্য পদার্থবিদের কাহিনি—আধুনিক ইউরোপের নৈতিক পক্ষাঘাতের রূপক হিসেবে।
তাঁর সমগ্র সাহিত্যজগৎ এক অন্ধকার ও ধ্যানমগ্ন মহাবিশ্ব—যেখানে পতন, শূন্যতা ও করুণা পাশাপাশি থাকে। ‘সেইবো দেয়ার বিলো’ বইটিতে তিনি লিখেছেন, ‘সৌন্দর্য, যত ক্ষণস্থায়ীই হোক না কেন, তা পবিত্রতার প্রতিবিম্ব।’ এই বিশ্বাসই লাসলো ক্রাসনাহোরকাইকে সেই বিরল লেখক করে তুলেছে, যাঁর নৈরাশ্যও মুক্তির মতো দীপ্ত।

হাঙ্গেরির ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই এবার (২০২৫ সালে) সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন তাঁর দীর্ঘ, দার্শনিক বাক্য ও মানবজীবনের বিশৃঙ্খলার গভীর অনুসন্ধানী সাহিত্যকর্মের জন্য। সুইডিশ একাডেমি তাঁকে সম্মান জানিয়েছে ‘শিল্পের শক্তিকে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করার’ জন্য। লেখক সুসান সনটাগ অবশ্য তাঁকে একসময় ‘মহাপ্রলয়ের হাঙ্গেরিয়ান গুরু’ আখ্যা দিয়েছিলেন।
সাহিত্যজগতে অনেকের কাছে ক্রাসনাহোরকাইয়ের নোবেল পাওয়ার এই ঘোষণাটি যেন কয়েক দশক ধরে চলা একটি বাক্যের সমাপ্তি।
১৯৫৪ সালে হাঙ্গেরির ছোট শহর জিউলা-তে জন্ম নেওয়া ক্রাসনাহোরকাই ১৯৮০-এর দশকের শুরুতে গল্প লেখা শুরু করেন। তাঁর প্রথম উপন্যাস স্যাটানট্যাঙ্গো (১৯৮৫) একটি বৃষ্টিস্নাত, ধ্বংসপ্রায় গ্রামের কাহিনি—যেখানে প্রতারক, মাতাল ও হতাশ মানুষেরা মিথ্যা আশায় আঁকড়ে থাকে। পরিচালক বেলা-তার তাঁর এই উপন্যাসটিকে দীর্ঘ ৭ ঘণ্টার এক সাদাকালো চলচ্চিত্রে রূপ দেন। এই বইতেই ধরা পড়ে ক্রাসনাহোরকাইয়ের লেখার বৈশিষ্ট্যসমূহ, যেমন—অবিরাম দীর্ঘ বাক্য, দার্শনিক হাস্যরস ও পতনের কিনারায় দাঁড়িয়ে থাকা মানুষের প্রতিচ্ছবি।
তাঁর পরবর্তী উপন্যাসগুলো—দ্য মেলানকোলি অব রেজিস্ট্যান্স (১৯৮৯), ওয়ার অ্যান্ড ওয়ার (১৯৯৯) ও সেইবো দেয়ার বিলো (২০০৮)—তাঁর এই দৃষ্টিভঙ্গিকে মহাজাগতিক পরিসরে বিস্তৃত করেছে। ‘ওয়ার অ্যান্ড ওয়ার’–এ তিনি এক নথি প্রহরীর গল্প বলেছেন, যিনি রহস্যময় এক পাণ্ডুলিপি প্রকাশ করতে নিউইয়র্কে পালিয়ে যান এবং আত্মহত্যা করেন—যেন ক্রম বিলীন পৃথিবীতে অর্থ ধরে রাখার এক মরিয়া চেষ্টা তাঁর।
ক্রাসনাহোরকাইয়ের লেখায় কাহিনি প্রায় সময়ই বাক্যের ভেতর হারিয়ে যায়। তিনি লিখেছেন এমন বাক্য, যা একাধিক পৃষ্ঠা জুড়ে পাঠককে টেনে নেয় অবচেতনে, অবিরাম প্রবাহে।
তাঁর সাহিত্যে হাস্যরস ও ট্র্যাজেডি পাশাপাশি চলে। স্যাটানট্যাঙ্গো–এর মাতাল নাচের দৃশ্য যেমন নিঃশেষের প্রতীক, তেমনি ‘ব্যারন ওয়েঙ্কহাইমস হোমকামিং’ (২০১৬)-এ দেখা যায়, ফিরে আসা এক পরাজিত অভিজাতকে। যার মাধ্যমে প্রকাশ পায় সভ্যতার পচন ও মানুষের হাস্যকর ভ্রান্তি।
২০১৫ সালে ম্যান বুকার পুরস্কার পাওয়ার মধ্য দিয়েই প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পান ক্রাসনাহোরকাই। অনুবাদক জর্জ সির্টেস ও ওটিলি মুলজেট তাঁর জটিল হাঙ্গেরিয়ান ভাষাকে ইংরেজিতে রূপ দিতে বিশেষ ভূমিকা রাখেন। ‘হাডসন রিভিউ’ তাঁকে বর্ণনা করেছিল ‘অন্তহীন বাক্যের ভ্রমণশিল্পী’ হিসেবে।
