প্রশান্ত মৃধা

উনিশে বিধবা মেয়ে কায়ক্লেশে উনতিরিশে এসে
গর্ভবতী হলো, তার মোমের আলোর মতো দেহ
কাঁপালো প্রাণান্ত লজ্জা, বাতাসের কুটিল সন্দেহ
সমস্ত শরীরে মিশে, বিন্দু বিন্দু রক্ত অবশেষে
যন্ত্রণার বন্যা এলো, অন্ধ হলো চক্ষু, দশ দিক,
এবং আড়ালে বলি, আমিই সে সুচতুর গোপন প্রেমিক।
দিবাসার্ধ পায়ে হেঁটে ফিরি আমি জীবিকার দাসত্ব-ভিখারি
ক্লান্ত লাগে সারা রাত, ক্লান্তি যেন অন্ধকার নারী।
একদা অসহ্য হলে বাহুর বন্ধনে পড়ে ধরা
যন্ত্রণায় জর্জরিতা দুঃখিনী সে আলোর স্বরূপে
মাংসের শরীর তার শুভক্ষণে সব ক্লান্তিহরা
মন্ডুকের মতো আমি মগ্ন হই সে কন্দর্প-কূপে।
তার সব ব্যর্থ হলো, দীর্ঘশ্বাসে ভরালো পৃথিবী
যদিও নিয়মনিষ্ঠা, স্বামী নামে স্বল্প চেনা লোকটির ছবি
শিয়রেতে ত্রুটিহীন, তবু তার দুই শঙ্খ স্তনে
পূজার বন্দনা বাজে আ-দিগন্ত রাত্রির নির্জনে।
সে তার শরীর থেকে ঝরিয়েছে কান্নার সাগর
আমার নির্মম হাতে সঁপেছে বুকের উপকূল,
তারপর শান্ত হলে সুখে-দুঃখে কামনার ঝড়
গর্ভের প্রাণের বৃন্তে ফুটে উঠলো সর্বনাশ-ফুল।
বাঁচাতে পারবে না তাকে ঊনবিংশ শতাব্দীর বীরসিংহ শিশু
হবিষ্যান্নপুষ্ট দেহ ভবিষ্যের ভারে হলো মরণসম্ভবা
আফিম, ঘুমের দ্রব্য, বেছে নেবে আগুন, অথবা
দোষ নেই দায়ে পড়ে যদি-বা ভজনা করে যীশু।
[বিবৃতি, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়]
এমন না যে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের বহুখ্যাত আর আবৃত্তি উপযোগী কবিতা হিসেবে এই কবিতাটি কখনো শুনেছিলাম। কেউ কখনো বলেওনি এই কবিতাটির কথা। তখন পর্যন্ত পড়িনি, যত দিন না তাঁর শ্রেষ্ঠ কবিতার সংকলনটি হাতে এসেছে। হাতে এলেও যে পৃষ্ঠা উলটেই এটি পড়ার কথাও না, যতই এই বইয়ের দ্বিতীয় কবিতা হোক। বরং, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের শ্রেষ্ঠ কবিতার বাংলাদেশি সংস্করণটি প্রথম যেদিন হাতে নিয়েছিলাম, সেদিন প্রথমেই পড়েছিলাম অনেকের আবৃত্তির কারণে বহুদিন ধরে শোনা কবিতাগুলোই। তার একটি একটি ওলটাই আর পড়ি। ‘কেউ কথা রাখেনি’। নিজের তেত্রিশ বছর বয়স তখন অনেক দূরে, প্রায় অর্ধেক বয়স তখন, কিন্তু পড়ার ভেতর দিয়ে সেই বয়সের ভার ও এর দীর্ঘশ্বাস কিছু বুঝে নিতে চাই। যেমন, ‘কবির মৃত্যু: লোরকা স্মরণে’ এক অর্থে লোরকাকে ভালোমতো চিনে ওঠার আগেই পড়া। ‘খুনঝরা বিয়ে’ নামক লোরকার বিশ্বখ্যাত নাটকটির একটি অনুবাদ একটুখানি পড়তে পড়তে বইটি হাতছাড়া হয়ে গেছে, তাই তাঁর নাম জানি, কিন্তু তাঁর কবি ও নাট্যকার পরিচয়ের ধাঁধা তাতে তেমন কাটেনি। পাবলো নেরুদার সঙ্গে তাঁর নামসহ উচ্চারিত, কিন্তু বাড়িঘর স্পেনে কি লাতিন আমেরিকার কোনো দেশে সে হিসেবে সব সময় ঠিক থাকে না, তালগোল পাকিয়ে যায়। কিন্তু একবার শুনে মনে থাকে এই কবিতার দুটো পঙ্ক্তি, দুজন খসখসে সবুজ উর্দিপরা সিপাহি টানতে টানতে কবিকে নিয়ে গেল। তাঁর মৃত্যু মুহূর্তে সমাবেশের পেছন থেকে একজন ছাত্র একটি লম্বা লোককে বলল, ‘মাথাটা পকেটে পুরুন দাদা!’ তখন কোনো ভিড়ে সামনে দীর্ঘদেহী কোনো মানুষ সামনে থাকলে পঙ্ক্তিটি খুব মনে পড়ত। আর, নির্বাসন দিলে সুনীলের চাই সাড়ে তিন হাত জমি কিংবা ‘ইন্দিরা গান্ধীর প্রতি’ কবিতায় ইন্দিরার মতো লৌহমানবীকে যখন দুষ্টুমিভরে লক্ষ্মীমেয়ে বলে বিমানের জানালা থেকে জলপাইগুড়ির বন্যা দেখে যদি তিনি অস্ফুট বলে বসেন বাঃ কী সুন্দর! সুনীল লিখেছেন, ‘তোমার শুকনো ঠোঁট, কত দিন সেখানে চুম্বনের দাগ পড়েনি’—এমন পঙ্ক্তি খুব মনে থাকে। এগুলোর কোনো কোনোটিতে বয়সজনিত ভালো লাগা লেগে আছে বুঝতে পারি, ওই প্রায় একবার শোনায় মনে থাকার আর কী কারণ থাকতে পারে? যদিও শ্রেষ্ঠ কবিতার পৃষ্ঠা ওলটাতে ওলটাতে কোনো নবীন কিশোরকে যে ভুবনডাঙার মেঘলা আকাশ দেওয়ার আকাঙ্ক্ষা যেখানে তীব্র সেই কবিতাটির কাছে যেন ঘটে খুব সহজ এক প্রবেশাধিকার। কিন্তু তখনো পর্যন্ত কে কোনোভাবে একটু মনোযোগে রবীন্দ্রনাথ পড়েছি? জীবনানন্দ দাশের ‘বনলতা সেন’সহ আরও কিছু কবিতা, তার চেয়ে বরং চুল তার কবেকার অন্ধকার—এমন ধ্বনির অনুপ্রাসঘটিত সাম্যেই তা বারবার উচ্চারিত। তা-ও বনলতা সেনকে নিয়ে, এই কল্পিত নায়িকার খোঁজ নিয়ে, জীবনানন্দ দাশের জীবনে নারী নিয়ে উৎসাহের শেষ নেই। যেমন, ওই সময়ে খ্যাতির গনগনে আকাশে থাকা সুনীল-শক্তি ও তাঁদের অন্য কবিতা সহযাত্রীদের জীবনে নারী প্রসঙ্গও তাই তাঁদের কবিতা পড়ার উৎসাহের পাশে খুব ভর করে। ফলে, নীরা ও নীরাসংক্রান্ত কবিতাগুলোর ভেতর দিয়ে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের জীবনে নারী ইত্যাদি বিষয় সেই সব নিজস্ব বৃত্তের আলোচনা তার কাব্যপাঠে জায়গা পায়। শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের কবিতায় তেমন ‘নায়িকা’ নেই, নেই শঙ্খ ঘোষে, যদিও তাঁর ‘যমুনবতী’—সেই শোনা ও পড়ার জগতের খুব প্রিয় কবিতা।
ফলে, এই পরিমণ্ডলে, এই কাব্য পাঠের জায়গায়, এই সচল আয়তনে, এই নিজস্ব বৃত্তে, বইটার ওপর মাঝবয়সী সুনীলের ছবি দেখে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়কে পড়ে নিতে নিতে, সেখানে নিখিলেশের কাছে পেচ্ছাপ আর কান্নার মিল খোঁজা নিয়ে এই অনাকাঙ্ক্ষিত মানব জন্ম, কিংবা বন্ধু নিখিলেশের মতনই এক নারী নীরা যার কাছে মন ভালো নেই বলা যায়, যে নারীর মন খারাপ হলে কলকাতা নগরীর মন খারাপকে মিলিয়ে নিজের মন খারাপের চৌহদ্দি নির্মিত হয়। সেখানে একেবারে শুরুর দিককার সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের একটি কবিতা ‘বিবৃতি’ কোনোভাবেই চোখে পড়েনি। চোখে পড়ার কথা নয়। এতক্ষণ তাই জানালাম যে চোখে পড়ার আগে কানে শোনার এক ভার তৈরি হয়ে গিয়েছিল, সেটাকেই হাতে আসা বইয়ের পৃষ্ঠায় মিলিয়ে, স্থিরীকৃত আগ্রহকে যেন বইয়ের পৃষ্ঠায় সঙ্গে প্রত্যক্ষ আর নিজের স্মৃতিধার্যতার সঙ্গে পরোক্ষে মিলিয়ে নেওয়াই আসল উদ্দেশ্য। সে কাজটি সারি। নিজের পড়ার ভেতর দিয়ে আবিষ্কারের যে যাত্রা তা কোনোভাবেই এর ভেতর দিয়ে সম্পন্ন হয় না। হওয়ার কথা নয়। নিজের স্থানান্তর ইত্যাদি কারণে প্রথম দেখা সেই শ্রেষ্ঠ কবিতাটি তখন হাতছাড়া হয়ে গেছে।
কিন্তু এরপর, হয়তো একেবারে নির্দিষ্ট করে ভাবিনি সেই মুহূর্তেই আবার পড়ব সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের কবিতা। অথবা, সংকলনভুক্ত শ্রেষ্ঠ কবিতা। ‘দেশ’সহ অন্যান্য পত্রিকায় তাঁর নতুন কবিতা পড়ি। কবিতায় কাহিনিকথনে অসামন্যে হাত তাঁর। অত অল্প জায়গায় একটি পূর্ণাঙ্গ গল্পই যেন পড়া হয়। যা তাঁর কবিতার এক চিরকালীন স্বভাব, অথবা মুদ্রাগুণ। কিন্তু তাতেও তাঁর সেই সব সাম্প্রতিক কবিতা পাঠে কোনোভাবে আগেকার কবিতার কোনোটির বিস্মৃতি ঘটে না। এমনকি এই সাম্প্রতিকের কোনোটি প্রায় স্মৃতিতে হানাও দেয় না, কেননা তা স্মৃতিতে জায়গা পায় না। ফলে, নিজের কাছে এই সাম্প্রতিক সুনীল নতুন কবিতা নিয়েও পুরোনো কবিতায়ই যেন অস্তিত্বশীল। এমন একটা সময়ে যখন দে’জ প্রকাশিত তাঁর শ্রেষ্ঠ কবিতা হাতে এল তখন একেবারে শুরু থেকে, শুরু বলতে শুরুই, যেন সূচি থেকেই পড়ার এক প্রয়াসে দেখি প্রথম কাব্য 'একা এবং কয়েকজন', যে নামে তাঁর একটি উপন্যাস—কাহিনিগদ্যের সচল চলমানতায় পড়েছি—সে-কাব্যের ছয়টি কবিতা গ্রন্থিত 'শ্রেষ্ঠ কবিতা'য়। মূল বইটি আজও দেখিনি, কিন্তু হিসাব মেলাই, এই বইয়ের কবিতা মাত্র ছয়টি কিন্তু পরের বই ‘আমি কীরকমভাবে বেঁচে আছি’র এতগুলো! প্রথমটির প্রকাশ সাল ১৩৬৫, দ্বিতীয়টির ১৩৭২—সাত বছরে কবির পরিণত হাতের আত্মবিশ্বাস! সেখানে আছে, ‘হঠাৎ নীবার জন্য’, ‘আমি কীরকমভাবে বেঁচে আছি’, ‘এই হাত ছুঁয়েছিল’—এইভাবে ভাবি। এই তুলনায় শ্রেষ্ঠ কবিতায় ‘একা এবং কয়েকজন’ এর প্রথম কবিতা ‘প্রার্থনা’ পড়ে পৃষ্ঠা উলটে ‘বিবৃতি’তে গিয়ে চোখ থমকায়। এ যেন আমারই জানা জগতের গল্প। সেই জানা জগতের বাস্তব এখানে মিলেমিশে বেশ থমকে আছে। হয়তো কবির বয়ানের ‘আমি’ এখানে আমি নই, কিন্তু এই গোপন প্রেমিক ‘আমি’কে চিনি আমি।
