নওশাদ জামিল

আপনার বড় ভাই হুমায়ূন আহমেদকে নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় লিখেছেন। বিভিন্ন আলোচনা-বক্তব্যে বলেছেন তাঁর কথা। হুমায়ূন সম্পর্ক এমন কিছু জানতে চাই, যা আগে কখনো বলেননি, কিংবা কোথাও লেখেননি।
আপনি একদম শুরুতেই কঠিন প্রশ্ন করেছেন। হা হা হা! নতুন কথা কী আর বলব! অবশ্য একটা মজার কথা বলতে পারি। সেটা অনেকের কাছেই নতুন কথা হতে পারে। সম্ভবত আগে তা কখনো বলিনি। সেটা হলো—হুমায়ূন আহমেদ ভালো অভিনেতা ছিল। ছোটবেলায় স্কুলে পড়ার সময় নিয়মিত অভিনয় করত। স্কুলের নাটক দলে, পাড়া-মহল্লার বিভিন্ন অনুষ্ঠানে পারফর্ম করত।
তারপর অবশ্য অভিনয় ছেড়ে দেয়। আমার মনে হয়, জীবনের একটা পর্যায়ে সে অনেক নাটক-সিনেমা বানিয়েছে, স্ক্রিপ্ট লিখেছে—এটার পেছনে তার শৈশব-কৈশোরের অভিনয় প্রতিভার ভূমিকা ছিল। নাটক-সিনেমা নিয়ে তার বাড়াবাড়ি রকমের আগ্রহ ছিল, আকর্ষণ ছিল, হয়তো কৈশোরের স্মৃতি তাকে অনুপ্রাণিত করত, ভেতর থেকে উৎসাহ জোগাত। আমাদের বাবা ছিলেন বইপাগল মানুষ। প্রচুর বই পড়তেন। আমাদের বই পড়ায় উৎসাহ দিতেন। গানবাজনা, নাটক-সিনেমা-যাত্রা পছন্দ করতেন। আমাদের ভেতর যে সংস্কৃতিবোধ বেড়ে উঠেছে, আমার তো মনে হয়, সেটা উত্তরাধিকারসূত্রেই এসেছে।
হুমায়ূন আহমেদ মূলত কথাসাহিত্যিক। অন্যান্য সেক্টরেও প্রচুর কাজ করেছেন। নাটক-সিনেমার কথা বলছিলেন। আপনার কী মনে হয়, নাটক-সিনেমায় প্রচুর সময় ব্যয় দিতে গিয়ে তাঁর মৌলিক লেখালেখি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল?
সে আসলেই ভীষণ প্রতিভাবান ছিল। বিভিন্ন বিষয়ে তার আগ্রহ-কৌতূহল ছিল, ব্যাপক পড়াশোনা ও জানাশোনা ছিল। নাটক-সিনেমার পেছনে অনেক সময় দিয়েছে। প্রচুর কাজ করেছে। তাঁর নাটক-সিনেমা তো ভীষণ জনপ্রিয়, দর্শকনন্দিত। তবে আমার এটা মনে হয়, সে যদি শুধুই লেখালেখিতে নিরবচ্ছিন্নভাবে সময় দিতে পারত, তাহলে আমরা আরও অসাধারণ লেখা পেতাম।
হুমায়ূন এবং আপনি প্রায় সমসাময়িক লেখক। আপনারা দুজনই বিপুল পাঠকনন্দিত, জনপ্রিয়। একজন লেখক হিসেবে লেখক হুমায়ূন আহমেদকে কীভাবে মূল্যায়ন করবেন? তাঁর কোন ধরনের লেখা আপনার বেশি প্রিয়?
এটাও অনেক কঠিন প্রশ্ন হয়ে গেল। আমি সমালোচক নই, সাহিত্যতাত্ত্বিক নই। আমার পক্ষে হুমায়ূনকে মূল্যায়ন করা কঠিন হবে। নিরপেক্ষ ও নির্মোহভাবে বলা আরও কঠিন হবে। অবশ্য পাঠক হিসেবে কিছু কথা বলতে পারব। ব্যক্তিগতভাবে বলব, হুমায়ূনের ছোটগল্পগুলো অসাধারণ। ওর অধিকাংশ গল্পই দুর্দান্ত। আমার একটা আফসোস আছে, সেটা হলো ওর গল্পগুলোর ভালো অনুবাদ হয়নি। পৃথিবীখ্যাত বড় কোনো প্রকাশনী থেকেও বের হয়নি। যেসব গল্প ইংরেজিতে অনূদিত হয়েছে, সেসব খুবই ম্যাড়মেড়ে ভাষার। ইংরেজি মান তত উন্নত নয়। ওর গল্পগুলো স্মার্ট ইংরেজিতে অনুবাদ করা জরুরি। আমার বিশ্বাস, ওর গল্প সারা বিশ্বেই সমাদৃত হতে পারে।
সাহিত্য ক্ষেত্রে কিংবা ব্যক্তি ক্ষেত্রে হুমায়ূন কি কখনো আপনাদের পরামর্শ শুনতেন? আপনার মতামত অনুসারে কখনো কি কোনো লেখা সংশোধন কিংবা পরিমার্জন করেছেন?
হুমায়ূন কখনো কারও পরামর্শ নিয়ে চলত না। সে চলত নিজের মতো। যখন যা ভালো মনে করত, সেটা সে করত; বিশেষ করে লেখালেখির ক্ষেত্রে সে কারও কোনো পরামর্শ শুনত না।
আপনাকে একটা মজার কথা বলি। সে তার ‘জোছনা ও জননীর গল্প’ বইটি আমাকে পড়তে দিয়েছিল। উদ্দেশ্য বইটির প্রকাশনা উৎসবে আমার কিছু বলতে হবে। বেশ ঘটা করে প্রকাশনা উৎসব হয়েছিল। সেটা আবার লাইভ টেলিকাস্টও হয়েছিল। ওই অনুষ্ঠানে আনিসুজ্জামান, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় ছাড়াও অন্য অতিথিদের সঙ্গে আমিও ছিলাম। সবার নাম মনে পড়ছে না এখন। ‘জোছনা ও জননীর গল্প’ উপন্যাসে একটা জায়গায় লেখা ছিল এপ্রিল মাসে আকাশে কালপুরুষ থাকে। এটা বৈজ্ঞানিকভাবে ভুল তথ্য। আমি প্রকাশনা অনুষ্ঠানে তা সরাসরি বলেছিলাম। সে বইটির পরের সংস্করণে তা ঠিক করেনি। সে বরং নতুন সংস্করণের ভূমিকায় লিখেছে, ‘আমার ছোট ভাই ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল বইটিতে বৈজ্ঞানিক তথ্যের একটি ভুল বের করেছে। যে সময়ের কথা বইটিতে আছে, সেই সময়ে আকাশে কালপুরুষ থাকে না। এ ভুলটি শুদ্ধ করলাম না।’ এবার বোঝেন, সে কেমন ত্যাড়া ছিল।
বাইরের দেশগুলোয় বড় প্রকাশনীতে অনিবার্যভাবে থাকে সংস্থার সম্পাদনা পর্ষদ। তাঁরা লেখা সংশোধন ও পরিমার্জনে ভূমিকা রাখেন। বাংলাদেশে অধিকাংশ প্রকাশনীর সম্পাদনা বিভাগ নেই।
বাংলাদেশে কেউ তো হুমায়ূনের লেখা কাটাছেঁড়া করতে পারত না।
বাংলাদেশের প্রকাশনীতে সম্পাদনা বিভাগ থাকলে হুমায়ূনের সঙ্গে মারামারি হয়ে যেত। কারণ সে যা লিখত, সেটাই সঠিক মনে করত। ভুলের পক্ষেও চমৎকার যুক্তি দাঁড় করাত। প্রকাশকেরা তার লেখার জন্য মুখিয়ে থাকত, একপায়ে দাঁড়িয়ে থাকত। সম্পাদনা কখন করাবে? হা হা হা।
অনেকে অভিযোগ করেন, প্রকাশক ও পাঠকের চাপে পড়ে হুমায়ূন আহমেদ মানহীন অনেক লেখাই লিখেছেন। এ সম্পর্কে আপনার অভিমত জানতে চাই।
প্রকাশকের চাপ তো ভয়ংকর চাপ। এটা অস্বীকার করার উপায় নেই। বাইরের দেশে একজন লেখক পাঁচ বছরে একটা বই লেখেন। রীতিমতো ভেবেচিন্তে লেখেন, গবেষণা করে বই লেখেন।
আমাদের দেশে একজন লেখক প্রতিবছর পাঁচ-সাতটি বই লেখেন। হুমায়ূনের ক্ষেত্রে শুধু প্রকাশক, পাঠক নয়, পত্রিকাওয়ালা ও টিভিওয়ালাদেরও ভীষণ চাপ ছিল। সেই চাপে পড়ে কিছু খারাপ লেখা লিখতে পারে। এটা মিথ্যা নয়। আমার কাছেও তার কিছু লেখা অসম্পূর্ণ মনে হয়েছে। পড়ার পর মনে হয়েছে, লেখাটা আরও বিস্তৃত হতে পারত, আরও বিস্তারিত হতে পারত।
আপনার নিজের লেখালেখির ক্ষেত্রে হুমায়ূনের কী কোনো প্রভাব ও অনুপ্রেরণা আছে? অনেকে বলেন, সায়েন্স ফিকশন লেখার ক্ষেত্রে আপনার বড় অনুপ্রেরণা ছিল হুমায়ূন আহমেদ।
আপনাকে একটা মজার কথা বলি। আমাদের পরিবারে লেখালেখিটা খুবই সাধারণ ব্যাপার, সহজ ব্যাপার। ডাল-ভাতের মতো বিষয় আরকি। আমরা সব ভাই-বোন লিখতে পারি। হাতে কাগজ-কলম থাকলেই হলো, আমরা চাইলেই মুহূর্তেই লিখতে পারি। এটার পেছনে আমাদের বাবার একটা বড় ভূমিকা ছিল। তিনি খুব পড়ুয়া ছিলেন। আমাদেরও সবাইকে বিভিন্ন বই পড়তে দিতেন।
হুমায়ূন যে লেখক হবে, এটা আমরা অনেক আগেই বুঝতে পেরেছিলাম। সে তার ‘নন্দিত নরকে’ লিখে আমাকেই প্রথমে পড়তে দিয়েছিল। আমি ছিলাম এটার প্রথম পাঠক, পাণ্ডুলিপি পড়েই
আমি বুঝে গিয়েছিলাম, সে লেখক হয়ে গেছে। আমার ‘কপোট্রনিক সুখদুঃখ’ বেরোনোর আগে সে পাণ্ডুলিপির খাতাটা টেবিল থেকে নিয়ে পড়েছিল। আমাকে বলেছিল, ‘তুই কি এটা নিজে
লিখছিস? নাকি অনুবাদ করছিস?’ আমি বলেছিলাম, ‘নিজেই লিখছি।’ সে ছোট করে বলেছিল, ‘তোকে দিয়ে হবে।’
হা হা হা।
একজন লেখক হিসেবে লেখক হুমায়ূন আহমেদকে কি কখনো ঈর্ষা করেছেন?
হুমায়ূনের জনপ্রিয়তা ও লেখালেখি নিয়ে আমার ভেতর কখনো কোনো ঈর্ষা কাজ করেনি। আমি ওর ছোট ভাই, এটাই আমার গর্বের পরিচয়। ওর জনপ্রিয়তার ধারে-কাছেও আমি নেই। তার জনপ্রিয়তার একটা উদাহরণ দিই। একবার এক লোক এলেন আমার সঙ্গে দেখা করতে, সিলেটে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে। তিনি আবেগতাড়িত হয়ে বললেন, ‘আমি বহু দূর থেকে এসেছি। কষ্ট করে অনেক পথ পাড়ি দিয়ে এসেছি। আমি কি আপনার হাত ধরতে পারি?’ আমি তাঁকে বললাম, ‘জি, পারেন।’
তারপর ওই দর্শনার্থী বললেন, ‘এটা কি সত্যি যে আপনি হুমায়ূন আহমেদের ভাই?’ আমি বললাম, ‘হ্যাঁ, সত্য।’
আনন্দে আত্মহারা হয়ে তিনি বললেন, ‘আমার জীবন আজ সার্থক। আমি হুমায়ূন আহমেদের ভাইয়ের হাত স্পর্শ করতে পেরেছি।’