চল্লিশ বছরের সৃষ্টিতে ক্রাসনাহোরকাইয়ের ভুবন চিত্র, সংগীত, দর্শন ও ভাষার মিলনে বিস্তৃত। সাম্প্রতিক উপন্যাস ‘হার্শট ০৭৭৬৯’ (২০২৪)–এ তিনি এক প্রবাহিত বাক্যে লিখেছেন নব্য-নাৎসি, নেকড়ে আর এক হতভাগ্য পদার্থবিদের কাহিনি—আধুনিক ইউরোপের নৈতিক পক্ষাঘাতের রূপক হিসেবে।
তাঁর সমগ্র সাহিত্যজগৎ এক অন্ধকার ও ধ্যানমগ্ন মহাবিশ্ব—যেখানে পতন, শূন্যতা ও করুণা পাশাপাশি থাকে। ‘সেইবো দেয়ার বিলো’ বইটিতে তিনি লিখেছেন, ‘সৌন্দর্য, যত ক্ষণস্থায়ীই হোক না কেন, তা পবিত্রতার প্রতিবিম্ব।’ এই বিশ্বাসই লাসলো ক্রাসনাহোরকাইকে সেই বিরল লেখক করে তুলেছে, যাঁর নৈরাশ্যও মুক্তির মতো দীপ্ত।

সাম্প্রতিক কালে রবীন্দ্রনাথ ও রবীন্দ্রসাহিত্য কতখানি প্রাসঙ্গিক—এ রকম একটি প্রশ্ন কেউ কেউ তুলতে চান, তুলেও থাকেন। সাহিত্যের দীক্ষিত পাঠক থেকে শুরু করে অদীক্ষিত শখের পাঠকও দ্বিধান্বিত হয়ে পড়েন—আদতেই রবীন্দ্রনাথ কিংবা রবীন্দ্রসাহিত্যের ‘দরকার’ আছে কি না! প্রশ্নটি অথবা প্রশ্নগুচ্ছে জড়িয়ে থাকে প্রায়োগিক
০৫ আগস্ট ২০২২
জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল।
৬ দিন আগে
জনপ্রিয় কিশোর গোয়েন্দা সিরিজ তিন গোয়েন্দার স্রষ্টা রকিব হাসান মারা গেছেন। আজ বুধবার রাজধানীর একটি হাসপাতালে ডায়ালাইসিস চলাকালে তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।
১১ দিন আগে
হাঙ্গেরির সাহিত্যে অসীম জনপ্রিয়তা ও প্রভাব তাঁর; বিশ্বজোড়া আতঙ্ক ও সন্ত্রাসের দাপটেও শিল্পের শক্তি চেনায় তাঁর কলম। তিনি হাঙ্গেরিয়ান ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই; সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০২৫ সালে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।
১৭ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

হাঙ্গেরির সাহিত্যে অসীম জনপ্রিয়তা ও প্রভাব তাঁর; বিশ্বজোড়া আতঙ্ক ও সন্ত্রাসের দাপটেও শিল্পের শক্তি চেনায় তাঁর কলম। তিনি হাঙ্গেরিয়ান ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই; সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০২৫ সালে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।
আধুনিক হাঙ্গেরীয় সাহিত্যের একজন অন্যতম প্রধান ব্যক্তিত্ব লাসলো। অভিনব শৈলীর পাশাপাশি দার্শনিক গভীরতার জন্য তাঁর সাহিত্য সমাদৃত হয়েছে। তাঁকে ফ্রানৎস কাফকা ও স্যামুয়েল বেকেটের ঐতিহ্যের উত্তরাধিকারী হিসেবে বিবেচনা করা হয়। বিশ্বজোড়া আতঙ্ক ও সন্ত্রাসের মধ্যেও শিল্পের লেলিহান ঔজ্জ্বল্য ফুটে ওঠে লাসলোর লেখায়। তাই যুদ্ধবিধ্বস্ত সময়ের বুকে ফুলের মতো স্থান করে নিল তাঁর সাহিত্য।
লাসলোর জন্য সাহিত্যে এটা প্রথম পুরস্কার নয়, ২০১৪ সালে সাহিত্যকর্মের জন্য ম্যান বুকার ইন্টারন্যাশনাল পুরস্কার পান তিনি। এ পুরস্কার বিশ্বসাহিত্যে তাঁর অবস্থানকে সুদৃঢ় করে।