এক নিশ্বাসে কবিতাটা আবার পড়ি। যেকোনো লেখা পাঠে যে জিনিসটি যেকোনো পাঠকের ক্ষেত্রে সবচেয়ে তীব্রভাবে ঘটে, তা হলো, যদি কবিতায় বা কাহিনিতে নিজের জীবনের অভিজ্ঞতাকে কি চেনা জগৎকে খুব কাছ থেকে দেখা যায়, আর অন্যদিক দিয়ে যদি ওই লেখা এক অনন্ত রহস্যের ভেতর দিয়ে নিয়ে যায়, যে রহস্য কোনোভাবেই নিজের কাছে সমাধানযোগ্য নয়—কল্পনায় সেই রহস্যকে এক কল্পিত সমাধান দেওয়ার মধ্যে ওই লেখা বারবার পড়া। পড়ে নিতে নিজের ভেতরে আরও একটি কখনো স্পষ্ট কখনো অস্পষ্ট জগৎ তৈরি হয়। যেমন, এই মুহূর্তে কবিতা হিসেবে রবীন্দ্রনাথের ‘স্বপ্ন’ কিংবা জীবনানন্দ দাশের ‘বনলতা সেন’কে ভেবে নিতে পারি।
‘বিবৃতি’ পড়ার প্রায় সঙ্গে সঙ্গে নিজের কাছে এক পরিচিত জগতের বিবৃতিময় বয়ান মনে হলো। মনে হলো, এই যে একটি বিধবা মেয়ের অন্ধকারাচ্ছন্ন জগতের কথা বলছেন কবি, এমন জগৎ আমার চেনা। খুব কাছ থেকে না হলেও, একটু দূর থেকে হলেও তার চলাচলকে জেনেছি। যে বয়সে জেনেছি, যখন দেখেছি, তখন তাকে ভেবে উঠতে পারিনি, কোনো কিছুর সঙ্গে মিলিয়ে নিতে পারিনি, কিন্তু আজ এ কথা সেই জানা অতীতকে এই মুহূর্তে আগেকার দেখার অভিজ্ঞতার সঙ্গে ক্ষণমাত্র অপেক্ষা না করেই মিলিয়ে নিতে পারলাম।
পড়ি: ‘উনিশে বিধবা মেয়ে কায়ক্লেশে উনতিরিশে এসে/গর্ভবতী হলো, তার মোমের আলোর মতো দেহ’। আমি মেলাই। তিনজন বিধবাকে দেখেছি খুব কাছ থেকে। একেবারে শৈশব ও বাল্যে আর কৈশোরেও। একজন বালবিধবা, বিয়ে হয়েছিল শৈশবে। কোন্ সুদূর অতীত তার বিয়ে হয়েছিল, তিনি নিজেই তা মনে করতে পারেন না। তারপর সেই শৈশব কি বাল্য কৈশোরকে ছুঁতে না ছুঁতেই তিনি বিধবা হন। তখন তিনি বাপের বাড়ি। সংবাদ শুনে এসে স্বামীর মৃতদেহ দেখেছিলেন। সধবা থেকে বিধবার বেশ ধরেছিলেন, আর এরপর আর কোনো দিন ফিরে যাননি বাপের বাড়ি। স্বামীর বাড়ি, শ্বশুরবাড়িতে দেওর ও দেওরপোর সংসারে সারাটা জীবন কাটিয়ে দিয়েছেন। সম্পর্কে আমার মায়ের এক ঠাকুমা। যখন দেখেছি তাঁকে, তাঁর তখন শেষজীবন। তাঁর সম্পর্কে যা জেনেছি, সবাই মা ও দিদিমার কাছ থেকে। কোনো দিন আর বিয়ের তো প্রশ্নই ওঠেনি, বাপের বাড়িতে ফিরে যাওয়াও সম্ভব। এই ভাবে সারাটা জীবন কাটিয়ে দিয়েছেন। তাঁর সেই শেষ জীবনে, এক প্যাঁচে পরা সাদা শাড়ি পেঁচানো শরীর, মুখে হাসি—সবই মনে করতে পারি। কিন্তু বোঝার বয়সে তাঁর সারাটা জীবনব্যাপী কষ্টের কোনো সীমা-পরিসীমা এই শোনায় সত্যি নিজের মধ্যে কল্পনা করে উঠতে পারি না। শুনে, শিউরেও ওঠা সম্ভব নয়। কিন্তু ‘বিবৃতি’ পাঠমাত্রই ওই জায়গাটুকু, যেখানে একজন বিধবা মেয়ের শরীরী বর্ণনায় জানাচ্ছেন সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, ‘তার মোমের আলোর মতো দেহ’—উপমার এই জায়গাটা খুব চোখে আটকাল। ওই সেই, প্রায় আজ থেকে এক শতকের বেশি আগে জন্মানো ওই নারীর শরীরের বর্ণের সঙ্গে মোমের আলোর রং খুব মেলে। পড়ামাত্র সেটুকু কল্পনা করে নিতে নিজের ক্ষেত্রে কোনো প্রকার আয়াসের প্রয়োজন হলো না। কেননা, জীবনে তিনিই আমার দেখা প্রথম বিধবা। কিন্তু শোনা কথার সঙ্গে মেলানো অভিজ্ঞতায় তার সঙ্গে আর তো কিছুই মেলে না। সেই নারী তাঁর সেই রূপ নিয়ে চলে গেছেন দূরে। কল্পনায় শুধু তাঁর সব দুঃখের প্রদীপকে জ্বলতে দেখি। আর কী?
কিন্তু, পাঠক তো কত কিছুকেই একসঙ্গে মেলায়। মিলিয়ে কল্পনার প্রয়োজনীয় জগৎ তৈরি করে। সেই কল্পনা কোনোক্রমেই যদি না মেলে রচয়িতার কোনোমতে চিন্তার সঙ্গে, তাতে তাঁর কোনো বাধকতা নেই, দায়ও নেই। ফলে চেনা জগৎকে বিস্তৃত করে মিলিয়ে নিলাম। যখন পড়ি: ‘কাঁপালো প্রাণান্ত লজ্জা, বাতাসে কুটিল সন্দেহ,/সমস্ত শরীরে মিশে, বিন্দু বিন্দু রক্ত অবশেষে/যন্ত্রণার সমস্ত বন্যা এলো, অন্ধ হলো চক্ষু, দশ দিক,/এবং আড়ালে বলি, আমি সে সুচতুর গোপন প্রেমিক।’ এই, ‘এবং অবশেষে আড়ালে বলি, আমি সে সুচতুর গোপন প্রেমিক।’ —এই পঙ্ক্তিতে এসে সে মেলানো জগতের হিসাবটা নিজের কাছে অন্যভাবে উলটে গেল যেন। আরও দুজন বিধবাকে মনে পড়ল আমার, এই পঙ্ক্তি পাঠমাত্র। এমন তো নয়, এই তিনজন ছাড়া আর বিধবা দেখিনি জীবনে। কিন্তু সেই জানা ও দেখা এই পাঠের সঙ্গে কোনোভাবে কোনোক্রমে প্রাসঙ্গিক নয়। এই পাঠের সঙ্গে প্রাসঙ্গিক বলেই বাকি দুজনের কথা মনে এল। কিন্তু মোমের আলোর মতো শরীরেও তাঁরা প্রাসঙ্গিক ছিলেন না। তাঁদের একজন, আমার এক আত্মীয় বাড়ির প্রতিবেশিনী। কিশোরী বয়সে বিধবা। একটি ছেলে, ছেলেটি কথা শেখার আগেই তার বাবা মরেছে। আত্মীয়বাড়িতেই থাকতেন তিনি। কখনো ছেলেসহ, কখনো একলা। তবে তার ঊন্তিরিশ বছর বয়সেই তাঁর ছেলে নিজেদের বাড়িতে একলা থাকে। প্রয়োজনে মায়ের সঙ্গে দেখা করতে আসে। অন্যজনকেও একই বাড়িতে দেখা। একই বয়সে তিনিও বিধবা। একটি মেয়ে আছে। এখানে কাজে এসেছে, অন্য শরীকি ঘরে। কাজে আসা বলতে গোটা সংসার সামলে রাখা। গৃহকর্তা সেখানে একলাই থাকেন। স্ত্রী-সন্তান দূরে, কখনো কখনো সেখানে যান। এই বিষয়সম্পত্তি আগলে রাখাই তাঁর কাজ। বয়স হয়েছে। এই নারীরা অথবা কন্যাসহ এই নারী একই সঙ্গে প্রায় গৃহকর্ত্রীর ভূমিকা পালন করবে, অঙ্কশায়িনী হবেন কর্তার। এমন রীতি প্রায় প্রকাশ্য। রাখঢাক ওপরে থাকলেও, সেই প্রকাশ্য অথচ গোপন ভেতরে ব্যবস্থা প্রায় তাই।
চারপাশ থেকে জানতে শুনতে জেনেছিলাম এই নারীদের একজন, ছেলেটি তার প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার আগেই গর্ভবর্তী হয়েছিল। সমাজের তো সেখানে রীতিবন্ধন বড় দৃঢ়। আঁটুনি বড় বজ্র, ভেতরের গেরো যত ফস্কাই হোক। তখন গৃহকর্তার সেই অনুপ্রবেশকে পড়ি: ‘একদা অসহ্য হলে বাহুর বন্ধনে পড়ে ধরা’। বুঝি এই বন্ধনে ধরা পড়ায় কোনো পিছুটান নেই। আপত্তি নেই। শরীর জড়িয়ে নিয়েছে তার মধ্যে প্রয়োজনীয় শরীরকে। এমন না যে, আশ্রিত তাই এই নারী বাধ্য। বরং, ওই নারীর শরীরই নিজের প্রয়োজনে সেখানে নিজের অর্গল খুলে দিয়েছে। হয়তো খুলে নিয়েছে একাধিক জায়গায় অক্লেশে, অন্তর্গত অনুমোদনে। সেখানে গৃহকর্তার সে ভঙ্গিকে ভেবে নিই: ‘মাংসের শরীর তার শুভক্ষণে সব ক্লান্তিহারা/মুণ্ডুকের মতো আমি মগ্ন হই সে কন্দর্প-কূপে’।
ফলে, সেই সমাজ যখন জানল, সব দোষ সেই নারীর। ওই গোপন অথচ প্রকাশ্য প্রেমিক তাকে তো বাধ্য করায় বা সে নিজেও বাধ্য ওই ‘শরীর থেকে’ ঝরিয়ে দিতে ‘কান্নার সাগর’। কেননা, ‘গর্ভের প্রাণের বৃত্তে’ ফুটে উঠছে ‘সর্বনাশা ফুল’। তাই স্বাভাবিক। সে কাজ যেন প্রকাশ্যেই প্রায় সমাধা হলো। যদি তা না-ই হবে, তাহলে আমার কান পর্যন্ত ঘটনা পৌঁছাল কীভাবে? ঘটনার প্রকাশ্য অবস্থা তো এই—সেই নারীর কিশোর ছেলেটি জেনেছিল সে কথা। এমনকি সেই গৃহকর্তার সন্তানেরাও। কিন্তু তাতে দিনে দিনে কোনো কিছুরই কোনো ব্যতিক্রম ঘটেনি। পরে, ধারণা করি, অথবা, যা জেনেছি, তাদের সম্পর্ক আবার একই জায়গায় পৌঁছেছিল। হয়তো তা-ই ছিল স্বাভাবিক।
‘বিবৃতি’র শেষাংশ তাই তাঁদের সঙ্গে মেলে না। কিন্তু একটি জায়গায় মেলে এই সব প্রায় বালবিধবাদের বা এরপরেরও, অথবা স্বামী পরিত্যক্তাদের ওই সমাজে এই জীবন থেকে তাঁদের বাঁচাতে পারেনি কেউ। জীবনে বেঁচে ছিলেন তাঁরা। একদিন মরেও গেছেন। কিন্তু, যে বীরসিংহশিশু ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের কথা বলা হয়েছে, তিনি এই প্রত্যন্ত পল্লি থেকে অনেক দূরে। সেখানে সংস্কারে কোনো উদ্যোগ কোনো দিন ছিল। আজও নেই। আমাদের জানা আছে, সেই সময়ের কারণেই শুধু নয়, বাঙালির উনিশশতকী সমাজ জাগরণের অংশ হিসেবে বিদ্যাসাগরের প্রতি সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের পক্ষপাত, সেটি এখানে বিষয়ও নয়, কিন্তু কবির বিবৃতিতে সেই কথা স্পষ্ট করা আর আমার কাছ মিলিয়ে নেওয়া যে এত চেষ্টা এত কিছুর পরও এই নারীরা ঈশ্বরচন্দ্রের মৃত্যুর অন্তত পঁচিশ কি পঞ্চাশ কি পঁচাত্তর বছর পরও সেই সমাজে সেখানে অনড়। গোপন প্রেমিকই একমাত্র ভরসা। ফলে যিশু যতই ভজনা করুক, লাভ নেই, কুমারী কি বিধবা মাতার স্থান নেই। সেখানে, ‘আফিম, ঘুমের দ্রব্য, বেছে নেবে আগুন’, অথবা যিশুর মতো সমাজের ক্রুশকাঠে বিদ্ধ হওয়া। ফলে, ‘তার সব ব্যর্থ হলো’ সে, ‘দীর্ঘশ্বাসে ভরালো পৃথিবী’।
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের তারুণ্যে লেখা ‘বিবৃতি’ পড়ে তাই নিজে উনিশে বিধবা মেয়ের উনতিরিশের গোপন প্রেমিক না হয়েও নিজের পরিপার্শ্বকে দেখে নিলাম। এই দেখাই হয়তো বারবার ওই কবিতা পড়ায়। আর, বহু দিন আগে দেখা সেই সব বিধবার মুখ চোখে ভাসে!