আপনার বড় ভাই হুমায়ূন আহমেদকে নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় লিখেছেন। বিভিন্ন আলোচনা-বক্তব্যে বলেছেন তাঁর কথা। হুমায়ূন সম্পর্ক এমন কিছু জানতে চাই, যা আগে কখনো বলেননি, কিংবা কোথাও লেখেননি।
আপনি একদম শুরুতেই কঠিন প্রশ্ন করেছেন। হা হা হা! নতুন কথা কী আর বলব! অবশ্য একটা মজার কথা বলতে পারি। সেটা অনেকের কাছেই নতুন কথা হতে পারে। সম্ভবত আগে তা কখনো বলিনি। সেটা হলো—হুমায়ূন আহমেদ ভালো অভিনেতা ছিল। ছোটবেলায় স্কুলে পড়ার সময় নিয়মিত অভিনয় করত। স্কুলের নাটক দলে, পাড়া-মহল্লার বিভিন্ন অনুষ্ঠানে পারফর্ম করত।
তারপর অবশ্য অভিনয় ছেড়ে দেয়। আমার মনে হয়, জীবনের একটা পর্যায়ে সে অনেক নাটক-সিনেমা বানিয়েছে, স্ক্রিপ্ট লিখেছে—এটার পেছনে তার শৈশব-কৈশোরের অভিনয় প্রতিভার ভূমিকা ছিল। নাটক-সিনেমা নিয়ে তার বাড়াবাড়ি রকমের আগ্রহ ছিল, আকর্ষণ ছিল, হয়তো কৈশোরের স্মৃতি তাকে অনুপ্রাণিত করত, ভেতর থেকে উৎসাহ জোগাত। আমাদের বাবা ছিলেন বইপাগল মানুষ। প্রচুর বই পড়তেন। আমাদের বই পড়ায় উৎসাহ দিতেন। গানবাজনা, নাটক-সিনেমা-যাত্রা পছন্দ করতেন। আমাদের ভেতর যে সংস্কৃতিবোধ বেড়ে উঠেছে, আমার তো মনে হয়, সেটা উত্তরাধিকারসূত্রেই এসেছে।
হুমায়ূন আহমেদ মূলত কথাসাহিত্যিক। অন্যান্য সেক্টরেও প্রচুর কাজ করেছেন। নাটক-সিনেমার কথা বলছিলেন। আপনার কী মনে হয়, নাটক-সিনেমায় প্রচুর সময় ব্যয় দিতে গিয়ে তাঁর মৌলিক লেখালেখি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল?
সে আসলেই ভীষণ প্রতিভাবান ছিল। বিভিন্ন বিষয়ে তার আগ্রহ-কৌতূহল ছিল, ব্যাপক পড়াশোনা ও জানাশোনা ছিল। নাটক-সিনেমার পেছনে অনেক সময় দিয়েছে। প্রচুর কাজ করেছে। তাঁর নাটক-সিনেমা তো ভীষণ জনপ্রিয়, দর্শকনন্দিত। তবে আমার এটা মনে হয়, সে যদি শুধুই লেখালেখিতে নিরবচ্ছিন্নভাবে সময় দিতে পারত, তাহলে আমরা আরও অসাধারণ লেখা পেতাম।
হুমায়ূন এবং আপনি প্রায় সমসাময়িক লেখক। আপনারা দুজনই বিপুল পাঠকনন্দিত, জনপ্রিয়। একজন লেখক হিসেবে লেখক হুমায়ূন আহমেদকে কীভাবে মূল্যায়ন করবেন? তাঁর কোন ধরনের লেখা আপনার বেশি প্রিয়?
এটাও অনেক কঠিন প্রশ্ন হয়ে গেল। আমি সমালোচক নই, সাহিত্যতাত্ত্বিক নই। আমার পক্ষে হুমায়ূনকে মূল্যায়ন করা কঠিন হবে। নিরপেক্ষ ও নির্মোহভাবে বলা আরও কঠিন হবে। অবশ্য পাঠক হিসেবে কিছু কথা বলতে পারব। ব্যক্তিগতভাবে বলব, হুমায়ূনের ছোটগল্পগুলো অসাধারণ। ওর অধিকাংশ গল্পই দুর্দান্ত। আমার একটা আফসোস আছে, সেটা হলো ওর গল্পগুলোর ভালো অনুবাদ হয়নি। পৃথিবীখ্যাত বড় কোনো প্রকাশনী থেকেও বের হয়নি। যেসব গল্প ইংরেজিতে অনূদিত হয়েছে, সেসব খুবই ম্যাড়মেড়ে ভাষার। ইংরেজি মান তত উন্নত নয়। ওর গল্পগুলো স্মার্ট ইংরেজিতে অনুবাদ করা জরুরি। আমার বিশ্বাস, ওর গল্প সারা বিশ্বেই সমাদৃত হতে পারে।
সাহিত্য ক্ষেত্রে কিংবা ব্যক্তি ক্ষেত্রে হুমায়ূন কি কখনো আপনাদের পরামর্শ শুনতেন? আপনার মতামত অনুসারে কখনো কি কোনো লেখা সংশোধন কিংবা পরিমার্জন করেছেন?
হুমায়ূন কখনো কারও পরামর্শ নিয়ে চলত না। সে চলত নিজের মতো। যখন যা ভালো মনে করত, সেটা সে করত; বিশেষ করে লেখালেখির ক্ষেত্রে সে কারও কোনো পরামর্শ শুনত না।
আপনাকে একটা মজার কথা বলি। সে তার ‘জোছনা ও জননীর গল্প’ বইটি আমাকে পড়তে দিয়েছিল। উদ্দেশ্য বইটির প্রকাশনা উৎসবে আমার কিছু বলতে হবে। বেশ ঘটা করে প্রকাশনা উৎসব হয়েছিল। সেটা আবার লাইভ টেলিকাস্টও হয়েছিল। ওই অনুষ্ঠানে আনিসুজ্জামান, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় ছাড়াও অন্য অতিথিদের সঙ্গে আমিও ছিলাম। সবার নাম মনে পড়ছে না এখন। ‘জোছনা ও জননীর গল্প’ উপন্যাসে একটা জায়গায় লেখা ছিল এপ্রিল মাসে আকাশে কালপুরুষ থাকে। এটা বৈজ্ঞানিকভাবে ভুল তথ্য। আমি প্রকাশনা অনুষ্ঠানে তা সরাসরি বলেছিলাম। সে বইটির পরের সংস্করণে তা ঠিক করেনি। সে বরং নতুন সংস্করণের ভূমিকায় লিখেছে, ‘আমার ছোট ভাই ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল বইটিতে বৈজ্ঞানিক তথ্যের একটি ভুল বের করেছে। যে সময়ের কথা বইটিতে আছে, সেই সময়ে আকাশে কালপুরুষ থাকে না। এ ভুলটি শুদ্ধ করলাম না।’ এবার বোঝেন, সে কেমন ত্যাড়া ছিল।
বাইরের দেশগুলোয় বড় প্রকাশনীতে অনিবার্যভাবে থাকে সংস্থার সম্পাদনা পর্ষদ। তাঁরা লেখা সংশোধন ও পরিমার্জনে ভূমিকা রাখেন। বাংলাদেশে অধিকাংশ প্রকাশনীর সম্পাদনা বিভাগ নেই।
বাংলাদেশে কেউ তো হুমায়ূনের লেখা কাটাছেঁড়া করতে পারত না।
বাংলাদেশের প্রকাশনীতে সম্পাদনা বিভাগ থাকলে হুমায়ূনের সঙ্গে মারামারি হয়ে যেত। কারণ সে যা লিখত, সেটাই সঠিক মনে করত। ভুলের পক্ষেও চমৎকার যুক্তি দাঁড় করাত। প্রকাশকেরা তার লেখার জন্য মুখিয়ে থাকত, একপায়ে দাঁড়িয়ে থাকত। সম্পাদনা কখন করাবে? হা হা হা।
অনেকে অভিযোগ করেন, প্রকাশক ও পাঠকের চাপে পড়ে হুমায়ূন আহমেদ মানহীন অনেক লেখাই লিখেছেন। এ সম্পর্কে আপনার অভিমত জানতে চাই।
প্রকাশকের চাপ তো ভয়ংকর চাপ। এটা অস্বীকার করার উপায় নেই। বাইরের দেশে একজন লেখক পাঁচ বছরে একটা বই লেখেন। রীতিমতো ভেবেচিন্তে লেখেন, গবেষণা করে বই লেখেন।
আমাদের দেশে একজন লেখক প্রতিবছর পাঁচ-সাতটি বই লেখেন। হুমায়ূনের ক্ষেত্রে শুধু প্রকাশক, পাঠক নয়, পত্রিকাওয়ালা ও টিভিওয়ালাদেরও ভীষণ চাপ ছিল। সেই চাপে পড়ে কিছু খারাপ লেখা লিখতে পারে। এটা মিথ্যা নয়। আমার কাছেও তার কিছু লেখা অসম্পূর্ণ মনে হয়েছে। পড়ার পর মনে হয়েছে, লেখাটা আরও বিস্তৃত হতে পারত, আরও বিস্তারিত হতে পারত।
আপনার নিজের লেখালেখির ক্ষেত্রে হুমায়ূনের কী কোনো প্রভাব ও অনুপ্রেরণা আছে? অনেকে বলেন, সায়েন্স ফিকশন লেখার ক্ষেত্রে আপনার বড় অনুপ্রেরণা ছিল হুমায়ূন আহমেদ।
আপনাকে একটা মজার কথা বলি। আমাদের পরিবারে লেখালেখিটা খুবই সাধারণ ব্যাপার, সহজ ব্যাপার। ডাল-ভাতের মতো বিষয় আরকি। আমরা সব ভাই-বোন লিখতে পারি। হাতে কাগজ-কলম থাকলেই হলো, আমরা চাইলেই মুহূর্তেই লিখতে পারি। এটার পেছনে আমাদের বাবার একটা বড় ভূমিকা ছিল। তিনি খুব পড়ুয়া ছিলেন। আমাদেরও সবাইকে বিভিন্ন বই পড়তে দিতেন।
হুমায়ূন যে লেখক হবে, এটা আমরা অনেক আগেই বুঝতে পেরেছিলাম। সে তার ‘নন্দিত নরকে’ লিখে আমাকেই প্রথমে পড়তে দিয়েছিল। আমি ছিলাম এটার প্রথম পাঠক, পাণ্ডুলিপি পড়েই
আমি বুঝে গিয়েছিলাম, সে লেখক হয়ে গেছে। আমার ‘কপোট্রনিক সুখদুঃখ’ বেরোনোর আগে সে পাণ্ডুলিপির খাতাটা টেবিল থেকে নিয়ে পড়েছিল। আমাকে বলেছিল, ‘তুই কি এটা নিজে
লিখছিস? নাকি অনুবাদ করছিস?’ আমি বলেছিলাম, ‘নিজেই লিখছি।’ সে ছোট করে বলেছিল, ‘তোকে দিয়ে হবে।’
হা হা হা।
একজন লেখক হিসেবে লেখক হুমায়ূন আহমেদকে কি কখনো ঈর্ষা করেছেন?
হুমায়ূনের জনপ্রিয়তা ও লেখালেখি নিয়ে আমার ভেতর কখনো কোনো ঈর্ষা কাজ করেনি। আমি ওর ছোট ভাই, এটাই আমার গর্বের পরিচয়। ওর জনপ্রিয়তার ধারে-কাছেও আমি নেই। তার জনপ্রিয়তার একটা উদাহরণ দিই। একবার এক লোক এলেন আমার সঙ্গে দেখা করতে, সিলেটে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে। তিনি আবেগতাড়িত হয়ে বললেন, ‘আমি বহু দূর থেকে এসেছি। কষ্ট করে অনেক পথ পাড়ি দিয়ে এসেছি। আমি কি আপনার হাত ধরতে পারি?’ আমি তাঁকে বললাম, ‘জি, পারেন।’
তারপর ওই দর্শনার্থী বললেন, ‘এটা কি সত্যি যে আপনি হুমায়ূন আহমেদের ভাই?’ আমি বললাম, ‘হ্যাঁ, সত্য।’
আনন্দে আত্মহারা হয়ে তিনি বললেন, ‘আমার জীবন আজ সার্থক। আমি হুমায়ূন আহমেদের ভাইয়ের হাত স্পর্শ করতে পেরেছি।’
নওশাদ জামিল