লাসলোর সাহিত্যের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো—স্বতন্ত্র শৈলী ও গঠন। উপন্যাসের মূল বিষয়বস্তু হলো—মানবতার অবক্ষয়, ধ্বংসের অনিবার্যতা ও আধুনিক জীবনের লক্ষ্যহীন চলন। তাঁর চরিত্রদের মধ্যে প্রায়ই একধরনের হতাশা ও বিচ্ছিন্নতা দেখা যায়; তারা এমন এক জগতের পথিক, যেখানে নৈতিকতা ও আশা বিলীনপ্রায়।
১৯৮৫ সালে প্রকাশিত ‘স্যাটানটাঙ্গো’ নামে প্রথম উপন্যাস লিখেই খ্যাতি পান লাসলো। এই উপন্যাসে বিচ্ছিন্ন ও পতিত এক কৃষি সমবায় গ্রামের জীবন তুলে ধরেছেন তিনি। সেখানে একধরনের বিভ্রম ও আশার জন্ম দেয় এক রহস্যময় আগন্তুকের আগমনে। এই উপন্যাস অবলম্বনে একই শিরোনামে সাত ঘণ্টার কালজয়ী চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন বিখ্যাত পরিচালক বেলা টর।
লাসলোর আরেকটি ফিকশন উপন্যাস হলো— ‘দ্য মেলানকোলি অব রেজিস্ট্যান্স’। হাঙ্গেরির এক কাল্পনিক শহরের জীবন ফুটে উঠেছে এই উপন্যাসে। সামুদ্রিক প্রাণী হাঙরের প্রদর্শনীকে কেন্দ্র করে মানুষের মধ্যকার উন্মাদনা, সামাজিক বিশৃঙ্খলা ও একনায়কতন্ত্রের উত্থানের চিত্র আঁকা হয়েছে তাতে।
‘ওয়ার অ্যান্ড ওয়ার’ লাসলোর আরেকটি বিখ্যাত উপন্যাস। লম্বা লম্বা বাক্যে লেখা এই উপন্যাস লাসলোর শৈলী নিয়ে পাঠকদের নতুন করে ভাবায়। উপন্যাসের নায়ক একটি পাণ্ডুলিপি রক্ষা করার জন্য বিশ্বের বিভিন্ন শহর ঘুরে বেড়ায়। বিশ্বের চূড়ান্ত ধ্বংসের একটি কাব্যিক বর্ণনা পাওয়া যায় এই উপন্যাসে।
এবার লাসলোকে পুরস্কারের জন্য মনোনীত করার নেপথ্যে নোবেল কমিটির বড় কারণ ছিল তাঁর সাহিত্যে শিল্পের জয়ধ্বনি তোলার প্রচেষ্টা। যখন সারা বিশ্বের বেশ কিছু দেশ যুদ্ধবিধ্বস্ত বা যুদ্ধের জন্য উৎসুক, তখন বারবার শিল্পের মোহিনী প্রেম ও বন্ধনের কথা মনে করিয়ে দিতে চায় লাসলোর সাহিত্য।

হাঙ্গেরির সাহিত্যে অসীম জনপ্রিয়তা ও প্রভাব তাঁর; বিশ্বজোড়া আতঙ্ক ও সন্ত্রাসের দাপটেও শিল্পের শক্তি চেনায় তাঁর কলম। তিনি হাঙ্গেরিয়ান ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই; সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০২৫ সালে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।
আধুনিক হাঙ্গেরীয় সাহিত্যের একজন অন্যতম প্রধান ব্যক্তিত্ব লাসলো। অভিনব শৈলীর পাশাপাশি দার্শনিক গভীরতার জন্য তাঁর সাহিত্য সমাদৃত হয়েছে। তাঁকে ফ্রানৎস কাফকা ও স্যামুয়েল বেকেটের ঐতিহ্যের উত্তরাধিকারী হিসেবে বিবেচনা করা হয়। বিশ্বজোড়া আতঙ্ক ও সন্ত্রাসের মধ্যেও শিল্পের লেলিহান ঔজ্জ্বল্য ফুটে ওঠে লাসলোর লেখায়। তাই যুদ্ধবিধ্বস্ত সময়ের বুকে ফুলের মতো স্থান করে নিল তাঁর সাহিত্য।
লাসলোর জন্য সাহিত্যে এটা প্রথম পুরস্কার নয়, ২০১৪ সালে সাহিত্যকর্মের জন্য ম্যান বুকার ইন্টারন্যাশনাল পুরস্কার পান তিনি। এ পুরস্কার বিশ্বসাহিত্যে তাঁর অবস্থানকে সুদৃঢ় করে।