উনিশে বিধবা মেয়ে কায়ক্লেশে উনতিরিশে এসে
গর্ভবতী হলো, তার মোমের আলোর মতো দেহ
কাঁপালো প্রাণান্ত লজ্জা, বাতাসের কুটিল সন্দেহ
সমস্ত শরীরে মিশে, বিন্দু বিন্দু রক্ত অবশেষে
যন্ত্রণার বন্যা এলো, অন্ধ হলো চক্ষু, দশ দিক,
এবং আড়ালে বলি, আমিই সে সুচতুর গোপন প্রেমিক।
দিবাসার্ধ পায়ে হেঁটে ফিরি আমি জীবিকার দাসত্ব-ভিখারি
ক্লান্ত লাগে সারা রাত, ক্লান্তি যেন অন্ধকার নারী।
একদা অসহ্য হলে বাহুর বন্ধনে পড়ে ধরা
যন্ত্রণায় জর্জরিতা দুঃখিনী সে আলোর স্বরূপে
মাংসের শরীর তার শুভক্ষণে সব ক্লান্তিহরা
মন্ডুকের মতো আমি মগ্ন হই সে কন্দর্প-কূপে।
তার সব ব্যর্থ হলো, দীর্ঘশ্বাসে ভরালো পৃথিবী
যদিও নিয়মনিষ্ঠা, স্বামী নামে স্বল্প চেনা লোকটির ছবি
শিয়রেতে ত্রুটিহীন, তবু তার দুই শঙ্খ স্তনে
পূজার বন্দনা বাজে আ-দিগন্ত রাত্রির নির্জনে।
সে তার শরীর থেকে ঝরিয়েছে কান্নার সাগর
আমার নির্মম হাতে সঁপেছে বুকের উপকূল,
তারপর শান্ত হলে সুখে-দুঃখে কামনার ঝড়
গর্ভের প্রাণের বৃন্তে ফুটে উঠলো সর্বনাশ-ফুল।
বাঁচাতে পারবে না তাকে ঊনবিংশ শতাব্দীর বীরসিংহ শিশু
হবিষ্যান্নপুষ্ট দেহ ভবিষ্যের ভারে হলো মরণসম্ভবা
আফিম, ঘুমের দ্রব্য, বেছে নেবে আগুন, অথবা
দোষ নেই দায়ে পড়ে যদি-বা ভজনা করে যীশু।
[বিবৃতি, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়]
এমন না যে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের বহুখ্যাত আর আবৃত্তি উপযোগী কবিতা হিসেবে এই কবিতাটি কখনো শুনেছিলাম। কেউ কখনো বলেওনি এই কবিতাটির কথা। তখন পর্যন্ত পড়িনি, যত দিন না তাঁর শ্রেষ্ঠ কবিতার সংকলনটি হাতে এসেছে। হাতে এলেও যে পৃষ্ঠা উলটেই এটি পড়ার কথাও না, যতই এই বইয়ের দ্বিতীয় কবিতা হোক। বরং, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের শ্রেষ্ঠ কবিতার বাংলাদেশি সংস্করণটি প্রথম যেদিন হাতে নিয়েছিলাম, সেদিন প্রথমেই পড়েছিলাম অনেকের আবৃত্তির কারণে বহুদিন ধরে শোনা কবিতাগুলোই। তার একটি একটি ওলটাই আর পড়ি। ‘কেউ কথা রাখেনি’। নিজের তেত্রিশ বছর বয়স তখন অনেক দূরে, প্রায় অর্ধেক বয়স তখন, কিন্তু পড়ার ভেতর দিয়ে সেই বয়সের ভার ও এর দীর্ঘশ্বাস কিছু বুঝে নিতে চাই। যেমন, ‘কবির মৃত্যু: লোরকা স্মরণে’ এক অর্থে লোরকাকে ভালোমতো চিনে ওঠার আগেই পড়া। ‘খুনঝরা বিয়ে’ নামক লোরকার বিশ্বখ্যাত নাটকটির একটি অনুবাদ একটুখানি পড়তে পড়তে বইটি হাতছাড়া হয়ে গেছে, তাই তাঁর নাম জানি, কিন্তু তাঁর কবি ও নাট্যকার পরিচয়ের ধাঁধা তাতে তেমন কাটেনি। পাবলো নেরুদার সঙ্গে তাঁর নামসহ উচ্চারিত, কিন্তু বাড়িঘর স্পেনে কি লাতিন আমেরিকার কোনো দেশে সে হিসেবে সব সময় ঠিক থাকে না, তালগোল পাকিয়ে যায়। কিন্তু একবার শুনে মনে থাকে এই কবিতার দুটো পঙ্ক্তি, দুজন খসখসে সবুজ উর্দিপরা সিপাহি টানতে টানতে কবিকে নিয়ে গেল। তাঁর মৃত্যু মুহূর্তে সমাবেশের পেছন থেকে একজন ছাত্র একটি লম্বা লোককে বলল, ‘মাথাটা পকেটে পুরুন দাদা!’ তখন কোনো ভিড়ে সামনে দীর্ঘদেহী কোনো মানুষ সামনে থাকলে পঙ্ক্তিটি খুব মনে পড়ত। আর, নির্বাসন দিলে সুনীলের চাই সাড়ে তিন হাত জমি কিংবা ‘ইন্দিরা গান্ধীর প্রতি’ কবিতায় ইন্দিরার মতো লৌহমানবীকে যখন দুষ্টুমিভরে লক্ষ্মীমেয়ে বলে বিমানের জানালা থেকে জলপাইগুড়ির বন্যা দেখে যদি তিনি অস্ফুট বলে বসেন বাঃ কী সুন্দর! সুনীল লিখেছেন, ‘তোমার শুকনো ঠোঁট, কত দিন সেখানে চুম্বনের দাগ পড়েনি’—এমন পঙ্ক্তি খুব মনে থাকে। এগুলোর কোনো কোনোটিতে বয়সজনিত ভালো লাগা লেগে আছে বুঝতে পারি, ওই প্রায় একবার শোনায় মনে থাকার আর কী কারণ থাকতে পারে? যদিও শ্রেষ্ঠ কবিতার পৃষ্ঠা ওলটাতে ওলটাতে কোনো নবীন কিশোরকে যে ভুবনডাঙার মেঘলা আকাশ দেওয়ার আকাঙ্ক্ষা যেখানে তীব্র সেই কবিতাটির কাছে যেন ঘটে খুব সহজ এক প্রবেশাধিকার। কিন্তু তখনো পর্যন্ত কে কোনোভাবে একটু মনোযোগে রবীন্দ্রনাথ পড়েছি? জীবনানন্দ দাশের ‘বনলতা সেন’সহ আরও কিছু কবিতা, তার চেয়ে বরং চুল তার কবেকার অন্ধকার—এমন ধ্বনির অনুপ্রাসঘটিত সাম্যেই তা বারবার উচ্চারিত। তা-ও বনলতা সেনকে নিয়ে, এই কল্পিত নায়িকার খোঁজ নিয়ে, জীবনানন্দ দাশের জীবনে নারী নিয়ে উৎসাহের শেষ নেই। যেমন, ওই সময়ে খ্যাতির গনগনে আকাশে থাকা সুনীল-শক্তি ও তাঁদের অন্য কবিতা সহযাত্রীদের জীবনে নারী প্রসঙ্গও তাই তাঁদের কবিতা পড়ার উৎসাহের পাশে খুব ভর করে। ফলে, নীরা ও নীরাসংক্রান্ত কবিতাগুলোর ভেতর দিয়ে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের জীবনে নারী ইত্যাদি বিষয় সেই সব নিজস্ব বৃত্তের আলোচনা তার কাব্যপাঠে জায়গা পায়। শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের কবিতায় তেমন ‘নায়িকা’ নেই, নেই শঙ্খ ঘোষে, যদিও তাঁর ‘যমুনবতী’—সেই শোনা ও পড়ার জগতের খুব প্রিয় কবিতা।
ফলে, এই পরিমণ্ডলে, এই কাব্য পাঠের জায়গায়, এই সচল আয়তনে, এই নিজস্ব বৃত্তে, বইটার ওপর মাঝবয়সী সুনীলের ছবি দেখে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়কে পড়ে নিতে নিতে, সেখানে নিখিলেশের কাছে পেচ্ছাপ আর কান্নার মিল খোঁজা নিয়ে এই অনাকাঙ্ক্ষিত মানব জন্ম, কিংবা বন্ধু নিখিলেশের মতনই এক নারী নীরা যার কাছে মন ভালো নেই বলা যায়, যে নারীর মন খারাপ হলে কলকাতা নগরীর মন খারাপকে মিলিয়ে নিজের মন খারাপের চৌহদ্দি নির্মিত হয়। সেখানে একেবারে শুরুর দিককার সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের একটি কবিতা ‘বিবৃতি’ কোনোভাবেই চোখে পড়েনি। চোখে পড়ার কথা নয়। এতক্ষণ তাই জানালাম যে চোখে পড়ার আগে কানে শোনার এক ভার তৈরি হয়ে গিয়েছিল, সেটাকেই হাতে আসা বইয়ের পৃষ্ঠায় মিলিয়ে, স্থিরীকৃত আগ্রহকে যেন বইয়ের পৃষ্ঠায় সঙ্গে প্রত্যক্ষ আর নিজের স্মৃতিধার্যতার সঙ্গে পরোক্ষে মিলিয়ে নেওয়াই আসল উদ্দেশ্য। সে কাজটি সারি। নিজের পড়ার ভেতর দিয়ে আবিষ্কারের যে যাত্রা তা কোনোভাবেই এর ভেতর দিয়ে সম্পন্ন হয় না। হওয়ার কথা নয়। নিজের স্থানান্তর ইত্যাদি কারণে প্রথম দেখা সেই শ্রেষ্ঠ কবিতাটি তখন হাতছাড়া হয়ে গেছে।
কিন্তু এরপর, হয়তো একেবারে নির্দিষ্ট করে ভাবিনি সেই মুহূর্তেই আবার পড়ব সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের কবিতা। অথবা, সংকলনভুক্ত শ্রেষ্ঠ কবিতা। ‘দেশ’সহ অন্যান্য পত্রিকায় তাঁর নতুন কবিতা পড়ি। কবিতায় কাহিনিকথনে অসামন্যে হাত তাঁর। অত অল্প জায়গায় একটি পূর্ণাঙ্গ গল্পই যেন পড়া হয়। যা তাঁর কবিতার এক চিরকালীন স্বভাব, অথবা মুদ্রাগুণ। কিন্তু তাতেও তাঁর সেই সব সাম্প্রতিক কবিতা পাঠে কোনোভাবে আগেকার কবিতার কোনোটির বিস্মৃতি ঘটে না। এমনকি এই সাম্প্রতিকের কোনোটি প্রায় স্মৃতিতে হানাও দেয় না, কেননা তা স্মৃতিতে জায়গা পায় না। ফলে, নিজের কাছে এই সাম্প্রতিক সুনীল নতুন কবিতা নিয়েও পুরোনো কবিতায়ই যেন অস্তিত্বশীল। এমন একটা সময়ে যখন দে’জ প্রকাশিত তাঁর শ্রেষ্ঠ কবিতা হাতে এল তখন একেবারে শুরু থেকে, শুরু বলতে শুরুই, যেন সূচি থেকেই পড়ার এক প্রয়াসে দেখি প্রথম কাব্য 'একা এবং কয়েকজন', যে নামে তাঁর একটি উপন্যাস—কাহিনিগদ্যের সচল চলমানতায় পড়েছি—সে-কাব্যের ছয়টি কবিতা গ্রন্থিত 'শ্রেষ্ঠ কবিতা'য়। মূল বইটি আজও দেখিনি, কিন্তু হিসাব মেলাই, এই বইয়ের কবিতা মাত্র ছয়টি কিন্তু পরের বই ‘আমি কীরকমভাবে বেঁচে আছি’র এতগুলো! প্রথমটির প্রকাশ সাল ১৩৬৫, দ্বিতীয়টির ১৩৭২—সাত বছরে কবির পরিণত হাতের আত্মবিশ্বাস! সেখানে আছে, ‘হঠাৎ নীবার জন্য’, ‘আমি কীরকমভাবে বেঁচে আছি’, ‘এই হাত ছুঁয়েছিল’—এইভাবে ভাবি। এই তুলনায় শ্রেষ্ঠ কবিতায় ‘একা এবং কয়েকজন’ এর প্রথম কবিতা ‘প্রার্থনা’ পড়ে পৃষ্ঠা উলটে ‘বিবৃতি’তে গিয়ে চোখ থমকায়। এ যেন আমারই জানা জগতের গল্প। সেই জানা জগতের বাস্তব এখানে মিলেমিশে বেশ থমকে আছে। হয়তো কবির বয়ানের ‘আমি’ এখানে আমি নই, কিন্তু এই গোপন প্রেমিক ‘আমি’কে চিনি আমি।
এক নিশ্বাসে কবিতাটা আবার পড়ি। যেকোনো লেখা পাঠে যে জিনিসটি যেকোনো পাঠকের ক্ষেত্রে সবচেয়ে তীব্রভাবে ঘটে, তা হলো, যদি কবিতায় বা কাহিনিতে নিজের জীবনের অভিজ্ঞতাকে কি চেনা জগৎকে খুব কাছ থেকে দেখা যায়, আর অন্যদিক দিয়ে যদি ওই লেখা এক অনন্ত রহস্যের ভেতর দিয়ে নিয়ে যায়, যে রহস্য কোনোভাবেই নিজের কাছে সমাধানযোগ্য নয়—কল্পনায় সেই রহস্যকে এক কল্পিত সমাধান দেওয়ার মধ্যে ওই লেখা বারবার পড়া। পড়ে নিতে নিজের ভেতরে আরও একটি কখনো স্পষ্ট কখনো অস্পষ্ট জগৎ তৈরি হয়। যেমন, এই মুহূর্তে কবিতা হিসেবে রবীন্দ্রনাথের ‘স্বপ্ন’ কিংবা জীবনানন্দ দাশের ‘বনলতা সেন’কে ভেবে নিতে পারি।
‘বিবৃতি’ পড়ার প্রায় সঙ্গে সঙ্গে নিজের কাছে এক পরিচিত জগতের বিবৃতিময় বয়ান মনে হলো। মনে হলো, এই যে একটি বিধবা মেয়ের অন্ধকারাচ্ছন্ন জগতের কথা বলছেন কবি, এমন জগৎ আমার চেনা। খুব কাছ থেকে না হলেও, একটু দূর থেকে হলেও তার চলাচলকে জেনেছি। যে বয়সে জেনেছি, যখন দেখেছি, তখন তাকে ভেবে উঠতে পারিনি, কোনো কিছুর সঙ্গে মিলিয়ে নিতে পারিনি, কিন্তু আজ এ কথা সেই জানা অতীতকে এই মুহূর্তে আগেকার দেখার অভিজ্ঞতার সঙ্গে ক্ষণমাত্র অপেক্ষা না করেই মিলিয়ে নিতে পারলাম।
পড়ি: ‘উনিশে বিধবা মেয়ে কায়ক্লেশে উনতিরিশে এসে/গর্ভবতী হলো, তার মোমের আলোর মতো দেহ’। আমি মেলাই। তিনজন বিধবাকে দেখেছি খুব কাছ থেকে। একেবারে শৈশব ও বাল্যে আর কৈশোরেও। একজন বালবিধবা, বিয়ে হয়েছিল শৈশবে। কোন্ সুদূর অতীত তার বিয়ে হয়েছিল, তিনি নিজেই তা মনে করতে পারেন না। তারপর সেই শৈশব কি বাল্য কৈশোরকে ছুঁতে না ছুঁতেই তিনি বিধবা হন। তখন তিনি বাপের বাড়ি। সংবাদ শুনে এসে স্বামীর মৃতদেহ দেখেছিলেন। সধবা থেকে বিধবার বেশ ধরেছিলেন, আর এরপর আর কোনো দিন ফিরে যাননি বাপের বাড়ি। স্বামীর বাড়ি, শ্বশুরবাড়িতে দেওর ও দেওরপোর সংসারে সারাটা জীবন কাটিয়ে দিয়েছেন। সম্পর্কে আমার মায়ের এক ঠাকুমা। যখন দেখেছি তাঁকে, তাঁর তখন শেষজীবন। তাঁর সম্পর্কে যা জেনেছি, সবাই মা ও দিদিমার কাছ থেকে। কোনো দিন আর বিয়ের তো প্রশ্নই ওঠেনি, বাপের বাড়িতে ফিরে যাওয়াও সম্ভব। এই ভাবে সারাটা জীবন কাটিয়ে দিয়েছেন। তাঁর সেই শেষ জীবনে, এক প্যাঁচে পরা সাদা শাড়ি পেঁচানো শরীর, মুখে হাসি—সবই মনে করতে পারি। কিন্তু বোঝার বয়সে তাঁর সারাটা জীবনব্যাপী কষ্টের কোনো সীমা-পরিসীমা এই শোনায় সত্যি নিজের মধ্যে কল্পনা করে উঠতে পারি না। শুনে, শিউরেও ওঠা সম্ভব নয়। কিন্তু ‘বিবৃতি’ পাঠমাত্রই ওই জায়গাটুকু, যেখানে একজন বিধবা মেয়ের শরীরী বর্ণনায় জানাচ্ছেন সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, ‘তার মোমের আলোর মতো দেহ’—উপমার এই জায়গাটা খুব চোখে আটকাল। ওই সেই, প্রায় আজ থেকে এক শতকের বেশি আগে জন্মানো ওই নারীর শরীরের বর্ণের সঙ্গে মোমের আলোর রং খুব মেলে। পড়ামাত্র সেটুকু কল্পনা করে নিতে নিজের ক্ষেত্রে কোনো প্রকার আয়াসের প্রয়োজন হলো না। কেননা, জীবনে তিনিই আমার দেখা প্রথম বিধবা। কিন্তু শোনা কথার সঙ্গে মেলানো অভিজ্ঞতায় তার সঙ্গে আর তো কিছুই মেলে না। সেই নারী তাঁর সেই রূপ নিয়ে চলে গেছেন দূরে। কল্পনায় শুধু তাঁর সব দুঃখের প্রদীপকে জ্বলতে দেখি। আর কী?
কিন্তু, পাঠক তো কত কিছুকেই একসঙ্গে মেলায়। মিলিয়ে কল্পনার প্রয়োজনীয় জগৎ তৈরি করে। সেই কল্পনা কোনোক্রমেই যদি না মেলে রচয়িতার কোনোমতে চিন্তার সঙ্গে, তাতে তাঁর কোনো বাধকতা নেই, দায়ও নেই। ফলে চেনা জগৎকে বিস্তৃত করে মিলিয়ে নিলাম। যখন পড়ি: ‘কাঁপালো প্রাণান্ত লজ্জা, বাতাসে কুটিল সন্দেহ,/সমস্ত শরীরে মিশে, বিন্দু বিন্দু রক্ত অবশেষে/যন্ত্রণার সমস্ত বন্যা এলো, অন্ধ হলো চক্ষু, দশ দিক,/এবং আড়ালে বলি, আমি সে সুচতুর গোপন প্রেমিক।’ এই, ‘এবং অবশেষে আড়ালে বলি, আমি সে সুচতুর গোপন প্রেমিক।’ —এই পঙ্ক্তিতে এসে সে মেলানো জগতের হিসাবটা নিজের কাছে অন্যভাবে উলটে গেল যেন। আরও দুজন বিধবাকে মনে পড়ল আমার, এই পঙ্ক্তি পাঠমাত্র। এমন তো নয়, এই তিনজন ছাড়া আর বিধবা দেখিনি জীবনে। কিন্তু সেই জানা ও দেখা এই পাঠের সঙ্গে কোনোভাবে কোনোক্রমে প্রাসঙ্গিক নয়। এই পাঠের সঙ্গে প্রাসঙ্গিক বলেই বাকি দুজনের কথা মনে এল। কিন্তু মোমের আলোর মতো শরীরেও তাঁরা প্রাসঙ্গিক ছিলেন না। তাঁদের একজন, আমার এক আত্মীয় বাড়ির প্রতিবেশিনী। কিশোরী বয়সে বিধবা। একটি ছেলে, ছেলেটি কথা শেখার আগেই তার বাবা মরেছে। আত্মীয়বাড়িতেই থাকতেন তিনি। কখনো ছেলেসহ, কখনো একলা। তবে তার ঊন্তিরিশ বছর বয়সেই তাঁর ছেলে নিজেদের বাড়িতে একলা থাকে। প্রয়োজনে মায়ের সঙ্গে দেখা করতে আসে। অন্যজনকেও একই বাড়িতে দেখা। একই বয়সে তিনিও বিধবা। একটি মেয়ে আছে। এখানে কাজে এসেছে, অন্য শরীকি ঘরে। কাজে আসা বলতে গোটা সংসার সামলে রাখা। গৃহকর্তা সেখানে একলাই থাকেন। স্ত্রী-সন্তান দূরে, কখনো কখনো সেখানে যান। এই বিষয়সম্পত্তি আগলে রাখাই তাঁর কাজ। বয়স হয়েছে। এই নারীরা অথবা কন্যাসহ এই নারী একই সঙ্গে প্রায় গৃহকর্ত্রীর ভূমিকা পালন করবে, অঙ্কশায়িনী হবেন কর্তার। এমন রীতি প্রায় প্রকাশ্য। রাখঢাক ওপরে থাকলেও, সেই প্রকাশ্য অথচ গোপন ভেতরে ব্যবস্থা প্রায় তাই।
চারপাশ থেকে জানতে শুনতে জেনেছিলাম এই নারীদের একজন, ছেলেটি তার প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার আগেই গর্ভবর্তী হয়েছিল। সমাজের তো সেখানে রীতিবন্ধন বড় দৃঢ়। আঁটুনি বড় বজ্র, ভেতরের গেরো যত ফস্কাই হোক। তখন গৃহকর্তার সেই অনুপ্রবেশকে পড়ি: ‘একদা অসহ্য হলে বাহুর বন্ধনে পড়ে ধরা’। বুঝি এই বন্ধনে ধরা পড়ায় কোনো পিছুটান নেই। আপত্তি নেই। শরীর জড়িয়ে নিয়েছে তার মধ্যে প্রয়োজনীয় শরীরকে। এমন না যে, আশ্রিত তাই এই নারী বাধ্য। বরং, ওই নারীর শরীরই নিজের প্রয়োজনে সেখানে নিজের অর্গল খুলে দিয়েছে। হয়তো খুলে নিয়েছে একাধিক জায়গায় অক্লেশে, অন্তর্গত অনুমোদনে। সেখানে গৃহকর্তার সে ভঙ্গিকে ভেবে নিই: ‘মাংসের শরীর তার শুভক্ষণে সব ক্লান্তিহারা/মুণ্ডুকের মতো আমি মগ্ন হই সে কন্দর্প-কূপে’।
ফলে, সেই সমাজ যখন জানল, সব দোষ সেই নারীর। ওই গোপন অথচ প্রকাশ্য প্রেমিক তাকে তো বাধ্য করায় বা সে নিজেও বাধ্য ওই ‘শরীর থেকে’ ঝরিয়ে দিতে ‘কান্নার সাগর’। কেননা, ‘গর্ভের প্রাণের বৃত্তে’ ফুটে উঠছে ‘সর্বনাশা ফুল’। তাই স্বাভাবিক। সে কাজ যেন প্রকাশ্যেই প্রায় সমাধা হলো। যদি তা না-ই হবে, তাহলে আমার কান পর্যন্ত ঘটনা পৌঁছাল কীভাবে? ঘটনার প্রকাশ্য অবস্থা তো এই—সেই নারীর কিশোর ছেলেটি জেনেছিল সে কথা। এমনকি সেই গৃহকর্তার সন্তানেরাও। কিন্তু তাতে দিনে দিনে কোনো কিছুরই কোনো ব্যতিক্রম ঘটেনি। পরে, ধারণা করি, অথবা, যা জেনেছি, তাদের সম্পর্ক আবার একই জায়গায় পৌঁছেছিল। হয়তো তা-ই ছিল স্বাভাবিক।
‘বিবৃতি’র শেষাংশ তাই তাঁদের সঙ্গে মেলে না। কিন্তু একটি জায়গায় মেলে এই সব প্রায় বালবিধবাদের বা এরপরেরও, অথবা স্বামী পরিত্যক্তাদের ওই সমাজে এই জীবন থেকে তাঁদের বাঁচাতে পারেনি কেউ। জীবনে বেঁচে ছিলেন তাঁরা। একদিন মরেও গেছেন। কিন্তু, যে বীরসিংহশিশু ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের কথা বলা হয়েছে, তিনি এই প্রত্যন্ত পল্লি থেকে অনেক দূরে। সেখানে সংস্কারে কোনো উদ্যোগ কোনো দিন ছিল। আজও নেই। আমাদের জানা আছে, সেই সময়ের কারণেই শুধু নয়, বাঙালির উনিশশতকী সমাজ জাগরণের অংশ হিসেবে বিদ্যাসাগরের প্রতি সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের পক্ষপাত, সেটি এখানে বিষয়ও নয়, কিন্তু কবির বিবৃতিতে সেই কথা স্পষ্ট করা আর আমার কাছ মিলিয়ে নেওয়া যে এত চেষ্টা এত কিছুর পরও এই নারীরা ঈশ্বরচন্দ্রের মৃত্যুর অন্তত পঁচিশ কি পঞ্চাশ কি পঁচাত্তর বছর পরও সেই সমাজে সেখানে অনড়। গোপন প্রেমিকই একমাত্র ভরসা। ফলে যিশু যতই ভজনা করুক, লাভ নেই, কুমারী কি বিধবা মাতার স্থান নেই। সেখানে, ‘আফিম, ঘুমের দ্রব্য, বেছে নেবে আগুন’, অথবা যিশুর মতো সমাজের ক্রুশকাঠে বিদ্ধ হওয়া। ফলে, ‘তার সব ব্যর্থ হলো’ সে, ‘দীর্ঘশ্বাসে ভরালো পৃথিবী’।
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের তারুণ্যে লেখা ‘বিবৃতি’ পড়ে তাই নিজে উনিশে বিধবা মেয়ের উনতিরিশের গোপন প্রেমিক না হয়েও নিজের পরিপার্শ্বকে দেখে নিলাম। এই দেখাই হয়তো বারবার ওই কবিতা পড়ায়। আর, বহু দিন আগে দেখা সেই সব বিধবার মুখ চোখে ভাসে!

জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল।
৬ দিন আগে
জনপ্রিয় কিশোর গোয়েন্দা সিরিজ তিন গোয়েন্দার স্রষ্টা রকিব হাসান মারা গেছেন। আজ বুধবার রাজধানীর একটি হাসপাতালে ডায়ালাইসিস চলাকালে তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।
১১ দিন আগে
হাঙ্গেরির ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই এবার (২০২৫ সালে) সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন তাঁর দীর্ঘ, দার্শনিক বাক্য ও মানবজীবনের বিশৃঙ্খলার গভীর অনুসন্ধানী সাহিত্যকর্মের জন্য। সুইডিশ একাডেমি তাঁকে সম্মান জানিয়েছে ‘শিল্পের শক্তিকে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করার’ জন্য।
১৭ দিন আগে
হাঙ্গেরির সাহিত্যে অসীম জনপ্রিয়তা ও প্রভাব তাঁর; বিশ্বজোড়া আতঙ্ক ও সন্ত্রাসের দাপটেও শিল্পের শক্তি চেনায় তাঁর কলম। তিনি হাঙ্গেরিয়ান ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই; সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০২৫ সালে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।
১৭ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল। কিন্তু ভাষাবিদ ও সাহিত্য ইতিহাসবিদদের মতে, এই ধারণা আসলে পশ্চিমা দৃষ্টিকোণ থেকে তৈরি এক ‘ঔপনিবেশিক কল্পনা’ মাত্র। বাস্তবে আরবি সাহিত্য কখনোই থেমে যায়নি।
প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী, অষ্টম শতাব্দীতে আব্বাসীয় খলিফাদের অধীনে বিজ্ঞান, দর্শন ও কবিতার কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল বাগদাদ। আবু নুয়াস, আল-মুতানাব্বি, আল-ফারাবি ও ইবনে সিনার মতো কবি ও দার্শনিকদের হাত ধরে শুরু হয়েছিল এক স্বর্ণযুগ। ঊনবিংশ শতাব্দীর ইউরোপীয় গবেষকেরা—যেমন ফরাসি চিন্তাবিদ আর্নেস্ট রেনাঁ ও ডাচ ইতিহাসবিদ রেইনহার্ট দোজি সেই আমলটিকেই আরবি বুদ্ধিবৃত্তিক জীবনের শিখর বলে স্বীকার করেছিলেন এবং দাবি করেছিলেন, একাদশ শতাব্দীর পর এই ধারাবাহিকতার পতন ঘটে। তাঁদের মতে, এরপর প্রায় ৮০০ বছর আরবে আর কোনো গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্যিক বা দার্শনিক কাজ হয়নি—যতক্ষণ না ইউরোপে রেনেসাঁ শুরু হয়।
কিন্তু আধুনিক গবেষকেরা বলছেন, এই ধারণা সরলীকৃত ও পক্ষপাতদুষ্ট। ফ্রাঙ্কফুর্ট আন্তর্জাতিক বইমেলায় শেখ জায়েদ বুক অ্যাওয়ার্ডের আয়োজিত এক আলোচনায় ভাষাবিদেরা দাবি করেছেন, আরবি রচনা শৈলী কখনো বিলুপ্ত হয়নি; বরং তা ধারাবাহিকভাবে কপি, অনুবাদ ও পাঠের মাধ্যমে বেঁচে ছিল।
জার্মান গবেষক বেয়াট্রিস গ্রুন্ডলার তাঁর ‘দ্য রাইজ অব দ্য অ্যারাবিক বুক’ গ্রন্থে দাবি করেছেন, আরবি সাহিত্যে ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে যে ধারণাটি প্রচলিত আছে তা আসলে গাল-গল্প। এই বইটি এবারের শেখ জায়েদ পুরস্কারের শর্টলিস্টে রয়েছে। গ্রুন্ডলার এতে দেখিয়েছেন, নবম শতাব্দীর বাগদাদে বইয়ের ব্যবসা, কপিকারদের প্রতিযোগিতা, জনসম্মুখে পাঠ ও লেখার প্রচলন—সবই ছিল আধুনিক প্রকাশনা সংস্কৃতির পূর্বসূরি। তিনি মত দিয়েছেন, ‘বাগদাদের রাস্তায় হাঁটলে আপনি দেখতেন লোকেরা হস্তলিপি বিক্রি করছে, বিরামচিহ্ন নিয়ে তর্ক করছে—এ যেন এক জীবন্ত প্রকাশনা বাজার।’
গবেষণা বলছে, আরবি সাহিত্য আসলে কখনো এক জায়গায় স্থির থাকেনি। এর কেন্দ্র এক সময় বাগদাদ থেকে কায়রো, দামেস্ক ও আন্দালুসিয়ায় স্থানান্তরিত হয়। কিন্তু ধারাটি অব্যাহতই থাকে। নতুন ঘরানা তৈরি হয়, পুরোনো ঘরানা রূপান্তরিত হয়।
ফরাসি অধ্যাপক হাকান ওজকান তাঁর গবেষণায় দেখিয়েছেন, ‘জাজাল’ নামের কথ্য ছন্দভিত্তিক কবিতার ধারা আব্বাসীয় যুগের পরও বিকশিত হতে থাকে। তাঁর মতে, ‘এই কবিরা নিয়ম ভেঙে নতুন রূপ দিয়েছে—তাঁদের ছন্দ ও ব্যঙ্গ আধুনিক র্যাপের মতো প্রাণবন্ত।’