আপনার বড় ভাই হুমায়ূন আহমেদকে নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় লিখেছেন। বিভিন্ন আলোচনা-বক্তব্যে বলেছেন তাঁর কথা। হুমায়ূন সম্পর্ক এমন কিছু জানতে চাই, যা আগে কখনো বলেননি, কিংবা কোথাও লেখেননি।
আপনি একদম শুরুতেই কঠিন প্রশ্ন করেছেন। হা হা হা! নতুন কথা কী আর বলব! অবশ্য একটা মজার কথা বলতে পারি। সেটা অনেকের কাছেই নতুন কথা হতে পারে। সম্ভবত আগে তা কখনো বলিনি। সেটা হলো—হুমায়ূন আহমেদ ভালো অভিনেতা ছিল। ছোটবেলায় স্কুলে পড়ার সময় নিয়মিত অভিনয় করত। স্কুলের নাটক দলে, পাড়া-মহল্লার বিভিন্ন অনুষ্ঠানে পারফর্ম করত।
তারপর অবশ্য অভিনয় ছেড়ে দেয়। আমার মনে হয়, জীবনের একটা পর্যায়ে সে অনেক নাটক-সিনেমা বানিয়েছে, স্ক্রিপ্ট লিখেছে—এটার পেছনে তার শৈশব-কৈশোরের অভিনয় প্রতিভার ভূমিকা ছিল। নাটক-সিনেমা নিয়ে তার বাড়াবাড়ি রকমের আগ্রহ ছিল, আকর্ষণ ছিল, হয়তো কৈশোরের স্মৃতি তাকে অনুপ্রাণিত করত, ভেতর থেকে উৎসাহ জোগাত। আমাদের বাবা ছিলেন বইপাগল মানুষ। প্রচুর বই পড়তেন। আমাদের বই পড়ায় উৎসাহ দিতেন। গানবাজনা, নাটক-সিনেমা-যাত্রা পছন্দ করতেন। আমাদের ভেতর যে সংস্কৃতিবোধ বেড়ে উঠেছে, আমার তো মনে হয়, সেটা উত্তরাধিকারসূত্রেই এসেছে।
হুমায়ূন আহমেদ মূলত কথাসাহিত্যিক। অন্যান্য সেক্টরেও প্রচুর কাজ করেছেন। নাটক-সিনেমার কথা বলছিলেন। আপনার কী মনে হয়, নাটক-সিনেমায় প্রচুর সময় ব্যয় দিতে গিয়ে তাঁর মৌলিক লেখালেখি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল?
সে আসলেই ভীষণ প্রতিভাবান ছিল। বিভিন্ন বিষয়ে তার আগ্রহ-কৌতূহল ছিল, ব্যাপক পড়াশোনা ও জানাশোনা ছিল। নাটক-সিনেমার পেছনে অনেক সময় দিয়েছে। প্রচুর কাজ করেছে। তাঁর নাটক-সিনেমা তো ভীষণ জনপ্রিয়, দর্শকনন্দিত। তবে আমার এটা মনে হয়, সে যদি শুধুই লেখালেখিতে নিরবচ্ছিন্নভাবে সময় দিতে পারত, তাহলে আমরা আরও অসাধারণ লেখা পেতাম।
হুমায়ূন এবং আপনি প্রায় সমসাময়িক লেখক। আপনারা দুজনই বিপুল পাঠকনন্দিত, জনপ্রিয়। একজন লেখক হিসেবে লেখক হুমায়ূন আহমেদকে কীভাবে মূল্যায়ন করবেন? তাঁর কোন ধরনের লেখা আপনার বেশি প্রিয়?
এটাও অনেক কঠিন প্রশ্ন হয়ে গেল। আমি সমালোচক নই, সাহিত্যতাত্ত্বিক নই। আমার পক্ষে হুমায়ূনকে মূল্যায়ন করা কঠিন হবে। নিরপেক্ষ ও নির্মোহভাবে বলা আরও কঠিন হবে। অবশ্য পাঠক হিসেবে কিছু কথা বলতে পারব। ব্যক্তিগতভাবে বলব, হুমায়ূনের ছোটগল্পগুলো অসাধারণ। ওর অধিকাংশ গল্পই দুর্দান্ত। আমার একটা আফসোস আছে, সেটা হলো ওর গল্পগুলোর ভালো অনুবাদ হয়নি। পৃথিবীখ্যাত বড় কোনো প্রকাশনী থেকেও বের হয়নি। যেসব গল্প ইংরেজিতে অনূদিত হয়েছে, সেসব খুবই ম্যাড়মেড়ে ভাষার। ইংরেজি মান তত উন্নত নয়। ওর গল্পগুলো স্মার্ট ইংরেজিতে অনুবাদ করা জরুরি। আমার বিশ্বাস, ওর গল্প সারা বিশ্বেই সমাদৃত হতে পারে।
সাহিত্য ক্ষেত্রে কিংবা ব্যক্তি ক্ষেত্রে হুমায়ূন কি কখনো আপনাদের পরামর্শ শুনতেন? আপনার মতামত অনুসারে কখনো কি কোনো লেখা সংশোধন কিংবা পরিমার্জন করেছেন?
হুমায়ূন কখনো কারও পরামর্শ নিয়ে চলত না। সে চলত নিজের মতো। যখন যা ভালো মনে করত, সেটা সে করত; বিশেষ করে লেখালেখির ক্ষেত্রে সে কারও কোনো পরামর্শ শুনত না।
আপনাকে একটা মজার কথা বলি। সে তার ‘জোছনা ও জননীর গল্প’ বইটি আমাকে পড়তে দিয়েছিল। উদ্দেশ্য বইটির প্রকাশনা উৎসবে আমার কিছু বলতে হবে। বেশ ঘটা করে প্রকাশনা উৎসব হয়েছিল। সেটা আবার লাইভ টেলিকাস্টও হয়েছিল। ওই অনুষ্ঠানে আনিসুজ্জামান, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় ছাড়াও অন্য অতিথিদের সঙ্গে আমিও ছিলাম। সবার নাম মনে পড়ছে না এখন। ‘জোছনা ও জননীর গল্প’ উপন্যাসে একটা জায়গায় লেখা ছিল এপ্রিল মাসে আকাশে কালপুরুষ থাকে। এটা বৈজ্ঞানিকভাবে ভুল তথ্য। আমি প্রকাশনা অনুষ্ঠানে তা সরাসরি বলেছিলাম। সে বইটির পরের সংস্করণে তা ঠিক করেনি। সে বরং নতুন সংস্করণের ভূমিকায় লিখেছে, ‘আমার ছোট ভাই ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল বইটিতে বৈজ্ঞানিক তথ্যের একটি ভুল বের করেছে। যে সময়ের কথা বইটিতে আছে, সেই সময়ে আকাশে কালপুরুষ থাকে না। এ ভুলটি শুদ্ধ করলাম না।’ এবার বোঝেন, সে কেমন ত্যাড়া ছিল।
বাইরের দেশগুলোয় বড় প্রকাশনীতে অনিবার্যভাবে থাকে সংস্থার সম্পাদনা পর্ষদ। তাঁরা লেখা সংশোধন ও পরিমার্জনে ভূমিকা রাখেন। বাংলাদেশে অধিকাংশ প্রকাশনীর সম্পাদনা বিভাগ নেই।
বাংলাদেশে কেউ তো হুমায়ূনের লেখা কাটাছেঁড়া করতে পারত না।
বাংলাদেশের প্রকাশনীতে সম্পাদনা বিভাগ থাকলে হুমায়ূনের সঙ্গে মারামারি হয়ে যেত। কারণ সে যা লিখত, সেটাই সঠিক মনে করত। ভুলের পক্ষেও চমৎকার যুক্তি দাঁড় করাত। প্রকাশকেরা তার লেখার জন্য মুখিয়ে থাকত, একপায়ে দাঁড়িয়ে থাকত। সম্পাদনা কখন করাবে? হা হা হা।
অনেকে অভিযোগ করেন, প্রকাশক ও পাঠকের চাপে পড়ে হুমায়ূন আহমেদ মানহীন অনেক লেখাই লিখেছেন। এ সম্পর্কে আপনার অভিমত জানতে চাই।
প্রকাশকের চাপ তো ভয়ংকর চাপ। এটা অস্বীকার করার উপায় নেই। বাইরের দেশে একজন লেখক পাঁচ বছরে একটা বই লেখেন। রীতিমতো ভেবেচিন্তে লেখেন, গবেষণা করে বই লেখেন।
আমাদের দেশে একজন লেখক প্রতিবছর পাঁচ-সাতটি বই লেখেন। হুমায়ূনের ক্ষেত্রে শুধু প্রকাশক, পাঠক নয়, পত্রিকাওয়ালা ও টিভিওয়ালাদেরও ভীষণ চাপ ছিল। সেই চাপে পড়ে কিছু খারাপ লেখা লিখতে পারে। এটা মিথ্যা নয়। আমার কাছেও তার কিছু লেখা অসম্পূর্ণ মনে হয়েছে। পড়ার পর মনে হয়েছে, লেখাটা আরও বিস্তৃত হতে পারত, আরও বিস্তারিত হতে পারত।
আপনার নিজের লেখালেখির ক্ষেত্রে হুমায়ূনের কী কোনো প্রভাব ও অনুপ্রেরণা আছে? অনেকে বলেন, সায়েন্স ফিকশন লেখার ক্ষেত্রে আপনার বড় অনুপ্রেরণা ছিল হুমায়ূন আহমেদ।
আপনাকে একটা মজার কথা বলি। আমাদের পরিবারে লেখালেখিটা খুবই সাধারণ ব্যাপার, সহজ ব্যাপার। ডাল-ভাতের মতো বিষয় আরকি। আমরা সব ভাই-বোন লিখতে পারি। হাতে কাগজ-কলম থাকলেই হলো, আমরা চাইলেই মুহূর্তেই লিখতে পারি। এটার পেছনে আমাদের বাবার একটা বড় ভূমিকা ছিল। তিনি খুব পড়ুয়া ছিলেন। আমাদেরও সবাইকে বিভিন্ন বই পড়তে দিতেন।
হুমায়ূন যে লেখক হবে, এটা আমরা অনেক আগেই বুঝতে পেরেছিলাম। সে তার ‘নন্দিত নরকে’ লিখে আমাকেই প্রথমে পড়তে দিয়েছিল। আমি ছিলাম এটার প্রথম পাঠক, পাণ্ডুলিপি পড়েই
আমি বুঝে গিয়েছিলাম, সে লেখক হয়ে গেছে। আমার ‘কপোট্রনিক সুখদুঃখ’ বেরোনোর আগে সে পাণ্ডুলিপির খাতাটা টেবিল থেকে নিয়ে পড়েছিল। আমাকে বলেছিল, ‘তুই কি এটা নিজে
লিখছিস? নাকি অনুবাদ করছিস?’ আমি বলেছিলাম, ‘নিজেই লিখছি।’ সে ছোট করে বলেছিল, ‘তোকে দিয়ে হবে।’
হা হা হা।
একজন লেখক হিসেবে লেখক হুমায়ূন আহমেদকে কি কখনো ঈর্ষা করেছেন?
হুমায়ূনের জনপ্রিয়তা ও লেখালেখি নিয়ে আমার ভেতর কখনো কোনো ঈর্ষা কাজ করেনি। আমি ওর ছোট ভাই, এটাই আমার গর্বের পরিচয়। ওর জনপ্রিয়তার ধারে-কাছেও আমি নেই। তার জনপ্রিয়তার একটা উদাহরণ দিই। একবার এক লোক এলেন আমার সঙ্গে দেখা করতে, সিলেটে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে। তিনি আবেগতাড়িত হয়ে বললেন, ‘আমি বহু দূর থেকে এসেছি। কষ্ট করে অনেক পথ পাড়ি দিয়ে এসেছি। আমি কি আপনার হাত ধরতে পারি?’ আমি তাঁকে বললাম, ‘জি, পারেন।’
তারপর ওই দর্শনার্থী বললেন, ‘এটা কি সত্যি যে আপনি হুমায়ূন আহমেদের ভাই?’ আমি বললাম, ‘হ্যাঁ, সত্য।’
আনন্দে আত্মহারা হয়ে তিনি বললেন, ‘আমার জীবন আজ সার্থক। আমি হুমায়ূন আহমেদের ভাইয়ের হাত স্পর্শ করতে পেরেছি।’