লাসলোর সাহিত্যের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো—স্বতন্ত্র শৈলী ও গঠন। উপন্যাসের মূল বিষয়বস্তু হলো—মানবতার অবক্ষয়, ধ্বংসের অনিবার্যতা ও আধুনিক জীবনের লক্ষ্যহীন চলন। তাঁর চরিত্রদের মধ্যে প্রায়ই একধরনের হতাশা ও বিচ্ছিন্নতা দেখা যায়; তারা এমন এক জগতের পথিক, যেখানে নৈতিকতা ও আশা বিলীনপ্রায়।
১৯৮৫ সালে প্রকাশিত ‘স্যাটানটাঙ্গো’ নামে প্রথম উপন্যাস লিখেই খ্যাতি পান লাসলো। এই উপন্যাসে বিচ্ছিন্ন ও পতিত এক কৃষি সমবায় গ্রামের জীবন তুলে ধরেছেন তিনি। সেখানে একধরনের বিভ্রম ও আশার জন্ম দেয় এক রহস্যময় আগন্তুকের আগমনে। এই উপন্যাস অবলম্বনে একই শিরোনামে সাত ঘণ্টার কালজয়ী চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন বিখ্যাত পরিচালক বেলা টর।
লাসলোর আরেকটি ফিকশন উপন্যাস হলো— ‘দ্য মেলানকোলি অব রেজিস্ট্যান্স’। হাঙ্গেরির এক কাল্পনিক শহরের জীবন ফুটে উঠেছে এই উপন্যাসে। সামুদ্রিক প্রাণী হাঙরের প্রদর্শনীকে কেন্দ্র করে মানুষের মধ্যকার উন্মাদনা, সামাজিক বিশৃঙ্খলা ও একনায়কতন্ত্রের উত্থানের চিত্র আঁকা হয়েছে তাতে।
‘ওয়ার অ্যান্ড ওয়ার’ লাসলোর আরেকটি বিখ্যাত উপন্যাস। লম্বা লম্বা বাক্যে লেখা এই উপন্যাস লাসলোর শৈলী নিয়ে পাঠকদের নতুন করে ভাবায়। উপন্যাসের নায়ক একটি পাণ্ডুলিপি রক্ষা করার জন্য বিশ্বের বিভিন্ন শহর ঘুরে বেড়ায়। বিশ্বের চূড়ান্ত ধ্বংসের একটি কাব্যিক বর্ণনা পাওয়া যায় এই উপন্যাসে।
এবার লাসলোকে পুরস্কারের জন্য মনোনীত করার নেপথ্যে নোবেল কমিটির বড় কারণ ছিল তাঁর সাহিত্যে শিল্পের জয়ধ্বনি তোলার প্রচেষ্টা। যখন সারা বিশ্বের বেশ কিছু দেশ যুদ্ধবিধ্বস্ত বা যুদ্ধের জন্য উৎসুক, তখন বারবার শিল্পের মোহিনী প্রেম ও বন্ধনের কথা মনে করিয়ে দিতে চায় লাসলোর সাহিত্য।

সাম্প্রতিক কালে রবীন্দ্রনাথ ও রবীন্দ্রসাহিত্য কতখানি প্রাসঙ্গিক—এ রকম একটি প্রশ্ন কেউ কেউ তুলতে চান, তুলেও থাকেন। সাহিত্যের দীক্ষিত পাঠক থেকে শুরু করে অদীক্ষিত শখের পাঠকও দ্বিধান্বিত হয়ে পড়েন—আদতেই রবীন্দ্রনাথ কিংবা রবীন্দ্রসাহিত্যের ‘দরকার’ আছে কি না! প্রশ্নটি অথবা প্রশ্নগুচ্ছে জড়িয়ে থাকে প্রায়োগিক
০৫ আগস্ট ২০২২
জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল।
৬ দিন আগে
জনপ্রিয় কিশোর গোয়েন্দা সিরিজ তিন গোয়েন্দার স্রষ্টা রকিব হাসান মারা গেছেন। আজ বুধবার রাজধানীর একটি হাসপাতালে ডায়ালাইসিস চলাকালে তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।
১১ দিন আগে
হাঙ্গেরির ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই এবার (২০২৫ সালে) সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন তাঁর দীর্ঘ, দার্শনিক বাক্য ও মানবজীবনের বিশৃঙ্খলার গভীর অনুসন্ধানী সাহিত্যকর্মের জন্য। সুইডিশ একাডেমি তাঁকে সম্মান জানিয়েছে ‘শিল্পের শক্তিকে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করার’ জন্য।
১৭ দিন আগে