এদিকে এই বিষয়ে এক প্রতিবেদনে সোমবার (২০ অক্টোবর) আমিরাতভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য ন্যাশনাল জানিয়েছে, আবুধাবির নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির ‘আরবি সাহিত্য লাইব্রেরি’ প্রকল্প ইতিমধ্যেই ‘হারানো শতাব্দী’ বলে বিবেচিত সময়ের ৬০ টিরও বেশি আরবি সাহিত্যকর্ম পুনরুদ্ধার করেছে। প্রকল্পটির সম্পাদক অধ্যাপক মরিস পোমেরান্টজ বলেছেন, ‘এই বইগুলো সম্পাদনা করা মানে এক চলমান সংলাপে অংশ নেওয়া—যেখানে প্রজন্মের পর প্রজন্ম লেখক, অনুবাদক ও সমালোচকেরা একে অপরকে উত্তর দিয়ে গেছেন।’
মরিস মনে করেন, আরবি সাহিত্য স্থবির হয়ে যাওয়ার ধারণাটি মূলত অনুবাদের অভাব থেকেই জন্ম নিয়েছে। তিনি বলেন, ‘যখন কোনো লেখা অনুবাদ করা হয় না, তখন সেটি বৈশ্বিক অস্তিত্ব হারায়।’
মরিসের মতে, এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো এই সাহিত্যকে আবার জনসাধারণের কল্পনায় ফিরিয়ে আনা—স্কুলে পড়ানো, মঞ্চে উপস্থাপন করা, অনুবাদের মাধ্যমে বিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়া। তা না হলে আরবি সাহিত্যের ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে চিহ্নিত সময়টি অধরাই থেকে যাবে।

জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল। কিন্তু ভাষাবিদ ও সাহিত্য ইতিহাসবিদদের মতে, এই ধারণা আসলে পশ্চিমা দৃষ্টিকোণ থেকে তৈরি এক ‘ঔপনিবেশিক কল্পনা’ মাত্র। বাস্তবে আরবি সাহিত্য কখনোই থেমে যায়নি।
প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী, অষ্টম শতাব্দীতে আব্বাসীয় খলিফাদের অধীনে বিজ্ঞান, দর্শন ও কবিতার কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল বাগদাদ। আবু নুয়াস, আল-মুতানাব্বি, আল-ফারাবি ও ইবনে সিনার মতো কবি ও দার্শনিকদের হাত ধরে শুরু হয়েছিল এক স্বর্ণযুগ। ঊনবিংশ শতাব্দীর ইউরোপীয় গবেষকেরা—যেমন ফরাসি চিন্তাবিদ আর্নেস্ট রেনাঁ ও ডাচ ইতিহাসবিদ রেইনহার্ট দোজি সেই আমলটিকেই আরবি বুদ্ধিবৃত্তিক জীবনের শিখর বলে স্বীকার করেছিলেন এবং দাবি করেছিলেন, একাদশ শতাব্দীর পর এই ধারাবাহিকতার পতন ঘটে। তাঁদের মতে, এরপর প্রায় ৮০০ বছর আরবে আর কোনো গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্যিক বা দার্শনিক কাজ হয়নি—যতক্ষণ না ইউরোপে রেনেসাঁ শুরু হয়।
কিন্তু আধুনিক গবেষকেরা বলছেন, এই ধারণা সরলীকৃত ও পক্ষপাতদুষ্ট। ফ্রাঙ্কফুর্ট আন্তর্জাতিক বইমেলায় শেখ জায়েদ বুক অ্যাওয়ার্ডের আয়োজিত এক আলোচনায় ভাষাবিদেরা দাবি করেছেন, আরবি রচনা শৈলী কখনো বিলুপ্ত হয়নি; বরং তা ধারাবাহিকভাবে কপি, অনুবাদ ও পাঠের মাধ্যমে বেঁচে ছিল।
জার্মান গবেষক বেয়াট্রিস গ্রুন্ডলার তাঁর ‘দ্য রাইজ অব দ্য অ্যারাবিক বুক’ গ্রন্থে দাবি করেছেন, আরবি সাহিত্যে ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে যে ধারণাটি প্রচলিত আছে তা আসলে গাল-গল্প। এই বইটি এবারের শেখ জায়েদ পুরস্কারের শর্টলিস্টে রয়েছে। গ্রুন্ডলার এতে দেখিয়েছেন, নবম শতাব্দীর বাগদাদে বইয়ের ব্যবসা, কপিকারদের প্রতিযোগিতা, জনসম্মুখে পাঠ ও লেখার প্রচলন—সবই ছিল আধুনিক প্রকাশনা সংস্কৃতির পূর্বসূরি। তিনি মত দিয়েছেন, ‘বাগদাদের রাস্তায় হাঁটলে আপনি দেখতেন লোকেরা হস্তলিপি বিক্রি করছে, বিরামচিহ্ন নিয়ে তর্ক করছে—এ যেন এক জীবন্ত প্রকাশনা বাজার।’
গবেষণা বলছে, আরবি সাহিত্য আসলে কখনো এক জায়গায় স্থির থাকেনি। এর কেন্দ্র এক সময় বাগদাদ থেকে কায়রো, দামেস্ক ও আন্দালুসিয়ায় স্থানান্তরিত হয়। কিন্তু ধারাটি অব্যাহতই থাকে। নতুন ঘরানা তৈরি হয়, পুরোনো ঘরানা রূপান্তরিত হয়।
ফরাসি অধ্যাপক হাকান ওজকান তাঁর গবেষণায় দেখিয়েছেন, ‘জাজাল’ নামের কথ্য ছন্দভিত্তিক কবিতার ধারা আব্বাসীয় যুগের পরও বিকশিত হতে থাকে। তাঁর মতে, ‘এই কবিরা নিয়ম ভেঙে নতুন রূপ দিয়েছে—তাঁদের ছন্দ ও ব্যঙ্গ আধুনিক র্যাপের মতো প্রাণবন্ত।’

এদিকে এই বিষয়ে এক প্রতিবেদনে সোমবার (২০ অক্টোবর) আমিরাতভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য ন্যাশনাল জানিয়েছে, আবুধাবির নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির ‘আরবি সাহিত্য লাইব্রেরি’ প্রকল্প ইতিমধ্যেই ‘হারানো শতাব্দী’ বলে বিবেচিত সময়ের ৬০ টিরও বেশি আরবি সাহিত্যকর্ম পুনরুদ্ধার করেছে। প্রকল্পটির সম্পাদক অধ্যাপক মরিস পোমেরান্টজ বলেছেন, ‘এই বইগুলো সম্পাদনা করা মানে এক চলমান সংলাপে অংশ নেওয়া—যেখানে প্রজন্মের পর প্রজন্ম লেখক, অনুবাদক ও সমালোচকেরা একে অপরকে উত্তর দিয়ে গেছেন।’
মরিস মনে করেন, আরবি সাহিত্য স্থবির হয়ে যাওয়ার ধারণাটি মূলত অনুবাদের অভাব থেকেই জন্ম নিয়েছে। তিনি বলেন, ‘যখন কোনো লেখা অনুবাদ করা হয় না, তখন সেটি বৈশ্বিক অস্তিত্ব হারায়।’
মরিসের মতে, এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো এই সাহিত্যকে আবার জনসাধারণের কল্পনায় ফিরিয়ে আনা—স্কুলে পড়ানো, মঞ্চে উপস্থাপন করা, অনুবাদের মাধ্যমে বিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়া। তা না হলে আরবি সাহিত্যের ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে চিহ্নিত সময়টি অধরাই থেকে যাবে।

এমন-না যে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের বহুখ্যাত আর আবৃত্তি উপযোগী কবিতা হিসেবে এই কবিতাটি কখনো শুনেছিলাম। কেউ কখনো বলেওনি এই কবিতাটির কথা। তখন পর্যন্ত পড়িনি, যতদিন-না তাঁর শ্রেষ্ঠ কবিতার সংকলনটি
০৭ সেপ্টেম্বর ২০২২
জনপ্রিয় কিশোর গোয়েন্দা সিরিজ তিন গোয়েন্দার স্রষ্টা রকিব হাসান মারা গেছেন। আজ বুধবার রাজধানীর একটি হাসপাতালে ডায়ালাইসিস চলাকালে তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।
১১ দিন আগে
হাঙ্গেরির ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই এবার (২০২৫ সালে) সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন তাঁর দীর্ঘ, দার্শনিক বাক্য ও মানবজীবনের বিশৃঙ্খলার গভীর অনুসন্ধানী সাহিত্যকর্মের জন্য। সুইডিশ একাডেমি তাঁকে সম্মান জানিয়েছে ‘শিল্পের শক্তিকে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করার’ জন্য।
১৭ দিন আগে
হাঙ্গেরির সাহিত্যে অসীম জনপ্রিয়তা ও প্রভাব তাঁর; বিশ্বজোড়া আতঙ্ক ও সন্ত্রাসের দাপটেও শিল্পের শক্তি চেনায় তাঁর কলম। তিনি হাঙ্গেরিয়ান ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই; সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০২৫ সালে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।
১৭ দিন আগেনিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

জনপ্রিয় কিশোর গোয়েন্দা সিরিজ তিন গোয়েন্দার স্রষ্টা রকিব হাসান মারা গেছেন। আজ বুধবার রাজধানীর একটি হাসপাতালে ডায়ালাইসিস চলাকালে তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।
রকিব হাসানের মৃত্যুর খবরটি নিশ্চিত করেছেন সেবা প্রকাশনীর উপদেষ্টা মাসুমা মায়মুর। তিনি সেবা প্রকাশনীর প্রতিষ্ঠাতা কাজী আনোয়ার হোসেনের ছোট ছেলে কাজী মায়মুর হোসেনের স্ত্রী।
মাসুমা মায়মুর ফেসবুকে লিখেছেন, ‘তিন গোয়েন্দা ও সেবা প্রকাশনীর পাঠকদেরকে আন্তরিক দুঃখের সাথে জানাচ্ছি যে, কিছুক্ষণ আগে রকিব হাসান সাহেব পরলোক গমন করেছেন। ডায়ালাইসিস চলাকালে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে ওনার জীবনাবসান ঘটে। আপনারা ওনার পবিত্র আত্মার মাগফেরাত কামনা করুন।’
১৯৫০ সালের ১২ ডিসেম্বর কুমিল্লায় জন্মগ্রহণ করেন রকিব হাসান। বাবার চাকরির কারণে শৈশব কেটেছে ফেনীতে। সেখান থেকে স্কুলজীবন শেষ করে ভর্তি হন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজে। পড়াশোনা শেষে বিভিন্ন চাকরিতে যুক্ত হলেও অফিসের বাঁধাধরা জীবনে তাঁর মন টেকেনি। অবশেষে তিনি লেখালেখিকে বেছে নেন জীবনের একমাত্র পথ হিসেবে।

সেবা প্রকাশনী থেকে তাঁর লেখকজীবনের সূচনা হয়। প্রথমদিকে বিশ্বসেরা ক্ল্যাসিক বই অনুবাদ করে লেখালেখির জগতে প্রবেশ করেন তিনি। এরপর টারজান, গোয়েন্দা রাজু, রেজা-সুজা সিরিজসহ চার শতাধিক জনপ্রিয় বই লেখেন। তবে তাঁর পরিচয়ের সবচেয়ে বড় জায়গা হলো তিন গোয়েন্দা সিরিজ। এই সিরিজ বাংলাদেশের অসংখ্য কিশোর-কিশোরীর কৈশোরের সঙ্গী।
মূলত রবার্ট আর্থারের থ্রি ইনভেস্টিগেটরস সিরিজ অবলম্বনে তিন গোয়েন্দার সূচনা হয়। তবে রকিব হাসানের লেখনশৈলীতে এটি পেয়েছে একেবারে নতুন রূপ। বাংলাদেশি সাহিত্য হয়ে উঠেছে এটি। এই সিরিজের মাধ্যমে তিনি হয়ে ওঠেন হাজারো কিশোর পাঠকের প্রিয় লেখক।
নিজ নামে লেখার পাশাপাশি তিনি ব্যবহার করেছেন বিভিন্ন ছদ্মনাম। শামসুদ্দীন নওয়াব নামে তিনি অনুবাদ করেছিলেন জুল ভার্নের বইগুলো।
বাংলাদেশের পাঠকদের কাছে রকিব হাসান শুধু একজন গোয়েন্দা লেখক নন, তিনি কয়েক প্রজন্মের শৈশব-কৈশোরের ভালোবাসার মানুষ।

জনপ্রিয় কিশোর গোয়েন্দা সিরিজ তিন গোয়েন্দার স্রষ্টা রকিব হাসান মারা গেছেন। আজ বুধবার রাজধানীর একটি হাসপাতালে ডায়ালাইসিস চলাকালে তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।
রকিব হাসানের মৃত্যুর খবরটি নিশ্চিত করেছেন সেবা প্রকাশনীর উপদেষ্টা মাসুমা মায়মুর। তিনি সেবা প্রকাশনীর প্রতিষ্ঠাতা কাজী আনোয়ার হোসেনের ছোট ছেলে কাজী মায়মুর হোসেনের স্ত্রী।
মাসুমা মায়মুর ফেসবুকে লিখেছেন, ‘তিন গোয়েন্দা ও সেবা প্রকাশনীর পাঠকদেরকে আন্তরিক দুঃখের সাথে জানাচ্ছি যে, কিছুক্ষণ আগে রকিব হাসান সাহেব পরলোক গমন করেছেন। ডায়ালাইসিস চলাকালে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে ওনার জীবনাবসান ঘটে। আপনারা ওনার পবিত্র আত্মার মাগফেরাত কামনা করুন।’
১৯৫০ সালের ১২ ডিসেম্বর কুমিল্লায় জন্মগ্রহণ করেন রকিব হাসান। বাবার চাকরির কারণে শৈশব কেটেছে ফেনীতে। সেখান থেকে স্কুলজীবন শেষ করে ভর্তি হন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজে। পড়াশোনা শেষে বিভিন্ন চাকরিতে যুক্ত হলেও অফিসের বাঁধাধরা জীবনে তাঁর মন টেকেনি। অবশেষে তিনি লেখালেখিকে বেছে নেন জীবনের একমাত্র পথ হিসেবে।

সেবা প্রকাশনী থেকে তাঁর লেখকজীবনের সূচনা হয়। প্রথমদিকে বিশ্বসেরা ক্ল্যাসিক বই অনুবাদ করে লেখালেখির জগতে প্রবেশ করেন তিনি। এরপর টারজান, গোয়েন্দা রাজু, রেজা-সুজা সিরিজসহ চার শতাধিক জনপ্রিয় বই লেখেন। তবে তাঁর পরিচয়ের সবচেয়ে বড় জায়গা হলো তিন গোয়েন্দা সিরিজ। এই সিরিজ বাংলাদেশের অসংখ্য কিশোর-কিশোরীর কৈশোরের সঙ্গী।
মূলত রবার্ট আর্থারের থ্রি ইনভেস্টিগেটরস সিরিজ অবলম্বনে তিন গোয়েন্দার সূচনা হয়। তবে রকিব হাসানের লেখনশৈলীতে এটি পেয়েছে একেবারে নতুন রূপ। বাংলাদেশি সাহিত্য হয়ে উঠেছে এটি। এই সিরিজের মাধ্যমে তিনি হয়ে ওঠেন হাজারো কিশোর পাঠকের প্রিয় লেখক।
নিজ নামে লেখার পাশাপাশি তিনি ব্যবহার করেছেন বিভিন্ন ছদ্মনাম। শামসুদ্দীন নওয়াব নামে তিনি অনুবাদ করেছিলেন জুল ভার্নের বইগুলো।
বাংলাদেশের পাঠকদের কাছে রকিব হাসান শুধু একজন গোয়েন্দা লেখক নন, তিনি কয়েক প্রজন্মের শৈশব-কৈশোরের ভালোবাসার মানুষ।