আপনার বড় ভাই হুমায়ূন আহমেদকে নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় লিখেছেন। বিভিন্ন আলোচনা-বক্তব্যে বলেছেন তাঁর কথা। হুমায়ূন সম্পর্ক এমন কিছু জানতে চাই, যা আগে কখনো বলেননি, কিংবা কোথাও লেখেননি।
আপনি একদম শুরুতেই কঠিন প্রশ্ন করেছেন। হা হা হা! নতুন কথা কী আর বলব! অবশ্য একটা মজার কথা বলতে পারি। সেটা অনেকের কাছেই নতুন কথা হতে পারে। সম্ভবত আগে তা কখনো বলিনি। সেটা হলো—হুমায়ূন আহমেদ ভালো অভিনেতা ছিল। ছোটবেলায় স্কুলে পড়ার সময় নিয়মিত অভিনয় করত। স্কুলের নাটক দলে, পাড়া-মহল্লার বিভিন্ন অনুষ্ঠানে পারফর্ম করত।
তারপর অবশ্য অভিনয় ছেড়ে দেয়। আমার মনে হয়, জীবনের একটা পর্যায়ে সে অনেক নাটক-সিনেমা বানিয়েছে, স্ক্রিপ্ট লিখেছে—এটার পেছনে তার শৈশব-কৈশোরের অভিনয় প্রতিভার ভূমিকা ছিল। নাটক-সিনেমা নিয়ে তার বাড়াবাড়ি রকমের আগ্রহ ছিল, আকর্ষণ ছিল, হয়তো কৈশোরের স্মৃতি তাকে অনুপ্রাণিত করত, ভেতর থেকে উৎসাহ জোগাত। আমাদের বাবা ছিলেন বইপাগল মানুষ। প্রচুর বই পড়তেন। আমাদের বই পড়ায় উৎসাহ দিতেন। গানবাজনা, নাটক-সিনেমা-যাত্রা পছন্দ করতেন। আমাদের ভেতর যে সংস্কৃতিবোধ বেড়ে উঠেছে, আমার তো মনে হয়, সেটা উত্তরাধিকারসূত্রেই এসেছে।
হুমায়ূন আহমেদ মূলত কথাসাহিত্যিক। অন্যান্য সেক্টরেও প্রচুর কাজ করেছেন। নাটক-সিনেমার কথা বলছিলেন। আপনার কী মনে হয়, নাটক-সিনেমায় প্রচুর সময় ব্যয় দিতে গিয়ে তাঁর মৌলিক লেখালেখি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল?
সে আসলেই ভীষণ প্রতিভাবান ছিল। বিভিন্ন বিষয়ে তার আগ্রহ-কৌতূহল ছিল, ব্যাপক পড়াশোনা ও জানাশোনা ছিল। নাটক-সিনেমার পেছনে অনেক সময় দিয়েছে। প্রচুর কাজ করেছে। তাঁর নাটক-সিনেমা তো ভীষণ জনপ্রিয়, দর্শকনন্দিত। তবে আমার এটা মনে হয়, সে যদি শুধুই লেখালেখিতে নিরবচ্ছিন্নভাবে সময় দিতে পারত, তাহলে আমরা আরও অসাধারণ লেখা পেতাম।
হুমায়ূন এবং আপনি প্রায় সমসাময়িক লেখক। আপনারা দুজনই বিপুল পাঠকনন্দিত, জনপ্রিয়। একজন লেখক হিসেবে লেখক হুমায়ূন আহমেদকে কীভাবে মূল্যায়ন করবেন? তাঁর কোন ধরনের লেখা আপনার বেশি প্রিয়?
এটাও অনেক কঠিন প্রশ্ন হয়ে গেল। আমি সমালোচক নই, সাহিত্যতাত্ত্বিক নই। আমার পক্ষে হুমায়ূনকে মূল্যায়ন করা কঠিন হবে। নিরপেক্ষ ও নির্মোহভাবে বলা আরও কঠিন হবে। অবশ্য পাঠক হিসেবে কিছু কথা বলতে পারব। ব্যক্তিগতভাবে বলব, হুমায়ূনের ছোটগল্পগুলো অসাধারণ। ওর অধিকাংশ গল্পই দুর্দান্ত। আমার একটা আফসোস আছে, সেটা হলো ওর গল্পগুলোর ভালো অনুবাদ হয়নি। পৃথিবীখ্যাত বড় কোনো প্রকাশনী থেকেও বের হয়নি। যেসব গল্প ইংরেজিতে অনূদিত হয়েছে, সেসব খুবই ম্যাড়মেড়ে ভাষার। ইংরেজি মান তত উন্নত নয়। ওর গল্পগুলো স্মার্ট ইংরেজিতে অনুবাদ করা জরুরি। আমার বিশ্বাস, ওর গল্প সারা বিশ্বেই সমাদৃত হতে পারে।
সাহিত্য ক্ষেত্রে কিংবা ব্যক্তি ক্ষেত্রে হুমায়ূন কি কখনো আপনাদের পরামর্শ শুনতেন? আপনার মতামত অনুসারে কখনো কি কোনো লেখা সংশোধন কিংবা পরিমার্জন করেছেন?
হুমায়ূন কখনো কারও পরামর্শ নিয়ে চলত না। সে চলত নিজের মতো। যখন যা ভালো মনে করত, সেটা সে করত; বিশেষ করে লেখালেখির ক্ষেত্রে সে কারও কোনো পরামর্শ শুনত না।
আপনাকে একটা মজার কথা বলি। সে তার ‘জোছনা ও জননীর গল্প’ বইটি আমাকে পড়তে দিয়েছিল। উদ্দেশ্য বইটির প্রকাশনা উৎসবে আমার কিছু বলতে হবে। বেশ ঘটা করে প্রকাশনা উৎসব হয়েছিল। সেটা আবার লাইভ টেলিকাস্টও হয়েছিল। ওই অনুষ্ঠানে আনিসুজ্জামান, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় ছাড়াও অন্য অতিথিদের সঙ্গে আমিও ছিলাম। সবার নাম মনে পড়ছে না এখন। ‘জোছনা ও জননীর গল্প’ উপন্যাসে একটা জায়গায় লেখা ছিল এপ্রিল মাসে আকাশে কালপুরুষ থাকে। এটা বৈজ্ঞানিকভাবে ভুল তথ্য। আমি প্রকাশনা অনুষ্ঠানে তা সরাসরি বলেছিলাম। সে বইটির পরের সংস্করণে তা ঠিক করেনি। সে বরং নতুন সংস্করণের ভূমিকায় লিখেছে, ‘আমার ছোট ভাই ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল বইটিতে বৈজ্ঞানিক তথ্যের একটি ভুল বের করেছে। যে সময়ের কথা বইটিতে আছে, সেই সময়ে আকাশে কালপুরুষ থাকে না। এ ভুলটি শুদ্ধ করলাম না।’ এবার বোঝেন, সে কেমন ত্যাড়া ছিল।
বাইরের দেশগুলোয় বড় প্রকাশনীতে অনিবার্যভাবে থাকে সংস্থার সম্পাদনা পর্ষদ। তাঁরা লেখা সংশোধন ও পরিমার্জনে ভূমিকা রাখেন। বাংলাদেশে অধিকাংশ প্রকাশনীর সম্পাদনা বিভাগ নেই।
বাংলাদেশে কেউ তো হুমায়ূনের লেখা কাটাছেঁড়া করতে পারত না।
বাংলাদেশের প্রকাশনীতে সম্পাদনা বিভাগ থাকলে হুমায়ূনের সঙ্গে মারামারি হয়ে যেত। কারণ সে যা লিখত, সেটাই সঠিক মনে করত। ভুলের পক্ষেও চমৎকার যুক্তি দাঁড় করাত। প্রকাশকেরা তার লেখার জন্য মুখিয়ে থাকত, একপায়ে দাঁড়িয়ে থাকত। সম্পাদনা কখন করাবে? হা হা হা।
অনেকে অভিযোগ করেন, প্রকাশক ও পাঠকের চাপে পড়ে হুমায়ূন আহমেদ মানহীন অনেক লেখাই লিখেছেন। এ সম্পর্কে আপনার অভিমত জানতে চাই।
প্রকাশকের চাপ তো ভয়ংকর চাপ। এটা অস্বীকার করার উপায় নেই। বাইরের দেশে একজন লেখক পাঁচ বছরে একটা বই লেখেন। রীতিমতো ভেবেচিন্তে লেখেন, গবেষণা করে বই লেখেন।
আমাদের দেশে একজন লেখক প্রতিবছর পাঁচ-সাতটি বই লেখেন। হুমায়ূনের ক্ষেত্রে শুধু প্রকাশক, পাঠক নয়, পত্রিকাওয়ালা ও টিভিওয়ালাদেরও ভীষণ চাপ ছিল। সেই চাপে পড়ে কিছু খারাপ লেখা লিখতে পারে। এটা মিথ্যা নয়। আমার কাছেও তার কিছু লেখা অসম্পূর্ণ মনে হয়েছে। পড়ার পর মনে হয়েছে, লেখাটা আরও বিস্তৃত হতে পারত, আরও বিস্তারিত হতে পারত।
আপনার নিজের লেখালেখির ক্ষেত্রে হুমায়ূনের কী কোনো প্রভাব ও অনুপ্রেরণা আছে? অনেকে বলেন, সায়েন্স ফিকশন লেখার ক্ষেত্রে আপনার বড় অনুপ্রেরণা ছিল হুমায়ূন আহমেদ।
আপনাকে একটা মজার কথা বলি। আমাদের পরিবারে লেখালেখিটা খুবই সাধারণ ব্যাপার, সহজ ব্যাপার। ডাল-ভাতের মতো বিষয় আরকি। আমরা সব ভাই-বোন লিখতে পারি। হাতে কাগজ-কলম থাকলেই হলো, আমরা চাইলেই মুহূর্তেই লিখতে পারি। এটার পেছনে আমাদের বাবার একটা বড় ভূমিকা ছিল। তিনি খুব পড়ুয়া ছিলেন। আমাদেরও সবাইকে বিভিন্ন বই পড়তে দিতেন।
হুমায়ূন যে লেখক হবে, এটা আমরা অনেক আগেই বুঝতে পেরেছিলাম। সে তার ‘নন্দিত নরকে’ লিখে আমাকেই প্রথমে পড়তে দিয়েছিল। আমি ছিলাম এটার প্রথম পাঠক, পাণ্ডুলিপি পড়েই
আমি বুঝে গিয়েছিলাম, সে লেখক হয়ে গেছে। আমার ‘কপোট্রনিক সুখদুঃখ’ বেরোনোর আগে সে পাণ্ডুলিপির খাতাটা টেবিল থেকে নিয়ে পড়েছিল। আমাকে বলেছিল, ‘তুই কি এটা নিজে
লিখছিস? নাকি অনুবাদ করছিস?’ আমি বলেছিলাম, ‘নিজেই লিখছি।’ সে ছোট করে বলেছিল, ‘তোকে দিয়ে হবে।’
হা হা হা।
একজন লেখক হিসেবে লেখক হুমায়ূন আহমেদকে কি কখনো ঈর্ষা করেছেন?
হুমায়ূনের জনপ্রিয়তা ও লেখালেখি নিয়ে আমার ভেতর কখনো কোনো ঈর্ষা কাজ করেনি। আমি ওর ছোট ভাই, এটাই আমার গর্বের পরিচয়। ওর জনপ্রিয়তার ধারে-কাছেও আমি নেই। তার জনপ্রিয়তার একটা উদাহরণ দিই। একবার এক লোক এলেন আমার সঙ্গে দেখা করতে, সিলেটে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে। তিনি আবেগতাড়িত হয়ে বললেন, ‘আমি বহু দূর থেকে এসেছি। কষ্ট করে অনেক পথ পাড়ি দিয়ে এসেছি। আমি কি আপনার হাত ধরতে পারি?’ আমি তাঁকে বললাম, ‘জি, পারেন।’
তারপর ওই দর্শনার্থী বললেন, ‘এটা কি সত্যি যে আপনি হুমায়ূন আহমেদের ভাই?’ আমি বললাম, ‘হ্যাঁ, সত্য।’
আনন্দে আত্মহারা হয়ে তিনি বললেন, ‘আমার জীবন আজ সার্থক। আমি হুমায়ূন আহমেদের ভাইয়ের হাত স্পর্শ করতে পেরেছি।’

জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল।
৬ দিন আগে
জনপ্রিয় কিশোর গোয়েন্দা সিরিজ তিন গোয়েন্দার স্রষ্টা রকিব হাসান মারা গেছেন। আজ বুধবার রাজধানীর একটি হাসপাতালে ডায়ালাইসিস চলাকালে তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।
১১ দিন আগে
হাঙ্গেরির ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই এবার (২০২৫ সালে) সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন তাঁর দীর্ঘ, দার্শনিক বাক্য ও মানবজীবনের বিশৃঙ্খলার গভীর অনুসন্ধানী সাহিত্যকর্মের জন্য। সুইডিশ একাডেমি তাঁকে সম্মান জানিয়েছে ‘শিল্পের শক্তিকে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করার’ জন্য।
১৬ দিন আগে
হাঙ্গেরির সাহিত্যে অসীম জনপ্রিয়তা ও প্রভাব তাঁর; বিশ্বজোড়া আতঙ্ক ও সন্ত্রাসের দাপটেও শিল্পের শক্তি চেনায় তাঁর কলম। তিনি হাঙ্গেরিয়ান ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই; সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০২৫ সালে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।
১৭ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল। কিন্তু ভাষাবিদ ও সাহিত্য ইতিহাসবিদদের মতে, এই ধারণা আসলে পশ্চিমা দৃষ্টিকোণ থেকে তৈরি এক ‘ঔপনিবেশিক কল্পনা’ মাত্র। বাস্তবে আরবি সাহিত্য কখনোই থেমে যায়নি।
প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী, অষ্টম শতাব্দীতে আব্বাসীয় খলিফাদের অধীনে বিজ্ঞান, দর্শন ও কবিতার কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল বাগদাদ। আবু নুয়াস, আল-মুতানাব্বি, আল-ফারাবি ও ইবনে সিনার মতো কবি ও দার্শনিকদের হাত ধরে শুরু হয়েছিল এক স্বর্ণযুগ। ঊনবিংশ শতাব্দীর ইউরোপীয় গবেষকেরা—যেমন ফরাসি চিন্তাবিদ আর্নেস্ট রেনাঁ ও ডাচ ইতিহাসবিদ রেইনহার্ট দোজি সেই আমলটিকেই আরবি বুদ্ধিবৃত্তিক জীবনের শিখর বলে স্বীকার করেছিলেন এবং দাবি করেছিলেন, একাদশ শতাব্দীর পর এই ধারাবাহিকতার পতন ঘটে। তাঁদের মতে, এরপর প্রায় ৮০০ বছর আরবে আর কোনো গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্যিক বা দার্শনিক কাজ হয়নি—যতক্ষণ না ইউরোপে রেনেসাঁ শুরু হয়।
কিন্তু আধুনিক গবেষকেরা বলছেন, এই ধারণা সরলীকৃত ও পক্ষপাতদুষ্ট। ফ্রাঙ্কফুর্ট আন্তর্জাতিক বইমেলায় শেখ জায়েদ বুক অ্যাওয়ার্ডের আয়োজিত এক আলোচনায় ভাষাবিদেরা দাবি করেছেন, আরবি রচনা শৈলী কখনো বিলুপ্ত হয়নি; বরং তা ধারাবাহিকভাবে কপি, অনুবাদ ও পাঠের মাধ্যমে বেঁচে ছিল।
জার্মান গবেষক বেয়াট্রিস গ্রুন্ডলার তাঁর ‘দ্য রাইজ অব দ্য অ্যারাবিক বুক’ গ্রন্থে দাবি করেছেন, আরবি সাহিত্যে ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে যে ধারণাটি প্রচলিত আছে তা আসলে গাল-গল্প। এই বইটি এবারের শেখ জায়েদ পুরস্কারের শর্টলিস্টে রয়েছে। গ্রুন্ডলার এতে দেখিয়েছেন, নবম শতাব্দীর বাগদাদে বইয়ের ব্যবসা, কপিকারদের প্রতিযোগিতা, জনসম্মুখে পাঠ ও লেখার প্রচলন—সবই ছিল আধুনিক প্রকাশনা সংস্কৃতির পূর্বসূরি। তিনি মত দিয়েছেন, ‘বাগদাদের রাস্তায় হাঁটলে আপনি দেখতেন লোকেরা হস্তলিপি বিক্রি করছে, বিরামচিহ্ন নিয়ে তর্ক করছে—এ যেন এক জীবন্ত প্রকাশনা বাজার।’
গবেষণা বলছে, আরবি সাহিত্য আসলে কখনো এক জায়গায় স্থির থাকেনি। এর কেন্দ্র এক সময় বাগদাদ থেকে কায়রো, দামেস্ক ও আন্দালুসিয়ায় স্থানান্তরিত হয়। কিন্তু ধারাটি অব্যাহতই থাকে। নতুন ঘরানা তৈরি হয়, পুরোনো ঘরানা রূপান্তরিত হয়।
ফরাসি অধ্যাপক হাকান ওজকান তাঁর গবেষণায় দেখিয়েছেন, ‘জাজাল’ নামের কথ্য ছন্দভিত্তিক কবিতার ধারা আব্বাসীয় যুগের পরও বিকশিত হতে থাকে। তাঁর মতে, ‘এই কবিরা নিয়ম ভেঙে নতুন রূপ দিয়েছে—তাঁদের ছন্দ ও ব্যঙ্গ আধুনিক র্যাপের মতো প্রাণবন্ত।’

এদিকে এই বিষয়ে এক প্রতিবেদনে সোমবার (২০ অক্টোবর) আমিরাতভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য ন্যাশনাল জানিয়েছে, আবুধাবির নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির ‘আরবি সাহিত্য লাইব্রেরি’ প্রকল্প ইতিমধ্যেই ‘হারানো শতাব্দী’ বলে বিবেচিত সময়ের ৬০ টিরও বেশি আরবি সাহিত্যকর্ম পুনরুদ্ধার করেছে। প্রকল্পটির সম্পাদক অধ্যাপক মরিস পোমেরান্টজ বলেছেন, ‘এই বইগুলো সম্পাদনা করা মানে এক চলমান সংলাপে অংশ নেওয়া—যেখানে প্রজন্মের পর প্রজন্ম লেখক, অনুবাদক ও সমালোচকেরা একে অপরকে উত্তর দিয়ে গেছেন।’
মরিস মনে করেন, আরবি সাহিত্য স্থবির হয়ে যাওয়ার ধারণাটি মূলত অনুবাদের অভাব থেকেই জন্ম নিয়েছে। তিনি বলেন, ‘যখন কোনো লেখা অনুবাদ করা হয় না, তখন সেটি বৈশ্বিক অস্তিত্ব হারায়।’
মরিসের মতে, এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো এই সাহিত্যকে আবার জনসাধারণের কল্পনায় ফিরিয়ে আনা—স্কুলে পড়ানো, মঞ্চে উপস্থাপন করা, অনুবাদের মাধ্যমে বিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়া। তা না হলে আরবি সাহিত্যের ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে চিহ্নিত সময়টি অধরাই থেকে যাবে।

জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল। কিন্তু ভাষাবিদ ও সাহিত্য ইতিহাসবিদদের মতে, এই ধারণা আসলে পশ্চিমা দৃষ্টিকোণ থেকে তৈরি এক ‘ঔপনিবেশিক কল্পনা’ মাত্র। বাস্তবে আরবি সাহিত্য কখনোই থেমে যায়নি।
প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী, অষ্টম শতাব্দীতে আব্বাসীয় খলিফাদের অধীনে বিজ্ঞান, দর্শন ও কবিতার কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল বাগদাদ। আবু নুয়াস, আল-মুতানাব্বি, আল-ফারাবি ও ইবনে সিনার মতো কবি ও দার্শনিকদের হাত ধরে শুরু হয়েছিল এক স্বর্ণযুগ। ঊনবিংশ শতাব্দীর ইউরোপীয় গবেষকেরা—যেমন ফরাসি চিন্তাবিদ আর্নেস্ট রেনাঁ ও ডাচ ইতিহাসবিদ রেইনহার্ট দোজি সেই আমলটিকেই আরবি বুদ্ধিবৃত্তিক জীবনের শিখর বলে স্বীকার করেছিলেন এবং দাবি করেছিলেন, একাদশ শতাব্দীর পর এই ধারাবাহিকতার পতন ঘটে। তাঁদের মতে, এরপর প্রায় ৮০০ বছর আরবে আর কোনো গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্যিক বা দার্শনিক কাজ হয়নি—যতক্ষণ না ইউরোপে রেনেসাঁ শুরু হয়।
কিন্তু আধুনিক গবেষকেরা বলছেন, এই ধারণা সরলীকৃত ও পক্ষপাতদুষ্ট। ফ্রাঙ্কফুর্ট আন্তর্জাতিক বইমেলায় শেখ জায়েদ বুক অ্যাওয়ার্ডের আয়োজিত এক আলোচনায় ভাষাবিদেরা দাবি করেছেন, আরবি রচনা শৈলী কখনো বিলুপ্ত হয়নি; বরং তা ধারাবাহিকভাবে কপি, অনুবাদ ও পাঠের মাধ্যমে বেঁচে ছিল।
জার্মান গবেষক বেয়াট্রিস গ্রুন্ডলার তাঁর ‘দ্য রাইজ অব দ্য অ্যারাবিক বুক’ গ্রন্থে দাবি করেছেন, আরবি সাহিত্যে ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে যে ধারণাটি প্রচলিত আছে তা আসলে গাল-গল্প। এই বইটি এবারের শেখ জায়েদ পুরস্কারের শর্টলিস্টে রয়েছে। গ্রুন্ডলার এতে দেখিয়েছেন, নবম শতাব্দীর বাগদাদে বইয়ের ব্যবসা, কপিকারদের প্রতিযোগিতা, জনসম্মুখে পাঠ ও লেখার প্রচলন—সবই ছিল আধুনিক প্রকাশনা সংস্কৃতির পূর্বসূরি। তিনি মত দিয়েছেন, ‘বাগদাদের রাস্তায় হাঁটলে আপনি দেখতেন লোকেরা হস্তলিপি বিক্রি করছে, বিরামচিহ্ন নিয়ে তর্ক করছে—এ যেন এক জীবন্ত প্রকাশনা বাজার।’
গবেষণা বলছে, আরবি সাহিত্য আসলে কখনো এক জায়গায় স্থির থাকেনি। এর কেন্দ্র এক সময় বাগদাদ থেকে কায়রো, দামেস্ক ও আন্দালুসিয়ায় স্থানান্তরিত হয়। কিন্তু ধারাটি অব্যাহতই থাকে। নতুন ঘরানা তৈরি হয়, পুরোনো ঘরানা রূপান্তরিত হয়।
ফরাসি অধ্যাপক হাকান ওজকান তাঁর গবেষণায় দেখিয়েছেন, ‘জাজাল’ নামের কথ্য ছন্দভিত্তিক কবিতার ধারা আব্বাসীয় যুগের পরও বিকশিত হতে থাকে। তাঁর মতে, ‘এই কবিরা নিয়ম ভেঙে নতুন রূপ দিয়েছে—তাঁদের ছন্দ ও ব্যঙ্গ আধুনিক র্যাপের মতো প্রাণবন্ত।’

এদিকে এই বিষয়ে এক প্রতিবেদনে সোমবার (২০ অক্টোবর) আমিরাতভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য ন্যাশনাল জানিয়েছে, আবুধাবির নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির ‘আরবি সাহিত্য লাইব্রেরি’ প্রকল্প ইতিমধ্যেই ‘হারানো শতাব্দী’ বলে বিবেচিত সময়ের ৬০ টিরও বেশি আরবি সাহিত্যকর্ম পুনরুদ্ধার করেছে। প্রকল্পটির সম্পাদক অধ্যাপক মরিস পোমেরান্টজ বলেছেন, ‘এই বইগুলো সম্পাদনা করা মানে এক চলমান সংলাপে অংশ নেওয়া—যেখানে প্রজন্মের পর প্রজন্ম লেখক, অনুবাদক ও সমালোচকেরা একে অপরকে উত্তর দিয়ে গেছেন।’
মরিস মনে করেন, আরবি সাহিত্য স্থবির হয়ে যাওয়ার ধারণাটি মূলত অনুবাদের অভাব থেকেই জন্ম নিয়েছে। তিনি বলেন, ‘যখন কোনো লেখা অনুবাদ করা হয় না, তখন সেটি বৈশ্বিক অস্তিত্ব হারায়।’
মরিসের মতে, এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো এই সাহিত্যকে আবার জনসাধারণের কল্পনায় ফিরিয়ে আনা—স্কুলে পড়ানো, মঞ্চে উপস্থাপন করা, অনুবাদের মাধ্যমে বিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়া। তা না হলে আরবি সাহিত্যের ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে চিহ্নিত সময়টি অধরাই থেকে যাবে।

আপনার বড় ভাই হুমায়ূন আহমেদকে নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় লিখেছেন। বিভিন্ন আলোচনা-বক্তব্যে বলেছেন তাঁর কথা। হুমায়ূন সম্পর্ক এমন কিছু জানতে চাই, যা আগে কখনো বলেননি, কিংবা কোথাও লেখেননি। আপনি একদম শুরুতেই কঠিন প্রশ্ন করেছেন। হা হা হা! নতুন কথা কী আর বলব! অবশ্য একটা মজার কথা বলতে পারি। সেটা অনেকের কাছেই নতুন কথ
১২ নভেম্বর ২০২২
জনপ্রিয় কিশোর গোয়েন্দা সিরিজ তিন গোয়েন্দার স্রষ্টা রকিব হাসান মারা গেছেন। আজ বুধবার রাজধানীর একটি হাসপাতালে ডায়ালাইসিস চলাকালে তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।
১১ দিন আগে
হাঙ্গেরির ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই এবার (২০২৫ সালে) সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন তাঁর দীর্ঘ, দার্শনিক বাক্য ও মানবজীবনের বিশৃঙ্খলার গভীর অনুসন্ধানী সাহিত্যকর্মের জন্য। সুইডিশ একাডেমি তাঁকে সম্মান জানিয়েছে ‘শিল্পের শক্তিকে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করার’ জন্য।
১৬ দিন আগে
হাঙ্গেরির সাহিত্যে অসীম জনপ্রিয়তা ও প্রভাব তাঁর; বিশ্বজোড়া আতঙ্ক ও সন্ত্রাসের দাপটেও শিল্পের শক্তি চেনায় তাঁর কলম। তিনি হাঙ্গেরিয়ান ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই; সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০২৫ সালে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।
১৭ দিন আগেনিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

জনপ্রিয় কিশোর গোয়েন্দা সিরিজ তিন গোয়েন্দার স্রষ্টা রকিব হাসান মারা গেছেন। আজ বুধবার রাজধানীর একটি হাসপাতালে ডায়ালাইসিস চলাকালে তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।
রকিব হাসানের মৃত্যুর খবরটি নিশ্চিত করেছেন সেবা প্রকাশনীর উপদেষ্টা মাসুমা মায়মুর। তিনি সেবা প্রকাশনীর প্রতিষ্ঠাতা কাজী আনোয়ার হোসেনের ছোট ছেলে কাজী মায়মুর হোসেনের স্ত্রী।
মাসুমা মায়মুর ফেসবুকে লিখেছেন, ‘তিন গোয়েন্দা ও সেবা প্রকাশনীর পাঠকদেরকে আন্তরিক দুঃখের সাথে জানাচ্ছি যে, কিছুক্ষণ আগে রকিব হাসান সাহেব পরলোক গমন করেছেন। ডায়ালাইসিস চলাকালে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে ওনার জীবনাবসান ঘটে। আপনারা ওনার পবিত্র আত্মার মাগফেরাত কামনা করুন।’
১৯৫০ সালের ১২ ডিসেম্বর কুমিল্লায় জন্মগ্রহণ করেন রকিব হাসান। বাবার চাকরির কারণে শৈশব কেটেছে ফেনীতে। সেখান থেকে স্কুলজীবন শেষ করে ভর্তি হন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজে। পড়াশোনা শেষে বিভিন্ন চাকরিতে যুক্ত হলেও অফিসের বাঁধাধরা জীবনে তাঁর মন টেকেনি। অবশেষে তিনি লেখালেখিকে বেছে নেন জীবনের একমাত্র পথ হিসেবে।

সেবা প্রকাশনী থেকে তাঁর লেখকজীবনের সূচনা হয়। প্রথমদিকে বিশ্বসেরা ক্ল্যাসিক বই অনুবাদ করে লেখালেখির জগতে প্রবেশ করেন তিনি। এরপর টারজান, গোয়েন্দা রাজু, রেজা-সুজা সিরিজসহ চার শতাধিক জনপ্রিয় বই লেখেন। তবে তাঁর পরিচয়ের সবচেয়ে বড় জায়গা হলো তিন গোয়েন্দা সিরিজ। এই সিরিজ বাংলাদেশের অসংখ্য কিশোর-কিশোরীর কৈশোরের সঙ্গী।
মূলত রবার্ট আর্থারের থ্রি ইনভেস্টিগেটরস সিরিজ অবলম্বনে তিন গোয়েন্দার সূচনা হয়। তবে রকিব হাসানের লেখনশৈলীতে এটি পেয়েছে একেবারে নতুন রূপ। বাংলাদেশি সাহিত্য হয়ে উঠেছে এটি। এই সিরিজের মাধ্যমে তিনি হয়ে ওঠেন হাজারো কিশোর পাঠকের প্রিয় লেখক।
নিজ নামে লেখার পাশাপাশি তিনি ব্যবহার করেছেন বিভিন্ন ছদ্মনাম। শামসুদ্দীন নওয়াব নামে তিনি অনুবাদ করেছিলেন জুল ভার্নের বইগুলো।
বাংলাদেশের পাঠকদের কাছে রকিব হাসান শুধু একজন গোয়েন্দা লেখক নন, তিনি কয়েক প্রজন্মের শৈশব-কৈশোরের ভালোবাসার মানুষ।

জনপ্রিয় কিশোর গোয়েন্দা সিরিজ তিন গোয়েন্দার স্রষ্টা রকিব হাসান মারা গেছেন। আজ বুধবার রাজধানীর একটি হাসপাতালে ডায়ালাইসিস চলাকালে তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।
রকিব হাসানের মৃত্যুর খবরটি নিশ্চিত করেছেন সেবা প্রকাশনীর উপদেষ্টা মাসুমা মায়মুর। তিনি সেবা প্রকাশনীর প্রতিষ্ঠাতা কাজী আনোয়ার হোসেনের ছোট ছেলে কাজী মায়মুর হোসেনের স্ত্রী।
মাসুমা মায়মুর ফেসবুকে লিখেছেন, ‘তিন গোয়েন্দা ও সেবা প্রকাশনীর পাঠকদেরকে আন্তরিক দুঃখের সাথে জানাচ্ছি যে, কিছুক্ষণ আগে রকিব হাসান সাহেব পরলোক গমন করেছেন। ডায়ালাইসিস চলাকালে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে ওনার জীবনাবসান ঘটে। আপনারা ওনার পবিত্র আত্মার মাগফেরাত কামনা করুন।’
১৯৫০ সালের ১২ ডিসেম্বর কুমিল্লায় জন্মগ্রহণ করেন রকিব হাসান। বাবার চাকরির কারণে শৈশব কেটেছে ফেনীতে। সেখান থেকে স্কুলজীবন শেষ করে ভর্তি হন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজে। পড়াশোনা শেষে বিভিন্ন চাকরিতে যুক্ত হলেও অফিসের বাঁধাধরা জীবনে তাঁর মন টেকেনি। অবশেষে তিনি লেখালেখিকে বেছে নেন জীবনের একমাত্র পথ হিসেবে।

সেবা প্রকাশনী থেকে তাঁর লেখকজীবনের সূচনা হয়। প্রথমদিকে বিশ্বসেরা ক্ল্যাসিক বই অনুবাদ করে লেখালেখির জগতে প্রবেশ করেন তিনি। এরপর টারজান, গোয়েন্দা রাজু, রেজা-সুজা সিরিজসহ চার শতাধিক জনপ্রিয় বই লেখেন। তবে তাঁর পরিচয়ের সবচেয়ে বড় জায়গা হলো তিন গোয়েন্দা সিরিজ। এই সিরিজ বাংলাদেশের অসংখ্য কিশোর-কিশোরীর কৈশোরের সঙ্গী।
মূলত রবার্ট আর্থারের থ্রি ইনভেস্টিগেটরস সিরিজ অবলম্বনে তিন গোয়েন্দার সূচনা হয়। তবে রকিব হাসানের লেখনশৈলীতে এটি পেয়েছে একেবারে নতুন রূপ। বাংলাদেশি সাহিত্য হয়ে উঠেছে এটি। এই সিরিজের মাধ্যমে তিনি হয়ে ওঠেন হাজারো কিশোর পাঠকের প্রিয় লেখক।
নিজ নামে লেখার পাশাপাশি তিনি ব্যবহার করেছেন বিভিন্ন ছদ্মনাম। শামসুদ্দীন নওয়াব নামে তিনি অনুবাদ করেছিলেন জুল ভার্নের বইগুলো।
বাংলাদেশের পাঠকদের কাছে রকিব হাসান শুধু একজন গোয়েন্দা লেখক নন, তিনি কয়েক প্রজন্মের শৈশব-কৈশোরের ভালোবাসার মানুষ।