এমন-না যে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের বহুখ্যাত আর আবৃত্তি উপযোগী কবিতা হিসেবে এই কবিতাটি কখনো শুনেছিলাম। কেউ কখনো বলেওনি এই কবিতাটির কথা। তখন পর্যন্ত পড়িনি, যতদিন-না তাঁর শ্রেষ্ঠ কবিতার সংকলনটি
০৭ সেপ্টেম্বর ২০২২
জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল।
৬ দিন আগে
হাঙ্গেরির ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই এবার (২০২৫ সালে) সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন তাঁর দীর্ঘ, দার্শনিক বাক্য ও মানবজীবনের বিশৃঙ্খলার গভীর অনুসন্ধানী সাহিত্যকর্মের জন্য। সুইডিশ একাডেমি তাঁকে সম্মান জানিয়েছে ‘শিল্পের শক্তিকে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করার’ জন্য।
১৭ দিন আগে
হাঙ্গেরির সাহিত্যে অসীম জনপ্রিয়তা ও প্রভাব তাঁর; বিশ্বজোড়া আতঙ্ক ও সন্ত্রাসের দাপটেও শিল্পের শক্তি চেনায় তাঁর কলম। তিনি হাঙ্গেরিয়ান ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই; সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০২৫ সালে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।
১৭ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

হাঙ্গেরির ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই এবার (২০২৫ সালে) সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন তাঁর দীর্ঘ, দার্শনিক বাক্য ও মানবজীবনের বিশৃঙ্খলার গভীর অনুসন্ধানী সাহিত্যকর্মের জন্য। সুইডিশ একাডেমি তাঁকে সম্মান জানিয়েছে ‘শিল্পের শক্তিকে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করার’ জন্য। লেখক সুসান সনটাগ অবশ্য তাঁকে একসময় ‘মহাপ্রলয়ের হাঙ্গেরিয়ান গুরু’ আখ্যা দিয়েছিলেন।
সাহিত্যজগতে অনেকের কাছে ক্রাসনাহোরকাইয়ের নোবেল পাওয়ার এই ঘোষণাটি যেন কয়েক দশক ধরে চলা একটি বাক্যের সমাপ্তি।
১৯৫৪ সালে হাঙ্গেরির ছোট শহর জিউলা-তে জন্ম নেওয়া ক্রাসনাহোরকাই ১৯৮০-এর দশকের শুরুতে গল্প লেখা শুরু করেন। তাঁর প্রথম উপন্যাস স্যাটানট্যাঙ্গো (১৯৮৫) একটি বৃষ্টিস্নাত, ধ্বংসপ্রায় গ্রামের কাহিনি—যেখানে প্রতারক, মাতাল ও হতাশ মানুষেরা মিথ্যা আশায় আঁকড়ে থাকে। পরিচালক বেলা-তার তাঁর এই উপন্যাসটিকে দীর্ঘ ৭ ঘণ্টার এক সাদাকালো চলচ্চিত্রে রূপ দেন। এই বইতেই ধরা পড়ে ক্রাসনাহোরকাইয়ের লেখার বৈশিষ্ট্যসমূহ, যেমন—অবিরাম দীর্ঘ বাক্য, দার্শনিক হাস্যরস ও পতনের কিনারায় দাঁড়িয়ে থাকা মানুষের প্রতিচ্ছবি।
তাঁর পরবর্তী উপন্যাসগুলো—দ্য মেলানকোলি অব রেজিস্ট্যান্স (১৯৮৯), ওয়ার অ্যান্ড ওয়ার (১৯৯৯) ও সেইবো দেয়ার বিলো (২০০৮)—তাঁর এই দৃষ্টিভঙ্গিকে মহাজাগতিক পরিসরে বিস্তৃত করেছে। ‘ওয়ার অ্যান্ড ওয়ার’–এ তিনি এক নথি প্রহরীর গল্প বলেছেন, যিনি রহস্যময় এক পাণ্ডুলিপি প্রকাশ করতে নিউইয়র্কে পালিয়ে যান এবং আত্মহত্যা করেন—যেন ক্রম বিলীন পৃথিবীতে অর্থ ধরে রাখার এক মরিয়া চেষ্টা তাঁর।
ক্রাসনাহোরকাইয়ের লেখায় কাহিনি প্রায় সময়ই বাক্যের ভেতর হারিয়ে যায়। তিনি লিখেছেন এমন বাক্য, যা একাধিক পৃষ্ঠা জুড়ে পাঠককে টেনে নেয় অবচেতনে, অবিরাম প্রবাহে।
তাঁর সাহিত্যে হাস্যরস ও ট্র্যাজেডি পাশাপাশি চলে। স্যাটানট্যাঙ্গো–এর মাতাল নাচের দৃশ্য যেমন নিঃশেষের প্রতীক, তেমনি ‘ব্যারন ওয়েঙ্কহাইমস হোমকামিং’ (২০১৬)-এ দেখা যায়, ফিরে আসা এক পরাজিত অভিজাতকে। যার মাধ্যমে প্রকাশ পায় সভ্যতার পচন ও মানুষের হাস্যকর ভ্রান্তি।
২০১৫ সালে ম্যান বুকার পুরস্কার পাওয়ার মধ্য দিয়েই প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পান ক্রাসনাহোরকাই। অনুবাদক জর্জ সির্টেস ও ওটিলি মুলজেট তাঁর জটিল হাঙ্গেরিয়ান ভাষাকে ইংরেজিতে রূপ দিতে বিশেষ ভূমিকা রাখেন। ‘হাডসন রিভিউ’ তাঁকে বর্ণনা করেছিল ‘অন্তহীন বাক্যের ভ্রমণশিল্পী’ হিসেবে।
চল্লিশ বছরের সৃষ্টিতে ক্রাসনাহোরকাইয়ের ভুবন চিত্র, সংগীত, দর্শন ও ভাষার মিলনে বিস্তৃত। সাম্প্রতিক উপন্যাস ‘হার্শট ০৭৭৬৯’ (২০২৪)–এ তিনি এক প্রবাহিত বাক্যে লিখেছেন নব্য-নাৎসি, নেকড়ে আর এক হতভাগ্য পদার্থবিদের কাহিনি—আধুনিক ইউরোপের নৈতিক পক্ষাঘাতের রূপক হিসেবে।
তাঁর সমগ্র সাহিত্যজগৎ এক অন্ধকার ও ধ্যানমগ্ন মহাবিশ্ব—যেখানে পতন, শূন্যতা ও করুণা পাশাপাশি থাকে। ‘সেইবো দেয়ার বিলো’ বইটিতে তিনি লিখেছেন, ‘সৌন্দর্য, যত ক্ষণস্থায়ীই হোক না কেন, তা পবিত্রতার প্রতিবিম্ব।’ এই বিশ্বাসই লাসলো ক্রাসনাহোরকাইকে সেই বিরল লেখক করে তুলেছে, যাঁর নৈরাশ্যও মুক্তির মতো দীপ্ত।

হাঙ্গেরির ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই এবার (২০২৫ সালে) সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন তাঁর দীর্ঘ, দার্শনিক বাক্য ও মানবজীবনের বিশৃঙ্খলার গভীর অনুসন্ধানী সাহিত্যকর্মের জন্য। সুইডিশ একাডেমি তাঁকে সম্মান জানিয়েছে ‘শিল্পের শক্তিকে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করার’ জন্য। লেখক সুসান সনটাগ অবশ্য তাঁকে একসময় ‘মহাপ্রলয়ের হাঙ্গেরিয়ান গুরু’ আখ্যা দিয়েছিলেন।
সাহিত্যজগতে অনেকের কাছে ক্রাসনাহোরকাইয়ের নোবেল পাওয়ার এই ঘোষণাটি যেন কয়েক দশক ধরে চলা একটি বাক্যের সমাপ্তি।
১৯৫৪ সালে হাঙ্গেরির ছোট শহর জিউলা-তে জন্ম নেওয়া ক্রাসনাহোরকাই ১৯৮০-এর দশকের শুরুতে গল্প লেখা শুরু করেন। তাঁর প্রথম উপন্যাস স্যাটানট্যাঙ্গো (১৯৮৫) একটি বৃষ্টিস্নাত, ধ্বংসপ্রায় গ্রামের কাহিনি—যেখানে প্রতারক, মাতাল ও হতাশ মানুষেরা মিথ্যা আশায় আঁকড়ে থাকে। পরিচালক বেলা-তার তাঁর এই উপন্যাসটিকে দীর্ঘ ৭ ঘণ্টার এক সাদাকালো চলচ্চিত্রে রূপ দেন। এই বইতেই ধরা পড়ে ক্রাসনাহোরকাইয়ের লেখার বৈশিষ্ট্যসমূহ, যেমন—অবিরাম দীর্ঘ বাক্য, দার্শনিক হাস্যরস ও পতনের কিনারায় দাঁড়িয়ে থাকা মানুষের প্রতিচ্ছবি।
তাঁর পরবর্তী উপন্যাসগুলো—দ্য মেলানকোলি অব রেজিস্ট্যান্স (১৯৮৯), ওয়ার অ্যান্ড ওয়ার (১৯৯৯) ও সেইবো দেয়ার বিলো (২০০৮)—তাঁর এই দৃষ্টিভঙ্গিকে মহাজাগতিক পরিসরে বিস্তৃত করেছে। ‘ওয়ার অ্যান্ড ওয়ার’–এ তিনি এক নথি প্রহরীর গল্প বলেছেন, যিনি রহস্যময় এক পাণ্ডুলিপি প্রকাশ করতে নিউইয়র্কে পালিয়ে যান এবং আত্মহত্যা করেন—যেন ক্রম বিলীন পৃথিবীতে অর্থ ধরে রাখার এক মরিয়া চেষ্টা তাঁর।
ক্রাসনাহোরকাইয়ের লেখায় কাহিনি প্রায় সময়ই বাক্যের ভেতর হারিয়ে যায়। তিনি লিখেছেন এমন বাক্য, যা একাধিক পৃষ্ঠা জুড়ে পাঠককে টেনে নেয় অবচেতনে, অবিরাম প্রবাহে।
তাঁর সাহিত্যে হাস্যরস ও ট্র্যাজেডি পাশাপাশি চলে। স্যাটানট্যাঙ্গো–এর মাতাল নাচের দৃশ্য যেমন নিঃশেষের প্রতীক, তেমনি ‘ব্যারন ওয়েঙ্কহাইমস হোমকামিং’ (২০১৬)-এ দেখা যায়, ফিরে আসা এক পরাজিত অভিজাতকে। যার মাধ্যমে প্রকাশ পায় সভ্যতার পচন ও মানুষের হাস্যকর ভ্রান্তি।
২০১৫ সালে ম্যান বুকার পুরস্কার পাওয়ার মধ্য দিয়েই প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পান ক্রাসনাহোরকাই। অনুবাদক জর্জ সির্টেস ও ওটিলি মুলজেট তাঁর জটিল হাঙ্গেরিয়ান ভাষাকে ইংরেজিতে রূপ দিতে বিশেষ ভূমিকা রাখেন। ‘হাডসন রিভিউ’ তাঁকে বর্ণনা করেছিল ‘অন্তহীন বাক্যের ভ্রমণশিল্পী’ হিসেবে।
চল্লিশ বছরের সৃষ্টিতে ক্রাসনাহোরকাইয়ের ভুবন চিত্র, সংগীত, দর্শন ও ভাষার মিলনে বিস্তৃত। সাম্প্রতিক উপন্যাস ‘হার্শট ০৭৭৬৯’ (২০২৪)–এ তিনি এক প্রবাহিত বাক্যে লিখেছেন নব্য-নাৎসি, নেকড়ে আর এক হতভাগ্য পদার্থবিদের কাহিনি—আধুনিক ইউরোপের নৈতিক পক্ষাঘাতের রূপক হিসেবে।
তাঁর সমগ্র সাহিত্যজগৎ এক অন্ধকার ও ধ্যানমগ্ন মহাবিশ্ব—যেখানে পতন, শূন্যতা ও করুণা পাশাপাশি থাকে। ‘সেইবো দেয়ার বিলো’ বইটিতে তিনি লিখেছেন, ‘সৌন্দর্য, যত ক্ষণস্থায়ীই হোক না কেন, তা পবিত্রতার প্রতিবিম্ব।’ এই বিশ্বাসই লাসলো ক্রাসনাহোরকাইকে সেই বিরল লেখক করে তুলেছে, যাঁর নৈরাশ্যও মুক্তির মতো দীপ্ত।

এমন-না যে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের বহুখ্যাত আর আবৃত্তি উপযোগী কবিতা হিসেবে এই কবিতাটি কখনো শুনেছিলাম। কেউ কখনো বলেওনি এই কবিতাটির কথা। তখন পর্যন্ত পড়িনি, যতদিন-না তাঁর শ্রেষ্ঠ কবিতার সংকলনটি
০৭ সেপ্টেম্বর ২০২২
জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল।
৬ দিন আগে
জনপ্রিয় কিশোর গোয়েন্দা সিরিজ তিন গোয়েন্দার স্রষ্টা রকিব হাসান মারা গেছেন। আজ বুধবার রাজধানীর একটি হাসপাতালে ডায়ালাইসিস চলাকালে তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।
১১ দিন আগে
হাঙ্গেরির সাহিত্যে অসীম জনপ্রিয়তা ও প্রভাব তাঁর; বিশ্বজোড়া আতঙ্ক ও সন্ত্রাসের দাপটেও শিল্পের শক্তি চেনায় তাঁর কলম। তিনি হাঙ্গেরিয়ান ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই; সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০২৫ সালে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।
১৭ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

হাঙ্গেরির সাহিত্যে অসীম জনপ্রিয়তা ও প্রভাব তাঁর; বিশ্বজোড়া আতঙ্ক ও সন্ত্রাসের দাপটেও শিল্পের শক্তি চেনায় তাঁর কলম। তিনি হাঙ্গেরিয়ান ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই; সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০২৫ সালে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।
আধুনিক হাঙ্গেরীয় সাহিত্যের একজন অন্যতম প্রধান ব্যক্তিত্ব লাসলো। অভিনব শৈলীর পাশাপাশি দার্শনিক গভীরতার জন্য তাঁর সাহিত্য সমাদৃত হয়েছে। তাঁকে ফ্রানৎস কাফকা ও স্যামুয়েল বেকেটের ঐতিহ্যের উত্তরাধিকারী হিসেবে বিবেচনা করা হয়। বিশ্বজোড়া আতঙ্ক ও সন্ত্রাসের মধ্যেও শিল্পের লেলিহান ঔজ্জ্বল্য ফুটে ওঠে লাসলোর লেখায়। তাই যুদ্ধবিধ্বস্ত সময়ের বুকে ফুলের মতো স্থান করে নিল তাঁর সাহিত্য।
লাসলোর জন্য সাহিত্যে এটা প্রথম পুরস্কার নয়, ২০১৪ সালে সাহিত্যকর্মের জন্য ম্যান বুকার ইন্টারন্যাশনাল পুরস্কার পান তিনি। এ পুরস্কার বিশ্বসাহিত্যে তাঁর অবস্থানকে সুদৃঢ় করে।
লাসলোর সাহিত্যের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো—স্বতন্ত্র শৈলী ও গঠন। উপন্যাসের মূল বিষয়বস্তু হলো—মানবতার অবক্ষয়, ধ্বংসের অনিবার্যতা ও আধুনিক জীবনের লক্ষ্যহীন চলন। তাঁর চরিত্রদের মধ্যে প্রায়ই একধরনের হতাশা ও বিচ্ছিন্নতা দেখা যায়; তারা এমন এক জগতের পথিক, যেখানে নৈতিকতা ও আশা বিলীনপ্রায়।
১৯৮৫ সালে প্রকাশিত ‘স্যাটানটাঙ্গো’ নামে প্রথম উপন্যাস লিখেই খ্যাতি পান লাসলো। এই উপন্যাসে বিচ্ছিন্ন ও পতিত এক কৃষি সমবায় গ্রামের জীবন তুলে ধরেছেন তিনি। সেখানে একধরনের বিভ্রম ও আশার জন্ম দেয় এক রহস্যময় আগন্তুকের আগমনে। এই উপন্যাস অবলম্বনে একই শিরোনামে সাত ঘণ্টার কালজয়ী চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন বিখ্যাত পরিচালক বেলা টর।
লাসলোর আরেকটি ফিকশন উপন্যাস হলো— ‘দ্য মেলানকোলি অব রেজিস্ট্যান্স’। হাঙ্গেরির এক কাল্পনিক শহরের জীবন ফুটে উঠেছে এই উপন্যাসে। সামুদ্রিক প্রাণী হাঙরের প্রদর্শনীকে কেন্দ্র করে মানুষের মধ্যকার উন্মাদনা, সামাজিক বিশৃঙ্খলা ও একনায়কতন্ত্রের উত্থানের চিত্র আঁকা হয়েছে তাতে।
‘ওয়ার অ্যান্ড ওয়ার’ লাসলোর আরেকটি বিখ্যাত উপন্যাস। লম্বা লম্বা বাক্যে লেখা এই উপন্যাস লাসলোর শৈলী নিয়ে পাঠকদের নতুন করে ভাবায়। উপন্যাসের নায়ক একটি পাণ্ডুলিপি রক্ষা করার জন্য বিশ্বের বিভিন্ন শহর ঘুরে বেড়ায়। বিশ্বের চূড়ান্ত ধ্বংসের একটি কাব্যিক বর্ণনা পাওয়া যায় এই উপন্যাসে।
এবার লাসলোকে পুরস্কারের জন্য মনোনীত করার নেপথ্যে নোবেল কমিটির বড় কারণ ছিল তাঁর সাহিত্যে শিল্পের জয়ধ্বনি তোলার প্রচেষ্টা। যখন সারা বিশ্বের বেশ কিছু দেশ যুদ্ধবিধ্বস্ত বা যুদ্ধের জন্য উৎসুক, তখন বারবার শিল্পের মোহিনী প্রেম ও বন্ধনের কথা মনে করিয়ে দিতে চায় লাসলোর সাহিত্য।

হাঙ্গেরির সাহিত্যে অসীম জনপ্রিয়তা ও প্রভাব তাঁর; বিশ্বজোড়া আতঙ্ক ও সন্ত্রাসের দাপটেও শিল্পের শক্তি চেনায় তাঁর কলম। তিনি হাঙ্গেরিয়ান ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই; সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০২৫ সালে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।
আধুনিক হাঙ্গেরীয় সাহিত্যের একজন অন্যতম প্রধান ব্যক্তিত্ব লাসলো। অভিনব শৈলীর পাশাপাশি দার্শনিক গভীরতার জন্য তাঁর সাহিত্য সমাদৃত হয়েছে। তাঁকে ফ্রানৎস কাফকা ও স্যামুয়েল বেকেটের ঐতিহ্যের উত্তরাধিকারী হিসেবে বিবেচনা করা হয়। বিশ্বজোড়া আতঙ্ক ও সন্ত্রাসের মধ্যেও শিল্পের লেলিহান ঔজ্জ্বল্য ফুটে ওঠে লাসলোর লেখায়। তাই যুদ্ধবিধ্বস্ত সময়ের বুকে ফুলের মতো স্থান করে নিল তাঁর সাহিত্য।
লাসলোর জন্য সাহিত্যে এটা প্রথম পুরস্কার নয়, ২০১৪ সালে সাহিত্যকর্মের জন্য ম্যান বুকার ইন্টারন্যাশনাল পুরস্কার পান তিনি। এ পুরস্কার বিশ্বসাহিত্যে তাঁর অবস্থানকে সুদৃঢ় করে।
লাসলোর সাহিত্যের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো—স্বতন্ত্র শৈলী ও গঠন। উপন্যাসের মূল বিষয়বস্তু হলো—মানবতার অবক্ষয়, ধ্বংসের অনিবার্যতা ও আধুনিক জীবনের লক্ষ্যহীন চলন। তাঁর চরিত্রদের মধ্যে প্রায়ই একধরনের হতাশা ও বিচ্ছিন্নতা দেখা যায়; তারা এমন এক জগতের পথিক, যেখানে নৈতিকতা ও আশা বিলীনপ্রায়।
১৯৮৫ সালে প্রকাশিত ‘স্যাটানটাঙ্গো’ নামে প্রথম উপন্যাস লিখেই খ্যাতি পান লাসলো। এই উপন্যাসে বিচ্ছিন্ন ও পতিত এক কৃষি সমবায় গ্রামের জীবন তুলে ধরেছেন তিনি। সেখানে একধরনের বিভ্রম ও আশার জন্ম দেয় এক রহস্যময় আগন্তুকের আগমনে। এই উপন্যাস অবলম্বনে একই শিরোনামে সাত ঘণ্টার কালজয়ী চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন বিখ্যাত পরিচালক বেলা টর।
লাসলোর আরেকটি ফিকশন উপন্যাস হলো— ‘দ্য মেলানকোলি অব রেজিস্ট্যান্স’। হাঙ্গেরির এক কাল্পনিক শহরের জীবন ফুটে উঠেছে এই উপন্যাসে। সামুদ্রিক প্রাণী হাঙরের প্রদর্শনীকে কেন্দ্র করে মানুষের মধ্যকার উন্মাদনা, সামাজিক বিশৃঙ্খলা ও একনায়কতন্ত্রের উত্থানের চিত্র আঁকা হয়েছে তাতে।
‘ওয়ার অ্যান্ড ওয়ার’ লাসলোর আরেকটি বিখ্যাত উপন্যাস। লম্বা লম্বা বাক্যে লেখা এই উপন্যাস লাসলোর শৈলী নিয়ে পাঠকদের নতুন করে ভাবায়। উপন্যাসের নায়ক একটি পাণ্ডুলিপি রক্ষা করার জন্য বিশ্বের বিভিন্ন শহর ঘুরে বেড়ায়। বিশ্বের চূড়ান্ত ধ্বংসের একটি কাব্যিক বর্ণনা পাওয়া যায় এই উপন্যাসে।
এবার লাসলোকে পুরস্কারের জন্য মনোনীত করার নেপথ্যে নোবেল কমিটির বড় কারণ ছিল তাঁর সাহিত্যে শিল্পের জয়ধ্বনি তোলার প্রচেষ্টা। যখন সারা বিশ্বের বেশ কিছু দেশ যুদ্ধবিধ্বস্ত বা যুদ্ধের জন্য উৎসুক, তখন বারবার শিল্পের মোহিনী প্রেম ও বন্ধনের কথা মনে করিয়ে দিতে চায় লাসলোর সাহিত্য।

এমন-না যে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের বহুখ্যাত আর আবৃত্তি উপযোগী কবিতা হিসেবে এই কবিতাটি কখনো শুনেছিলাম। কেউ কখনো বলেওনি এই কবিতাটির কথা। তখন পর্যন্ত পড়িনি, যতদিন-না তাঁর শ্রেষ্ঠ কবিতার সংকলনটি
০৭ সেপ্টেম্বর ২০২২
জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল।
৬ দিন আগে
জনপ্রিয় কিশোর গোয়েন্দা সিরিজ তিন গোয়েন্দার স্রষ্টা রকিব হাসান মারা গেছেন। আজ বুধবার রাজধানীর একটি হাসপাতালে ডায়ালাইসিস চলাকালে তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।
১১ দিন আগে
হাঙ্গেরির ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই এবার (২০২৫ সালে) সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন তাঁর দীর্ঘ, দার্শনিক বাক্য ও মানবজীবনের বিশৃঙ্খলার গভীর অনুসন্ধানী সাহিত্যকর্মের জন্য। সুইডিশ একাডেমি তাঁকে সম্মান জানিয়েছে ‘শিল্পের শক্তিকে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করার’ জন্য।
১৭ দিন আগে