আপনার বড় ভাই হুমায়ূন আহমেদকে নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় লিখেছেন। বিভিন্ন আলোচনা-বক্তব্যে বলেছেন তাঁর কথা। হুমায়ূন সম্পর্ক এমন কিছু জানতে চাই, যা আগে কখনো বলেননি, কিংবা কোথাও লেখেননি। আপনি একদম শুরুতেই কঠিন প্রশ্ন করেছেন। হা হা হা! নতুন কথা কী আর বলব! অবশ্য একটা মজার কথা বলতে পারি। সেটা অনেকের কাছেই নতুন কথ
১২ নভেম্বর ২০২২
জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল।
৬ দিন আগে
হাঙ্গেরির ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই এবার (২০২৫ সালে) সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন তাঁর দীর্ঘ, দার্শনিক বাক্য ও মানবজীবনের বিশৃঙ্খলার গভীর অনুসন্ধানী সাহিত্যকর্মের জন্য। সুইডিশ একাডেমি তাঁকে সম্মান জানিয়েছে ‘শিল্পের শক্তিকে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করার’ জন্য।
১৬ দিন আগে
হাঙ্গেরির সাহিত্যে অসীম জনপ্রিয়তা ও প্রভাব তাঁর; বিশ্বজোড়া আতঙ্ক ও সন্ত্রাসের দাপটেও শিল্পের শক্তি চেনায় তাঁর কলম। তিনি হাঙ্গেরিয়ান ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই; সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০২৫ সালে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।
১৭ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

হাঙ্গেরির ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই এবার (২০২৫ সালে) সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন তাঁর দীর্ঘ, দার্শনিক বাক্য ও মানবজীবনের বিশৃঙ্খলার গভীর অনুসন্ধানী সাহিত্যকর্মের জন্য। সুইডিশ একাডেমি তাঁকে সম্মান জানিয়েছে ‘শিল্পের শক্তিকে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করার’ জন্য। লেখক সুসান সনটাগ অবশ্য তাঁকে একসময় ‘মহাপ্রলয়ের হাঙ্গেরিয়ান গুরু’ আখ্যা দিয়েছিলেন।
সাহিত্যজগতে অনেকের কাছে ক্রাসনাহোরকাইয়ের নোবেল পাওয়ার এই ঘোষণাটি যেন কয়েক দশক ধরে চলা একটি বাক্যের সমাপ্তি।
১৯৫৪ সালে হাঙ্গেরির ছোট শহর জিউলা-তে জন্ম নেওয়া ক্রাসনাহোরকাই ১৯৮০-এর দশকের শুরুতে গল্প লেখা শুরু করেন। তাঁর প্রথম উপন্যাস স্যাটানট্যাঙ্গো (১৯৮৫) একটি বৃষ্টিস্নাত, ধ্বংসপ্রায় গ্রামের কাহিনি—যেখানে প্রতারক, মাতাল ও হতাশ মানুষেরা মিথ্যা আশায় আঁকড়ে থাকে। পরিচালক বেলা-তার তাঁর এই উপন্যাসটিকে দীর্ঘ ৭ ঘণ্টার এক সাদাকালো চলচ্চিত্রে রূপ দেন। এই বইতেই ধরা পড়ে ক্রাসনাহোরকাইয়ের লেখার বৈশিষ্ট্যসমূহ, যেমন—অবিরাম দীর্ঘ বাক্য, দার্শনিক হাস্যরস ও পতনের কিনারায় দাঁড়িয়ে থাকা মানুষের প্রতিচ্ছবি।
তাঁর পরবর্তী উপন্যাসগুলো—দ্য মেলানকোলি অব রেজিস্ট্যান্স (১৯৮৯), ওয়ার অ্যান্ড ওয়ার (১৯৯৯) ও সেইবো দেয়ার বিলো (২০০৮)—তাঁর এই দৃষ্টিভঙ্গিকে মহাজাগতিক পরিসরে বিস্তৃত করেছে। ‘ওয়ার অ্যান্ড ওয়ার’–এ তিনি এক নথি প্রহরীর গল্প বলেছেন, যিনি রহস্যময় এক পাণ্ডুলিপি প্রকাশ করতে নিউইয়র্কে পালিয়ে যান এবং আত্মহত্যা করেন—যেন ক্রম বিলীন পৃথিবীতে অর্থ ধরে রাখার এক মরিয়া চেষ্টা তাঁর।
ক্রাসনাহোরকাইয়ের লেখায় কাহিনি প্রায় সময়ই বাক্যের ভেতর হারিয়ে যায়। তিনি লিখেছেন এমন বাক্য, যা একাধিক পৃষ্ঠা জুড়ে পাঠককে টেনে নেয় অবচেতনে, অবিরাম প্রবাহে।
তাঁর সাহিত্যে হাস্যরস ও ট্র্যাজেডি পাশাপাশি চলে। স্যাটানট্যাঙ্গো–এর মাতাল নাচের দৃশ্য যেমন নিঃশেষের প্রতীক, তেমনি ‘ব্যারন ওয়েঙ্কহাইমস হোমকামিং’ (২০১৬)-এ দেখা যায়, ফিরে আসা এক পরাজিত অভিজাতকে। যার মাধ্যমে প্রকাশ পায় সভ্যতার পচন ও মানুষের হাস্যকর ভ্রান্তি।
২০১৫ সালে ম্যান বুকার পুরস্কার পাওয়ার মধ্য দিয়েই প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পান ক্রাসনাহোরকাই। অনুবাদক জর্জ সির্টেস ও ওটিলি মুলজেট তাঁর জটিল হাঙ্গেরিয়ান ভাষাকে ইংরেজিতে রূপ দিতে বিশেষ ভূমিকা রাখেন। ‘হাডসন রিভিউ’ তাঁকে বর্ণনা করেছিল ‘অন্তহীন বাক্যের ভ্রমণশিল্পী’ হিসেবে।
চল্লিশ বছরের সৃষ্টিতে ক্রাসনাহোরকাইয়ের ভুবন চিত্র, সংগীত, দর্শন ও ভাষার মিলনে বিস্তৃত। সাম্প্রতিক উপন্যাস ‘হার্শট ০৭৭৬৯’ (২০২৪)–এ তিনি এক প্রবাহিত বাক্যে লিখেছেন নব্য-নাৎসি, নেকড়ে আর এক হতভাগ্য পদার্থবিদের কাহিনি—আধুনিক ইউরোপের নৈতিক পক্ষাঘাতের রূপক হিসেবে।
তাঁর সমগ্র সাহিত্যজগৎ এক অন্ধকার ও ধ্যানমগ্ন মহাবিশ্ব—যেখানে পতন, শূন্যতা ও করুণা পাশাপাশি থাকে। ‘সেইবো দেয়ার বিলো’ বইটিতে তিনি লিখেছেন, ‘সৌন্দর্য, যত ক্ষণস্থায়ীই হোক না কেন, তা পবিত্রতার প্রতিবিম্ব।’ এই বিশ্বাসই লাসলো ক্রাসনাহোরকাইকে সেই বিরল লেখক করে তুলেছে, যাঁর নৈরাশ্যও মুক্তির মতো দীপ্ত।

হাঙ্গেরির ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই এবার (২০২৫ সালে) সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন তাঁর দীর্ঘ, দার্শনিক বাক্য ও মানবজীবনের বিশৃঙ্খলার গভীর অনুসন্ধানী সাহিত্যকর্মের জন্য। সুইডিশ একাডেমি তাঁকে সম্মান জানিয়েছে ‘শিল্পের শক্তিকে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করার’ জন্য। লেখক সুসান সনটাগ অবশ্য তাঁকে একসময় ‘মহাপ্রলয়ের হাঙ্গেরিয়ান গুরু’ আখ্যা দিয়েছিলেন।
সাহিত্যজগতে অনেকের কাছে ক্রাসনাহোরকাইয়ের নোবেল পাওয়ার এই ঘোষণাটি যেন কয়েক দশক ধরে চলা একটি বাক্যের সমাপ্তি।
১৯৫৪ সালে হাঙ্গেরির ছোট শহর জিউলা-তে জন্ম নেওয়া ক্রাসনাহোরকাই ১৯৮০-এর দশকের শুরুতে গল্প লেখা শুরু করেন। তাঁর প্রথম উপন্যাস স্যাটানট্যাঙ্গো (১৯৮৫) একটি বৃষ্টিস্নাত, ধ্বংসপ্রায় গ্রামের কাহিনি—যেখানে প্রতারক, মাতাল ও হতাশ মানুষেরা মিথ্যা আশায় আঁকড়ে থাকে। পরিচালক বেলা-তার তাঁর এই উপন্যাসটিকে দীর্ঘ ৭ ঘণ্টার এক সাদাকালো চলচ্চিত্রে রূপ দেন। এই বইতেই ধরা পড়ে ক্রাসনাহোরকাইয়ের লেখার বৈশিষ্ট্যসমূহ, যেমন—অবিরাম দীর্ঘ বাক্য, দার্শনিক হাস্যরস ও পতনের কিনারায় দাঁড়িয়ে থাকা মানুষের প্রতিচ্ছবি।
তাঁর পরবর্তী উপন্যাসগুলো—দ্য মেলানকোলি অব রেজিস্ট্যান্স (১৯৮৯), ওয়ার অ্যান্ড ওয়ার (১৯৯৯) ও সেইবো দেয়ার বিলো (২০০৮)—তাঁর এই দৃষ্টিভঙ্গিকে মহাজাগতিক পরিসরে বিস্তৃত করেছে। ‘ওয়ার অ্যান্ড ওয়ার’–এ তিনি এক নথি প্রহরীর গল্প বলেছেন, যিনি রহস্যময় এক পাণ্ডুলিপি প্রকাশ করতে নিউইয়র্কে পালিয়ে যান এবং আত্মহত্যা করেন—যেন ক্রম বিলীন পৃথিবীতে অর্থ ধরে রাখার এক মরিয়া চেষ্টা তাঁর।
ক্রাসনাহোরকাইয়ের লেখায় কাহিনি প্রায় সময়ই বাক্যের ভেতর হারিয়ে যায়। তিনি লিখেছেন এমন বাক্য, যা একাধিক পৃষ্ঠা জুড়ে পাঠককে টেনে নেয় অবচেতনে, অবিরাম প্রবাহে।
তাঁর সাহিত্যে হাস্যরস ও ট্র্যাজেডি পাশাপাশি চলে। স্যাটানট্যাঙ্গো–এর মাতাল নাচের দৃশ্য যেমন নিঃশেষের প্রতীক, তেমনি ‘ব্যারন ওয়েঙ্কহাইমস হোমকামিং’ (২০১৬)-এ দেখা যায়, ফিরে আসা এক পরাজিত অভিজাতকে। যার মাধ্যমে প্রকাশ পায় সভ্যতার পচন ও মানুষের হাস্যকর ভ্রান্তি।
২০১৫ সালে ম্যান বুকার পুরস্কার পাওয়ার মধ্য দিয়েই প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পান ক্রাসনাহোরকাই। অনুবাদক জর্জ সির্টেস ও ওটিলি মুলজেট তাঁর জটিল হাঙ্গেরিয়ান ভাষাকে ইংরেজিতে রূপ দিতে বিশেষ ভূমিকা রাখেন। ‘হাডসন রিভিউ’ তাঁকে বর্ণনা করেছিল ‘অন্তহীন বাক্যের ভ্রমণশিল্পী’ হিসেবে।
চল্লিশ বছরের সৃষ্টিতে ক্রাসনাহোরকাইয়ের ভুবন চিত্র, সংগীত, দর্শন ও ভাষার মিলনে বিস্তৃত। সাম্প্রতিক উপন্যাস ‘হার্শট ০৭৭৬৯’ (২০২৪)–এ তিনি এক প্রবাহিত বাক্যে লিখেছেন নব্য-নাৎসি, নেকড়ে আর এক হতভাগ্য পদার্থবিদের কাহিনি—আধুনিক ইউরোপের নৈতিক পক্ষাঘাতের রূপক হিসেবে।
তাঁর সমগ্র সাহিত্যজগৎ এক অন্ধকার ও ধ্যানমগ্ন মহাবিশ্ব—যেখানে পতন, শূন্যতা ও করুণা পাশাপাশি থাকে। ‘সেইবো দেয়ার বিলো’ বইটিতে তিনি লিখেছেন, ‘সৌন্দর্য, যত ক্ষণস্থায়ীই হোক না কেন, তা পবিত্রতার প্রতিবিম্ব।’ এই বিশ্বাসই লাসলো ক্রাসনাহোরকাইকে সেই বিরল লেখক করে তুলেছে, যাঁর নৈরাশ্যও মুক্তির মতো দীপ্ত।

আপনার বড় ভাই হুমায়ূন আহমেদকে নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় লিখেছেন। বিভিন্ন আলোচনা-বক্তব্যে বলেছেন তাঁর কথা। হুমায়ূন সম্পর্ক এমন কিছু জানতে চাই, যা আগে কখনো বলেননি, কিংবা কোথাও লেখেননি। আপনি একদম শুরুতেই কঠিন প্রশ্ন করেছেন। হা হা হা! নতুন কথা কী আর বলব! অবশ্য একটা মজার কথা বলতে পারি। সেটা অনেকের কাছেই নতুন কথ
১২ নভেম্বর ২০২২
জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল।
৬ দিন আগে
জনপ্রিয় কিশোর গোয়েন্দা সিরিজ তিন গোয়েন্দার স্রষ্টা রকিব হাসান মারা গেছেন। আজ বুধবার রাজধানীর একটি হাসপাতালে ডায়ালাইসিস চলাকালে তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।
১১ দিন আগে
হাঙ্গেরির সাহিত্যে অসীম জনপ্রিয়তা ও প্রভাব তাঁর; বিশ্বজোড়া আতঙ্ক ও সন্ত্রাসের দাপটেও শিল্পের শক্তি চেনায় তাঁর কলম। তিনি হাঙ্গেরিয়ান ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই; সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০২৫ সালে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।
১৭ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

হাঙ্গেরির সাহিত্যে অসীম জনপ্রিয়তা ও প্রভাব তাঁর; বিশ্বজোড়া আতঙ্ক ও সন্ত্রাসের দাপটেও শিল্পের শক্তি চেনায় তাঁর কলম। তিনি হাঙ্গেরিয়ান ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই; সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০২৫ সালে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।
আধুনিক হাঙ্গেরীয় সাহিত্যের একজন অন্যতম প্রধান ব্যক্তিত্ব লাসলো। অভিনব শৈলীর পাশাপাশি দার্শনিক গভীরতার জন্য তাঁর সাহিত্য সমাদৃত হয়েছে। তাঁকে ফ্রানৎস কাফকা ও স্যামুয়েল বেকেটের ঐতিহ্যের উত্তরাধিকারী হিসেবে বিবেচনা করা হয়। বিশ্বজোড়া আতঙ্ক ও সন্ত্রাসের মধ্যেও শিল্পের লেলিহান ঔজ্জ্বল্য ফুটে ওঠে লাসলোর লেখায়। তাই যুদ্ধবিধ্বস্ত সময়ের বুকে ফুলের মতো স্থান করে নিল তাঁর সাহিত্য।
লাসলোর জন্য সাহিত্যে এটা প্রথম পুরস্কার নয়, ২০১৪ সালে সাহিত্যকর্মের জন্য ম্যান বুকার ইন্টারন্যাশনাল পুরস্কার পান তিনি। এ পুরস্কার বিশ্বসাহিত্যে তাঁর অবস্থানকে সুদৃঢ় করে।
লাসলোর সাহিত্যের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো—স্বতন্ত্র শৈলী ও গঠন। উপন্যাসের মূল বিষয়বস্তু হলো—মানবতার অবক্ষয়, ধ্বংসের অনিবার্যতা ও আধুনিক জীবনের লক্ষ্যহীন চলন। তাঁর চরিত্রদের মধ্যে প্রায়ই একধরনের হতাশা ও বিচ্ছিন্নতা দেখা যায়; তারা এমন এক জগতের পথিক, যেখানে নৈতিকতা ও আশা বিলীনপ্রায়।
১৯৮৫ সালে প্রকাশিত ‘স্যাটানটাঙ্গো’ নামে প্রথম উপন্যাস লিখেই খ্যাতি পান লাসলো। এই উপন্যাসে বিচ্ছিন্ন ও পতিত এক কৃষি সমবায় গ্রামের জীবন তুলে ধরেছেন তিনি। সেখানে একধরনের বিভ্রম ও আশার জন্ম দেয় এক রহস্যময় আগন্তুকের আগমনে। এই উপন্যাস অবলম্বনে একই শিরোনামে সাত ঘণ্টার কালজয়ী চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন বিখ্যাত পরিচালক বেলা টর।
লাসলোর আরেকটি ফিকশন উপন্যাস হলো— ‘দ্য মেলানকোলি অব রেজিস্ট্যান্স’। হাঙ্গেরির এক কাল্পনিক শহরের জীবন ফুটে উঠেছে এই উপন্যাসে। সামুদ্রিক প্রাণী হাঙরের প্রদর্শনীকে কেন্দ্র করে মানুষের মধ্যকার উন্মাদনা, সামাজিক বিশৃঙ্খলা ও একনায়কতন্ত্রের উত্থানের চিত্র আঁকা হয়েছে তাতে।
‘ওয়ার অ্যান্ড ওয়ার’ লাসলোর আরেকটি বিখ্যাত উপন্যাস। লম্বা লম্বা বাক্যে লেখা এই উপন্যাস লাসলোর শৈলী নিয়ে পাঠকদের নতুন করে ভাবায়। উপন্যাসের নায়ক একটি পাণ্ডুলিপি রক্ষা করার জন্য বিশ্বের বিভিন্ন শহর ঘুরে বেড়ায়। বিশ্বের চূড়ান্ত ধ্বংসের একটি কাব্যিক বর্ণনা পাওয়া যায় এই উপন্যাসে।
এবার লাসলোকে পুরস্কারের জন্য মনোনীত করার নেপথ্যে নোবেল কমিটির বড় কারণ ছিল তাঁর সাহিত্যে শিল্পের জয়ধ্বনি তোলার প্রচেষ্টা। যখন সারা বিশ্বের বেশ কিছু দেশ যুদ্ধবিধ্বস্ত বা যুদ্ধের জন্য উৎসুক, তখন বারবার শিল্পের মোহিনী প্রেম ও বন্ধনের কথা মনে করিয়ে দিতে চায় লাসলোর সাহিত্য।

হাঙ্গেরির সাহিত্যে অসীম জনপ্রিয়তা ও প্রভাব তাঁর; বিশ্বজোড়া আতঙ্ক ও সন্ত্রাসের দাপটেও শিল্পের শক্তি চেনায় তাঁর কলম। তিনি হাঙ্গেরিয়ান ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই; সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০২৫ সালে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।
আধুনিক হাঙ্গেরীয় সাহিত্যের একজন অন্যতম প্রধান ব্যক্তিত্ব লাসলো। অভিনব শৈলীর পাশাপাশি দার্শনিক গভীরতার জন্য তাঁর সাহিত্য সমাদৃত হয়েছে। তাঁকে ফ্রানৎস কাফকা ও স্যামুয়েল বেকেটের ঐতিহ্যের উত্তরাধিকারী হিসেবে বিবেচনা করা হয়। বিশ্বজোড়া আতঙ্ক ও সন্ত্রাসের মধ্যেও শিল্পের লেলিহান ঔজ্জ্বল্য ফুটে ওঠে লাসলোর লেখায়। তাই যুদ্ধবিধ্বস্ত সময়ের বুকে ফুলের মতো স্থান করে নিল তাঁর সাহিত্য।
লাসলোর জন্য সাহিত্যে এটা প্রথম পুরস্কার নয়, ২০১৪ সালে সাহিত্যকর্মের জন্য ম্যান বুকার ইন্টারন্যাশনাল পুরস্কার পান তিনি। এ পুরস্কার বিশ্বসাহিত্যে তাঁর অবস্থানকে সুদৃঢ় করে।
লাসলোর সাহিত্যের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো—স্বতন্ত্র শৈলী ও গঠন। উপন্যাসের মূল বিষয়বস্তু হলো—মানবতার অবক্ষয়, ধ্বংসের অনিবার্যতা ও আধুনিক জীবনের লক্ষ্যহীন চলন। তাঁর চরিত্রদের মধ্যে প্রায়ই একধরনের হতাশা ও বিচ্ছিন্নতা দেখা যায়; তারা এমন এক জগতের পথিক, যেখানে নৈতিকতা ও আশা বিলীনপ্রায়।
১৯৮৫ সালে প্রকাশিত ‘স্যাটানটাঙ্গো’ নামে প্রথম উপন্যাস লিখেই খ্যাতি পান লাসলো। এই উপন্যাসে বিচ্ছিন্ন ও পতিত এক কৃষি সমবায় গ্রামের জীবন তুলে ধরেছেন তিনি। সেখানে একধরনের বিভ্রম ও আশার জন্ম দেয় এক রহস্যময় আগন্তুকের আগমনে। এই উপন্যাস অবলম্বনে একই শিরোনামে সাত ঘণ্টার কালজয়ী চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন বিখ্যাত পরিচালক বেলা টর।
লাসলোর আরেকটি ফিকশন উপন্যাস হলো— ‘দ্য মেলানকোলি অব রেজিস্ট্যান্স’। হাঙ্গেরির এক কাল্পনিক শহরের জীবন ফুটে উঠেছে এই উপন্যাসে। সামুদ্রিক প্রাণী হাঙরের প্রদর্শনীকে কেন্দ্র করে মানুষের মধ্যকার উন্মাদনা, সামাজিক বিশৃঙ্খলা ও একনায়কতন্ত্রের উত্থানের চিত্র আঁকা হয়েছে তাতে।
‘ওয়ার অ্যান্ড ওয়ার’ লাসলোর আরেকটি বিখ্যাত উপন্যাস। লম্বা লম্বা বাক্যে লেখা এই উপন্যাস লাসলোর শৈলী নিয়ে পাঠকদের নতুন করে ভাবায়। উপন্যাসের নায়ক একটি পাণ্ডুলিপি রক্ষা করার জন্য বিশ্বের বিভিন্ন শহর ঘুরে বেড়ায়। বিশ্বের চূড়ান্ত ধ্বংসের একটি কাব্যিক বর্ণনা পাওয়া যায় এই উপন্যাসে।
এবার লাসলোকে পুরস্কারের জন্য মনোনীত করার নেপথ্যে নোবেল কমিটির বড় কারণ ছিল তাঁর সাহিত্যে শিল্পের জয়ধ্বনি তোলার প্রচেষ্টা। যখন সারা বিশ্বের বেশ কিছু দেশ যুদ্ধবিধ্বস্ত বা যুদ্ধের জন্য উৎসুক, তখন বারবার শিল্পের মোহিনী প্রেম ও বন্ধনের কথা মনে করিয়ে দিতে চায় লাসলোর সাহিত্য।

আপনার বড় ভাই হুমায়ূন আহমেদকে নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় লিখেছেন। বিভিন্ন আলোচনা-বক্তব্যে বলেছেন তাঁর কথা। হুমায়ূন সম্পর্ক এমন কিছু জানতে চাই, যা আগে কখনো বলেননি, কিংবা কোথাও লেখেননি। আপনি একদম শুরুতেই কঠিন প্রশ্ন করেছেন। হা হা হা! নতুন কথা কী আর বলব! অবশ্য একটা মজার কথা বলতে পারি। সেটা অনেকের কাছেই নতুন কথ
১২ নভেম্বর ২০২২
জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল।
৬ দিন আগে
জনপ্রিয় কিশোর গোয়েন্দা সিরিজ তিন গোয়েন্দার স্রষ্টা রকিব হাসান মারা গেছেন। আজ বুধবার রাজধানীর একটি হাসপাতালে ডায়ালাইসিস চলাকালে তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।
১১ দিন আগে
হাঙ্গেরির ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই এবার (২০২৫ সালে) সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন তাঁর দীর্ঘ, দার্শনিক বাক্য ও মানবজীবনের বিশৃঙ্খলার গভীর অনুসন্ধানী সাহিত্যকর্মের জন্য। সুইডিশ একাডেমি তাঁকে সম্মান জানিয়েছে ‘শিল্পের শক্তিকে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করার’ জন্য।
১৬ দিন আগে